অবুঝ_বউ,পর্ব-৮ এবং শেষ পর্ব

0
1252

অবুঝ_বউ,পর্ব-৮ এবং শেষ পর্ব

দিয়া না চকলেট খাইতেছিল আমি চাইছিলাম আমাকে দেয়নাই, পরে আমি ওর কাছ থেকে জোড় করে সেটা কেড়ে নিছি, তার পর সে আমার চুল টেনে ধরছিল তাই আমি ওকে কামড় দিছি, ( তিথি)
কামড় দিছ মানে? দিয়া এখন কোথায়?
ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে ওর মা।
আমি আর দেরি না করে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম, তিথিও আমার পিছে পিছে গেল। হাসপাতালে গিয়ে দেখি দিয়ার ট্রিটমেন্ট চলতেছে, ৪ টা সেলাই দিছে হাতে, তিথি আমার হাতটা ধরে অপরাদীর মত পিছে দাড়ায়ে পরল, সাথে সাথে কান্না শুরু করে দিছে,
কিরে নিলয় তুই কি তিথি কে বকাবকি করছিস নাকি?(ভাবী)
সুযোগ পাইলাম কই, তার আগেই ত বাবার ভয় দেখানো শুরু করছে, (আমি)
থাক কিছু বলিস না, দিয়াকে যখন কামড় দিছে দিয়ার আগে সেই কান্না শুরু করে দিছে হাতে রক্ত দেখে, ছোট মানুষ বুঝতে পারেনাই,(ভাবী)
ভাবী ও এবার এস,এস,সি দিবে ওকে তুমি ছোট বলছ? ওকে আমি আর এখানে রাখবনা, কালই ওকে বাড়ী পাঠিয়ে দিব,(আমি)
আামি বাড়ি যাবনা বলেই আবার কান্না শুরু করে দিছে,
থাক তকে আমিই যেতে দেবনা, শুধু আর পাগলামী করবিনা কখনও মনে থাকে যেন?(ভাবী)
আচ্ছা(তিথি)
ভাবলাম হাসপাতালে যখন এসেই পড়েছি তখন প্রেসার টা একটু মেপে যাই, যেই না নার্স প্রেসার মাপা শুরু করছে তিথি এসে নার্সের চুল ধরে টানাটানি শুরু করছে.
তিথি(ধমক দিয়ে) এটা কেমন বেয়াদবি?(আমি)
ও আপনাকে ধরছে কেন?(তিথি)
ধরছে মানে? প্রেসার মাপতেছে ধরতে হবেনা?(আমি)
না ধরবেনা, নানী বলেছিল তর স্বামীর পাশে যেন কোন মেয়ে ঘেসতে না পারে, কোন মেয়ে যেন তর স্বামী কে স্পর্শ না করে, যদি করে তাহলে কিন্তু তর স্বামীকে হারাবি,(তিথি)
আমি হাসি আটকালেও নার্স না হেসে পারলনা, পরে নার্স আর প্রেসার মাপলনা, তারপর তাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। আর টেস্ট পরিক্ষা শেষ হওয়ার পর তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম যাতে আর কোন অঘটনের সৃষ্টি না হয়, কে শুনে কার কথা পর দিন বাবাকে সাথে নিয়ে হাজির, তাকিয়ে দেখি একদিনেই চেহারার বেহাল দশা করে ফেলছে, অফিস থেকে বাসাই ঢুকেই দেখি বাবা আর তিথি বসে গল্প করতেছে,
আমাকে দেখেই তিথি বাবার পাঞ্জাবী ধরে বাবার পিছে দাড়িয়ে গেল। অনেক কেদেছে মনে হয় দেখে মনে হল,
বাবা কখন এসেছ? কেমন আছ?
(বাবা কোন কথা না বলে আগে হাতের কাজটা সেরে নিল) হারামজাদা তর সাহস কি করে হল মেয়েটাকে একা একা পাঠানোর? রাস্তায় যদি কিছু একটা হয়েযেত?
বাবা জানও ও কি করেছে?(আমি)
চুপ, কোন কিছুই আমি জানতে চাইনা, একটা কথা বলবি একটা চর খাবি, যত কথা তত চর, (বাবা)
তিথি খিল খিল করে হেসে ওঠল, আমি ওর দিকে তাকাতেই বাবার পিছে লুকিয়ে পড়ল।
বিপত্তি আরও বাড়ল কিছুদিন পর, তিথির যখন এসএসসি পরিক্ষা শুরু হল, তার এক কথা ও পড়ার সময় আমাকে খাটে হেলান দিয়ে বসে থাকতে হবে, ও আমার বুকে মাথা রেখে পড়বে আর আমাকে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে হবে, তা না হলে সে পড়বে না, দীর্ঘ দেড়টা মাস আমি ঠিক মত ঘুমাতে পারিনাই, ও রাত ২-৩টা পর্যন্ত পড়ত আবার ৬-৬.৩০টায় ওঠত, পরীক্ষার সময় মেয়েটার চোখে ঘুম থাকে না, যে করেই হোক তাকে ১ম হতে হবে, না হলে তার মাথা ঠিক থাকেনা, ক্লাস সেভেনে অসুস্থতার জন্য ২য় হয়ে ছিল, পরে যে প্রথম হয়েছিল তার বাবা মা এসে রিকোয়েস্ট করে তিথিকে প্রথম করে দিছে, কারন তাদের ছেলে কে খামচিয়ে কামড়িয়ে শেষ করে দিছিল, আর ও পড়ার সময় কেউ ডিস্ট্রাব করলেও তার অবস্থা অনেকটা খারাপ করে দেয়, তাই কিছু বলার মত সাহসও হয়নাই।
পরীক্ষা শেষে আবদার করল আমার সাথে ঘুরবে, ছুটি নাই বললে স্যার এর মেয়েকে বলে ছুটির ব্যবস্থা করল। একদিন তাকে নিয়ে পার্কে গেলাম ঘুরতে,
এই দেখেন দেখেন মেয়েটা মনে হয় পানিতে পড়েছিল চলেন চলেন দেখে আসি,(তিথি)
তিথি দেখতে হবেনা চল এখান খেকে, বাসায় যাব,(আমি)
আরে আপনে এমন কেন? দেখছেন না ছেলেটা একা, আমরা গিয়ে সাহায্য করি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য(তিথি)
তিথি হাসপাতালে নিতে হবেনা মেয়েটা দেখ নড়তেছে তার মানে সে বেচে গেছে, আমাদের যেতে হবেনা এই বলে তারা তারি ওখার থেকে চলে আসলাম।
দেখতে দেখতে তিথির রেজাল্ট হয়ে গেল, অনেক ভাল রেজাল্ট করেছে, আমাদের বকশীগঞ্জ উপজেলায় ১ম।
সেদিন যে তিথি কি পরিমান খুশি ছিল বলে বুঝাতে পারবনা, প্রায় ঘন্টা খানেক লাফিয়েছে আর কিছুক্ষন পর পর আমায় এসে জড়িয়ে ধরছে অথচ এই মেয়েটাই রেজাল্ট এর আগের দিন রাতে সারা রাত ঘুমাতে পারে নাই সাথে আমাকেও ঘুমাতে দেয় নাই।
আমাদের বিবাহিত জিবনের বসন্ত শুরু হয়েছিল তিথির এইচ এস সি পরিক্ষার পর, তত দিনে সাফেদ ভাইরা ঢাকার দিকে চলে গেছে, তাই পুরো ফ্লাট এ আমরাই ছিলাম।
মনে পড়ে আমাদের বিয়ের চতুর্থ বার্ষিকিতে আমার ফিরতে একটু রাত হয়, অনেকক্ষন কলিং বেল চাপার পরও যখন দরজা খুলতেছিল না তখন আমার চাবি দিয়ে দরজা খুলতে যাব দেখি দরজা খুলা, ভিতরে অন্ধকার, খুজে লাইট টা জালাতেই আমি অনেকটাই ভয় পেয়ে গেলাম, কার বাসায় ঢুকলাম? পরে খেয়াল করে দেখলাম না ঠিকই আছে, সারা ঘর সুন্দর করে সাজানো, টেবিলের উপর একটা সেরওয়ানী রাখা সাথে চিরকুট, ওগো নানী বলে গেছিল যখন তুই বড় হবি বিয়ে কি বুঝতে পাড়বি সেদিন যেন আবার আমি প্রথম দিনের মত বউ সাজী।
এক আনন্দের ঢেউ কেটে গেল মনে, আমি ফ্রেস হয়ে সেরওয়ানী পড়ে গিয়ে দেখি রুমটাও সুন্দর করে সাজানো, দরজায় দাড়িয়েই বল্লাম দাদী যেন কি বলে ছিল? বলেই হেসে দিলাম, তিথি লজ্জায় মুখটা হাটুতে ঠেকাল। কোন রকম রাতটা পার করলাম, পরদিন থেকে বিপত্তি আরও বেড়ে গেল, প্রায় এক সপ্তাহ তিথির মুখ দেখতে পারিনাই, খুব সকালে সে ওঠে নাস্তা রেডি করে অন্য রুমে লুকিয়ে থাকত, আর রাত না হলে বাসায় ঢুকতে দিতনা।
বাসায় যখন ঢুকতাম পুরো অন্ধকার থাকত, এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরত বরাবরের মতই কিন্তু লাইট জালাতো না, শুয়ার সময় আমার হাতটা বেধে রাখত তার পর ঘুমাত, এভাবেই তার অত্যাচার এ দিনগুলি যাচ্ছিল, ঢামেক এ চান্স হওয়ার পর আমি ঢাকার দিকে চাকরি নেই। চান্স হওয়ার কিছুদিন পরই তিথি কনসেভ করে, সেদিন যে আমি কি পরিমান খুশি হয়ছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করারর মত না, তিথিকে খবর টা জানানোর পর ও যে কতক্ষন আমার বুকে মুখ লুকিয়েছিল তা আমার মনে নেই, কিছুক্ষন পর দেখি তিথি কাদতেছে,এই পাগলি কাদতেছ কেন?
বাবু হলে ত আপনি বাবু কেই ভালবাসবেন আমায় ত বাসবেন না,
হেসে দিলাম, ধুর পাগলী কে বলেছে তোমায় ভালবাসবনা?আরও অনেক বেশি বাসব,
সত্যি?
হুম সত্যিবলেই কপালে একটা চুমু দিলাম, সেও আমাকে জড়িয়ে ধরল,
পাগলীটা এখন মা হয়েছে বাবা হয়েছি আমি, কিন্তু পাগলীর পাগলামী কমেনাই বরং বেরেছে।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের একটা মেয়ে হয়েছে, মেয়ে হওয়ার পর থেকেই আমার উপর তিথির অত্যাচার আরও বেড়ে গেছে, মেয়েও হয়েছে ঠিক মায়ের মতই, মা যেমন স্বামীর বুক ছাড়া ঘুমায় না মেয়েও তেমন বাবার বুক ছাড়া ঘুমায় না, আর এই নিয়ে মা মেয়ের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে, মাঝখান থেকে বলির পাঠা হয়ছি আমি। আমারা এখন মানুষ তিনজন আর বালিশ একটা,
এখন মেয়ের বয়স তিন কোলে করে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি তিথির জন্য, আজ তিথির মেডিকেল এর শেষ দিন।
কি বেপার ওকে এই ভাবে কোলে করে কতক্ষণ দাড়িয়ে আছেন?(তিথি)
এইত প্রায় ঘন্টা খানেক(আমি)
ও কি এইভাবেই কোলে ওঠেছিল?(তিথি)
হুম কেন?(আমি)
না কিছুনা, মামনি আমার কোলে আয়( মেয়েকে কখনও তুই করে বলেনা রাগনা ওঠলে, কিন্তু বুঝতে পারলাম না কি জন্যে রাগ করছে)
কি বেপার তিথি তুমি কি নিতুর উপর রেগে আছ? কিছু করেছে?(নিতু আমার মেয়ের নাম)
না কিছু করেনি, আপনি হেটে হেটে বাসায় আসবেন আমি নিতুকে নিয়ে যাচ্ছি।
তিথি আমাকে রেখে গাড়ি নিয়ে চলে গেল,
বাসায় গিয়ে দেখি মেয়েকে খাটের সাথে বেধে কান ধরিয়ে দার করে রাখছে,
কি বেপার তিথি ওকে বেধে রাখছ কেন?
কি করব? ও আপনার কোলে কেন ওঠবে?(তিথি)
বারে মেয়ে বাবার কোলে ওঠবেনা?
ওঠোক আমি ওকে ভাগ করে দিছি না? আমার পাশে ও কেন ওঠবে?(তিথি)
ও ত তোমার পাশে যেতে চাইনাই, আমিই নিছি,
নিতু সত্যি? (তিথি)
(কাদতে কাদতে) হুমমমম
আচ্ছা ঠিক আছে কান ছাড়, তুমি এক ঘন্টা কোলে ওঠে ছিলেনা আমার পাশে? তাহলে আমিও এক ঘন্টা থাকব কোলে ওঠে তোমার পাশে তাহলে শুধ বোধ হয়ে যাবে আর একঘন্টায় যে আমার পাশে ক্ষয় করেছ সে জন্য আরও এক ঘন্টা আমার পাশে কোলে ওঠে বসে থাকব।
কিন্তু মেয়েও দুইবার কোলে ওঠতে দিতে রাজি না, এই নিয়ে চলছে মা মেয়ের ঝগড়া, আমি বসে বসে দেখছি, তাদের ঝগড়া থামলে কোলে করে বসে থাকতে হবে কারন আমার ত আমি নাই আমি এখন মা আর মেয়ের সম্পত্তি, তারা যেমনে ব্যাবহার করে, অবশেষে তারা চুক্তি পত্র করে ঝগড়া থামায়ছে. প্রথম একঘন্টা মেয়ের মা থাকবে ডানপাশের কোলে চরে পরে দুজনই যার যার পাশে আরও একঘন্টা করে কোলে চরে থাকবে যাতে দুইজন এরই ক্ষয় শোধ বোধ হয়ে যায়। বউ কে কোলে নিয়ে আছি মেয়ে স্টপ ওয়াচ ধরে আছে, তিথি বিজয়ের হাসি হাসতেছে মেয়ে আগুনের মত জলতেছে, আর আমি মাইনকার চিপায় পড়িয়া দাদীরে উদ্ধার করতেছি, হয়তবা বাকিটা জিবনও কাটবে এমন অবূঝ বউয়ের জ্বালায়।।

(সমাপ্ত)

গল্পটা কেমন লাগলো সবাই একটু কমেন্ট করে বলবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here