সুখ_নীড় #পর্ব_২৩,২৪

0
400

#সুখ_নীড়
#পর্ব_২৩,২৪

২৩

সাজেদা চৌধুরীর হাত থেকে রক্ষা পেতে আগের বাসা ছেড়ে ঢাকার অদূরেই বিরুলিয়ার আকরান বাজারের পাশে একটা বাসা ভাড়া করেছে পল্লব। মাস দু’য়েক হলো এখানে থাকছে জয়ী আর সে। ঢাকার বাসাটিও সে ছাড়েনি। সেখানে পল্লব থাকে। আসলে জয়ীকে তার মায়ের হাত থেকে নিরাপদে রাখবার জন্যই সে জয়ীকে একরকম লুকিয়ে রেখেছে এখানে। জয়ী এখানে থাকে এটা তার মা হয়তো ভাবতেও পারবে না। জয়ীর একা থাকতে যাতে অসুবিধা না হয় তাই জয়ীদের গ্রাম থেকে দশ বারো বছরের একটা মেয়েকে আনা হয়েছে। মেয়েটাকে এখানকার স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করেও দিয়েছে জয়ীতা। ইপিজেডের ওদিকে পল্লবের প্রায়ই কাজ থাকে। যেদিন সেখানে কাজ থাকে সেদিন সে বিরুলিয়ার এই বাসাতেই থাকে। আর বাকী সময় ঢাকাতে।

সেদিনের সেই ঘটনার পরই হুট করে পল্লব এমন সিদ্ধান্ত নেয়। সে তার এক বন্ধুর সাহায্যে এই বাসাটি পেয়েছে। পল্লবকে ছেড়ে জয়ী এখানে আসার জন্য মোটেই রাজি ছিল না। কিন্তু পল্লবের জোরাজুরিতে আর না করতে পারেনি। জয়ীর নিজেকে নিয়ে ভয় হয় না, তার ভয় হয় পল্লবকে নিয়ে। পল্লবের সাথে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সেই ভয়ে সে কিছুতেই পল্লবকে ঢাকাতে ও বাসাতে থাকতে দিতে রাজী নয়। তার কথা হলো, “দু’জনেই এক জায়গা থাকব। বিপদ আসুক আর যাই আসুক মরতে হলে দু’জনে একসাথে মরব। ”

পল্লব জয়ীকে বোঝায় তার কোনো ক্ষতি হবে না। নিজের ছেলেকে মুখে যাই বলুক কোনো ক্ষতি নিশ্চয়ই তার আম্মি করবে না। কিন্তু জয়ীর মন মানে না। সে ভীষণ ভয় পায় তার শাশুড়িকে।

এরমধ্যে নির্বাচন শেষ হয়ে গিয়েছে। পল্লবের আম্মি সাজেদা চৌধুরী বেশ ব্যবধানে হেরে গিয়েছে শাহীন তালুকদারের কাছে। রাগে, অপমানে সে একদম নিস্তব্ধ কিছুদিন ধরে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগমমহূর্তেও সে ভাবেনি তার এভাবে পরাজয় হবে।

আসলে তার কর্মীরাও তার সাথে গাদ্দারী করেছে। তার নিজের ঘরেই যেখানে বিভীষণ রয়েছে সেখানে অন্যদের দোষ দিয়েই বা কী লাভ! মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছেন সাজেদা চৌধুরী। তার এমন হারের পেছনে মনে মনে পল্লবকেই দায়ী ভাবছে সে।

আজ তিনদিন পরে পল্লব এসেছে। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে পল্লবের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে জয়ীতা। পল্লব তার চুলে হাত বুলাচ্ছে আর বলছে, তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?

– এটা কেমন প্রশ্ন? এটা কী নতুনভাবে বলতে হবে? একটু কপট রাগ দেখিয়ে বলল, জয়ী।

– উহু! প্রতিদিনই শুনতে ইচ্ছা হয়। মনে হয় যতবার শুনছি প্রতিবারই নতুন করে শুনছি।

– তাই! ঠিক আছে। তাহলে প্রতিদিনই বলব। খুশি এবার?

– খুব খুশি।

পল্লবের মেজাজ বেশ ফুরফুরে দেখে জয়ী সাহস করে বলল, একটা কথা বলবার জন্য এই দু’তিনদিন ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু সাহস হচ্ছে না।

– কী এমন কথা? সাহসের কী আছে? বলে ফেলো। কেউ কিছু কী বলেছে?

– না, না। সেসব কিছু না। তুমি কীভাবে নিবে তাই বলতে ভয় হচ্ছে। আসলে আমি মনে মনে ভীষণ ভয় পাচ্ছি।

– ভয় পাবার মতো কী এমন হলো?

– তুমি যেভাবে চারপাশে দিনদিন তোমার শত্রু বাড়িয়েই চলছ ভয় না পেয়ে উপায় আছে বলো! আম্মি নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন। তার মানসিক অবস্থা এখন কেমন এটাতো তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ । এসব কিছুর জন্য যে সে তোমাকেই দায়ী ভাবছে এতে আমি কিঞ্চিত ভুলও করছি না। তার উপর শাহীন ভাই। তোমার কি মনে হয় উনি তোমাকে বিনা স্বার্থে এভাবে সাহায্য করছেন? অলরেডি উনি ওনার স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছেন তোমাকে ব্যবহার করে! মধ্যখান থেকে আম্মির সাথে তোমার শত্রুতা আরো বাড়িয়ে দিলো। স্বার্থে আঘাত লাগলে শাহীন তালুকদারও তোমাকে ছেড়ে কথা বলবে না।

– বুঝতে পেরেছি। এই একই কথা কতবার বলবে? সবই বুঝি। এখন আমাকে কি করতে হবে তাই বলো।

– কিছু করতে হবে না। আমি আসলে বলছিলাম এদের শত্রুতা তো বাড়িয়েছই এখন আবার তুমি হান্নান সাহেবের সাথে নতুন সমস্যায় জড়াচ্ছ কেন?

– হান্নান সাহেবের সাথে যে আমার সমস্যা হচ্ছে সেটা তুমি কী করে জানলে? কেউ কি এখানে এসেছিল? কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, পল্লব।

– না, এখানে কেউ আসেনি। এখানে কী করে আসবে কেউ? বাসার ঠিকানা তো তুমি কাউকেই দাওনি।

-এখানে ঠিকানা যাতে কেউ না জানে তাই আমি এই বাসাতে আসার সময় নানান ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করি। আচ্ছা বলো হান্নান সাহেবকে নিয়ে তোমার কী সমস্যা? এত চিন্তা কীসের?

– সেই একই সমস্যা। আমি আগেও বলেছি লোকটা মোটেও ভালো নয়। তুমি কিছুক্ষণ আগে ওনার সাথে ফোনে তর্কাতর্কি করছিলে সেটা আমার মোটেও ভালো লাগেনি।

পল্লব কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল, দেখো তুমি যেহেতু হান্নান সাহেবের সাথে আমার ফোনে কথা-বার্তা শুনেছ তাছাড়া আগেও একদিন উনি বাসায় এসেছিলেন। তাই ওনার সাথে আমার সম্পর্কটা কী সেটাও নিশ্চয়ই তুমি এখন জানো। বলতে লজ্জা হলেও উনিই আমার বায়োলজিক্যাল বাবা। অবশ্য ওনাকে আমি কোনদিনই বাবা বলে মনে করি না। আমার বাবা হিসেবে যাকে আমি জেনে এসেছি সেই আমার বাবা থাকবেন সারা জীবন। গতকালও অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনি ফোন করে আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। নিঃস্বার্থভাবে যে মানুষটা আমাকে ভালবাসে তার থেকে আপন আর পৃথিবীতে আর কেইবা আছে বলো। রক্তের সম্পর্ক হলেই যে সে আপন মানুষ হবে এমন কোন কথার কোনো মূল্য নেই। আর তার প্রমাণ আমার আম্মি আর তার বোনের ছেলে শাহীন তালুকদার।

– উনাকে যদি বাবা হিসেবে নাই ভাবো তাহলে উনার সাথে তুমি এই গ্যাঞ্জাম করতে কেন যাচ্ছ?

– আমার কথা তো আগে শেষ করতে দাও।

– আচ্ছা বলো।

– হান্নান সাহেব! এই লোকটার কারনে আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গেছে। ইনি আমার জীবনে আসার আগ পর্যন্ত আমার জীবনটা স্বাভাবিক ছিল। এই একটা মাত্র লোকের কারণে যাকে বাবা বলে মানি, ভালোবাসি সেই খালেক সাহেবের মত একজন ভালো মানুষের জীবন জাহান্নামে পরিণত করেছে, আমার মাকে সে মিস গাইডেড করেছে, সংসার ভেঙেছে, আমার লাইফটাও কে সে বরবাদ করে রেখেছে। তাকে এত সহজে তো ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

– কিন্তু তাই বলে এভাবে ওনার সাথে শত্রুতা বাড়িয়ে তুমি কেন নিজের পথকে দুর্গম করছ? উনার সম্পর্কে যতটুকু আমি তোমার থেকে জেনেছি এবং উনাকে দেখে যতটুকু বুঝেছি তাতে আমার মনে হয় না কোনদিনই উনি তোমাকে ছেলে হিসেবে মেনে নিচ্ছে! শুধুমাত্র তার ফায়দার জন্য তোমাকে ব্যবহার করেছে! তাছাড়া কাগজ-কলমেও তুমি ওনার সন্তান নয়! উনার থেকে কিছু পেতে হলে তোমাকে আগে উনার সাথে তোমার রিলেশনটা ক্লিয়ার করতে হবে। কিন্তু আমি চাই না তুমি সেটা করো। আমার কথা শোনো, উনি তোমাকে কিছুই দেবে না আর আমাদের কিছু চাইও না। তুমি সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে আমাদের ইনশাআল্লাহ একদিন সবই হবে। তুমি প্লিইজ উনার সাথে সব সম্পর্ক ঝেড়ে ফেলে নিজের মতো করে পথ আগাও।

– তুমি একদম চিন্তা করো না।। আমাকে কি করতে হবে আমি জানি। আচ্ছা, এসব কথা ছাড়ো। তিনদিন পরে আমি তোমার কাছে এসেছি কোথায় আমাকে এমন কিছু বলবে যা শুনে আমার মনটা ভালো হয়ে যায় তা না কি সব উল্টোপাল্টা কথাবার্তা নিয়ে বসে আছ।

– ভালো কিছু শোনাতে গেলেইতো খারাপ কিছু চিন্তা আগে চলে আসে, পল্লব। আমি আমাদের ফিউচার নিয়ে খুব শংকিত।

– শঙ্কিত হওয়ার মত কিছুই হয়নি। আপনজনের সম্পর্ক ত্যাগ করেছি এটাই শুধুমাত্র আমার কষ্ট । তাছাড়া আমি যেমন ছিলাম তেমনি আছি। তুমি যদি চাও শাহিন তালুকদারের সাথে আমার সব সম্পর্ক ত্যাগ করে চলে আসতে আমি সেটাও করব। তুমি অযথা ভয় পাবে না। আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি তোমার কোন কিছু হবে না।

– আমিতো আমাকে নিয়ে ভাবছি না পল্লব আমি তোমাকে নিয়ে ভাবছি, আমাদের সন্তানকে নিয়ে ভাবছি।

পল্লবের চোখদু’টো চকচক করে উঠল! এক লাফে শোয়া থেকে বসে পড়ল। জয়িতাকে টেনে তুলে দুই হাতে তার গ্রীবাদেশ চেপে ধরে বলল, তুমি সত্যি বলছ?

জয়ীতা ভয়ে ভয়ে আস্তে করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলল, আমি আবারো মনে হয় কনসিভ করেছি।

পল্লবের খুশি খুশি ভাবটা কিছুটা মিইয়ে গেল।

পল্লবের মুখের দিকে তাকিয়ে জয়ী ভীষণ ভয় পেল। এবারও তার বাচ্চাকে মেরে ফেলা হবে নাতো। পল্লবের বদলে যাওয়া রূপের কারণে সে পল্লবকে খবরটা বলেছে। সে নিজেও কনফার্ম হয়েছে দিন পনেরো আগে কিন্তু পল্লবকে বলতে সাহস হয়নি। আজ এখানকার একটা কমিউনিটি ক্লিনিকে যেয়ে পুরোপুরি কনফার্ম হয়ে এসেছে।

– তুমি খুশি হওনি পল্লব? দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে জয়িতা জানতে চাইল।

– খুশি হব না কেন? অবশ্যই খুশি হয়েছি! আমার কোনো আপন মানুষ আসছে। আজকাল এই পৃথিবীতে নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে হয় জানো। আমার সব আপন মানুষের থেকে আমি দূরে সরে গিয়েছি। চারপাশে এত এত মানুষ কিন্তু কেউ আমার আপন নয়। যার দিকেই তাকাই মনে হয় সেই ভালো মানুষের মুখোশ পরা। তুমি আমাকে এত বড় একটা খুশির সংবাদ দিয়েছ আমি কি খুশী না হয়ে থাকতে পারি। কিন্তু জয়ী

পল্লবের কথা শেষ হবার আগেই জয়ীতা তার মুখটা চেপে ধরে বলল, প্লীজ…. না…. এবার তুমি আমাকে এটা করতে বলবে না।

পল্লব তার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল, তুমি যা ভেবেছ আমি সেটা বলছি না.! আমি এর আগেও দুই দুইবার তোমার সাথে অন্যায় করেছি আমি আমার নিজের সন্তানকে মেরে ফেলেছি। আমি মানুষ ছিলাম না। আমি অমানুষ ছিলাম। আমি আমার আম্মির প্ররোচনায় পড়ে আর এতটা মানসিক ট্রমার মধ্যে ছিলাম যে ভাল মন্দ সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা আমার ছিল না।

— তাহলে!

– ডাক্তার কি বলেছিল তুমি ভুলে গিয়েছ? তোমার শরীরের অবস্থা একবার বিবেচনা করবে না? অন্ততপক্ষে বছরখানেকের ভেতর আর বেবি নিতে নিষেধ করেছিল।

– কিচ্ছু হবে না। দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে আরও ছয় মাস আগে। আমি এবার নিজেই ইচ্ছে করে বাচ্চা নিয়েছি। এই নিঃসঙ্গ জীবন আমার আর ভালো লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। তুমি থাকো না। আশেপাশে কোনো আপনজন নেই। সারাটাদিন আজেবাজে চিন্তায় মাথা ধরে আসে। একটা বাচ্চা থাকলে অন্ততপক্ষে ওর সাথে সময়টা কেটে যাবে। তাছাড়া আমারও বয়স ত্রিশ পেরুচ্ছে। পরে যদি আর কনসিভ না করি। অনেক ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্লিজ, না করো না। আল্লাহর উপর ভরসা করো।

– একবার মরার ঘর দেখে এসেছ। যে আসছে তাকে আর আটকাতে চাই না। তবে তোমার শরীরের কথা ভেবে খুব ভয় হচ্ছে। কালকেই তোমাকে সাভারে নিয়ে যাব। ওখানে একজন ভালো গাইনি ডাক্তার দেখিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হতে চাই। আমি তোমার কোনো বিপদ হোক এটা দেখতে পারব না, জয়ী। তুমি ছাড়া আমার আর আছেই কে বলো!

জয়ীর মনের সব মেঘ মুহূর্তেই কেটে গেল। সে পল্লবকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি পাশে থাকলে আমার কিচ্ছু হবে না। তুমি শুধু এভাবেই সবসময় আমার পাশে থেকো। দেখো আমাদের সন্তান আমাদের মাঝে সুস্থভাবেই আসবে! আমাদের এই ঘর আলোয় ঝলমলে উঠবে। আমাদেরও আর দশটা হাসবেন্ড ওয়াইফের মতো একটা সুন্দর স্বাভাবিক সংসার হবে!

পল্লবের চোখ দু’টি ভিজে উঠল এবার। সেও জয়ীকে বুকের মাঝে চেপে ধরল শক্ত করে।

সাজেদা চৌধুরী ইদানীং ঠিকঠাক অফিসে যাচ্ছে না।কিছুই ভালো লাগে না তার! এই অপমান সে কী করে হজম করবে! প্রতিপক্ষ যদি ওই শাহীন না হয়ে অন্য কেউ হতো তবে এত কষ্ট পেত না সে। তার এই রাগ সব যেয়ে চেপেছে পল্লবের ঘাড়ে। পল্লবের থেকে বেশি জয়ীর উপর। জয়ীকে যেনো হাতের কাছে পেলে সে চিবিয়ে খেতো এমন অবস্থা! পল্লবের খোঁজে দুইদিন তার বাসায় গেলেও বাসায় তালা ঝোলানো পেয়েছে। দারোয়ানের কাছে জেনেছে পল্লব এখানে থাকলেও তার স্ত্রী মানে জয়ী ও বাসা ছেড়েছে বহু আগে। সাজেদা চৌধুরী তো ভীষণ অবাক হয়েছেন এটা শুনে। এই মেয়ে তো ছেড়ে যাবার মেয়ে নয়। তাইলে গেল কোথায়? তার গ্রামেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। কিন্তু হদীস মেলেনি। জয়ীকে নিজের হাতে গলা চেপে না মারা পর্যন্ত তার শান্তি হবে না। তাই লোক লাগিয়েছেন জয়ীকে খোঁজার জন্য। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না কিছুতেই।

ব্যবসা বাণিজ্য সব বড়ছেলের হাতে সঁপে দিয়ে এখন নিজেকে সবকিছু থেকে একটু দূরে রাখার চেষ্টা করছেন। আদরের ছেলে পল্লবকে হারিয়ে, ইলেকশানে হেরে সবকিছু মিলিয়ে বিপর্যস্ত সে। মনে হচ্ছে জয়ীকে গলা চেপে মারতে পারলে তারে কষ্টগুলো কিছুটা হলেও দূর হতো।

ডাক্তারের সাথে কথা বলে পল্লব খানিকটা শাস্তি পেয়েছে জয়ীতার শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালই। তেমন কোনো জটিলতা নেই।
খুশিমনে অপেক্ষা করছে কবে তার সন্তান এই পৃথিবীতে আসবে । আগের থেকে জয়ীকে এখন বেশি করে সময় দিচ্ছে। জয়ী আর পল্লব তাদের অনাগত সন্তানের জন্য স্বপ্ন সাজানোতে বিভোর। দু’জনে মিলে নামও ঠিকঠাক করে ফেলেছে। পল্লবের খুব ইচ্ছা তার প্রথম সন্তান ছেলে হোক। আর জয়ীর ইচ্ছে একটা মেয়ের। তারা ছেলে এবং মেয়ে দু’জনেরই নাম ঠিক করে রেখেছে। ছেলে হলে জয় আর মেয়ে হলে পল্লবী।

চলবে…..

#সুখ_নীড়
#পর্ব_২৪

সেই কখন থেকে পল্লবের অপেক্ষায় আছে জয়ীতা। বাইরে প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে। কালবৈশাখীর তাণ্ডব চলছে। সামনে ঈদ। তাই ঈদের কারণে গার্মেন্টসগুলিতে প্রচণ্ড ব্যস্ততা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেও কল করে সে জেনেছে পল্লব তখনো বের হয়নি। রাত বারোটা বেজে গেছে এখনো পল্লবের অফিস থেকে বের হওয়ার সুযোগ হয়নি।

জয়ীর প্রেগন্যান্সির অষ্টম মাস চলছে। শরীরটা আগের থেকে ভীষণ ভারী-ভারী লাগে। তার উপর হাতে পায়ে পানি আসছে। গতকাল পল্লব তাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার বলেছে এ সময়টা এমনই হয়। তাই ভয় পাবার কিছু নেই। বাচ্চার ওজন, পজিশন সবকিছু ঠিকঠাক আছে। আলট্রা করে তারা আগেই জেনে গিয়েছে তাদের ঘর জুড়ে রাজপুত্র আসছে। পল্লবের মনের আশা পূরণ হচ্ছে তাই জয়ীর আর পল্লবের মাঝে সে কী খুনসুটি!
দু’জনে মিলে তাদের অনাগত সন্তান জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটা সেরে ফেলেছে। তাদের তো আপনজন কেউ নেই। যা করার তাদের নিজেদেরই করতে হবে। জয়ীর বোনেরা কেউ তার সাথে যোগাযোগ রাখুক এটা তাদের হাজবেন্ডরা খুব বেশি পছন্দ করে না। জয়ীকে নিয়ে নানান আজেবাজে কথা বলে। জয়ীও তাই তার বোনদেরকে বিপদে ফেলতে চায় না। জয়ীর সাথে খুব বেশি যোগাযোগ হয় না তাদের। একমাত্র তার মায়ের সাথেই যোগাযোগ আছে। আগামী সপ্তাহে সে আসবে মেয়ের কাছে। পল্লব নিজে যেয়ে নিয়ে আসবে।

আজকাল কিছুও ভালো লাগে না জয়ীতার। একদিকে শারিরীক সমস্যা আরেকদিকে পল্লবকে নিয়ে হাজারো চিন্তা। সেদিনও নাকি পল্লবের আম্মির সাথে পল্লবের দেখা হয়েছিল । তর্কাতর্কিতে মা ছেলে কেউ কারো চেয়ে কম যায় না। রীতিমতো মা ছেলের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। জয়ী দুশ্চিন্তা করে বলে পল্লব এসব কিছু তার সাথে শেয়ার করে না সহজে। তার বড় ভাসুর কল্লোলের সাথে এসব ব্যাপার নিয়ে ফোনে কথা কাটাকাটির সময় তাদের বাসায় থাকা কাকলি নামের মেয়েটা সব শুনে জয়ীকে জানিয়েছে। পরে পল্লবের কাছে জিজ্ঞেস করতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জয়ীতার চাপে সবকিছুই স্বীকার করে । তার আম্মি নাকি পল্লবের আচরণে এতটাই ক্ষেপে গিয়েছে যে তাকে সবার সামনে খুন করার হুমকি দিয়েছে।

এই চিন্তা তো আছেই তার উপর জুটেছে ওই হান্নান সাহেব। ওনার সাথে পেট্রোল পাম্প নিয়ে পল্লবের দর কষাকষি চলছে তো চলছেই। কেউ কাউকে এক চুল ছাড় দিতে রাজী নয়। এসবের ভবিষ্যৎ যে ভালো কিছু ইশারা করছে না এটা জয়ীতার বারবার মনে হচ্ছে। কিন্তু পল্লবকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না। এই নষ্ট লোকটার কাছে প্রতিশোধ নিতে যেয়ে শেষে নিজেরই না ক্ষতি করে বসে সেই ভয় জয়ীতার।
তাছাড়া সাজেদা চৌধুরীর মতো মায়ের পক্ষেও সবকিছু করা সম্ভব। সে নিজেই সহ্য করেছে এই জল্লাদের নৃশংসতা!

শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে এসব উল্টাপাল্টা ভাবতে ভাবতে। ছোটো মেয়েটাকে সে বলল, “আমি একটু ঘুমাচ্ছি। তোর আংকেল বেল দিলে তুই টের পেলে আবার খুলতে যাস না। তোর কান তো আবার খুব খাড়া। আমাকে ডেকে দিস। আমি খুলব। ”

দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ঘণ্টার কাঁটা একটা ছাড়িয়েছে। ভাবল শোয়ার আগে একটু খোঁজ নিয়ে দেখবে পল্লব কতদূর এলো।

বেশ কয়েকবার কল বাজলেও ফোন রিসিভ করল না। হয়ত রওয়ানা করেছে। ফোনের আওয়াজ টের পাচ্ছে না। তাছাড়া ড্রাইভ করার সময় পল্লব ফোন রিসিভ করে না খুব দরকার মনে না হলে। জয়ী গ্লাস খুলে দেখল বাইরে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে এখনো। তারা একটা একতলা বাড়িতে থাকে। তাই সহজেই রাস্তা চোখে পড়ল। ল্যাম্পপোস্টের বাতিটা জ্বলছে কিন্তু চারপাশে কেমন ভূতূড়ে লাগছে। ডালপালা ভেঙে রাস্তাঘাট একদম ব্লক। আল্লাহ জানে পল্লব আসবে কী করে৷ এর ভেতরে আজ না আসাও ভালো। ফোন ধরলে বলতে পারত আজ না হয় অফিসেই রাতটা কাটাতে। এত ঝামেলা করে না আসাটাই ভালো মনে হচ্ছে জয়ীর কাছে। কিন্তু বলবে কী করে সে তো ফোনই ধরছে না।

আধঘন্টা হলো বিছানাতে শুয়েছে ঠিকই কিন্তু তার ঘুম আর আসছে না। অস্থিরতা বেড়েই চলছে। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু পল্লবের খোঁজখবর নেই। বারবার ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখছে আর আল্লাহকে ডাকছে। এমন সময় বেল বেজে উঠল। জয়ীতার প্রাণ ভোমরা যেন খাঁচাতে ফিরে এলো। সে হুড়মুড়িয়ে খাট থেকে নামতে গিয়ে পায়ে খানিকটা ব্যথা পেল।

কে এসেছে এটা প্রতিদিন জিজ্ঞেস করলেও আজ আর ওসবের ধার ধারল না। সে দ্রুত দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে সে ভীষণ অবাক। পল্লব আসেনি।
দরজায় একটা অপরিচিত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স বাইশ তেইশ হবে হয়ত। দেখতে বেশ লম্বা চওড়া, সুন্দরী।

এই ঝড় বাদলের রাতে এই মেয়ে কোথা থেকে এলো? জয়ীর মাথা কিছুক্ষণের জন্য যেন চিন্তা করা বন্ধ করে দিয়েছে।৷ এতক্ষণে খেয়াল করল মেয়েটা আহত। তার মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছে। সে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার মতো অবস্থা। থতমত খেয়ে বলল,

– কে আপনি? কাকে চাই?

– আপু, আমি খুব বিপদে পড়েছি। এই ঝড়বৃষ্টিতে কই যাব সাহায্যের জন্য বুঝতে না পেরে আপনাদের বাসায় নক করেছি। আমার গাড়িটা হালকা এক্সিডেন্ট করেছে। গাড়ি আপনাদের বাসার সামনের রাস্তায়ই আছে। এদিকটায় গাছপালা পড়ে রাস্তা ব্লক তাই সামনে যেতে পারছি না আর। প্লিজ, একটু সাহায্য করুন। এই মুহূর্তে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।

মেয়েটার কথা শুনে জয়ীর মনে মায়া জন্মাল। সে তাকে ভেতরে আসতে দিয়ে কাকলি নামের ছোট্টো মেয়েটাকে ডাক দিলো তাকে সাহায্য করার জন্য।

মেয়েটার সাহায্যের জন্য ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসতে বলল জয়ীতা। কাকলি দ্রুত ফার্স্ট এইড বক্সটা জয়ির হাতে দিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বলল, এই নেন জয়ী খালা। আমি ঘুমাইতে গেলাম।

জয়ী নিজের হাতে তার কপালের কাছের ক্ষত পরিষ্কার করে দিতে দিতে বলল, এতরাতে আপনি এখানে কোথা থেকে?

– আমি ড্যাফোডিলে পড়ি। আজ ক্যাম্পাসে একটা প্রোগ্রাম ছিল আমার বন্ধুদের সাথে। সেটা শেষ হতে হতে রাত দশটা বেজে গিয়েছিল। ভেবেছি সাথে গাড়ি আছে বাসায় যেতে অসুবিধা হবে না। আমি মিরপুরে থাকি। কিন্তু এরপরে শুরু হলো এই ঝড় বৃষ্টি। কমবে কমবে ভেবে এতটা সময় পার করলেও যখন কমার নাম গন্ধ নেই তখন ভাবলাম বাসায় না যেয়ে বড়ো খালার বাসায় যাব। তাই বাধ্য হয়ে রওয়ানা করেছি। এখান থেকে একটু সামনে গেলেই আমার খালামনির বাসা। ওখানেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু গাড়ি যেহেতু আর সামনে যাবে না এই ওয়েদারে আমার পক্ষে একা হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। আজকের রাতটুকু এখানে থাকতে দিলে সকালের আলো ফুটতেই আমি চলে যাব। খুবই লজ্জিত আপনাকে এভাবে বিরক্ত করার জন্য। আপনি বোধহয় অসুস্থ। অথচ কী ঝামেলায় ফেলে দিলাম বলুন তো! গাড়িতেই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খুব ভয় হচ্ছিল।

মেয়েটার কথা শুনে খুব মায়া হলো জয়ীর। সে বলল, আহা, এভাবে বলবেন না। এসেছেন ভালো করেছেন। আপনি একটা মেয়ে মানুষ। আপনার ওখানে থাকাটা নিরাপদও নয়। আমি মোটেও বিরক্ত হইনি।
বিপদে যদি মানুষ মানুষকে সাহায্য না করে তাহলে কে করবে বলুন। আপনার সারা শরীর ভেজা। আমার কাপড় দেই। পরে নিন। আর আপনার কাপড় ফ্যানের নিচে মেলে দিন শুকিয়ে যাবে। ওদিকটায় ওয়াশরুম। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।

জয়ী মেয়েটার জন্য কিছু খাবার গরম করল। এর মাঝে মেয়েটা কাপড় চেঞ্জ করে বের হলো। জয়ী তাকে ডেকে খাবার খাওয়ার জন্যঅনুরোধ করলে সে জয়ীকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, সে কিছু খাবে না।

কিন্তু জয়ীর বেশ জোরাজুরিতে মেয়েটা হালকা কিছু মুখে দিয়ে সোফায় যেয়ে বসল। জয়ী তাকে বেশ কয়েকবার রুমে যেয়ে শুতে বললেও মেয়েটি রাজী হলো না। জয়ী বুঝল মেয়েটা হয়ত লজ্জা পাচ্ছে বা এখানে ইনসিকিউরড ফিল করছে তাই ঘুমাতে চাচ্ছে না।
জয়ীরও শোয়া হলো না। সে মেয়েটার সাথে এইগল্প সেই গল্প করছে। এসব করতে করতে খানিকক্ষণের জন্য পল্লবের চিন্তা মাথা থেকে বেরিয়ে গেলেও মনে পড়তেই আবার খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। দেয়ালে তাকিয়ে দেখল রাত তিনটা। জয়ী মনে করল হয়ত আজ আর পল্লব আসবে না। এতসময় তো লাগার কথা না। পল্লব আজ অফিসেই থাকবে হয়তোবা । কিন্তু যেটাই করুক তাকে অন্ততপক্ষে ফোন দিয়ে একটু জানানো দরকার ছিল কিছুটা রাগ হল পল্লবের উপর।

আবার কিছু সময় মেয়েটার সাথে টুকটাক কথা বার্তা বলতে বলতে তার মনে হলো তার আবার পল্লবকে ফোন দেওয়া উচিত। তার ফোনটা হাতে নিতেই দেখল ফোনটা কখন যেন বন্ধ হয়ে গেছে। এবার নিজের ওপর ভীষন রাগ হলো। পল্লব হয়তো এতক্ষণ ধরে তাকে কল করে পাচ্ছে না। ফোনটাতে চার্জ করার কথা সে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেয়ে ফোনটাকে চার্জে লাগাল।

টুকটাক কথা বার্তা বলতে বলতে কখন যেন সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

এভাবে খানিকক্ষণ কেটে গেল। হঠাৎ জয়ীতা কী একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠল। সে চোখ খুলে দেখল পাশের সোফায় মেয়েটা সেভাবেই বসে আছে। মেয়েটার চোখেও ঘুম ঘুম ভাব হলেও সে ঘুমায়নি। হয়ত নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে সে জেগে আছে। জয়ীতার বাইরে চোখ পড়তেই দেখল চারপাশে ফর্সা হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে পাঁচটা বাজে। তার মানে সে এখানে এই আড়াই ঘণ্টা বসে বসেই ঘুমিয়েছে।

তাকে জাগতে দেখে পাশে বসা মেয়েটা বলল, আপনি বিছানাতে যেয়ে ঘুমালেই পারতেন। এই শরীর নিয়ে এখানে বসে অযথাই এত কষ্ট করলেন।

– না, না। কষ্ট কীসের? আপনাকে বসিয়ে রেখে আমি আরাম করি কী করে! তাছাড়া আমার হাজবেন্ড এখনো ফেরেনি। সেটা নিয়েও চিন্তায় ছিলাম। তাই বিছানাতে যাওয়া হয়নি। চোখটা বন্ধ হতেই এত সময় কীভাবে পার হলো বুঝলাম না। যাই ফোনটা অন করে ওকে কল দেই। রাতটা পেরিয়ে গেলো এখনো ফেরার নাম নেই। আল্লাহ জানেন কি হয়েছে! কই আছে?

সে দ্রুত রুমে যেয়ে ফোনটা অন করে পল্লবকে ফোন দিলো। ফোনটা বেজেই চলছে। কিন্তু সেই আগের মতোই পল্লবের কোনো রেস্পন্স নেই। জয়ীর চিন্তা বেড়েই যাচ্ছে। পরে আবার ভাবল হয়ত সে ঘুমাচ্ছে তাই টের পাচ্ছে না।

ড্রয়িং রুমে ফিরতেই দেখে মেয়েটা তার নিজের জামাকাপড় পরে ফেলেছে।

জয়ী অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার! ভেজা কাপড়ই পরে ফেললেন! কোনো সমস্যা?

– আমাকে বেরুতে হবে। বাসা থেকে কল এসেছিল। আমার চিন্তায় আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই এই মুহূর্তেই যেতে হবে।

– কিন্তু বাহিরে তো এখনো কিছুটা অন্ধকার।

– না, না। যতটুকু আলো আছে তাতেই চলবে। আমি ব্যাক করব। সামনে আর যাচ্ছি না। পেছনে রাস্তা ক্লিয়ার আছে দেখে এলাম। তাছাড়া গাড়ি আপনাদের গেইটের সামনেই। অসুবিধা হবে না।

– সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ভেজা কাপড় চোপড় কেন পরতে হবে? আপনি আমার কাপড় পরে যান। পরে ওগুলো মনে হলে ফেরত দিয়েন না দিলেও সমস্যা নেই।

– না না আপু। অনেক হেল্প করেছেন। সারাজীবন মনে রাখব। ভার্সিটিতে এলে আপনাকে মাঝেমাঝে দেখে যাব। আর আপনার বাবুর জন্য দোয়া রইল। আপনাকে আমি সারাজীবন মনে রাখব, আপু।

– লজ্জা দিবেন না। আপনাকে কোনো উপকার করতে পেরেছি এটাই আমার সৌভাগ্য। মানুষ তো মানুষের জন্যই, তাই না। চলুন, আপনাকে গেইট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসি।

– না, না। এই শরীর নিয়ে তার দরকার হবে না।

– আরে চলুন তো! আর এদিকে খালার বাসায় আসলে অবশ্যই এখানে আসবেন। খুব ভালো লাগবে।

– অবশ্যই আপু।

– আপনার নামটা জানা হলো না।

– ওহ, আমার নাম ম..মেঘনা।

– ও আচ্ছা, সুন্দর নাম। ভালো থাকবেন। আর সাবধানে যাবেন। শুভকামনা রইল।

– ধন্যবাদ।

মেয়েটি চলে যাবার পরে জয়ীতা সোফায় বসে আবারো পল্লবকে কল দিচ্ছে। হঠাৎ তার মনে হলো কুশনের নীচ থেকে কেমন একটা ঝিমঝিম আওয়াজ আসছে। ফোন ভাইব্রেশনে থাকলে যেমন হয়। সে কুশন সরিয়ে দেখল ওখানেই একটা ফোন বাজছে। প্রথমে ভাবল মেঘনা নামের ওই মেয়েটা হয়ত রেখে গিয়েছে ভুল করে। ও ওই সোফাতেই বসে ছিল।

সে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে পল্লবের ফোনের মতোই মেঘনার ফোনটাও আইফোন টেন। ফোনের লক বাটনে চাপ লাগতেই স্ক্রীনে ভেসে উঠে পল্লবের ছবি।

জয়ীতার পুরো শরীর কেঁপে উঠল। যে ফোনকে সে মেঘনার ফোন ভাবছে এটা তো পল্লবেরই ফোন। কিন্তু পল্লবের ফোন এখানে এলো কোথা থেকে? সে এতক্ষণ ধরে কল দিয়ে যাচ্ছে তখন তো টের পায়নি। তাছাড়া এটা তো পল্লবের সাথেই ছিল। রাত বারোটার দিকেও সে কথা বলেছে। তাহলে এই ফোন এখানে কেন?

জয়ীতার হাত পা কাঁপছে? এসব কী হচ্ছে তার সাথে? সে স্বপ্ন দেখছে না তো! নাকি কোনো ভৌতিক কিছু ঘটছে তার সাথে?

ফোনটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার দেখছে! হঠাৎ তার শিড়দাড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোতের মতো শিরশির অনুভূতি হতে লাগল। তাহলে কী এই ফোন ওই মেয়ের কাছেই ছিল? ওহ আল্লাহ! তার মানে কী? পল্লব কোথায়? এই মেয়ে কে? পল্লবের কিছু হয়নি তো!
জয়ীতা জ্ঞান হারানোর আগে পল্লব বলে একটা চিৎকার করে ওঠে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here