#প্রজাপতি মন (পর্ব-9)
♡আরশিয়া জান্নাত
আনিসা রান্নাঘরে কাজের ফাঁকে ছোটবোনকে বললো, কি রে এখন খুশি তো? ছেলে তোর পছন্দ হয়েছে?
নিপা চিকেন ফ্রাই প্লেটে তুলতে তুলতে বললো, ক্যাশিয়ার সাহেব চালাকি করেছে বুঝছো। এমন এক ছেলেকে এনেছে যাতে না বলার পথ না থাকে। শুধু আনহার বেস্টফ্রেন্ড বলে বলছি না, ছেলে দেখতেশুনতে ভালোই। এমন লম্বা মাঝারি গড়নের ছেলে, গায়ের রং শ্যাম হলেও বেশ মায়াবী, পড়াশোনায় ও ভালো। সবচেয়ে বড় কথা সে আনহাকে বুঝবে, ওর ফ্যামিলির সাথে তো তোমাদের অনেক বছরের সম্পর্ক। ওরা মানুষ ভালো আনহাকে অনেক স্নেহ করে। সবমিলিয়ে বলতে পারো এবার আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো।
আনিসা হাসিমুখে বোনকে বললো, তোর দুলাভাই মেয়ে দুটোকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। এদেরকে যার তার হাতে তুলে দিবেনা। নিশির জন্য যে সম্বন্ধ এসেছিল ওখানে নিশি ঠিকই সুখী হতো। কিন্তু আমার মেয়ে বুঝলোনা। জানিস নিপা আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম, উনার যদি কিছু হয়ে যেত নিশিকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করতাম না।
নিশির খবর পেয়েছ আর? কোথায় আছে জানো কিছু?
পাবো না? সে এখন কুমিল্লা আছে। ওখানেই ট্রান্সফার নিয়েছে শুনলাম। উনি ছেলের খোঁজখবর সব নিয়েছে, মেয়ে ঠিক জায়গায় আছে কিনা তা নিয়ে চিন্তার তো শেষ নাই।
ওরা ফিরে আসলে দুলাভাই মানবে?
জানিনা। তবে একটা কথা কি জানিস নিশি যদি বলতো তোর দুলাভাই না করতো না। কিন্তু এভাবে মানসম্মান নষ্ট করে যাওয়াটা,,,,,
থাক বাদ দে ওর কথা। নসীবে করে যা এনেছে তাই ঘটেছে। এখন সুখে থাকলেই হলো।
নিপা, আনহাকে নিয়ে আমার ভয় ছিল না কখনোই। ও যেকোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু নিশিকে তো চিনিস। ওর যে খরুচে স্বভাব। শুনেছি ছেলেদের আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো না। মেয়েটা যে কিভাবে আছে,,,,
নিশির কিছুই হবে না দেখিস। ও ঠিকই সবকিছু আগের মতোই আদায় করে নিবে। আর নিজের চাকরি তো আছেই। আচ্ছা ভালো কথা আজকেই কি আনহার কাবিন হবে ?
কি জানি! চল গিয়ে দেখি ওরা সবাই কি করছে। নিপা তুই এক কাজ করতো ওদেরকে দোতলায় নিয়ে যা। সেই কখন থেকে বড়দের মাঝে বসে আছে। ওর নসীব দেখ দাদী/ভাবী কেউ নেই যে একটু সাহায্য করবে। মেয়েটা যে কি কপাল নিয়ে আসছে!
নিপা তাদেরকে ওখান থেকে সরিয়ে দোতলায় বসালো। এতোক্ষণ বড়দের সামনে কেউ কিছু বলার সুযোগ পায় নি। এবার আরাফ বললো,
হেই আনহা আপু কেমন আছ? তোমার গল্প ভাইয়ার কাছ থেকে আমি অনেক শুনেছি, কিন্তু দেখলাম এই প্রথম। আসলে আমরা সিলেট থাকি তো সহজে ছোট মামার এখানে আসা হয় না।
আনহা এবার বোকার মতো বলে ফেলল, তুমি আমাদের ছোট! তাহলে বিয়ের কথা হচ্ছে কার সাথে?
ওর কথা শুনে আরাফ একবার ওর দিকে তাকালো আরেকবার হাসিবের দিকে। হাসিব গাম্ভীর্য ধরে রাখার জন্য ফোন হাতে নিয়ে বসে রইলো, আনহার এমন বেকুব মার্কা কথায় হাসিব চুপ থাকলেও আরাফ চুপ থাকতে পারলো না। সে অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো।
আরাফ বহুকষ্টে হাসি থামাতে থামাতে বললো, আপু তুমি এখনো এটা জানো না কার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে! ডোন্ট সে তুমি ভেবেছ আমার সাথে হো হো হো
আনহা এবার সত্যিই লজ্জায় পড়ে গেল। সে কি করে জানবে হাসিবের সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে? কেউ তো একবারো ওর কথা বলেনি। তাছাড়া আরাফ কে দেখে বোঝার উপায় আছে ও ছোট না বড়? সে কথা না বলে চুপ থাকলেই হতো। ক্যান যে মুখ ফসকে বলতে গেছিল!
হাসিব ভাই তুই ঠিক বলেছিলি আপু আসলেই টিউবলাইট।
আনহা হাসিবের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো, এই বলেছে তোমার ভাই তোমাকে? আমি টিউবলাইট?
হ্যাঁ। শুধু তাই না তুমি নাকি পড়াশোনা ছাড়া কিছুই বুঝোনা। তোমার আশেপাশে কি ঘটে সেদিকে তোমার লক্ষ্য থাকেনা। একবার কোন ছেলে তোমাকে টিজ করেছিল তুমি এমন মেয়ে সেটা পর্যন্ত খেয়ালই করোনি। পরে ঐ ছেলেটাকে ভাইয়া এমন ধোলাই দিয়েছে তুমি যদি জানতে!
আনহা এবার অবাকের চরম সীমায় চলে গেল। কোন ছেলে ওকে টিজ করলো আবার! আর হাসিব ই বা মারতে গেল কেন?
হাসিব আরাফের পিঠে ঘুষি দিয়ে বললো, তোকে এসব কথা বলতে বলেছে কেউ?
উফফ ভাই আমি তোর পাঞ্চিং বক্স না। যখন তখন পাঞ্চ মেরে আহত করিস।
আনহা এবার সরাসরি হাসিব কে বললো, কাকে মেরেছিলি তুই? আমিতো এসব জানতাম না!
হাসিব ডোন্ট কেয়ার মুডে ফোন হাতে নিয়ে বসে গেল যেন সে শুনতেই পায় নি কিছু।
আনহা আর এক মুহূর্ত দেরী না করে রুমে চলে এলো। তার মাথায় ঢুকছেনা হাসিব এমন শয়তান কেন? এতো অভিমান কথা পর্যন্ত বলেনা অথচ বিয়েতে রাজী হয়ে গেল? ব্যাপারটা অদ্ভুত না? তবে কি সে তিতলির ঘটনার প্রতিশোধ নিতে,,, না না সে কি ভাবছে এসব? হাসিব এতো খারাপ না। ওর সাথে সবকিছুই অদ্ভুত ঘটছে।
সেই রাতেই আনহার আর হাসিবের ঘরোয়া ভাবে কাবিন হয়ে যায়। এটা এমন এক বিয়ে যেটায় বর কনে বাদে সবাই আনন্দিত। আনহার জন্য ঘটনাটা আকস্মিক হলেও হাসিবের জন্য নয়। সে জানতো আনহার সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। আনহার সঙ্গে তার রাগারাগিটা অনেক গুরুতর হলেও বন্ধুত্বের গভীরতার সামনে কিছু না। তবুও সে আনহাকে কষ্ট দিতেই ইগ্নোর করছে। তিতলির জন্য সে যতোটা কষ্ট পেয়েছে তার 1% ও যদি আনহা পায় তবে বুঝতো কেমন লাগে!
যখনই তার মনে পড়ে আনহা শুধুমাত্র ওকে ভালো পথে আনতে এতো বড় নাটক সাজিয়েছে জাস্ট মাথায় আগুন লেগে যায়। সে মানে সে যা করছিল তা আসলেই ঠিক নয়। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে সব কি ঠিক হতোনা? একটা বয়সে সবার চোখের রঙিন চশমা থাকে। তারও ছিল। নিজের দোষকে কেউই দোষ ভাবেনা। হাসিবও তার ব্যতিক্রম নয়। সে নিজেকে বুঝ দিয়ে যায় এখানে তার কোনো সমস্যাই ছিল না, আনহাই কাবিল মেয়ে সবকিছু করেছে খালাম্মা সেজে।
আনহাদের পারিবারিক সমস্যার জন্যই সে বিয়েতে রাজী হয়েছে। নাহয় ওকে বিয়ে তো দূর ওর ছায়াও মারাতো না কখনো। ওর বিপদের দিনে যেমন আনহা ঢাল হয়ে পাশে ছিল সেও ঠিক সেটার শোধ দিচ্ছে নাথিং ইলস।
“এই বিয়েটা কেবলই কাগজে কলমের বিয়ে থাকবে। তোকে আমি কখনোই স্ত্রীরূপে গ্রহণ করবোনা। মনে রাখিস তুই!”
?????
বিছানায় শুয়ে জানলা দিয়ে আকাশ দেখছে আনহা। আকাশে চাঁদ নেই তবুও কি সুন্দর তারায় ঝলমল করছে। চাঁদবিহীন আকাশটাও যে এতো সুন্দর আলোকিত থাকতে পারে এ যেন প্রকৃতির অসম্ভব সুন্দর লীলা!
আজকের দিনটা কত লম্বা একটা দিন ছিল। তার জীবনের নতুন এক সূচনা ঘটেছে। সম্পর্কের নাম বদলেছে, সে এখন হাসিবের স্ত্রী! এটা কখনোই কি ভেবেছিল সে? বিয়ের মতো জাঁকজমক একটা অনুষ্ঠান কতো সাদামাটাই না হলো। সে তো কখনোই ভাবেনি তাদের বাড়িতে এমন বিয়ে হবে। বড় বোনের চলে যাওয়া, নিজের এমন বিয়ে। তাদের তকদীর বুঝি এভাবেই সাজানো ছিল? এতো রঙহীন? তার কত স্বপ্ন ছিল বোনের আর নিজের বিয়ে নিয়ে। কিছুই হলোনা। বুকটা কেমন ভার হয়ে আসে। নিয়মমতে আজ তো তাদের বিয়ের রাত। হাসিবের কি একটুও অন্যরকম লাগছেনা? সে কিভাবে পারলো একটা কথাও না বলে চলে যেতে? আনহার অপরাধ কি তবে এতোটাই নিকৃষ্ট ছিল যে তাকে সাফাই দেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া যায়না? এই যে আজ এমন সুন্দর করে সাজলো একটা বার তো বললো আনু এদিকে তাকা একটা ছবি তুলি? আরাফ যখন কাপল ফটো তুলতে চাইলো কেমন চোখ রাঙিয়ে ছিল। বড়রা ছিল বলে মুখে কিছু বলেনি যদিও।
এ কেমন ছন্নছাড়া সম্পর্কে জড়ালো সে? এই বিয়ের কি আদৌ কোনো মূল্য আছে নাকি এটা কেবলই নামমাত্র হয়ে থাকবে?
হাসিব তো তিতলিকে ভালোবাসে, সেই মনে আনহার স্থান কেবলই ঘৃণার। কাকে বলবে সে মনের এইসব অশান্তির কথা?
(আচ্ছা একটা ম্যাজিক হলে কেমন হয়? আনহা আর হাসিবের টকঝাল গল্পটা এক মিষ্টি প্রেমের গল্প হয়ে যাক!)
চলবে,,,