রোবট প্রেম পর্ব : ৫,৬

0
462

রোবট প্রেম
পর্ব : ৫,৬
লেখক : শিশির আহমেদ (নীল)

-পরের দিন শিশির ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দেরি করে ফেলল। সব আলসেমি যেন ওকে ঘিরে ধরল।। তারপর সব জড়তা নিয়ে রেডি হয়ে ইউনিভার্সিটি তে চলে গেলো। ওর মনে হচ্ছিলো কিছুদিন ছুটি নিয়ে মারিয়ার সাথে অবকাশ যাপন করা যায়। তাই ও পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে নিল। সারাটাক্ষন ভাবছিলো কোথায় ঘুরতে যেতে পারে, মারিয়া কে নিয়ে কি কি করবে। এরকম হাজারটা প্লান ওর মধ্যে ভিড় করল। বাসায় যাওয়ার আগে সেই ছোট্ট মেয়েটার খোজ নিল। মেয়েটা একটি নার্সিংহোমে আছে। এখনও কোন কিছু জানার চেষ্টা করে নি পুলিশেরা। তবে তারা আশ্বাস দিল ওকে তাড়াতাড়ি খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করবে। ও বাসায় এসে পড়ল। ওর মধ্যে যাওয়ার একটা আনন্দ প্রকাশ করছে। মারিয়া ওর ছটফটানি দেখে বলল: কি হয়েছে? খরগোশ এর মতো এমন করতাছো কেনো? শিশির : কি খরগোশ!! খরগোশ কখনও দেখছো? মারিয়া : না দেখেনি
শিশির : হুম, এবার দেখাবো।
মারিয়া : তুমি আমাকে খরগোশ দেখাবা????
শিশির : হুম, ইউনিভার্সিটি থেকে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছি। মারিয়া : কি!! তুমি খরগোশ দেখার জন্য এত দিন ছুটি নিয়েছো!!!???
শিশির : আরে না,এই ছুটিতে চিন্তা করছি তোমাকে নিয়ে যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যাবো। মারিয়া : তারপর এখানে আবার আসতে পারবো তো? শিশির : হুম পারবো..কেনো এই বাসা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না? মারিয়া : না তুমি যেখানে নিয়ে যাবা সেখানেই যাবো। কিন্তুু এইখানে ও অনেক ভালো লাগে।
শিশির : আসলে আমরা সিলেট যাবো। আর সেখানে গেলে সেটাই তোমার ভালো লাগবে। আসতেই চাইবে না।
মারিয়া :‘না আসবো ..’এরপর মারিয়া কে শিশির বুঝাতেই পারছে না সিলেট কী!!ও এটার মানে কি সেটা জানতে চায়। ও কিছুই বুঝতে পারছে না ।
-শিশির : তোমার আর বুঝা লাগবে না। তোমাকে যেই লিস্ট দিব সেই অনুযায়ী আমার সব কিছু গুছিয়ে দিবা। মারিয়া : নিজে পারো না?? শিশির: না পারি না, আপনার গুলা তো আমি গুছিয়ে দিবো। এই বলে শিশির নিজের রুমে চলে গেলো। আসলে সব কিছু সহজ ভাবে ভাবলেও ব্যাপার একদমই সহজ না। কারন সেখানে মারিয়ার চার্জে সমস্যা হবে। তাই ওর জন্য একটা সেভিংস চার্জার বানাতে হবে। যেটার কার্যক্ষমতা অনেকক্ষন থাকবে। যেকোনো সময় ওটার সাহায্যে মারিয়া কে চার্জ করা যাবে। ও সারা দিন ভেবে চিন্তে রাতে কাজ শুরু করে দিলো। ও একটু কাজ শেষ করার পর দেখতে গেলো মারিয়া কি করছে। শিশির মারিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল ওর কাজকর্ম। মারিয়া লিস্ট দেখে এটা সেটা নেয় আবার রাখে আবার নেয়। বিরতিহীন ভাবে এরকম করছে। ওর এমন অবস্থা দেখে শিশিরের অনেক হাসি পেলো। বলে দিলো কিভাবে রাখবে এবং গুছাবে। মারিয়া সেভাবেই করা শেষ করল। পরের দিন শিশির সেভিংস চার্জারের বাকি কাজ শেষ করে ফেলল। এখান থেকেই শিশির বাংলোর ব্যবস্থা করে ফেলছে। আর সেখানে ইনফর্ম করে দিল যে ওরা আজ রাতের মধ্যে সেখানে পৌছাবে। আর মারিয়ার জন্য বাংলো সবচেয়ে ভালো জায়গা। কারন শিশিরের গোপনীয় প্রেম তো।
– এরপর মারিয়ার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র শিশির গুছিয়ে নিলো। দুপুরের খাওয়াদাওয়া করেই শিশির ওর গাড়িতে সব ব্যাগ-ট্যাগ উঠালো। ও নিজেই ড্রাইভ করবে। এরপর মারিয়াকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
শিশির : অবশেষে আমরা যাচ্ছি। যাওয়ার পর সেখানে দুষ্টামি করবানা। মারিয়া : আমি দুষ্টুমি করি!! আর সেটা আমি জানি না!!
শিশির : তুমি জানবা কি করে, তুমি তো পিচ্চি, কিছুই জানো না। মারিয়া : নিজে যে শিশু সেটা কে বলবে।!!? আর তুমিই বেশি দুষ্টুমি করো..তুমিই বেশি সব কাজে দেরি করো। শিশির : এখন সব আমার দোষ। দেখা যাবে কে বেশি দুষ্টামি করে!! মারিয়া : আমিই জিতবো.. কারন তুমি অনেক দুষ্ট.. পচা। শিশির : হুম..আর এই ঘুরতে যাওয়ার সময়ে আমরা ঝগড়া করতাছি। এই বলে দুজনেই হেসে দিলো। তারপর…

চলবে

রোবট প্রেম …
পর্ব : ৬
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
– সিলেট যাওয়ার সময় হঠাৎ, করে ওদের গাড়ি টা নষ্ট হয়ে গেলো। শিশির মারিয়া কে বলল, তুমিও উল্টাপাল্টা কথা বলো!! এখন গাড়ি টা ও উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করছে। মারিয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে বলল, এটার আবার কি হলো??
শিশির : কি জানি কি হয়েছে, বুঝতে পারছি না। ওর অনেক বিরক্ত লাগছে.. কিছুক্ষন পর মারিয়া চিৎকার করে বলল,“ওয়াও কি সুন্দর জায়গা ”।
শিশির : এজন্য এমন করতে হয়, উফফ কানে শুনতাছি না। মারিয়া : ওহ, আমি এখানে থাকবো।
শিশির : হুম, তোমাকে এখানে রেখে যাবো।
মারিয়া : তোমাকেও থাকতে হবে। শিশির দেখলো জায়গাটা গ্রাম্য প্রকৃতির। আশেপাশে অনেক জমি, এগুলোর পাশে গাছপালা,অনেক দুরে বাড়িঘর। এসবে মারিয়াকে উচ্ছ্বসিত হতে দেখে শিশির অবাক হলো। তারমানে ,, এগুলোর উপর ওর ভালোলাগা অনুভূতি হয়েছে। বাইরের পরিবেশ এর উপর ওর বিরূপ মনোভাব হতে পারত। কিন্তুু সেরকম কিছুই হয় নি। শিশির ওর এসব আচরন বুঝে না কখন কিভাবে ও নিজেকে প্রকাশ করবে। এসব ভেবে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। মারিয়া আশেপাশে সবকিছু এক নজরে পর্যবেক্ষন করছে এমন ভাব করলো। কিছুক্ষন পর শিশির গাড়ি ঠিক করে ফেলল।যেতে যেতে ওদের সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাংলোয় পৌঁছে বেছে বেছে একটি ভালো রুম ঠিক করলো। আর সেখানেই মারিয়াকে রাখার ব্যবস্থা করল। বলা যায় না কখন কি বিপদ হয়ে যেতে পারে। যদিও এখানকার মানুষগুলো বোকাসোকা, নিরীহ প্রকৃতির। তারপরও শিশির এদের বিশ্বাস করতে পারে না। তাই নিজের রুমেই মারিয়ার সব কিছু রাখল। মারিয়াও টুকিটাকি সব জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলল। বাংলোতে একটি লোক থাকে। যে এখানকার রান্নাবান্না ও দেখা শোনা করে।
– বাংলোর পাশেই তার পরিবার থাকে। রাতের খাবার খেয়ে শিশির ঘুমাতে যাবে তখনি মারিয়া হাতে একটি কাগজ নিয়ে বলল, এসব জায়গায় আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবা না??
শিশির : হ্যা, যাবো তো। মারিয়া : তাহলে চলো, দেরি করতাছো কেনো?
শিশির : এখন কেনো?? ঘুরতে তো যাবো কালকে… এখন ঘুমানোর সময়!!। একথা শুনে মারিয়া মন খারাপ করে সোফায় বসে পরল। শিশির বুঝতে পেরে বলল, ‘তুমি মন খারাপ করলে কেনো???
মারিয়া : কোথায় করলাম?
শিশির : প্লিজ মন খারাপ করে না, এখন গেলে কিছুই করা যাবে না। মারিয়া : হুম…..। শিশির : এখন ঘুরার সময় না তো যখন সময় হবে তখন তো নিয়ে যাবো। মারিয়া : আচ্ছা বুঝলাম। শিশির : তাহলে একটা হাসি দিয়ে ভালোবাসি বলো।
মারিয়া : হবে না এখন।
শিশির : চেষ্টা করলেই হবে।
মারিয়া বলার পর পাওয়ার অফ করে শিশির ঘুমাতে গেলো ।
– পরের দিন শিশির সকালবেলা মারিয়া কে নিয়ে চা বাগানে ঘুরতে নিয়ে গেলো। সকালবেলার চা বাগানের দৃশ্যটাই অন্যরকম। চা শ্রমিকেরা যখন চায়ের পাতা ছিড়ছিল, মারিয়া ও সেটা দেখে ওইভাবে করার চেষ্টা করছিল। ফলস্বরূপ ও গাছগুলোই উঠিয়ে ফেলছিল। এটা দেখে শিশির ওকে বলল,‘পাতা ছিড়তে হবে না শুধু দেখো কিভাবে কি করে’। এরপর শিশির সিলেটের বিখ্যাত সাত রঙের চা কিনে মারিয়াকে দেখালো। শিশির বিস্ময় প্রকাশ করতেই মারিয়া বলল : এটা আমিও পারবো বানাতে।
শিশির : সত্যি!! কিভাবে??
মারিয়া : একটা মগে স্পেশাল ভাবে বানিয়ে দিলেই হবে।
শিশির : বুঝলাম না!! কেমন স্পেশাল??
মারিয়া : দেখো এই চায়ে সাতটা ধাপ, তারমানে মগে ছয়টা সেল দিতে হবে। এটার মতো করে প্রতিটা সেলে আলাদা ভাবে উপাদান দিতে হবে। শিশির হেসে বলল, ‘হয় নি,এতই সোজা বানানো। এখানে কোনো সেল টেল দেয় নি
মারিয়া : তাহলে কিভাবে?
শিশির : ওনাদে র বিশেষ কৌশল আছ! তবে, তোমার আইডিয়াটা ভালো ছিলো!
মারিয়া : আমি এভাবেই বানিয়ে দিবো তোমাকে। সেজন্য আমাকে ওইরকম স্পেশাল মগ গিফট করতে হবে। শিশির: চেষ্টা করব।
এই বলে শিশির চা খেতে লাগলো। ওর চা খাওয়া দেখে মারিয়া বলল,‘তুমি এত মজা করে চা খাচ্ছো!!
শিশির : হিহিহি কেনো তোমার খেতে ইচ্ছে করছে?
মারিয়া : হুম,আমি এমনই ভিন্ন যে খেতে পারছি না। সেই ইচ্ছে কখনোই ছিলো না, কিন্তুু এখন হচ্ছে। একথা শুনে শিশির আশ্চর্য সাথে মন খারাপ হয়ে গেলো। আসলেই শিশির মারিয়ার সামনে খায়, বাসাও মারিয়া রান্না করে। অথচ শিশির কখনোই মারিয়াকে খাইয়ে দিতে পারে না। ওর এখন খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে খাইয়ে দিতে। যেটা কখনোই সম্ভব হবে না। মারিয়া রোবট না হয়ে মানুষ হলে হয়তো আজকে এই মন খারাপের ইচ্ছে টা থাকত না। তখন হয়তো সবসময় শিশির খাইয়ে দিতো। কিন্তুু এই ইচ্ছেগুলো ওদের জন্য অপূর্ণ থাকবে। সব ইচ্ছে তো আর পূর্ণ হয় না। তারপর …

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here