অনুভবে (২য় খন্ড) পর্ব ৪২

0
1409

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৪২
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

অবশেষে সভ্য থামে। সে ইনারার সামনে এসে দাঁড়ায়। তার হাত ধরে কাছে টানে। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে, এখনও। সভ্য তার দিকে ঝুঁকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলে, “ভালোবাসি, আমার মহারাণী।”

ইনারা তাকায় সভ্যের দিকে। এক মুহূর্তের জন্য যেন তার হৃদয়ের স্পন্দন থেমে যায়। স্থির হয়ে যায় সে। সভ্য মুখ তুলে তাকাতেই সে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো সভ্যের দিকে।

সভ্য আলতো করে হাত রাখল ইনারার গালে। তার কপালে চুমু খেল। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো ইনারা। অনুভব করল সভ্যর প্রেমের গভীর স্পর্শ। আবারও বলল, “ভালোবাসি প্রণয়ী…”
ইনারা চোখ খুলে। তাকায় সভ্যর দিকে। তার মনে পড়ে কয়েকবছর পূর্বে সভ্য একবার তাকে বলেছিলো সে গান হলে সভ্য সে গানের নাম রাখতো প্রণয়ী। সভ্য কী আসলে তখন তাকে ইঙ্গিত দিচ্ছিলো ভালোবাসার?
সভ্য আবার জানাল, “তোমার মুখের এই চমক দেখার জন্যই কিছুক্ষণ পূর্বে কষ্ট দিতে হয়েছিল তোমাকে৷ ক্ষমা করে দেও।”
ইনারার ঘোর ভাঙ্গে৷ সে সভ্যের মোহ থেকে বেরিয়ে আসে। সাথে সাথে পিছনে সরে যায়। হাত দুটো আড়া-আড়ি ভাঁজ করে বলে, “এসবও কী বিয়ের মতো ফর্মালিটির জন্য করছেন? প্রয়োজন নেই। আমার সামনে আপনার এতো ফর্মালিটি করতে হবে না।”
ভেংচি কেটে ইনারা যেতে নিলেই সভ্য তার ওড়না ধরে নেয়। থেমে যায় ইনারা, “ওড়না ছাড়ুন।”
“প্রথম তুমি অভিমান ছেড়ে দেও, আমি ওড়না ছেড়ে দিব।”
“কীসের অভিমান? অভিমান করার অধিকার তো শুধু আপনার আছে। আমি কি অভিমান করার দুঃসাহস করতে পারি।”

সামি, সুরভি, ঐশি এবং ইরফান লুকিয়ে জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখছিল। আর বহু কষ্টে তাদের কথোপকথন শোনার ব্যার্থ চেষ্টা করছিল। সামি সভ্যকে এভাবে ইনারাকে জড়িয়ে ধরতে দেখে তার দুইপাশে দাঁড়ানো সুরভি এবং ঐশির চোখের উপর হাত রেখে বলে, “তোমাদের এমন রোমেন্টিক সিন দেখা ঠিক না। জলদি চোখ বন্ধ করো।”
এই কথায় ঐশি মার দেয় তাকে। বিরক্তিকর সুরে বলে, “এইখানে কেবল তুই একমাত্র আজীবন ধরে সিঙ্গেল ব্যক্তি। এ কথা তোর মুখে আনিস কীভাবে?”
“সিঙ্গেল বলে কী এভাবে বলবি?”
“একশোবার বলব। চুপচাপ সিনটা দেখ, নাহলে লাত্থি দিয়ে জানালা থেকে ফেলে দিব।”

সভ্য হাসে। ইনারার দিকে এগিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। বলে, “রাগ ছেড়ে দেও না মহারাণী, তখন তোমাকে নিজের খুশি দেখালে এই মুহূর্তটা উপহার কীভাবে দিতে পারতাম বলো?”
সভ্য ইনারাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার কোমরে হাত আবদ্ধ করে। আবার বলে, “এই পরিকল্পনাটা তো তোমার বিয়ের কথা বলার পর থেকেই করছি। সেদিন যখন তোমার চিঠি পেলাম ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু ওই মুহূর্তটা আমার জন্য সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্ত ছিলো। যে মুহূর্তে আমি জেনেছি আমাদের প্রেম কাহিনী কখনো একতরফা ছিলো না।”
“তাই?” ইনারা তার হাত দুটো সভ্যর কাঁধে রাখে, “তাহলে আমাকে এত জ্বালালেন কেন?”
“তোমাকে জ্বালাতে বেশ ভালো লাগে তাই।”
ইনারা ক্ষেপে যেয়ে সভ্যের বুকে মারল, “অসভ্য!”
সভ্য শব্দ করে হাসে। ইনারাকে কাছে টেনে তার কপালে আরেকটি চুমু খায়, “এই অসভ্যকেই তো ভালোবাসো।”
“তাই চিন্তা করি কি দেখে যে ভালোবাসলাম!” আফসোসের সুরে বলল ইনারা।
সভ্য চোখ দুটো বড় করে নেয়, “আমাকে ভালোবেসে তোমার আফসোস হয়?”
ইনারা খিলখিল করে হেসে উঠে। পা’য়ের পাতায় ভার দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়ায়। সভ্যর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে, “আপনাকে ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি।”
“সত্যি?”
“সত্যি, সত্যি, একদম সত্যি।”
সভ্য খুশিতে কোলে তুলে নেয় তাকে, “তোমার থেকে মুখের থেকে ভালোবাসা শব্দটা শুনে অন্যরকম লাগছে মহারাণী। অন্যরকম খুশি লাগছে।”

সভ্য ইনারাকে নিয়ে যায় স্টেজে। তাকে স্টেজের ঠিক মাঝখানে যেয়ে দাঁড় করায়। তার পকেট থেকে একটি আংটি বের করে। ইনারার হাত নিজের হাতে হাত নিয়ে বলে,
“তোমায় ছাড়া শূন্য আমার পৃথিবী,
তোমায় ছাড়া জীবন যেন রঙ বিহীন চিত্র জানো?
এমন করে কেউ কারো জীবনে আসে?
এমন করে ভালোবাসে?
যেন জীবনটার উপর অন্যকারো অধিকার হয়ে আসে,
আজ এই মুহূর্তকে সাক্ষী রেখে আমার জীবন তোমার নামে লিখে দিলাম প্রিয়….”

সভ্য রিং পরায় ইনারাকে। ইনারা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রয় সভ্যের দিকে। হঠাৎ তার চোখ ভিজে যায়। এই মুহূর্তটা স্বপ্নের মতো। এই স্বপ্ন সে প্রায়ই দেখতো। কখনো এই স্বপ্নটাও পূরণ হতে পারে এই কল্পনা সে করে নি। সে নিজেও নিচে বসল। তার ব্যাগ থেকে সভ্যর জন্য আনা রিংটা বের করে সভ্যর আঙুলে পরাল।
সভ্য বলল, “ভালোবাসি…”
ইনারা হেসে তাকায় সভ্যের দিকে, “আবার বলেন।”
“ভালোবাসি মহারাণী।”
ইনারা সভ্যের কপালে কপাল ঠেকায়। তার কান্না বাড়ে। সে চোখ বন্ধ করে বলে, “আবার বলেন। বারবার বলেন। আপনার মুখ থেকে এই শব্দটা শোনার জন্য আমি প্রচুর অপেক্ষা করেছি।”
“ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি মহারাণী।”

হঠাৎ করে শিস বাজানোর শব্দ এলো। দুইজন চমকে উঠে। তাকায় তাদের বাড়ির দিকে। সামি উঁচু স্বরে বলে, “অবশেষে আমাকে এত খাঁটানোর পর দুইজনে প্রেম স্বীকার করলি মনে হয়। এই খুশিতে আমার জন্যও কাওকে খুঁজে দে।”
সভ্যর রাগ উঠলো ভীষণ। এত সুন্দর মুহূর্তটা কেউ খারাপ করে এভাবে? সে ক্ষেপে যেয়ে বলে, “আমি ওখানে এলে খুঁজে খুঁজে একশোটা জুতার বাড়ি দিব।”
হুমকি শুনেই পালায় সামি। সভ্যের বকায় বাকি তিনজনও সেখান থেকে চলে যায়। সবার যাওয়ার পর সভ্য ও ইনারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং ফিক করে হেসে দেয়।

“কিভাবে আমাকে হুমকি দিল দেখলি তোরা? অথচ দুই জনকে সারপ্রাইজ প্ল্যান পুরাই আমি করে দিলাম।” সামি অভিযোগের সুরে বলল, “একদিকে ইনারা সভ্যকে সারপ্রাইজ দিবে। অন্যদিকে সভ্য ইনারাকে। মাঝখানে দুজনে ধরলো আমাকে। একে অপরের স্যারপ্রাইজ এর কথা না জেনে যায় এমন ভাবে সবকিছু রেডি করে দিলাম এখন দুজনে আমাকে চেনে না। কী স্বার্থপর দুনিয়া রে ভাই।”
সামির এমন কথা শুনে টেবিলে বসা ঐশি পা দুলাতে দুলাতে বলে, “সেন্টি খাওয়ার দরজার নাই। দোষ সম্পূর্ণ তোর। এমন মোমেন্ট কেউ এভাবে নষ্ট করে? ছাগল।”
সুরভি হেসে দেয়। তাকে হাসতে দেখে ঐশি জিজ্ঞেস করে, “হাসছ যে?”
“প্রথমে আপনাদের দেখে ভাবতাম আপনারা এত বড় সেলিব্রিটি আমাদের সব আলাদা হবে। অথচ এখন দেখি আপনারা সবাই আমাদের মতোই।”
“অফকোর্স। আমরাও মানুষ, তোমরাও মানুষ। আমরা তো আর ভিন্ন দুনিয়ার প্রাণী না যে আলাদা হবো।”
সুরভি হাসে। এমন সময় তার ফোন বাজে। সে ফোন ধরে সালাম দেয়। পরের মুহূর্তের তার হাসি মুখটা মলিন হয়ে যায়। তার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়।
ঐশি তাকে এমন অবস্থায় দেখে নিজেও চিন্তিত হয় এবং জিজ্ঞেস করে, “কী হলো সুরভী? সব ঠিক আছে তো? ”
উত্তর পাওয়ার আগেই তার ফোনটাও বেজে উঠে।

সভ্য ইনারার হাতে মেহেদি পরিয়ে দিচ্ছিল। তারা বসা কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানো দোলনার উপর। কিছুক্ষণ পরেই তারা মেহেদি অনুষ্ঠানে যাবে। কিন্তু সভ্য চায় সেই সবার পূর্বে ইনারার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিক। সে ইনারার হাতে লিখে দিলো তার নাম, ‘সভ্য’।

ইনারা সভ্যর কাঁধে মাথা রেখে বসেছিল। আর হাসিমুখে দেখছিল সভ্যের মেহেদি দেওয়াটা। উপভোগ করছিলো এই রাত, এই মুহূর্ত। তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর জন্মদিন পালন করল সে আজ। এই জন্মদিনের প্রতিটা মুহূর্ত তার স্মৃতির বাক্সে বন্দী থাকবে। সে প্রার্থনা করল, এই সুখের মুহূর্ত যেন কখনো শেষ না হয়।
ইনারা জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা আমাকে আপনার কখন সবার প্রথম পছন্দ হয়?”
“জানি না। নির্দিষ্ট কোনো মুহূর্ত দেখে তো আর ভালোবাসা হয় না।”
“পার্টনার বলেছিল আপনি আমাকে সে পার্টিতে দেখার পূর্ব থেকে পছন্দ করেন। এটা কী সত্যি?”
“হ্যাঁ।”
“কেন? তখন তো আমার মাঝে পছন্দ করার মতো কিছুই ছিলো না। আমি তখন তো মেয়েদের মতোই থাকতাম না।”
সভ্য হাসে। সে ইনারার দিকে তাকায়, “তোমার রূপে হাজারো পুরুষ পাগল হতে পারে, কিন্তু তোমার রূপ দেখে তো ভালোবাসি নি আমি। তোমাকে ভালোবেসেছি। তুমি যেমন হও, যেভাবে থাকো আমি তোমাকেই ভালোবাসবো।”
“এত কনফিডেন্স?”
“হবেই তো মহারাণী, এই অনুভবে আমি যে কেবল তোমাকেই পাই।”
ইনারা একগাল হাসে। আবার সভ্যের কাঁধে মাথা রাখতে যেয়ে দেখে সুরভি দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। তার পিছনে যাচ্ছে ঐশি ও সামিও। তাদের ভীষণ চিন্তিত দেখাচ্ছিলো। আতঙ্কিত দেখাচ্ছিল। তাদের দেখে ইনারাও চিন্তিত হয়। সভ্যকে ব্যাপারটা দেখিয়ে এগিয়ে যায় দুইজন। তারা এগিয়ে যায়। ইরফানকে শেষে পেয়ে সভ্য জিজ্ঞেস করে,”কী হয়েছ? এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
“হাস্পাতালে।”
“হাস্পাতালে?” অবাক হয় সভ্য, “কেন?”
“ফোন এসেছিল। জোহান ও সাইদের ভয়ানক এক্সিডেন্ট হয়েছে। দুইজনে হাস্পাতালে ভর্তি।”
কথাটা শুনে চমকে উঠে ইনারা ও সভ্য। সভ্য এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয়। কিন্তু ইনারা সামলায় তাকে। ইনারা জিজ্ঞেস করে, “আপনি ঠিক আছেন?”
সে কিছু মুহূর্ত চুপ করে থাকে। তারপর কাঁপানো গলায় বলে, “আমিও হাস্পাতালে যাব।”
ইনারা সভ্যের অবস্থাটা বুঝতে পারছে। সাঈদ খুব কাছের মানুষ ছিলো সভ্যর জন্য। আর জোহান তো এককালে তার বন্ধু, পরিবার, সব ছিলো। জোহান তাদের জীবন থেকে অনেক কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে কিন্তু হয়তো সভ্যের হৃদয় থেকে তার প্রতি চিন্তাটা ছিনিয়ে নিতে পারে নি। সময়ের জন্য দুইজনের মধ্যে রাগ, অভিমান, ব্যবধান আসতে পারে কিন্তু বন্ধুত্বের অনুভূতি তো আর হারিয়ে যেতে পারে না।
.
.
হাসপাতালে পৌঁছাতে সময় লাগলো তাদের। সেখানে যেয়ে দেখে সাইদের পরিবার সেখানে উপস্থিত। রিধু খুব বাজে ভাবে কাঁদছে। সুরভী তাদের কাছে যেয়ে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করলো, “বাবা… মা ভাইয়ার কী হয়েছে? ঠিক আছে তো?”
“সাইদের বেশি লাগে নি। কেবল মাথায় লেগেছে এবং হাতেও সমস্যা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে ঔষধের জন্য ঘুমে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে উঠে যাবে। তারপর দেখা করতে পারব।” সুরভির বাবা জানালেন।
“আর জোহান…জোহান ঠিক আছে?” সভ্য জিজ্ঞেস করে।
“ওর অবস্থা ক্রিটিকাল।”
কথাটা শুনে ঐশি শব্দ কান্না করে দেয়, “জোহান ভাইয়া… ভাইয়া ঠিক তো হয়ে যাবে?”
এর উওর এলো না সামনে থেকে।

সভ্য থপ করে সেখানে বসে পড়ে। তার হাঁটুর উপর কণুই রেখে হাতের তালু দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়।
ইনারা বসে তার পাশে। তার কাঁধে হাত রেখে সান্তনা দেবার চেষ্টা করে।
সামি ও ইরফান ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসে।

কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে এসে উপস্থিত হওয়ায় আইজাও। তাকে দেখে ভড়কে যায় সুরভী। রেগেমেগে বলে, “আপনি এখানে কী করছেন?”
“সাইদের ফোন থেকে আমাকে কল এসেছিলো। তাই দেখতে…”
“লজ্জা লাগে না আপনার? এত কিছু করার পরেও এখানে মুখ তুলে চলে এসেছেন। কী নিলজ্জ আপনি!”
“মুখ সামলে। আমি সাইদের জন্য এখানে এসেছি অন্যকারো জন্য নয়।”
“সাইদ ভাইয়ার স্ত্রী এখানে আছে। এখানে আপনার কোনো প্রয়োজন নেই।”
“তাই? ওর স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ওর ফোনে আমার নাম্বারই বিশেষ কন্টাক্ট লিস্টে আছে। তাই তো আমাকেই সবার পূর্বে কল দেওয়া হয়েছে। আর তোমার পরিবারকেও আমিই জানিয়েছি।”
সুরভী পিছনে ফিরে তার মা-বাবার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। তারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় কথাটায়।
আইজা বলে, “আমি এখানে কোন ঝগড়া করার জন্য আসি নি। সাইদের আমাকে প্রয়োজন। ওর জন্য এসেছি।”
সুরভি আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
ইনারা কেবল একপলক তাকাল আইজার দিকে। কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ নামিয়ে নিলো।

কিছুক্ষণ পর খবর এলো সাইদের হুঁশ এসেছে। জোহানের বিশেষ খবর নেই। সাইদের পরিবারকে ভেতরে ডাকা হলে আইজা ভেতরে যেতে চায়। কিন্তু সুরভি তাকে বাঁধা দিয়ে বলে, “ভাইয়ার পরিবারকে যেতে বলেছে। আপনি তার পরিবার না।”
আইজার রাগ উঠে কথাটা শুনে। সে সুরভির সাথে তর্ক না করে নার্সকেই বলে, “ভেতরের রোগীকে বলুন আইজা এসেছে। উনি যাকে বলে তাকে ভেতরে নিয়ে চলুন।”
নার্স সবাইকে থামিয়ে আবার ভেতরে যায়। বাহিরে এসে বলে, “পেসেন্ট বলেছে তার মা, বাবা, বোন এবং তার স্ত্রীকে ভেতরে যেতে।”
আইজা এগিয়ে যেয়েও থেমে গেল। সে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। সে এই মুহূর্তে এই স্থানে থাকা সত্ত্বেও সাইদ তাকে বাছাই করেনি, এই কথাটা অবিশ্বাস্য লাগল তার কাছে। সে রাগান্বিত সুরে বলে, “আপনি বলেছেন আমি এসেছি? আইজা এসেছে?”
“প্রথমত এটা হাস্পাতাল। তাই নিজের কন্ঠস্বর নিচে রাখুন। দ্বিতীয়ত আপনার কথা উনাকে বলায় উনি জানিয়েছে আপনাকে যেন তার সাথে দেখা করতে না দেয়া হয়। উনি আপনার চেহেরাও দেখতে চায় না।”
আইজার নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। সাইদ তাকে এমনটা বলতেই পারে না। সে দেখল এক এক করে সাইদের পরিবারের সকলে ভেতরে ঢুকছে। সুরভি কক্ষে ঢোকার পর তার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসল। আর চলে গেল।

আইজা দ্রুত যেয়ে দরজাটা হাল্কা খুলে ভেতরে ঢুকতে চাইল। কিন্তু ভেতরের এক ঝলক দেখে সে আর এগোল না। সাইদ তার পরিবারকে দেখে খুশি ছিলো। আর সে তার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকে এমনভাবে তাকাল যেভাবে একসময় সে তার দিকে তাকাতো। মেয়েটির কান্না দেখে মৃদু হেসে তার হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে ধরল মেয়েটির হাত। সাথে সাথেই আইজা দরজাটা বন্ধ করে দেয়। তার বুকের ভেতরের হৃদয়টা যেন কেউ ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। অনেক ব্যাথা করছে। যা অসহ্যকর। এমন সময় কেউ তার পিছনে এসে দাঁড়ায় ও বলে, “এই পরিস্থিতিটা তুমি নিজে তৈরি করেছ। বলেছিলাম না, তুমি নিজের হাতে নিজের সবটা শেষ করে দিচ্ছো?”
সে পিছনে তাকায়। ইনারা দাঁড়ানো। সে গম্ভীর গলায় বলে, “আমরা একটু আলাদাভাবে কথা বলতে পারি?”

ইনারা ও আইজা সেখান থেকে যাবার পর সামি দুটো লোক নিয়ে এলো। এরাই জোহান ও সাইদকে হাস্পাতালে এনেছিল। তারা জানাল দুইজনকে রাস্তায় পেয়েছিল তারা। তারা রাস্তা দিয়ে ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তায় পেয়ে দুইজনকে হাস্পাতালে নিয়ে এলো। সাইদ একটি গাড়ির সামনে আহত পড়ে ছিলো। তার কিছুটা দূরত্বেই জোহানের গাড়ি উলটে ছিলো। আর জোহান ছিলো গাড়ির ভেতরে। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলো। তার দেহের কিছু অংশে কাঁচও ঢুকে গিয়েছিল। যা দেখে তারা ভীষণ ভয়ও পায়। কথায় কথায় এই দুর্ঘটনা ঘটা জায়গাটার নামও বলে লোক দুইজন। জায়গাটার নাম শুনতেই চমকে উঠে সভ্য। সে এতক্ষণে তার মাথা তুলে। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় তাদের দিকে। ও বল, “এটা কয়টার ঘটনা?”
“রাত আটটা।”
“আজ তো আমার সন্ধ্যা সাতটায় সে রাস্তা দিয়ে যাবার কথা ছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যাওয়া হয় নি।”

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here