রোবট প্রেম
পর্ব : ৭,৮
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
৭
– মারিয়া কে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গেলো। ঘুরার সময়ও শিশির যতটা সম্ভব মানুষজনের ভীড়ে কম নেয়ার চেষ্টা করছে। যদিও মারিয়া কে দেখলে রোবট একদমই মনে হয় না। বাহ্যিক গঠন,চলাফেরা, ড্রেসআপ অবিকল অন্য সব সাধারণ মেয়ের মতোই লাগে। পরের দিন মারিয়া কে নিয়ে বিশেষ কোথাও ঘুরতে গেলো না। কারণ রাতে ওর জন্য শিশির সারপ্রাইজ রেখে দিয়েছে। ওরা যে বাংলোয় থাকে বলা যায় সেটা কোনো বনের পাশে। আশেপাশের বাড়ি গুলো একটু দূরে।
– রাতে শিশির মারিয়া কে বলল : আরেকটু পর আমরা বাইরে যাবো।
– মারিয়া : না রাতে কোনো বাইরে ঘুরা যাবে না।
শিশির : কেনো? আর আমরা বাইরে ঘুরবো না তো। এই বাংলোটার একটু সামনেই যাবো।
মারিয়া : না,কোথাও যাওয়া হবে না।রাগ করেছি তোমার সাথে।
শিশিরঃ কেনো?? আমি আবার কি করলাম?
মারিয়া : তুমি তো সেদিন আমাকে রাতে ঘুরতে নিয়ে যাও নি। আজকে ও তো কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলে না।
শিশির : সেজন্য….।
মারিয়া : সেজন্য যাবো না
শিশির : তাহলে আর কি করা!? সারপ্রাইজ দিতাম,তা আর হলো না। আশেপাশে যারা আছে তারা সব নিয়ে যাবে।
মারিয়া : সারপ্রাইজ!!!!!! কই আমার সারপ্রাইজ????
মলিন মুখে শিশির বলল : তুমি তো আর যাবা না দেখিয়ে কি হবে!!!
মারিয়া : না,না যাবো। তখন এমনি বলছিলাম।
শিশির : না যাওয়া লাগবে না
মারিয়া : প্লিজ নিয়ে যাবা.. এখন..।
শিশির : তাহলে একটা কন্ডিশন। মারিয়া : কি সেটা?
শিশির : তুমি আমার সামনে থাকবে কিন্তুু আমাকে দেখে দেখে হাটতে হবে।
মারিয়া : কিভাবে হাটবো তোমার দিকে তাকিয়ে থাকলে?
শিশির : উল্টা করে হাটবে। আর আমার হাত ধরে রাখবে।
বাইরে গিয়ে মারিয়া শিশিরের হাত ধরে ওর দিকে তাকিয়ে হাটছে।কিছুদূর যাওয়ার পর শিশির এক হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
মারিয়া : হাত ছেড়ে দিলে কেনো?
শিশির : ঘুরে সামনের দিকে তাকাও।
এরপর শিশির নিজেই মারিয়ার হাত ধরে ঘুরিয়ে দিলো। মারিয়া সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। চারিদিকে হালকা আলোর বাতি। চাঁদের আলো আর এই আলো মিলে ছিমছিমে আভায় আলোকিত হয়ে আছে। দুই পাশে সারি সারি করে অনেক বেলুন রাখা আছে। মারিয়া : আউ বেলুন’স!!!!ও অবাক হয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
শিশির : আরো সারপ্রাইজ আছে।
– সামনে একটি ছোট টেবিল। মারিয়াকে নিয়ে সেই টেবিলের পাশে বসলো। শিশির অনেকগুলো মোমবাতি ধরালো। চারদিকে মোমবাতির আলোয় ভরে উঠলো। এরপর ছোট একটা কেক বের করল।
মারিয়া : শিশির তুমি এত কিছু কিভাবে করলে??
শিশির : যখন তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি তখন করেছি।
মারিয়া: সব কিছু এত সুন্দর হয়েছে!!!
শিশির : তোমার জন্যই! এই আজকে তো আমাদের বার্থডে না তাহলে কি বলবো!!!???
মারিয়া : কি বলবো জানি না তো।
শিশির : আচ্ছা কেক কাটা শুরু করো।
মারিয়া: আমি একা কাটবো??
শিশির : না আমি সাথে আছি তো।
তারপর শিশির মারিয়ার হাত ধরে কাটা শুরু করলো।
শিশির : হ্যাপি ট্রাভেলস ডে!!
মারিয়া : হিহি, তুমি খাও
শিশির : না, তোমাকে ও খেতে হবে
মারিয়া : কিভাবে!!?? আমি তো খেতে পারি না।
শিশির : ইমাজিন করে খেতে হবে, আমি খাইয়ে দিব তোমাকে। তোমার সেটার পারফেক্ট ইমাজিন করে খেতে হবে।
মারিয়া : ওহ আচ্ছা।
শিশির : হা করো। মারিয়া : হা!!
শিশির : এই নাও, কেমন লাগলো??
মারিয়া : কেমন!!! ভালো না।
শিশির : দুষ্টামী করতাছো কেন? ভালো করে বলো!!?
মারিয়া : হুম,অনেক মজা, সফট একটা কেক ছিলো!!
শিশির : হুম হয়েছে। তারপর শিশির সেই টুকরাটা নিজে খেয়ে ফেললো।
মারিয়া : এটা না তুমি আমাকে খাইয়ে দিলে, এখন সেটা নিজে খাচ্ছো কেন?
শিশির : আমার খাওয়া আর তোমার খাওয়া একই।
মারিয়া : হুম বুঝেছি, আমাকে ইমাজিন করিয়ে সব তুমি খাবে
শিশির : হুম সেটাই ছাড়া আর কি করার আছে।
মারিয়া : হিহি,কিন্তুু কেকটা অনেক মজা ছিলো,আরেকটু খাবো!!
শিশির : সবগুলো তোমাকেই খাওয়াবো। এরপর কেক নিয়ে ওরা অনেক মজা করল। শিশির : ওয়েট,আর একটা সারপ্রাইজ ছিল। বলতে পারো কি সেটা??.
মারিয়া : বাইরে বসে চাঁদ দেখাবা?
শিশির : সেটা তো সারপ্রাইজের মধ্যে পড়ে না। এই বলে শিশির ফানুস বের করে দেখালো। মারিয়া একপাশে ও শিশির আরেকপাশে ধরলো। তারপর দুজন একসাথে ছেড়ে দিলো। শিশির মারিয়া কে জরিয়ে ধরে বলল : ভালোবাসি মারিয়া।
মারিয়া : আমিও ভালোবাসি।
চাঁদ দেখতে দেখতে ওরা বাংলোতে ফিরে আসলো …
চলবে
রোবট প্রেম ..
পর্ব : ৮
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
– সেদিন রাতে শিশির ঘুমাতে অনেক দেরি করে ফেলল। কিন্তুু পরের দিন সকালে উঠে গেলো তাড়াতাড়ি। তাছারা এর পরের দিন ওর সিলেট থেকে চলে যাবার প্লান। আজকের মধ্যেই ওর সব ঘুরা ও গোছগাছ শেষ করে ফেলতে হবে। সেজন্য শিশির রুমে নিজের প্রয়োজনীয় সব কিছু ঠিক করছে।
মারিয়া : কালকে কি আমরা সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছিল??? শিশির : হুম যাচ্ছি। মারিয়া আর কিনা বললো না। চুপ করে বসে রইলো।
শিশির : কি কিছু বলবা?
মারিয়া : না গেলে হয় না…!!
শিশির : তোমার থাকতে ইচ্ছে করতাছে?
মারিয়া : হুম অনেক..!
শিশির : সেটা একদমই সম্ভব না। কিন্তুু তুমি যে এরকম করবা সেটা আগেই বুঝতে পারছি।
মারিয়া : আমার এজায়গাটা ভালো লেগেছে। এই বাড়িটায় আমার থাকতে ইচ্ছে করছে।
শিশির : আচ্ছা, কোনো এক সময় সবকিছু থেকে অবসর নিয়ে এরকম একটা বনের মধ্যে বাড়ি করবো। সেখানে তুমি আর আমি থাকবো।
মারিয়া : জানি সেটা অনেক দেরি!!
শিশির : আচ্ছা, আজকে কোথাও ঘুরতে যেতে চাইলে নিয়ে যেতে পারি।
মারিয়া : না যাবো না, সারাদিন এই বাড়িটা দেখবো।
শিশির : আচ্ছা দেখো।
কোথাও যেতে হবে না দেখে শিশির বই পড়া শুরু করলো। রাতে না ঘুমানোর ফলে ওর ঝিমুনি এসে পরলো। বই পড়া অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ও ধড়মড়িয়ে উঠে গেলো। চারদিকে তাকালো কিন্তুু মারিয়া কে দেখতে পেল না। ও চিন্তায় পড়ে গেলো। কারণ ও পাওয়ার অফ না করে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাংলোর সব জায়গায় খুঁজলো। কিন্তুু কোথাও পেলো না। দেখাশোনা করা সেই লোকটাকে জিজ্ঞেস করল। সে ও বলতে পারলো না। ও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। দিশেহারা হয়ে আশেপাশে খুজতে লাগলো। হটাৎ ও দেখলো একটা গাছের ডালে মারিয়ার ছোট হিজাব ওরনাটা আটকে আছে। ও সেটা নিয়ে সামনের দিকে যেতে থাকলো। কিছুদূর যাওয়ার পর মারিয়া কে দেখতে পেল। উপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখার চেষ্টা করছে। মারিয়া কে দেখে শিশিরের চোখে পানি এসে গেলো। এরপর দৌড়িয়ে গেলো মারিয়ার কাছে।
‘তুমি এখানে, আর আমি তোমাকে কোথায় কোথায় খুঁজতাছি, তোমার কিছু হয় নি তো, কিভাবে আসলে!?
বিষন্ন কন্ঠে মারিয়া বলল : দেখোনা,একটা বাটারফ্লাই…. কোথায় গেলো? খুঁজে পাচ্ছি না!!
শিশির : তুমি এই বাটারফ্লাই এর জন্য আমাকে না বলে এখানে এসে পরছো!!?
মারিয়া : হুম, তোমাকে ডাকলে দেরি হয়ে যেতো কিন্তুু এখন খুঁজেই পাচ্ছি না!!
শিশির : আসো ফালতু মেয়ে!! আমাকে না বলে বের হয়েছে তাও হিজাব ছাড়া!! আজকেই চলে যাব
মারিয়া : আমার বাটারফ্লাই!!
শিশির : রাখো তোমার বাটারফ্লাই, এখন যদি তোমার কোনো বিপদ হয়ে যেতো, তোমাকে যদি খুঁজে না পেতাম তখন আমার কি হতো ভাবতে পারছো!!!
মারিয়া: বিপদ!!! কিসের বিপদ!!??
শিশির : তোমার জন্য আশেপাশের সব কিছু খারাপ, আমি তোমার পাশে যতখন আছি ততক্ষণ তুমি সেইফ। বাট একা হলে সত্যি কেউ যদি বুঝতে পারে তুমি কি তাহলে ফলাফল খুব খারাপ হবে। এই বলে ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।
মারিয়া : আর এরকম হবে না। আমি একা কোথাও কিছু করব না। কিন্তুু আমি আজকে যাব না প্লিজ!!??
শিশির : কোনো কথা না, আজকেই চলে যাবো। এদিকে থেকে আমি কোনো বিপদ আনতে চাই না। আমি আর এক মুহূর্তের জন্য অন্য কারো কাছে হারাতে দিব না। বাংলোতে গিয়ে সবকিছু গোছগাছ করে গাড়িতে উঠালো। যাওয়ার সময় মারিয়া কোনো কথা বলে নি। শুধু বাংলোটার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলো। শিশির যাওয়ার পথে মারিয়া কে খরগোশ দেখালো। কিন্তুু মারিয়ার এসবে কোনো আগ্রহ ছিলোই না কিছুক্ষন পর বলল : আমার বাটারফ্লাই তো রেখে আসলাম ঔইখানে।
শিশির : ওইটা তুমি কি করে ধরতে বলো?.
মারিয়া : আমি ধরতাম না শুধু দেখতাম। আমাকে একটা বাটারফ্লাই এনে দিবা?
– শিশির : আচ্ছা দিবো।
বাসায় আসার পর ও মারিয়ার এই চিন্তা গেলো না। পরের দিন শিশির সেই বাচ্চাটার খোঁজ নিতে গেলো। ও ভাবছিল হয়তো এতদিনে বাচ্চাটার আসল ঠিকানা উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু না হতাশ হতে হলো। কোনোভাবে পুলিশ খুজতে পারে নি। তবে কিছু ইনফরমেশন বের করা গেছে। বাচ্চা মেয়েটির নাম মাইশা। কেউ একজন ওকে রাস্তায় রেখে গেছে ও চিনে না। ও ওর বাবা মায়ের ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে পারে নি। ও সবসময় ওর সমবয়সী অনেক বাচ্চাদের সাথে খেলত এবং ওদের সাথেই থাকতো। শিশিরের এগুলো শুনে অনেক মন খারাপ হয়ে গেছে। বাসায় এসে মারিয়া কে সব খুলে বলল।
মারিয়া : মাইশা কে নিয়ে আসো না। শিশির – তারপর???….
মারিয়া : আমাদের সাথে থাকবে
শিশির : কি ইন্টেলিজেন্ট রে!!হাহহ!!!
মারিয়া : এমন করো কেন?
শিশির : হুম নিয়ে আসি, তারপর তুমি বাচ্চা নিয়ে বিজি থাকো আমাকে আর কেয়ার করবা না। আমাকে অবহেলা করবা, আমাকে তুমি আর টাইম ই দিবা না
মারিয়া : না দিবো তো,তোমার কেয়ার করব, তোমাদের দুজনকেই করবো।
শিশির : আমাকে বেশি দিতে হবে। আর আমিও চিন্তা করছি মাইশা কে বাসায় নিয়ে আসব।
মারিয়া : হ্যা,তুমি তো আমার কথা শুনছো না!!
শিশির : এহহহ,আমি তোমার আগে থেকে চিন্তা করছি, এমনি মজা করছি।
মারিয়া : এটা আবার কেমন মজা!!
শিশির : অন্যরকম মজা!! আর তারপর কি হবে আমরাই ওর বাবা-মা হবো,আর এটাই ঠিক হবে।
মারিয়া : হুম যাও এবার নিয়ে আসো।
শিশির : যাচ্ছি!!! …
চলবে