#মৃত_কাঠগোলাপ-৪,৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
০৪
‘ডিজাইন আর্টিস্টট্রি’ শহরের বেশ জনপ্রিয় একটি ফ্যাশন ডিজাইনিং কোম্পানি! এই কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া আজকালের জামানায় সোনার হরিণের মত। মৃদুল এই মুহূর্তে সেই জনপ্রিয় কোম্পানির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যেতে তার কোথাও যেন একটা সংকোচ কাজ করছে। ধ্রুবের কাছে চাকরি চাওয়া কি ঠিক হবে? এই ঠিক-বেঠিক এর মায়াজালে মৃদুল প্রায় নাস্তানাবুদ। অবশেষে, সকল সংকোচকে পেছনে ফেলে মৃদুল গেইট দিয়ে পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। রিসিপশনের এসে নিজের নাম বলতেই ম্যানেজার ঠোঁট প্রসন্ন করে হেসে বললেন,
‘ ও, আপনি-ই তাহলে মৃদুল সরকার। স্যার আপনার কথা বলেছেন আমায়। আসুন আমার সাথে। ‘
মৃদুলের কিছুটা লজ্জা লাগল। ধ্রুবের কাছে চাকরির কথা বলা, বিষয়টা’কি ভিক্ষা চাওয়ার মত হয়ে গেল? মনেমনে উশখুশ করতে লাগল সে। চুপচাপ ম্যানাজার পেছন পেছন পা চালালো।
ম্যানেজার একটা সুন্দর কেবিনের সামনে এসে থেমে গেল। মৃদুলকে অপেক্ষা করতে বলে সে ভেতরে চলে গেল। মৃদুল মাথা তুলে কেবিনের দরজার মধ্যে লাগানো সাইনবোর্ডের দিকে তাকাল। স্পষ্ট লেখা তাতে,
‘ ধ্রুব ইউহান শেখ ‘
মৃদুল অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পর ম্যানেজার এসে জানালো মৃদুলকে ধ্রুব ভেতরে যেতে বলেছে।
মৃদুল ম্যানাজারকে ধন্যবাদ জানিয়ে দরজা খুলে ধ্রুবের কেবিনে প্রবেশ করল।
‘ হাই, ইয়াং ম্যান। ‘
মৃদুলকে দেখে ধ্রুব চেয়ার ছেড়ে উঠে মৃদুলকে জড়িয়ে ধরলো। মৃদুল নার্ভাস হেসে ধ্রুবের পিঠে হাত রাখলো। ধ্রুব মৃদুলকে চেয়ার এগিয়ে দিল বসার জন্যে। মৃদুল বসল। এখন অব্দি কোনো কথা বলছে না মৃদুল। হাতে হাত শক্ত করে চেপে বসে আছে। কিছু একটা বলবে বলবে করেও কেন যেন বলা হচ্ছে না।
ধ্রুব বাঁকা চোখে পরখ করতে লাগল মৃদুলকে। ধ্রুবের বিচক্ষণ মস্তিষ্ক চট করে বুঝে গেল, মৃদুলের মনের খবর। ধ্রুব মৃদুলের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ পানি খাও, ভালো লাগবে। ‘
মৃদুল যেন এই কথার-ই অপেক্ষা করছিল। ধ্রুবর বলা মাত্রই মৃদুল শো করে পানির গ্লাস হাতে নিল। ঢকঢক করে দুই ঢোকে গ্লাসের সবটুকু পানি গলাধঃকরণ করে ফেলল। গ্লাসটা আবার টেবিলে রেখে মুখ মুছে মাথা নত করে রইল। ধ্রুব তীক্ষ্ম চোখে মৃদুলের একেকটা কাজ লক্ষ্য করছে। একপর্যায়ে ধ্রুব বলে,
‘ তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তায় আছ, মৃদুল! আমায় বলতে পারো। বন্ধুদের সব বলা যায়। ‘
মৃদুল এবার যেন খানিকটা স্বাভাবিক হলো। কপালের মুক্তো ঘাম মুছে নিয়ে গলা ঝাড়ল। আর চুপ না থেকে শেষমেশ বলেই ফেলল,
‘ আমার একটা চাকরির দরকার, ধ্রুব। ‘
ধ্রুব ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। ধ্রুব জানত মৃদুল এই জন্যেই ধ্রুবের কাছে এসেছে। আর আসবেই না কেন? চারিদিক থেকে মৃদুলের চাকরি পাওয়ার সমস্ত পথ যে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে ধ্রুব! ধ্রুব মুখে গম্ভীর ভাব টেনে বললো,
‘ তোমার সিভি এনেছ? ‘
মৃদুল চট করে তার ব্যাগ থেকে একটা ফাইল বের করে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে দিল। ধ্রুব ফাইল খুলে দেখল। অবশ্য এসব শুধুমাত্র দেখানোর জন্যে। মৃদুলের কোনো যোগ্যতা না থাকলেও ধ্রুব তাকে চাকরি দিত। মৃদুলকে হাতের মুঠোয় পুড়ে নেওয়ার জন্যে, এই চাকরি-ই হলো এক মুক্ষোম চাল। মৃদুলকে যত কঠিন করে হাতের শিকলে বন্দী করা যাবে, আয়েশীর কাছে ঠিক তত দ্রুতই পৌঁছানো যাবে।
ধ্রুব ফাইল বন্ধ করে টেবিলে রাখল। দুহাত টেবিলের উপর ভাঁজ করে ভাবুক সুরে বলল,
‘ তোমার সিজিপিএ দুর্দান্ত। আমাদের কোম্পানিতে চাকরি করার জন্যে পারফেক্ট। চাকরি একটা দেওয়াই যায় তোমায়। আমাদের কোম্পানিতে চাকরি করতে তোমার কোনো আপত্তি আছে? ‘
মৃদুল কিছুটা অবাক হল। সে ভাবেনি, এত দ্রুত ধ্রুব তাকে চাকরি অফার করবে। মৃদুল কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ধ্রুবের দিকে। বললো,
‘ থ্যাংকস, ধ্রুব। তুমি না থাকলে…’
‘ উহু, এখন আমি এসে গেছি। তোমার পথের সমস্ত কাঁটা আমি ধীরে ধীরে উপড়ে দেব। ‘
ধ্রুব পথের কাঁটা বলতে কি বুঝালো, মৃদুল বুঝতে পারল না। সে তখনও মনেমনে ধ্রুবের জন্যে দোয়া করতে মগ্ন। মৃদুল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। যেতে যেতে ধ্রুবর উদ্দেশ্যে বলে গেল,
‘ আমি খুব শীগ্রই আয়েশীকে বিয়ে করছি, ধ্রুব। আমার বিয়ের প্রথম দাওয়াতটা আমি তোমায় দিলাম। আফটার অল, বন্ধু বলে কথা। ‘
ধ্রুব হাসল। যেতে ত হবেই তাকে বিয়েতে। সে না আসলে, এই বিয়েটাই যে ফিকে হয়ে যাবে। হা, হা, হা। বোকা ছেলে!
___________________________
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অদূর থেকে মাগরিবের আযানের মধুর সুর কানে আসছে। গলির রাস্তা ইতিমধ্যেই অনেকটাই নীরব হয়ে গেছে। একটু আগে দু একটা মানুষের আনাগোনা, কথা বলাটাও এখন কেমন যেন মিলিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে গলির রাস্তায় সম্পূর্ণ একা অনুভব করতে পেরে, আয়েশী যেন শিউরে উঠল। দ্রুত পা চালিয়ে ঘরে ফেরার চেষ্টা করল। টিউশনি থেকে ফিরতে আজ সত্যিই বড্ড দেরি করে ফেলেছে সে।
‘ আরে এ দেখি আয়েশীরানী। কি ব্যাপার? আজ একা আসলে যে? নাগর কই? ‘
পাশ থেকে রাকিবের বিশ্রী কথা শুনে আয়েশীর সম্পূর্ন শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল যেন। রাকিব আয়েশীদের পাড়ার ছেলে। সবসময় আয়েশীকে নানারকমভাবে উত্যক্ত করে সে। এইজন্যেই রাত হলে কখনো একা বাড়ি ফেরে না আয়েশী। হয় বাবা, নয়তো মৃদুল পৌঁছে দিয়ে যায় বাড়িতে। কিন্তু হায়! আজ যে আয়েশীর পাশে কেউ নেই। আয়েশী দ্রুত পালাতে চাইল রাকিবের থেকে। আয়েশী তর্ক না করে চুপচাপ মাথা নত করে বড়বড় পা ফেলে এগুলো।
রাকিব আয়েশীর পেছন পেছনে হাঁটছে। আয়েশী তা বুঝতে পেরে এবার দৌঁড় দিল। এক দৌঁড়ে বাড়ীর গেইটের ভেতর প্রবেশ করে গেইট লাগিয়ে দিল। আয়েশীর খুব কান্না আসছে। সে সেখানেই মাটিতে বসে পড়ল। মুখ হা করে বড়বড় কতগুলো নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে ঘরের দরজায় কলিং বেল চাপল। আল্লাহর দয়ায়, আজ রক্ষে হলো তার। নাহলে……
রাকিব চাইলে আজ আয়েশীর ক্ষতি করে ফেলতে পারতো। সে আজ বেশ আঁটসাঁট বেধেই আয়েশীর পিছু নিয়েছিল। কিন্তু সে পারেনি। মাঝরাস্তায় কেউ একজন রাকিবের মুখ চেপে তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেয়। রাকিব ছটফট করতে করতে গাড়ীর মধ্যেই জ্ঞান হারায়। কিন্তু কেউ কি জানতো, আজকের এই রাত-ই রাকিবের জীবনের শেষ রাত। তারপরই নিভে যাবে তার জীবন প্রদীপ। খুব নির্মম ভাবে মৃত্যু দেয়া হবে তাকে।
একটা অন্ধকার ঘরে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে রাকিবের। রাকিবের জ্ঞান ফিরতেই সে বাঁধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করতে শুরু করেছে। বিশ্রী রকমের গালি দিয়ে কক্ষের দেয়াল ঝাঁজরা করে ফেলতে লাগল। ধ্রুবের পালিত মানুষরুপী কুকুরগুলো তা সহ্য করতে না পেরে রাকিবের মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল। ফোন করে ধ্রুবকে বললো,
‘ বস, এই মালরে কি করুম? খুব জ্বালাচ্ছে। ‘
‘ সামান্য রাস্তার ছেলেকে তোমরা সামলাতে পারছ না। কি বা/লে/র গুণ্ডা তোমরা? ফোন রাখ, শালা। আমি আসছি। ‘
লোকটা চুপচাপ ফোন কেটে দিল। বস রেগে আছেন, এখন তাকে না ঘাটানোই ভালো। নাহলে যেকোনো সময় তাদের মাথাটাও ঘাড় থেকে আলাদা করতে তার হাত কাঁপবে না।
রাকিব এখনো বড্ড ছটফট করছে। যেন ছাড়া পেলে এ কক্ষের সবাইকে ধারালো অস্ত্রে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলবে
বিশালদেহী লোকগুলো ঘাড় কাত করে রাকিবের দিকে তাকাল। অতঃপর লোকগুলো একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করল। ঠোঁটে তাদের তাচ্ছিল্যের হাস!
#চলবে
#মৃত_কাঠগোলাপ- ৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ছিপছিপে অন্ধকার একটি কক্ষ! আপাদমস্তক কালো রঙে আচ্ছাদিত। এ কক্ষে নেই কোনো জানালা, নেই কোনো আসবাবপত্র! আছে শুধু একটিমাত্র কালো রঙের দরজা। কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ। রাকিব সম্পূর্ন একা এই ভ*য়*ঙ্কর কক্ষে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পড়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। তেলতেলে লালায় রাকিবের দেহ গড়াগড়ি খাচ্ছে। গা-টা মারাত্মক দূর্গন্ধে গুলিয়ে আসছে। রাকিব শেষ সম্বল হিসেবে আরো একবার চিৎকার করে উঠল,
‘ আমাকে ছেড়ে দিন। কে আছেন, আমাকে যেতে দিন এখান থেকে। আমার ভয় লাগছে। কেউ কি আছেন? ‘
রাকিবের চিৎকার কক্ষের চারপাশে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। অথচ, কেউ তার চিৎকার শুনতে পেল না। তার বলা শব্দগুচ্ছকে যেন কক্ষের দেয়ালগুলো রা*ক্ষসের ন্যায় শুষে নিল। রাকিব মাথা হেলিয়ে দিল মাটিতে। ইটের তৈরি বন্ধুর মাটি। উচুনিচু মাটির আঁকাবাঁকা আঁচড়ে রাকিবের মুখ খানিকটা কেটে গেল। রাকিব হাল ছেড়ে মিশে রইল মাটিতে।
‘ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ, হ্যাপি হ্যাপি বার্থ ডে টু ডিয়ার ব্লাডি ম্যান। হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ। ‘
কক্ষের চারপাশ থেকে কেমন যেন একটা আওয়াজ ভেসে এল। পুরুষ কন্ঠ, অথচ কী ভয়ঙ্কর কণ্ঠের তেজ। রাকিব ছটফটিয়ে উঠলো। উঠে বসার চেষ্টা করতেই আবার মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মাটিতে। কান খাঁড়া করে বললো,
‘ কে, কে ওখানে? ‘
‘ আ-মি, তোর মৃ*ত্যু। ‘
সেই আগের কণ্ঠ! রাকিব ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। গা-টা যেন কাঁটা দিয়ে উঠল। কণ্ঠনালি রোধ হয়ে এল বোধহয়।
রাকিব সচেতন চোখে চারপাশ পরখ করে দেখে বলল,
‘ যেই হও, সামনে আসো বলছি। নাহলে আমি তোকে খুন করে ফেলব। সামনে আয় মাদার** ‘
রাকিবের কথায় কেউ যেন হেসে উঠল। কি বি*দ*ঘুটে সেই হাসি। রাকিবের কান যেন গলে যাচ্ছে।
‘ কেমন আছো, রাকিব! ‘
রাকিব চট করে পাশে তাকাল। সঙ্গেসঙ্গে ভয়ে এক ছিটকে সরে গেল সে। তার পাশে মোমবাতি জ্বালিয়ে একজন পুরুষ হাঁটু গেরে বসে আছে। মোমবাতির এক ছটাক আলো এসে হানা দিচ্ছে পুরুষটির মুখে। পুরুষটি দাঁত খিলিয়ে হাসছে। রাকিব ভয়ে পেছাতে পেছাতে বললো,
‘ তুমি কি? কে তুমি? ‘
পুরুষটি ভয়ংকর হেসে বলল,
‘ আমি ধ্রুব, তোর মৃ*ত্যু! ‘
রাকিব ভয়ে দেয়ালের সাথে সেটিয়ে গেল। আর পেছানোর জায়গা নেই। রাকিব ভ*য়ার্ত চোখে ধ্রুবের দিকে চেয়ে ক্রমশ ঢোক গিলতে লাগল। ধ্রুব ফুঁ দিয়ে মোমবাতির আগুন নিভিয়ে দিল। সাথেসাথেই কক্ষের চারদিক ভ*য়ানক অন্ধকারে ঢেকে গেল।
‘ আয়েশীর পিছু কেন নিয়েছিলি? ‘
অন্ধকারে ধ্রুবর মুখ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি রাকিব নিজেই নিজের অঙ্গ প্রতঙ্গ দেখতে পারছে না।
হঠাৎ এক ছটাক আলো রাকিবের চোখে এসে পড়ল। রাকিব চোখ খিঁচে নিল। সঙ্গেসঙ্গে নিজের পায়ে ইলকেট্রিক শ*কের মত কিছু একটা অনুভব হলো। রাকিব গগণবিদারি আ*র্তনাদ করে উঠল,
‘ আল্লাহ গো….’
ধ্রুব ইলকেট্রিক তার সরিয়ে নিল। ঘর পুনরায় অন্ধকারে ঢেকে গেল। রাকিব গা কাঁপিয়ে কান্না করছে। পায়ের ত্বক গলে গেছে বোধহয়। ধ্রুব চেঁচিয়ে বললো,
‘ বল, শালা। আয়েশীর পিছু কেন নিয়েছিলি? ‘
রাকিব কাঁপতে লাগল। পাগলের মত মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘ আমি আর পিছু নিমু না ওর। ছাইড়া দেন আমারে। দোহাই লাগে আপনার। ছাইড়া দেন আমারে। ‘
ধ্রুবর হাসল। রাকিব স্পষ্ট শুনতে পেল সেই হাসি। সেই একই ভ*য়ংকর, গা ছমছমে হাস। রাকিব ভয়ে দেয়ালের সাথে মিশে যেতে চাইল। ধ্রুব বললো,
‘ এই ধ্রুব না কখনো কাউকে সরি বলেছে, আর না কখনো কাউকে সরি বলার সুযোগ দিয়েছে। আচ্ছা যা তোকে একটা সুযোগ দিলাম। একদিনের জন্য দয়ার সাগর হয়ে গেলাম নাহয়। এখন পারফেক্টলি সরি বলে দেখা। ‘
‘ কি, কি করতে হবে আমায়? ‘
ধ্রুব আচমকা গলা টি*পে ধরল রাকিবের। রাকিব শ্বাস নিতে পারছে না। খুকখুক করে কেশে উঠল সে। ধ্রুব রাকিবের গলায় নিজের ধা*রালো নখ বসিয়ে দিল। দু ফোঁটা র*ক্ত ধ্রুবের নখের ডগায় লেগে গেল। রাকিব চিৎকার করে যাচ্ছে। ধ্রুব রাকিবের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ তোর তাজা তাজা র*ক্ত উপহার চাই আমার। দিবি? ‘
রাকিবের গলা বেয়ে র*ক্ত গড়াচ্ছে। ধ্রুব এবার রাকিবকে ছেড়ে দিল। রাকিব গলায় হাত চেপে ধরে পাগলের মত চিৎকার করতে লাগল। রাকিবের চিৎকার কানে আসতেই ধ্রুব মনেমনে ভীষন সুখ অনুভব করল। সে মুচকি হেসে রাকিবকে বলল,
‘ আরো চেঁচা। এমন করে চেঁচা, যেন তোর পা*পী আত্মা অব্দি মৃত্যু ভয়ে থরথর করে কাঁপে। চেঁচা, বেশি করে চেঁচা। ‘
অতঃপর ধ্রুব একজনকে ডেকে আনে। রাকিবের দেহ টেনে গার্ডেনে নিয়ে আসতে বলে ধ্রুব সেই কক্ষ থেকে চলে যায়।
বিশাল বড় একটি বাগান। বাগানের একপাশে একটা বিশালাকার খাঁচা। খাঁচার মধ্যে দুটি বিদেশী বাঘ। বাঘদের দেখে মনে হচ্ছে কত দিনের ক্ষুধার্ত তারা। ধ্রুব খাঁচার দরজা খুলে দেয়। বাঘগুলো দৌঁড়ে এসে ধ্রুবের গলায় আদুরে ভঙ্গিতে মুখ ঘষে। ধ্রুব ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ তোদের জন্যে খাবার এনেছি। খাবি? ‘
বাঘগুলো খাবারের কথা শুনে হিং*স্র হয়ে উঠে। মুখ দিয়ে ভয়ংকর গর্জন করে উঠে। ধ্রুব হাসে। রাকিবকে ধরে একটানে ফেলে দেয় ক্ষুধার্ত বাঘদের খাঁচার ভেতর। অতঃপর খাচা বন্ধ করে দেয়। বহুদিন জ্যান্ত মানুষের মাংস না খেতে পেরে বাঘেরা বেশ উগ্র হয়েই ছিল। চোখের সামনে জলজ্যান্ত মানুষের মাংসের দলা দেখতে পেয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে রাকিবের উপর। এরপর শুধু রাকিবের একটি চিৎকার শোনা যায়। তারপর-ই সব কেমন যেন নিস্তব্দ হয়ে গেল। পাঁচ মিনিটের মাথায় রাকিবের শুধু র*ক্তে মাখা হাড্ডি পড়ে রইল খাচার ভেতর। বহুদিন পর মানুষের মাংস খেতে পেয়ে, বাঘেরা সুখী সুখী ঢেঁকুর তুলতে লাগল। রাকিবকে প্রচন্ড তৃপ্তি নিয়েই খুবলে খুবলে খেয়েছে তারা। ধ্রুব এতক্ষণ বুকের উপর হাত ভাঁজ করে তার প্রিয় পোষা বাঘদের খাওয়া দেখছিল। খাওয়া শেষ হলে, ধ্রুব খাঁচাটা পরিষ্কার করার কথা বলে নিজের কক্ষে চলে যায়। ওসমান এখনো হতবম্ব চোখে চেয়ে রইলো খাঁচার মধ্যে পড়ে থাকা রাকিবের র*ক্তা*ক্ত হাড্ডির পানে!
#চলবে