বর্ষায়_ভেজা_অভ্র #পর্ব_০৫

0
1374

#বর্ষায়_ভেজা_অভ্র
#পর্ব_০৫
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা

রাত প্রায় একটা বাজতে চলল ঠিক সেই সময়ে ঠাসস করে হল রুমের মধ্যে কিছু একটা পরার শব্দ হল। কিচেন থেকে সে শব্দ শুনে ভয়তে উচ্চ স্বরে চিৎকার দিয়ে উঠল বর্ষা।

বাড়ি সদ্য সকলে বিছানা থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে বের হয়৷ হল রুমের মধ্যখানটায় এসে দুই কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা বার বার চিৎকার করে বলছে,‘কে কোথায় আছো তারাতাড়ি আসো গো বাড়িতে চোর ঢুকছে।’

বর্তমানে বাংলাদেশের যা অবস্থা কারেন্ট যাওয়ারও কোনো ঠিক নেই আসারও নাম গন্ধ নেই। একবার গেলে আর আসে না। এক ঘন্টা ধরে কারেন্ট নেই। গরমে কেউ ঘুমাতে পারেনি বিছানার উপর শুয়ে বসে ছিল এমতাবস্থায় বর্ষার কন্ঠস্বর শুনে সকলে আঁতকে উঠে। চারপাশে অন্ধকার বাড়ির উত্তর দিকের জানালা খোলা তাকায় জ্যোৎস্না মাখা চাঁদের কিঞ্চিত আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেখা গেলে কেউ উত্তরের জানালার সামনে দিয়ে দৌঁড়ে পালালো। তা দেখে বর্ষা আরও জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,‘ওই তো চোর পালাচ্ছে।’

বাকিরাও ছায়ামূর্তি টাকে দেখে চোর চোর বলে চেঁচাতে চেঁচাতে একে একে সকলে চোরের পেছনে ছুটতে লাগল। একজন আরেকজনকে বলছে,‘ওই তুই ওইদিক দিয়া যাইয়া ধোর আমি এইদিক দিয়া যাই।’

এদিকে মহিলারা একে একে রান্না ঘর থেকে যে যা পাচ্ছে চোরকে মারার জন্য নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে। চোর বাবুও কম নয় সে পুরো বাড়ি দৌঁড়াচ্ছে সেই সাথে বাড়ির সকলকে তার পেছনে ছুটাচ্ছে।

‘আমি বরং গিয়া ঝাঁড়ু নিয়া আসি সুযোগ পাইলে চোর বেটারে আজকা চুরি করার শখ মিটাইয়া দিমু। পরের বার চুরি করতে যাওয়ার আগে একশো বার ভাববো। হো হো যাই, হায় মেরি ঝাঁড়ু আমি আইতাছি।’

বলে বর্ষা দৌঁড়ে গিয়ে রান্না ঘর থেকে ঝাঁড়ু নিয়ে আসল।তারপর সকলের পেছন পেছন ঝাঁড়ু নিয়ে চোরের পেছনে দৌঁড় দেয়।

বর্ষা: দাঁড়া চোরের বাচ্চা চোর। আমার ঝাঁড়ু দিয়া তোর পিঠ আজকা মালিশ করমু। তোর চুরি করন হিগাইতাছি।

সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে উঠতে গিয়েও চোর বাবু বর্ষার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরল। পেছনে ঘুরে একনজর তাকিয়ে ঝাঁড়ু দেখে আবারও দিলো উড়াধুড়া দৌঁড় পেছন পেছন বর্ষাও দিলো দৌঁড়। বাড়ির বড়রা সিঁড়িতে বসতে বসতে বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘এখন তুই একটু দৌঁড়া আমরা একটু জিরাই!

বর্ষা দৌঁড়াচ্ছে তখন হঠাৎ একটা ধুপাস করে কারো পরে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেলো। অন্ধকারে চোখ বড়বড় করে তাকালে কোনো রকম দেখতে পায় চোর বাবু পা পিছলে ধুপাস করে পরে গেছে।
বর্ষা ঝাঁড়ু হাতে নিয়ে চোরের দিকে তাকিয়ে সশব্দে খিলখিল করে হাসতে লাগল। তখন অন্যরা বলল,‘ কিরে হাসতাছিস কেন?’
বর্ষা চেঁচিয়ে বলল,‘ আরে আর বইলো না চোর বাবু ধুপাস কইরা পিছলা খাইয়া পইরা চেটকাই গেছে।’ বলেই আবারও পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগল।

নিচ থেকে উচ্চস্বরে নূর ইসলাম বলল,‘হাইসো না বুবু চোরটারে ধরো।’
বর্ষা হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল,‘হ্যাঁ তাই তো! আমাকে চোর ধরতে হবে। ঝাঁড়ু দিয়া পিটাইয়া ইতিহাস গড়তে হবে। ওই চোর তুই ওখানে বইসা থাক আমি আসতাছি।’

বলে ঝাঁড়ু হাতে নিয়ে বর্ষা দৌঁড়াতে নিলে এবার সে নিজেই পা পিছলে ঠাসসসস করে পরে যায়। উচ্চস্বরে চেচিয়ে উঠে,‘আব্বা গো আমি পইরা গেছি গো। আমার মাঝাডা গেলো গো, ও আল্লাহ গো।’

চোর বাবু বর্ষার আর্তনাদ শুনে মিটমিট করে হাসতে লাগে। একহাত কোমড়ে রাখল পাশে দেয়াল আছে ভেবে অন্য হাত বাড়িয়ে উঠতে যায় কিন্তু সেখানে দেয়াল না থাকায়, আগের ন্যায় চোর বাবু ধুপ করে পরে যায়।

নাহিদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। কাব্য নাহিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলো।
নাহিদ কাব্যর ওর দিকে হেঁটে আসা দেখে বুঝতে পারে তাই সে আগের জায়গা থেকে একটু সরে দাঁড়ায়। কাব্য সেটা খেয়াল করেনি তাই নাহিদের গায়ের সাথে হেলান দিয়ে কাঁধের উপর মাথা রাখতে গেলেই ধপপ করে মেঝেতে পরে যায়।

আর সেটা দেখে অপূর্ব অট্টহাসি দেয় হাসতে হাসতে মাটিতে বসে গোড়াগুড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়।
অপূর্বর হাসি দেখে বর্ষা ও বাকিরাও হাসতে হাসতে মেঝেতে বসে পরল। এদিকে চোর বাবু কোমড়ে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ায় আর বিড়বিড় করে বলল,‘মানে মানে এখান থেকে কেটে পরাই শ্রেয়।’

কিয়ৎক্ষণ পর, হাসি থামিয়ে সাগর খান বললেন,‘ওই চোর তোর বাড়ি কোই? এখানে কি করতে আসছিস?’

বর্ষা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,‘উফফ আব্বু এটা কেমন প্রশ্ন? চোর যখন তখন চুরি করতেই আসছে।’
‘সাগর সরু কন্ঠে বলল, হ্যাঁ তাইতো!’
‘আব্বু তুমি চুপ থাকো আমি জিগাই কোনতে আইছে? ওই চোর তোর বাড়ি কোই? কি করিস তুই?’ বর্ষা বলল।
পেছন থেকে অপূর্ব বলল,‘এটা আবার কেমন প্রশ্ন বর্ষ্যু? চোর যখন তখন চুরিই করে।’
বর্ষা রাগী গলায় চেঁচিয়ে উঠল,‘তোরে কইতে কইছি?’
পেছন থেকে পুতুল বলল,‘তুই’ই না একটু আগে মামুকে জ্ঞান দিচ্ছিলি। এখন যখন নিজের বেলায় হলো তখন ক্ষেপে যাচ্ছিস? নট ফেয়ার!’
বর্ষা রাগে কটমট করছে ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে কিয়ৎক্ষণ অন্ধকারেই ওদের দিকে তাকিয়ে রইল পরক্ষণে কর্কশকন্ঠে বলল,‘ওই চোর তুই কথা কস না কেন?’

বলেই অন্ধকারে লাণ্থি মারল, ঠিক সেই সময়ে হুট করে কারেন্ট চলে আসল। বর্ষা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,‘ এই চোর বেটায় আবার পলাইছে?’

সকলে উঠে দাঁড়ালো সামনে তাকিয়ে দেখল একটা ফুলদানি পরে আছে। মুন্নি সামনে এসে বলল,‘চোরটা বোধ হয় ওইদিকেই গেছে চল সবাই ওইদিকে যাই।’
বলতে বলতে সামনে যেতেই এবার মুন্নি ধপাস করে ফ্লোরে বসে যায়। অস্ফুটস্বরে চেচিয়ে উঠে,‘ আব্বা গো!’
পেছনে দাঁড়ানো তার ভাই বোনের দল সকলে একসাথে হাসতে হাসতে একে অপরের উপর হেলে পরছে। নাহিদ বলল,‘ ঠিকই আছে, সবাই পরছে! তুই একাই বাদ ছিলি।’বলে সবাই আগের ন্যায় হাসতে লাগল।

নূর ইসলাম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,‘তোমরা সবাই যার যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরো। আমরা বাকিরা বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখছি চোরটা কোথায় গেলো?’

সকলে একসাথে আচ্ছা বলে যার যার রুমে চলে যায়। জয়েন্ট ফ্যামিলির এই একটাই আনন্দ। হাসি খুশি কষ্ট সব সময় সবাই একসাথে থাকে।

পরদিন সকালে!

বর্ষা ও বাদ বাকি সকলে ডাইনিং টেবিলে এসে হাজির হয়৷ যেহেতু এ বাড়ির নিয়ম সকলের এক সাথে তিন বেলা খাবার খাওয়ার। সেহেতু এখন পর্যন্ত অভ্র আসেনি তাই কেউই খাওয়া শুরু করেনি। বর্ষা অভ্রকে না দেখে বলল,‘ তোমরা বসো। আমি গিয়ে অভ্রকে ডেকে আন, না মানে অভ্র ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আনছি।’ বলে সকলের সামনে থেকে দৌঁড়ে পালায়।
সিঁড়ি দিয়ে গান গাইতে গাইতে উপরে অভ্রর রুমের দিকে যায় বর্ষা। দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে যেতেই দেখল অভ্র উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। তা দেখে বর্ষা বলল,‘ জানো তো ভাইয়া কাল রাতে আমাদের বাড়িতে একটা চোর ঢুকছিল। বেটায় সত্যিই একটা লেংটি চোর। আর নয়তো কেউ ওভাবে ছুটাছুটি করে?’ বলেই ফিক করে হেসে উঠল। তখনই দেখল,_____

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here