রোবট প্রেম পর্ব : ১

0
932

রোবট প্রেম
পর্ব : ১
লেখক : শিশির আহমেদ (নীল)

– ক্যার্লিফোনিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করে গবেষণার কাজ শুরু করেছিল শিশির। সময় পেলেই অনেক দেশ ঘুরতে যেত সে।কারন জানা অজানা রহস্য গুলো শিশিরকে ঘিরে ফেলতো। কিন্তুু একসময় এগুলোতে একঘেয়েমি মনোভাব এসে পড়ে। নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চায় কোনো ভালো লাগার উপর। তাই ও বাংলাদেশে এসে পড়ল। যদিও এখানে ওর পরিবার নেই। কাছের আত্মীয়স্বজনরাই থাকে। যারা একসময় ওর উপর বিরক্ত হয়ে বাইরে কোনোমতো পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেয়। দেশে আসার পর ওকে সবাই বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তুু ও মনে করে জীবনের অধিকাংশ সময় অনেক কিছু করে ব্যয় করে ফেলছে। ওর হিসেবে এই ৩৫ বছর অনেক কিছু। আর এই বিয়ের উপর ওর কোনো ইচ্ছেই নেই। সময় কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পদে নিয়োগ হলো। কিন্তুু ওর জীবনটা ওর কাছে অপূর্ণ হয়েই রইলো। তাই বাসায় এসে নিজেকে ঘুমে অথবা সাহিত্যে নিয়োজিত রাখত।তবু ও এই জীবনযাত্রা তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠলো। ওর মনে হচ্ছিলো এমন কিছুর প্রয়োজন যেটা ওর সব ভাবনা জগৎ আলাদা করে ফেলবে।ওর মনে হলো কোনো সংবেদনশীল রোবটের সাহচর্য পেতে। যে ভাবা সেই কাজ। পরেরদিন গবেষক পদকে বিদায় জানিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালো। সেখানে একটি ট্রেনিং সেন্টার থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পুর্ন রোবট কিভাবে তৈরি করে খুব কাছ থেকে দেখল। নিজেও শিখে ফেলল। অবশেষে শিশির নিজে নিজে যান্ত্রিক রোবটও বানাতে সক্ষম হলো। তারপর শিশির সংবেদনশীল রোবট নিয়ে কিছু বিজ্ঞানীদের সাথে কথা বলল। তারা জানাল পৃথিবী তে এরকম রোবটও বানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কথা বলতে পারে, নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারে, হাসি কান্নার শব্দ করতে পারে।একজন বিজ্ঞানী জানালো আমেরিকায় কিছু রিসার্চ সেন্টার ও সংস্থা আছে। যারা এইরকম অনুভূতিসম্পুর্ন রোবট নিয়ে কাজ করে। বিজ্ঞানীটি শিশিরকে একটি কার্ড দিলো পরিচিত একটি সেন্টারে যাওয়ার জন্য। শিশির সেই রিসার্চ সেন্টারে যাওয়ার পর বেশ অবাক হলো। ও যে রোবটের দুনিয়ায় এসে পরছে ভাবতেই পারছে না। কারন এইগুলা দেখতে হুবুহু মানুষের মতো। একটি মেয়ে রোবট ওকে দেখে মিস্টি হাসি দিলো। ভালো করে না দেখলে বুঝাই যেতো না এটা কি ছিল। ও সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় একটি ছেলে রোবট ওর সাথে হাত মিলালো। তারপর ও অফিস রুমে গেলো। এখানে সিকিউরিটি অনেক কড়া। ওকে কিছুক্ষন পর পর চেক, করা হচ্ছে। অফিস রুমে গিয়ে সেখানকার বিজ্ঞানীদের সাথে কুশল বিনিময় করল। আর সরাসরি বলল ও এরকম রোবট বানাতে চায়। তারা তখন চুক্তি করল শিশিরের সাথে।কারন অনেক টাকা না দিলে এবং গোপন না রাখলে কাজটা হবে না। তাই শিশির চুক্তি অনুসারে সব শর্ত মানতে রাজি হলো। কিন্তুু তারা বলল পরিপূর্ণ মানুষের মতো চরিত্রের রোবট বানানো হয়নি তবে আংশিক ভাবে মানব আচরণ ক্ষমতা সম্পুর্ন রোবট বানাতে সক্ষম হয়েছে। তাতে শিশিরের একটু মন খারাপ হলেও রাজি হয়ে গেলো। ২মাস অক্লান্ত পরিশ্রম ও মনোযোগ শিখে নিচ্ছিল। আসলে ওর নেশা পেয়ে বসেছে। যেন এর শেষ না দেখে ও যাবেনা। অবশেষে ও মুটামুটি সন্তুষ্টচিত্তে কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশে ফিরল। এইখানে এসে ও কিছু কপোট্রন কিনল। যদি লাগে এই ভেবে। সেন্টার থেকেও কিছু কপোট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসছে। যেগুলা একেক রকম অনুভুতিসম্পূর্ন। শিশির বুঝতে পারছিল না কোন ধরনের কপোট্রন ওর মানবীয় গুন সম্পন্ন রোবটের জন্য প্রযোজ্য। ও এসব ভেবে চিন্তেই কাজটা শুরু করলো। হঠাৎ করে ওর মনে হলো সবগুলোর সমন্বয়ে যদি রোবটটার কপোট্রন বানায়। কোনগুলো কি কাজ করে, কিরকম অনুভুতি সবকিছু তালিকা করে কপোট্রনের ছক এঁকে ফেললো। সেই ছক অনুযায়ী শিশির কপোট্রন বানানো শুরু করে দিলো।রোবটের মস্তিষ্কের মধ্যে একটি মেইন মেমোরি আর একটি এক্সট্রা মেমোরিও বানালো। শিশির চেয়েছিল রোবটটির মধ্যে সব ধরনের অনুভুতি প্রকাশ পায়। ওর আত্মবিশ্বাস ছিল রোবটটি ওর ভাবনা থেকে ভিন্ন হবে না।এরপর রোবট বডির কাজ শুরু করলো। এটা বানাতে ওর অনেক কষ্ট হচ্ছিল। সৌন্দর্য মন ভালো বুঝলেও ওর হাত বুঝতে চাইছিল না। তারপরও হতাশ হলো না। শেষপর্যন্ত সফল হলো। একটার সাথে আরেকটার বডির এডজয়েন করলো। দেখা গেলো রোবটটা ওর থেকে একটু খাটোই হয়েছে। শিশিরের, এটা দেখে হাসি পেলো এটা তো মানবীয় গুণসম্পন্ন মানবী রোবট। শিশির বিশেষ! ধরনের তন্তুু দিয়ে একটা আবরণ দিয়ে দিলো। এর উপর স্পঞ্জের মতো সেটা আবরণের ওপর লাগিয়ে দিলো।স্পঞ্জের উপর স্কিন কালারের স্থিতিস্থাপক তন্তুু বসিয়ে দিলো। এগুলো সবই রিসার্চ সেন্টার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তারপর উপরে চুল বসানো শুরু করলো। এটা করতে করতে ওর মধ্যে ঝিমুনি ভাব এসে পড়ল। কখন রোবটটিকে চালু করবে। ভয়েস শুনার জন্য ও পাগল হয়ে আছে। কিন্তুু ওর ভালো লাগার চুল না লাগিয়ে অপরিপূর্ণভাবে একদমই দেখবে না। সেজন্য ধৈর্য্যসহকারে চুল মেশিনের সাহায্যে বসালো। রোবটের কাজ শেষ হওয়ার পর ও দেখতে লাগল কেমন হয়েছে। মুখমণ্ডলের দিকে তাকিয়ে দেখে ছোটখাটো একটা “মিষ্টিকুমড়া”। নিজে বানিয়ে নিজেই হাসতে লাগলো। এই প্রথম কোনো কিছু করে সন্তুষ্টিবোধ করল। রোবটটিকে চার্জ দিতে হয়! নাহলে সরাসরি বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে হতো। বাংলাদেশে কোনো খারাপ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে ভেবে চার্জ সিস্টেমেই রেখেছে।তাই ও রোবটটিকে চার্জ দিয়ে রাখল।চার্জ দেওয়ার সময়ে চোখের কাছটা লাল আলোর মতো জ্বলে টুট টুট একটা শব্দ করলো।এরমানে চার্জ হচ্ছে। শিশির খুবই বিস্ময় ও অবাক হলো। অবশেষে ও সফল হয়েই গেলো। যদিও ব্যাপারটা গোপনীয়। আর ভাবতে লাগলো এই ড্রিম রোবট গার্লের কি নাম দেওয়া যায়। অনেক ভাবতে ভাবতে ঠিক করে ফেললো। চার্জ যখন সম্পন্ন হলো বাম হাতের নিচে পাওয়ার সুইচটি অন করলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলল। নীল ও সবুজ আলোর মিশ্রন চোখে খেলা করছিল। শিশিরের মনে হলো রোবট গার্লটির মাত্র ঘুম ভেঙেছে। শিশির বলল, তোমার নাম কী জানো? রোবট গার্ল,’না’।
শিশির :তোমাকে মারিয়া বলে ডাকবো।রোবট গার্ল:আচ্ছা। শিশির :এইবার বলো তোমার নাম কী? রোবট গার্লঃমারিয়া।
শিশির : ‘আর আমার নাম শিশির আহমেদ’। রোবট গার্লঃ হুম।শিশির :আমার সাথে কথা কম বলা যাবে না বুঝতে পারছো? মারিয়া:জ্বি পেরেছি।

চলবে

-শিশির …..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here