রাগী বর,পর্ব:০২

0
2918

রাগী বর,পর্ব:০২
লেখিকা:বুশরাতুজ্জামান ছোঁয়া

ছোঁয়া শুধু কনকের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।কনক ঘুম থেকে উঠে গেছে।ছোঁয়াকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাগি গলায় বলছে,,,
.
কনক ::::: এইভাবে তাকিয়ে দেখছেন টা কি,,,,
আর আমি আপনাকে বলেছি না আমার সামনে না আসতে আর আমি আপনাকে আমার স্ত্রী বলে স্বীকার করি না,,,,
আপনি এখন আমার চোখের সামনে থেকে দূর হন,,,,
.
ছোঁয়ার গলা শুকিয়ে গেছে।ছোঁয়া বিড়বিড়িয়ে বলছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: কালকে থেকে সেই যে রাগ দেখানো শুরু করেছে রাক্ষস একটা,,,,
.
কনক ::::: কিছু কি বললেন,,,(রাগ দেখিয়ে)
আপনি এখনও আমার সামনে রয়েছেন যান বাহিরে যান,,,,
.
ছোঁয়া ::::: যাচ্ছিই তো,,,,
রাক্ষসের মত ব্যবহার করেন কেন,,,(বিড়বিড়িয়ে)
.
এক দৌড়ে ছোঁয়া ঘরের বাইরে চলে আসল।আর সোজা নিচে চলে গেল পিছন ঘুরেই তাকালো না।লাবন্য ছোঁয়াকে ডাক দিল,,,,
.
লাবন্য ::::: ভাবি এইদিকে আস,,,,
মা তোমাকে ডাকছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: জ্বি আসছি,,,,
.
ছোঁয়া সেই ঘরে গেল লাবন্য যে করে রয়েছে।ছোঁয়া ঘরে যেয়ে দেখে ছোঁয়ার শ্বাশুড়ি আমেনা বেগম কত শাড়ি আর কত গহনা বের করে রেখেছে।ছোঁয়াকে বসিয়ে দিয়ে বলছে,,,,
.
আমেনা ::::: তোমায় কিছু দেওয়ার আছে মা,,,,
আর কিছু বলারও আছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: জ্বি আম্মু বলুন,,,
.
আমেনা ::::: এই শাড়ি আর এই গহনা আমার শ্বাশুড়ি আমাকে দিয়েছিল আর বলেছিল উনার ছেলেকে সবসময় শাড়ির আঁচলে বেঁধে রাখতে,,,,
আর আজকে আমি তোমাকে দিলাম এইগুলো আর আমি তোমাকেও বলছি আমার এই রাগি ছেলেটাকে সবসময় শাঁড়ির আঁচলে বেঁধে রাখবে,,,,
কথা দাও মা আমাকে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: জ্বি আম্মু কথা দিচ্ছি আমি সারাজীবন উনাকে আমার শাড়ির আঁচলে বেঁধে রাখব,,,,
.
আমেনা ::::: আর একটা কথা বলার ছিল,,,,
তুমি কালকে থেকে কলেজে যাবে আর পড়ালেখা কন্টিনিউ করবে,,,
.
ছোঁয়া ::::: থেংক ইউ আম্মু,,,,
.
আমেনা ::::: লাবন্য যা তোর ভাবিকে এই শাড়ি আর গহনা পড়িয়ে দে,,,,
আজকে তো অনেকেই নতুন বউয়ের মুখ দেখতে আসবে,,,,
আর এমনিতেও অনুষ্ঠান করা হবে,,,,
.
লাবন্য ::::: জ্বি মা,,,,
চল ভাবি,,,,
.
লাবন্য আর ছোঁয়া এই ঘর থেকে বের হয়ে গেল।ছোঁয়া দেখল যে লাবন্য ছোঁয়াকে নিয়ে কনকের ঘরে নিয়ে যাচ্ছে।ছোঁয়া লাবন্যকে বাধা দিয়ে বলছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: একি তুমি উনার ঘরে নিয়ে যাচ্ছ কেন,,,,
এখন উনার ঘরে যাওয়া যাবে না,,,,
.
লাবন্য ::::: কেন ভাবি,,,
.
ছোঁয়া ::::: এখন উনি ব্যস্ত আছেন উনাকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না,,,,
আর তুমি জানই তো উনি সব কাজ নিয়ে অনেক সিরিয়াস থাকেন আর কেউ ডিস্টার্ব করলে প্রচুর রেগে যান,,,
আর পুরোই রাক্ষসদের মত লাগে উনাকে তারপর গলা শুকিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যাই,,,,
.
লাবন্য ::::: হাহাহা,,,
বুঝতে পেরেছি,,,
চল ভাবি তুমি আমার ঘরে চল,,,,
আমার ঘরে নিয়ে যেয়েই তোমাকে সাজাই,,,,
.
ছোঁয়া ::::: হুম,,,
.
ওরা দুইজনে লাবন্যের ঘরে গেল।লাবন্য ছোঁয়াকে প্রথমে শাড়ি পড়িয়ে দিল হালকা একটু সাজিয়ে দিল আর গহনা গুলো পড়িয়ে দিল।লাবন্য আর ছোঁয়া দুইজনে মিলে গল্প করছে।লাবন্য ছোঁয়াকে জিজ্ঞাসা করল,,,
.
লাবন্য ::::: তোমাদের বাসর রাত টা কেমন হল,,,,
.
ছোঁয়া ::::: মনে করিয়ে দিও না কালকে রাতের কথা,,,
মানছি যে উনি রাগি একটা মানুষ আর খুবই আনরোমান্টিক তাই বলে কি উনি কালকেও রাগ দেখাবেন,,,,
উনার মধ্যে কোন রোমান্টিকতা নেই পুরাই আনরোমান্টিক,,,,
রাক্ষস একটা,,,,
.
লাবন্য ::::: ভাবি তুমি মাইন্ড কর না ভাইয়া এইরকমই,,,
.
ছোঁয়া ::::: উনি কি ভেবেছেন আমি উনার রাগ সহ্য করে যাব উনি ভুল ভাবছেন,,,,
উনার যদি রাগ থাকে তাহলে আমারও রাগ আছে,,,,
.
লাবন্য ::::: আর রাগ দেখাতে হবে না ভাবি,,,,
তুমি এখন নিচে চল মা ডাকছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: হুম চল,,,,
.
ছোঁয়া আর লাবন্য নিচে চলে আসল।আমেনা ছোঁয়াকে নিয়ে যেয়ে খাবারের টেবিলে বসিয়ে দিল।ছোঁয়ার সামনে খাবার বেড়ে দিল।ছোঁয়ার হাতে অনেকগুলো গহনা দেখে আমেনা ছোঁয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে।
.
কনক ::::: উনার কি হাত নেই উনি কি নিজে খেতে পারেন না,,,(রাগ দেখিয়ে)
.
আমেনা ::::: পারে খেতে নিজে নিজে,,,
হাতে এতগুলো গহনা যে খেতে পারবে না তাই খাইয়ে দিচ্ছি,,,
.
কনক ::::: ডিসগাস্টিং,,,,
.
কনক রাগ করে উপরে চলে গেল।ছোঁয়া আমেনাকে বলছে,,,
.
ছোঁয়া ::::: আম্মু আমি আর খেতে পারব না,,,
.
আমেনা ::::: সবে মাত্র তো এইটুকুই খেলে,,,
আর একটু খাও,,,,
.
ছোঁয়া ::::: না আম্মু বেশি খাই না আমি,,,
বেশি খেলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাই আম্মু,,,,
.
আমেনা ::::: ঠিক আছে,,,
যা লাবন্য বউমাকে ঘরে নিয়ে যা,,,
.
লাবন্য ::::: জ্বি আম্মু,,,
.
লাবন্য ছোঁয়াকে ঘরে নিয়ে গেল।ছোঁয়া মন খারাপ করে বসে রয়েছে কনকের কান্ড দেখে।লাবন্য ছোঁয়াকে জিজ্ঞাসা করছে,,,
.
লাবন্য ::::: কি হয়েছে ভাবি,,,
তুমি মন খারাপ করে বসে রয়েছে কেন,,,
.
ছোঁয়া ::::: উনি এত অদ্ভুত কেন এইভাবে রাগ দেখালেন উনি নিচে,,,,
.
লাবন্য ::::: তুমি মন খারাপ করে থেক না ভাইয়া এইরকমই,,,
.
দুপুর হয়ে গেছে।বউভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।লাবন্য ছোঁয়াকে নিচে নিয়ে গেল।আমেনা ছোঁয়াকে বসিয়ে দিল।ছোঁয়াকে অনেকেই দেখতে এসেছে।ছোঁয়ার পরিবার থেকে সবাই চলে এসেছে।
.
ছোঁয়া দৌড়িয়ে ওর মা বাবার কাছে গেল।দুইজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।ছোঁয়ার মা বাবা ছোঁয়াকে জিজ্ঞাসা করছে,,,
.
ছোঁয়ার বাবা ::::: মা আর কান্না করিস না তোর কান্না কিছুতেই সহ্য করতে পারি না,,,
.
ছোঁয়া ::::: ঠিক আছে আব্বু আমি আর কান্না করব না,,,,
.
ছোঁয়ার মা ::::: তুই ঠিক আছিস তো মা ,,,,
.
ছোঁয়া ::::: জ্বি আম্মু ঠিক আছি আমি,,,,
.
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হয়ে গেছে।সবাই খেতে বসে গেছে।খাওয়া দাওয়া শেষ।খাওয়া দাওয়ার পর লাবন্য বলছে,,,,
.
লাবন্য ::::: ভাবি তুমি ভাইয়ার পাশে যেয়ে বস না ছবি তুলবে,,,,,
.
লাবন্য ছোঁয়াকে জোর করেই কনকের পাশে বসিয়ে দিল।যখন ওরা সবাই দূরে সরে গেল কনক ছোঁয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে ঘরে নিয়ে গেল।ছোঁয়া বারবার বলেই চলছে,,,,
.
ছোঁয়া ::::: আমার হাত ছাড়ুন,,,
আমার খুব লাগছে,,,,
.
কনক ::::: লাগুক না তাতে আমার কি,,,,
আপনি কেন আমার পাশে এসে বসলেন,,,
আপনার সাহস তো বড় কম নই,,,,
কে অধিকার দিয়ে আপনাকে আমার পাশে বসার,,,,
.
ছোঁয়া ::::: স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছে,,,
.
.
.
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here