একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪২

0
5884

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪২
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?

তানভীর কোর্ট নেওয়ার জন্য লাবিবাকে খুজছে। পুরো এরিয়া খুজেও না পেয়ে শারমিনকে জিজ্জাসা করে । কেউ কোনো খবর দিতে পারে না । তানভীর মুইনকে খোজতে থাকে । কিন্তু মুইনরা তখন ওখান থেকে বেরিয়ে গেছে । স্যার স্টুডেন্টরা চিন্তায় পড়ে যায় । হটাৎ উধাও কি করে হবে ? আর কেউই দেখবেনা সেটা কি করে হয় ? শারমিন ফেস ফেস করে কেদে দিয়েছে । লাব্বু কই গেলি তুই আমাকে রেখে ..কোথায় খুজবো তোকে বলে ফুফাতে লাগে । আধঘন্টা একঘন্টা অতিবাহিতো হওয়ার পর তানভীর পাগল প্রায় ।চিৎকার দিয়ে বলে
–হ্যালো এভরিওয়ান… আপনারা কেউ দেখেছেন একটা নীল গাউন আর গোলাপী হিযআপ পড়া মেয়ে ছিলো । উজ্জল শ্যামলা মায়াবী চেহারার । ওকে পাওয়া যাচ্ছে না ।
ফিসফাস গুন গুন শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে । নানান জনে নানান কথা বলছে । কেউ বলে উঠে পাহাড় থেকে পড়ে টড়ে যায় নি তো আবার ?? তানভীরের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠে । একটা পিচ্চি এসে সামনে দাড়িয়ে বলে
–আমি দেখেছি । আপুটাকে তো একটা ভাইয়া ঐ দিকটায় গুহার কাছে যেতে বলেছিলো ।ঐ দিকেই গেছে ।
তানভীরের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় । কে ডাকবে দুষ্টু পুতুলকে আর কেনো ডাকবে গুহার কাছে ?

বাবু তেড়ে এসে লাবিবার হাত ধরে টেনে পাহাড়ের ভিতর দিকে নিয়ে যেতে থাকে । লাবিবা হাত এআড়ানোর ট্রাই করছে আর বলছে ” বাবু ভাই হাত ছাড়েন আমার । আমার পায়ে ব্যথা । স্যার কোথায়? আমি স্যারের কাছে যাবো । ” বাবু এক ধাক্কাতে ফেলে দেয় লাবিবাকে । লাবিবা টিলায় ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় । বাবু তেড়ে এসে হিযআপের উপর দিয়েই চুলের মুষ্টি ধরে মুখের সামনে মুখ এনে বলে ” স্যার স্যার করা হচ্ছে তাই না ? এতো বছর থেকে তোর পেছনে ঘুরছি আর তুই আমাকে পাত্তা না দিয়ে প্রিন্সিপালের পেছনে পড়েছিস । কোনটা নেই আমার যা ঐ প্রিন্সিপালের আছে ? সুন্দর চেহারা বাড়ি গাড়ি সবই আছে আমার । তোকে সব দিতে পারি তা রেখে তুই ঐ প্রিন্সিপালের গলায় ঝুলেছিস । কারে করে এসেছিস তাইনা ? প্রিন্সিপালের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিস । পায়ে ব্যথা নামে কোলেও উঠার ধান্দা করিস । কতো টাকা পয়সা দিয়েছে তোকে যে এভাবে ঘেসাঘেসি করিস ? কয় রাতে সুখ দিয়েছে তো…..
বলার আগেই লাবিবা বাবুর মুখে থু থু দেয় । বাবু হাত দিয়ে মুখ মুছে জোরে এক থাপ্পর বসিয়ে দেয় লাবিবার গালে । লাবিবা গাল ধরে জোরে কেদে উঠে । চিৎকার দিয়ে বলে
–কুত্তা তুই মানুষ না । তোর মতো একটা নোংরা গোবরপচা কুত্তাকে আমি কোনদিন পাত্তা দিবো ভাবলি কি করে ? তোর অনেক আগেই স্যার আমার জীবনে এসেছে । আমি শুধু মাত্র স্যারের । আজকের ঘটনা স্যার জানলে তোকে এই পৃথিবী থেকেই আউট করে দিবে ।
“বাবু লাবিবার হাত ধরে আরো ভিতরের দিকে টানতে থাকে ।
” কতো বড় সাহস তোর আমার মুখে থু থু দেস। যেখানে সব মেয়ে আমার জন্য পাগল । আজ আমি তোর আর তোর স্যারের সমস্ত অহংকার গুডিয়ে দিবে । কলেজে দাড়িয়ে সেই চড়ের কথা ভুলিনি আমি । তোর রুপ আর তোর স্যারের চড় ঘুমোতে দেয়না আমাকে । এর প্রতিশোধ তুলবো আজ আমি । তোর হাল বেহাল করে বুকের আগুন মেটাবো আমি । এখানে কেউ আসবেনা তোকে বাচাতে । ”
লাবিবা বাবুর হাতে কামড় বসাতেই বাবু হাত ছেড়ে দেয় । লাবিবা দৌড়াতে থাকে । ব্যথা পা নিয়ে আর বাবুর মতো একটা ছেলের সাথে উচু নিচু সিড়িতে দৌড়ে এগিয়ে সফল হওয়া খুবই দুর্লভ । বাবু পেছন থেকে লাবিবা উড়না ধরে ফেলে । টান দিতেই পিন দিয়ে কাধে ছিড়ে যায় একটু । লাবিবা উড়না রেখেই দৌড় । হিযআপ নষ্ট হয়ে খুলে খুলে যাবে এমন । পিনের জোরে আটকে আছে মাথায় কিন্তু গায়ের উপরে নেই । বাবু আবার হাত ধরে ফেলে লাবিবার । লাবিবা এক চিৎকারে নিচে বসে বাবুর জায়গামতো লাথি মারে । বাবু আবারো হাত ছেড়ে দিতেই আবার খুড়িয়ে খুড়িয়ে সামনের দিকে পেছন ফিরে দৌড়াতেই থাকে । সামনে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ার আগেই বন্ধনে আবদ্ধ হয় । তাকিয়ে তানভীরকে দেখেই ভয়ানক কান্নাটা কেদে উঠে । বিদ্ধস্ত চেহারায় গালে আঙ্গুলের লাল দাগে ছেড়া জামায় উড়না বিহীন নষ্ট হিযআপে দু চোখ ভরা কান্নায় দুষ্টু পুতুলকে দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে তানভীর । গাল মুখ শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে । পেছনে স্যার স্টুডেন্ট সবাই এসে এ দৃশ্য দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে । বাবু ব্যথায় ধরে কোন মতে উঠে তানভীরের সাথে লাবিবাকে দেখে রেগে গিয়ে বলে
–প্রিন্সিপাল হয়ে ছাত্রীর সাথে নষ্টামী হয় । এমন ভাবে ধরেছে যেন জি এফ না বউকে ধরেছ। রেগে তানভীরের চোখ লাল হয়ে যায় মুহুর্তে । লাবিবাকে আরো শক্ত করে ধরে বলে চিৎকার করে বলে –হারামজাদা বউকেই ধরেছি । বিয়ে করা বউ আমার । সবাই শোনে রাখো এই ফ্লাউয়ার টা আমার বউ।
পাহাড়ে চারিদিকে আমার বউ কথাটি বার বার প্রতিফলিত হতে থাকে । সবাই একথা শুনে তাজ্জব বনে যায়। বাবু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
— ফ্লাউয়ার টা তাহলে আমার হাতেই কলঙ্কিতো। একথা শোনা মাত্র লাবিবাকে জোরে সরিয়ে দিয়ে বাবুর দিকে এগোতে থাকে । শারমিন লাবিবাকে ধরে নেয় । তানভীর সোজা গিয়ে এক লাথিতে ফেলে দেয় । কলার ধরে তুলে বলে
–আমার ফুলে টাচ করার সাহস কে দিলো তোকে ? তুই কি করেছিস তা তুই নিজেও জানিস না । তোর মৃত্যু আমার হাতেই লেখা। বোট জুতো দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে বাবুকে । মুষ্টি বন্ধ করে নাকে পাঞ্চ করতে থাকে । ব্যথায় বাবু কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না । স্যাররা মরে যাবে মরে যাবেতো বলে এগিয়ে যেতেই মামুন আটকে দেয় । স্যার ছাত্রদের বলে
–আপনারা এগিয়ে গিয়ে শুধু শুধু আহত হবেন না । বাবুর শাস্তি বাবু পাচ্ছে । আপনারা কে বাবুকে প্রটেক্ট করার ?
বাবুর প্রিয় বন্ধুর কথা শুনে আরো অবাক হয়ে যায় । বুঝতে পারে সবাই । লাবিবা তানভীরের এমন রুপ দেখে ভয়ে শারমিনের কাছে গুটিশুটি হয়ে থাকে । বাবুকে শুটিয়ে রক্তাক্ত করে রেগে ফেলে চলে আসে । আর যাই হোক প্রাণ নিতে পারে না সে। তবে এর ভবিষৎ একেবারে নষ্ট । জীবনে উঠে দাড়াতেও পারবে না । যাওয়ার সময় লাবিবার দিকে একবার তাকায়ও না । এতে লাবিবার হাত পা কাপতে থাকে ।
________________
হোটেলের দেয়ালে একের পর এক ঘুসি দিচ্ছে তানভীর ।রাগ কন্ট্রোল না করতে পারলে এইটা স্বাভাব তার । দেয়ালের ধুপ ধাপ শব্দ শুনে দরজায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাদছে লাবিবা । অনেক বার ডাকার পর ও দরজা খুলেনি তানভীর । চোখ মুছে ভাবে এই লাস্টবার ডাকবে আর ডাকবে না । যেই ভাবা সেই কাজ । দরজায় হাত দিয়ে দুবার বারি দিয়ে বলে –স্যার আপনি প্লিজ দরজাটা খুলুন । আমি আর ডাকবোনা আপনাকে । আই প্রমিজ একবার খুললেই চলে যাবো আর বিরক্ত করবোনা ।
চলে যাবার কথা শুনে তানভীরের আরো রাগ হয় । দেয়াল ছেড়ে বেডে এসে বসে ফুসফুস করতে থাকে । স্যাররা আর কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী এসে জমা হয় এখনো দরজা খুলেনি শুনে । প্রফেসর দের ডাক প্রত্যাক্ষান করতে পারে না এবার ।হাজার হলেও সে প্রিন্সিপাল ।দরজা খুলেই লাবিবা সহ সবাই ঢুকে পড়ে । না এগিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে চোখ জোড়াকে শান্ত করে । আমিনুল স্যার তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে –স্যার যা হয়েছে তা অত্যন্ত খারাপ কিছু হয়েছে। এর আগে এমন কিছু কখনোই ঘটে নি । ছাত্রদলের বিচক্ষন ছেলে ছিলো । আর কোন মেয়েকে ডিস্টার্ব অব্দি করে নি কারন অনেক মেয়েই তার জন্য পাগল ছিলো । আপনি মেরেছেন এখন আপনার বিরুদ্ধে একটা মুভমেন্ট হতেই পারে । যেহেতু পাওয়ার আছে । ভার্সিটিতে এমন কিছু ঘটবে জেনে আপনাকে সতর্ক করা আমাদের দায়িত্ব । ট্রেন্সফার পর্যন্ত হতে পারে ।
তানভীর একহাতে চুল গুলো ঠিক করে বলে
–আমি ঐ ছেলেটার কথা শুনতে চাই না আমিনুল স্যার । আমার কিছুই হবে না । আপনাদের একটা কথা জানানো হয়নি । আমার পাওয়ার সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনাই নেই।আমি আপনাদের মন্ত্রী ফিরোজ খানের একমাত্র সন্তান ড.তানভীর খান ।
সবার মুখ নিমেষেই হা হয়ে যায় । মন্ত্রীর ছেলে তাদের প্রিন্সিপাল এতো বড় কথাটা অজানা তাদের । জাহাঙ্গীর স্যার তানভীরের হাত ধরে বলে
–স্যার আপনি আপনার পাওয়ার কাজে লাগাতে পারেন কিন্তু আমাদের লজ্জা করছে এটা ভেবে যে আপনার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতে চাইনি । ইভেন আপনার ওয়াইফ যে আমাদের এই দুষ্টুমিস্টি স্টুডেন্ট টা তাও জানি না । আর বেছে বেছে ওর সাথেই এমনটা ঘটলো ।
–স্যার আমি চাইনা অন্যদের মজা নষ্ট হোক । আপনারা ট্রিপ শেষ করেই ফিরবেন । বাট আমি কাল সকালে এলিজাকে নিয়ে ব্যাক করবো ।
–স্যার…
— এইটা আমার ডিসিশন। আপনারা নিজেদের রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে পারেন।
সবাই একে একে বের হতে থাকে । লাবিবা বের হতে নিলে নিচের দিকে তাকিয়েই বলে
–শারমিন তুমি একাই যাও । তোমার ফ্রেন্ড থাকবে এখানে ।
লাবিবার আত্মা শুকিয়ে যায় । এখানে থাকবে মানে কি ? শারমিনের হাত ধরে রেখেছে । শারমিন সরাতে নিলে আরো জোরে টেনে ধরে । শারমিন রাগ দেখিয়ে বলে
–হাজবেন্ডের কাছে থাকবি ভয় পাচ্ছিস কেনো ?
এমনিতেও তোর সাথে আড়ি । তুই স্যারের বউ বলেছিস কখনো আমাকে ?
–দোস্ত আমি যে স্যারের বউ আমিই তো আজ জানলাম ।
দুই বান্ধুবি চোখে চোখে কথা বলে বুঝতে পারে সত্যিই বলছে । শারমিন একটু জোরে শ্বাস ফেলেই বলে –এবার কি করবি ?
–দোস্ত আমার সাথে থাক না তুই ।
–তোদের মাঝে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি তোদের বাসর দেখমু আমি ?
বাসরের কথা শুনে আত্মা উড়ে যায় লাবিবার । তানভীর গলা তুলে বলে
–শারমিন তুমার কি পা লুলা হয়ে গেছে যে মুভ করতে পারছো না ?
শারমিন লাবিবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে –অল দ্যা বেস্ট দোস্ত। স্যারের যে রুপ দেখলাম যদি বেচে থাকিস আমাদের আবার দেখা হবে । মরে গেলে মাফসাফ করে দিস ।
শারমিন চলে যাওয়ার পর লাবিবা দরজা লক করে । তানভীরের পাশে এসে দাড়ায় । বুক ধূক ধূক করছে তার । গলা খাকারি দিয়ে বলে
–স্যারররর…..
তানভীর রেগে মেগে উঠে ঠাস করে দেয় এক থাপ্পর লাবিবার গালে । লাবিবাকে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলে
–লাস্ট কয়েক মাস থেকে আমি আছি । এতোটা খারাপ বিহেভ করে ঐ বাবু তোর সাথে বলেছিস কখনো আমাকে ? একটা বার বললে আজ এই ঘটনাটা ঘটতো না । আমি তো ভেবেছিলাম এমনি তোকে পটাতে চায় একটা চড় থাপ্পর দিলেই ঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু না এতোটা এগিয়ে ব্যপারটা কেনো জানাসনি আমাকে ?।
–আমি ভেবেছিলাম ঐ বাবু আপনার পিছু নিবে পরে আপনার ক্ষতি করার ট্রাই করবে । আপনাকে যদি ট্রান্সফার করানোর ব্যবস্হা করতো তখন..
–চুপ একদম চুপ । গন্ডমূর্খ ফুল কথাকার । আমি যদি চাই এই ভার্সিটিতে রিটেয়ার করে যেতে পারবো কারো ক্ষমতা নেই আমাকে বের করার । তোর জন্য কুমিল্লায় জয়েন করার একমাসের মধ্যেই এখানে চলে আসছি । কিভাবে কি করে যে আসছি আমি নিজেও জানি না । আর তুই আমার ট্রান্সফার নিয়ে ভয় পাস গাধী কথাকার ।

To be continue____

®লাবিবা___?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here