মৃত_কাঠগোলাপ-১৭,১৮,১৯

0
750

#মৃত_কাঠগোলাপ-১৭,১৮,১৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
১৭

হাসপাতালের করিডোর ভীষন ব্যস্ত। মানুষের আনাগোনা ব্যাপক হওয়ায় দম বন্ধ লাগছে। স্যাভলন, ঔষুধের ভ্যাপসা গন্ধ বমি আসার জোগাড়। আয়েশী ক্লান্ত গা নিয়ে চেয়ারে বসল। অপারেশন কক্ষে লাল বাতি জ্বলছে। কামরুল হাসানের ছোটোখাটো স্ট্রোক হয়েছে। তাই ডাক্তার কোনো রিস্ক না নিতে চান নি। পুরনো যুগে শুধু বৃদ্ধ লোকদের হার্টের সমস্যা দেখা যেত। আজকাল যুবক থেকে বৃদ্ধ সবার দিলে ময়লা পড়ে গেছে। সবাই অসুস্থ! কেউ শারীরিক ভাবে তো কেউবা মানুষিক! তবে আমরা সবাই অসুস্থ, এটা বলা বাহুল্য।
আয়েশী চোখ ঘুরিয়ে অপারেশন কক্ষের দিকে তাকাল। বাবা এখনো বের হচ্ছেন না কেন? আয়েশীর গা মৃদমন্দ কাপছে। ভয় হচ্ছে নিজের জীবনের আরো রিয়া ভরসাপূর্ন বুক হারানোর। আয়েশীর কান্না পাচ্ছে। তবে সামলালো সে। মা বসে আছেন পাশে। আয়েশী নিজেকে ভেঙে না পড়তে দিয়ে মাকে আগলে নিল। আশ্বস্ত করে বলল,
‘ বাবা ঠিক হয়ে যাবে, মা। চিন্তা করো না। ‘

‘ হ্যাঁ আমি অফিসের লোকদের সাথে কথা বলে নিয়েছি । ওরা দুইদিন পর ডেইট ফিক্স করে ফেলবে। ‘
করিডোর দিয়ে হেঁটে ধ্রুব ও তুষার এল। ধ্রুবর কানে ফোন ধরে রাখা। কথা বলতে বলতে আয়েশীর পাশে এসে দাঁড়াল। তুষার মায়ের পাশে বসল। ধ্রুব এর বসার আর জায়গা নেই। একটা মাত্র চেয়ার বাকি। সেটা আয়েশীর পাশে। ধ্রুব ওতসব ভাবলো না। আয়েশীর পাশের চেয়ারে বসে গেল। আসার সময় তুষার হাতে করে দুটো সবজির রোল এনেছিল। একটা মায়ের জন্যে, একটা আয়েশীর জন্য। সকাল থেকে তারা কিছুই মুখে তুলে নি। তুষার রোলের র্যাপিং পেপার খুলে রোলটা মায়ের হাতে দিল। বলল,
‘ খাও। ‘
তুষারের মা মানা করতে চাইলেন। তবে ছেলের রাগী মুখের দিকে চেয়ে পারলেন না। না চাইতেও খাবার মুখে তুললেন।
ধ্রুব এখনো ফোনে কথা বলছে। আয়েশীর বিরক্ত লাগছে। সে কি বসার জন্যে কোনো জায়গা পায়নি? খারাপ লোক! দেখে দেখে আয়েশীর পাশেই বসতে হল?
ধ্রুবর কাধ দিয়ে ফোন কানে ধরে রেখে, এক হাত দিয়ে কোকাকোলার স্ট্রিপ খুলল। ‘চ্যাক’ করে একটা শব্দ হল। ধ্রুব কোকাকোলার ক্যানটা আয়েশীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ইশারা করল নেওয়ার জন্য। আয়েশী নিল না। স্পষ্ট বলল,
‘ আমি খাবো না। আপনি খান। ‘

ধ্রুব রাগ নিয়ে তাকাল এবার। আয়েশী ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। ধ্রুব ফোনের অপাশের লোককে বলল,
‘ এক মিনিট হোল্ড করেন, প্লিজ। ‘
ধ্রুব ফোন মিউট করে জোরপূর্বক আয়েশীর হাতে ক্যান ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ বেশি কথা না বলে খাও। ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমায়। ‘

আয়েশী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। কি পেয়েছে এই লোক? আদিক্ষেতা দেখানো হচ্ছে, আদিক্ষেতা? আজ বাবার এই হাল শুধুমাত্র এই লোকের জন্যে। আর সে কি না দরদ ভাগ করতে এসেছে? ছিঃ! আয়েশী ইচ্ছে হল, ক্যান দিয়েই ধ্রুবর মাথাটা ঠাস করে ফাটিয়ে ফেলতে। কিন্তু মা, তুষার ভাই পাশে থাকায় বেপরোয়া ইচ্ছেকে ধপ করে গিলে ফেলতে হল। ক্যান ফিরিয়ে দিতে চাইলে বাম পাশ হতে তুষার ধমক দিয়ে বলে,
‘ বারবার এমন করছিস কেন? ভালো ভাবে দিচ্ছে, নিলে কি হয়? ‘
আয়েশী দাতে দাঁত খিচে বসে রইল। ধ্রুবর মুচকি মুচকি হাসছে। আয়েশী ভাঙচুর করা রাগ নিয়ে, ছো দিয়ে ধ্রুবর থেকে কোকাকোলার ক্যান নিয়ে নিল। ধ্রুব মুচকি হেসে এবার ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

আয়েশী একটু একটু করে কোকাকোলা খাচ্ছে আর অপারেশন কক্ষের দিকে তাকাচ্ছে। এত দেরি হচ্ছে কেন? তারা কি কোনো ষড়যন্ত্র করছে? বাবার হাত, পা নাড়ি ভুঁড়ি কি সব আজই কেটে ফেলছে? ইশ, কি সব ভাবছে আয়েশী? মৃদুল ঠিক বলত, আয়েশী এখনো ম্যাচিউর হতে পারেনি।
আয়েশী অন্যমনস্ক থাকাকালীন ধ্রুব ফোনে কথা বলতে বলতে আয়েশীর হাত থেকে ক্যান নিয়ে তাতে চুমুক বসাল। আয়েশী ধ্যান ভাঙল। ধ্রুবর এমন কাজে হতবম্ব হয়ে পড়ল। ধ্রুব তার এটো খাচ্ছে? ছিঃ!
কিন্তু এ নিয়ে আয়েশী বেশি মাথা ঘামালো না খেলে খাক। তার পেট খারাপ হবে। ওর কি তাতে? ফালতু লোক!
অপেক্ষা করতে করতে একসময় চেয়ারে হেলান দিয়ে আয়েশী ঘুমিয়ে পড়ল। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের কারণে, মাথা বারবার ভারসাম্য হারিয়ে সামনে ঝুঁকে যাচ্ছে। আয়েশী ঠিকমত ঘুমাতে পারছে না। ধ্রুব এসব দেখে মুচকি হাসল। আয়েশীর মাথাটা নিজের কাঁধে বসাল। আয়েশী লম্বা করে হাই ফেলে ধ্রুবর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল।
ধ্রুবর কাছে মনে হচ্ছে, আয়েশীর মাথা তো মাথা নয় যেন ফুলের পাঁপড়ি। এত নরম! একটুও ওজন নেই। ধ্রুব আয়েশীর কপালের সামনে পড়ে থাকা চুল কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে ফোনে কথা বলায় মন দিল। ফোনে কথা বললেও চোখ ঘুরিয়ে বারবার আয়েশীর দিকে তাকাচ্ছে। একসময় বিরক্ত হয়ে ফোন’ই কেটে দিল। এখন তার রক্তজবাকে দু চোখ ভরে দেখার সময়! আজ সে দু চোখের বহমান এতদিনের তৃষ্ণা নেভাবে।

‘ আয়েশী, আয়েশী? ‘
ঘুমের মধ্যে আয়েশীর বোধ হল, মৃদুল তাকে ডাকছে। মৃদুলের সেই নেশা নেশা কণ্ঠ, তার ঠোঁটের ফাঁকে আয়েশীর নাম, সেই এক অনুভূতি! আয়েশী চট করে উঠে বসল।
‘ মৃদুল, মৃদুল ‘ বলে আশপাশে খুঁজতে লাগল। ধ্রুব হয়তো বুঝতে পেরেছে বিষয়টা। ধ্রুব আয়েশীকে শান্ত করতে বলল,
‘ আমি, আমি ডেকেছিলাম। ‘
আয়েশী ঘাড় কাত করে তাকাল ধ্রুবর দিকে। মৃদুল ডাকে নি, বুঝতে পেরে আয়েশী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখ উল্টে পাশে বসে থাকা ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুবর মাথায় এখন আর্মি ক্যাপ ঝুলানো। গায়ে আর্মি টিশার্ট। এই লোক হুট করে আর্মি সেজেছে কেন?

আয়েশী চেয়ার ছেড়ে উঠে গেল। বাবার অপারেশনেরএক ঘন্টা হয়ে গেছে। এতক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে আয়েশীর পানি পিপাসা পেয়েছে। আয়েশী করিডোর দিয়ে হেঁটে ক্যান্টিনের দিকে গেল। ধ্রুব নিজেও পিছু নিল। আয়েশী হাঁটার সময় একবার পেছনে ফিরল। ধ্রুবকে দেখে সে বড়ই বিরক্ত হল। মুখ চোখ তেতো করে বলল,
‘ আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন কেন? ‘
ধ্রুব সহসা হেসে উত্তর দিল,’ সারাজীবন পিছু নিব যে! ‘
আয়েশীর রাগে ফেটে পড়ল। এত নির্লজ্জ কেন এই লোক! লোকটা জানে, আয়েশী মৃদুলকে ভালোবাসে, এখনো বাসে।তবুও কেমন বেহায়ার ন্যায় তার পিছু ঘুরছে। ফালতু!

আয়েশী ক্যান্টিন থেকে একটা মিনারেল ওয়াটার কিনল। বিল মেটাতে গেলে, ধ্রুব আগে আগেই বিল পে করে ফেলে। আয়েশী রেগে গিয়ে বলে, ‘ আপনি বিল দিলেন কেন? আমি কি ফকির? টাকা নাই আমার কাছে? আপনার টাকা আছে দেখে জনে জনে বিলিয়ে বেড়াবেন? ‘
কথাটা ধ্রুবর গায়ে লাগল।তবে উত্তরে মুচকি হেসেই বলল,
‘ আমার টাকা, পয়সা, সম্পত্তি সবকিছু আমার হবু স্ত্রীর জন্যে । সে চাইলে প্রাণটাও উৎসর্গ করতে পারি। করব নাকি? ‘
আয়েশী দাত খিচে বলল, ‘ হ্যাঁ, করুন। করে মরে যান। খুশি হব আমি। ‘
আয়েশী গটগট করে পা ফেলে চলে গেল ক্যান্টিন থেকে। করিডোরে পা রাখতেই ধ্রুব আয়েশীর হাত আটকে নিল। নিজের পুরুষালি কঠিন হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করল আয়েশীর পেখমের ন্যায় হাত। আয়েশী রাগ হল। ধাক্কা দিয়ে হাত সরাতে চাইলে ধ্রুব আরো শক্ত করে হাত চেপে ধরে। আয়েশী ব্যথা পায়। ধ্রুব আয়েশীকে দেয়ালের সাথে মিশে রাখে। আয়েশীর ছটফট করছে। ধ্রুব বাঁকা হেসে আয়েশীর চোখে চোখ রাখল। বলল,
‘ আমি কখনো একা মরব না, রক্তজবা। মরলে তোমায় সাথে নিয়ে মরব। আমি মরে গেলে তুমি অন্য কারো হবে, আমার তা সহ্য হবে না। তাই আমিও শ্যাষ, তুমিও শ্যাষ! ‘

#চলবে ( শব্দসংখ্যা – ১০০০)

#মৃত_কাঠগোলাপ- ১৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ধ্রুব আয়েশীকে দেয়ালের সাথে মিশে রাখে। আয়েশীর ছটফট করছে। ধ্রুব বাঁকা হেসে আয়েশীর চোখে চোখ রাখল। বলল,
‘ আমি কখনো একা ম*রব না, রক্তজবা। ম*রলে তোমায় সাথে নিয়ে ম*রব। আমি ম*রে গেলে তুমি অন্য কারো হবে, আমার তা সহ্য হবে না। তাই আমিও শ্যা*ষ, তুমিও শ্যা*ষ! ‘

আয়েশী অবাক হল। চোখ বেরিয়ে আসতে চাইল। লোকটার কথার অর্থ ধরতে পারল না। ধ্রুব এত শ*ক্ত করে আয়েশীর হাত ধরে রেখেছে, আয়েশীর হাতে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে। ব্য*থায় হাত বোধহয় অবশ হয়ে যাচ্ছে। আয়েশী চোখ খিঁচে, ঠোঁট কা*মড়ে ধরে অস্ফুট সুরে বলল,
‘ আ-আমি ব্যথা পাচ্ছি। ‘

ধ্রুবর মস্তিষ্ক সচেতন হল। চট করে আয়েশীর হাত ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল। আয়েশী ছাড়া পেয়ে আ*ঘাত প্রাপ্ত হাত চেপে ধরল। লাল হয়ে গেছে জায়গাটা। টনটন করছে। আয়েশী গুটিকয়েকবার জায়গাটায় ফুঁ দিয়ে ব্য*থা কমানোর চেষ্টা করল। জ্ব*লছে ভীষন। আয়েশী রেগে গিয়ে বলল,
‘ আপনি কি পাগল? আমার হাত স্পর্শ করার সা*হস কোথায় পেলেন? ‘
ধ্রুব মুখ এগিয়ে আনল আয়েশীর কানের কাছে। আয়েশী কিছুটা পেছালো। ধ্রুব হিসহিসিয়ে বলল,
‘ অধিকারবোধ থেকে সাহসের সৃষ্টি, প্রিয়তমা! ‘

আয়েশী কপাল কুঁচকে গেল। ঠিক কতটা নির্লজ্জ হলে বন্ধুর ভালোবাসাকে ‘প্রিয়তমা’ বলা যায়? ধ্রুব সকল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আয়েশী দাত খিঁচে দুবার ‘ ফা*লতু খা*রাপ লোক ‘ বলে গালি দিয়ে হনহনিয়ে কেবিনের দিকে পা বাড়াল। ধ্রুব পেছনে দাঁড়িয়ে রইল ঠায়। দুহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে বুক টানটান করে দাঁড়াল। বলল,
‘ খা*রাপের এখনও দেখেছ’টা কি? আমার আসল খা*রাপ রূপ তোমার রুহ অব্দি কাপিয়ে তুলবে, রক্তজবা। আমাকে আমার আসল রূপে ফিরে আসতে বাধ্য করো না। ‘
___________________________
কামরুল হাসানের জ্ঞান ফিরেছে। ধ্রুবসহ সবাই কামরুল হাসানকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। তবে কামরুল হাসানের ক্লান্ত, অবসন্ন চোখ তার আদরের মেয়েকে খুঁজে যাচ্ছে। নিজের আশেপাশে মেয়েকে না দেখতে পেরে, কামরুল হাসান মুখ খুললেন। স্ত্রীর দিকে চেয়ে বললেন,
‘ আ-আয়েশী ক-কোথায়? ‘

মনোয়ারা চুপ করে রইলেন। আয়েশীকে তিনি এখানে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু আয়েশী আসে নি। মেয়েটার বুকটা অপরাধবোধে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। বাবার এই দুর্দশার জন্য নিজেকে দোষারূপ করছে। মনোয়ারা কতবার করে বললেন, ‘ তোর বাবা চোখ খুলে তোকেই খুঁজবে। একবার এসে দেখে যা। ‘ কিন্তু মেয়েটা আসল না। বড্ড একরোখা হয়েছে। স্ত্রীকে চুপ করে থাকতে দেখে, কামরুল হাসান ঘাড় কাত করে ওপাশ ফিরলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ আচ্ছা থাক, আসতে হবে না। ‘
স্বামীর বুকের কষ্ট বুঝতে পেরে, মেয়ের উপর বড্ড রাগ হলো মনোয়ারার। মেয়েকে নিয়ে আসতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালে ধ্রুব বাঁধ সাধে। বলে, ‘ আপনি বসুন। আমি নিয়ে আসছি। ‘
মনোয়ারা পুনরায় বসেন। ধ্রুব ছেলেটা কত ভালো। তাদের পরিবারের কত খেয়াল রাখে। মানুষ হিসেবেও চমৎকার। কিন্তু মেয়েটাকে দেখ? এখনো জেদ ধরে বসে আছে। কি হয় এই সোনার টুকরা ছেলেকে বিয়ে করে নিলে? মৃদুল তো আর ফিরে আসবে না। এখন কি সারাজীবন আইবুড়ো হয়ে থাকবে নাকি? মেয়েটা কেন যে এত জেদি হলো?

ধ্রুব কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। চোখ ঘুরিয়ে আয়েশীকে খুঁজল। ওই তো জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে। ধ্রুব হেঁটে গেল।
‘ আয়েশী? ‘
আয়েশী শুনল ধ্রুবর ডাক। তবে প্রত্যুত্তর করল না। ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে চুপ করে তাকিয়ে রইল জানালার দিকে। ধ্রুব আয়েশীর পাশে এসে দাঁড়াল। নিজেও জানালার দিকে তাকাল। দশ তলার উপরে আছে তারা। এখান থেকে জানালার দৃশ্য চমৎকার দেখা যায়। চারিদিকে কোনো শোরগোল-হট্টগোল নেই। গাড়ি ঘোড়ার বি*শ্রী আওয়াজ নেই। শুধু শুনশান নীরবতা ছেয়ে রয়েছে। ধ্রুব মুচকি হেসে বলল,
‘ দৃশ্যটা সুন্দর। ‘
আয়েশী শুনল, তবে কথা বলল না। ধ্রুব একটু থেমে বলল,
‘ তোমার বাবা তোমায় খুঁজছিলেন। ‘
আয়েশীর চোখে জল ভরে। চোখের কোল ছাপিয়ে অশ্রু গড়াতে চায়। আয়েশী ঠোঁট চেপে ধরে কান্না আটকায়। তবে বেশিক্ষণ পারল না। একসময় কেঁদে ফেলে। ধ্রুব তাকায়। অন্যের জন্যে আয়েশীকে কাদতে দেখে ধ্রুবর ভালো লাগে না। আয়েশীর চোখের জলের কারণ হবে শুধু ধ্রুব। একমাত্র ধ্রুব আয়েশীকে কাদাবে, হাসাবে। আর কেউ না, এমনকি আয়েশীর জন্মদাতা বাবাও না।

ধ্রুব ঠায় চেয়ে রয় আয়েশীর পানে। কান্নার দাপটে আয়েশী নাক লাল হয়ে যায়। আয়েশী নাক টেনে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। ধ্রুব একসময় বিরক্ত হয়ে বলে,
‘ কাদছ কেন এত? ‘
‘ খুশিতে। আমার বাবা আমার কারণে হসপিটালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে, তাই আমার ভীষন সুখ পাচ্ছে। এই সুখে ম*রে যেতে পারছি না, তাই কাদছি। ‘
ধ্রুব ভ্রু বাঁকা করে তাকায়। এটা আবার কেমন উত্তর? ধ্রুব পকেট থেকে টিস্যু নিয়ে এগিয়ে দেয় আয়েশীর দিকে। আয়েশী নেয় না। ধ্রুব জোরপূর্বক টিস্যু হাতে ধরিয়ে দেয়। বলে, ‘ নাক মুছো। দেখতে বিশ্রী লাগছে। ‘
আয়েশী নাক টেনে হাসল। বলল, ‘ আমি বিশ্রী’ই। কারণ আমার সৌন্দর্য বিয়ের দিনেই আমায় ছেড়ে চলে গেছে। ‘
আয়েশীর কথায় ধ্রুবর কেপে উঠল যেন। এত গভীর কথা আগে কখনো শুনেনি সে। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল নির্বিকার। আয়েশী পেছন ফেরে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াল। কিন্তু পুনরায় ধ্রুবর দিকে চেয়ে বলল,
‘ বিশ্রী আমি না। বিশ্রী হলেন আপনি। যে কিনা বন্ধুর ভালোবাসাকে বিয়ে করার জন্যে মরিয়া হয়ে যাচ্ছেন। ‘
আয়েশী চলে গেল। ধ্রুব দাতে দাঁত খিচে দাড়িয়ে রইল। কতবড় সাহস! ধ্রুবকে বিশ্রী বলে গেল। কথাটা আয়েশী না বলে যদি অন্য কেউ বলত, ধ্রুব তার জিহ্বা টেনে ছিঁ*ড়ে ফেলত। ছু*রির আ*ঘাতে গা ঝাঁঝরা করে ফেলত। তবে আফসোস…মেয়েটা আয়েশী ছিল। ধ্রুবর চোখ র*ক্তিম হয়ে গেল। পা দিয়ে পাশে থাকা ফুলের টবকে লা*থি দিয়ে নিচে ফেলে দিল। তবুও রাগ কমছে না। কাউকে ভ*য়ঙ্কর রকমের মা*রধর করতে পারলে, রাগটা কমবে বোধহয়। ধ্রুব গটগট পা ফেলে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল।

আয়েশী জানালার কাঁচে হাত রেখে শুয়ে থাকা বাবার প্রতিবিম্বের পানে চেয়ে আছে। বাবার মুখটা কি ক্লান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে কত জনম ধরে বাবা ঘুমান নি। শরীরে একদিনেই কেমন যেন মিইয়ে গেছে। হঠাৎ কামরুল হাসান গলা চেপে ধরে উঠে বসেন। তারপরই গড়গড় করে বমি করেন। র*ক্ত বমি দেখে আয়েশীর চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। আর বসে থাকতে পারে না। ছুটে যায় বাবার কাছে। কামরুল হাসান এখনো বমি করছেন। আয়েশী বাবার কাঁধে হাত মালিশ করে দিয়ে বাবার দিকে করুন চোখে চেয়ে থাকে। কামরুল হাসানের বমি থামলে তিনি বেডে হেলান দেন। দুর্বল গলায় বলেন,
‘ আ-আ-য়েশী, মা এ-এসেছিস ত-তুই? ‘
বাবা কথা বলতে পারছেন না। ভীষন কষ্ট হচ্ছে তার। আয়েশীর চোখে জল এসে যায়। সে নিজেকে দমে রাখতে না পেরে, বাবার পাশে বসে কেঁদে ফেলে। বললে,
‘ তোমাকে আমার এমন দেখতে ভালো লাগছে না বাবা। আমার জন্যে আজ তোমার এমন অবস্থা। আমায় ক্ষমা করো। আমি আসতে চায়নি তোমার কাছে। কিন্তু আমি পারিনি বাবা। তোমাকে একটু কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে হল। নিজেকে আটকাতে পারিনি। ক্ষমা করো আমায়। ‘

কামরুল হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলালেন। বললেন,
‘ কাদে না, মা। আমি ঠিক আছি। ‘
আয়েশী ফুঁপিয়ে উঠে। কামরুল হাসান ভাবেন, এবার কি বিয়ের কথা তোলা উচিত তার। তার অসুস্থতার রেশ ধরে মেয়ে নিশ্চয়ই রাজি হয়ে যাবে। হ্যাঁ, স্বার্থপর হচ্ছেন তিনি। ছেলেমেয়ের ভালোর জন্য সব বাবাই স্বার্থপর হতে পারে। কামরুল হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ ধ্রুবকে বিয়ে করে ফেল, আয়েশী। তোমাকে সুখে দেখলে আমি শান্তিতে ম*রতে পারবো। ‘

আয়েশী চোখ থেকে টপ করে গড়ায়। সবার আগে তার বাবা! বাবার কথা রাখতে নাহয় নিজেই ভেতর ভেতর ম*রে গেল। কি ক্ষতি তাতে? বাবা তো ভালো থাকবে। বাবাকে ভালো রাখতে আয়েশী সব করতে পারে। এমনকি নিজেকে মে*রেও ফেলতে পারে। আয়েশী ঠোঁট কামড়ে প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে বলে,
‘ তুমি যা বলবে, আমি তাই করব বাবা। তবুও তুমি ভালো থাকো। ‘

#চলবে

#মৃত_কাঠগোলাপ – ১৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

কামরুল হাসানকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। আপাতত তিনি ঘুমাচ্ছেন। বাবা ঘুমিয়ে পড়লে, আয়েশী ধীর পায়ে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। সিঁড়ি বেয়ে হাসপাতালের নিচে এসে থামে। একটু দূরেই বড় বট গাছ দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরনো গাছ। আয়েশী সে গাছের নিচে এসে দাঁড়াল। বড্ড মাথা যন্ত্রণা করছে। পিপাসায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আয়েশী ক্লান্ত গা নিয়ে গাছের নিচে বসল। কাপড় ময়লা হচ্ছে, হোক। একটুখানি শান্তি যদি মেলে? আয়েশী নিজের পার্স থেকে ফোন বের করে। ফোনের লক খুলে গ্যালারিতে প্রবেশ করে চোখে পড়ে মৃদুল এবং আয়েশীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি। আয়েশী মৃদুলের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে, মৃদুল হাত বাড়িয়ে সেলফি তুলছে। দুজনের মুখেই লেপ্টে আছে তৃপ্তির হাসি। আর থাকবেই না কেন? সেদিন যে মৃদুল এবং আয়েশীর জন্য এক বিশেষ দিন ছিল। সেদিন ছিল তাদের বাগদান! এই তো সেদিনের কথা। অথচ আজ? আজ সব স্মৃতি। মৃদুল তো চলে গেছে, কিন্তু সে আয়েশীকে দিয়ে গেছে কিছু সুন্দর, অতুলনীয় স্মৃতি। মৃদুল নেই, আয়েশী মৃদুলের সেই স্মৃতি আকড়ে সারাজীবন পাড় করে দিতে পারে। সারাটাজীবন!

‘ হরে কৃষ্ণ… ‘
হঠাৎ আয়েশীর সামনে লাফিয়ে এসে দাঁড়ায় এক বড্ড পাগল লোক। আয়েশী কেঁপে উঠে। মোবাইল একহাতে চেপে ধরে দু কদম পেছায়। ভ্রু কুঁচকে চায় পাগলটার দিকে। পাগল লাফাচ্ছে, গায়ে একটা ময়লা প্যান্ট ব্যতীত আর কিছুই নেই। চুলে বহু বছরের জট। গা থেকে মারাত্মক দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। আয়েশী ভয় পেয়ে পাগলটাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়। তবে পাগল লোকটি হাত দিয়ে আটকে দেয় আয়েশীকে। চোখ উপর-নিচ ঘুরিয়ে বলে,
‘ নাম কি রে তোর? ‘
আয়েশী নাক কুঁচকে ফেলে। লোকটার কাছাকাছি থাকায় গন্ধে বমি চলে আসার জোগাড়। আয়েশী কথা বলে না। মাথা নিচু করে পুনরায় পাশ কাটায়। তবে পাগল লোকটা আবার আয়েশীর কাছে লাফিয়ে আসে। আয়েশী ভয়ে আবার দু কদম পেছায়। রাগ দেখিয়ে বলে,
‘ দেখুন, আমার রাস্তা ছাড়ুন বলছি। নাহলে আমি লোক জড়ো করব। ‘
পাগল হাসে। হু হা করে হাসতে হাসতে যেন আয়েশীর গায়ে লুটিয়েই পড়ে। আয়েশী ভয়ে নিজের জামা খামচে ধরে। পাগল লোকটা হাসি থেমে বলে,
‘ লোক ডাকবি। হ্যাঁ? ডাক তোদের ভদ্র সমাজের অভদ্র লোকদের। ডাক না, ডাক। ‘
লোকটা চিৎকার করতে করতে হঠাৎ আয়েশীর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় আ’ছাড় দেয়।
শক্ত আ’ঘাতে আয়েশীর মোবাইলে ভে’ঙে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। মুহূর্তেই কি হয়ে গেছে বুঝতে আয়েশীর বেশ কষ্ট হল। পরক্ষণেই রাস্তার মধ্যে আয়েশীর এতদিনের মোবাইলে ভে’ঙে পড়ে থাকতে দেখে, আয়েশীর চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ছুটে যায় রাস্তায় পড়ে থাকা ভাঙ্গা মোবাইলের দিকে।
ধাম করে বসে যায় রাস্তায়। মোবাইলের ভাঙ্গা টুকরোগুলো জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে। এ মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলে, মৃদুলের সাথে আয়েশীর সব স্মৃতি হারিয়ে যাবে। আয়েশী- মৃদুলের সকল সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী এই মোবাইল। তাদের সকল ছবি, ক্ষুদে বার্তা সব এই মোবাইলে সংরক্ষণ করা। আয়েশী কেঁদে ফেলে। মোবাইল সমস্ত পার্ট টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। এই মোবাইল আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না। মৃদুলের শেষ স্মৃতিগুলোও আয়েশী হারিয়ে ফেলল। এত অলক্ষ্মী কেন সে? আয়েশী কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। কারো না।

‘ তুই কাঁদছিস ক্যান? ‘
পাগলটা আয়েশীর কানের কাছে চিৎকার করে বলে। আয়েশী কান্না থামায়। আগুন চোখে তাকায় পাগল লোকটার দিকে। চিৎকার করে বলে,
‘ তোকে আমি খু’ন করে ফেলব। আমার মোবাইল ভাঙার সাহস কোথায় পেলি? ‘
পাগল লোকটা কিছুক্ষণ শীতল চোখে তাকায়। হয়তো আয়েশীর কথার অর্থ ধরতে চাইছে। কিন্তু একটু পরই হু হা করে হেসে বলে,
‘ খু’ন? পাগলদের আবার খু’ন করা যায় নাকি? তারা খু’ন হয়ে যায় বলেই তো তারা পাগল। এই দেখ, আমি মৃ’ত। দেখ দেখ। আমার দিল ছিঁ’ড়ে দেখ। তাজা র’ক্ত পাবি না। সব পানি হয়ে গেছে। দেখ, দেখবি? ‘
পাগল লোকটা আয়েশীর হাত ধরে ফেলে। আয়েশী ভয়ে পেয়ে ধস্তাধস্তি করে। পাগল লোকটা গর্জন করে হাসে। আয়েশীর হাত ছেড়ে বলে,
‘ তোরা ভদ্র সমাজ, আমাদের নোংড়া গায়ে হাত দিবি ক্যান? তোরা হাত তো’ নোংরা টাকা ছুঁয়ে অভ্যাস।টাকা, টাকার মায়া বড় মায়া। টাকাই এই পৃথিবীর’ সব। হায়রে টাকা, হায়রে পৃথ্বী। ‘

পাগলটা আকাশের দিকে দুহাত তুলে বিলাপ করে। কাউকে কি অভিযোগ জানাচ্ছে? কাকে? ওই উপরে যিনি বসে আছেন, তাকে? কি অভিযোগ জানাচ্ছে? এই পৃথিবীর ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকা অভদ্র লোকদের বিরুদ্ধে? আয়েশী গভীর ভাবে পাগলটার দিকে তাকায়। পাগলটার চোখে কিসের যেন কাতরতা। লোকটা কি ভীষন দুঃখী? তার কি অনেক, অনেক অভিযোগ আমাদের নিয়ে? আয়েশী ভীষন অবাক হয়। বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রয় পাগল লোকটার দিকে। পরক্ষণে নিজের ভা’ঙ্গা মোবাইলের দিকে তাকায়। মৃদুল কি তবে চিরকালের জন্য হারিয়ে গেল?
_________________________
‘ ওসমান, পাগল দেখেছ কখনো? ‘
ধ্রুব তার পোষা বাঘদের গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করছিল। হঠাৎ করে এ কথা শুনে ওসমান ভ্যাবাচেকা খায়। বলে,
‘ দেখেছি, স্যার। ‘
‘ কখনো কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের পাগল দেখেছ? ‘
ওসমান অবাক হয়। সুস্থ মস্তিষ্কের পাগল আবার হয় নাকি? তাদের মস্তিষ্ক অসুস্থ বলেই তো তারা পাগল। ওসমান কথা বলে না। চুপ করে থাকে। ধ্রুব হাসে। বাঘদের সামনে খাবার হিসেবে তাজা মাংস ফেলে। বাঘরা মাংস পেয়ে হা’মলে পড়ে তার উপর। ধ্রুব বাঘদের সেখানে রেখে হেঁটে আসে বাগানের মধ্যে। ওসমান পেছন পেছনে আসে। ধ্রুব টিস্যু দিয়ে হাত পরিষ্কার করে বলে,
‘ উত্তর দিলে না কেন ওসমান? ‘
ওসমান মাথা নত করে বলে,
‘ আপনি’ই আমার থেকে বেশি জানেন, স্যার। ‘
‘ হ্যাঁ, ঠিক। আমি যা জানি, তার অর্ধেক যদি তুমি জানতে তাহলে আজ তুমি আমার এই কালো সম্রাজ্যের একচ্ছত্র রাজা হতে।’
ধ্রুব হাঁটতে হাঁটতে একটি কাঠের তৈরি কক্ষের সামনে দাঁড়ায়। কক্ষটার দরজায় বিশাল এক তালা ঝুলানো। ধ্রুব নিজ হাতে সে তালা খুলে। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলে, কক্ষের ভেতর ওসমানের চোখে পড়ে এক লোক। যার চারপাশে অসংখ্য টাকার নোট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। ওসমান বুঝতে পারে না, এই লোক কে? আর এই লোককে ধ্রুব টাকা দিয়েই বা কেন মুড়িয়ে রেখেছে? ওসমান ধ্রুবর দিকে চায়। ধ্রুব নিজে থেকেই হয়তো সব বলবে।
ধ্রুব লোকটার পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসে। লোকটার ময়লা চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
‘ টাকার গন্ধ ভালো লাগছে? ‘
লোকটা একটা এক হাজার টাকার নোট নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ শুঁকে। লম্বা করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
‘ টাকার ঘ্রাণ এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ঘ্রাণ। মানুষ এই ঘ্রাণের কারণেই টাকার নোটের পেছনে ছুটে। ‘
ধ্রুব লোকটার হাত থেকে সেই এক হাজার টাকার নোট ছি’নিয়ে নেয়। এতে লোকটা উত্তেজিত হয়ে যায়। লোকটা ধ্রুবর থেকে নোটটা ছিনিয়ে নিতে চায়। তবে ধ্রুব ধরা দেয় না। ধ্রুব টাকা ধরা হাত লোকটার নাগালের বাইরে উচুঁ করে বলে,
‘ যদি কেউ তোমার থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়, কেমন লাগবে? ‘
লোকটা দাত খিঁচে ধরে। হুংকার ছেড়ে বলে,
‘ খু’ন করে ফেলব। ‘
ধ্রুব পুনরায় হাসে। সে এতদিন যে সোনার খনির খোঁজ করেছিল, আজ সে তাই পেয়ে গেছে। এখন শুধু এই সোনার খনিকে ভালো করে ঘষে মেজে পরিপূর্ন সোনায় পরিণত করতে হবে।
ধ্রুব টাকার নোট আবার লোকটার হাতে ধরিয়ে দেয়। লোকটা পুনরায় ব্যস্ত হয়ে যায় টাকার ঘ্রাণ শুঁকতে। ধ্রুব উঠে দাঁড়ায়। কক্ষের দরজা তালা দিয়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।
ধ্রুব ভেজা টিস্যু দিয়ে হাত পরিষ্কার করে। চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে বুক টানটান করে দাড়ায়। ভ্রুরু কুচকে, ঠোঁটে রহস্যময় হাস নিয়ে চেয়ে রয় দূরে। ওসমান বেকুব হয়ে এতক্ষণ ধ্রুবর কার্যকলাপ দেখছিল। ধ্রুব কি করতে চাইছে কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। আসলে এত বছর ধ্রুবর সাথে কাজ করেও সে ধ্রুবকে এখনো ভালো করে চিনে উঠতে পারেনি। ধ্রুব, সে তো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এক আস্তরণ ঘেরা রহস্যময় মানবের নাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here