#মায়ার-সংসার
#পর্ব-৩
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চৌধুরী বিছানায় নেই। মশারি ধলা পাকানো বালিশের কাছে রাখা। ভাবলাম বাথরুমে গেছে মনে হয়। খেয়াল করলাম বাথরুমের লাইটের সুইচ অন করা নেই। তাহলে গেল কোথায়? বাইরের দরজা খোলা কিন্তু ভেজানো। দরজা ঠেলে বাইরে উঁকি দিলাম। দেখি শুভর বাইকের সীটে বসে আছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,কিরে কখন উঠছিস? এখানে এভাবে বসে আছিস কেন? রাতে মশারি টানাইছিলি? পুরোনো অভ্যাস সেই চোখ মিটমিট করে প্রশ্নের জবাব দিল,রাইতে তো ঘুমাই নাই! মশারি টানাবো কি জন্য? আর মশারি ক্যামনে টানাইতে কইছেন তা মনে নাই। জানি ছেলেটা অন্য রকম। তাই কথা না বাড়িয়ে শুধু বলি, ভিতরে আয়! তোর বিছানাপত্র গুছিয়ে রাখ। কোনো কথা না বলে চুপ করে আছে।
পাঁচতলা বাসার নীচতলার এই ইউনিটটি সম্পূর্ণ আলাদা। বাড়িটি ঘেঁষে আরও একটি পাঁচতলা ভবন থাকায় আলো,বাতাস কিছুটা কমই পাওয়া যায়। বারান্দা থেকে আকাশের দিকে দৃষ্টি দিলাম। সামনে বিশাল প্রাচীর থাকায় চোখ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে নি। দু’ মিনিট বারান্দায় পায়চারি করে ভিতরে এসে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকলাম। শুভর আজ থেকে অফিস। আধ ঘন্টা পর ওকে ডেকে তুলবো। ভাবলাম আজ রুটি,পরোটা বাদ দিয়ে দুই পদ ডাল,চাল মিশিয়ে খিচুড়ি রান্না করি। সাথে ডিম ভুনা,গোল বেগুন ভাঁজা আর জলপাইয়ের আচার। আম্মা জানেন আচারের তেল দিয়ে খিচুড়ি খেতে খুব পছন্দ করি। কালকে আসার সময় সাথে কালোজিরে চাউল, ছোট্ট কাঁচের বয়ামে জলপাইয়ের আচার দিয়ে দিয়েছিলেন। চুলায় পানি ফুটতে দিয়ে সব গুছিয়ে খিচুড়ি বসিয়ে দিলাম। ডিম সেদ্ধ দিব ফ্রিজ খুলে দেখি আট ডিমের মধ্যে একটা আছে। সাতটি নাই। বুঝে গেছি ডিম উধাও হওয়ার কারণ। ফ্রিজ খুলতে দেখে চৌধুরি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। ঘুম থেকে উঠে ওর আচরণ দেখেই বুঝতে পারি কিছু একটা ঘটিয়েছে। রাগ সংযত করে ডিম সেদ্ধ রেখে বেগুন চাক ভাঁজা শুরু করি। রান্না শেষ করে শোবার ঘরে আসতেই দেখি শুভ খাট ছেড়ে মোবাইল চার্জার থেকে খুলে অন করে খাটের সাইট টেবিলে রাখে।
কপাল ছুঁয়ে বলল,
-শরীর কেমন? ব্যথা কমেছে? এত সকালে উঠলে কেন?
-তোমার না আজ থেকে অফিস? নাস্তা না খেয়ে অফিসে যাবে?
-চৌধুরীকে ডেকে রুটি বানাতে দিয়ে তুমি রেস্ট নিতে।
-অসুস্থ ছেলেটাকে নিয়ে কি করে এতদিন আছো?
-নিরুপায় হয়ে আছি। ছেলেটার মা খুব রিকোয়েস্ট করে বলেছে ওকে যেন বাড়িতে না পাঠাই। নিজেও তেমন
রান্না,ঘর সংসারের কাজ পারি না। যতটুকু পারি অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে বাসায় এসে আর করতে ইচ্ছে করে না। যেহেতু ব্যাচেলর থাকি কাজের মহিলা,মেয়ে রাখাও তো সম্ভব না। কি অঘটন ঘটাইছে আজ?
-ফ্রিজে আটটা ডিম ছিল। খুলে দেখি একটা আছে।
শুনেই শুভ হাসতে শুরু করলো।
-ওও এই কথা? যখন প্রথম বাসায় আনলাম তার দু’দিন পর রাতে দুই হালি ডিম সেদ্ধ করে খেয়ে নিয়েছে।
এক ডজন ডিম দু’জনের ছ’দিন যাওয়ার কথা। ডিম আনার দু’দিন পর বলে,মামা ডিম শেষ। টাকা দেন ডিম আনি। এক ডজন ডিম দু’দিনে কীভাবে শেষ হবে? হিসেবে মিলে না। বললাম,ফ্রিজে ডিম রাখার সময় কি হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে গেছে? এত তাড়াতাড়ি ডিম শেষ হলো কি করে? চৌধুরী কাছ থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে হেসে বলল,’না মামা,হাত থেকে পড়ে ভাঙে নাই। রাইতে সেদ্ধ করে খাইছি।’
শুনে রাগে শরীরের সব রক্ত মাথায় উঠে গেছে। হারামজাদা কয় কি? এতগুলো ডিম খেয়ে ফেলছে। এর মাথা তো আসলেই নষ্ট আছে। চড় দিতে গিয়েও দিতে পারলাম না। বিবেক বাঁধা দিল। বুঝিয়ে বললাম,মামাকে না জানিয়ে কিছু করবি না। যা খেতে মন চায় মামাকে বলবি। ওর মাথা ঠিক থাকলে তো কথাগুলো মনে রাখতো। আরও কতবার কত কাণ্ড করলো!
বিছানা ঠিক করতে করতে বলি,এই রকম করলে কি করে রাখবো?ওর মা’কে সব কিছু জানানো দরকার। ওর মায়ের ফোন নাম্বার আছে? শুভ বলল, হুমম,আছে। চৌধুরির মা নামে সেইভ করা।
শুভ ওয়াশরুমে চলে যাওয়ার পর ওর মোবাইল হাতে নিলাম। চৌধুরীর মায়ের নাম্বার নেওয়ার জন্য। কল
লিস্টে দেখি গতরাতে শেষ যে কল আসছিল সেটা
নিরার মা নামে। এরপর আর কোনো কল আসে নি।
নিরা মানে শুভর ঐ বান্ধবি যার সাথে শুভর স্টাডি ট্যুরের ছবি দেখেছি। বিয়ের পর আমেরিকা চলে গেছে।
কিন্তু এখন নিরার মায়ের সাথে শুভর কি সম্পর্ক?
এই কারণে মনে হয় শুভ রাতে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে আসছিল। জানি না কি ঘটতে যাচ্ছে? কৌতুহল হয়ে শুভর ইনবক্সে ঢুকলাম। গতরাতে যে মেসেজগুলি পড়েছি সেইগুলোই আছে। শুভ ডিলিটও করে নি। নতুন করে কোনো মেসেজ সেন্ড করে নি। আর ঘাঁটাঘাঁটি না করে ফোন নাম্বার বের করে নিজের মোবাইলে সেইভ করে নিলাম। বিছানার চাদর,বালিশ ঠিক ঠাক করতে করতে চৌধুরিকে ডাকলাম। ডাক শুনে নিঃশব্দে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। ওকে দেখে রাগে শরীর শুধু জ্বলছে। রাগ সংযত করে শুধু বললাম, বারান্দায় দাঁড়িয়ে না থেকে রান্নাঘরে যা! টুকটাক যা কাজ আছে ঐগুলি শেষ কর।
শুভ বাথরুম থেকে বের হয়ে টাওয়েলে চুল মুছতে মুছতে বলল, মায়া,খিচুড়ি রান্না করছো? খুব সুন্দর ঘ্রাণ বের হয়েছে। আমার খুব পছন্দের খাবার গরম গরম খিচুড়ি সাথে ইলিশ ভাঁজা। বললাম,আমিও খুব পছন্দ করি। তবে যে কোনো আচারের তেল হলে খুব
তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারি। শুভ টাওয়েল মেলতে বারান্দায় যাচ্ছে। দেখি পিঠ ভর্তি ফোঁটা ফোঁটা পানি। হাত থেকে টাওয়েল নিয়ে পিঠ ভালো করে মুছতে মুছতে বলি, পিঠে তো দুনিয়ার শিশির বিন্দু জমা। ঐগুলি না মুছেই টাওয়েল মেলতে যাচ্ছেন? বাচ্চাদের মতো গোসল করেছেন তাই না?
শুভ হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে দেখে চৌধুরি সামনে। কিছুটা সরে বলল,ভাইগ্না তোর বিচার অফিস থেকে এসে করবো। এখন সময় নেই। তোর মামিজানের কথা শুনে না চললে কিন্তু তোর ঠিকানা হবে ঢাকা থেকে বাড়ি।
বেশি করে পেঁয়াজ,কাঁচামরিচ কুঁচি করে ঝটপট ডিমটা ভেঁজে শুভকে নিয়ে নাস্তা করতে বসি। শুভর প্লেটে পুরো ডিম ভাঁজা তুলে দিয়ে বলি, আচারের তেল হলে খিচুড়িতে আর কিছু লাগে না আমার। শুভ অর্ধেক আমার প্লেটে তুলে দিল। তোমাকে না খাইয়ে আমার গলা দিয়ে কি করে নামবে বল তো? এ নিয়ে আর কোনো কথা না। শুভ দ্রুত খাওয়া শেষ করে চা না খেয়েই অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। দু’জনের চায়ের মগ নিয়ে শোবার ঘরে গেলাম। শুভকে চা দিয়ে জানালার দু’পাশের পর্দা সরিয়ে দিলাম। বললাম,বাসাটা মোটেও পছন্দ না। চারদিকে বাড়ি থাকায় রুম দুটো তেমন আলো বাতাস পায় না। শুভ চা শেষ করে বলল, এই তো ক’টা মাস গেলেই এ বছরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারিতে তোমার পছন্দমতো বড় দেখে বাসা নিব, ইনশাআল্লাহ। জানোই তো ব্যাচেলর জীবন মানেই এলোমেলো জীবন। যেই বাসা আমি পছন্দ করি বাড়িওয়ালা আমাকে পছন্দ করেন না। দোষ একটাই
ব্যাচেলর। বান্ধবীর ছবি,ভাবির ছবি দেখিয়ে কতজনকে বলেছি বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। জানালার বাইরে দৃষ্টি রেখে জিজ্ঞেস করি,নিরার ছবি দেখিয়ে বলেছো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে? শুভ দ্রুত আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রাখলো। ওর দিকে ফিরতেই চোখে চোখ রাখলো।
যেমনটা ভেবেছো ঠিক তা না। এই বুকের গভীরে তেমন কেউ জায়গা করে নিতে পারে নি মায়া! এতদিন খালিই ছিল। তুমি এসে আমার সব কিছু পূর্ণ করে দিলে। কপালে আলতো করে অধর দুটো ছুঁয়ে বুকে টেনে নিল। আমিও নিঃশব্দে চোখ বুঁজে কিছু সময় গুটিসুটি মেরে রইলাম।
শুভ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলল, সাবধানে থেকো। মনে মনে আয়তুল কুরসি
পড়ছিলাম। তাই কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দিলাম। আয়তুল কুরসি শেষ করে ওর গায়ে ফুঁ দিয়ে বললাম,তুমিও সাবধানে যাবে। ছোটবেলা থেকে মোটর সাইকেল খুব ভয় পাই। কেন ভয় পাই এখন তা বলছি না। অন্য সময় বলবো। শুভ মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। গেইট লাগিয়ে আমি ভেতরে এসে
প্রথমে বাসায় ফোন করে আম্মা,আব্বার সাথে কথা বলে সবার খোঁজ খবর নিলাম। তারপর শ্বশুর বাড়িতে বড় জা’কে ফোন দিয়ে বাড়ির সবার কথা জানতে চাইলাম। অল্প একটু রান্না শেষ করে চৌধুরিকে নিয়ে ঘর গোছানোর কাজে হাত লাগালাম। ছেলেটার আজ কি হয়েছে জানি না। সব কাজেই তার উদ্ভট আচরণ অসহ্য লাগছে। লাঞ্চ আওয়ারে শুভ একবার ফোন দিয়ে বলল,
সময় মতো খেয়ে নিও মায়া! বিকেলে তোমার পছন্দের খাবার নিয়ে আসবো। তুমি শুধু চা করে রেখো।
চৌধুরির কাণ্ড কিছুই না জানিয়ে শান্তস্বরে শুধু বলি,
তুমিও খেয়ে নিও। সাবধানে এসো।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। শুভ এখনও বাসায় আসে নি।
রাস্তায় জ্যাম কিনা,কোন পর্যন্ত আসছে খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিলে শুভর ফোন বিজি পাচ্ছি। আবার চেষ্টা করলাম। এবার কল কেটে দিল। খুব টেনশন হচ্ছে।
এদিকে চৌধুরির প্রতি রাগ,আর এখন টেনশন দুটো মিলে শরীর খুব দুর্বল লাগছে। আবার ফোন দিলে শুভ রিসিভ করে বলল,মায়া আমি ইউনাইটেড হসপিটালে আছি। টেনশন করো না। একটা জরুরি কাজে আসতে হয়েছে। ফোনে এতকিছু বলা যাচ্ছে না। এখনি চলে আসতেছি। আমি কিছু বলার আগেই শুভর কল কেটে গেল। কথা বলার জন্য আর চেষ্টা করি নি। লাইট অফ করে চুপচাপ শুয়ে আছি। মাথাটায় চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। শুভ কি আড়াল করতে চাইছে জানি না। স্বামীর সবকিছু জানার অধিকার একমাত্র স্ত্রীর। শুভ কেন তার সবকিছু আমার কাছে শেয়ার করতে চায় না?
আমি চাই,দু’জনের ভিতর আলাদা জগত বলে কিছু থাকবে না,কোনো প্রাচীর থাকবে না। তার পুরানো ভালোবাসার মানুষের কথা জানাতে অসুবিধা কোথায়? সবার জীবনে প্রেম আসে। কেউ প্রেমে সফল হয়। বিয়েতে রূপ নিয়ে পরিণতি পায়। আবার কারোরটা ভেঙে যায়। আমার প্রতি তার কোনো অবহেলা,অযত্ন উদাসীনতাও তো দেখি না। শুভ কি লুকিয়ে রাখতে চাইছে? এলোমেলো ভাবনায় কখন এত সময় চলে যায় বুঝতে পারি নি। এশার নামাজের আযান দিচ্ছে। উঠে ঘরে আলো জ্বালিয়ে ওযু করে নামাজে দাঁড়ালাম। ফরজ নামাজ শেষ করতেই শুভ বাসায় আসলো। চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে নামাজ শেষ করে জায় নামাজ রাখলাম। শুভ হাত,মুখ মুছে সামনে এসে
অনুনয়ের স্বরে বলল,
-ক্ষমা করো মায়া! আমিই বলেছিলাম সন্ধ্যায় একসাথে নাস্তা করবো। সময়টুকু তোমার জন্য রাখতে পারি নি। অভিমান চেপে রান্নাঘরের ঘরের দিকে এগিয়ে বললাম,
-এতে ক্ষমা চাওয়ার কি আছে?তোমার ব্যস্ততা থাকতেই পারে। এক মিনিট বসো। চায়ের পানি বসিয়ে দিয়ে আসছি।
শুভ টেবিলে রাখা প্যাকেট থেকে খাবার বের করে রাখছে। চৌধুরীকে ডেকে ওর প্লেটে আগে দিয়ে বলল, -তুই আগে খেয়ে নে! ভাইগ্না,তোর মুখটা অমন করে রাখছিস কেন? আজ কোনো অঘটন ঘটাস নি তো? শুভর পাশের চেয়ারটায় বসে বললাম,
-চৌধুরিকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। ওকে বাসায় রাখলে মান,সম্মান সব যাবে। সারাটাদিন খুব অশান্তিতে রেখেছে।
-তাই নাকি? ফোনে জানালে না কেন? কি করেছে বেয়াদবটা?
-কয়টা বলবো?নামাজে দাঁড়িয়েছি সামনে এসে দাঁত বের করে হাসে। নামাজ শেষে হাসির কারণ জানতে চাইলে বলে,মামা আপনেরে দেইখ্যা রাখতে বলছে। বাড়িওয়ালার ছেলের গায়ে পানি ছিটাইছে। টিভির সাউন্ড কমিয়ে দিতে বলছিল। শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ঢুকেছি। তখন সে গেইট খুলে রিমোট হাতে জোরে সাউন্ড দিয়ে গান শুনে। বাড়িওয়ালার ছেলে ওর গালে দুটো চড় মেরে আমার কাছে দুনিয়ার বিচার দিয়ে গেল। এরপর ওর মায়ের সাথে মোবাইলে কথা বলি। জানালো,চৌধুরিকে যেন বাড়িতে না পাঠিয়ে যে করে হোক একটা চাকরি জোগাড় করে দেই। তারপর থেকে ভেবেচিন্তে একটা আইডিয়া বের করে রেখেছি। চৌধুরি সুস্থ থাকলেও ওকে কখনোই আমি বাসায় রাখতে রাজি না। কারণ, তুমি অফিসে যাওয়ার পর আমি একা। তাছাড়া ছেলে দিয়ে কাজ করানো আমার মোটেও পছন্দ না। যদি পারো ওকে এখনি তোমার পরিচিত কোনো হোটেল,রেস্তরাঁয় কাজের সুযোগ করে দাও। বেতনও বেশি পাবে। খাবারে কোনো সমস্যা হবে না। বেতনটা যাতে ওর মায়ের হাতে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থাও করে দিও। ওর মায়ের আকুতি শুনে খুবই কষ্ট লেগেছে। মানুষের বাড়িতে কাজ করে এতগুলো বাচ্চা নিয়ে সংসার চালায়।
-ভালো কথা মনে করে দিয়েছো! আমার ভার্সিটির বন্ধু সালামতের খাবার হোটেল,এজেন্সির ব্যবসা। অনেক লোক তার ঐখানে চাকরি করে।
সালামতকে এখনি ফোন দিয়ে ওর চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি। সাথে সাথেই ফোন করে শুভ বিস্তারিত কথা বলে নিল।
আজ শুভর অফিস বন্ধ তাই বিকেলে চৌধুরিকে সালামতের কাছে নিয়ে যাবে। যেহেতু বন্ধের দিন তাছাড়া ছেলেটা চলে যাবে। ভাবলাম ওর জন্য ভালো কিছু রান্না করি। খুব খুশি হবে। শুভকে বললে ও সকালে বাজার করতে চলে গেল। এইদিকে বাড়ি থেকে বড় ভাসুর ফোন দিয়ে বলেছেন দু’একদিনের মধ্যে বাড়িতে যেতেই হবে। ব্যাগ বের করে কাপড়,প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখছি। খেয়াল করি নি শুভ মোবাইল চার্জ দিয়ে গেছে। মোবাইলের রিংটোন শুনে হাত বাড়িয়ে দেখি নিরা নামটি স্কিনে ঝলমল করছে। প্রচন্ড ধাক্কা খেলাম। রিসিভ করবো কি করবো না ভাবতে ভাবতে চারবার রিং হয়ে লাইন কেটে গেল। কল ব্যাক করে কথা বলবো কিনা বুঝতে পারছি না। এখন আমার কাছে সবকিছু পরিস্কার। নিরার সাথে শুভর সম্পর্ক ছিল এবং এখনও আছে। সম্ভবত নিরার মা তাদের সম্পর্কের কথা খুব ভালো করে জানে। প্রাক্তন প্রেমকে জিইয়ে রেখে আমার সাথে ভালো স্বামী সেজে কি সুন্দর অভিনয় করে যাচ্ছে শুভ। ঠিক আছে তুমি তোমার মতো করে ভালো থেকো। তুমি নিরাকে নিয়েই থেকো। গ্রাম থেকে এসে সোজা মায়ের কাছে গিয়ে চাকরির জন্য লেখাপড়া শুরু করবো।
চলবে