মি_পার্ফেক্ট ২,১২,১৩,১৪

0
810

#মি_পার্ফেক্ট ২,১২,১৩,১৪
আতাউর রহমান হৃদয়
১২

হুট করে ওনার ইনবক্সে আসা একটা মেসেজ দেখে খুবই শকড খেলাম।

— কেমন আছিস..?(মেসেজ টা)
— আলহামদুলিল্লাহ…তুই… (ভাবলাম ওনার সমবয়সী কেউ হবে…তবে মেসেজ কারী কোন ছেলে নয় একটা মেয়েই বটে…নামটা উম্মে হাবিবা।।।)
— আলহামদুলিল্লাহ… তোর তো দেখি কোন খোঁজই নাই দোস্ত…?(বাহ ওনার যে কোন মেয়ে বন্ধু থাকতে পারে ভাবতেই পারি নাই…কিন্তু ওনার মেয়ে বন্ধু আছে বিষয় টা ওনি আমাকে জানালেন না কেনো?)
— একটু বেশি বিজি ছিলাম রে…আর তুইও তো কোন খোজ নিস না….আমার বিয়ে তে পর্যন্ত আসলি না…?(একটু বুদ্ধি খাটালাম…আমি মেসেজ করছি ওনি তাকিয়ে আছেন….কিছুই দেখি বলছেন না।।।)
— আরে তোরে আর কতবার বলব মেয়ে টার শরীর ভালো ছিলো না ওই অবস্থায় গেলে আরো খারাপ হতো….(মেসেজ)
— হুম বুঝতে পারছি…আচ্ছা তোর মেয়ের নামটা কি যেন রাখলি…?(আমি মেসেজ করলাম….ওনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন…এর অর্থ টা বুঝতে পারলাম না…)
— বাহ রে তোর আর আমার ঠিক করা নামটাই ভুলে গেলি…আচ্ছা তুই কি আদো সেই ইফতি আছিস যার সাথে আমার আজ এত বছরের বন্ধুত্ব…নাকি বিয়ে করে বদলে গেলি..যাকে আমি ভালবাসছিলাম….বাট তুই তো আমাকে বোন বানিয়ে দিলি….তাই আমাকেও বাদ্য হয়ে তোকে ভাইয়ের মত ভালবাসতে হলো…?(মেয়েটা রিপ্লাই দিলো…বাচ্চার নামের কথা জিজ্ঞেস করাতে ওনি কেনো আমার দিকে ওমন করে তাকিয়েছিলেন এখন বুঝতে পারলাম)
— এখনো কি আমাকে প্রেমিক হিসেবে ভালবাসিস…?(একটু ঘটিয়ে দেখলাম)
— দুর তুই ভাল করেই জানিস তুই আমার বন্ধু কম ভাই বেশি লাগিস তবুও এসব বলছ কেনো…?(মেসেজটা পড়ে শেষ করে রিপ্লাই দিবো তার আগেই মেয়েটা মেসেন্জারে অডিও কল দিলো…কি আর করব বাধ্য হয়ে ওনাকে ফোনটা দিয়ে দিলাম নাহয়… ওনার বান্ধুপির কাছে ধরা খেয়ে যাবো যে..)
— হ্যালো বল….?(ফোনটা ওনার হাতে দেওয়ার আগেই আমি রিসিভ করে লাইড দিয়ে দিলাম)
— তুই ইফতি তো নাকি…?(মেয়েটার কন্ঠ টা অনেক সুন্দর।। আমি মেয়ে হয়েও একটা মেয়ের কন্ঠের প্রেমে পড়ে গেলাম…আচ্ছা আমার বরের কন্ঠটা ফোন কলে কেমন শোনায়..? এতবার তার সাথে কথা বলেছি একবারো নোট করলাম না আমি,,তার কন্ঠটা কেমন শোনায় ফোন কলে..?আহ হা কেমন বউ আমি তার…)
— তোর কি কেন ডাউট আছে..? (ওনি)
— অবশ্যই…. তুই ইফতিকে আমার ভালো করে চিনা আছে…?(মেয়ে টা অনেক কনফিডেন্সের সাথে বললো)
— কেমন করে চিনা আছে.. (ওনি)
— তুই ইফতি যে কোন কিছু এত সহজে কোন কিছু ভুলিস না আমার জানা আছে….আর তুই সেই ইফতি কি না নিজের পছন্দের একটা নাম ভুলে যাবি…এটা কি করে সম্ভব…?(মেয়েটা)
— কি নাম..?(উজ্জাসীত হয়ে আমি একটু জোরেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছি…)
— কে আছে তোর সাথে অনু নাকি…?(মেয়েটা বোধয় আমার কথা টা শুনে ফেললো….তবে ওয় আমার নাম জানলো কি করে…?)
— হুম… তুই যে এতক্ষণ বললি আমি তোর সাথে চ্যাট করছি কি না….আসলে অনুই তোর সাথে চ্যাট করছিলো…?(ওনি)
— ওয়ারে বাহ…অনু ভাবি কে তো একটা অস্কার দেওয়া উচিত…(মেয়েটা খুবই উৎফুল্ল হয়ে বললো)
— কেনো আপু…?(আমি)
— আরে যে ইফতির ফোনটা কেউ কখনো হাতে নিতে পারে নি আর তুমি সেই ইফতি ফোনটা হাতে নেওয়া দুরে থাক সোজা ইনবক্সে চলে গেলে চ্যাক করতে….(ওনি)
— ওমা তাই নাকি….?(অনেকটা অবাক হয়ে বললাম)
— জ্বি….
(মেয়েটা কল কেটে দিলো হুট করে….অডিও কল বাদ দিয়ে ভিডিও কল দিলে…)
— হাই অনু ভাবি….

(বাহ যেমন টা তার কন্ঠ তেমনী তার চেহারা অনেক মায়াবী..যদিও দুধে আলতা সুন্দর নয়..তবুও সে সুন্দর…কেননা গায়ের চামড়া সাদা তো মুলারও হয় তবুও গাজরের দামটা একটু বেশিই কারণ গঠন তাদের এক হলেও মালিন্যতা গাজরের বেশি তাই তো তার দাম টাও বেশি…যদিও মানুষের মূল্য কখনো নির্ধারণ করা যায় না তবুও বলছি….কারণ এ জগতে তো সবাই মানুষের রূপের প্রেমে পড়ে কয়জনই বা ভিতর টা দেখে….ভেবেছিলাম ওনার বান্ধবী দুধে আলতা সুন্দরীদের তালিকার একজন হবে তবে আমার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল ওনি চেহারায় মায়ায় খুঁজেন তা তো বুঝতে পারলাম….)

— কি হলো ভাবি কি ভাবেন….? আমি কিন্তু তোমার থেকে সুন্দরী নই সো চাপ নিও না….(মেয়েটা একটা মুচকি হাসি দিলো)
— আরে না ভাবছি ওনার কি এমন গুন আছে যার জন্য আপনার মত এত কিউটি আর মায়াবী বান্ধবী পেলো…?(আমি)
— আরে ভাবি আমি ওর বান্ধবী কম বোন বেশি লাগি…যদিও আমাদের রক্তের সম্পর্ক নেই তবুও আত্মার সম্পর্ক টাই বেশি বড়….(আপুটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন…একটা মেয়ে যে এতটা সুন্দর করে হাসতে জানে ওনাকে দেখে আজ বুঝলাম….যদিও আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের গুনগান করছি…করতে তো হবেই সুন্দর কে সুন্দর বলাটা তো আর ভুলের কিছু নয়)
— হুহ ঠিক বলেছেন আপু…তবে একটা কথা বলবেন.. (আমি)
— কি…? (ওনি)
— আপনি এতটা নিখুতভাবে মুচকি হাসি দেন কি করে…?(আমার জানতে ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞেস করে ফেললাম)
— ইফতির সাথেই তো সারাজীবন আছো শিখে যাবে….?(ওনি)
— ওহ তার মানে ওনি শিখিয়েছেন… ওই আপনি কখনো আমাকে মুচকি হাসিটা শিখালেন না কেনো…?(ওনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
— কারণ তোমার প্রতিটা হাসিই সুন্দর…. তুমি যেমন করেই হাসো না কেনো… প্রতি টা হাসি তে মুক্তা ঝরে… (ওনি)
— অনু ভাবি তোমার হাসি মিস করছি….(আপু)
— কেনো আপু..আমার হাসিতে কি এমন আছে…?(আমি)
— শোনো ইফতি যেহেতু তোমার হাসির প্রসংশা করেছে সেহেতু তোমার হাসি তার দেখা সকল হাসির চেয়ে সুন্দর হাসি….(আপুটা)
— আমার হাসি ওনার দেখা সকল হাসির মাঝে সুন্দর হাসি কেমন করে হলো….(আমি)
— কারণ মুক্ত ঝরা হাসি শব্দ টা ইফতি কখনোই বলে নি কাউকে..একদিন আমাকে সে বলেছিলো আমার হাসি সুন্দর… প্রতিউত্তরে বলছিলাম মুক্তা ঝরা হাসিতো নয়…ইফতি বলেছিলো যদি কখনো মনে হয় আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর হাসিটা তোর তাহলে মৃত্যুর আগে হলেও তোকে জানাবো তোর হাসিতে মুক্তা ঝরে…কিন্তু আপসোস আমার আর ওর মুখ থেকে ওই মুক্তা হাসির প্রশংসা শোনা হলো না…তার আগেই তুমি শুনে নিলে…(আপু)

— তাই নাকি আপু…(এর চেয়ে আনন্দের বিষয় কি হতপ পারে…আমার জানা নেই…একজন স্ত্রীর জন্য… তার বরের কাছে তার হাসিটা সবচেয়ে সুন্দর হাসি এটা জানার পর ওই স্ত্রীর মনের আনন্দ টা কেমন হয় তা বলে বুঝানো আমার পক্ষে দায়)
— জ্বি তাই,,, তবে জানো ইফতি কিন্তু তোমাকে বিয়ের আগ থেকেই….(আপুটা কিছু বলবে তার আগেই ওনি বলে উঠলেন)
— তোর জামাই কই রে…?(ওনি)

এরপরে আপু টার কথা শুনে আমি অবাক…

চলবে…

#আতাউর_রহমান_হৃদয়
#মি_পার্ফেক্ট২
১৩
আতাউর রহমান হৃদয়

— জ্বি তাই,,, তবে জানো ইফতি কিন্তু তোমাকে বিয়ের আগ থেকেই….(আপুটা কিছু বলবে তার আগেই ওনি বলে উঠলেন)
— তোর জামাই কই রে…?(ওনি।। বোধয় কথা ঘুরানোর চেস্টা করলেন…)
— জামাই আছে….অনু ভাবি তুমি শোনো….(আপু টা ওনার কথা এড়িয়ে গেলেন)
— জ্বি আপু বলুন…(আমি)
— ইফতি তোমাকে বিয়ের আগ থেকেই জানত…এবং কি পছন্দও করতো…(আপুটা)
— পছন্দই করত শুধু….(আমি একটু হতাশার ভান ধরলাম)
— হ্যা পছন্দই করত…আর কি করবে??? (আপু)
— ভালো তো আর ভাসতো না….(আমি)
— আরে ভাবি ইফতি তো তোমাকে বিয়ের ভালবাসে…বিয়ের আগে ভালবাসা হয় কি করে….?(আপুটা)
— অনেকেই যে ভালবেসে বিয়ে করে…?(আমি)
— ওটা তো ভালবাসা না..।(আপু)
— তাহলে ওটা কি…?(আমি…ইফতি মহাশয় আমাদের কথা নীরব দর্শক হয়ে শুনে চলেছেন)
— ওটাতো প্রেম..দেখো না কত প্রেম শুরু হওয়ার পর কিছুদিন পরই বিচ্ছেদ হয়ে যায়…আর ভালবাসা সে অনন্তকাল রয়ে যায় মনে….যাকে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েও ভুলা সম্ভব নাহি হয়….(আপু)
— হুম তাও ঠিক…তবে আপনি এত সুন্দর ভালবাসার বিশ্লেষণ জানলেন কি করে?? (আমি)
— যার সাথে সারাজীবন একসাথে কাটাবে তুমি সেই ব্যক্তির সাথে সবে তো তুমি মাত্র তিনমাস হয়েছে আছো….তার সাথে চলার পথে নিত্য নতুন কত কিছুই শিখতে পারবে…তার কোনো ইয়াত্তা নেই….(আপু…টা…তার মানে ভালবাসার এই সংক্ষেপ টা ওনার… হয়ত ওনিই কখনো ওনার বান্ধবী কে এই কনসেপ্ট টা দিয়েছেন)
— আচ্ছা আপু মানুষ কি প্রেমে পড়ে…?(আমি)
— হ্যাঁ পড়ে তো…তবে সব প্রেমে পড়া কি সার্থক হয়….কিছু প্রেম নীরবই রয়…তবে প্রেম করা আর প্রেমে পড়ার মাঝে বিশাল এক পাহাড় সমান তপাত রয়েছে যা তুমি কখনো প্রেমে পড়লে বুঝতে পারবে….(আপুটা)
— হুম সেটা বুঝিয়ে দিলেন আপনার বন্ধু…(আমি)
— ওহ তাই নাকি…. (আপুটা….ওনার দিকে তাকালাম একটু…কিন্তু ওনি তো দেখি চোখ বুঝে আছেন…ওনার চেহারায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি কস্টের চাপ…হয়ত ওনার পায়ে ব্যাথাটা বেড়েছে….ওনার ঔষধের সময়ও হয়ে আসছে)
— আচ্ছা তোমার সাথে পরে কথা হবে আবার…এখন ওনার ঔষধের সময় হয়েছে…?(আমি)
— কি হয়েছে ইফতির???(আপুটা অনেকটা আতংকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন)
— ওনার পায়ে ব্যাথা…. (আমি)
— কবে থেকে…?(আপিটা…বোধয় ওনার সাথে ঘটে যাওয়া গত কিছুদিনের কথা জানেন না)
— আচ্ছা পরে বলব…ওনাকে ঔষধ দিয়ে আবার কল দিচ্ছি….
বলেই কলটা কেটে দিলাম…

ওনাকে খাবার খাইয়ে ঔষধগুলো খাইয়ে দিলাম….

— মামা তোমার পা টা ভালো হবে কবে…?(নীলু)
— এই অল্প কিছুদিন পরই ভাল হয়ে যাবে…?(নীলুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন ওনি)
— তোমাকে এভাবে দেখে আমার একটুও ভালো লাগছে না…(অনেকটা করুনভাবেই নীলু কথাটা বললো)
— হুম মামনী আমারও না এভাবে থাকতে একদম ভালো লাগছে না… কি করব বলো….সবই তো ভাগ্য…এখন চাইলেই তো আমি আগের মত চলতে পারব না…পা টা ভালো হওয়া ছাড়া… (ওনি)
— হুহ…

নীলু তার মামা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে…মামা ভাগনীর এমন দৃশ্য দেখলে মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে যায়….কেউ ওনাদের এমন ভাবে দেখলে বুঝতেই পারবে না নীলু তার মামাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় তবুও নীলু তার মামার কাছে সবথেকে বেশি সময় থাকে… ওনি মানুষটাই এমন হয়ত…

রাতে ওনার পাশে বসে মোবাইল টিপছি।।।

— আগের সংসার টা আবারও শুরু করেছো বুঝি….?(ওনি)
— আগের সংসার মানে…?(আমি)
— ঐ যে বিয়ের কিছুদিন পর যাদের সাথে মেসেঞ্জারে সংসার করেছিলে….?(ওনি)
— আপনি আমাকে ছোট করছেন…?(আমি)
— তো কি করব…?,আমি পাশে থাকা সত্ত্বেও তুমি ফোন নিয়ে ব্যস্ত…? (ওনি মন খারাপ করে বললেন)
— আহারে…এই আমার মি. হাসবেন্ড আমি আপনাকে নিয়েই ব্যস্ত দেখেন…?(ওনার দিকে ফোনের স্কিন টা এগিয়ে দিয়ে বললাম….আমি ওনার ফেসবুক প্রোফাইলে ওনার পুরোনো ছবি গুলো দেখছিলাম)
— ওও আগে বলবে তো….(ওনি)
— হুহ বলার সুযোগ দিলেন কই আর…?(আমি)
— সরিই বউ…(এমন একটা ফেস নিয়ে সরি বললেন আমি না হেসে আর পারলাম..একদম ছোট খোকার মত দেখতে লাগছিলো ওনাকে…. ওনি পারেনও বটে…মানুষের মনকে এক নিমিষে কি করে জয় করে নিতে হয় ওনার কাছ থেকে অনেকের শিখা উচিত)
— আচ্ছা একটা কথা কন তো…?(আমি)
— হুম বলো…?(ওনি)
— আগে তো দেখি অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি ফেসবুকে আপলোড করতেন…. সাথে অনেক ভালো সাহিত্য লিখেও পোস্ট করতেন…এখন আর করেন না কেনো..?(আমি)
— এখন আর সেই সময় নেই….(ওনি)
— কেনো সময়ের কি হয়েছে??? (আমি)
— এখন আর আগের মত সেই চাঞ্চলিক্যটাও নেই…নেই সে ফুর্তি করার বয়স…জীবনের ভারী রা যখন চলে আসে মাথায় তখন আর সাহিত্য করা আর সুন্দর ছবি তোলার মন থাকে না….(ওনি খুবই আক্ষেপই স্বরে বললেন…বুঝা গেলো ওনি ওনার সেই স্কুল আর কলেজ জীবন টা কে অনেক মিস করেন…)
— তবুও মাঝে মাঝে করতে তো পারেন আমার জন্য…. (আমি)
— চলো….
বলেই ওনি..

চলবে…

#আতাউর_রহমান_হৃদয়

#মি_পার্ফেক্ট২
১৪
আতাউর রহমান হৃদয়

— তবুও মাঝে মাঝে করতে তো পারেন আমার জন্য…. (আমি)
— চলো….(কথাটা বলেই ওনি শোয়া থেকে উঠে বসলেন…)
— কোথায়…?(অবাক হয়েই বললুম)
— একটু বারান্দায় গিয়ে বসি….(ওনি)
— নাহ এই অসুস্থ অবস্থায় কোথায়ও যাওয়ার দরকার নেই….শুয়ে থাকুন…(আমি একটু শাসিস্ত ভাবেই বললাম)
— আরে আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ তাই বলে কি আমাকে মানসিক হতাশায়ও ফেলবে নাকি….?(ওনি খুবই নরম ভাবে বললেন)
— কোথায় যাবেন শুনি আগে…?(আমি)
— বারান্দায়…? (ছোট বাচ্ছাদের মত আবদারের স্বরে বললেন ওনি)
— আচ্ছা চলুন…

আমার কাঁধে ভর নিয়ে ওনাকে কোনমতে বারান্দার বেঞ্চি টাতে বসালাম…

— শোনো পুরুষ হয়ে যেহেতু জন্ম নিয়েছি এমন হাজারো বাঁধা কে রুখে দিয়ে বেঁচে থাকার সামর্থ্য অবশ্যই উপরওয়ালা দিয়েছেন…(আকাশের দিকে তাকিয়ে এক মনস্ক হয়ে বললেন)
— পুরুষ হয়ে জন্ম নিলে সকল বাধা এক হাতে সামাল দিতে এটা কিন্তু কোথায়ও লিখা নেই…?(আমি)
— তা ঠিক তবুও… (বলতে গিয়েও থেমে গেলেন)
— তবুও কি..? একজন বেগম হিসেবে আমার তো আপনার সকল কিছু জানার ও সকল ক্ষেত্রে আপনার পাশে থাকার অধিকার আছে। সাথে আপনার সঙ্গ দেওয়া টাও আমার কর্তব্য…(আমি)
— হুম ঠিক বলেছো…?(ওনি)
— তবে আপনি আমাকে বলছেন না কেনো…?(আমি)
— যদি বলতে যাই তবে একটা প্রশ্ন উঠে দাড়াবে তখন কি হবে…?(ওনি)
— কি প্রশ্ন…?(আমি)
— সবকিছুর সমাধান খুঁজি তারপর নাহয় বলব…?(ওনি)
— এখনো একাই কি সকল প্রশ্নের সমাধান খুজে বেড়াবেন…?(আমি)
— নাহ…(ওনি)
— তো বলছেন না কেনো…?(আমি)
— সময় হোক…(একটু থেমে) জানো একটা কথা…?(ওনি)
— কি…?(আমি)
— ঘটনা টার তিন দিনের মাথায় যখন পুরো শরীর টা ব্যাথায় কুকড়েচ্ছিলাম তখন বারে বারে মায়ের চেহারাটা ভেসে উঠছিলো চোখে…মনে হচ্ছিলো কি জানো মায়ের জীবনের সকল আশা স্বপ্ন আমার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে…. মাকে কতটা ভালবাসি জানি না…তবে তার চোখের জল সইতে পারি না…যখন ঠিক এই জায়গায় তারা আঘাত করেছিলো তখন মনে হচ্ছিলো কি জানো…কেউ আমার কলিজা টায় আঘাত করছে…কারণ পায়ের এখানটায় আগেরও একটা হালকা জখম ছিলো যা আমি একাদশ শ্রেণীতে পড়া কালীন সময়ে ফুটবল খেলতে গিয়ে ফেটে গিয়েছিলো…এরপর থেকে ফুটবল খেলা ছেয়ে দিয়েছি….মায়ের চোখের পানি দেখে…জানো খুব মনে পড়ছিলো তোমায়….মনে হচ্ছিল কি? তোমার সাথে থাকা হলো না সারা জনম…মনে হচ্ছিলো এই বুঝি আমার স্বপ্ন গুলো জলাঞ্জলি গেলে…?খুব কস্ট হয় যখন নিজের কাছের মানুষ গুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছি বহুদুর এমন পরিস্থির সম্মুখীন কেউ হয়….(খুব কস্ট হচ্চে ওনার কথাগুলো বলতে….আকাশে মেঘের ঘর্ষণ দেখা যাচ্চে….তবে যে আমার পাশে বসে তার কস্ট গুলো বলে যাচ্ছে তার ভিতর কেমন মেঘের আভা বয়ে যাচ্ছে একটু হলেও যে আচঁ করতে পারছি….ওনার কন্ঠ টা ভেঙে আসছে)

— (আমি কিছু না বলে ওনার বুকে মাথা টা রাখলাম।। ওনাকে শান্তনা দেওয়ার মত কোন ভাষাই যে আমার নেই)
— হাবিবা বলেছিলো না তোমাকে আমু বিয়ের আগ থেকেই পছন্দ করতাম বিষয় টা বোধয় তুমি জানোও বটে….?(ওনি)
— আপনি কি আমাকে বলেছেন…? আমি জানব কি করে…?(আমি)
— হায়রে বউ আমার মিথ্যা যখন ঠিকভাবে বলতে পারো না বলতে যাও কেনো….?(ওনি)
— কিসের মিথ্যা আর আমি জানব কি করে..?আপনি কি আমাকে কখনে বলেছেন নাকি যে আপনি আমাকে বিয়ের আগ থেকে জানতেন আর পছন্দও করতেন…?(আমি একটু সংশয়ে থেকেই বললাম)
— তোমাকে মুখে বলি নি তো কি হয়েছে? কলমে তো বলছি…?(ওনি)
— কিভাবে…? (আমি)
— তুমি যে আমার ডায়েরি টা পড়েছো আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি…. (এহ যাহ ধরা খেয়ে গেলাম)
— আমি কখন পড়লাম…?আর আপনার ডায়েরি কোথায়..?(আমি)
— হয়েছে আর মিথ্যা বলতে হবে না…আমার জিনিস তুমি পড়েছো এতে এত লুকানোর কি আছে…? আর সব টা তো তোমাকেই নিয়ে লেখা…?(ওনি আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে মুচকি একটা হাসি দিলেন)
— হুহ সরিই…(আমি)
— সরি কেনো…?(ওনি)
— আপনাকে না বলে আপনার ডায়েরি টা পড়েছি বলে…?(আমি)
— পাগলী বউ আমার…ওটা তুমিই একদিন আমার পক্ষ থেকে গিপট পেতে…গিফট টা তুমি নিজেই আগ থেকে নিয়ে নিয়েছো এতে এত ভুলের কিছু হয় নি…?(আমার মুখটা আলতো করে তুলে আমার চোখে চোখ রাখলেন ওনি)
— হুহ…(ওনার চোখের গভীরে তাকালাম)
— তোমাকে বিয়ের আগে ভালবাসি নি এটা ঠিক তবে তোমাকে চেয়েছি নিজের করে পেতে এতে কোন খুত ছিলো না…তোমার চেহারাটাও দেখা হয় নি বিয়ের আগে…তবে জানা ছিলোনা তোমার যে বিয়ের আগে কেউ ছিলো তোমার জীবনে…তাহলে তো কখনোই তোমাকে বউ করে চাইতাম না….(খুব ভাঙ্গা কন্ঠে কথা বলছেন। চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন ওনি আমার মুখটা খুব শক্ত করে তার দিকে ধরে আছেন….ওনার চোখে চোখ রাখতে পারছি না….)
— আপনাকে কে বললো আমার জীবনে কেউ ছিলো…?(আমি অনেকটা ভয়ার্তক কন্ঠে বললাম)
— জেনেছি কোন প্রকারে…?(ওনার কন্ঠ শক্ত হয়ে আসলো)
— (চুপ করেই আছি আমি)
— জানতে চেয়েছিলে না আমার কি হয়েছিলো….কি করে ঘটে গেলো আমার সাথে এসব….?(ওনি)
— কি করে…?(আমি)
— যদি বিষয় টা একটু গুলিয়ে দেখতে যাই তাহলে তোমার নামটাই যে সবার আগে ভেসে আসে…?(ওনি)
— আমার নাম…?(অনেক টা অবাক হলাম…কি করে আমার নাম আসে…)
— আমার নাম আসে…? আমি আপনার সাথে কেনো এমন করতে যাবো…? আমি যে আপনাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি.. (আমি)
— আগে নিজেকে ভালবাসতে শিখো…যে নিজেকে ভালবাসতে জানে না সে অন্য কে কি করে ভালবাসবে…? (ওনি)
— হুম…,কিন্ত আমার নামটা কি করে আসে…আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার পিছনে..?(আমি)
— কারন….

চলবে…

#আতাউর_রহমান_হৃদয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here