#অদ্ভুত_সেই_বাড়িটি_৩
#লেখনীতে_মুসাফফা_মারহামা_মিম
★★★★
পৃথ্বীতে ঊষারবির আগমনের পূর্ব মূহুর্ত। কিছুক্ষন বাদেই ভোরের আলো অম্বরের বুক চিরে ভূলোকে এসে পড়বে।গ্রামের সকলে তখন এক একে করে উঠে যাবে।কিন্তু সাদিয়াদের সাথে তা হবে না।কারন রিফা ঘুমানোর পূর্বে তার ছোট্ট ঘড়িটিতে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো।যেন ফজরের নামাজ কাজা না হয়ে যায়।ঘন্টার কাটা এলার্মের সংখ্যায় আসার সাথে সাথেই ঘড়ি টুং টুং শব্দ করতে থাকলো।সবাই এক এক করে উঠে পড়লো। আফজাল সাহেবও উঠে পড়লেন।তিনি নামাজ শেষ করেই বড় বাড়ির তালা খোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।অবশেষে তালা খোলা হলো।পাঁচ বান্ধবী তাদের আসবাব পত্র নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।অনেকখানি জায়গা নিয়ে বাড়িটি নির্মান করা হয়েছে।বাড়ির সম্মুখে বড় প্রাঙ্গণ।বিভিন্ন প্রকারের তরুপালা বাড়ির চারপাশকে ঘিরে রেখেছে।বাপাশে একটি পুকুর রয়েছে।, পুকুর ঘাটে সিড়ির ব্যবস্থা আছে। বাড়ির দেয়ালে হরেক রকম নকশা খোদাই করা হয়েছে।অনেক দিন বাড়িতে কেউ প্রবেশ না করার দরুন বাড়িতে এখন মাকড়সাদের রাজত্ব চলছে। দু তোলা ভবনের এই বাড়িটিতে মোট ১২ টি কক্ষ রয়েছে। তন্মধ্যে শুধু দুইটি কক্ষই খোলা।একটি উপরের তলায় আরেকটি নিচ তলায়। বাকি গুলোতে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে।সানজানা আর রাজিয়া নিচের ঘর টি পরিস্কার করে নিচ্ছিলো।আর আফজাল সাহেব সাজিদকে নিয়ে উপরের ঘরটি পরিস্কার করে নিচ্ছেন।পুরো কক্ষে মাকড়সার সূক্ষ্ম জাল বিরাজ করছে। মেঝেতে এবং খাটে ধুলাবালির গাঢ় আস্তর পড়েছে।খুবই যত্নের সহিত পরিস্কার কর্ম সম্পূর্ণ করা হচ্ছে।আর বাকিরা পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছে।সাদিয়া, ফিজা, রিফা প্রথমে পুকুরঘাটে গিয়ে বসলো।পানিতে তাদের প্রতিবিম্ব পড়েছে। সাদিয়া পুরো পুকুরটিতে একবার চোখ বুলালো। এমন বদ্ধ জলাশয়ের প্রতি তার বড্ড টান রয়েছে।তাদের গ্রামে গেলে সে প্রায় সময় পুকুরপাড়েই কাটিয়ে দেয়।তবে এই পুকুরের বিশেষ কিছু গুন রয়েছে,যে গুন গুলোর মাধ্যমে পুকুরটি আরো রুচিশীল হয়ে উঠেছে। যেমন পুকুরের চারপাশে হরেকরকমের উদ্ভিদ, পুষ্প, দিয়ে ভরপুর।তাদের দেখে একদমই মনে হচ্ছে না তারা এতদিন অযত্নে ছিলো।মন হচ্ছে কেউ হয়তো প্রত্যহ নিয়ম করে তাদের যত্ন নিতো।অনেক পুষ্পের নামও সাদিয়ারা জানেনা।কখনো দেখেছে কিনা এ ব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে। ফিজা একটি পুষ্পের দিকে তাকিয়ে হাত উঁচু করে সাদিয়া আর রিফার উদ্দেশ্যে বললো।
“তোরা কি জানিস এই ফুলটির নাম কি?
” রিফা বললো। কোন ফুলটির কথা বলছিস? সাদিয়ার দৃষ্টিও সেদিকেই নিবিদ্ধ। হয়তো চিনার চেষ্টা করছে।
“আরে ওই বেগুনি রঙের ফুলটা?
” সাদিয়া ঠান্ডা গলায় বললো।আজ প্রথমই এই ফুল দেখলাম। আগে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।
“ফিজা বললো।আমি ভেবেছিলাম আমিই একমাত্র মানুষ যে অনেক ফুলের নাম জানিনা এখন দেখছি তোরাও সেই কাতারেই শামিল।
” সাদিয়া বললো।এখানের অনেক কিছুই মনে হচ্ছে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে তাই আমরা চিনতে পারছিনা।
কিছুক্ষণের জন্য সকলে দর্শনেন্দ্রিয়ের সাহায্যে সব গুলো পুষ্প দর্শন করে নিলো। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই সৌন্দর্যের প্রতি দুর্বল।সুন্দর কিছু দেখলে সেদিকে দৃষ্টি আটকে যাওয়া যেন স্বভাবগত নিয়ম।পৃথ্বীর সৌন্দর্য এর মধ্যে একটি হলো এই পুষ্পরাজিরা।সকলকে নিরব থাকতে দেখে ফিজা নিরবতা ভেঙে বললো।
“শোন তোদেরকে ছোট বেলার একটি মুহুর্ত দেখাই। সে এটকু বলেই নিচ থেকে ছোট একটা পাথরের টুকরো কুড়িয়ে নিলো।এবং সেটাকে পুকুরে নিক্ষেপ করলো। অতঃপর হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো।কিরে কিছু মনে পড়লো?
” দুজনেই সম্মিলিত স্বরে বললো হু রে মনে পড়বেনা কেন?
দাড়া আমাদের টা তোর টার থেকেও দূরে যাবে।বাকী দুজনে ছোট পাথর খুজতে থাকলো।রিফা খুব সহজেই পেয়ে গেলো।কিন্তু সাদিয়া পেলোনা।সে আরেকটু সম্মুখে যেতেই খেয়াল করলো এই বিশাল বাড়িটির শেষ কক্ষের দ্বারটি এক পাশে সামান্য খোলা। সাদিয়ার মনে কৌতুহল জাগলো।সে দ্বারটির কাছাকাছি গিয়ে দাড়ালো।সে খেয়াল করলো দ্বারটিতে প্রাচীন আমলের একটি বড় তালা ঝুলছে।এবং অপর পাশে গুনি পোকাদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। হয়তো তাদের জন্যই দরজাটির এক পাশ ঈষৎ আলাদা হয়ে গিয়েছে।যার দরুন সহজেই কক্ষে উঁকি দেওয়া যাচ্ছে।সাদিয়া উঁকি দিলো।কিন্তু সে গভীর তমসা ছাড়া কিছুই দেখলোনা।রিফা আর ফিজা সেদিকেই এগিয়ে গেলো। সাদিয়া তাদেরকে দরজার দিকে ইশারা করলো।তাদের মনেও সাদিয়ার মতই কৌতুহল উপস্থিত হলো।ফিজা চাপা গলায় বললো।চল না যাই এই ঘরে।কেন বাকী রুম গুলো প্রবেশ করতে নিষেধ করেছে এখানে গেলে বুঝা যাবে।বাকী দুজনেই ফিজার কথায় সম্মতি দিলো।দ্বারের এক পাশ টি বাহির থেকে একজন শক্ত করে ধরে রাখলো এবং বাকী দুজন কক্ষে প্রবেশ করলো।অতঃপর ভিতর থেকেও অনুরুপ ভাবে করা হলো।বাহিরে থাকা রিফা তখন ভিতরে প্রবশ করলো। কক্ষটি ভিশাল বড়।কিন্তু সেখানে আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। উত্তর দিকে মুখ করা দুটো জানালা রয়েছে সে গুলোও বন্ধ করে রাখা।ভিতরে বাতাস চলাচলের অভাবহেতুর কারনে এক ভ্যাপসা গরম বিরাজ করছে।মুহুর্তেই তিনজনের ললাট বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়লো।ফিজা একমুহুর্তও গরম সহ্য করতে পারেনা।এর উপর আবার এখানে প্রচুর অন্ধকার। পুরো একদম গুমোট পরিস্থিতি। ফিজা দ্রুত দিয়ে উত্তরের জানালাটি খুলে দিলো।মুহুর্তেই মনে হলো কক্ষের সমস্ত গরম উত্তাপ বাহির থেকে আসা শীতল বাতাস শুষে নিয়ে যাচ্ছে।তারা জানালা দিয়ে আসা মৃদু আলোয় পুরো কক্ষ ভালো করে পর্যবেক্ষন করলো।সেথায় সন্দেহ করার মত কিছুই ঠাওর হলোনা।শুধু কক্ষের এক পাশে অনেক গুলো বস্তা দেখা যাচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে সে গুলোতে পুরো বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো গুছিয়ে রাখা হয়েছে।দেয়ালে হরেক রকমের মূর্তি ঝুলছে। সাদিয়া মূর্তি গুলো ভালো মত দেখে জানালার পাশে এসে দন্ডায়মান হলো।সে আতঙ্ক গলায় ফিজা আর রিফাকে ডাকলো।সাদিয়ার আতঙ্ক ভরা কন্ঠ শুনে দুজনের হৃদপিণ্ড ঈষৎ কেঁপে উঠলো। তারা সেদিকে এগিয়ে গেলে সাদিয়া গম্ভীর স্বরে বললো।
“দোস্ত কাল আমি একটা সপ্ন দেখেছিলাম ।সপ্নে ঠিক এই জানালাটাই দেখেছি।এবং জানালার সম্মুখেপানে ভালো মত লক্ষ্য কর।এখানে যেই গাছ গুলো যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমার স্বপ্নেও ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো।মোট কথা এই জায়গাটিই আমি কাল স্বপ্নে দেখেছি।এবং ঠিক এখানটাতেই সাদমান দাঁড়িয়ে ছিলো।সাদিয়া হাত উঁচু করে দেখালো।রিফা আর ফিজা ভ্রু কুঞ্চিত করে সেদিকেই তাকালো।সাদিয়া আবারো বলতে থাকলো।
আমার মন বলছে এটাই উত্তররের বাড়িটিতে যাওয়ার পিছন দিক। বাড়িটিকে দেখ! এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সাদিয়ার স্বপ্নের ওই মহিলাটির কথা মনে হতেই সে দ্রুত জানালা লাগিয়ে দিলো।ফিজা আর রিফা কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো।
” ফিজা বললো কিরে এভাবে জানালা লাগিয়ে দিলি কেন?
“সাদিয়া চাপা গলায় বললো।তোরা কি কিছু একটা বুঝতে পারছিস?
” দুজনেই বললো, কি?
“উত্তরের বাড়িটিতে যাওয়ার জন্য বাহিরে যেই পথটি আমরা দেখেছি। সেখানের বড় ফটকে কিন্তু বড় বড় তালা ঝুলছে।মানে বাহির থেকে কারো পক্ষে সেথায় যাওয়া সম্ভব না।আর এই জানালাটি দেখ! খুব সহজেই এখান দিয়ে বাড়িটিতে প্রবেশ করা যাবে।এমনো হতে পারে এই বাড়িটির সাথে ওই বাড়িটির সংযোগ রয়েছে।
” সাদিয়ার কথার প্রেক্ষিতে রিফা হালকা গলায় বললো।দোস্ত তাহলে সানজানা কি সব টা জানে?
“জানতেও পারে.হয়তো আমাদের কাছে লুকাচ্ছে।
এমন সময় জানালার অপাশ থেকে কারো গতিপথের মৃদু ধ্বনি শুনা গেলো।সাদিয়া তার পঞ্চইন্দ্রীয় সজাগ করলো। মনে হচ্ছে হাঁটার আওয়াজ উত্তরের বাড়ির দিকটা থেকে আসছে।ফিজা জানালা খুলতে চাইলো।সাদিয়া বারণ করলো।ফিজা ফিসফিস করে বললো।দেখি না কে আছে সেখানে?
” সাদিয়া বললো। না দরকার নাই।আমরা এই ঘরে প্রবেশ করেছি এটা কাওকে জানানোর প্রয়োজন নেই।
“ফিজা বললো।আরে ভয় পাস না।আমরা বলবো,আমরা সানজানার বান্ধবী।
” সাদিয়া বললো।যদি সানজানাও এদের সাথে জড়িত থাকে তখন কি করবি? কারন বাড়িটি তাদের?
“ফিজা আর রিফা সাদিয়ার কথা শুনে নতুন করে চিন্তায় মনোনিবেশ করলো।এখন আর আওয়াজটি শুনা যাচ্ছেনা।কিন্তু দরজার অপাশ থেকে কারো পদচারণের নাদ ( শব্দ) শ্রবন করা যাচ্ছে।এবার তিনজনেরই হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো।গাত্রের সমস্ত লোম গুলো দাড়িয়ে গেলো।শ্বাসপ্রশ্বাসের গতিবেগ বাড়তে থাকলো।ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘামের উপস্থিতি দেখা গেলো।যদি এখানে সানজানা বা আফজাল সাহেব আসেন তবে কি হবে? তিনজনই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এক কোনায় বসে আছে।পদচারণের সেই নাদ দরজার অপাশে এসে থেমে গেলো।মনে হচ্ছে দরজাটি কেউ হাত দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছেনা।ব্যর্থ হয়ে দরজার অপাশে থাকা মানুষটি ফিরে গেলো।পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে আবারো ঘুরে দাড়ালো। এবং দরজার অপাশ থেকে সাজিদের আওয়াজ শুনা গেলো।সাদিয়া আপু তোমরা কি এখানে? তিন জনই যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।দ্রুত তারা কক্ষ থেকে বের হলো।
সাজিদ সকলকে এ অবস্থায় দেখে কিছুটা অবাক হলো।সে ললাটে ভাজ ফেলে বললো।তোমরা এই ঘরে কি করছিলে?
” সাদিয়া বললো।ভাই আমাদের জন্য সামনে ভয়ানক ক্ষতি অপেক্ষা করছে।আমার মন বলছে আমাদের এ বাড়ি থেকে দ্রুত চলে যাওয়া উচিত।
সাজিদ বললো।কিন্তু আপু কেন?
সাদিয়া সাজিদকে সমস্ত বিষয়টি খুলে বললো।সাজিদ ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে বললো।আপু তোমার সব কথা অবিশ্বাস করার মতও নয়।কারন আমি কাল রাতে যখন আফজাল আংকেলের সাথে ঘুমাচ্ছিলাম।হঠাৎ মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়।এবং তাকে আমার পাশে না দেখে কিছুটা অবাক হই।ভেবেছিলাম টয়লেটে গিয়েছেন।কিন্তু ২ ঘন্টা হয়ে যাওযার পরও তিনি ঘরে আসলেননা।এরপর আর কিছু মনে নেই।কারন আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
“ফিজা সাজিদের কথার প্রেক্ষিতে বললো।কিন্তু তোরা আর যাই বলিস। আমি সানজানাকে অনেক আগে থেকে চিনি।ও সত্যিই খুব ভাল একটা মেয়ে।আমার মনে হয়না ও আমাদের কোনো ক্ষতি করবে।
” সাদিয়া বললো।ক্ষতি করবে সেটাতো বলছিনা।আমার প্রশ্ন শুধু এক জায়গায়।সানজানা কিন্তু এর আগেও আমাদের বলেছিলো।তাদের এই বাড়িতে অপরিচিত কারো প্রবেশ নিষেধ। একটা সুন্দর বাড়িতে গ্রামের লোকজনেরা মাঝে মাঝে আসবে এটাইতো স্বাভাবিক তাইনা? কিন্তু সানজানার পরিবার এটাও পছন্দ করেনা।আর তাছাড়া ওই বাড়িটির সাথে যে এই বাড়িটির যোগসূত্র আছে সেটাতো আমাদের সে বলেনি। এখান থেকেইতো প্রমান হয় ওই বাড়িটির সাথে সানজানাদেরও হাত রয়েছে।
“রিফা বললো।তবে আমি এটা বুঝতে পারছি সানজানা আমাদের কাছে অনেক বড় কিছু একটা লুকাচ্ছে।কারন আমরা কেউই কিন্তু প্রথমত এই বাড়িটিতে আসতে চাইনি।ওই আমাদের জোড় করে এখানে নিয়ে আসছে পাহাড় দেখানোর নাম করে।সুতরাং আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।
” ফিজা বললো।তাহলে তোরা কি বলতে চাচ্ছিস আমরা এখান থেকে চলে যাবো?
“সাদিয়া বললো।আমরা চাইলেও এখান থেকে যেতে পারবোনা।কারন এখানের রাস্তা সম্পর্কে আমরা জানিনা।এর উপর কারো সাথে যোগাযোগ করারও কোনো সুযোগ নেই।
” সাজিদ বললো।তাহলে আমাদের কি করা উচিত আপু?
“সাদিয়া বললো।আমরা আজকের দিনটা সানজানাকে ভালো করে লক্ষ্য করবো।সেই সাথে আফজাল সাহেবকেও।এবং আমার কাছে ছুড়ি, ব্লেট এইগুলো আছে, আমি জানি তোদের কাছেও রয়েছে।সুতরাং ওদের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখলেই আমরা এই গুলোর সাহায্য নিবো।আর যাই কারিনা কেন আমাদের পৃথক হওয়া যাবেনা।সবাই এক সাথে থাকবো।বুঝতে পেরেছিস সকলে?
” সবাই এক সঙ্গে মাথা ঝুকালো। মানে তারা বুঝতে পেরেছে।ফিজা বললো।তবে এই বিষয়টি আমাদের রাজিয়াকেও জানিয়ে দেওয়া উচিত।
এহেন সময় সানজানা ফিজার পিছনে দাঁড়িয়ে বললো।
“কিরে কি বলবি রাজিয়াকে?
সানজানার কথা শুনে সকলে আঁতকে উঠলো।সবার মধ্যে এক প্রকার নিরবতা বিরাজ করলো।এ নিরবতা স্বাভাবিক নিরবতা নয়।এর মধ্যে রয়েছে ভয়াবহ আতঙ্ক। সাদিয়া অন্যদের থেকে আলাদা। তার মধ্যে উপস্থিত বুদ্ধি ঢের।সে তার উপস্থিত বোধের সাহায্য নিয়ে বললো।আরে তেমন কিছুনা আমরা নিয়ত করেছিলাম তোকে সারপ্রাইজ করবো।কারন এত সুন্দর জায়গায় আমাদের নিয়ে এসেছিস।তুইতো আমাদের থেকে অনেক কিছুরই প্রাপ্য তাইনা?কিন্তু তুই শুনে ফেললি!!!ভেবেছিলাম আজ আমরা তোর পছন্দের একটি রেসিপি করবো।
” সানজানা বললো।বাহ তবেতো ভালোই হয়। আমি শুনে ফেলেছি তো কি হয়েছে তোরা তোদের কাজ করে যা।আর আমি আমার কাজ করি।
“রিফা বললো।তোর আবার আলাদা করে কি কাজ শুনি?
” কি আর থাকবে।তোরা গরু বা মুরগির গোশত রাধবি আর আমি মানুষের, সানজানা এটুকু বলেই অতি উচ্চু আওয়াজে হাসলো।যাকে বলা হয় অট্টহাসি।
“ফিজা সানজানাকে হাসতে দেখে অপ্রস্তুত গলায় বললো।দোস্ত তুই এটা কি বলেছিস বুঝতে পারছিস?
” সানজানা বললো।আরে সব কিছু এত সিরিয়াসলি নিস কেন? আমিতো মজা করে বললাম।চল এখন সবাই। সকালের খাবার খেয়ে নেই আমরা।
তারা যার যার মত খেতে চলে গেলো।
__________
মাঝরাত। ঘড়ির সেকেন্ডের কাটা ঠিক ঠিক করে আওয়াজ করছে।সাজিদ, এবং চার বান্ধবী কারো চোখেই ঘুম নেই।সকলে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে।সাজিদ উপরের তলায় আফজাল সাহেবের সাথে রয়েছে।হঠাৎ সাজিদ তার পঞ্চইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করলো।আফজাল সাহেব ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে বসেছেন।পুরো কক্ষে কোনো আলো নেই।গ্রামগঞ্জে রাত হলেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়।এই গ্রামেও তেমনই অবস্থা।সাজিদের একবার মনে হলো সে মাথা ঘুড়িয়ে আফজাল সাহেবকে অবলোকন করবে।কিন্তু সাদিয়ার কথা মনে হতেই সে আবার নিজেকে সংবরণ করলো।সাদিয়া বারবার বলে দিয়েছে।তারা যতক্ষণ আমাদের সম্মুখে ধরা না দিবে আমরাও তাদের কাছে ধরা দিবোনা।আমরা সব দেখবো ঠিক আছে।কিন্তু আমরা তাদের বুঝাবো আমরা কিছুই দেখিনি আমরা কিছুই বুঝিনা।তাই সাজিদ স্বীয় স্থানেই শুয়ে থাকলো।সাজিদের পুরো শরীরে কম্পন শুরু হয়েছে।আফজাল সাহেব কিছুক্ষণ খাটের উপরে বসে থেকে সাজিদের নৈকট্যে আসতে থাকলো। সাজিদ তার হাতে লুকিয়ে রাখা ছোট্ট চাকুটি শক্ত করে ধরলো।যদি আফজাল সাহেব সাজিদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করেন তবে সে সেটি তার চোখে ঢুকিয়ে দিবে।কিন্তু আফজাল সাহেবের কাণ্ড দেখে সাজিদ খুব অবাক হলো। তিনি সাজিদের দিকে ঝুকেছিলেন সাজিদ ঘুমিয়েছে কিনা সেটা বুঝার জন্য।তিনি নিশ্চিত হলেন সাজিদের ঘুমের ব্যাপারে।তাই তিনি ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।দরজার কবাট খুলতেই দেখলেন সানজানা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।তিনি সানজানাকে দেখে চাপা গলায় বললেন।তুমি প্রস্তুত?
“সানাজানা বললো। হু আংকেল। আসুন তাড়াতাড়ি আমাদের কাজ সারতে হবে।অন্যথায় ওরা জেগে যাবে।
আফজাল এবং সানজানা কোথাও একটা যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হলো।
পৃথ্বীতে নিশার (রাত) আগমন। তাই হালকা শব্দও রক্তে মাংশে গড়া জীবন্ত মানুষদের কর্ণে দ্রুত পৌঁছে যায়।সাজিদ সানজানার কন্ঠ শুনেই তাকে চিনে ফেললো।একবার ইচ্ছে হলো সে সানজানাদের পিছু নিবে।কিন্তু সাদিয়ার কথা মনে হতেই সে নিজের ইচ্ছের সমাপ্তি ঘটালো।সে এজন্য একটি যুক্তি দাড় করালো। সে যদি তাদের পিছু নেয়।তবে সাদিয়া তাকে দেখতে না পেয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে পড়বে।নিজেকে হয়তো তখন স্বাভাবিক রাখতে পারবেনা।তাই তার আগে বোনের কাছে যাওয়া উচিত। সাজিদ ধীরগতিতে উঠে বসলো।মেঝেতে পা ফেলতেই নিচ থেকে কারো আসার শব্দ শুনতে পেলো।সে আবারো শুয়ে পড়লো।হাতে রয়েছে সেই ছোট্ট চাকুটি। নিচ থেকে আসা মানবটি সাজিদের কক্ষে এসে ঢুকলো।তার হাতে রয়েছে একটি কুপি।সাজিদ অপর পাশের দেয়ালে মানবটির ছায়া নকশা পরিস্ফুট দেখতে পাচ্ছে।মানবটি সাজিদের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।সাজিদও চাকুটি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে।মানবটি আরো কাছে আসলেই সে চাকুটি তার চোখ বরাবর বসিয়ে দিবে।কিন্ত তা আর করতে হলোনা।এর পূর্বেই সাদিয়া পিছন থেকে অস্ফুট স্বরে সাজিদকে ডাক দিলো।সাজিদ বড় বড় শ্বাস নিয়ে উঠে বসলো।
বোনকে দেখে করুণ গলায় বললো।ও আপু তুমি? আমি ভেবেছিলাম অন্য কেউ হবে।তা যাই হোক,আপু সানজানা আপুকে একদম বিশ্বাস করোনা।সে আমাদের ক্ষতি করতে চায়।আমি সানজানা আপুর কথা শুনেছি।তিনি আফজাল আংকেলের সাথে কোথাও একটা যাওয়ার কথা বলে চলে গেলেন।
“সাদিয়া বললো।জানি ভাই, আমরা এতক্ষণ সবাই ঘুমের ভান ধরে ছিলাম।কেউ ঘুমাইনি।চল নিচে চল।
সাদিয়া নিচে আসতেই রিফা বললো।কিরে উপরের জানালা দিয়ে কিছু দেখেছিস।সাজিদ বিস্ময় গলায় বললো।আপু আপনি কোন জানালার কথা বলছেন।
” কেন উপরে কোনো জানালা নেই?
“সাজিদ বললো।না আপু উপরের যেই রুমটিতে আমরা থাকি সেখানে শুধু একটি দরজা রয়েছে। সেই ঘরে কোনো জানালার ব্যবস্থা নেই।সাজিদের কথা শুনে সবাই খুব অবাক হলো।তারা এই ব্যাপারটায় নিশ্চিত হয়ে গেলো।উত্তরের ওই বাড়িটির সাথে এই বাড়িটির অবশ্যই যোগসূত্র রয়েছে।
পুরো এক ঘন্টা কেটে যাওয়ার পরও সানজানারা আসলোনা।সাদিয়া এবার নতুন পরিকল্পনা করলো।সে ফিজাকে বললো।চল আমরা ওই কক্ষটিতে আবার যাই সেখানে গেলেই হয়তো ওদের সম্পর্কে জানা যাবে।ফিজা প্রথমত যেতে অস্বীকার করলো।কারন সে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে।তাকে আশ্বাস দিয়ে সাজিদ বললো।আপু চলুন আমিও আপনাদের সাথে যাবো।আমরা যদি এখন ভয় পাই তবে আমরা কেউই বাঁচতে পারবোনা।আমাদের বেঁচে ফিরার জন্য বুকে সাহস রাখতে হবে।সাজিদের কথায় ফিজা কিছুটা সাহস পেলো।সাদিয়া, রিফা আর রাজিয়াকে কক্ষে থাকতে বললো।যেন সানজানা চলে আসলে তারা বলতে পারে, সাদিয়া এবং ফিজা টয়লেটে গিয়েছে।
সাদিয়ারা কক্ষ থেকে বের হয়ে বাড়ির মাঝবরাবর কক্ষটির সম্মুখে এসে দন্ডায়মান হলো ।কক্ষটির বিশাল দ্বারের তালাটি এখন আর লাগানো নেই।অথচ সকালেও এই দ্বারে একটি বড় তালা ঝুলছিলো।সাদিয়া দ্বারের ফাঁক দিয়ে কক্ষের ভিতর উঁকি দিলো।সে সেখানে প্রকট তমসা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলোনা।পুরো ঘর তমসাচ্ছন্ন।ফিজা কক্ষটিতে প্রবেশ করতে চাইলে সাদিয়া বারণ করলো।সানজানারা এই বড় ঘড়টি দিয়ে উত্তরের বাড়িটিতে গিয়েছে এটা নিশ্চিত। সুতরাং আমরা এই ঘরে প্রবেশ করলে ওরা আমাদের উপস্থিতি বুঝে ফেলতে পারে।তাই আমরা সকালে যেই ঘরটিতে গিয়েছিলাম সেখানে যাবো।
তারা বাড়ির শেষ কক্ষটির সম্মুখে চলে আসলো।এক এক করে তিনজন ভিতরে প্রবেশ করলো। পুরো ঘরে এতটাই অন্ধকার যে তাদের জানালা খুঁজতেও সময় লাগছিলো।এক পর্যায়ে তারা জানালা খুঁজে পেলো।জানালার পাল্লা কিছুটা ফাঁক করে বাহিরে উঁকি দিলো। তারা সেখানে এমন কিছু দেখলো তা দেখার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।ফিজার যেন মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। তার পুরো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। ভিতরে থাকা হৃদপিণ্ড যেন এটাই বলছে দ্রুত এ মূহুর্ত কেটে যাক।নয়তো তোমার ভিতরের সব কিছু অসার হয়ে যাবে।সাদিয়া আর সাজিদ যে ভয় পায়নি তেমন না।তারাও ভয় পেয়েছে।কিন্তু সাদিয়ার মস্তিষ্কে শুধু একটি চিন্তাই বহমান।আমার যা হয়ে যাক আমার ভাইয়ের যেন কিছু না হয়। সাজিদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই।তাই তারা নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।ভালোবাসা এমনই এক জিনিস। পৃথিবীর সমস্ত জটিলতা থেকে মুক্তির অনুপ্রেরণা জোগাতে এই চার অক্ষের শব্দটিই যথেষ্ট।
আসছে