#অদ্ভুত_সেই_বাড়িটি-? ৮,৯?
✍️ #মুসাফফা_মারহামা_মিম।
০৮
সাদমানকে বের করা হচ্ছে।সে সাজিদের কাধে ভর দিয়ে আছে।অন্ধকার তাই আশে পাশের কিছুই তেমন ঠাওর করা যাচ্ছেনা।সানজানা মশাল জ্বালাতেও আশঙ্কাবোধ করছে।যদি কেউ ভুল করে জংগোলে এসে পড়ে তবে সর্বনাশ হয়ে যাবে।মারাত্মক সর্বনাশ। সাদিয়ার অন্তরিন্দ্রিয় বারবার আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে।এমন গা শিরশির করা মূহুর্তে আল্লাহর নাম নেওয়াটা স্বাভাবিক। মানুষদের কর্ম গুলো খুব অদ্ভুত হয়।বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।বিপদ চলে গেলে আবারো ভুলে যায়।অহংকারী হয়ে উঠে।দাম্ভিকতায় বুক উঁচু হতে থাকে।যদিও বা সাদিয়া এমন না।সে যথেষ্ট ভদ্র এবং ধার্মিক মেয়ে।তার কাছে আল্লাহ এবং রাসুল থেকে বেশি কেউনা।আল্লাহ নারাজ হবেন এমন কাজ সে সহজে করতে চায়না।কখনো হয়ে গেলে উত্তম তাওবা করে নেয়।কারন সে জানে আল্লাহকে সুখের সময়ে ডাকলে তিনি দুঃখের সময়েও আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন।যেমনঃ
ইমাম তিরমিজি (রহ.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবনে আব্বাস (রা.)-কে উপদেশ দিয়ে বলেন, সুসময়ে তুমি আল্লাহকে স্মরণ করো, আল্লাহতায়ালা দুঃসময়ে তোমাকে স্মরণ করবেন।
এটি রাসুল (সা.) এর পক্ষ থেকে শুধু ইবনে আব্বাসের (রা.) প্রতিই নয়; বরং সারাবিশ্বের সব মুসলমানের জন্য একটি অমূল্য উপদেশ। কারণ প্রত্যেকেই চায়, আল্লাহতায়ালা তাকে যাবতীয় বিপদ-আপদ ও দুর্দশা থেকে হেফাজত করুন।
যারা সুসময়ে আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে গিয়ে কেবল দুঃসময়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, তাদের পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ভর্ৎসনা করেছেন।
তিনি বলেন, যখন মানুষকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার পালনকর্তাকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন তাকে নেয়ামত দান করেন, তখন সে তার কষ্টের কথা ভুলে যায়। যার জন্য সে আল্লাহকে ডেকেছিল এবং আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে ও অপরকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে।
(হে নবী! আপনি) বলুন, তুমি তোমার কুফর সহকারে কিছুকাল জীবন উপভোগ করে নাও। নিশ্চয়ই তুমি জাহান্নামিদের অন্তর্ভুক্ত। আল-কোরআন ৩৯: ৮
এ রকম আরও অনেক আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহতায়ালা এ ঘৃণ্য বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন।
মনে রাখতে হবে বিপদে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রার্থনাই শোনেন, যারা সুসময়েও আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করত। সুতরাং সেই-ই বুদ্ধিমান, যে সুসময়ে আল্লাহতায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশপূর্বক তাকে বেশি বেশি স্মরণ করে দুঃসময়ে তার প্রার্থনার কবুলিয়াতকে নিশ্চিত করে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুক।
সাজিদ সাদমান কে নিয়ে গুহা থেকে বের হলো।সাদিয়া এবং সানজানা তাদেরকে দেখে এক সঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ বললো।সাজিদ মাথা ঘুরাতেই পশ্চাতের সেই ছায়া মূর্তিকে একটি গাছের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।সাজিদের গলা শুকিয়ে আসছে।সাদিয়া এবং সানজানা সাদমানকে নিয়ে ব্যস্ত।তাকে এখান থেকে কিভাবে নিয়ে যাবে।তারা কোনো ভ্যান বা রিকশা আনেনি।আফজাল সাহেবের একটি সাইকেল আছে।বেশ পুরোনো সাইকেল।কিন্তু সাদমানের পায়ে সমস্যা।সাইকেলে করে এইটুকু পথ পাড়ি দেয়া অতিশয় মুশকিল কাজ। সাজিদ ছায়া মূর্তিকে লক্ষ্য করে হাত দিয়ে ইশারা করলো।বাকীরা এবার ব্যপারটি লক্ষ্য করলো।তাদের ভিতরে একপ্রকার আতঙ্কশোক দেখা গেলো।গলা শুকিয়ে গেলো।হৃদপিণ্ডে কম্পন শুরু হলো। শ্বাসপ্রশ্বাস ভারী হলো।আশে পাশের পরিবেশ নিস্তব্ধ হতে থাকলো।সাজিদ এই মূহুর্তটিকে স্বাভাবিক করার জন্য কঠিন গলায় বললো। কে ওখানে?
ছায়া মূর্তিটি গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে আসলো।চাদর দিয়ে তার পুরো শরীর আচ্ছাদিত।প্রগাঢ় তমসায় চেহারা ভালো করে বুঝা যাচ্ছে না।লোকটি তাদের সম্মুখে এগিয়ে আসছে।মূহুর্তটি অসম্ভব ভয়ানক মনে হচ্ছে। নিবিড় অরণ্যে অচেনা কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের কার্যকলাপ দেখছে।বিষয়টি ভয়ানক নয়তো কি? সাজিদ নিচ থেকে একটি ডাল উঠিয়ে নিলো।যেন লোকটি আক্রমণ করলে সেও পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। ছায়া মূর্তিটি তাদের সম্মুখে এসে পুরু( মোটা) গলায় বললো,
তোমরা কি করছো বুঝতে পারছো।নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছো কেন?
সানজানা লোকটিকে চিনতে পারলো।এতো সেই ভ্যানচালক।তার মানে সেদিন তিনি সাজিদের কথা শুনেছেন। তবে লোকটিকে আপাতত বিপদ জনক মনে হচ্ছেনা।
সানজানা নিরবতা ভেঙে অস্পষ্ট গলায় বললো।আংকেল আমরা এ পর্যন্ত ধরা পড়িনি।যদি আপনি কাওকে না বলে দিন তবে আশা করছি আমরা বেঁচে ফিরতে পারবো।
লোকটি বললো।এতটা চিন্তামুক্ত কিভাবে হচ্ছো তোমরা? ওরা জানতে পারলে তোমাদের পুরো পরিবারকে শেষ করে দিবে।
সাদিয়া বললো।আংকেল কেউ জানতে পারবেনা।যদি আপনি কাওকে কিছু না বলেন।সাদিয়া সাদমানের দিকে ইশারা করলো।দেখুন ছেলেটি কতটা অসুস্থ। তাকে এখান থেকে বের করতে আমাদের সাহায্য করুন প্লিজ।
আমি এখানে তোমাদের সাহায্য করতেই এসেছি।কারন এই বাড়িতে আমার শরীর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো।ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে ফিরতে পারি।অবশ্য তারাই আমাকে একটা সুযোগ দিয়েছে।তাই আমিও চাই এই ছেলেটি নিরাপদে বাড়িতে ফিরে যাক।কিন্তু আমি রফিককে নিয়ে ভয় পাচ্ছি।
সানজানা বললো।আংকেল রফিক কিছুই বুঝতে পারেনি।আমরা পূর্বে একটি পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম।সে অনুযায়ীই কাজ করেছি।কথা দিচ্ছি রফিক কখনো এ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবেনা।আপনি শুধু আপনার ভ্যানে করে আমাদের বাসট্যান্ডে পৌঁছে দিন।
মূহুর্তেই সকলে নিরব হয়ে গেলো।হয়তো ভ্যানচালক কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চাচ্ছেন।সাদিয়ারা সেই সিদ্ধান্ত শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সাদমান একটি গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।তার পাশে সাজিদ দাঁড়িয়ে আছে। সাজিদ মস্তিষ্কে বিভিন্ন নিষ্পত্তি দাঁড় করাচ্ছে।যদি ভ্যানচালক বারণ করেন।তবে সে একাই সাইকেল চালিয়ে সাদমান কে বাসট্যান্ড অবধি নিয়ে যাবে।এরপর আর কোনো সমস্যা হবেনা।কারন সোহেল গাড়ি নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছে। সাজিদকে বেশিক্ষন ভাবনার জগতে থাকতে হলোনা।ভ্যানচালক নিরবতা ভেঙে বললেন।আচ্ছা চলো।তবে কোনো সমস্যা হলে আমি কিন্তু তোমাদের নাম বলে দিবো।
সাদিয়া বললো।সবার নাম বলতে হবেনা।শুধু বলবেন সাদিয়া নামের একটি মেয়ে এসব করেছে।সাদমানের অবস্থা বর্তমানে খুবই অপ্রকৃতস্থ। তবুও সে সাদিয়ার কথা শুনে হেলান ছেড়ে স্বাভাবিক ভাবে বসলো।কথামালা তার বুক ভেদ করে কলিজায় যেয়ে লেগেছে। তার হৃদয়ে একপ্রকার শিহরণ জাগাচ্ছে।প্রশ্নেরা সেখানে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।সাদিয়া কেন তার জন্য এসব করছে? এর আগে কখনোই সে সাদিয়ার মধ্যে কোনো প্রকার পরিবর্তন দেখেনি।অথচ তারা একই বাড়িতে থাকতো।প্রিয়া কি তার জায়গায় থাকলে এমনই করতো? প্রিয়া হলো সাদমানের বাগদত্তা। বেশ ঠান্ডা প্রকৃতির মেয়ে।দেখতেও খুব সুন্দরী, গুণবতী,এক কথায় বলতে গেলে ডানা কাটা পরী।শুধু দুটো ডানা নেই বিধায় তাকে কেউ ডানাযুক্ত পরী বলতে পারেনা।সাদমানের মৃত্যুর খবর শুনে সে একদম ঘরকুনো হয়ে গেছে। ভাগ্যকে মেনে নেওয়ার মত তনয়া ( মেয়ে) প্রিয়া।কিন্তু এ ব্যাপারটি মেনে নিতে তার সময় লাগছে।তার বাবা, মা, মেয়েকে আগের মত প্রানবন্ত দেখতে চান।তাই সাদমানের মৃত্যুর পর তাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।প্রিয়া জানালো সে এখন কাওকে তার জীবনে জায়গা দিতে পারবেনা।তার সময় প্রয়োজন। আস্তে আস্তে সে নিজেকে সামলিয়ে নিবে। সাদমান কে ভ্যানে উঠানো হয়েছে।সাদিয়া এবং সানজানা ভ্যানে উঠেনি।তারা ফিজা এবং রাজিয়াকে নিয়ে পরে আসবে।সাজিদকে সাদিমানের সাথে পাঠানো হচ্ছে। সাদমান ভ্যানে উঠে সাদিয়াকে অস্ফুট স্বরে ডাক দিলো।সাদিয়া অস্থির হয়ে উঠলো।সে ধীরপায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো।চন্দ্রের মৃদু আলোতে সাদমানকে দেখা যাচ্ছে।তার চোখ ভিজে উঠেছে।নাকের ডগা ঈষৎ লোহিত বর্ণ ধারন করেছে।ওষ্ঠ শুকিয়ে গেছে।সে বা হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো।তোমাকে ধন্যবাদ সাদিয়া। আমি কখনো তোমার এই উপকার ভুলবোনা।সব সময় তোমার জন্য দুয়া করে যাবো।আমার ভালো থাকার জন্য যেই মানুষটি নিজের কথা না ভেবে আমাকে সাহায্য করতে পারে তাকে কি করে ভুলি বলোতো?
সাদিয়া হালকা গলায় বললো।শুধু যে আপনার ভালো থাকার জন্য আপনাকে সাহায্য করেছি ব্যপারটি তেমন না।আপনার ভালো থাকায় আমিও ভালো থাকি। পিছন থেকে সানজানা জোড় গলায় বললো।কিরে সাদিয়া চল ওদের নিয়ে আসি।এখানে এত ক্ষন সময় দিলে আমরা ধরা পড়ে যাবো।
সাদমান সাদিয়ার শেষ কথাটি শুনে ভ্রু কুঞ্চিত করলো।তার ললাটে ভাজ পড়েছে।মস্তিষ্কে প্রশ্নবোধক চিহ্নের উপস্থিতি ঠাওর করা যাচ্ছে।একজন মানুষের ভালো থাকায় অন্য কেউ কিভাবে সুখ খুজে পেতে পারে? অবশ্য এই কথাটি প্রিয়াও এক সময় তাকে বলেছিলো।যেদিন সে তাকে দেখতে গিয়েছে।পূর্ব থেকেই তারা একে অপরকে চিনতো।সাদমানের জুনিয়র প্রিয়া।সাদমান প্রিয়া থেকে দু ক্লাস উপরে পড়তো।খুবই মেধাবী স্টুডেন্ট প্রিয়া।সেও পেশায় একজন নবাগত লেখিকা।সাদমান মূলত তার লিখা পড়েই তাকে পছন্দ করেছে।যদিওবা সে সাদমানের ন্যায় ততটা জনপ্রিয় না।তবে এতে সাদমানের কোনো আক্ষেপ নেই।।একদিন সাদমান বীরপুরুষের ন্যায় প্রিয়াদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়।প্রিয়া সেদিন খুব খুশি হয়ে ছিলো।সেদিনই প্রিয়া তাকে জানিয়েছে।সে সাদমানকে আগে থেকেই পছন্দ করে।কিন্তু কখনো বলার সাহস পায়নি।সাদমান কথায় কথায় বিয়ের পর কোথায় থাকতে চায় এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে প্রিয়া এই বিখ্যাত উক্তিটি বলেছিলো।আপনার থেকে মূল্যবান আমার কিছুই না।সুতরাং আপনি আমাকে যেখানে রাখবেন আমি সেখানেই থাকবো।এবং আপনার ভালো থাকায় আমি সুখ খুঁজে নিবো।তাই সাদিয়ার মুখ থেকে আজকের কথাটি সাদমানের হৃদয়ে শিহরণ জাগিয়ে দিলো।মেয়েটি খুব চাপা স্বভাবের। মনের কথা স্পষ্ট করে কখনো বলেনা।সে হয়তো প্রিয়ার মত অতটা রূপবতী নয়।তবে কিছু একটা আছে যা সহজেই মন কে কাবু করে দেয়।হাঁটা চলা,কথা বলা সবকিছুতেই যেন এইপ্রকার নমনীয় ব্যপার রয়েছে। তার পুরোটাজুড়েই শুধু মায়ার ভান্ডার। অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করে।ভ্যান আপন গতিতে চলতে শুরু করেছে।সাদমান আকাশ পানে চেয়ে আছে।নক্ষত্র, চন্দ্র সবাই তাদের সাথে পথ চলছে।পশ্চাত থেকে উত্তরের বাড়িতে থাকা নির্যাতিত মানুষগুলোর ভয়াবহ আর্তনাদ ভেসে আসছে।যদিও বা এটা সাদমানের কল্পনা।তবে কল্পনা হলেও খুব পরিস্ফুট।বাড়িটি ভুতুড়ে বাড়ির তকমা লাগিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে বুঝাই যাবেনা জীন ভুত থেকেও ভয়ানক কাণ্ড গুলো এখানে ঘটে থাকে।গগনে ক্ষীন ধোঁয়ার আবাস এখনো লেগে আছে।ইশ যদি এই ধোঁয়া পুরো বাড়িটিকেই গ্রাস করে নিতো।তাহলে হয়তো ভুতকে আড়াল বানিয়ে মন্দ কাজ গুলো করার সমাপ্তি ঘটতো। আদৌ কি এমন হবে? সাদমান কয়েকমাস পর আকাশ দেখলো।কতইনা সুন্দর আকাশ।কতইনা সুন্দর বাহিরের পৃথিবী।মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে ফেরা তার কাছে নবজীবনের সমতুল্য। সাদিয়ারা বাড়িতে প্রবেশ করতেই আফজাল সাহেব এগিয়ে আসলেন।উঠোনে রিফা এবং রাজিয়া বসে আছে।তাদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত দেখা যাচ্ছে।হয়তো তারা তাদের পরিকল্পনায় সফল হতে পেরেছে কিনা এটা ভেবেই ভীত হয়ে আছে।সানজানা আফজাল সাহেবকে দেখে বললো।
আংকেল রফিক আগুন লাগার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করেছে?
হু।
কি বললেন তারপর।
তোমরা যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছো সেভাবেই বলেছি।বলেছি মজনু মিঞাকে দেখেছিলাম সিগারেট হাতে নিয়ে এদিকে আসতে।হয়তো মনের ভুলে এখানেই ফেলে দিয়ে গেছেন।
সবাই একস্বরে বললো তারপর।
তারপর আরকি, বললাম।প্রধান ফটককে যেন পরিত্যক্ত মনে হয় এ জন্য সব সময় তুমি এখানে শুকনো ডালপালা ফেলে রাখো।আর শুকনো পাতাকে সামান্য আগুনও পুড়িয়ে দিতে পারে।এটা কোনো ব্যাপার না।এরপর সে আর ব্যপারটি নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি।
সাদিয়া বললো।উফ বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম।এখন এখান থেকে বের হতে পারলেই হলো।
আফজাল সাহেব বললেন।এত রাতে পায়ে হেটে যাওয়া ঠিক হবেনা।আমি পাশের বাড়ির ইমরানকে জাগিয়ে তুলি।তার ভ্যান আছে সেই দিয়ে আসবে তোমাদের।তবে তাকে বেশি টাকা দিতে হবে।
ফিজা বললো টাকা নিয়ে ভাববেননা।কত দিতে হবে? ১০০।
না ৫০০ দিও।
আচ্ছা ঠিকাছে।
তারা সকলে সুস্থমত বাড়ি ফিরে আসলো।এক ভয়াবহ এডভেঞ্চারের সমাপ্তি এভাবেই ঘটলো।
১৫ দিন পরের কথা।সাদমান এখন কিছুটা সুস্থ।তাকে বাড়িতেই চিকিৎসা করা হচ্ছে।তাকে সবার থেকে লুকিয়ে রেখেছে তার বাবা মা।সাদিয়ার কথা অনুযায়ী তারা বিষয়টি নিয়ে তেমন ঘাটাঘাটি করেনি।প্রিয়া এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।মানসিক যন্ত্রণা এখন আর তাকে আঘাত দেয়না।এর কারন অবশ্য সাদমান।সাদিয়া এখনো প্রিয়ার সম্পর্কে জানেনা। একদিন প্রভাতে সাদিয়া তার পরিবারের সাথে বসে খাবার খাচ্ছিলো।তৎক্ষনাৎ একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে তার কাছে পার্সেল আসে।সাদিয়া পার্সেল হাতে নিয়ে বেশ অবাক হয়।কারন সেখানে নাম ঠিকানা কিছুই লিখা ছিলোনা। সে খুব অস্থির হয়ে পার্সেলটি খুলে কিন্তু সেটা খুলার পর সে আরো আশ্চর্য হয়ে যায়।অজানা কারনেই মনের মধ্যে একপ্রকার আশঙ্কা হতে থাকে।কি এমন আছে পার্সেলটিতে?
__________
আপনাদের কথা অনুযায়ী সাদমান এবং সকলকে সুস্থ মত বাড়িতে ফিরিয়ে দিলাম।এবার সবাই খুশিতো??
আসছে।
#অদ্ভুত_সেই_বাড়িটি–৯
✍️ #মুসাফফা_মারহামা_মিম।
_____________
সাদিয়া পার্সেল হাতে নিয়ে তার কক্ষে চলে গেলো।তার মধ্যে একপ্রকার অস্থিরতা বিরাজ করছে।সে খাটের উপর পার্সেল রেখে জানালা খুলে দিলো।বহির্ভাগ থেকে দক্ষিণের বাতাস ভেসে আসছে।ইচ্ছে করছে জানালার সম্মুখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে।কিন্তু সাদিয়া এসব করলোনা।খাটের উপর আসন পেতে বসে ছোট চাকু দিয়ে পার্সেল খুলতে লাগলো।খুব অবাক কাণ্ড।এরমধ্যে লাল টকটকা একটি শাড়ি রয়েছে।সাদিয়া ভ্রু কুঞ্চিত করে পার্সেলটির চারোপাশ লক্ষ করলো।কোথাও কোনো নাম বা ঠিকানা লিখা নেই।এত অবাক ব্যাপার। বেনামি কে তাকে এটা পাঠিয়েছে?।সাদিয়া আন্দাজ করতে পারছেনা।সাদিয়া ললাটের ভাজ নিশ্চিহ্ন করে শাড়ি হাতে নিলো।গাঢ় লাল রঙ,পুরো শাড়িতে স্টোন বসানো আছে।শাড়ির আচঁল ঘনঘন পাথরের কাজ। সাদিয়া শাড়িটি কাধে ঝুলিয়ে আয়নার সম্মুখে এসে দণ্ডায়মান হলো।মূহুর্তেই উদ্বিগ্ন ভাব কেটে গিয়ে সেখানে উৎফুল্লতার রেশ দেখা গেলো।তাকে বউ বউ লাগছে।মনে হচ্ছে শাড়িটি তার গাত্রে বেশ মানিয়েছে।কিন্তু এটি পাঠালো কে? সাদিয়া আবারো ললাটে ভাজ ফেলে খেটে এসে বসলো।কিছু একটা ভাবতে লাগলো।আচানক শাড়ির বাক্সের মধ্যে দৃষ্টি যেতেই সে একটি চিরকুট দেখতে পেলো।হলুদ কাগজের চিরকুট।সাদিয়া চিরকুটটি খুললো।এবারো সে নিরাশ হলো।সেখানে কারো নাম লিখা নেই।তবে কিছু একটা লিখা আছে।
প্রিয় সাদিয়া।
লাল শাড়ি দেখে খুব অবাক হয়েছো আমি জানি.
আসলে আমার তোমার পছন্দ সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।কিন্তু আমার কাছে লাল রঙ বেশ প্রিয়। তাই ভাবলাম প্রিয় মানুষটিকে লালরঙের একটি শাড়ি দেই।যেদিন তুমি আমার সম্মুখে আসবে সেদিন এই লাল শাড়িটি পড়ে এসো।
এটুকু লিখেই শেষ। সাদিয়া বিরক্ত ভাব নিয়ে শুয়ে পড়লো।নাম লিখে দিলে সমস্যা কি হত।এখন কি করে বুঝবো।সাদিয়ার মস্তিষ্কে সাদমানের ব্যাপারটি ঘুরপাক খাচ্ছে।কিন্তু সাদমানতো খুব অসুস্থ। না এটা সাদমানের কাজ হতে পারেনা।তবে কার কাজ এটি। সাদিয়া আর ভাবতে পারছেনা।সে এই শাড়িটিকে নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছেনা।যদি এটা সাদমান না করে থাকে।তবে নিশ্চিত অন্য কেউ করেছে।সাদমান ব্যতিত অন্য কারো ব্যাপারেই তার কোনো আগ্রহ নেই। সাদিয়া মাথায় হাত দিয়ে উত্তর খুজে যাচ্ছে।হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলো।সানজানা ফোন দিয়েছে।সাদিয়া ফোন রিসিভ করেই বললো।
আসসালামু আলাইকুম দোস্ত। শোন কি হয়েছে?
কি?
আমাকে কে জানি একটা পার্সেল পাঠিয়েছে।কিন্তু নাম ঠিকানা কিচ্ছু লিখেনি।
ডেলিভারি ম্যান কে জিজ্ঞাসা কর?
কিভাবে করবো।ডেলিভারি ম্যান দরজার সামনে রেখেই চলে গিয়েছে।সাজিদ বাহিরে যাওয়ার সময় দেখতে পেয়ে আমাকে দিয়েছে।
কি পাঠিয়েছে?
শাড়ি।
আরে বাহ তোকে আবার শাড়িও পাঠায়।আমাদের কেউ কিছু পাঠায়নারে দোস্ত।খুবই দুঃখজনক ব্যপার।
আরে মজা নিস না।আমি কি করবো সেটা বল।
সাদমান পাঠিয়েছে?
ধারণা করতে পারছিনা।কারন ও অসুস্থ খুব।
তাহলে আর কেউ কি তোকে পছন্দ করে?
পছন্দ করে কিনা জানিনা।তবে আমার আম্মুর স্যারের ছেলে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
বিয়ের প্রস্তাব যেহেতু পাঠিয়েছে তাহলে হয়তো পছন্দ করে।
হুঁ তা ঠিক।তবে সে কি এটা পাঠিয়েছে।
হতেও পারে।
আমি আর ভাবতে পারছিনা দোস্ত।সাদমান ছাড়া কারো ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
তাহলে এক কাজ কর।খুব দ্রুত সাদমানকে মনের কথা জানিয়ে ফেল।এরপর বল তোদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে।
আমার লজ্জা লাগে।
আমি বলবো?
না। অপেক্ষা করি।আমার মন বলছে সাদমানই বলবে।
জানিনা বাবা কত অপেক্ষা যে তুই করতে পারিস।দেখিস আবার অপেক্ষা করতে করতে বুড়ি হয়ে যাসনা।
হু আসলেই দুয়া করিস আমার জন্য।
শোন আমি যেই জন্য তোকে ফোন দিয়েছি।আজ ভার্সিটিতে আসবি?
হ্যাঁ আসবো। কারন বিকেলে সাদমানদের বাড়িতে যাবো।
আচ্ছা ঠিকাছে তুই আসার সময় তোর আর্টের রঙ গুলো নিয়ে আসিস।
আচ্ছা।
সানজানা ফোন রেখে দিলো।সাদিয়া এখনো খাটের উপর বসে আছে।কিছুক্ষণ পর তার মা কক্ষে প্রবেশ করলেন।
কিরে কি আছে ওটাতে দেখেছিস।
দেখো কি।
শাড়ি!বাহ খুব সুন্দরতো।
হু সুন্দর না ছাই।এটা কে পাঠয়েছে সেটাও জানিনা।
তবে আর যাই বলিস শাড়িটা কিন্তু খুব সুন্দর। আকাশও তোর জন্য লালা কালারের একটি থ্রিপিস পাঠিয়েছিলো।
সাদিয়া বিস্ময় গলায় বললো,লাল রঙ।কই আমি তো দেখলামনা।
তোকে দেখতে বলেছিলামনা। তুই নিজে থেকেইতো দেখিসনাই।আমার স্যারের ছেলের দেওয়া কোনো জিনিস নাকি তুই নিবিনা।তাই দেখবিওনা।এইসব বলেইতো সেদিন চলে গেলি।
হুঁ ঠিক বলেছো।আমি আসলেই দেখতে চাইনা।
সাদিয়ার মস্তিষ্কের প্রশ্নের ঝুড়ি ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকলো।তাহলে এই শাড়ি কি আকাশই পাঠিয়েছে। চিঠিতে জানিয়েছে সে লাল রঙ পছন্দ করে। জানিনা বাবাহ এতকিছু ভাবতে ভালো লাগছেনা।সাদিয়া শাড়িটি ছুড়ে ফেলে দিলো। তার কাছে শাড়িটি মূল্যহীন। কারন এটা সাদমান দেয়নি।কখনো কখনো ১০ টাকার বাদামও অনেক মূল্যবান হয়।যদি সেটি পছন্দের মানুষের কিনে দেওয়া হয়।
প্রিয়া উঠোনের মাঝখানে মোড়া পেতে বসে আছে।প্রিয়াদের ডুপ্লেক্স বাড়ি।বাড়ির সম্মুখে ছোট্ট একটি উঠোন। চার পাশে হরেক জাতের ফুলের বাহার।প্রধান ফটকের সম্মুখে বড় একটি ওড়পুষ্পের ( জবাফুল) গাছ।যেটা গেটের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।উঠোনের পূর্ব দিকে একটি হাসনাহেনা ফুলের গাছ।মাঝারি সাইজের।ফুল ফুটলে অসম্ভব সুন্দর লাগে দেখতে। বাড়ির অনেকে নাকি এখানে সাপের উপস্থিতি দেখেছে।যদিও বা প্রিয়া কোনো দিন দেখেনি।তার বাবা ফজলুল হক এ জন্য কয়েকবার চেয়েছেন গাছটি কর্তন করবেন।কিন্তু মেয়ের জন্য পারেননি।রাত হলে হাসনাহেনা ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণে পুরো বাড়ি মোহিত করে রাখে।প্রিয়ার কক্ষের জানালা দিয়ে গাছটিকে স্পষ্ট দেখা যায়।রাত হলেই সে জানালা খুলে দেয়।তার কাছে এই ফুলের সুগন্ধ বেশ ভালো লাগে।ফজলুল হক রাতে পানি খেতে উঠলে মেয়েকে বকা দিয়ে জানালা বন্ধ করান। তিনি এখনো সাপের ভয় করেন।প্রিয়া বাবার বকুনি শুনে জানালা বন্ধ করে দেয় ঠিকই।বাবা প্রস্থান নিলে আবারো জানালা খুলে দিয়ে অনিমিখে গাছটির দিকে চেয়ে থাকে।সে গাছটিকে নিয়ে একটি অনুগল্পও লিখেছিলো।গল্পটি পাঠকমহলে খুব সাড়া ফেলেছিলো।খুব বাধ্যগত মেয়ে প্রিয়া।তার মধ্যে লজ্জা ছাড়া আরো একটা জিনিস ঢের।সেটা হলো বিনয়।গুরুজনদের দিকে তাকিয়ে এখনো কথা বলতে পারেনা।সব সময় দৃষ্টি নিচের দিকে নিবদ্ধ থাকে।প্রিয়া উঠোনে বসে বসে কবুতরের ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে।কবুতর তার খুব পছন্দ। তার জন্যই বাড়িতে পারাবতদের আলাদা নিবাস করা হয়েছে।পশ্চিম দিকে কবুতরদের জন্য ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ছোট কুটির বানানো হয়েছে।।দুটো কবুতর দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া তাদের দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হাসতেই আবারো ভিতরে চলে যাচ্ছে।যেন তারা প্রিয়ার সাথে লুকোচুরি খেলছে। কিছুক্ষণ পর প্রিয়ার হাতে থাকা ফোন বেজে উঠলো। তার বাবা ফোন দিয়েছে।প্রিয়া প্রচণ্ড উৎসুক হয়ে ফোন কর্ণে তুলে নিলো।
আসসালামু আলাইকুম বাবা।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সাদমানের বাবা কিছু জানিয়েছে?
হ্যাঁ মা।
কি বলেছে।
সাদমান আপাতত বিয়েটা করতে চায়না।
মূহুর্তেই প্রিয়ার মন খারাপ হয়ে গেলো।সেখানে কালো মেঘেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।কিছুক্ষণ বাদেই বৃষ্টি নামবে।প্রিয়াকে নিরব থাকতে দেখে তারা বাবা বললো।
মন খারাপ করোনা মা।সাদমান অসুস্থ তাই হয়তো বিয়েটা করতে চাচ্ছেনা ।সে সুস্থ হলে আমরা আবারো কথা বলবো তার সাথে।
প্রিয়া এবারো কিছু বললোনা।বিষন্ন মন নিয়ে ফোন কেটে দিলো।তার মা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়েকে অবলোকন করছেন।কিছুক্ষণ আগেইতো মেয়েটা কেমন হাসিখুশি দেখাচ্ছিলো।এখন কি হলো আবার।তিনি মেয়ের কাছে এগিয়ে আসলেন।
নরম গলায় বললেন।কি হয়েছে?
প্রিয়া হাতে থাকা ফোনের দিকে ইশারা করলো।
তার মা মেয়ের মনের ভাষা বুঝতে পারলেন।কাল ফজলুল সাহেব সাদমানের বাবার সাথে বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করেছেন।সাদমানের বাবা জানিয়েছেন আজ জানাবেন।
প্রিয়ার মা মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বললেন।
মন খারাপ করোনা মা।সে যদি তোমার ভাগ্যে থাকে।পৃথিবীর কেউ তোমাদের আলাদা করতে পারবেনা।আর যদি না থাকে তবে তোমার নাগালের ভিতরে এসেও সে হারিয়ে যাবে।পুরো বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও।তিনি উত্তম পরিকল্পনাকারী।প্রিয়া ঈষৎ মাথা ঝুকালো।মানে সে তার মায়ের সাথে একমত।তবুও তার চোখ ভিজে উঠলো।মুখ ভার হতে থাকলো।শ্বাস আদান প্রদানে ক্লেশ হচ্ছিলো।নয়ন নীর লুকানোর জন্য সে উঠে দাড়ালো।দ্রুত নিজ কক্ষে যেতে পারলেই হয়।ঠুস করে দরজা লাগিয়ে খাটে শুয়ে পড়বে।আর নয়তো জানালার পাশে বসে আকাশ দেখবে। প্রিয়া দোতালার ঘরটাতে থাকে।যার দরুন আকশের চেহারা সে ক্ষানিকটা স্পষ্টই দেখতে পায়। প্রায় সময়ই সে এই কাজটি করে।আজও তাই করবে।আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদবে কিছুক্ষণ। কাঁদলে বুকের ভারী বোঝা হালকা হয়ে যায়।তখন শ্বাস নিতে আর কষ্ট হয়না।দুঃখ গুলোও বিরক্ত কম করে।
সাদিয়া বিকেল বেলা সাদমানদের বাড়িতে এসে প্রস্তুত।সাদমানের মা রেবেকা বেগম সাদিয়া আগমনে খুব খুশি।রেবেকার সাথে এখন সাদিয়ার সম্পর্ক খুব পাকা পোক্ত হচ্ছে।ছেলের অনুপস্থিতে তিনি ভিষণ ভেঙে পড়েছিলেন।এই সাদিয়ার উছিলায় আল্লাহ তার বুকে ছেলেকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন।সুতরাং সাদিয়ার সাথে সম্পর্ক ভালো হবে এটাই স্বাভাবিক। রেবেকা এককাপ দুধ চা,এবং গুনে গুনে ৪ টি টোস্ট বিস্কুট এনে সাদিয়ার সম্মুখে রাখলেন। পাশেই ঠান্ডা পানির গ্লাস।সাদিয়া বেশ ক্লান্ত তাই প্রথমে পানি গ্লাস হাতে নিয়ে ডগডগ করে পানি খাওয়া শেষ করলো। তার অবশ্য চা খেতে ইচ্ছে করছেনা।কিন্তু রেবেকার কড়া আদেশ চা খেতেই হবে। সাদিয়া মুলত সাদমানের সাথে দেখা করতে এসেছে। সে চা খাওয়া শেষ করে সাদমানের কক্ষে চলে গেলো।সাদমানরা এখন যেই বাড়িতে উঠেছে বাড়িটি খুব নিঝঞ্ঝাট স্থানে।আশে পাশে সবুজ বৃক্ষলতার অভাব নেই।সাদমানের কক্ষ থেকে সবুজের মিশ্রণ পরিস্ফুট দেখা যায়।সে সব সময় কক্ষের জানালা খুলে রাখে।জানালার পাশেই তার খাট ফেলা হয়েছে।সাদমান যেহেতু আপাতত হাঁটতে পারেনা।তাই সে প্রায় সময়ই অবাক নয়নে বাহিরের দৃশ্য দেখে।আকাশ দেখে। কখনো কখনো খাতা নিয়ে লিখতে বসে যায়।আজও তাই করছে।সে একটি ইসলামিক উপন্যাস লিখছে।সাদিয়ার উপস্থিতি পেয়ে সে খাতা বন্ধ করে রাখলো।বোরকা পড়েই সে সাদমানের সম্মুখে এসেছে। সাদমান মুচকি হেসে ঘরে থাকা চেয়ারের দিকে ইশারা করলো।সাদিয়া চেয়ারে বসতে বসতে বললো।
কি করছিলেন?
লিখছিলাম।
বই বের করবেন?
হ্যাঁ।
সমস্যা হবেতো?
নিজের নাম দিবোনা।সাদমান মরে গেছে।ছদ্মনাম ব্যবহার করবো।কখনো কারো সামনে যাবোনা।
লিখার ধরন বুঝবেনা?
লিখার ধরনে পরিবর্তন এনেছি।আর লিখতে ভালো লাগে তাই লিখা ছাড়া থাকতে পারিনা।
কেউ আপনাকে জানবেনা, চিনবেনা এতে লিখালিখি করে কি আনন্দ আছে?
যখন আমাকে মানুষজনেরা চিনতো।তখনো আমার উদ্দেশ্য জনপ্রিয়তা ছিলোনা।আমি চেয়েছিলাম।আমার কলম দিয়ে দ্বীনের খেদমত করবো।সঠিক,ভুল সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করবো।তাই যদি আমার লিখা পড়ে একজনও উপকার পায়।তাতেই আমি খুশি।
আপনি খুব ভালো মানুষ।নিয়ত কত পরিশুদ্ধ। মা শা আল্লাহ।অথচ এমন নিয়তের মানুষ পাওয়া খুব দুষ্কর।
থাক বাদ দাও।এখন বলো কি খবর তোমার?
খবর ভালো। কিন্তু আজ একটি কারনে মন খারাপ।
কি কারন?
আমাকে কে যেন একটা পার্সেল পাঠিয়েছে।কিন্তু সেখানে নাম ঠিকানা কিচ্ছু দেয়নি।
কি আশ্চর্য। এটা কোনো কথা?তোমার কি কাওকে সন্দেহ হয়?
আপাতত না।
সন্দেহ না হলে উত্তর খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।তো এ জন্য মন খারাপ করে আছো?
আমি চাইনা এমন কেউ আমাকে উপহার দিক।যাকে আমি পছন্দই করিনা।
আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম।দেখো খুঁজতে থাকো।কখনো পেয়েও যেতে পারো।পেয়ে গেলে না হয় তোমার মনের কথা বলে দিও।
হুঁ সেটাই করতে হবে।আচ্ছা তা যাই হোক।আপনি কিন্তু খুব সুন্দর করে লিখেন।আপনার লিখায় আমি প্রান খুঁজে পাই।
আলহামদুলিল্লাহ।
তবে আমি লিখার, ল ও পারিনা।
কি পারো?
রান্না করতে পারি।
বাহ ভালোইতো হলো।আমি লিখবো আর তুমি রান্না করে করে আমাকে খাওয়াবে।
সরি!
না মানে আমি বলছিলাম।আমাদের বাসায় তোমার মজাদার রান্না পাঠিয়ে দিতে পারো।
ও আচ্ছা।
ঠিকাছে আমি এখন উঠি।আপনার শরীরের কি অবস্থা এটা জানার জন্যই এসেছি।
ঠিকাছে সাবধানে যেও।
জী।
সাদিয়া চলে আসলো।প্রধান গেট থেকে বেরুবে এমন সময় পিছন থেকে মতির মায়ের ডাক পড়লো।মতির মা সাদমানদের বাসায় কাজ করেন।সাদিয়া ঘুরে তাকাতেই মতির মা বললেন।আপনারে কিছু কইতে চাই।
জী বলুন।
এহেনে কমু? আচ্ছা বাইরে বের হোন কইতাছি।
মতির মা সাদিয়াকে এমন এক তথ্য দিলেন।যার দরুন তার মন মূহুর্তেই ভেঙে গেলো।
আসছে।