একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি,29,30,31

0
800

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি,29,30,31
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৯

রাত বারোটা বেজে ছাব্বিশ মিনিট।অর্থ আর আরাফ বাড়িতে এসে পৌছিয়েছে সবে মাত্র।ক্লান্ত দেহ টেনেটুনে কোনরকম সোফায় বসলো অর্থ আর আরাফ।রায়হানা বেগম দু গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দিতেই দুজনে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।পানি পান করা শেষে অর্থ সোফায় মাথা এলিয়ে দিলো।শরীরটা আর চলছে না যেন।রায়হানা বেগম বললেন,
‘ খাবি না তোরা?’
অর্থ কোন জবাব দিলো না।তাই আরাফ বলে,
‘ আন্টি আমরা দুজন খেয়ে এসেছি।আজ যাদের সাথে মিটিং ছিলো তাদের ডিনারের জন্যে ইনভাইটেশন দেওয়া হয়েছিলো।সেই কারনে আমাদেরকেও উনাদের সাথে ডিনার করতে হয়েছে।’
আরাফের কথা শুনে রায়হানা বেগম চিন্তিত হয়ে বললো,
‘ তোরা খেয়ে নিয়েছিস?কিন্তু মেয়েটা এই অসুস্থ শরীর নিয়েই তো না খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।এখন কিভাবে খাওয়াবে ওকে?’
অর্থ ধপ করে চোখজোড়া মেলে তাকালো মায়ের দিকে।বললো,
‘ প্রাহি খায়নি মা?’
‘ না।মেয়েটাকে এতো করে বললাম কিছু খেয়ে নেহ।কিন্তু বারবার বললো তুই আসলে নাকি খাবে।দুপুরেও তেমন একটা কিছু খায়নি।রুমে ওকে দেখার জন্যে গিয়েছিলাম দেখি একগাদা চিপ্স আর চকলেট খেয়ে সারারুম ভরে রেখেছে।তাই দুপুরেও ভালোভাবে খেতে পারিনি।এমন করলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।’
অর্থ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কি করবে অর্থ।রাগ করেও লাভ নেই।এইযে আজ সারাদিন রাগ করে থাকলো অর্থ।এতে তো ওর বুকটাই জ্বলেপুরে খাঁক হয়ে গিয়েছে।বারবার প্রাহির করুন মুখশ্রীটা ভেসে উঠেছে চোখের সামনে।মিটিংরুমে কয়েকবার বেখায়ালি হয়ে গিয়েছিলো অর্থ।ভাজ্ঞিস আরাফ ওকে সামলে নিয়েছে।অর্থ শীতল কন্ঠে বলে,
‘ তুমি একপ্লেট খাবার দিয়ে দেও তো মা।আমি উপরে গিয়ে ওকে খাইয়ে দিবো।’
রায়হানার যেন চিন্তা মুক্ত হলো।তার ছেলে যখন বলেছে তখন আর কোন টেন্সন নেই।রায়হানা বেগম চলে যেতেই।আরাফ ও হাই তুলে উঠে দাঁড়ালো বললো,
‘ আমি ঘুমোতে গেলাম।গুড নাইট!’
‘ শুভ রাত্রি!’
আরাফ চলে গেলো নিজের রুমে।এদিকে রায়হানা বেগম খাবার নিয়ে আসতেই অর্থ ওর মাকে ঘুমিয়ে পরতে বলে নিজেও রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
______________
দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো অর্থ।সাথে সাথে চোখ পরলো বিছানায় সয়নরত প্রাহির দিকে।মেয়েটা অনেকটা এলোমেলোভাবেই ঘুমোচ্ছে।গায়ের টপ্সটা পেটের একটু উপরে উঠে গিয়েছে।ফলে ফর্সা পেটটা ড্রিমলাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।গায়ে উড়নাটাও নেই।প্লাজুটাও হাটুর উপরে উঠে গিয়েছে।অর্থ শুককো ঢোক গিললো।নারী দেহের প্রতিটা আকর্ষনীয় ভাঁজগুলো যেন তীব্রভাবে টানছে ওকে।অর্থ চোখ বুজে ফেললো বিরবির করে বলে,
‘ এই মেয়ে নির্ঘাত একদিন আমায় মেরে ফেলবে।’
এগিয়ে গিয়ে খাবারটা টেবিলের উপর রাখলো।তারপর প্রাহির কাছে গিয়ে খুব সাবধানে ওর সবকিছু সামলে দিয়ে ভালোভাবে সুইয়ে দিলো।এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে গিয়ে গালে স্পষ্ট অশ্রুরেখার দেখা মিললো।ধ্বক করে উঠলো অর্থ’র বুকটা।ও কি বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললো মেয়েটাকে?নাহলে এইভাবে তো এইভাবে কাঁদতো না।বুকের বা-পাশটায় চিনচিনে ব্যাথার উপলব্ধি করতে পারলো অর্থ।দুহাতে প্রাহির গাল দুটো আলতো স্পর্শ করলো।খুব সাবধানে অতি আদুরেভাবে ঠোঁটের ছোঁয়া দিলো কপালে।আস্তে আস্তে পুরো মুখশ্রীতে।প্রাহি হালকা কেঁপে উঠলো।অস্পষ্টভাবে গুঙ্গিয়ে উঠলো একটু।ঘুমকাতুরে গলায় বিরবির করে বলে,
‘ ছুঁ…ছুঁবেন না আ…আমায়। আ..আপনি খুব খারাপ।আ….আমি অপেক্ষা করেছিলাম আপ… আপনার জন্যে।ধরবেন না আমায়!’
অর্থ মায়া মায়া চোখে তাকালো প্রাহির দিকে।মেয়েটা দিনদিন ওকে এতোটা পাগল করে দিচ্ছে যে ও নিজের মাঝেই নিজে থাকে না।অর্থ প্রাহির কানের কাছে মুখ নিলো ফিসফিস করে বলে,
‘ আর এমন করবো না জান।আর অপেক্ষা করাবো না আমার বউটাকে।এখন থেকে আমার বউটার সাথে তিনবেলা খাবার খাবো।আমার যতো কাজই থাকুক না কেন!প্রমিস!’
প্রাহির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।তা দেখে অর্থও হাসলো।প্রাহি আবারও ঘুমে তলিয়ে যেতেই অর্থ উঠে গিয়ে জামাকাপড় নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে ডুকে ফ্রেস হয়ে নিলো।আজ সারাদিন বাহিরে ছিলো।শরীরে কতো ধুলোবালি এইভাবে ফ্রেস না৷ হয়ে প্রাহির কাছে যাওয়া ঠিক হবে নাহ।ফ্রেস হয়ে বের হয়ে অর্থ খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে বিছানায় এসে বসলো।প্রাহিকে সাবধানে টেনে নিজের বুকে নিয়ে আসলো।সাবধানে ভাত মাখিয়ে একলোকমা ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে বলে,
‘ হা করো প্রাহি খেয়ে নেও।’
প্রাহির ঘুমের মাঝে এতো ব্যাঘাত ভালো লাগছে না।বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করেই বলে,
‘ উফ! ভালো লাগছে না।কেন এমন করছেন।আমি ঘুমাবো!’
‘ আচ্ছা তুমি ঘুমাও আমি তো মানা করছি না।শুধু আমি তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খেয়ে নেও!’
প্রাহির আর কথা বলতে ইচ্ছে করলো না।চুপচাপ খেতে লাগলো খাবারটা।অর্থও এইভাবে খাওয়াতে লাগলো। হঠাৎ প্রাহি বলে,
‘ আর খাবো না!’
অর্থও আর জোড় করলো না।প্লেট’টা রেখে সাবধানে আবার প্রাহিকে সুইয়ে দিলো।বাকি খাবারটুকু নিজেই খেয়ে নিলো।উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে নিয়ে প্রাহির মুখ মুছিয়ে ওকে পানি খাইয়ে দিলো।অতঃপর বিছানায় সুয়ে প্রাহিকে নিজের বুকে টেনে নিলো।আহ! সারাদিন পর যেন একটু প্রশান্তি পেলো অর্থ।প্রাহির চুলে মুখ ডুবিয়ে নিজেও ঘুমের রাজ্যে পারি দিলো।
___________
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে কারো বাহুডোরে আবিষ্কার করলো প্রাহি।বুঝতে আর বাকি রইলো না মানুষটি কে।চোখ তুলে তাকালো প্রাহি।অর্থ’র ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকাতেই হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেলো প্রাহির।ঘুমন্ত অবস্থাতে লোকটাকে আরো সুন্দর লাগে।আলতো হাতে অর্থ’র মুখশ্রীতে হাত বুলালো প্রাহি।কে বলবে এই লোকটা এতো রাগি।কাল কি রাগটাই না দেখালো।অথচ দেখো কিভাবে ওকে বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছে।প্রাহি অর্থ’র কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।এতে অর্থ’র ঘুম খানিকটা পাতলা হয়ে এলো।ঘুম ঘুম গলায় বলে উঠলো,
‘ উফ! প্রাহি নড়েনা এতো।ঘুমাচ্ছি তো আমি!’
প্রাহি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। লোকটার ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর শুনে মনে হয় এই বুঝি প্রাহির হার্ট এট্যাক হয়ে গেলো।প্রাহি মিনমিন করে বলে,
‘ আমাকে তো উঠতে দিবেন?আপনি ঘুমান!’
অর্থ প্রাহিকে আরেকটু নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ উহুম! তুমিও আমার সাথে ঘুমাবে!’
‘ উফ এসব বললে কিভাবে হবে?আমি কাল প্রায় সারাদিনই ঘুমিয়েছি।এখন আর ঘুমোতে পারবো না।ছাড়ুন আমায়।আর আপনি আমাকে ধরেছেন কেন?দূরে যান।কাল আমার সাথে অনেক খারাপ বিহেব করেছেন একদম ধরবেন না আমায়!’
অর্থ চোখ খুলে তাকালো।প্রাহির সর্ব মুখশ্রীর দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
‘ আমি আমার বউকে ধরেছি। বুঝেছো মেয়ে।এতো বেশি বুঝো না!’
প্রাহি ভড়কে গেলো।এলোমেলো দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে,
‘ এখন বউ হয়েছি না?কাল তো এই বউয়ের কথা একটুও মনে ছিলো না।আমাকে কাল সারাদিন ইগনোর করেছেন!’
অর্থ ঝুকে আসলো প্রাহির দিকে আরেকটু।দুষ্টুমি কন্ঠে বলে,
‘ আমি তোমাকে ইগনোর করলে তোমার কি? বাই চান্স প্রেমে টেমে পরে গেছো নাকি আমার? প্রেমে পরলে বলে দিতে পারো।’
প্রাহি অর্থ’র কথায় মনে মনে বলে, প্রেমে তো পড়েছি সেই কবে। আজ থেকে না আরো সাত বছর আগে থেকে।সেটা তো আর আপনি জানেন না।আপনি আমাকে ইগনোর করলে আমার কেমন লাগে তা তো আপনি বুঝতে পারেন নাহ।বুঝলে কি আমাকে এইভাবে ইগনোর করে কষ্ট দিতেন?নিষ্ঠুর লোক!
তবে মুখে আর কিছু বললো না।অর্থ প্রাহির গালে ধরে নিজের দিক ফিরালো।প্রাহি তাকাতেই অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ তুমি আমার কথা শুনো না একটুও।তাই কাল বুঝালাম এইভাবে কারো কথার দাম না দিলে কেমন লাগে।আমি তোমার ভালোর জন্যেই বলি প্রাহি।তাও তুমি আমার কথা শুনো না।তবে এখন থেকে আর ইগনোর করবো না।আমার কথা যখন থেকেই ইগনোর করবে তখনই চেপে ধরে চুমু খেয়ে নিবো।তাও একেবারে ঠোঁটে, বুঝেছো?’

#চলবে____________

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩০
একসপ্তাহ কেটে গিয়েছে এর মাঝে।প্রাহি এখন পুরোপুরিভাবে সুস্থ।তাই ও আজ ভার্সিটি যাবে।অর্থই ওকে পৌছে দিয়ে আসবে।ব্রেকফাস্ট করছে সবাই।আরাফ সবাইকে কিছু একটা বলার জন্যে হাসফাস করছে।অর্থ ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।প্রাহির দিকে দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দিতেই প্রাহি নাক সিটকায়।অর্থ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে প্রাহি করুনভাবে তাকায়।অর্থ ধমক দিয়ে বলে,
‘ চুপচাপ শেষ করো!’
অর্থ’র এমন রাম ধমক খেয়ে আর কিছু বলার সাহস পেলো না প্রাহি।চুপচাপ দুধটুকু নিজের পেটে চালান করতে লাগলো।অর্থ এইবার গম্ভীর কন্ঠে আরাফকে উদ্দেশ্য করর বলে,
‘ কিরে কিছু বলবি তুই?এমন অস্থির হচ্ছিস কেন?’
আরাফকে খানিক গম্ভীর দেখালো।সেইভাবেই উত্তর দেয়,
‘ দেখ অর্থ রাগারাগি করবি না।আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সবার ভালোর জন্যেই নিয়েছি।’
‘ কি সিদ্ধান্ত সেটা তো বলবি?’
আরাফ লম্বা একটা শ্বাস ফেললো।বললো,
‘ আমি নতুন ফ্লাট কিনেছি অর্থ।কাল সেখানেই সিফ্ট হয়ে যাবো।আর কতো থাকবো এখানে?অনেক তো হলো?এইভাবে বন্ধুর বাড়িতে দিনের পর দিন থাকাটা দৃষ্টিকটু দেখায়!’
আরাফের কথায় অর্থ’র মাঝে কোন ভাবান্তর হলো না।ওকে বেশ শান্ত দেখালো।শান্ত স্বরেই বলে,
‘ ওকে তুই যা ভালো মনে করিস।আমি সবসময় তোর পাশে আছি।’
আরাফ সস্তির নিশ্বাস নিলো।হাসি মুখে কিছু বলবে তার আগে নজর যায় হিয়ার দিকে।হিয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে।হিয়ার চোখে চোখ পড়তেই হিয়া দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।তপ্ত একফোটা জল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে।হিয়া তা অতি সাবধানে মুছে নিলো।কিন্তু তা দৃষ্টির আড়াল হলো না আরাফের।আরাফ মলিন হাসলো।হিয়া দৃষ্টি নত রেখেই বলে,
‘ আমার খাওয়া শেষ।আমি আসছি।ভার্সিটি যেতে দেরি হয়ে যাবে।’
হিয়া বেড়িয়ে যেতেই।হেমন্ত,ইশি,অর্থ,প্রাহি,আরাফ ওরাও বেড়িয়ে পরলো।ইশি হেমন্ত’র সাথে বাইকে করে চলে গেলো।এদিকে প্রাহি বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অর্থ গাড়ি নিয়ে আসছে না।এইভাবে কতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে।আজ একটা জরুরি ক্লাস আছে।এমনিতেই কতোগুলো দিন ভার্সিটি যায়নি।সামনেই এক্সাম।আর মাত্র তিন কি আড়াই মাস আছে।প্রাহি যখন বিরক্তিতে তেতো মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ একটা বাইক এসে ওর সামনে ব্রেক করে।প্রাহি ভয় পেয়ে যায় এতে।তাকিয়ে দেখে বাইকে অর্থ বসে আছে ।মুখশ্রী গম্ভীর।প্রাহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ এসব কি?আর আপনি এইভাবে মানে বুঝলাম নাহ?’
অর্থ তীর্জক চাহনী প্রাহির দিক নিক্ষেপ করে বলে,
‘ তোমার ওতো বুঝা লাগবে না।জলদি উঠো বসো বাইকে।দেরি হয়ে যাচ্ছে!’
প্রাহি তপ্ত নিশ্বাস ফেলে।বাইকের পিছনে উঠে বসলো।একহাত অর্থ’র কাঁধে আলগোছে রাখলো।এতে অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ আমাকে ভালোভাবে ধরে বসো।এমন আলগোছে আমাকে ধরলে দেখা যাবে তুমি পিছন থেকে পরে গেছো!’
প্রাহির রাগ লাগলো অর্থ’র কথায়,বললো,
‘ আপনি আমাকে সবসময় এমন খোটা দিয়ে কথা বলেন কেন?হ্যা?’
‘ তোমাকে খোটা দিলাম কোথায়?আমি তো সত্যি কথাই বলছি তোমাকে।’
‘ হয়েছে আপনার আর সত্যি কথা বলা লাগবে না।জলদি চলুন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
অর্থ আর কথা বাড়ালো না।বাইক স্টার্ট দিয়ে ছুটলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।অর্থ এতো জোড়ে বাইক চালাচ্ছে যে প্রাহি নাকেমুখে কিছু দেখছে না।ভয়ে একদম সিটিয়ে গিয়েছে প্রাহি।প্রাহি অবশেষে সহ্য করতে না পেরে বলে,
‘ এমন জোড়ে চালাচ্ছেন কেন?আপনারা দুভাই কি একরকম নাকি?এমনভাবে কেউ বাইক চালায়?প্লিজ স্পিড কমান!’
অর্থ বললো,
‘ আমি এইভাবেই বাইক চালাই।ইভেন আরো জোড়ে চালাই।আজ তুমি আমার সাথে দেখে একটু কম স্পিডেই চালাচ্ছি।আমাকে ভালোভাবে ধরে বসো প্রাহি।’
প্রাহি উপায় না পেয়ে একহাত দিয়ে অর্থ’র কাধ শক্ত করে ধরে রাখলো।অন্যহাত দিয়ে অর্থ’র কোমড়ের অংশ আকড়ে ধরলো।অর্থ মুচকি হেসে লুকিং গ্লাসে প্রাহির দিকে তাকালো।বাতাসের কারনে মেয়েটার চুল এলোমেলো হয়ে সারামুখে বিচড়ন করছে।মায়া মায়া চেহারাটায় এখন অনেক অনেকগুলো আদর দিতে ইচ্ছে করছে অর্থ’র কিন্তু চেয়েও পারবে না অর্থ।মুচঁকি হেসে নিজের প্রেয়সীকে দেখতে দেখতেই ভার্সিটিতে।প্রাহি সাবধানে নেমে দাড়ালো।অর্থ প্রাহির গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,
‘ নিজের খেয়াল রেখো।আমি আবার আসবো তোমাকে নিতে।আর যদি না পারি ফোন করে জানিয়ে দিবো হেমন্ত’র সাথে চলে যেও কেমন?মন খারাপ করবে না।তবে আমি চেষ্টা করবো আসার।’
প্রাহি আলতো হেসে মাথা দুলালো।অর্থ চোখ বুঝে প্রাহির কপালে চুমু খেলো।প্রাহি’র ঠোঁটের কোনে লাজুক হাসি ফুটে উঠলো।আলতো স্বরে বলে,
‘ আসছি তবে।সাবধানে যাবেন।আর বাইকটা প্লিজ আস্তে চালাবেন।’
অর্থ ঠোঁট কামড়ে হাসলো।মেয়েটা তো আর জানেনা যে ও ইচ্ছে করেই জোড়ে চালাচ্ছিলো যাতে প্রাহি ওকে ভালোভাবে ধরে বসে।তবে অর্থ আর কিছু বললো না।প্রাহির থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে।প্রাহিও নিজের ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
_________________
দুপুর ৩ টা বাজে ভার্সিটি থেকে মাত্রই বাড়িতে ফিরেছে প্রাহি,হেমন্ত আর ইশি।অর্থ ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে যে ও আসতে পারবে না।জরুরি কাজ পরে গিয়েছে।প্রাহির এতে মন খারাপ হয়নি।বরং ভালো লেগেছে যে অর্থ ওকে জানিয়ে দিয়েছে ব্যাপারটা।প্রাহির নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।বিছানায় সুয়ে একটু জিরিয়ে নিলো।তারপর উঠে গিয়ে আলমারির দিকে অগ্রসর হলো।গোসল নিতে হবে ওকে।বাহিরে প্রচন্ড গরম পরেছে ভ্যাপ্সা।বৃষ্টি আসতে পারে আজকে সম্ভবত।আকাশটাও খানিক মেঘলা মেঘলা।আলমারি খুলে নিজের জামা বের কর‍তে নিয়েই ভুলবসত কয়েকটা শাড়িও নিচে পড়ে যায়।প্রাহি বিরক্ত হয়ে বিরবির করে,
‘উফ! তাড়াতাড়ি করতে গেলেই সব কিছুতে এমন দেরি হয় কেন বুঝি না।এখন আবার এইগুলোকে ভালোভাবে গুছিয়ে রাখো।’
প্রাহি শাড়িগুলো আবারও ভাজ করতে লাগলো।নিচে পড়ে যাওয়ার কারনে অনেকটাই অগোছালো হয়ে গিয়েছে।প্রাহির অনেকগুলো শাড়ি।কয়েকটা আর রায়হানা দিয়েছেন, কয়েকটা হেনা দিয়েছেন আর হিয়াজ শিকদার,হিয়ান্ত শিকদারও দিয়েছেন।তবে অর্থ ওকে অনেকগুলো শাড়ি দিয়েছে।কিন্তু পরা হয়নি একটাও প্রাহির।অর্থও কোনদিন জোড় করেনি প্রাহিকে।বলেছে প্রাহি যেটাতে কম্ফোর্ট ফিল করে সেটাই যেন ও পরে।তাই প্রাহি ওতোটা মাথা ঘামায়নি।আসলে প্রাহির শাড়ি পড়তে কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে।তাই প্রাহি শাড়ি পরে না।তবে আজ কালো শাড়িটা দেখে প্রাহির আজ এই শাড়িটা পরতে মন চাচ্ছে খুব।এই শাড়িটাও অর্থ এনে দিয়েছিলো।বলেছিলো কালো রঙ নাকি তার খুব পছন্দ।প্রাহি কালো শাড়িটা বিছানায় রেখে বাকি শাড়িগুলো আলমারিতে তুলে রাখলো।তারপর আবারও বিছানায় ফিরে এলো।কালো শাড়িটাতে হাত বুলিয়ে মুচঁকি হাসলো।পরক্ষনেই অর্থ’র সেদিনের কথাগুলো মনে পরে গেলো।কিরকম অস্থির হয়ে গিয়েছিলো লোকটা।অনেকটা উন্মাদনায় মত্ত হয়ে গিয়েছিলো। কিভাবে ওকে কাছে পাওয়ার আকুলতা জাহির করেছিলো ওর কাছে।তবে প্রাহির সেদিন কিচ্ছু করতে পারিনি।
‘ তোমাকে দেখলেই আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় প্রাহি।নিজেকে তখন নিয়ন্ত্রন করা অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়।আমার ভীতরটা অস্থিরতায় ছেঁয়ে যায়।এই দুরত্ব আর কতদিন প্রাহি?তুমি কি আমায় স্বামি হিসেবে একটুও মানতে পারছো না?আমি কি তোমার উপর খুব জোড় করে ফেলছি?’ অর্থ’র বলা কথাগুলো স্মরন করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রাহি।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।অনেক হয়েছে আর না। অনেক সহ্য করেছে লোকটা।প্রাহি আর তাকে কষ্ট দিতে পারবে না।প্রাহি ভালোবাসে লোকটাকে।আর এও জানে অর্থ’ও ওকে ভালোবাসে।লোকটা গুমড়োমুখো তাই তো ভালোবাসার কথাটা ওকে বলতে পারেনাহ।তবে ভালোবাসা মুখে স্বিকার করবে এমন কিছু না।ভালোবাসা তো অনুভব করার বিষয়।আর প্রাহি অর্থ’র ভালোবাসার গভীরতা প্রতি দিন নতুন নতুন ভাবে অনুভব করে।প্রাহি আর ওর আর অর্থ’র মাঝে কোন দুরুত্ব রাখবে না।আজ নিজেকে সপে দিবে নিজের স্বামির কাছে।নিজেকে পুরোপুরিভাবে বিলিন করে দিবে নিজের স্বামির কাছে।স্বামির ভালোবাসায় নিজের উষ্মতা খুজে নিবে প্রাহি। ও আজ পুরোপুরিভাবে অর্থ’র হয়ে যাবে।কথাগুলো মনে মনে ভাবতেই।ঠোঁটের কোনে লাজুক হাসি ফুটে উঠে প্রাহির।

#চলবে_______________

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩১
টপটপ করে গাল গড়িয়ে পরছে চোখের অশ্রুগুলো। হিয়া আনমনে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।এতো চেষ্টা করেও চোখের জলগুলো আটকাতে পারছে না।আরাফ চলে যাবে এখান থেকে বাক্যটা যতোবার কানে বাজে ততোবার মনে হয় কি যেন একটা বিষাক্ত ছুড়ির ন্যায় ক্ষতবিক্ষত করে দেয় ওর হৃদপিন্ডটা।এমন নিস্তব্ধ পরিবেশে একটা কন্ঠ ঝংকার তুললো,
‘ এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো হিয়া?আর তুমি কি কাঁদছো?’
আরাফের কন্ঠস্বর কানে পৌছাতেই হকচকিয়ে যায় হিয়া।দ্রুত নিজের জলগুলো লুকানের জন্যে অন্যদিকে ফিরে যায়।আরাফ মলিন হাসে।সে দেখেছে হিয়া কাঁদছে।শুধু শুধু ব্যর্থ চেষ্টা করছে মেয়েটা।ভীতরে ভীতরে এতো কষ্ট পাচ্ছে তাও মুখ ফুটে ওকে ভালোবাসার কথাগুলো ব্যক্ত করছে না।এতো জেদি কেন মেয়েটা?আরাফ বিরক্তির শ্বাস ফেললো।নিজের ব্যালকনি টপকে হিয়ার ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো।হঠাৎ আওয়াজে হিয়া পিছনে ফিরে তাকায়।তাকাতেই আরাফকে দেখে অভিমান করে চলে যেতে নেয়।আরাফ সাথে সাথে হিয়ার হাত টেনে ধরে।তারপর বলে,
‘ কেন এমন লুকোচুরি খেলছো হিয়া?কেন স্বিকার করছো না তুমি আমায় ভালোবাসো?’
‘ আপনি বলেছেন বুঝি?’ হিয়ার অভিমানি কন্ঠস্বর।আরাফ অবাক হলো।এরজন্যেই বুঝি মেয়েটার এতো অভিমান?ও ভালোবাসার কথাটা ব্যক্ত করেনি বলেই কি এতো রাগ ওর উপর?আরাফ হাসে।ধীরে এগিয়ে যায় হিয়ার দিকে।দুরুত্ব কমায় দুজনার।হিয়ার কানের কাছে মুখটা এগিয়ে নেয়।হিয়া ঘাবড়ালো,ভড়কালো।সরে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না।তার আগেই আরাফের ভরাট কন্ঠস্বর ওর কানে এসে লাগলো,’একটা কথা কি জানো?আমি,আমার জীবনকে ভালবাসি কারণ এটি তোমাকে দিয়েছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। কারণ তুমিই আমার জীবন।’
হিয়ার সারাশরীর কেপে উঠে আরাফের মুখের প্রতিটা বাক্য শুনে।কি ভয়ানক বানিগুলো।ভালোবাসার কথা শুনলে বুঝি এমনি লাগে?হিয়ার কেমন যেন লাগছে।এক দিকে আরাফের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে খুশি হয়েছে অপরদিকে আরাফ চলে যাবে এই কথাটা ভাবলেই দম আটকে আসে ওর।হিয়া চোখ বুজে বড়বড় নিশ্বাস নিলো।তারপর ধরা গলায় বলে,
‘ কি হবে এতো ভালোবেসে?চলেই তো যাবেন আপনি।ভালোবাসলে কেউ কি নিজের ভালোবাসার মানুষকে এইভাবে ফেলে চলে যায়?’
‘ আমি যাবো!’ আরাফের এহন বাক্য শুনে হিয়া আতংকিত নজরে তাকায়।সেদিকে মুচকি হেসে আরাফ বলে,
‘ আমি যাবো কারন কয়েকদিন পর তো এই বাড়ির একমাত্র মেয়েকে আমার বউ করে নিয়ে আসবো।তাই আর আগে সব ব্যবস্থা করতে হবে নাহ?এইভাবে বিয়ের আগে শশুড়বাড়ি থাকলে তো সবাই আমাকে আজেবাজে বলবে আমার বউটা এতে কষ্ট পাবে।তাই আমি চাইছি বিয়ের আগে যেকয়টা দিন আছে আমি আমার ফ্লাটে গিয়ে থাকবো।বিয়ের পর নাহয় যতো ইচ্ছে শশুড়বাড়ি বেড়াবো।তখন কেউ আমাকে বাধা দিলেও শুনবো না।বউয়েরও নাহ!’
আরাফের কথায় হিয়া ফিঁক করে হেসে দিলো।আরাফ মুগ্ধ হয়ে দেখলো সেই হাসি।ইসস,মেয়েটা এইভাবে কেন সবসময় হাঁসে নাহ?মেয়েটার হাঁসিটা একেবারে কলিজায় গিয়ে লাগে।আরাফ বুকে হাত দিয়ে বলে,
‘ এইভাবে হেঁসো না মেয়ে।বুকে বড্ড লাগে।’
হিয়া মুঁচকি হেসে ঝাপিয়ে পড়ে আরাফের বুকে।বিরবির করে বলে,
‘ আমি আজ থেকে হাঁসবো।আজীবন হেঁসেই যাবো।কারন আমি আজ থেকে বলতে পারবো আমি আপনাকে ভালোবাসি।’
আরাফ তৃপ্তিতে চোখ বুজে নেয়।আরো নিবীড়ভাবে জড়িয়ে নেয় নিজের প্রিয়তমাকে নিজের সাথে।
__________
ইশি রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে হেমন্ত’র দিকে।আর হেমন্ত বাচ্চা বাচ্চা লুক দিচ্ছে ইশির দিকে।ইশি ভয়ানকভাবে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে,
‘ তুই কি বাচ্চা?আমি কতোক্ষন যাবত এই পড়াটা তোকে বুঝাচ্ছি।কিন্তু তুই এইভাবে আমার দিকে ভ্যাবলার মতোন তাকিয়ে থাকছিস কেন?’
হেমন্ত নাক মুখ কুচকে ফেলে ইশির কথায়। দাঁত খিচিয়ে বিরবির করে বলে,
‘ আমার কি দোষ?এইভাবে শুভ্র রঙে নিজেকে আবৃত করে, ভেজা চুলে, আমার সামনে আসলে আমি তো তাকিয়ে থাকতেই বাধ্য হবো।পড়া কিভাবে মাথায় ঢুকবে আমার?সব দোষ তো তোর।’
ইশি পুরোটাই শুনেছে।বলে,
‘ কি?কি বললি তুই?’
হেমন্ত রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ কি বলেছি?শুনিস নি?নিজেকে এইভাবে আমার সামনে হাজির করলে আমার ধ্যান পড়ার দিকে কিভাবে যাবে বলতো?তোকে এইভাবে দেখে যে আমার ভীতর কিছুমিছু হচ্ছে তা কি তুই বুঝিস না?’
হিয়া ধরাস করে হাত দুটো টেবিলে রেখে।তেজ নিয়ে বলে,
‘ গুষ্টি কিলাই তোর কিছুমিছুর।তুই এইভাবে থাক।ফেইল যদি করেছিস পরিক্ষায়।আমি তোকে জামাই হিসেবে পরিচয় দেবো না।একদম দিবো নাহ!’
হেমন্ত কপাল চাপড়ে বলে,
‘ এইজন্যেই বলে বেষ্টফ্রেন্ড বিয়ে করতে নেই।তার উপর বেষ্টফ্রেন্ড যদি হয় মেধাবি ছাত্রী।তাহলে তো জীবন ত্যানাত্যানা হয়ে যায়।’
‘ হ্যা তো যা না।অন্য কাউকে বিয়ে কর।আমাকে বিয়ে করেছিস কেন?আমি কি বলেছিলাম?রাস্তার মাঝে তো আমাকে বিয়ে করার জন্যে রাস্তার পাগলদের মতো গড়াগড়ি খাচ্ছিলি!’
ইশি কথাগুলো বলে ধুপধাপ পা ফেলে ব্যালকনিতে চলে যায়।মেজাজ ওর পুরো চটে আছে।একটা অংক সেই একঘন্টা যাবত বুঝাচ্ছে ইশি হেমন্ত’কে।কিন্তু হেমন্ত সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু ওর দিকেই তাকিয়ে থাকে।এমন করলে কি চলে?এর মাঝে ইশিকে পিছন থেকে ঝাপ্টে ধরে হেমন্ত।ইশি অভিমানে বারবার ছোটার জন্যে চেষ্টা করছে।কিন্তু হার মানলো হেমন্ত’র কাছে।হেমন্ত হেসে দিয়ে বলে,
‘ কি সব তেজ শেষ?আমার সাথে পেরে উঠা এতো সহজ নাহ বউ!’
হেমন্ত’র মুখে বউ ডাক শুনে ইশির সমস্ত রাগ গলে পানি হয়ে গেলো।গলে গেলো একদম বরফের ন্যায়।ঘুরে তাকায় হেমন্ত’র দিকে।হেমন্ত ইশির ছোটছোট চুলগুলো কানেদ পিছনে গুজে দেয়।ইশি পরম আয়েশে হেমন্ত’র বুকে মাথা রাখে।হেমন্ত’ও আগলে নেয় নিজের ভালোবাসাকে। ইশি ধীর গলায় আওড়ালো,
‘ দেখ হেমন্ত।আমি যা বলছি তোর ভালোর জন্যেই বলছি।আমি চাইনা তোর জীবনটা নষ্ট হোক।পরিক্ষায় রেজাল্ট যেন তোর খারাপ না হয়।কেউ যেন এই অভিযোগ করতে পারেনা যে,হেমন্ত বিয়ে করে বউ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে তাই পড়ার সময় পাইনি। বিয়ে করার কারনেই ওর রেজাল্ট খারাপ হয়েছে।এসব যেন না বলতে পারে।তাহলে আমি নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাবো হেমন্ত।আমি চাই তুই ভালোভাবে পড়াশোনা কর।তারপর ভালো একটা চাকরি পেয়ে নিজের পায়ে দাড়া।আমি যেন গর্ববোধ নিয়ে সবার সামনে মাথা উচু করে বলতে পারি, দেখো আমার স্বামি পেরেছে আমার স্বামি কারো থেকে পিছিয়ে নেই। আমি ভালোবাসি তোকে হেমন্ত।তোকে ভালো রাখার জন্যে আমি সব করতে পারবো হেমন্ত,সব!’
ইশির প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে হেমন্ত।তারপর ইশির মাথাটা বুক থেকে তুলে বলে,
‘ আমি করবো সব করবো।তোর সকল কথা রাখবো।কোন অভিযোগ দিবো নাহ।প্রমিস!’
ইশি মিষ্টি হাসলো।হেমন্ত ঢোক গিললো।নিজেকে আটকে না রেখে ইশির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে গভীর চুমুতে লিপ্ত হলো ও।ইশি আবেশে হেমন্ত’র চুল খামছে ধরে।তারপর সমান তালে তাল মিলাতে থাকে হেমন্ত’র সাথে।
_________
পুরো রুমটা কালোর রাজ্যে তৈরি করা হয়েছে। জানালার পর্দাগুলো কালো লাগানো হয়েছে।বাতাসের দাপটে তা ক্ষনে ক্ষনে উড়ছে।কালো মোমবাতিগুলো বাতাসের ধাক্কায় দুলেদুলে উঠছে।আর নিজেদের আলোতে রুমটা আরো মোহনীয় করেছে।ফ্লোরে লাল গোলাপের পাপড়ী আর কালো বেলুনের ছড়াছড়ি।বিছানায় বিছানো কালো চাঁদরের উপর লাল গোলাপ দিয়ে হার্ট শেপ আঁকা সেখানে লিখা ” I Love You Aartho!’ বিছানার চারদিকে কালো আর লাল গোলাপ দিয়ে সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করানো হয়েছে।মোহনীয় পরিবেশ।অর্থ পুরো রুমটা অবাক হয়ে শুধু দেখে যাচ্ছে।অর্থ নিজের লাইফে কখন এতোটা সার্প্রাইজড হয়নি কোনদিন।অর্থ’র হৃৎপিন্ডটা বুঝি এইবার লাফালাফি করতে করতে ওর বুক চিরেই বেড়িয়ে আসবে।এসব কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না অর্থ।নিজেকে কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগছে।অর্থ আবারো চারদিকে চোখ বুলালো। নাহ,কাঙ্খিত ব্যাক্তিটি রুমের কোথাও নেই।অর্থ সাতপাঁচ না ভেবে সোজা চলে গেলো ব্যালকনিতে।সেখানে যেতে দেরি অর্থ সাথে সাথে ব্যালকনির দরজা ধরে সামাল দিলো।নাহলে আরেকটু হলেই তো ও পরে যেতো।এ কাকে দেখছে অর্থ।ওর রুমে এমন সাক্ষাৎ হুরপরী দেখে তো নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।অর্থ জোড়েজোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।চোখ বুঝে বারবার মাথা ঝাকাচ্ছে।প্রাহি এতোক্ষন লজ্জায় চোখ তুলে ঠিকভাবে তাকাতে পারিনি অর্থ’র দিকে।কিন্তু এইবার অর্থকে এমন করতে গেলে শাড়ির কুচিগুলো ভালোভাবে সামলে নিয়ে এগিয়ে যায় অর্থ’র দিকে।অর্থ’র হাতে আলতো স্পর্শ করে আতঙ্কিত গলায় বলে,
‘ কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন?আপনার কোথায় কষ্ট হচ্ছে?আমাকে বলুন প্লিজ।’
প্রাহির কন্ঠস্বর শুনতেই তাকায় অর্থ।প্রাহির বুকটা ধ্বক করে উঠে অর্থ’র এমন চাহনী দেখে। অর্থর চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।কেমন যেন অস্থির চাহনী।প্রাহি অর্থ’র গালে দুহাত রেখে বলে,
‘ কি হলো আপনার?এমন করছেন কেন?বলুন নাহ!’
অর্থ কয়েকপলক তাকিয়ে থাকলো প্রাহির দিকে।তারপর হুট করে প্রাহিকে টেনে নিয়ে আসে নিজের বুকে মাঝখানে।প্রাহি অর্থ’র এহন কান্ডে অবাক হয়ে যায়।এদিকে অর্থ চোখ বুজে নেশাময় আবার অনেকটা ব্যাকুল কন্ঠে বলে,
‘ কি করেছো তুমি প্রাহি?এইভাবে আমাকে পাগল করে দিলে?দেখো প্রাহি তোমার এমন ঝলসানো রূপ দেখে আমি অসুস্থ হয়ে পরেছি প্রাহি।আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না প্রাহি?এ কি করলে তুমি আমার?এমন ভয়ানক রূপ ধারন করে আমার সম্মুখে কেন আসলে প্রাহি?আমি তো নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছি প্রাহি।এখন যদি ভুল কিছু করে ফেলে প্রাহি?কি করবে তুমি প্রাহি?প্রাহি বলো না কথা বলো?’
এদিনে প্রাহি জমে বরফ হয়ে গিয়েছে।কি জবাব দিবে ও?ও তো নিজেও যায় অর্থ করে ফেলুক কিছু ভুল। করুক একটু পাগলামি।প্রাহি সব সহ্য করে নিবে মানুষটার জন্যে এই মানুষটার জন্যেই তো আজ তার মনের মতো সেজেছে প্রাহি।কালো শাড়ি,কালো চুরি,চোখে গাঢ়ো করে কাজল টেনেছে।লম্বা কেশগুলো আলগোছে হাতখোপা করে তাতে লাগিয়েছে দুটো কাঠগোলাপ,আলতা পড়েছে হাতে,পায়ে। মানুষটার ভালোবাসায় নিজেকে মুরিয়ে নেওয়ার জন্যে প্রাহি যে নিজেকে আজ পুরোপুরি তৈরি করেছে।অর্থ প্রাহিকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো প্রাহির দিকে।আবিষ্ট কন্ঠে বলে,
‘ সূর্যের দীপ্তিমান কিরণকেও হার মানানো যায় আজ সেটাও দেখলা।রামধনুর সাত রং কেও হরণ করা যায় আজ তাও দেখলাম।বসন্তের প্রকৃতির রূপকেও ফিকে করা যায় আজ সেটাও দেখলাম।
কারণ আজ তোমার রূপের সামনে এদের রূপ ম্লান হয়ে গেছে।’
প্রাহির অন্তর কেঁপে উঠে অর্থ’র কথায়।লজ্জায় লাল হয়ে উঠে মুখশ্রীটা।অর্থ মনের সবটুকে আদর ঢেলে প্রাহির কপালে চুমু খায়।প্রাহি আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। অর্থ দুহাতে প্রাহির কোমড় আঁকড়ে ধরে প্রাহিকে আরো নিকটে নিয়ে আসে।বলে,
‘ আজ আমি এক ইঞ্চি দুরুত্বও মানবো না আমাদের মাঝে।সব তোমার দোষ।কেন পাগল করলে আমায়।’
প্রাহি মনে মনে বলে, এমন দোষ আমি হাজার বার করতে রাজি অর্থ।কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারছে না মেয়েটা।আজ শুধু অর্থ বলছে আর প্রাহি শুনছে।কারন লজ্জা নামক অদৃশ্য এক শিকল প্রাহিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে যেমন।
‘ জানো প্রাহি?একটা অবাক করা বিষয় কি জানো
একটা সময় তোমাকে চিনতাম না।আর এখন তোমাকে ছাড়া আমার চলেই না।তোমাকে দেখার পরে।যে ভালোবাসা শুরু হয়েছে।
মনের ভিতর তার শেষ বলে কিছু নেই।’
প্রাহি চোখ ভরে আসে অর্থ’র প্রতিটা কথায়।লোকটা যে ওকে এতোটা ভালোবাসে তা বুঝতে পারিনি প্রাহি।প্রাহি কি করবে?কোথায় যাবে?এতো সুখ কোথায় রাখবে ও?কিন্তু তাও প্রাহি বড্ড লোভী।এতো কিছুর পরেও অর্থ’র মুখে ভালোবাসি শোনার জন্যে প্রাহি লোভী।অর্থ হয়তো বুঝতে পারছে প্রাহির মনের কথা।তাই কাল বিলম্ব না করে চট করে প্রাহিকে কোলে তুলে নেয় অর্থ।প্রাহি নিজেকে সামলাতে একহাতে অর্থ’র কাঁধ আঁকড়ে ধরে আরেকহাতে অর্থ’র বুকের কাছের শার্ট আঁকড়ে ধরে।অর্থ মুঁচকি হেসে প্রাহির লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া নাকের ঢগায় আলতো চুমু খেলো।তারপর সরে আসতে প্রাহি ব্যাকুল নয়নে তাকিয়ে রইলো অর্থ’র দিকে।অর্থ কানের কাছে ঠোঁট নিলো।ওর প্রতিটা গরম নিশ্বাস প্রাহি অঙ্গসহ হৃদয় শুদ্ধ কাঁপিয়ে দিচ্ছে।অর্থ অনেকটা সুর দিয়েই মনের কথাগুলো ব্যক্ত করলো,
‘ আঁধার রাতের পরী যে তুমি,
আমার হিঁয়ার পাখি..
মনের আলোয় তোমারই ছবি,
কোথায় তোমাকে রাখি!
তোমারই ছোঁয়ায় প্রাণ পায় মোর
সুখ যে রাশি রাশি;
সূর্যালোকে, বর্ষা জলে
শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।’
আহ! এইতো এইতো প্রাহির কানের কাছে বলা ভালোবাসি কথাটা প্রাহির সাত বছরের ভালোবাসে অপেক্ষা করার সার্থকতা দিয়েছে।প্রাহি আর পারলো না নিজেকে সামলাতে অর্থকে ঝাপ্টে ধরে কেঁদে দিলো।অর্থ হাসলো।সে জানে প্রাহির এই কান্না সুখের কান্না।অর্থ শীতল কন্ঠে আবারও সেই ভয়ানক বানিগুলো প্রতিধ্বনীত করলো,
‘ ভালোবাসি বউ।ও বউ, শুনছো? ভালোবাসি!’
প্রাহি ঢুকরে কেঁদে উঠে বলে,
‘ আমিও ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি।আই লাভ ইউ।’
অর্থ চোখ বুঝে ফেলে।অর্থ’র আজ এতো সুখ একসাথে পেয়ে বোধহয় পাগল হয়ে যাবে।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।আলতো করে প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে প্রাহির বিপরীত পাশে গিয়ে সুয়ে পরে।গভীর নয়নে প্রাহিকে দেখে অর্থ।প্রাহি সিক্ত চোখে তাকাতেই হুট করে প্রাহির অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দেয় অর্থ।সর্বাঙ্গ ঝংকার তুলে কেঁপে উঠে প্রাহির।দুহাতে অর্থ’কে ঝাপ্টে ধরে।অর্থ যেন উন্মাদ হয়ে গিয়েছে প্রাহির ঠোঁটেজোড়ায় মাতালের মতো চুমু খাচ্ছে অর্থ।খানিকবাদে সরে আসে অর্থ।প্রাহি নিভু নিভু চোখে তাকায় অর্থ’র দিক।অর্থ আবারও ঝুকে গিয়ে প্রাহির সর্বমুখশ্রীতে আদরে আদরে ভরিয়ে তুলছে।এদিকে প্রাহির ছোট্ট হাত দুটো অর্থ’র বলিষ্ট দেহে জড়ানো শার্টের প্রতিটা বোতাম খুলে ফেলেছে।অর্থ উঠে বসে শার্টটা খুলে ছুড়ে ফেলে দেয় দূরে।তারপর হাত বাড়িয়ে প্রাহির শাড়ির আচঁল সরিয়ে দেয়।লজ্জায় জুবুথুবু প্রাহি তৎক্ষনাৎ অন্যদিকে ঘুরে যায়।এদিকে প্রাহির উন্মুক্ত প্রতিটি নারী দেহের ভাঁজগুলো যেন নিজেদের সৌন্দর্য দ্বিগুন রূপে বেড়ে গিয়েছে।বেষামাল হলো অর্থ,এলোমেলো হলো মস্তিষ্ক।প্রাহির কোমড়ের ভাঁজে চুমু খেলো অর্থ।প্রাহি বিছানার চাঁদর খামছে ধরে অস্পষ্ট স্বরে গুঙ্গিয়ে উঠে। অর্থ’র মাতাল করা স্পর্শগুলো সহ্য করতে না পেরে উঠে বসে অর্থকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মুখ লুকালো অর্থ’র বুকে।কিন্তু অর্থ তা হতে দিলে তো।অর্থ একটানে প্রাহির খোপা করা চুলগুলো খুলে ফেলে।আলতো হাতে প্রাহির চুলের গোঢ়া নিজের হাতের মাঝে নিয়ে প্রাহির মুখশ্রী উঁচু করে ধরে।প্রাহি চোখ বুজে থরথর করে কাঁপছে।অর্থ মুখ ডুবিয়ে দেয় প্রাহির গলায়।ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো প্রাহিকে। সেই অবস্থাতেই প্রাহিকে আবারও সুইয়ে দেয়।প্রাহি অর্থ পিট খামছে ধরে নিজের সুখের জানান দিচ্ছে। আজ পূর্ণতা পাবে তাদের ভালোবাসা।পূর্ণতা পাবে পেলো প্রাহির সাত বছরের অপেক্ষা,ভালোবাসা।আজ দুজন দুজনকে উজাড় করে ভালোবাসবে।ভালোবাসার এক রঙ্গিন দুনিয়ায় তারা ভ্রমন করবে।

#চলবে____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here