রাগী বর,১৫,১৬

0
2115

রাগী বর,১৫,১৬
লেখিকা:বুশরাতুজ্জামান ছোঁয়া
পর্ব:১৫
.
সিরাজ রাগতে রাগতে নিজের রুমে চলে আসল ।
নিজের রুমে এসেই মোবাইল থেকে ছোঁয়ার ছবিটা বের করে কিছুখন দেখতে লাগল একদৃষ্টিতে ।
কিছুখন পর কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে লাগল‌ ,,,
.
—– তুই কেন বুঝিস না আমি যে সত্যিই তোকে অনেক ভালোবাসি ।
আমি একটু অন্যরকম ভাবে চলতাম ফিরতাম তাই তুই আমাকে খারাপ ভাবতিস ।
কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে প্রচুর ভালোবাসি ।
একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখ তোর ভালোবাসার জন্য আমি পুরোপুরিই পাগল হয়ে গেছি ।
আমি জানি তুই আমাকে কলেজের প্রথম দিন থেকেই দেখতে পারিছ না ।
কিন্তু আমি প্রথম দিন থেকেই তোকে ভালোবাসি ।
সেইদিন তোর মত অত সুন্দর মানে মনের দিক থেকে সুন্দর মেয়ে জীবনেও খুজে পাই নি ।
মনে পড়ে কলেজের প্রথম দিনের কথা তুই তখন সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলি আর আমি একটা কাজের জন্য নামছিলাম ।
তখন তুই আমার জন্য পড়ে যাচ্ছিলি আমি তোর হাতটা ধরেছিলাম ।
ওইদিন তুই আমাকে হাজারটা বকা দিয়েছিলি কিন্তু আমি শুধু তোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
সেইদিনের পর থেকে তুই আমাকে দেখতে পারিছ না ।
আজও মনে পড়ে সেই দিনের কথা ।
.
সিরাজ ছবিটা নিজের বুকে রেখে কান্না করছে ।
আর কলেজের প্রথম দিন টা কল্পনা করছে ।
বার বার শুধু চোখের সামনে ভাসছে ।
.
সিরাজ একটু আগেই চলে এসেছিল কলেজের প্রথম দিনে ।
সিরাজের খুব ক্ষুধা লেগেছিল তাই ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনতে নিচে নামছিল ।
ঠিক ওই সময় ছোঁয়া সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল আর সিরাজ সিঁড়ি দিয়ে নামছিল ।
ঠিক ওইসময় দুইজনের মধ্যে ধাক্কা লাগে ছোঁয়া একদম পড়েই যাচ্ছিল তখন সিরাজ ছোঁয়ার হাতটা ধরল ।
ছোঁয়া অনেক রেগে গেছে হাতটা ছুটিয়ে নিয়ে তারপর বলছে ,,,
.
—– মেয়ে মানুষ দেখলেই‌ শুধু তার সাথে ইচ্ছা করে ধাক্কা খাওয়া তারপর তার হাত ধরা তাই না ।
একটা বেদব ছেলে ।
ইডিয়ট ।
.
ছোঁয়া এই কথাগুলো বলেই ক্লাসে চলে গেল ।
সিরাজ ছোঁয়ার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে ।
সিরাজের বন্ধুরা সিরাজকে বলছে ,,,,
.
—– দেখছছ মেয়েটার কত বড় সাহস ।
আরমান সিকদারের ছেলেকে বকা দিয়ে গেল ।‌
যেইখানে অন্যসব মেয়েরা এর জন্য তোর সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলতে পারে না সেইখানে তোকে ,,,
.
—– এর জন্যই তো ভালোবেসে ফেলেছি ।
.
এইগুলো সিরাজ ভাবছিল আর চোখের পানি ফেলছিল ।
এরপর থেকেও আরও কত পিছনে ঘুরেছে সিরাজ কিন্তু কোন লাভ হয়নি ।
সিরাজ আবার বলা শুরু করল ,,,
.
—– ড্যাডকে বলেছিলাম যে কথা বলতে তোদের বাড়িতে যেয়ে কিন্তু না তখন ড্যাড তো আমাকে পাত্তাই দেই নি ।
ড্যাড যদি আগে যেয়ে কথা বলত তাহলে আজ তুই আমার হতি ওই কনক চৌধুরির না ।
প্লিজ তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আই না ।
.
সিরাজ ওই ছবিখানা নিয়ে একদম শুয়ে পড়ল ।
.
কনক ছোঁয়ার পানি মুছে দিচ্ছে কনক ছোঁয়ার কাছে আসতেছিল কিন্তু পরে আবার দূরে সরে গেল ।
তারপর বলতে লাগল‌ ,,,
.
—– ছি ছি একি করছিলাম আমি একটা চরিত্রহীনা মেয়ের কাছে যাচ্ছিলাম ।
ছি ছি ।
.
—– আপনার কাছে যদি তাই মনে হয় যে আমি চরিত্রহীনা ঠিক আছে তাহলে আমি চরিত্রহীনা ।
কিন্তু বিশ্বাস করুন ,,,
.
—– তোমাকে বিশ্বাস করা আমার পক্ষে কোনদিনও সম্ভব নয় ।
.
এই কথাগুলো বলে ফোনে কথা বলার ভান করে নিচে চলে গেল ।
কনক চলে যাওয়ার পর পরই আমেনা আসল ওদের ঘরে তারপর বলতে লাগল ,,,
.
—– আমি জানি তুই কিছুই করিস নি ।
এই বিশ্বাস আছে আমার তোমার প্রতি বউ মা ।
.
—– আম্মু আপনি ।
.
—– আমি বাইরে দাঁড়িয়ে সবই শুনছিলাম বউ মা ।
আমি জানি তুমি এমন কিছু করবে না যে তোমার চরিত্রের উপর দাগ পড়বে আর তোমার পরিবারের ।
.
—– আম্মু ,,,, আপনি যে আমাকে বিশ্বাস করতে পেরেছেন তাতেই আমি অনেক খুশি হয়েছি ।
কিন্তু উনি যে আমাকে বিশ্বাসই করতে চাচ্ছেন না ।
.
—– সেইটা তোকেই চেষ্টা করে যেতে হবে স্বামীর বিশ্বাস অর্জনের জন্য ।
ও সরি তুই করে বলে ফেললাম তোমাকে ।
.
—– আম্মু আপনি আমাকে তুই করে বলতে পারেন আপনি আমার গুরুজন ।
আর গুরুজনরা তো ছোটদের তুই করে বলতেই পারে ।
.
—– এখন এইসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে ।
এখন শরীরের দিকে একটু খেয়াল রাখ ।
আর সামনে তো এক্সাম পড়াশুনাই মনযোগ দে ।
আর এখন খেয়ে নাও তো দেখি ।
.
—– আম্মু উনি কি খেয়েছেন ?
.
—– এই তো খেতে বসল ।
.
—– ও ।
.
—– এখন তুমি খেয়ে নাও তো দেখি ।
না খেলে যে আবার ,,,,
.
—– এই তো আম্মু ,,, আমি খেয়ে নিচ্ছি ।
.
ছোঁয়া খাবারের দিকে হাত এগুচ্ছে ততই হাত কাপছে ছোঁয়ার ।
আমেনা বুঝতে পেরেছে এখন ছোঁয়ার নিজ হাতে খাওয়ার শক্তি নেই ।
তাই আমেনা ছোঁয়াকে বলতে লাগল ,,,
.
—– দাঁড়াও আমিই তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি ।
.
আমেনা ছোঁয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে ।
বিয়ের আগে ছোঁয়া যখন অসুস্থ হয়ে যেত তখন ছোঁয়ার মা ঠিক এইভাবেই খাইয়ে দিত ।
সেই কথাগুলো ভাবছে ছোঁয়া ।
একবার ছোঁয়ার খুব জ্বর হয়েছিল এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ।
বিছানা থেকেও উঠতে পারছিল না ছোঁয়া ।
.
জ্বরে মুখ তেঁতো হওয়ার কারনে কিছুই খেতে পারত না ছোঁয়া ।
কিন্তু ছোঁয়ার মা নানান কথা বলে ছোঁয়াকে খাইয়ে দিত ।
শুধু এইটাই বলত ,,,
.
—– জানি এখন এইটা তোর কম্ম নই দাঁড়া আমি তোকেই খাইয়ে দিচ্ছি ।
.
তখন ছোঁয়া ও ওর মায়ের এক কথাই খেয়ে নিত ।
আজকে সেই কথাগুলো ভাবছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।
.
আমেনা ছোঁয়াকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধটা খাইয়ে দিয়ে নিচে চলে গেল ।
ছোঁয়া নিজেকেই নিজে বলছে ,,,
.
—– মা তো বলে গেল আমাকেই চেষ্টা করে যেতে হবে উনার বিশ্বাস অর্জনের জন্য ।
এখন আমি করব টা কি উনার বিশ্বাস অর্জনের জন্য ।
.
বিকাল হয়ে গেছে ।
অনন্যা ছোঁয়ার কাছে আসল ।
আর বলতে লাগল ,,,
.
—– ভাবি ছাদে চল না ।
.
—– কেন ?
.
—– তুমি তো এখন অসুস্থ ।
ছাদে গেলে তোমার মনটা ফ্রেশ হবে আর তোমার শরীরটা একটু সুস্থ হবে ।
.
—– ঠিক আছে চল ।
.
ওরা দুইজনে ছাদে গেল ।
অনন্যা ছোঁয়াকে বলছে ,,,
.
—– জান ভাবি কালকে না আমি ঘুরতে যাচ্ছি ।
.
—– কার সাথে ।
.
—– ওর সাথে ।
.
—– জয় কি তোমায় প্রপোজ করেছিল ।
.
—– হুম । তোমার সাথে ভাইয়ার বিয়ে হওয়ার আগে ।
.
—– আমায় আগে বল নি কেন ?
.
—– তোমাকে বললে যদি ভাইয়াকে বলে দিতে ।
.
—– ধ্যাত পাগলি তোমার ভাইয়াকে বলব কেন ?
.
রাত হয়ে গেছে ।
ছোঁয়া ওর ঘরে যাচ্ছে ।
ছোঁয়া ঘরে যেয়ে দেখে কনক বসে ল্যাপটপে কাজ করছে ।
তখনই ছোঁয়ার মনে পড়ল নিজেকেই চেষ্টা করে যেতে হবে স্বামীর বিশ্বাস অর্জনের জন্য ।
তাই ছোঁয়া বলা শুরু করল ,,,
.
—– ওফ কি মাথা ব্যথা ।
সহ্য করতে পারছি না এই‌ যন্ত্রনা ।
আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না ।
.
তখন কনক সাথে সাথে এসে ছোঁয়াকে ধরল‌।
কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল ।
ছোঁয়া কনককে বলছে ,,,
.
—– প্লিজ আপনি আমার পাশে থাকেন ।
.
—– ঠিক আছে ।
.
ছোঁয়ার অনেক ভালো লাগছে অনেকদিন পর কনককে পাশে পেয়ে ।
কনক মনে মনে ভাবছে ,,,,
.
—– এর কি সত্যি মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে ।
পরীক্ষা করতে হবে ।
.
ঠিক তখনই কনক বলতে লাগল ,,,,
.
—– সাপ ।
.
ছোঁয়া চিৎকার করে উঠল ,,,
.
—– কোথায় সাপ ?
.
—– আপনার নাকি মাথা ব্যথা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না ।
তাহলে এখন দাঁড়ালেন কিভাবে ?
কেন এমনটা করলেন ?
.
—– আপনাকে কাছে পাওয়ার জন্য ।
.
—– আমি তো আপনার কাছে আসতে চাই না ।
.
—– কেন ?
.
.
.
চলবে ।

রাগী বর
লেখিকা:বুশরাতুজ্জামান ছোঁয়া
পর্ব:১৬
.
—– কেন আপনি আমার কাছে আসতে চান না ?

—– কারন আপনাকে আমার প্রয়োজন নেই ।
আপনার মত একটা চরিত্রহীনা মেয়েকে আমার প্রয়োজন নেই ।

—– আমি যে কাজটি করে নি সেই কাজ আপনি আমার উপর জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছেন ।
বিশ্বাস করুন আমি ওই কাজটি করে নি ।

—– আমি আপনাকে একটুও বিশ্বাস করি না ।
আপনার এই মিথ্যে কথাকে তো আমি আরও বিশ্বাস করি না ।
আপনি এখন আমার ঘর থেকে চলে যান ।

—– যাচ্ছি আমি ।
আপনার সামনে আর কোনদিনও আসব না মি কনক ।

—– হ্যা এস না আমার সামনে আজকের পর থেকে ।

—– হ্যা আসব না ।
যতখন না পর্যন্ত আপনি বলবেন আমি আপনার সামনে আসতে পারব ততখন পর্যন্ত আসব না ।

এই কথা বলে ছোঁয়া দৌড়ে চলে গেল ওই ঘর থেকে ।
এক দৌড়ে চলে গেল নিচে । তারপর বসে কান্না করতে লাগল ।
আমেনা আর অনন্যা নিচে বসে টিভি দেখছে । ছোঁয়াকে এইভাবে হঠাৎ নিচে এসে কাঁদতে দেখে অনন্যা আর আমেনা জিজ্ঞাসা করছে ,,,

—– কি হয়েছে ভাবি ? তুমি কান্না করছ কেন ?

—– কি হয়েছে বউ মা ।
কনক কি কিছু বলেছে বউমা ।
কি হয়েছে বউ মা তুমি কান্না করছ কেন ?

—– আমি আর কোনদিন উনার সামনে যাব না ।

—– আবার কি বলেছে কনক ?
আজকেও ফির তোকে সন্দেহ করে নানান কথা শুনিয়েছে ।

কনক নিচে এসেছে ।‌
একটা কাজের জন্য ।
ওর নামে এইভাবে কথা বলতে শুনে বলতে লাগল ,,,

—– সন্দেহ করার আর কি আছে আম্মু ।
যা করার তো অনেক আগেই করে ফেলেছে ।

—– অযথা তুই বউমার উপর মিথ্যে দোষ চাপাচ্ছিস ।

—– অযথা মানে টা কি ?
ওই ছবিগুলোই তো পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে ও এই কাজটি করেছে ।

—– আম্মু আমি কিছুই করেনি ।
শুধু শুধু উনিই আমার উপর ,,,
.
—– এখন সবার সাথে কথা বলাই বেকার ।

এই কথাই বলে উপরে চলে গেল ।
ছোঁয়া আবার বলা শুরু করল‌,,,

—– আমি আর উনার সামনে যাব না ।
আমি উনার সাথে আর একঘরে থাকতে পারব না ।
যতখন না পর্যন্ত উনি বলবেন আমি উনার সাথে থাকতে পারব ।

—– ঠিক আছে ।
আজকে তুমি অনন্যার সাথে থাক‌ ।

—– হুম আম্মু ।

ছোঁয়া অনন্যার ঘরে গেল ।
অনন্যা ছোঁয়াকে বলছে ,,,

—– ভাবি তোমার সাথে কি ভাইয়ার কোন ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে ?

—– কই না তো ।

—– তাহলে ভাইয়া তোমার সাথে এইভাবে কথা বলছিল কেন ?
আর তুমিও ভাইয়ার সাথে না থাকার কথা বলছিলে কেন ?

—– ও কিছু না ।
আসলে আমার ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা তো আমাকে রাত জেগে পড়তে হয় ওইটাতে উনার সমস্যা তাই ওই রকম করছিলেন ।

—– ও ।

—– হুম ।

সিরাজ ছোঁয়ার ছবি দেখছে আর বলছে ,,,

—– ওই শয়তানটা যে কেন এখনও তোকে ডিভোর্স দিচ্ছে না ।
আমি যে তোকে ছাড়া আর এক মুহূর্ত থাকতে পারছি না ।
আই লাভ ইউ সো মাচ ।

বাইরে দাঁড়িয়ে আরমান এইসব কথা শুনছিল ।
আর মনে মনে বলছে ,,,

—– ওই মেয়েটাকে পাওয়ার জন্য আমার ছেলেটা একদম পাগলই হয়ে গেছে ।
না তো কোন কাজ ঠিকমত করছে আর না তো ঠিক মত খাচ্ছে ।
শুধুমাত্র পথের কাঁটা হচ্ছে ওই কনক চৌধুরি ।
আমার ছেলের খুশির জন্য কনক চৌধুরিকে মারতে হয় তাহলে আমি তাই করব ।

ছোঁয়ার পরীক্ষার দিন চলে এসেছে ।
ছোঁয়া সেই কোন সকালে উঠেছে পড়ার জন্য ।
আজকে পরীক্ষা দেখে একটু আগেই যাচ্ছে কলেজে ।
আমেনা ছোঁয়াকে বলছে ,,,

—– ভালোভাবে পরীক্ষা দিস ।

—– জ্বি আম্মু ।

ছোঁয়া পরীক্ষা দিতে চলে গেল ।
পরীক্ষার সময় শুরু হয়ে গেছে ।
ছোঁয়া পরীক্ষা দিচ্ছে ।
অনেক দিন ক্লাস না করার পর অনেক কিছুই লিখতে পারছে ।

কনক অফিসে যাচ্ছে ।
অফিসে যাওয়ার পথে সিরাজের সাথে দেখা হল ।
কনক গাড়ি থেকে নামল ।
কনক সিরাজের সামনে যেয়ে বলছে ,,,

—– তুই এইখানে কি করছিস ?

—– তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে এসেছি ।

—– কি ?

—– তুই এখনও কেন ছোঁয়াকে ছেড়ে দিচ্ছিস না ?

—– আমার ছেড়ে দেওয়ার দরকার কি তুই এসে নিয়ে যা না ।
চিন্তে করিছ না খুব শীর্ঘই ছেড়ে দিব ।

—– কবে ?

—– আমার মনে হচ্ছে না এইখানে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে ।
গাড়িতে উঠ ।

—– ঠিক আছে ।

সিরাজ আর কনক গাড়িতে যেয়ে বসল ।
কনক গাড়ি ড্রাইভ করছে ।
আর দুইজনে কথা বলছে ।
কিন্তু ওরা দুইজনেই জানে না যে গাড়ির ব্রেক ফেইল করা আছে ।
সিরাজকে যে গাড়ি থেকে নামাবে তাও পাড়ছে না ।

যখন সিরাজ আর কনক রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল তখন কেউ একজন এসে গাড়ির ব্রেকফেইল করে দিয়েছে ।
আর সিরাজ এইসবের কিছু জানে না ।
কনক কিছুতেই গাড়ি কন্ট্রোল করতে পারছে না ।
সিরাজ কনককে বলছে ,,,,

—– কিরে গাড়ি থামাচ্ছিস না কেন ?

—– গাড়ি তো ব্রেকই করতে পারছি না ।
কেউ নিশ্চয়ই জেনে বুঝে গাড়ির ব্রেক ফেইল করে দিয়েছে ।

—– কি বলছিস টা কি তুই ?

ওরা এখন যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে সে রাস্তায় এখন কোন মানুষ নেই যে একটু হেল্প চাবে ।
সামনে একটা গাছ দেখা যাচ্ছে এখন ওরা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ।
গাড়ি একদম গাছের সাথে যেয়ে ধাক্কা খেল ।
গাড়িতে একদম আগুন লেগে গিয়েছে ।

কনক সিরাজের মুখকে বাঁচিয়ে রেখেছে ।
কিন্তু কি আর করার সিরাজ আর নেই ।
কনকের পুরো বডি ঠিক আছে কিন্তু মুখটা জ্বলে গেছে ।
ছোঁয়ার কলমটা পড়ে গেল নিচে ।
ছোঁয়ার মনটা জানি কেমন করছে মনে হচ্ছে কারোর কোন ক্ষতি হয়েছে ।
ছোঁয়া আর কোন কিছুই লিখতে পারছে না ।

পরীক্ষার সময় শেষ ।
ছোঁয়া বাসাই চলে এসেছে ।
ছোঁয়া সবার সাথে নিচে বসে রয়েছে ।
কিছুখন পর কায়সার মোবাইলে ফোন আসল ।
কায়সার ফোনে কথা বলছে ।
কায়সার সাহেব বলে উঠলেন ,,,

—– কি ?

আর সাথে সাথে মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেল‌ ।
ছোঁয়া কায়সার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করছে ,,,

—– কি হয়েছে আব্বু ?

—– আমাদের কনক আর এই পৃথিবীতে নেই‌ ।
গাড়িতে আগুন লেগে গেছে ।
আগুনে একদম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আমার ছেলেটা ।
কনক আর নেই‌ ।

—– না এইটা কিছুতেই হতে পারে না ।
উনি আমাকে একলা ছেড়ে রেখে চলে যেতে পারেন না ।
না না এইটা কিছুতেই হতে পারে না ।

ছোঁয়া একদম অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে ।
আমেনা আর কায়সার ছোঁয়াকে ঘরে নিয়ে গেল ।
আমেনা কায়সারকে জিজ্ঞাসা করছে ,,,

—– আপনি বউমাকে এমন কি বললেন যে বউমা একদম অজ্ঞান হয়ে গেলেন ।

—– আমাদের ছেলেটা যে আর নেই গো ।
গাড়িতে আগুন লেগে ,,,

—– কি বলছেন টা কি আপনি ?

—– গাড়িতে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ।

—– না এইটা কিছুতেই হতে পারে না ।

পুরো সাতদিন পর ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরল ।
জ্ঞান ফিরার পর থেকে ছোঁয়া একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে ।
কারোর সাথে তেমনভাবে কথা বলছে না ।
এমনকি নিজের মা বাবার সাথেও না ।
এই‌ দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকে বাকি পরীক্ষাগুলো দিতে পারেনি ছোঁয়া ।

সিরাজ আর কনককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক্সিডেন্ট হওয়ার পর পরই ।
ওই রাস্তা দিয়ে কয়েকজন মানুষ যাচ্ছিল ওদেরকে ওই অবস্থায় দেখে হাসপাতালে নিয়ে গেছে ।

সিরাজ তো ওইসময়ই মারা গেছে ।
কিন্তু কনক এখনও বেঁচে আছে ।
কিন্তু পুরো চেহারা জ্বলে গেছে ।
এখন কি করবে ডাক্তারটা কিছুই বুঝতে পারছে না ।

ডাক্তারটা কোন উপায় না পেয়ে কনককে নতুন রুপ দিল ।

ছোঁয়া তো কনকের জন্য পাগলামি শুরু করে দিয়েছে ।
ছোঁয়া কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না কনক মারা গেছে ।
নিজেকে আটকিয়ে রেখে শুধু কান্না করছে ।
আর কনকের ছবি দেখে ।




চলবে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here