মৃত_কাঠগোলাপ,পর্ব:০১

0
1906

ধারাবাহিক গল্প- #মৃত_কাঠগোলাপ,পর্ব:০১
লেখনীতে- #আভা_ইসলাম_রাত্রি
ক্যাটাগরি- সাইকোপ্যাথ+রোমান্টিক

‘ মেয়েটাকে আমার চাই, ওসমান! হয় জীবিত নয়তো মৃত! ডিড ইউ গেট ইট? ‘
ধ্রুবের রাগান্বিত কণ্ঠস্বরে ওসমানের আত্মা ছলকে উঠলো যেন। তরতর করে কাঁপতে লাগলো মধ্যবয়স্ক এ লোক। ওসমানকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধ্রুবের রাগ সপ্তমে চড়ল। সে দাঁতে দাঁত চেপে অদ্ভুত শব্দ করতেই ওসমান ভয়ে জমে উঠল। দ্রুত মাথা নেড়ে জানাল,
‘ আ-আ-আমি চেষ্টা করব, স্যার। ‘

ধ্রুব বাঁকা নয়নে তাকালো। টেবিলের উপর জোরে বাঘের ন্যায় থাবা ফেলে বললো,
‘ চেষ্টা শব্দটা আমার একটুও পছন্দ নয়, ওসমান। করে দেখানো চাই। বুঝা গেছে? ”

ওসমান মাথা নত করে তরতর করে কেঁপে উঠল। বরাবরের মত ওসমানকে কোনো কাজ দেওয়ার আগে ধ্রুব বললো,
‘ যাও, আমার বন্দুকটা নিয়ে এসো। ‘

ওসমান জানে এখন কি করতে চাইছে ধ্রুব। কিন্তু ধ্রুবের কথা অমান্য করার সাধ্য এ ভুবনে কার আছে? ধ্রুবের দ্বিতীয়বার বলার আগেই ওসমান ঝড়ের বেগে ড্রয়ার থেকে ধ্রুবের বন্দুক নিয়ে আসল। বন্দুক ধ্রুবের দিকে এগিয়ে দিল ধ্রুব মানা করে। পায়ের উপর পা তুলে বাবু হয়ে বসে বলে,
‘ বন্দুকে নিজের নাম লিখে একটা গুলি ঢুকাও, ওসমান।”

ওসমান ছলছল চোখে চেয়ে রইলো ধ্রুবের দিকে। কাজের সময় ধ্রুব দেরি সহ্য করতে পারে না। তাই সে চিৎকার করে বলে,
‘ দেরি না করে যা বলছি, তাই করো। ‘

ওসমানের নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। টেনশনে প্রেশার লো হয়ে যাচ্ছে। ধ্রুবের কথামত কাজ না করলে মরন নিশ্চিত। ওসমান আর দেরি করল না। সে দ্রুত নিজের নামে একটা গুলি বন্দুকে প্রবেশ করালো। ধ্রুব মুচকি হেসে হাত বাড়ালো। ওসমান বন্দুকটা তুলে দিল ধ্রুবের হাতে। ধ্রুব নেড়েচেড়ে বন্দুকটা পরীক্ষা করে নিল। অতঃপর গুলি ভরা বন্দুক তাক করলো ওসমানের কপাল বরাবর। ওসমান ঘেমে গেছে। হাঁটু কাঁপছে তার। অতিরিক্ত কাঁপুনিতে হাঁটু খানিকটা বেঁকে গেছে। ধ্রুব ঘাড় দুদিকে ঘুরালো। ঘাড় ফুটে মটমট শব্দ হলো। ধ্রুব ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো,
‘ মেয়েটাকে আমার চাই, ওসমান। হয় মেয়েটাকে আমার হাতে এনে দেবে নয়তো নিজের হাতে নিজের নাম লেখা গুলিবিদ্ধ হয়ে মরে যাবে। চয়েজ ইজ ইউরস। ‘

ওসমান ক্রমাগত মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘ আ-আমি ওই মেয়েকে যে করেই হোক এনে দেব আপনার হাতে, স্যার। ‘
‘ দ্যাটস মায় ডগ। আ’ম প্রাউড অফ ইউ, ওসমান। ‘

ধ্রুব তাকে কুকুর বলে সম্বোধন করায় অপমানে গা রি-রি করে উঠলো ওসমানের। ধ্রুব হাসল তা দেখে। অন্যকে কষ্ট পেতে দেখলে ধ্রুবের সুখ সুখ অনুভব হয়। ধ্রুব বন্দুক সরিয়ে পকেটে পুড়ে নিল। হাতে থাকা কালো রঙের ঘড়ির দিকে চেয়ে বলল,
‘ ঘুমাতে যাচ্ছি আমি। ডিস্ট্রাব করবে না আমায়। ‘
‘ জ.জি স্যার। ‘

ধ্রুব নিজের কক্ষে চলে গেল। ওসমান ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। দুহাতের আজলায় ধুলো নিয়ে কপালের উপর ছিটিয়ে দিয়ে বিলাপ করতে লাগল। সৃষ্টিকর্তার কাছে মৃত্যু কামনা করতে লাগল নিজের। ধ্রুবের হাতে বন্দী হয়ে অত্যাচারিত হওয়ার বদলে মৃত্যু ঢের ভালো!
_________________________________
ধ্রুব, এক ভয়ঙ্কর ঝড়ের নাম। ধ্রুব, এক মরণঘাতী অসুখের নাম। ধ্রুব, এক নিষ্ঠুর মানুষের নাম। পাথরের তৈরি মন, কথাটা জীবনে সবাই শুনলেও এমন মানুষ দেখেছে কজন? কিন্তু ধ্রুব হলো এমন একজন পুরুষ, যার মনটা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পাথর দিয়ে তৈরি। যে ডান হাতে মানুষ খুন করলে, বাম হাত তা টের পায়না। যে লোক একবার তার আয়ত্তের ভেতর চলে আসে, সে সারাজীবন ধ্রুবের শিকলে বন্দী থাকে। সেই বন্দী লোককে ভুলে যেতে হয় তার পরিবার, তার স্বাধীন জীবন। ধ্রুবের হাতের পুতুল হয়ে বেঁচে থাকে মরার আগ অব্দি।

এই পাথরের মত মনের অধিকারীর জীবনেও প্রেম এসেছিল, বহুবার। প্রেম স্বাধীনতা কেড়ে নেয়না। বরং প্রেম মানুষকে বিশাল আকাশের নিচে শীতল বাতাস অনুভব করতে শেখায়।
কিন্তু ধ্রুবের কাছে প্রেম হলো সম্পূর্ণ আত্মকেন্দ্রিক। তার কাছে প্রেম হলো নিজের কাছে আটকে রাখা। যে মেয়েকে ধ্রুবের মনে ধরবে, সেই মেয়ে সেদিন থেকেই ধ্রুবের হাতে বন্দী হয়ে যাবে। ভালোবাসার ক্ষেত্রে ধ্রুবের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু কথায় আছে না, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। তেমনটা ধ্রুবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ধ্রুবের অতিরিক্ত ভালোবাসায় একসময় সেই মেয়ে হাঁপিয়ে উঠে। মুক্তি পেতে চায় ধ্রুব থেকে। কিন্তু ধ্রুব তাদের মুক্তি দেয়না। বরং শিকলের বেড়াজাল আরো শক্ত করে দেয়। মেয়ে ছটফট করতে শুরু করে, পালিয়ে যেতে চায়। মেয়ে একটুখানি স্বাধীনতার জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে। ধ্রুব তখন সুখ পায়। স্বাধীনতার ক্ষুধা তার পছন্দ নয়। বেশি স্বাধীনচেতা মানুষদের ধ্রুব অপছন্দ করে। তখন সেই স্বাধীনচেতা মেয়ে ধ্রুবের চোখের বিষ হয়ে উঠে। ধ্রুব সবসময় তার আশেপাশে তার পছন্দের জিনিস রাখতে পছন্দ করে। যে জিনিস বা মানুষ তার পছন্দ না, তাকে সে এ পৃথিবী থেকে ভ্যানিশ করে দেয়। সেই নিয়মটা তার ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ধ্রুব নিজ হাতে তার প্রেমিকাকে খুন করে ফেলে।
মেয়ের কাছে ধ্রুবের পক্ষ থেকে মৃত্যু-টাই বোধহয় সেরা উপহার। কারণ ধ্রুবের কাছে থাকা একেকটা দিন সে গুমরে মরে। জীবন উপভোগ করতে চাওয়া মেয়েটাও ধ্রুবের অত্যাচারে প্রতি প্রার্থনায় মরণ কামনা করে। যখন ধ্রুব তাদের মেরে ফেলে, মেয়ে তখন মুক্তি পায় ধ্রুবের এই ধ্বংসাত্মক ভালোবাসা থেকে!
ধ্রুব এমন-ই!

এমনই একদিন আয়েশীকে চোখে ধরে ধ্রুবের। উচ্ছল প্রাণের আয়েশী তখন জানতেও পারেনি, সেদিনের পর তার জীবনে এক ভয়াবহ কাল নেমে আসবে। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে ধ্রুব প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গেস্ট হয়ে এসেছিল।

আয়েশী আর তার বন্ধু বান্ধব এক ফাঁকা স্থানে বসে গল্পগুজব করছিল। ধ্রুব স্টেজে বসে ফোন স্ক্রল করছিল। এসব ভাষন-টাষন তার ভীষন বিরক্ত লাগছে। মনেমনে ভেবে নিল সে, আর কখনো এসব ফালতু অনুষ্ঠানে আসবে না। প্রচুর বিরক্তিকর অনুষ্ঠান! সবাই অযথা লম্বা লম্বা ভাষন ছাড়ছে। রিডিকিউলাস!

আয়েশীরা ভাষন শুনছে না। বরং তারা গল্প করায় মত্ত! একটু পর মেহমাদ স্যার এসে জানালেন, আয়েশীর নাচের পালা এখন। মেহমাদ স্যারের কথামত আয়েশী দ্রুত মেকাপ রুমে চলে গেল। নাচের কাপড় পড়ে স্টেজের পেছনে এসে দাঁড়ালো। মাইকে জানানো হলো,
‘ এখন নৃত্য পরিবেশন করবেন, অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ইনাইনা শিকদার আয়েশী। ‘

‘ আয়েশী’ নামটা তখন ধ্রুবের কাছে ভীষন অদ্ভুত লেগেছিল। ধ্রুব বিরক্ত হয়ে ভাবলো, এটা আবার কেমন নাম। মেয়েটার জীবনে কি শুধুই আয়েশ আর আয়েশ? ধ্রুব নামের বিষয়টা বেশি একটা পাত্তা না দিয়ে পুনরায় ফোনে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিল। স্টেজে উঠে আয়েশী সবাইকে কুর্নিশ করে নাচ শুরু করল। রবীন্দ্র সঙ্গীত নাচছে আয়েশী। ছোটবেলা থেকে নাচে পারদর্শী হওয়ায় আয়েশীর নাচ দেখে সবাই হা হয়ে গেল। সবাই করতালি দিয়ে উৎসাহিত করছে আয়েশীকে। সবার উচ্ছসিত আওয়াজে ধ্রুব মনের ভুলে একবার আয়েশীর দিকে তাকাল। সঙ্গেসঙ্গে তার নয়নযুগল নৃত্যরত নারীর পানে তীরের ন্যায় আটকে গেল। এ নারীর রূপ ও গুণের ভয়ংকর তেজে ঝলসে যেতে লাগলো ধ্রুবের দু চোখ। দুধ সাদা রঙের মুখ, ফোলা ফোলা গোলাপী রঙের গাল, আর ওই দু চোখ, যেন আস্ত এক মায়ার সাগর! ধ্রুব কেমন যেন ঘোরে চলে যেতে লাগল। এ নারী তো শুধু নারী নয় বরং ভয়ংকরী খুনি। চট করে কেমন নিষ্ঠুরভাবে ধ্রুবের হৃদয়কে খুন করে ফেলল। ধ্রুব ঘোরলাগা চোখে চেয়ে রইলো স্টেজে কোমড় দুলিয়ে নৃত্যরত মোহময়ী নারীর দিকে। বিড়বিড় করে উচারণ করল,
‘ আমার রক্তজবা! ‘

#চলবে

গল্পের নাম – #মৃত_কাঠগোলাপ- সূচনা পর্ব
লেখনীতে- #আভা_ইসলাম_রাত্রি

লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর?-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here