রোবট প্রেম
পর্ব : ১১ (শেষপর্ব)
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
-শিশির : তাহলে, কেনো এমন করছো? তুমি জানো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। তুমিই বলো রোবট কে কেউ এভাবে ভালোবাসে। নিজের প্রয়োজনে রোবট রাখে। কিন্তু আমি সেরকম কিছু করেছি বলো। আমি কি এক শখের বশে বানিয়েছিলাম তোমাকে। – হঠাৎ করে মনে হয়েছে অনেক ভালোবাসি। আমার এগুলো তুমি বুঝো না!!একেনো নিজেকে এমন তুলনা করছো বলো?
মারিয়া : জানি না আমি, অনেক খারাপ লাগছে মনে হয়।… আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে অনেক কিছু নিয়ে।
শিশির : কেনো তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবি। তুমি কেনো বুঝতে পারছো না.. আমি তোমাকে কেন অন্য সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখি। আমি তোমাকে ভাবি শুধু আমার জন্য। অন্য কারো জন্য না। সেরকম দিন আসার আগেই আমি সব শেষ করে দিব।
মারিয়া : বুঝতে পারছি শিশির।
শিশির : তুমি এখনো কান্নার মতোই করছো। নিজেকে এখানো রোবট ভাবছো। আচ্ছা রোবট তো কখনো আম্মু হতে পারে না। তুমি তো মাইশার আম্মু। রোবট কি এতকিছু বুঝে। কাউকে এত আপন করে ভালোবাসে!! আমার মতো কাউকে ভাবনার জগৎ তৈরি করে দিয়েছে।
মারিয়া : না পারে না,তুমি কি আমাকে নিয়ে ভাবো!আমি কি সত্যি মাইশার আম্মু তাহলে!??শিশির : হুম আমার সব ভাবনায় তুমি। আর তুমিই তো ওর আম্মু।
মারিয়া : আসলে অন্যদের কথা শুনে আমার মন খারাপ লাগছিলো। আর কখনোই এরকম হবে না।
ওদের সময়গুলো এভাবেই যাচ্ছিলো। শিশির জানতো মারিয়া কে ছাড়া ওর একসময় একা থাকতে হবে। সেই দিন টা যেকোনো সময় উপস্থিত হয়ে যাবে। একদিন ওর ইউনিভার্সিটি তে সেমিনার হলো। যেখানে ওকে নিয়েই আলোচনা করা। সবাই বলছিল শিশির রোবোটিক্স সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান আছে সেগুলার কিছু প্রমান পাওয়া গেছে। শিশির বিশেষ ধরনের রোবট বানাতে সক্ষম সেসব ও ধারণা করছে। শিশির সরাসরি না করে দিলো। বাসায় এসে দুশ্চিন্তা মনে মারিয়া কে সব বলল।
মারিয়া : আমাকে সবার সামনে প্রকাশ করলে যতটা কষ্ট পাবো তারচেয়ে বেশি খুশি হবো আমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিলে।
শিশির :সেরকম যদি করি আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো কি করে!?আবার আমি মরে গেলেও তো তোমাকে কোনোভাবেই প্রকাশ করবো না।
মারিয়া : আমি থাকবোনা কিন্তু আমার সব কিছু তো থাকবে তোমার সাথে।
কিছু দিন পর শিশির জানতে পারলো ও যে আমেরিকায় রোবোটিক্স নিয়ে ট্রেনিং নিয়েছে সে কাগজপত্র গুলো কিভাবে যেনো বের করে ফেলছে। প্রশাসন ওকে জানালো যদি কোন রোবট তৈরি করে থাকে সেটা যেন উনাদের কাছে প্রদর্শন করে। অথবা রোবট তৈরি ডাটা দেখায়। ও বুঝতে পারলো মারিয়া কে যত দ্রুত সম্ভব একদম নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে হবে।
শিশির : মারিয়া, প্রিপারেশন নাও,এটাই তোমার জন্য শেষ দেখা আমার সাথে। আমি সব কিছু ঠিক করছি।
মারিয়া ওর দিকে নিষ্প্রানভাবে তাকালো। আর বলল: হুম। খুব কষ্ট লাগবে, শিশির?
-‘কিছু টের পাবে না’ ফিসফিস করে জবাব দিলো শিশির। ওর সারা শরীরে ঠান্ডা ঘাম নামছে। অনেক বেশি মারিয়া কে ভালোবেসে ফেলছে। নিজ হাতে তাকে শেষ করতে যাচ্ছে কিছু না দেখা শত্রুদের জন্য। ও ইচ্ছে করলে মারিয়া কে বাচিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু সেটার জন্য সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে হবে। ও চায় না মারিয়াকে নিয়ে এসব লাঞ্চনার শিকার হতে। হাত কাপছে ওর এসব শেষ করতে। সবকিছু শেষ হওয়ার আগে মারিয়া বলছিল : ভালোবাসি অনেক। শিশিরের চোখ দিয়ে পানি পড়লো ওর শেষ ভয়েসটা শুনে। কিছু হ্রিংস্র মানুষদের জন্য ওর অবুঝ ভালোবাসাকে ধ্বংসস্তুপ বানাতে হলো
মারিয়া কে ছাড়া ওর অনেকগুলা বছর চলে গেছে। মাইশা ও স্কুল শেষ করে কলেজে উঠেছে। শিশির প্রতিদিনকার মতো আকাশের তারাগুলো দেখে আর মারিয়া সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা ভাবে। তারাগুলো মনে হয় নিভু নিভু হয়ে আসছে। শিশিরের মনে হয় ওর জীবনটা ও এরকম নিভু নিভু হয়ে যাচ্ছে। পার্থিব জীবনে মারিয়ার অপার্থিব সপ্ন দেখে বেঁচে আছে। হঠাৎ করে ওর ভাবনার অবসান হলো মাইশার ডাকে।
‘বাবা তুমি খাবে না, এখানো বসে আছো। ‘
‘পরে খাবো’।
‘ হুম বসে বসে এখনো আমার রোবট আম্মুর কথা ভাবছো। তাড়াতাড়ি আসো, খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
‘তুই যা আমি আসছি…।’
সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো সময়ের সাথে শেষ হয় না। বরং বেড়ে যায়। সেটা যেরকমই হোক। পাশে থাকুক বা নাই থাকুক। ভালোবাসা অবিরাম।
সমাপ্ত