একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩৮

0
5951

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩৮
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?

{না পড়ে কেউ কমেন্ট করবেনা। আজ কমেন্টে আড্ডা দিবো?। গল্পটা পড়ে তোমাদের অনুভুতি মতামত কমেন্ট করো । কেউ নাইস,নেক্সট,স্টিকার কমেন্ট করবেনা । যারা কমেন্ট করেনা তাদের কেও অনুরোধ করছি মতামত জানানোর জন্য । বিকজ আমি কমেন্টপ্রেমি?}

গত চারদিন থেকে তানভীর লাবিবাকে না দেখতে পেয়ে পাগল প্রায় । লাবিবাকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছে ইসমাইল সাবিনা । কাজ থাকার জন্য গ্রামে আসতে পারেনি তানভীর । ফোন দিলেও ফোন ধরে না । এদিকে ফেসবুক আইডিও নিয়ে রাখা হয়নি । অবশেষে একদিনের ছুটি নেয় । ভার্সিটি শেষে বিকেল দিকে বেড়িয়ে পড়ে গ্রামে যাওয়ার উদ্দ্যেশে । তিনঘন্টার পথ আসতে আসতে চার ঘন্টা লেগে যায় । ঝুম ঝুম বৃষ্টিও শুরু হওয়ার কারনে। পথে শপিংমল গুলো দেখে খুব নামতে ইচ্ছা করছিলো তানভীরের । দুষ্টু পুতুলের কাছে যাচ্ছে কি নিয়ে যাবে সে ? নেমেই গেলো গাড়ি থেকে । মলে ঢুকে একটা একটা করে ড্রেস দেখতে লাগলো । পরক্ষনেই মনে হলো দুদিন পর তো স্টাডি টুরে পাহাড়ে যাচ্ছে সবাই ..শপিং টা না হয় করেই নেওয়া যাক । লাবিবার জন্য কমফরটেবল কয়েকটা গাউন কিনে নেয় । দুটো ট্রাভেলিং ঝোলানো ব্যাগ । স্টোনের সিম্পলের ভিতর কিছু অরনামেন্টস নিয়ে নেয় । পায়ের মাপ না জানায় আর কিনতে পারে না । ইসমাইল সাবিনা, বেলাল,সখিনার জন্যেও পাঞ্জাবী শাড়ি কিনে নেয়। ঝিরি ঝিরি রাতের বৃষ্টিতে ড্রাইভ করতে দারুন লাগছে সাথে দুষ্টু পুতুলকেও মিস করছে । এতোক্ষনে উল্টা পাল্টা বক বক শুরু করে দিতো । আর সেগুলো শুনতে শুনতে তানভীরের মাথায় রাগ চেপে বসতো । বড্ড অভিমানীনী পুতুল বউটা তার ।খান বাড়িতে না যেয়ে সোজাসুজি লাবিবার বাসায় আসে । এ বাসায় আসতে বাধা নেই তার । কয়দিন পরে জামাই হবে বলে কথা ।বৃষ্টি মাথায় করে বাসার কলিং বেল এ চাপ দিলে কিছুক্ষনের মধ্যেই লাবিবা দরজা খুলে । লাবিবা দরজা খুলে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । তানভীর যে এসেছে এটা অবিশ্বাস্য তাও বৃষ্টি ভেজা রাতে । তানভীর লাবিবাকে ঠেলেই ভিতরে ঢুকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে । সোফায় ব্যাগ গুলো রেখে বলে
— এতো লেট হয় দরজা খুলতে ?এমনিতেই ভিজে গেছি দেখছো তারপরও দরজা আটকিয়ে দাড়িয়ে আছো আমাকে আরো ভেজাবে বলে । হা করে তাকিয়ে আছো কেনো ? ব্যাগ গুলো নিয়ে যাও রুমে । কাকা কাকীদের জন্যেও আছে দেখে নিও ।
লাবিবা এখনো সেভাবেই অবাক হয়ে দাড়িয়ে । তানভীরের গলা শুনে ইসমাইল সাবিনা বেলাল ভিতরে তাদের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে । এসময় তানভীরকে কেউ আসা করেনি । তানভির সবাইকে সালাম জানায় । সাবিনা খাবারের আয়োজন করতে চলে যায় । সখিনা বাপের বাড়ি গিয়েছে দুদিন আগে ফেরেনি এখনো। বেলাল ইসমাইলের মুখটা ভারি দেখতে পায় তানভীর । টুকটাক কথাও বলে যাচ্ছে তারা । তবুও যেনো তানভীরের কাছে ব্যপারটা কেমন লাগছে । লাবিবা ব্যাগ গুলো নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে । এতোগুলো শপিং দেখে কেদে ফেলে । কেনো এনেছেন এগুলো ? লাগবেনা আমার । সব আপনার ঐ বিয়ে করা বউকে দিতে পারেন না ? আমার জন্য কেনো আনা হয় এগুলো ? প্যাকেট গুলো ফেলে দিতে নিয়েও ফেলে দিতে পারে না । বুকের মাঝে আকড়ে ধরে চোখের জল ফেলতে থাকে । খাবারের জন্য ডাকা হলে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেড়িয়ে আসে লাবিবা । বেলাল বলে –তানভীর বাবা তুমি চেঞ্জ করো ।ঠান্ডা লেগে যেতে পারে । মুক্তার শার্ট প্যান্ট দিচ্ছি তোমাকে । পরতে সমস্যা নেই তো ? তানভীর মাথা নাড়িয়ে না করে । বেলাল শার্ট প্যান্ট এনে দেয়। তানভীর হাতে নিয়ে লাবিবাকে বলে চলো । ইসমাইল আটকাতে নিলেও আটকাতে পারে না । বাধা দিতে নিজেই বাধা পাচ্ছে সে । লাবিবাও পিছু পিছু আসে । না এসে উপায় নেই। সবার সামনে ব্যপারটা কেমন দেখায় যেনো। তানভীর রুমে এসে শার্ট খুলে লাবিবার হাতে দিয়ে মাথার চুল ঝাকায় হাত দিয়ে । সত্যি পুরো ভিজে গেছে । গেঞ্জিটাও খুলতে খুলতে বলে –আমিযে পুরো ভিজে গেছি তোমার তো সেদিকে খেয়াল ই নেই । কাকা খেয়াল করলো অথচ তুমি খেয়াল করলে না । লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে লাবীবা চুপ চাপ দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে । সাদা নেট কাপড়ের একটা থ্রিপিচ পড়েছে সে। স্মিগ্ধ ফুলা ফুলা চোখ । এলোমেলো চুল । চোখ আটকে যায় তানভীরের। আজ দ্বীতিয় বারের মতো থ্রিপিচে দেখছে তার দুষ্টু পুতুলকে । প্রথমবার তো উড়না ছাড়া দেখেছিলো কিন্তু আজ সুন্দর করে উড়না পড়া । বড় বড় লাগছে আজ পুতুলটাকে । এতো নিশ্চুপ কেনো আজ ? তানভীর এগিয়ে এসে দুহাতে মুখটা উপরের দিকে তুলে চোখে চোখ রাখে । লাবিবার চোখ বন্ধ। গালে আঙ্গুলে স্লাইড করে তানভীর ।
—দুষ্টু পুতুল …চোখ খুলো। দেখো আমি এসেছি । তোমায় না দেখে কিভাবে থাকি বলোতো । আগে যে পিক দেখে মনকে ভুলিয়ে রাখতাম । এখন যে তাতে আর হয়না । লাইভ না দেখলে বুকে ব্যথা শুরু করে । চোখ জ্বলতে থাকে । আমি যে ভিজে আছি তুমি দেখছো না ? আমার যদি ঠান্ডা লেগে যায় তখন আমি কিন্তু বাসায় যাবো না । তোমার কাছেই থাকবো তুমিই সেবা করবে ।
—আপনার বউ সেবা করবে ।
—তুমিই তো আমার বউ । আমিতো তোমাকে বউ হিসেবে মেনেই নিয়েছি । তুমিও তো …
তানভীরকে ছেড়ে বাথরুমে চলে যায় লাবিবা । টাওয়েল নিয়ে এসে বলে –ধরুন। মাথা শরীর মুছে নিন।
তানভীর মাথাটা লাবিবার সামনে হালকা নিচু করে নুইয়ে নেয় । লাবিবাকে দিয়েই যে মাথা মুছিয়ে নিবে এটা না জানা কিছু নয়। টাওয়েল দিয়ে ভালো করে মাথা মুছে দেয় লাবিবা । মুছা শেষ হলে দাড়িয়ে পড়ে লাবিবা।মাথা তুলে তানভীর বলে
–গা মুছার জন্য কি বলে দিতে হবে ?
—আপনি মুছে নিননা …।
তানভীর মুখটা সোজা করে ধরে বুকের দিকে তাক করে। হাত দুটো বুকের উপর রাখে ।
—আমার দিকে তাকাতে এতো সমস্যা হচ্ছে কেনো ? আমি কি পরপুরুষ নাকি । তোমার মাঝে তো লজ্জা ব্যপারটা খুবই কম কাজ করে । থার্ড ইয়ার এক্সামটা শেষ হতেই আমার ঘরে নিয়ে চলে যাবো । মাত্র কয়েকটা দিন ।
লাবিবা তানভীরের বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে কেদে উঠে । তানভীর যেনো জানতো এমনটাই হবে । এতোক্ষনের জমানো অভিমানটা কান্না হয়ে বের হচ্ছে ।
—-আমি কিছুতেই আপনার থেকে দুরে যেতে পারছিনা । আপনাকে কিছুতেই এক মুহুর্তের জন্য ভুলে থাকতে পারছিনা । ফোন পর্যন্ত অফ করে রেখেছি । যতোই অভিমান রাগ হয়ে থাকনা কেন আপনি সামনে এলে সব উবে চলে যায় । আপনার ছোয়াতে আমার সব কষ্ট চলে যায় ।
—তুমি কি আমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে চাইছো দুষ্টু পুতুল ? তুমি যদি দূরে সরে যাও আমার সাজানো বাগানের ফুল গুলো সব ঝরে যাবে দুষ্টু পুতুল । আমিও ঝরে যাবো তুমি কি সেটাই চাও ?
ইসমাইলের গলার আওয়াজ পেতেই লাবিবা তানভীরকে ছেড়ে দূরে দাড়িয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। তানভীর টাওয়েল পেচিয়ে দ্রুত প্যান্ট চেঞ্জ করে । শার্ট পড়তে গিয়ে দেখে এটা সুট করেনা তানভীরের বডিতে । লাবিবা বলে –আপনার শার্ট আছে আমার কাছে । দাড়ান দিচ্ছি । আলমারি থেকে সাদা শার্ট এনে তানভীরের হাতে দেয় ।
—সরি। আপনার শার্ট টা আমি নিয়ে এসেছিলাম কাউকে না বলেই । ধুয়ে দিয়েছি দুদিন আগে । পড়ুন সমস্যা নেই ।
তানভীর শার্টে নাক ঢুবিয়ে স্মেল নিয়ে মুচকি হেসে বলে –শার্ট থেকে তো তোমার গায়ের স্মেল আসছে দুষ্টু পুতুল । —ঐটা ডিটারজেন্টের স্মেল হবে হয়তো। —তোমার স্মেল আমার চিনতে প্রবলেম হয়না কখনো দুষ্টু পুতুল । লাবিবা উল্টো দিকে ঘুরে তাকায় ।
______
ডাইনিং এ খাওয়া শেষে ইসমাইল বলে —তোমাদের মধ্যে কি কোন প্রবলেম হয়েছে বাবা ? লাবিবা এ বিয়েতে হটাৎ করেই অমত করছে । আমি যতদূর ওর থেকে জানতে পারলাম তোমাদের মধ্যে তৃতীয় কেউ চলে এসেছে । সেটা কি সত্যি ?
তানভীর প্রশ্ন শুনে বেশি একটা অবাক হলোনা । বেলাল সাবিনা ইসমাইল কে সবটা বুঝিয়ে বললো। ইসমাইল সব শুনে বলে —আমার বোকা সোকা মেয়েটাকে কাদিয়ে ঠিক করোনি তুমি তানভীর । তুমিতো জানতে ও কেমন । এসেছো যখন এখন ওকে বুঝাও । বাসায় এসেছে থেকে আমার মেয়ের চোখ ফুলা থাকে সবসময় । আমি আর দেখতে চাই না এমনটা।
—কাকা আমিকি লাবিবার কাছে যেতে পারি ? আপত্তি নেইতো আপনাদের? মানে আমি …
—তোমার উপর পূর্ন বিশ্বাস আছে আমার । তার জন্য ই লাবিবাকে তোমার হাতে তুলে দিতে চাইছি ।যেতে পারো । সবাই নিজেদের ঘরে চলে গেলে তানভীর ও লাবিবার রুমে চলে আসে । লাবিবা খাটে বসা ছিলো। তানভীর লাবিবার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসে । লাবিবা চিৎকার করতে গেলে তানভীর মুখ চেপে ধরে । গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও উঠে বসে । গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে । লাবিবা ভয় পেয়ে মিনমিন করে বলে —স্যার..ও স্যার.. আমরা কোথায় যাচ্ছি ? আপনি কি আমাকে মেরে ফেলবেন ? আমার তো বিয়েই হয়নি ??
—বিয়ে ছাড়াই বাসর করতে যাচ্ছি । এনি প্রবলেম ??
—কিহ !!! ও আমার আল্লাহ ..স্যার আমি ছোট মানুষ.. মুসলমান মানুষ?
–তোমার সতিনের সাথে দেখা করতে চাইলে প্যানপ্যান করা বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকো । সাহস কি করে হয় তোমার বিয়েতে অমত জানাতে আমিতো সেটাই বুঝতে পারছিনা । দেখা করার পর বাসর করবো তোমার সাথে। ফ্যামেলিতে আর জীবনেও উল্টা পাল্টা কথা বলার সাহস পাবে না । সতিনের কথা শুনে লাবিবা গুটিশুটি হয়ে বসে পড়ে। চোখ থেকে বেয়ে পড়ে নোনা জলের ধারা । তানভীর ফুপানো আওয়াজ শুনে লাবিবার দিকে তাকায় ।
–পৃথিবীতে দুই ধরনের মেয়ে আছে । এক হলো প্রিয় মানুষটিকে পাওয়ার জন্য তৃতীয় পক্ষকে খুন পর্যন্ত করে দেয় । দুই নিরবে কেদে সরে আসে প্রিয় মানুষটির থেকে বোকার মতন। যেমন তুমি । আই হেট দিজ গার্ল দুষ্টু পুতুল ।
কোয়ার্টারে এসে ভিতরে ঢুকে লাবিবার হাত ধরে । রুম গুলোর লাইট অন করে দেয় সবগুলোর । একটা রুমে এসে লাবিবাকে বলে –যাকে দেখতে আসছো দেখে নাও। পুরো রুম জুড়েই সে রয়েছে । লাবিবা চারিদিকে তাকিয়ে অবাক। পুড়ো রুম জুড়ে শুধু লাবিবার ছবি ।
সেই ক্লাস এইট থেকে এখন পর্যন্ত সমস্ত ছবি । কয়েকটা ছবি দেখে অবাক হয় লাবিবা। তানিয়ার সাথে দেখা হলেই মেয়েটা সেলফি সেলফি কুলফি কুলফি করে এই জন্য এতো জালাতো। সব ইউকে তে ট্রান্সফার হতো তানিয়ার হাতেই । জলতুলিতে আকা কিছু ছবি দেখেও লাবিবা অবাক হয় । কি সুন্দর ফিনিশিং দেওয়া । এগুলো সব তানভীর একেছে …।
পেছন থেকে তানভীর জড়িয়ে ধরে লাবিবাকে ।
— নয় বছর হলো একটা আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকাকে দেখেছিলাম রাস্তায় বসে কাদতে । মেয়েটার কান্নাসিক্ত মুখটা জুড়ে ছিলো অজস্র মায়া । সেই মায়াতে তৎক্ষনাত ঢুব দিয়েছিলাম আমি আর উঠতে পারিনি । কখনো পারবোওনা । সেই মায়া তে ঢুবতে ঢুবতে ভালোবাসার খাদে পড়ে যাই আমি । বুঝে গিয়েছিলাম আমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত এই খাদেই ঢুবে থাকবো আমি । দুরে থেকেও একবিন্দু কমেনি আমার এই ভালোবাসা বরং প্রতিনিয়তো বেড়েছে যেমনটা বেড়েছে সেই দুষ্টু পুতুলের রুপ। সেই রুপে অন্ধ এই চোখ দুটো পারেনি আর কারোদিকে তাকাতে । কখনো পারবেও না । আমি চাইওনা আমার দুই বাহুর মাঝে যে পুতুলটা আছে বোকার মতো কেদেকেটে চোখ ফুলিয়ে নিয়েছে সেই রুপমীনিটা আমাকে অন্যদিকে কখনো তাকাতে দিক । ননদ ননদাই জামাই তো মজা করবেই। বোকার মতো সেই মজাকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কোনো মানেই হয়না । গায়ে গতরে শুধু বড়োই হয়েছো ..বুদ্ধি সুদ্ধি আর বাড়েনি ..আর বড্ড অভিমান করতে শিখেছো ।
— স্যার.. ও স্যার..আমার খুব কাদতে ইচ্ছা করছে। আমি একটু কাদবো ।
—উহু..আমিতো এখন বাসর করবো যেনো আর না কথাটা ফেমেলিকে না বলতে পারো।
—-বলবোনা আই প্রমিজ ইউ ।

To be continue ____

®লাবিবা___?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here