বর্ষায়_ভেজা_অভ্র #পর্ব_০২

0
1519

#বর্ষায়_ভেজা_অভ্র
#পর্ব_০২
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]

মাটির দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে মনে মনে কথাগুলো বলল। হঠাৎ অনুভব হলো কেউ তার দুই কাঁধের উপর হাত রেখেছে? ভারী শীতল, কণ্ঠে বলল,‘ আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি মা। আমি এতক্ষণ শুধু তোমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছিলাম। আমি জানি তুমি কোনো অন্যায় করতে পারো না। তোমার সম্মন্ধে আমি গ্রামের অনেকের কাছে শুনেছি, তুমি অনেক মিষ্টি ও ভদ্র মেয়ে। আর একটা ভদ্র মেয়ে কখনো এমন অসভ্য মেয়েদের মতো কাজ করতে পারেনা। তোমাকে আমি ছোট থেকে দেখে আসছি। আমি বিশ্বাস করি না তুমি এমন কাজ করতে পারো। সে যে যাই বলুক। আমি তোমাকে আমার ছেলের বউ হিসাবে গ্রহণ করলাম। আর এতক্ষণ নাটক করার জন্য উপস্থিত সকলের কাছ থেকে ক্ষমাপার্থী সকলে ক্ষমা করে দিবেন। মেয়েটা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। দুইহাতে শ্যামলতা জড়িয়ে ধরে বলল,‘ আমার নিজের পরিবার আমাকে বিশ্বাস করেনি সেখানে আপনি পর হয়েও আমাকে ভুল বুঝেননি। আপনি সত্যি অনেক ভালো।’

শ্যামলতা এতক্ষণ যা করছিল সেটা শুধু মেয়েটার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছিল এত শান্ত স্বভাবের মেয়ের উপর এমন অপবাদ দিয়েছে। সকলে শুনেছে বৈকি তিনি এমনটা করলেন। এরপরও শ্যামলতা কয়েক গা বকা শুনছে তার বাবার থেকে, মেয়েটার সাথে এমন না করলেও পারতো অনেকে বললো। বিয়ের আচার নিয়ন কানুন মেনে বউকে বাড়িতে উঠানো হল।
রাত ১১টা বেজে যায় সব কিছু শেষ হতে। তার পর দু’জনকে এক রুমে দেওয়া হয়। শুরু থেকে কেউ জানতো না বিয়ে খেতে গিয়ে ছেলের বউ নিয়ে আসবে সাথে। জানলে তখন হয়তো বাসর ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখতো।তাছাড়া তাদের জানার কথাও না এটা তো একটা দূর্ঘটনা। সাদাসিধা একটা রুম। রুমের মধ্যে আসবাবপত্র সবই রয়েছে। পুরো রুমের দেওয়ালে সাদা রঙে রং করা। পর্দা গুলোর রং ও সাদা আর বাকি সব কিছুর রঙ বজায়ই কালো। বুঝাই যাচ্ছে রুমের মালিকের জীবন সাদা কালো।

হঠাৎ দরজার শব্দ কানে আসতে নড়েচড়ে বসলাম। জিভ দিয়ে ঠোঁট জোড়া হালকা ভিজিয়ে নিলাম। বুঝতে পারলাম সে এসে বিছানার উপর বসেছে। আমি আড়চোখে তার দিকে তাকালাম। রুমে হলুদ রঙের একটা ড্রিমলাইট আপাতত জ্বলছে তাতেই বেশ আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। তিনি অর্থাৎ আমার স্বামী রিসার্ভ ক্ষীনকন্ঠে বলল,‘ আমাদের মধ্যে আগে থেকে পরিচিত কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আমরা দুজন দু’জনার কদাপি অপরিচিত। আমি আজ এই রাতে তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না। আমি চাই আমাদের দু’জনের মধ্যে আগে ভালো বন্ধুত্ব হোক। তারপর অন্য সম্পর্কে পা বাড়ানো যাবে। তুমি আমাকে বুঝো, আমি তোমাকে বুঝবো বন্ধুর মতো চলবো এটাই চাচ্ছি। তাই এখন তুমি নিশ্চিত থাকো, তুমি অনুমতি না দিলে আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না। অনেক ক্লান্ত তুমি তাই শুয়ে পরো। আমি সোফায় ঘুমিয়ে পরবো। ’
বলে সে চলে যায় বারান্দায়, আমিও দ্বিতীয় বারের মতো কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই শুয়ে পরলাম। কিন্তু ঘুম আসছে না। বুঝতে পারছি সেও এখনো রুমে আসেনি। আমার কি ডাকতে যাওয়া উচিত? না থাক কখন কি ভেবে নেয় তার ঠিক নেই। ভেবে আর গেলাম না সেদিকে। এমতাবস্থায় কখন যে চোখ লেগে আসলো আর ঘুমিয়ে গেছি জানা নেই।

সকালে ঘুম ভাঙলো শাশুড়ী মার ডাকাডাকিতে, আমি সত্যিই ধন্য আল্লাহর কাছে হাজারও শুকরিয়া তিনি আমাকে এত ভালো একজন শাশুড়ী দিয়েছেন। সারাদিন তাদের সাথে সময় ভালোই কাটতে লাগল কিন্তু রাত সে যে ভারী ভয়ংকর রূপ নিয়ে তেড়ে আসে। সব কিছু খুব খারাপ ভাবে মনে করিয়ে দেয়। বুকের বা পাশে বড্ড জ্বালাতন করে। আজ তিন মাস পূর্ণ হলো আমাদের বিয়ের আর এই পর্যন্ত আমি নিরবে এই ব্যথাটা সহ্য করে আসছি। কোনো ভাবেই এই যন্ত্রণা কমছে না।
শশুড় অসুস্থ তার সেবা যত্ন শাশুড়ীই করেন। আমিও সুযোগ পেলে করি। বাকি সময় সংসারের অনান্য কাজ করি। এভাবে কাটতে লাগে আমার বৈবাহিক সংসার ও সম্পর্ক। সত্য কথা বলতে রিসার্ভ তার মুখের কথা রেখেছে আজ পর্যন্ত সে আমাকে স্পর্শ করেনি। এমন কত সময় এসেছে আমি শাড়ি পড়ছি সে রুমে চলে আসছে। আমি বাথরুম থেকে শুধু টাওয়াল পেঁচিয়ে রুম থেকে কাপড় নিতে আসছি তখন সে ভুলে রুমে ঢুকে পরেছে। তখন তিনি আমার দিকে তাকানো তো দূরের কথা উল্টো মাথা নিচু করে ‘স্যরি’ বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। সত্যি বলতে রিসার্ভ সে তার মধ্যেই খুব ভালো একজন মানুষ।

তিনমাস পর—

দুপুরের পর বিকেলের দিকে শাশুড়ী মা আমাকে ডেকে বলল,‘ কাল সকালে নাকি তোমার নানা শশুর, নানী শাশুড়ী, ও ছোট খালা শাশুড়ী ও মামা শশুড় আসবে তুমি বরং মা সকাল সকাল রান্নাঘর টুকু সামলে নিও। ’ বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? মানে হচ্ছে, শ্যামলতার মা-বাবা ভাই ও বোন এ বাড়িতে বেড়াতে আসবে। আমিও মাথা নাড়িয়ে সাই দিলাম। কিছুক্ষণ তার সাথে গল্প করে রুমে চলে আসলাম আর তখনই আমাতে ভর করে একাকীত্ব।

সন্ধ্যা হওয়ার কিয়ৎক্ষণ উর্ধে, বারান্দার গ্রিল দুইহাতে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির, অতীতের সেই মর্মান্তিক ঘটনা স্মৃতিসৌধ করতে দু-চোখ ভরে আসল। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গাল গড়িয়ে পরা জল গুলো মুছে নিতে লাগলাম। পেছন থেকে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,‘এখনও সেই তিন মাস আগের অতীত নিয়ে পরে আছো? কখনো কি অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না?’

পেছনে না তাকিয়ে সুক্ষ্ম কণ্ঠে বললাম,‘ আমার অতীত এতটাই মর্মান্তিক! যা আমি চাইলেও তা আমার পিছু ছাড়ে না। আমার অতীতের কিছু পান্না এতটাই তীক্ষ্ণ যা আমাকে প্রতিনিধিত্ব বিষন্নতায় ডুবিয়ে দেয়। আমি যে কষ্ট দুঃখ সকলের সামনে থেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করি সে সীমাহীন কষ্ট দুঃখ আমার একাকীত্বের সময় আমার উপর ঝেঁপে বসে। আমি চাইনা মনে করতে তবুও কেন ভুলতে পারি না? বারবার কেনো মনে পরে? কেনো পিছু ছাড়ে না আমার? কেনো ভুলতে পারছি না সেসব স্মৃতিগুলো? যা আমার ভেতর টাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে এক প্রহরের জন্যও ভুলতে পারছি না আমি! কিন্তু কেনো?’

বলেই সশব্দে কান্না শুরু করে দেই। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি ঠাই সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়। যাওয়ার আগে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,‘ যতদিন তুমি দূর্বল ততদিন তোমার অতীতের কোনো কিছুই তোমার পিছু ছাড়বে না। শক্ত হও তুমি তখন দেখবে আপনা আপনি সব পিছনে ছুটে যাবে। সেসব কিছু চিন্তা বন্ধ করে দাও যে সব স্মৃতি গুলো তোমাকে কষ্ট দেয়। নির্জনে চোখের জল ফেলতে বাঁধ্য করে। আমি বলবো না, সব ভুলে যাও! কারণ, ভুলে যাও বাক্যটি মুখে বলা খুবই সহজ কিন্তু ভুলা খুব কঠিন। এটা আমি বুঝি। তাই শুধু বলবো, চেষ্টা করো। চেষ্টা করতে কোনো দ্বিধা নেই। তুমি পারবে নিশ্চয়ই পারবে।’
নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছে, রিসার্ভের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলেই ফেললাম,‘ আপনি আমাকে ভালোবাসেন? যদি বাসেন তাহলে প্লিজ এখন আমাকে একটু জড়িয়ে ধরেন।আমি আপনার আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে যেতে যাই। আমি পূর্ণ রূপে আপনার বউ হতে চাই। আমি আজ আমার অধিকার চাচ্ছি। ’

রিসার্ভ আমার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরল। দু’হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে আলতো চুমু খেয়ে বলল,‘ নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। কিন্তু কখনো বলার সাহস হয়নি। আমিও চাই তোমাকে খুব চাই।’

বলে রিসার্ভ আমাকে কোলে তুলে নিলেন। রুমের মধ্যে ঢুকে আমাকে বিছানার উপর বসিয়ে দরজা বন্ধ করলেন আর রুমের লাইট নিভিয়ে দিলেন। আমার সামনে এসে আমার পাশে বিছানায় বসলো। রিসার্ভ আমার গায়ে স্পর্শ করতেই এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো আমার শরীরে। রিসার্ভ আমার ঠোঁট জোড়া তার ঠোঁট জোড়ার সাথে এক করে দিলেন। তারপর (আর কমু না আমার শরম করে)

ইতিমধ্যে রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে। দু’জনে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে আসি। শাশুড়ী খেতে বসলেন। আমি তার প্লেটে খাবার বেড়ে দিলাম। আঁড়চোখে লক্ষ্য করলাম তিনি আমার দিকে পিটপিট করে তাকাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে। আমি অবুঝের মতো তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ রিসার্ভ’র দিকে চোখ পড়তেই সে আমার চুলের দিকে ইশারা করল। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম। আমার মাথা থেকে কাপড়টা পরে গেছে আর চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। অন্য দিকে রিসার্ভ’র ও চুল ভেজা। হয়তো শাশুড়ী মা কিছু আন্দাজ করতে পেরেছেন তাই। ওমন ভাবে হাসছেন ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম আমি। খাবার শেষে এ্যঠো থালাবাসন আমি আর মনি ধু্য়ে রাখলাম। মনি এ বাড়িতে কাজ করে আজ সাত বছর ধরে৷ সব কিছু গুছিয়ে পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখলাম। বাড়ির সকল লাইট নিভিয়ে একবার শাশুড়ীর রুমে চলে গেলাম। দেখার জন্য তিনি কি করছেন, তিনি বসে বসে মনোযোগ সহকারে কিছু দেখছেন। বিছানায় লক্ষ্য করলাম শশুড় ঘুমাচ্ছে।
আমি মার থেকে বিদায় নিয়ে রুমে চলে আসলাম।

রুমে আসতেই অবাক হলাম শুধু অবাক নয় চরম লেভেলের অবাক। দরজার পেছনেই লুকিয়ে ছিল রিসার্ভ। আমি আসতেই সে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। রিসার্ভ আমাকে আবারও পাঁজা কোলে তুলে নেয়। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,‘ আমার না আবারও ইয়ে করতে ইচ্ছে করছে। ইয়ে মানে, আদর! ’

আমি লজ্জায় দুইহাত দিয়ে মুখ ঢেকে দিলাম। লজ্জামাখা কণ্ঠে বললাম,‘যা দুষ্টু!’ সে আস্তে করে আমাকে বিছানার উপর শুইয়ে দিলো। ড্রিমলাইটের আবছা আলোয় দেয়ালে দুটি ছায়ামূর্তির ছায়া দুটি একত্রিত হলো। বৈধ সম্পর্কে সব কিছুই বৈধ হালাল।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here