অদৃশ্য স্পর্শ ( শেষ পর্ব )

0
1760

গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ ( শেষ পর্ব )

জন্নাত আকাশের ঠোঁটে একটা চুমু খেতেই আকাশ হতবাক, এটা কি হলো!

পাশের টেবিলে বসা একজন লোক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– বছরের পরে বছর প্রেম করে ছ্যাঁকা ছাড়া কিছু খাইতে পারলাম না, আর কফি খেতে এসে মানুষ চুমা খায়! ডিসিশন পাক্কা, বাকিটা জীবন কফিশপে কাটামু, তবু যদি কিস-মিস কিছু খাবার সৌভাগ্য হয়।

জান্নাত মুচকি হেসে লোকটাকে বললো,– ছ্যাঁকা খেয়ে স্বর্গ যাই যাই অবস্থা আপনার, বাসায় গিয়ে কিসমিস খেয়ে এনার্জি বুস্ট করেন, স্বর্গে যাবার জার্নি অনেক লম্বা।

আকাশ নিচের দিকে তাকিয়েই বললো,– জান্নাত, কফিশপে এত এত লোকের সামনে এটা কি করলে, এসব দেখে সবাই কি ভাববে।

জন্নাত বললো,– পাশের টেবিলের লোকটা ছাড়া কেউ আমাদের এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখতে পায়নি আকাশ।

আকাশ অবাক হয়ে বললো,– দেখতে পায়নি মানে, কিসব ঘোড়ার ডিম বলছো!

জান্নাত হেসে বললো,– আমি ঘোড়ার ডিম বলছি না, লোকজন ঘোড়ার ডিম দেখতে ব্যস্ত, তাই আমাদের রোমান্টিক সিন একজন ছাড়া কেউ দেখেনি।

আকাশ খেয়াল করে দেখলো কফিশপের বাইরে বিশালাকৃতির একটি ডিম, সেটার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই অবাক বিস্ময়ে।

আকাশ অবাক হয়ে জান্নাতের দিকে তাকালো, জন্নাত মিষ্টি হেসে একটা তুড়ি বাজাতেই ডিমটা গায়েব হয়ে গেল!

আকাশ ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– জান্নাত এটা কীভাবে সম্ভব।

জন্নাত মাথার একটা চুল ছিড়ে আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিতেই সেটা একটা গোলাপে পরিনত হয়ে গেল।

আকাশ কী দেখছে এসব, নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার, এটা কীভাবে সম্ভব!

জান্নাত ফুলটা আকাশের হাতে দিয়ে বললো,– অসম্ভবকে সম্ভব করাই জান্নাতের কাজ আকাশ।

পাসের টেবিলে বসা সেই লোকটা জান্নাতকে বললো,– আপনি কি আমাদের হিরো অনন্ত জলিলের দূর সম্পর্কের খালাতো বোন টাইপের কিছু হন?

জান্নাত ভ্রু কুঁচকে বললো,– তার মানে?

লোকটা বললো,– মানে এতদিন জানতাম অসম্ভবকে সম্ভব করা অনন্ত জলিলের কাজ, আজকে একই ডায়লগ আপনার মুখে শুনলাম, তাহলে আপনি কি অনন্ত জলিল ফিমেল ভার্সন!

জান্নাত হেসে ফেলে বললো,– আমি জান্নাত, আমার তুলনা আমি নিজে, কেউ বেশি বকবক করলে মারি কানে, প্যান্ট যায় ভিজে।

জান্নাত এর কথা শুনে লোকটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল।

আকাশ উঠে জান্নাতের হাত ধরে এক কর্নারে টেনে এনে বললো,– ছ্যাঁকা খেয়ে ভুলভাল দেখছি না তো! এসব কিকরে সম্ভব!

জন্নাত আকাশকে বললো,– তোমার হাতের ফুলটা আমার খোপায় গুঁজে দাও আকাশ। আকাশ জান্নাতের খোপায় গোলাপটা গুঁজে দিতে গোলাপটা আবার চুলে পরিণত হয়ে জান্নাতের চুলের সাথে মিশে গেল, এই দৃশ্য দেখে আকাশ ভিরমি খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল!

আকাশের মুখে পানি ছিটিয়ে হুশ ফেরালো জান্নাত।

আকাশ চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,– জান্নাত তুমি আসলে কে?

জন্নাত মুচকি হেসে বললো,– আমি মানুষ নই আকাশ, জ্বীন জাতি, পরী আমি।

জান্নাত পরী এই কথা শুনে আকাশ আবারও ভিরমি খাবে এমন সময় আকাশের গালে একটা চড় মেরে জান্নাত বললো,– ফের যদি ভিরমি খেয়ে সময় নষ্ট করো তাহলে ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি। কথায় আছেনা ইয়ের পেটে ঘি সয়না!

আকাশ গাল চেপে ধরে মিনমিন করে বললো,– কথা সত্য।

রাতে খেয়েদেয়ে জলদি করে শুয়ে পড়লো তৃষা, হঠাৎ তৃষার পাশে দৃশ্যমান হলো আশিক। আশিককে দেখে তৃষা বললো,– কি ব্যাপার আশিক, মনে কোনো কুমতলব নেই তো!

আশিক তৃষাকে জড়িয়ে ধরে বললো,– একদম নেই, দুদিন পরে তো তুমি আমারই, তাই ধৈর্য ধরে আছি।

তৃষা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– আকাশকে আমি কি জবাব দেবো আশিক বলো, কিছু কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছি না।

: ওসব নিয়ে তোমায় আর ভাবতে হবেনা তৃষা।

: মানে কী আশিক?

: মানে নুরাকে তোমার রূপে আকাশের কাছে পাঠিয়ে তোমার না বলা কথাগুলো বলিয়েছি।

: কি বলো এসব আশিক, নিশ্চয়ই আকাশ ভেঙে পড়েছে খুব!

: একদম না তৃষা, ভেঙে পড়লে টেনে সোজা করার মতো একজন তার সাথে আছে।

: মানে কী আশিক, কে সে?

: সে আমাদের নুরা তৃষা।
জান্নাত নামে আকাশের সাথে পরিচিত হয়েছে, এবং নুরা ঠিকই তাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে।

: আশিক তার মানে…

: হ্যাঁ তৃষা, নুরারও ইচ্ছে মানুষ বিয়ে করার, তাই সেট করে দিলাম, তোমায় আমার করে নিলাম। ও হ্যাঁ, দুদিন পরে আমাদের মুরব্বি জ্বীনরা আসছে আমাদের বিয়ে পড়াতে তৃষা, যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে।

এদিকে আকাশের বাসায় নুরা মানে জান্নাত আকাশের মুখোমুখি বসে আছে। আকাশের মন খারাপ।

জান্নাত আকাশকে বললো,– আকাশ তৃষা যেভাবেই হোক একজনের সাথে শারীরিক মেলামেশা করেছে, এবং সে চায় তার শরীর যে পেয়েছে নিজেকে তার কাছেই সপে দিতে, শরীর কোনো পন্য নয় যে জনে জনে বিলাবে, সেই চায় তার শরীর সম্পর্কে ঐ একজনই জানুক আজীবন। তার এই চিন্তাভাবনাকে তোমার শ্রদ্ধা করা উচিৎ আকাশ, তোমাকেও সে ঠকাতে চায়না, আবার নিজের কাছেও নিজেকে অপরাধী করতে চায়না বলেও সে তোমাকে সত্যটা বলে দিয়েছে।

আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

জান্নাত আকাশের হাত ধরে বললো,– আকাশ তুমি চাইলে আমি থেকে যেতে পারি, তৃষার শূন্যস্থান পুরন করতে না পারলেও ভালোবাসা দিয়ে ঘুচিয়ে দেবো তোমার হৃদয়ের হাহাকার। কথা দিলাম।

আকাশ জান্নাতের হাতটা শক্ত করে ধরলো।

দুদিন পরে একই দিনে তৃষা আশিকের, এবং আকাশ ও জান্নাতের বিয়ে হয়ে গেল।

এই ছাদে দাড়িয়ে আছে আহি, পাশের ছাদে দাড়িয়ে আছে কিসলু। আহি গজগজ করে বললো,– সবাই পায় জ্বীন–পরী, আর আমি একটা রসহীন কিসলু লইয়া মরি।

কিসলু হেসে ফেলে বললো,– জ্বীন পরি ফেলে রেখে গায়েব হয়ে চলে যেতে পারে সুন্দরী, কিন্তু কিসলুর তো গায়েব হবার ক্ষমতা নেই, সে তোমাকে আপন করে পাবার পরে তোমার ছায়া হয়ে থাকবে সারাক্ষণ তোমার পাশে ভরসা রাখতে পারো। এই জীবন তোমার জন্য, তাই তোমার জন্য মরন যেন হয়, তা নাহলে ভালোবাসা, ভালোবাসাই নয়।

কিসলুর কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে আহি বললো,– আমিও তোমায় চাই কিসলু, তোমার স্পর্শ অনুভব করি খুব কল্পনায়। কাগজে কলমে তোমার না হওয়া পর্যন্ত এই স্পর্শ নাহয় অদৃশ্য স্পর্শ হয়ে থাক।

______The End______

ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here