অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ১৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
রাতে ইনারা নিজের রুমে বসে সুরভির সাথে গল্প করছিলো। বিশেষ করে দাদাজানের কথা জানাচ্ছিল। তারা দুইজন যতই দূরে থাকুক না কেন বা যতই ব্যস্ত থাকুক সাপ্তাহে তিন চারদিন একে অপরের সাথে কথা বলবেই। সব কথা শেয়ার করবে। যদিও সুরভি এখনও আহনাফের সাথে তার ডিলের কথা জানায় নি। সে জানে ইনারাকে এই মুহূর্তে আর প্রেশার দেওয়া ঠিক হবে না। ইনারা নিজের মতো সুরভীকে দাদাজানের গল্প বলতে থাকে। এমন সময় কক্ষে প্রবেশ করে সভ্য। তাকে দেখেই ইনারা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে দ্রুত সুরভিকে বলে, “তোকে পরে কল দিচ্ছি, অসভ্য এসেছে।”
“এই মাইয়া আমার দুলাভাইকে সম্মানের সাথে সম্বোধন কর। আর আজ রাতে কি হয়েছে তা কাল সকালেই জানাবি।”
“আমি তোকে এখনই জানাচ্ছি, তোর অসভ্য দুলাভাই আজ বারান্দায় ঘুমাবে।” পরক্ষণেই ধমকে বলে, “ফোন রাখ, শালী মিরজাফর।”
সভ্য এক লাফে বিছানায় এসে শুয়ে পরে। আরাম করে। সাথে সাথে ইনারা বলে, “এই’যে নবাব সাহেব আপনি এখানে কি করছেন?”
“দাদাজান না বলল আজ রাত এখানে ঘুমাতে হবে আমাদের দুইজনকে?”
“আপনি বিছানায় ঘুমাতে পারবেন না।”
“আমি তো এখানেই ঘুমাব। দেখব কে আটকায় আমাকে।”
ইনারা দাঁড়িয়ে সভ্যের হাত ধরে টেনে তাকে উঠানোর চেষ্টা করে, “উঠেন আপনি। আপনি মেঝেতে ঘুমাবেন, নাহলে বারান্দায়।”
ইনারা তো আর সভ্যের সাথে পেরে উঠে না। কিন্তু সভ্য ফেরত একটান দিতেই ইনারা তার বুকের উপর এসে পড়ে।
ইনারা ঘাবড়ে যায়, “কি করছেন?”
সে সভ্যের বুক থেকে উঠে যেতে নিলেই সভ্য তার কোমরে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে। অন্য হাত দিয়ে তার কপালে এসে থাকা চুলগুলো সরিয়ে বলে, “দাদাজানকে না বিচার দিয়েছিলে আমি তোমাকে অনেক বিরক্ত করি, তাই এখন বিরক্ত করছি।”
“ফাজলামো করলে এখনই দাদাজানকে যেয়ে আবার বিচার দিব।”
“কী বিচার দিবে শুনি? বলবে আমার স্বামী আমার সাথে রোমেন্স করছে, এখন আপনি বিচার করুন। দাদাজান তো বলবে জলদি তাকে পর নাতির মুখ দেখাতে।”
কথাটা শুনে ইনারা লজ্জায় শেষ। সভ্যের বাহুতে মেরে সে বলে, “কী অসভ্য আপনি! ছিঃ!”
সভ্য হাসে, “তো আজ যে অকারণে এত বকা খাওয়ালে তার শাস্তি তোমাকে দিতে হবে না?”
“কি শাস্তি দিবেন আমিও দেখব। হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে এক না করলে আমার নামও ইনারা না।”
সভ্য সাথে সাথে ইনারার গলায় একখানা চুমু খায়। সাথে সাথে শিউরে ওঠে ইনারা। ঘাবড়ে যায়।
সভ্য তার চুলের খোঁপা খুলে দেয়। সাথে সাথে তার স্বর্ণোজ্জ্বল চুলগুলো ঝরে এসে পরে সভ্যের মুখের উপর। সভ্য চোখ বন্ধ করে নেয়। গভীর নিশ্বাসের সাথে তার চুলের ঘ্রাণ নেয় সভ্য। নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে। তার নীল সাগরের মতো চোখদুটো দেখে এক ঢোক গিলে। এই চোখদুটোর যে কাওকে নেশায় ডুবাতে পারে, নেশায় আসক্ত করতে পারে। যেমন তার করছে।
তার ইনারার ঠোঁটগুলো ছুঁয়ে দেয়। তারপর চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলে,”আজ রাতের নেশা, না তোমার? নিজেকে মাতোয়ারা লাগছে।”
সভ্যের ছোঁয়াতেই কেঁপে উঠে ইনারা।কাঁচুমাচু হয়ে যায় সভ্যের বাহুতে। সভ্য যখন তার চুলের মাঝে হাত রেখে তাকে নিজের দিকে এগিয়ে আনছিলো তখন ইনারার কেমন অপ্রস্তুত লাগছিলো। তাই সে বলে উঠে, “সভ্য প্লিজ, আমার ভালো লাগছে না।”
মুহূর্তও লাগলো না সভ্যর ইনারাকে ছাড়তে। সভ্য বলল, “আমি তোমাকে কখনো জোর করব না।”
বলেই সে সরে যায়। ইনারা সেখানেই বসে থাকে। তার রাগ উঠছিলো। হ্যাঁ, সে সভ্যকে মানা করছে। কিন্তু সভ্য তাকে একটা চুমু তো দিতেই পারতো। পরক্ষণেই নিজের উপর রাগ উঠলো ইনারার এসব কি ভাবছে সে? এত সহজে কীভাবে সভ্যের ছেড়ে যাওয়াটা ভুলতে পারে সে। রাগটা সম্পূর্ণ যেয়ে পরে সভ্যের উপর। সভ্যকে বিছানায় শুতে দেখে তাকে বালিশ মেরে বলল, “খবরদার আমার কাছে শুবেন না। আমার আপনার উপর একবিন্দুও বিশ্বাস নেই।”
“তুমি একবার বলাতে আমি ছেড়ে দিলাম তোমায়, তাও না।”
“না, আপনি নিচে ঘুমাবেন।”
“আমার ঘরে আমাকেই মেঝেতে ঘুমাতে বলছ? সাহস তো কম না তোমার।”
“আমার সাহস দেখছেন না’কি এ পর্যন্ত?”
সভ্য আয়েশে শুয়ে বলে, “আমি তো এখানেই ঘুমাব। যা করার করে নেও।”
“তাহলে আমি নিচে ঘুমাব না’কি?”
“তোমার ইচ্ছা। আমার তো তোমার সাথে বেড শেয়ার করতে সমস্যা নেই। তোমার আছে। তোমার ঝামেলা তুমি নিজেই সামলাও।”
“আপনার লজ্জা লাগবে না আপনি একটি মেয়ের সাথে বেড শেয়ার করবেন?”
“সে মেয়েটি আমার বিয়ে করা বউ।”
“এ বিয়ে আসল না।”
সভ্য ইনারাকে পাত্তা না দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
ইনারা রাগে সভ্যকে ক’টা কথা শুনিয়ে দেয়। কিন্তু সভ্য কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখায় না।
কিন্তু ইনারা তো আর নিচে শুবে না। এমনিতেই তার ঠান্ডার সমস্যা। তাই সে না পেরে তাদের দুইজনের মাঝে দুটো বালিশ রেখে বলে, “খবরদার ওপাশ থেকে এপাশে হাত আনলে হাতই কেটে দিব।”
সে শুয়ে পরে।
ইনারা ঘুমিয়ে যাবার পর সভ্য উঠে। উঁকি মেরে দেখে ইনারাকে। সভ্য ধীরে তাদের মাঝের দুটি বালিশ মেঝেতে ফেলে দিয়ে ইনারাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। চন্দ্রিমার আলোয় তার প্রণয়ীকে দেখে মৃদু হাসে। কী অপরূপ দেখাচ্ছে তাকে! যে সদ্য কোনো পরী চন্দ্রিমার দেশ থেকে নেমে তার বাহুডোরে এসে পড়েছে।
যখন সে ইনারাকে ভালোবেসেছিলো তখন থেকেই তার সাথে বিয়ের স্বপ্ন বেঁধেছিল সভ্য। ভেবেই নিয়েছিল বিয়ের পর প্রতি রাতে ইনারাকে তার বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমাবে। তার সবচেয়ে বেশি মূল্যবান মানুষটিকে নিজের হৃদয়ে ভরে রাখবে। আজ এত বছর পর তার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে। তার ঠোঁটের কোণে এক স্বস্থির হাসি। সে ইনারাকে বুকে ভরে তার কপালে আলতো এক চুমু খায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “আর এভাবে তোমাকে বুকে ভরার সুযোগ পাব কি-না জানি না। তাই আজ রাতের এক মুহূর্তও হাতছাড়া করছি না আমি। কখনো তোমাকে বলা হয় নি। কিন্তু ভালোবাসি প্রণয়ী, ভালোবাসি।”
সে রাতভর সভ্য তাকে বুকের ভেতর ভরে অনেকক্ষণ অনুভব করল তার হৃদয়ের প্রশান্তি। তার স্পন্দনের অনুভূতি। এই কিছু মুহূর্ত। তার মনে হলো এ ক’টি নীরব মুহূর্ত তার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তের তালিকায় আসতে পারে।
ভোরে সভ্যের চোখ লেগে আসে। সে ইনারাকে বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। তার চোখ খুলে ইনারার ধমকে, “এই আপনার সাহস কত! আপনাকে না বলেছি আমার কাছে আসবেন না।”
ধমকে লাফিয়ে উঠে বসে পড়ে সভ্য। ভয়ে গভীর নিশ্বাস ফেলে বলে, “তুমি জানো না ঘুমন্ত মানুষকে ধীর কন্ঠে, আদর করে উঠাতে হয়। এভাবে জংলীদের মতো চিল্লিয়ে না।”
“আদর করে তাই না? মাইর দিব আপনাকে। আপনাকে না মানা করেছি আমার এদিকে হাত আনলে খবর আছে।”
সভ্য বুঝলো এই মুহূর্তে কোনো বাহানা না বানালে ইনারার হাত থেকে তার রেহাই নেই। তাই সে উল্টো জোর গলায় বলল, “আমি আসি নি, তুমি এসেছ। এই যে তুমি আমার দিকে। মেডাম নিজে রাতে লাথি দিয়ে বালিশ ফেলে আমার গায়ের উপর চড়ছিলো , এখন আমার দোষ দিচ্ছো? ছিঃ! আমি কত চেষ্টা করলাম সরাতে কিন্তু আমার উপর চড়ে গিয়েছিলে। ঘুমের মধ্যে কিসও করার চেষ্টা করেছ।”
“আমি!” অবাক হয়ে বলে ইনারা।
“নয়তো কী? কীভাবে যে আমার সম্মানটা বাঁচালাম কেবল আমি জানি। এখন আমার এদিকে এসে আমার উপর চড়ার শাস্তি কি দেওয়া উচিত তোমাকে বলো?”
ইনারা আমতা-আমতা করে বলল, “আমিই মনে হয় ঘুমে এসেছি তাহলে। দেখেন আমরা স্বামী স্ত্রী। আমি আসতেই পারি। নট আ বিগ ডিল। এই ছোট ছোট জিনিস নিয়ে কাহিনী করবেন না তো।”
ইনারা উঠে যেতে নিলেই সভ্য তার হাত ধরে নেয়। তাকে একটানে নিজের কাছে এনে বলে, “নিজের বেলায় আমরা স্বামী স্ত্রী? আর আমার বেলায়? তোমার তো শাস্তি পাওয়া লাগবে। কাল যে দাদাজানের কাছে এত বকা খাওয়ালে তার এবং রাতে আমার এদিকে আসারও।”
“কী শাস্তি দিবেন শুনি?”
“একটি গুড মর্নিং কিস দিয়ে যাও।”
“গুড মর্নিং কিস লাগবে?”
সভ্য উৎসুকভাবে মাথা নাড়ায়। ইনারা তার গালে আস্তে চড় মেরে বলল, “এই নিন কিস, আমি গেলাম।”
ইনারা যেতে নিবে এর পূর্বেই সভ্য তার কোমর জড়িয়ে ধরে, “এই বিচার আমি দাদাজানের কাছে দিব। বলব যে রাতে একতো আমার উপর চড়ে বসে কী করার চেষ্টা করছিলো এরপর সকালে কিস চাইলে চড় মারলো।”
“আপনি একথা বলতে পারবেন? কী নিলজ্জ আপনি!”
“দেখবে?” বলে সভ্য জোরে দাদাজানকে ডাক দেয়, “দাদা…”
সম্পূর্ণ বলার পূর্বেই ইনারা তার মুখ চেপে ধরে, “পাগল হয়েছেন না’কি? আচ্ছা করছি। কিস করলেই ছেড়ে দিবেন।”
ইনারা দ্বিধা নিয়েই সভ্যের গালে চুমু দেয়। সভ্য থেকে ছাড় পেতেই এক দৌড়ে পালায়।
সভ্য তার গালে হাত রেখে খুশিতে আত্নহারা হয়। তার খুশি কে দেখে। মনটা ভীষণ উড়ু উড়ু তার। সে তার বালিশটা বুকে চেপে ধরে আবার শুয়ে পড়ে আর বলে, “দাদাজান আজ তোমার কারণে গতরাতটা এত ভালো হলো। দাদাজান তুসসি গ্রেট হো।”
.
.
দাদাজানের আজ সভ্যের সাথে অফিসে যাবার কথা। সেখান থেকেই সে বাড়িতে ফিরে যাবে। একারণে ইনারার মন খুব খারাপ। তারা সকলে ডাইনিং টেবিলে বসে একত্রে নাস্তা করছিলো। ইনারা বলে, “দাদাজান ক’দিন থেকে যান এখানে।”
“না নাতবৌ থেকে গেলে তোমার দাদীজান রাগ করবেন। আবার আসব তো আমি।”
সভ্য বসে ছিলো ইনারার পাশের চেয়ারে। সে ইনারার দিকে ঝুঁকে। তার কানের কাছে মুখ এনে বলল, “রাত আমার সাথে কাটাতে ইচ্ছা করছে বললেই তো হয়। দাদাজানকে থামানো লাগে না’কি?”
ইনারা রাগী দৃষ্টিতে তাকায় সভ্যের দিকে। তাকিয়ে সে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। আবার দাদাজানকে জিজ্ঞেস করে, “এরপর সবাইকে নিয়ে আসবেন?”
“না নাতবৌ, তোমার দাদীজানের এই সিনেমা বেশি একটা পছন্দের নয়। এখন তোমার সাথে দেখা করাতে গেলে তোমাকে আর কাজ করতে দিবে না। তুমি একটু সাফল্যতা পাও, তারপর সবার সাথে দেখা করাব। তখন আমি সামলে নিব। আর এর মাঝে সময় পেলে আমাকে একটা পর নাতি নাতনী দেবার চিন্তা ভাবনা করো।”
কথাটা শুনে ইনারার কাশি চলে আসে। খাবার গলায় আটকে আসে৷ সে দ্রুত পানির গ্লাস নিয়ে পান করে নেয়।
সে সভ্যের দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটা মিটিমিটি হাসছে তার অবস্থা দেখে।
দাদাজান ঘাবড়ে গিয়ে বলে, “আরে তুমি চিন্তা করো না, আগে তুমি তৈরী হও। আগে নিজের স্বপ্ন পূরণ করো। আসলে বয়স হয়েছে তো, কবে যে কিছু হয়ে যায়। এর আগে আমার পর নাতি বা নাতনীর চেহেরা দেখলে শান্তি পাব।”
ইনারা জোর পূর্বক হেসে মাথা নাড়ায়। এরপর আর একটা কথাও মুখে আনে না। কিন্তু সভ্য ঠিকই এই বিষয় নিয়ে তার সাথে মজা করতে থাকে কয়দিন ধরে।
.
.
আজ “রহস্য ঘর” এর এনাউন্সমেন্ট হবে। তাই মিডিয়া একত্রিত হয়েছে। সকল অভিনেতারও আসার কথা। আজকের এই আয়োজনের বিশেষ কারণ হচ্ছে আইজার নাম পরিষ্কার করা। ইনারাকে নিয়ে তার নামে যত সমস্যা হয়েছিল তা সব থেকে নিজের নাম মুক্ত করা। আজকের ইন্টারভিউ লাইভ হবে।
আইজা অস্থির হয়ে বলল, “ইনারা এখনও আসছে না কেন? ও নিজের মন পাল্টে নিলো না তো।”
জোহান তার পাশের চেয়ারেই বসা ছিলো। সে বলল, “পালটে নিলেই ভালো।”
“বলছটা কী তুমি? ও এসে আমার পক্ষে স্টেটমেন্ট না দিলে কত বড় সমস্যা হবে তুমি জানো? একবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকে দেখেছ? আমাকে কত বাজে কথা শুনিয়েছে সবাই?”
জোহান হাসে। বেখেয়ালিভাবেই বলে, “নিয়তি আইজা, নিয়তি। একসময় এই তোমার কারণে জনগণ ওকে খারাপ কথা বলছিলো। এখন ওর কারণে তোমাকে শোনাচ্ছে। আসলে তুমি ওর তুলনায় কমই শুনছি।”
“ওহ প্লিজ, এমন ব্যবহার করো না যেন তুমি ধোঁয়া তুলসি পাতা। তুমি কিছু করো নি।”
“অন্তত তোমার মতো তো করি নি। আমি তো এতকিছু হবে জানতামও না। তুমি উল্টো দোয়া করো ইনারা যেন আজ না আসে৷ আসলে যদি বাই চান্স তোমার বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দেয় তাহলে তুমি আসলেই শেষ। ”
আইজা চমকে উঠে। এদিকটা তো সে ভাবেনি আগে। সত্যিই তো যদি ইনারা একবার তার নামে উল্টো কিছু বলে দেয় তার কাছে যা আছে সব শেষ হয়ে যাবে।
ভাবতে ভাবতেই সে খবর পায় ইনারা এসে পড়েছে। তাকে আলাদাভাবে এনাউন্সমেন্ট করে স্টেজে আনা হবে তাই এই মুহূর্তে তাকে ব্যাক স্টেজে বসানো হয়েছে। আইজা শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয় ইনারাকে সে আসতে দিবে না। কিন্তু কাওকে বলার পূর্বেই ইন্টারভিউ শুরু হয়ে যায়। লাইভ চলছে৷ তাদের ফিল্মের কথা এনাউন্স করা হলো। চারপাশে এসি লাগানো। তাও আইজা ঘামছে। পাঁচমিনিট পর কি হবে তা ভেবে। হয়তো সে নিজের ক্যারিয়ার ফিরে পাবে, নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে। মাঝখানে কিছু নেই। ইন্টারভিউ শুরু হবার পর প্রথম প্রশ্নই আসে আইজার কাছে,
“মিস আইজা এটা কী সত্যি যে ইনারার সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক আছে? সে কী হয় আপনার বোন না বান্ধবী?”
আইজা ঘাবড়ে যায়। তবুও হাসিমুখে উওর দেয়, “ও আমার বোনের মতো ছিলো।”
“তাহলে আপনার বোনের মতো কারও উপর এত বড় মিথ্যা অপবাদ লাগবে আর আপনি চুপ থাকবেন? আর যে তার সাথে এত খারাপ আচরণ করেছে তার প্রডাকশনে আপনি কাজ করছেন, এটা আপনার সঠিক মনে হয়? এছাড়া মিস ইনারা এখন কোথায়? কীভাবে আছেন? আপনি কিছুই জানেন না?”
আইজা এবার কি বলবে বুঝতে পারে না। তার হাতের ট্যাবে আসা সকল বাজে কমেন্ট দেখে৷ তা দেখে সে ‘আরও বেশি ঘাবড়ে যায়।
তখন মুভিতে জড়িত একজন বলে, “মিস ইনারা আজ আমাদের সাথেই আছে। প্রশ্নগুলো আপনি তাকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন।”
তারপর লোকটা ইশারা দেয় কাওকে। ইনারাকে স্টেজে আনার জন্য লোক পাঠানো হয়। কিছু মুহূর্ত পর দুইজন ইনারাকে নিয়ে উঠে স্টেজে। মুহূর্তে সকল রিপোর্টারদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে তার সৌন্দর্য দেখে। ইনারা স্টেজে উঠেই সবাইকে সালাম দিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়। সবাই মুগ্ধ হয় তার হাসিতেও। মুহূর্তে প্রশ্ন ছেড়ে চারদিকে তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করা হয়।
এই এক ঘটনাতেই মেজাজ বিগড়ে যায় আইজার। সে ট্যাবের দিকে চোখ যেতেই দেখে বেশিরভাগ কমেন্ট এখন ইনারার সৌন্দর্যকে নিয়েই। ঈর্ষায় গা জ্বলে উঠে আইজার। সে দীপাকে কানে কানে কিছু একটা বলে।
ইনারাকে বসতে বলা হয়। ইনারা সকলের সামনে দিয়ে শেষ চেয়ারের দিকে যেতে নিলেই দীপা তার পা একটু এগিয়ে দেয়। ইনারা পা’য়ে ঠোকর লেগে পড়ে যাবার যেতে নিবে তখনই জোহান তার হাত ধরে নেয়।
.
.
“সভ্য স্যার আপনি কাজ করছেন? ম্যামের ইন্টারভিউ তো শুরু হয়ে গেছে। ম্যাম সম্ভবত এসেও পরেছে।”
রহমান সভ্যের কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলে। সভ্য কাজ করছিলো। রহমানের কথা শুনে হাসে সে। বলে, “আমার থেকে তো তুমি বেশি উৎসুক। তুমি ভিডিও ছাড়ো। ফাইলগুলো সাইন করা প্রায় শেষ।”
রহমান জলদি করে ছাড়ে ভিডিও। সভ্য একপলক কেবল ইনারাকে দেখে একগাল হাসে। তারপর আবার তার শেষ ফাইলটি সাইন করার জন্য চোখ ফাইলে আটকায়। সাইন শেষে ফাইল রেখে সে বলে, “এখন শান্তি মতো দেখতে পারবো।”
সে ল্যাপটপের দিকে চোখ রাখতেই দেখে ইনারা নিচে পরে যাচ্ছিলো। কিন্তু একটি লোক তার হাত ধরে নেয়। ইনারা পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। সে তাকিয়ে দেখে লোকটার দিকে। এক মুহূর্তের হয় দৃষ্টিচার। তারপর ইনারা উঠে দাঁড়িয়ে হেসে লোকটাকে ‘থ্যাঙ্কিউ’ বলে নিজের সিটে যেয়ে বসে। সে লোকটা আর কেউ নয় জোহান।
সভ্যের ঠোঁটের হাসি উধাও হয়ে যায় মুহূর্ত। হাত মুঠোবন্দী করে নেয় সে। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। সে কঠিন গলায় রহমানকে জিজ্ঞেস করে, “এই সিনেমার নায়ক কে?”
“ছোট স্যার এই যে ম্যামকে যে বাঁচিয়েছে উনিই। জোহান।”
“তোমার ম্যাম এ কথা জানতো?”
“হ্যাঁ স্যার, ম্যাম জানবে না কেন বলেন তো? সেদিনও তো অডিশন দিতে যেয়ে দেখা হয়েছিলো জোহানের সাথে।”
সভ্যের চোখের মাঝে রাগ ও কষ্ট দুটো একসাথে ভেসে উঠে। রাগে কটমট করছিলো সে। অগ্নি দৃষ্টিতে সে ল্যাপটপের দিকে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে সজোরে তা দূরে ফেলে দিলো।
রহমান ভয়ে লাফিয়ে উঠে, “এই কী করলেন স্যার?”
“এক্ষুণি গাড়ি বের করো, আমি বাসায় যাব। আর ইনারার জন্যও গাড়ি পাঠাও। ও বের হয়ে যেন সবার আগে আমার সাথে দেখা করে। ওর কিছু জবাব দিতে হবে আমাকে।”
চলবে…