গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ,পর্ব:০১,০২
ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরি
প্রথম পর্ব
বুকে কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেল তৃষার, চোখ খুলে কেউ একজন তৃষার ওপর ঝুকে আছে দেখে হৃৎস্পন্দনের হার এতবেশী বেড়ে গেল যে মনে হচ্ছে ভয়ে হৃদপিণ্ডডা এখনি ফেটে যাবে। চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় তৃষার ওপর ঝুকে পড়া ব্যক্তি হাত দিয়ে তৃষার মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,– আরে আমি, তুমি চিৎকার করলে প্রেমিকার প্রেমের মধু খেতে এসে পাব্লিকের ধোলাই খেয়ে হাসপাতালে যেতে হবে।
ডিমলাইটের মৃদু আলোয় চোখ বড়ো বড়ো করে ঝুকে পড়া ব্যক্তির চেহারা দেখে তৃষা বোঝার চেষ্টা করছে কণ্ঠ শুনে যাকে মনে হচ্ছে আসলেই সে কিনা!
এক হাত দিয়ে সুইচ টিপে টেবিল ল্যাম্প জ্বালানোর চেষ্টা করলো তৃষা, কিন্তু বিদ্যুৎ থাকতেও টেবিল ল্যাম্প জ্বললো না!
আরও ভালো করে দেখে মুখের ওপর থেকে হাত ঠেলে সরিয়ে ফিসফিস করে তৃষা বললো,– আকাশ তুমি! এত রাতে আমার ঘরে!
আকাশ ফিসফিস করে বললো,– ভালোবাসি তোমায়, যাবো কি অন্য কারো কাছে?
: আকাশ তাই বলে এভাবে!
: এভাবে নয়তো কীভাবে তৃষা?
: আকাশ, বিয়ের আগে কোনভাবেই এতটা কাছাকাছি আসা ঠিক নয়!
: কিন্তু মন তো তোমায় কাছে পেতে ব্যাকুল তৃষা, তোমায় মন ভরে আদর করার ইচ্ছেটা আমায় পাগল করে তুলেছে যে, এভাবে এমন প্রবল ইচ্ছে নিয়ে দিন অতিবাহিত হতে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো, তাই ভুল হলেও এই ভুলটা আমি জেনেশুনেই করতে এলাম, নয়তো হতাশায় মরে যাবো তৃষা।
: তাই বলে তুমি আমার বুকে হাত দিবা আকাশ! এটা কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি!
: তৃষা, তোমার সবটাই তো আমার, তুমিই তো আমার, শুধু বিয়ের জন্য আর কতদিন দূরে সরে থাকা যায় বলো? বিয়ে তো আমরা করবোই, তার আগে তোমাকে একান্তে কাছে পেতে ইচ্ছে হলে কি করবো বলো।
: তাই বলে বিয়ের আগে এসব!
: চুপ করো তৃষা, বিয়ের পরে যেটা হবে, ইচ্ছার প্রবল চাপে সেটা এখন হলে দোষের কি, আর কেউ তো জানবে না, শুধু তুমি আর আমি।
: না, একদম এসব হবেনা বলে দিচ্ছি আকাশ।
তৃষার কথা শেষ হবার আগেই আকাশের ঠোঁট ঝাপিয়ে পড়লো তৃষার ঠোঁটে, কিছুক্ষণ আকাশকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করে অবশেষে জৈবিক চেতনার কাছে হার মানতে বাধ্য হলো তৃষা। এবার আকাশের ঠোঁটের স্পর্শ বেশ উপভোগ করছে সে। জীবনে প্রথম একান্তে কারো স্পর্শে নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে মুহুর্তগুলো খুব মধুময় মনে হচ্ছে তৃষ্ণার। অন্যরকম এক ভালোলাগায় ভাসতে শুরু করেছে তৃষার দেহ মন, এবং অজানা এক উত্তেজনায় পুরো শরীরটা কিছু পাবার আশায় মৃদু কাঁপছে! আকাশ আবারও আলতো করে তৃষার স্তনে হাত রাখলো, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এবার আর তৃষা বারণ করতে পারলো না, কোন এক অজানা ভালোলাগার বশে আকাশের স্পর্শ পেতে তৃষার দেহ মন আরও ব্যাকুল হয়ে উঠলো।
তৃষাও শক্ত করে আকাশকে জড়িয়ে ধরে এই মূহুর্তের সবটুকু উপভোগ করছে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আকাশের হাতের স্পর্শ অজানা অপরিচিত এক আনন্দের ঢেউ তুলে দিয়ে যাচ্ছে, তৃষা পুরোপুরি ডুবে আছে আকাশের মাঝে।
আকাশ ধীরে ধীরে তৃষার শরীর অনাবৃত করতে শুরু করলো, তৃষ্ণা আর বাধা দেবার মতো অবস্থায় নেই, আকাশের সবকিছু আজ এত ভালো লাগছে, যা করছে করুক না! তৃষা নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরে উজাড় করে দিলো সবকিছু! আকাশও নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করতে মত্ত হয়ে ঝাপিয়ে পড়লো। প্রথম তৃষার ইচ্ছায় হলেও পরে আরও কয়েকবার তৃষার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেলামেশা করলো আকাশ, অবশেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে তৃষা কখন ঘুমিয়ে পড়লো নিজেও জানেনা!
সকালে ঘুম ভাঙলো দেরীতে তৃষার, উঠে বসতে যাবে এমন সময় শরীরে খুব ব্যাথা অনুভব করলো তৃষা, পাশে থাকা জামাকাপড় টেনে গায়ে দিয়ে কোনমতে উঠে বসে টেবিলে রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে রুমের দরজার দিকে চোখ পড়তেই ভীষণ চমকে গেল তৃষা, দরজার ছিটকিনি তো ভেতর থেকেই দেয়া আছে, তাহলে আকাশ কীভাবে গেল?!
জানালা দিয়ে যাবার উপায় নেই, তাহলে গেল কীভাবে? তাহলে সবকিছু স্বপ্ন ছিল! না তেমন হলে বিবস্ত্রই বা কেন!
তৃষা উঠে রুমের সবখানে চেক করলো আকাশ কোথাও লুকিয়ে আছে কিনা, কিন্তু ব্যর্থ, রুমে তৃষা ছাড়া কেউ নেই।
ভীষণ অবাক তৃষা! তাহলে এসব কীকরে সম্ভব?
ধীরে ধীরে তৃষার মনে পড়লো, আকাশের বাড়ি তৃষাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে, প্রায় পাঁচ ঘন্টার পথ, তাহলে এভাবে হুট করে এসে আবার চলে যাওয়া…!
পুরো বিষয়টা কেমন ঘোলাটে মনে হচ্ছে তৃষার! আকাশকে কল দিলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে, ফোন হাতে নিয়ে আকাশকে কল দিলো তৃষা…
চলবে…
গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ ( দ্বিতীয় পর্ব )
–“ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা যেকোনো উপায়ে বাধ্য করে শারীরিক মেলামেশা ধর্ষণ সমতুল্য আকাশ।” তৃষার কল রিসিভ করতেই আকাশকে কথাগুলো বললো তৃষা।
ফোনের ওপাশ থেকে আকাশ বললো,– কথা সত্য জানু।
: বিয়ের আগের শারীরিক মেলামেশাও ঠিক না।
: কথা সত্য তৃষা! কিন্তু তুমি আমায় হঠাৎ এসব বিষয়ের ওপর ক্লাস করাচ্ছো কিসের জন্যি?
: আকাশ তুমিই বলেছিলে বিয়ের আগে এসব কিছু হবেনা!
: হ্যাঁ বলেছি, এর জন্যই সম্পর্কের এতগুলো দিন অতিবাহিত হবার পরেও চুমু এবং জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কিছু করিনি।
: তাহলে গতরাতে কি করলে?
: গতরাতে ইনজয় করলাম প্রচুর।
: প্রথমবার ঠিক আছে, তারপর আমি বারণ করার পরেও শারীরিক মেলামেশা কেন করলে এতবার? তার মানে কী মনে মনে লুকায়িত আমার শরীরের প্রতি লোভ তোমার?
এবার তৃষার কথা শুনে আকাশের ভিরমি খাবার পালা! শরীর লইয়া টানাটানি, মেলামেশা তো দূর কি বাত! তাও আবার গত রাত! আসলে বন্ধুর বার্থডে পালনে গতরাতে বন্ধুর বাসায় ছিল সারারাত আকাশ, সব বন্ধুরা মিলে আনন্দ, আড্ডাবাজী করতে করতেই সকাল, কিন্তু তৃষা এসব কি বলছে?!
আকাশ বললো,– তৃষা, খাইলাম না, ছুইলাম না, জরিমানা দিমু ফাও?!
: মানে কী আকাশ?
: মানে কী আবার! একটা নিষ্পাপ ছেলের নামে কীসব মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ তুমি?
: মিথ্যা অপবাদ মানে? কাল যাকিছু করলে ওসব কি তবে! উনি আবার নিষ্পাপ!
: তৃষা এই শীতে কীসব উষ্ণ কথাবার্তা এগুলো! মনে হয় স্বপ্নে দেখছো কিছু, আর স্বপ্নে কেউ কারো গরু পিটিয়ে মারলে আসামি হয় কোনদিন?
: আকাশ সকাল থেকে আমার প্রচন্ড শরীর ব্যথা।
: পেইন কিলার খেয়ে নাও, শরীর ঠিক নেই তাই হয়তো ভুলভাল বলছো! তোমার কথা অনুযায়ী বলছি, গতরাতে আমি ও অন্যান্য আরও কয়েকজন বন্ধু রিহানের বাসায় ছিলাম, বিশ্বাস না হলে পুরো রাতের ভিডিও ধারণ করা আছে, তুমি চাইলে এনে দেখাতে পারি।
: না থাক আকাশ, আসলেই আমার শরীরটা ভালো নেই।
কল কেটে দিয়ে তৃষা চিন্তায় ঢুবে গেল, আকাশ যদি না হয় তবে গত রাতে তৃষার সাথে শারীরিক মেলামেশা কে করলো। মেলামেশা যদি না হয় তবে সকালে তৃষা বিবস্ত্র ছিল কেন, শরীরের বিশেষ অঙ্গ এমন ব্যথা হয়ে আছে কেন!
কি হচ্ছে তৃষার সাথে এসব?
দরজায় খটখট শব্দ, তৃষা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ছোটবোন আহি রুমে ঢুকে বললো,– এই যে রাজকুমারী, খালি খাওয়া আর ঘুম, সকাল থেকে আম্মু আমাকে দিয়ে থালাবাসন ঘষিয়ে মাজিয়ে জিন্দেগী যে বরবাদ করে দিছে তার কোনো খবর আছে, নাহ! তোদের এ সংসারে আর থাকা হচ্ছেনা!
তৃষা হেসে ফেলে বললো,– হা হা হা, কই যাবি, জামাই বাড়ি?
আহি বললো,– সেই কপাল কি আর আছে মোর, বড়ো আপদটাকে বিদায় না করা পর্যন্ত আর নিষ্পাপ জামাইয়ের চাঁদমুখ দেখা হচ্ছেনা। তোকে জলদি বিয়ে দিয়ে ভাগাতে হবে বড়ো বদ।
: হা হা হা, আমি তোর প্রব্লেম তাইনা আহি?
আহি তৃষাকে জড়িয়ে ধরে বললো,– আমার বুকের ভেতর যদি কলিজা থাকে সেটা পুরোটাই তুই আপু, কিন্তু দেবর দেখে বিয়ে না করলে কলিজা অপারেশন করে নেটওয়ার্কে বাইরে ফেলে দিমু কইলাম।
তৃষা আবারও হেসে ফেলে আহির গাল টেনে দিয়ে বললো,– পাকনা বুড়ী একটা।
আহি রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল।
তৃষা উঠে আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখে আঁতকে উঠে আয়নার সামনে থেকে সরে গেল, কী ভয়ংকর! আয়নায় নিজের যে প্রতিচ্ছবি তৃষা দেখলো নিজের, সেটা কি আহিও দেখেছে? দেখলে তো ওর রিএক্ট করার কথা ছিল!
ভয়ে ভয়ে তৃষা আবারও গিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো…
চলবে…
ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।