অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ১০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
আইজা ফোন হাতে নিয়ে কেটে দিলো। সাইদ অবাক হয়, “এ কি করলে?”
“আমি ওর সাথে কথা বলতে পারবো না।”
“কেন?”
“কারণ…কারণ নেই। এমনিতেই। তুমি কথা বলো।” আইজাকে ভীষণ অস্থির দেখাল।
সাইদ এবার নিজেই ফোন দিলো ইনারাকে।
“হ্যালো ইনারা। আমি সাইদ বলছি।”
“সাইদ ভাই আপনি হঠাৎ করে এতবছর পর কি করে আমার কথা মনে করলেন? কোনো জরুরি কাজ আছে বুঝি?”
সাইদও ইনারার সাথে কথা বলতে লজ্জিত বোধ করছিল, “না মানে কাজ ছিলো কিন্তু তোমার জন্যও এখানে লাভ আছে।”
“তাই? তাহলে শুনি কি লাভ?”
“আনন্দ রহমানের পরিচালিত নতুন সিনেমা ‘রহস্য ঘর’ এর কথা নিশ্চয়ই শুনেছ।”
“না, শুনি না।”
ইনারার এমন সরাসরি উওরে সাইদ আবারও অস্বস্তিতে পরে গেল। সে বলল, “অনেক বড় প্রজেক্ট। তারা তোমাকে কাস্ট করতে চায়। ভাগ্য আবার তোমাকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসার সুযোগ দিয়েছে।”
ইনারা শব্দ করে হাসে এবার, “তাহলে এতবছর পর আপনি আমাকে এ কাজের জন্য কল করেছেন? অফারটা খারাপ না কিন্তু আপনার পরিবর্তে কি চাই তা বলুন।”
“তুমি…. তুমি…” সাইদের বলতে যেয়ে শব্দগুলো বারবার গলায় আটকে আসছিলো। সে আইজার দিকে একপলক তাকাল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটানা বলল, “পরিবর্তে আমি চাই তুমি আইজার পক্ষ হয়ে মিডিয়াতে জানাও যে আইজার সাথে তোমার কোনো সমস্যা নেই। আইজার সাথে একসময় তোমার ভালো সম্পর্ক থাকলেও এরপর ছুটে যায়। আর রোজাউরের ভিডিওর সাথে আইজার কোনো লেনদেন নেই। আর তোমারও ওর সাথে কোনো সমস্যা নেই।”
“ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! একসাথে এত মিথ্যা কথা? আমি তো মনে সারাজীবনেও এত মিথ্যা বলিনি যতটা আপনি এক নিশ্বাসে বলে ফেললেন।”
“ইনারা তুমি করবে কি-না তা বলো।”
“করতে পারি…আবার না-ও পারি। ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করা যায় যদি আইজা এসে আমার কাছে ভিক্ষা চায়।”
”ইনারা!” আঁতকে উঠল সাইদ, “এসব কোন ধরনের কথা?”
সাইদের এমন উঁচু স্বরে কথা বলা শুনে আইজা ও তার মা একে অপরের দিকে তাকাল। আইজা সাইদকে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে, “কী বলেছে?”
সাইদ তা বলে না। উঠে সোফা থেকে একটু দূরে যায়। আবার বলে, “তুমি এত বেয়াদব হয়ে গেছ কয়েকবছরে!”
“ওহ সাট আপ। আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলার?” ইনারাও একইসুরে উওর দেয়। এবার সাইদ হতভম্ব হয়ে যায়। ইনারা তার সাথে এভাবে কথা বলতে পারে সে কল্পনাও করে নি।
“তুমি আসলেই ইনারা তো।”
“এসব কোন গর্দভ টাইপের প্রশ্ন? তো আপনার কী মনে হয়? আপনি কার সাথে এতক্ষণ ধরে কথা বলছেন?”
“তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ!”
“দেখুন আপনি সুরভির ভাই হয়ে কথা বললে আমি আপনাকে সম্মান দিতাম। কিন্তু আইজার উকিল হয়ে কথা বলতে আসলে যদি নিজেকে সম্মানের যোগ্য মনে করে তাহলে সত্যি আপনার মতো অবুঝ আমি কখনো দেখি নি। আইজা আমার সাথে যা করেছে তা জানার পর আপনি কীভাবে ভাবতে পারেন আপনি আমাকে এত সহজে একটা কাজ করতে বলবেন আর আমি তা করে দিব? ওকে বলেন আমার কাছে এসে যেন ভিক্ষা চায়। তারপর আমি চিন্তা করবো।”
“আচ্ছা তুমি আমার কথা তো….”
ইনারা আর কোন কথাই শোনে না। সে ফোন কেটে দেয়।
আইজা দ্রুত উঠে এসে জিজ্ঞেস করে, “কি বলল ও?”
সাইদ প্রথমে চুপ রইল। তারপর আমতা-আমতা করে বলল, “ও বলছিলো ওর কাছে অনুরোধ করতে হবে তোমার। তারপর ও ভাববে।”
“এটা বলায় তুমি এভাবে আঁতকে উঠলে? তুমি তো সহজে রাগার মানুষ নও।”
“ঠিক তা না। ও…ও বলেছিলো ওর কাছে ভিক্ষা চাইতে।”
কথাটা শুনতেই গা জ্বলে উঠে আইজার। সে রাগে চেঁচিয়ে উঠে, “কী বলেছে ও? ওই সামান্য একটা মেয়ের সামনে ভিক্ষা চাইব সাহায্যের। অসম্ভব।”
আইজার মা দ্রুত তার পাশে এসে দাঁড়ায়, “কীসের অসম্ভব? তোর ভবিষ্যতের জন্য হইলে সমস্যা কী?”
“মা তুমি কী বলছ এসব? আমি ওর কাছে নিজের সম্মান হারিয়ে সাহায্য চাইবো।”
“আহা! সমস্যা কি? কে দেখবে? কেউ না। কিন্তু ওকে সিনেমায় নেওয়ার পর যখন তুই ওর সম্মান সবার কাছে ডুবাবি তখন তো সবাই দেখবে।”
“মানে?”
“মানে ওকে আগে তোর সাংবাদিকদের সামনে তোর পক্ষে কথা বলতে দে। তারপর তো সে কথা ফিরাতে পারবো না ও। ফিরালে ওর নামই বদনাম হইবো। আর সিনেমা শুরু হইলে ওকে সিনেমায় ওর অভিনয় প্রদর্শন এর সুযোগ তো দিবিই না, উল্টো এমন পরিস্থিতি তৈরি করবি যেন সবার সামনে ওর সম্মান নষ্ট হয়। তোর জন্য মনে ভয় ঢোকাবি। তাইলেই শেষ।”
“ঠিক বলছ মা। আচ্ছা আমি রাজি।”
“তুই বস। কিছু খাবার জন্য আনি। গতকাল থেকে কিছু খাস নি তুই।”
আইজা মাথা নাড়ায়। তার মা যাবার পর সাইদ কঠিন গলায় তাকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আসলে তোমার মা’য়ের কথা মতো কাজ করবে? দেখ আইজা, আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে অনেককিছু সহ্য করছি। আমার আদরের ছোট বোনও তোমার জন্য আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।”
“তুমি আমাকে এই চিনো? আমি এসব করতে পারি?”
সাইদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে, “মাঝেমধ্যে তোমার কথা শুনে আসলে কেমন অচেনা লাগে তোমায়। আমি ইনারাকে কল দিচ্ছি দেখা করার জন্য।”
সাইদ বারবার ইনারাকে কল দিলো, সে ধরল না। ধরলেও কথা ঘুরাচ্ছিল বারবার। বহু কষ্টে সে দুইদিন পর দেখা করতে রাজি হয়। একটি রেস্টুরেন্ট কিছু সময়ের জন্য বুক করেছে আইজা। কারও সামনে সে ইনারার সাথে কথা বলতে পারে না। তার কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারে না। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। প্রায় একঘন্টা হয়ে এলো ইনারার খবর নেই। আইজা রাগে কটমট করছে। সে সাইদকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ও? আমি কী চলে যাব না’কি? এত অপেক্ষা আমি জীবনে কারও করি নি।”
“ওকে কল দিয়েছিলাম বলল আসছে। এতক্ষণে তো আসার কথা।”
“আসার কথা তো এক ঘন্টা আগে।”
“উফফ আপু এত ধৈর্য্য হারা হলে হয়? এখনই ধৈর্য্যহারা হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কি করবেন?” ইনারার কন্ঠ শুনতে পেয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় আইজা। তার কনফিডেন্স মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়। তার কেমন ভয় লাগতে শুরু করল। সে দেখল সাইদ তার পিছনের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে উঠে দাঁড়াল। এই দৃশ্য দেখে আইজার দৃষ্টি যেয়ে আটকাল তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বডিগার্ডদের উপর। বডিগার্ডদের চোখদুটো বড় এবং গোল হয়ে আছে। সে অবাক হয়। সাথে সাথে পিছনে ফিরে তাকায়। মুহূর্তে তার ভ্রু কপালে উঠে যায়। বিস্ময়ের সীমা থাকে না তার। সে নিজ অজান্তেই উঠে দাঁড়ায়।
তার সামনে দিয়ে ইনারা হেঁটে আসছে। কিন্তু এই ইনারাকে যেন সে চিনেই না। এই যেন কোন ভিন্ন ইনারা। লাল রঙের পোশাক পরে এসেছে সে। সাথে সোনালী রং এর জুয়েলারি। সাজগোজ করা। তার সৌন্দর্য যেন চরম পর্যায়ে। তার মনে হতো সে তার সাইয়ারা মামীর থেকে সুন্দর কোনো নারী আর দেখে নি। কিন্তু আজ ইনারাকে দেখে তার ভুল মনে হতে শুরু করল। সাথে তার হৃদয়ের ঈর্ষাটাও অন্যরূপ নিলো। তার সৌন্দর্যের প্রশংসা মনে আসায় নিজের উপরই রাগ উঠে তার।
সে সাইদের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় একপলক। তারপর তার বডিগার্ডদের বলে, “এখানে কি আমাদের তাকিয়ে থাকার জন্য এনেছি? রুমের অন্য কোনায় যেয়ে দাঁড়াও। প্রয়োজন হলে ডাকবো।”
বডিগার্ডরা জলদি করে সেখান থেকে সরে যায়। সাইদও এসে দাঁড়ায় আইজার পাশে।
ইনারা সোজা এসে বসে পড়ে সামনের চেয়ারে। পায়ের উপর পা তুলে। এ দৃশ্য দেখে আইজা যেমন হতবাক হয়ে তার থেকেও বেশি রাগ উঠে তার। তার সামনে এভাবে পা’য়ের উপর পা তুলে কীভাবে বসতে পারে ইনারা?
আবার বসেই আদেশের সুরে বলে, “আমার বেশি সময় নেই। যা বলার তাড়াতাড়ি বলবেন। ঘড়ির কাঁটায় দশমিনিট দিলাম।”
আইজা কঠিন গলায় বলে, “এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে আমাদের সময় দিচ্ছো?”
“এখন পাঁচ মিনিট। যার কাজ তারই ঠেকা। জলদি বলুন, আপনারা আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন কিন্তু আমার ঘড়ির কাঁটা আপনাদের জন্য অপেক্ষা করবে না।”
আইজা এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো, “ইনারা আমাকে এটিটিউড দেখাতে আসবি না।”
হাসে ইনারা। পরক্ষণেই আইজার দিকে তাকায় কঠিন দৃষ্টিতে, “চাইলে আমি অনেক কিছুই দেখাতে পারি। কিন্তু নিশ্চয়ই তুমি দেখতে চাইবে না।”
ইনারার দৃষ্টিতে মুহূর্তেই চুপসে যায় আইজা। এক ঢোক গিলে। মুহূর্তে তার সকল রাগ যেন হাওয়া হয়ে গেল। ইনারার দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছিল সে এখনই হৃদয় থেকে প্রাণ টেনে নিয়ে আসবে তার। সে ঘাবড়ে যায়।
“আর চার মিনিট বাকি।” ইনারা মনে করাল। সাইদ তাকে ইশারায় বলল ইনারার সাথে কথা বলতে। আইজা বলে, “আ…আমার তোর কাছে সাহায্য লাগবে।”
ইনারা তার আঙ্গুলে খুলে থাকা আংটিটা মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলে, “উপস ভুলে পরে গেছে।”
সাইদ আংটিটা উঠাতে নিলেই ইনারা বলে উঠে, “আরে সাইদ ভাই কি করছেন আপনি উঠাচ্ছেন কেন? শত হোক আপনি সুরভির ভাই। আপনাকে নিজের পা’য়ের কাছে হাত রাখতে দেই কীভাবে?” সাইদ উঠে দাঁড়াতেই সে বলে, “আর সাহায্য তো আপনার লাগবে না। যার সাহায্য লাগবে তার উঠিয়ে দেওয়া উচিত তাই না?”
আইজা রাগে কটমট করতে থাকলো। কিন্তু কিছু বললো না। যেয়ে ইনারার আংটিটা উঠাতে নিচে ইনারার পায়ের কাছে ঝুঁকতে ইনারা বলে উঠে, “এইত্তো এবার বলো তো কী যেন বলছিলে তুমি?”
আইজা চমকে তাকায় ইনারার দিকে।
ইনারা আবার বলে, “জলদি বলো সময় খুব কম আমার কাছে।”
“অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে ইনু।”
“সাহায্য না লাগলে অকারণে আমার সময় নষ্ট করলে কেন? যা বলছি তা করো নাহয় আমি চললাম।”
ইনারা উঠে যেতে নেওয়ার পূর্বেই আইজা বলে, “ওয়েট।” সে সময় নেয়। চোখ নামিয়ে বলে, “আমার তোর কাছে সাহায্য দরকার। প্লি…প্লিজ।”
ইনারা থেমে যায়। আইজার দিকে তাকাতেই তার মনে পড়ে যায় এভাবেই তিন বছর পূর্বে সে ও প্রিয় তার পা’য়ের কাছে বসে অনুরোধ করছিল। কিন্তু আইজা একবারও তাদের উপর রহম করে নি। ভাবতেই চোখ দুটো ভিজে এলো তার। সে সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিলো। কঠিন গলায় বলল, “এখন আমার কাজের কথা বলা হোক। অবশ্য আপনাদের কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমিই বলছি। প্রথমে আমি ফিল্মের কাহিনী শুনবো। যদি ভালো লাগে তাহলে আপনাদের সৌভাগ্য। না ভালো লাগলে আপনাদের দুর্ভাগ্য। আমার যদি কোন কাজ না হয় তাহলে আমি কোন স্টেটমেন্ট দিতে পারবো না।”
আইজা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পরে, “তাহলে আমাকে দিয়ে কেন এভাবে অনুরোধ করালি?”
ইনারাও উঠে দাঁড়ায়। আইজার চোখে চোখ রেখে বলে, “আপনাকে নিজের জায়গা দেখিয়েছি।”
“তোকে…” আইজা রাগে এগিয়ে যেতেই সাইদ তার হাত ধরে নিলো। ইনারা তার কথায় আরও যোগ করে, “ওহ ভালো কথা, আমার যদি স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয় এবং আমি সিনেমাতে কাজ করতে রাজি হই তাহলে আমি যেভাবে চাইব সেভাবেই কাজ হবে, আমাকে কোনো প্রকার জ্বলাতন করা হলে সাথে সাথে আমি ফিল্ম ছেড়ে দিতে পারবো। সাথে আমাকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর এসবের জন্য আমার লিগেল এগরিমেন্ট চাই। আসলে আমার সময় অনেক মূল্যবান তো তাই।”
আইজা বলে, “মামার বাড়ির আবদার? প্রয়োজন নেই তোমার। চলো সাইদ।”
আইজা সাইদকে নিয়ে সেখান থেকে যেতে নিবে আর এক চেনা কান্নামাখা কন্ঠ শুনলো,
“আমি রোজাউর রহমান স্বীকার করছি আমিই কয়েকবছর আছে ইনারা নামক যুবতীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলাম। আমাকে পাঠানো হয়েছিলো। যারা পাঠিয়েছিল তারা হলেন, পরিচালক মুশতাক এবং অভিনেত্রী আইজা। আমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ ওদের। আমাকে টাকা দিয়েছিল। আমি লোভে পরে এমন করেছি। আমাকে ছেড়ে দিন। ছেড়ে দিন আমায়।”
আইজা স্তব্ধ হয়ে গেল। সে বলল, “মামার বাড়ি তো তুমি যাবে। জেলখানায়।”
আইজা সাথে সাথে ইনারার হাত থেকে মোবাইল নেবার ব্যার্থ চেষ্টা করে। ইনারা সরে যায়। না পেরে আইজা উঁচু স্বরে বডিগার্ডদের বলে, “তোমরা ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছো? ওর হাতের মোবাইল আমার চাই। যে কোনো মূল্যে। এই ভিডিও ডিলিট করো।”
বডিগার্ডরা মাঝপথ পেরানোর আগেই। ইনারা বেখেয়ালিভাবে বলে, “আহা আপু এতটুকু কথা? এ ভিডিও ডিলিট করব তাইতো? আমিই করে দিচ্ছি।”
ইনারা নিজেই আইজাকে দেখিয়ে ভিডিওটা ডিলিট করে। আবার বলে, “এই ভিডিও আরও কত আছে আমার কাছে। এত ছোট বিষয়ে রাগ হলে হয়? সামনে আরও কতকিছু দেখার আছে আপনার। আপনি নিজেকে সামলান, আমি আসি।” ইনারা তার পার্স নিয়ে আইজার পাশ কাটিয়ে যাবার সময় আরও বলে, “আমি যা বলেছি তা সব হওয়া চাই। একটা জিনিস এদিক থেকে ওদিক হলে তোমাকে ধ্বংস করতে এক মুহূর্ত লাগবে না আমার।”
বলে সে চলে যায়।
আইজা তখনও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাক। সাইজ তার পাশে এসে দাঁড়ায়, “আইজা সত্যি তুমি এটা করিয়েছ?”
আইজা উওর দেয় না। সে এখনও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ভয়ে তার জান শুকিয়ে গেছে। সে কাঁপছে। সে দ্রুত টেবিল থেকে একগ্লাস পানি উঠিয়ে তা পান করতে নিবে আর তার হাত থেকে গ্লাসটা ছুটে গেল। মেঝেতে পরে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
.
.
ইনারা বাড়িতে ঢোকার পূর্বেই দেখে একটি ট্রাক বাড়ির দরজা দিয়ে বের হচ্ছে। গাড়ি থেকে নামার পর সে রহমানকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করে, “ট্রাক কিসের ছিলো?”
“ছোট স্যার আনিয়েছে। আপনার জন্য স্যারপ্রাইজ। বাগানে যেয়ে দেখুন।”
ইনারা সোজা বাগানে যায়। সেখানে যেয়ে দেখে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর নিচে একটি দোলনা লাগানো। দৃশ্যটা দেখে সে এক মুহূর্তের জন্য অবাক হয়। পরক্ষণেই ঠোঁটের কোণে হাসি এঁকে উঠে তার। সে এক দৌড়ে যেয়ে বসে দোলনাটার উপর। দোলনায় দোল খায়।কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো ঝরে পড়ে তার উপর। যেন বর্ষণ হচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার। তার মনে হলো সে স্বপ্নের রাজ্যে এসে পরেছে। তার মনে পরে যায় ছোটবেলার কথা। তার মা তাকে দোলনায় দোল খাওয়াতো। তার উপর কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরতো। সে তখন সবসময়ই ডিজনির ছবি দেখতো আর তার মা’কে তার রাজকুমারের কথা জিজ্ঞেস করতো। তখন মা বলতো, “দেখিস একদিন এমনই এক দিনে তোর রাজকুমার ঘোড়ায় চড়ে তোকে নিতে আসবে। আমি সেদিন নিজে আমার রাজকন্যাকে রাজকুমারের হাতে তুলে দিব। আর সেদিন কৃষ্ণচূড়ার বর্ষণ হবে চারদিকে।”
মা’য়ের কথা ভাবতেই ইনারার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি এঁকে উঠে।
“রহমানের পেটে এ কথাও থাকলো না। কোথায় ভাবলাম তোমায় স্যারপ্রাইজ দিব। সে আগেই বলে বসে আছে।” ইনারা চোখ তুলতেই দেখতে পায় সভ্যকে। সভ্য তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে, “এত সুন্দর করে সেজে কাকে হার্ট অ্যাটাক দিতে গিয়েছিলে?”
ইনারা একগাল হেসে তার দিকে তাকায়। খুশির চোটে সে এক দুই না ভেবে ছুটে যেয়ে জাপটে পড়ে তার বুকে। বলে, “থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। আপনি জানেন না এইটা কেবল একটা স্যারপ্রাইজ না। এতটুকু জিনিসের সাথে আমার মা’য়ের কত স্মৃতি জড়িত। মা মরে যাবার পর বাড়ির কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটানো হয়। আমি কত অনুরোধ করি কেউ শুনে না। কেউ বুঝতে চায় না সে গাছের সাথে আমার কত স্মৃতি জড়িত ছিলো। কত অনুভূতি জড়িয়ে ছিলো। আমি আজ অনেক খুশি। অনেক।”
সভ্য স্তব্ধ হয়ে যায়। তার হৃদয়ের স্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়। এতবছর পর তার হৃদয়ে অদ্ভুত এক শান্তি ছড়ায়। আচ্ছা এই মুহূর্তটা কি স্বপ্ন বা বাস্তব? আচ্ছা এই মুহূর্তটা বাস্তব
হলে কি ইনারা তার হৃদয়ের এমন করুণ অবস্থা অনুভব করতে পারছে?
চলবে…