একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-১২,১৩

0
1596

#একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-১২,১৩
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

তাহলে কি আসল কার্লপিট শিমুল আপু?হে খোদা!এটা কিকরে হয়?আমি শিমুল আপুকে ভালো করেই চিনি।ও আমার সাথে এতো বড়ো প্রতারণা কেনো করবে।তাছাড়া ওর সাথে আমার সবকিছুই হয়ে গেছে অনেক আগেই।যদি এই আইডির মালিক শিমুল আপুই হবে আমায় কেনো এভাবে উদগ্রীব হয়ে বারবার পেতে চাইবে।নাকি,এটা কোনো আই-ওয়াশ।যাতে আমি কারোর কোনো পরিকল্পনা ঘুণাক্ষরে ও ধরতে না পারি সেই কারণে আমাকে বিভ্রান্ত করার জন্য এগুলো বলা হয়।কিন্তু শিমুল আপুর উদ্দেশ্যটা কি?ওর কি লাভ হচ্ছে এগুলো করে?না,সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না আমি।
আমাদের সন্তান বড়ো হচ্ছে ওর গর্ভে।আমার কিছুতেই নিজের মনকে এটা বিশ্বাস করাতে পারছি না,সবকিছুর পেছনে শিমুল আপু আছে।নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করি আমি ওকে।কিন্তু এটাও তো ঠিক,ফোন নম্বরটা তাজ ভাইয়ের।আর তাজ ভাইয়ার সাথে একমাত্র শিমুল আপুরই যোগাযোগ থাকার কথা।জানিনা কার মনে কি চলছে,তবে আমাকে যতোদ্রুত সম্ভব আসল কার্লপিটকে ধরতেই হবে।আমাকে অন্ধকারে রেখে অনবরত ব্ল্যাকমেইল করে যাবে এটা হতে পারে না।।

—কি হলো,এখন এতো কি ভাবছিস।যা জানার ছিলো জানা হলো তো?
(গুঞ্জন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে)

—এখনো ক্লিয়ার হলো না কিছুই।

—কোথায় ক্লিয়ার হলো না,শেষ পর্যন্ত ছেলে বেরোলো।কোনো ছেলে তোর পেছন লেগেছে।

—কি বলছিস,পাগল হলি নাকি।এই সময়ে ইয়ার্কি ভালো লাগছে না একদম।

—আরে আজকাল সব হয়,তুই জানিস না হয়তো।

—ধূর,তাজ ভাইয়া এসব কেনো করতে যাবে আমার সাথে।আমি নিশ্চিত ওনার নম্বর ব্যবহার করে কেউ আমার সাথে এই নোংরামিটা করছে।আর আমাদের ইন্টিমেট ভিডিওটাও সে করেছে।

—কিন্তু কে হতে পারে সেটা?

—সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না।

—বুঝতে পারছি না বললে চলবে, আমাদের আসল কার্লপিট পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে।

—এই ভাবনাই আমাকে দিন রাত ঘুমাতে দিচ্ছে না।আমি জানি না কিকরে পৌঁছবো তার কাছাকাছি।অর্থাৎ একেবারে হাতেনাতে ধরতে পারবো।

—আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে পল্লব?জানিনা তোর পছন্দ হবে কিনা।

—প্ল্যান?কোন প্ল্যানটা অ্যাপ্লাই করিনি বল।এখন নতুন করে কিসের প্ল্যানের কথা বলছিস তুই।

—চল যেতে যেতে বলি তোকে,তবে এইবারের কাজটা কিন্তু একটু অন্যরকম।অন্যরকম বলতে তোকে এমন কিছু করতে হবে যা তুই হয়তো করার কথা ভাবতেও পারিস নি আগে।

গুঞ্জন কি প্ল্যানের কথা বলছে আমি জানি না।সিম অফিসের আকাশ ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লাম আমরা।তারপর পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে দুজন আলোচনা করি।





বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলো।এসে দেখি প্রাচীকে বাসায় আনা হয়েছে।ও এখন প্রায় পুরোপুরি সুস্থ।সিমরান ভাবী ওর পাশেই বসে আছে।আমি ভাবিকে খাবার দিতে বললে সে উঠে যায়।আমি প্রাচীর পাশে এসে বসলাম।

—এখন ঠিকঠাক তো?
(প্রাচীকে জিজ্ঞেস করি)

—হ্যাঁ!

—যাক ভালো,

—কোথায় গিয়েছিলে তুমি,ফিরতে এতো দেরী হলো?

—একটা জরুরী কাজে গিয়েছিলাম।

—জরুরী কাজ,কি এমন জরুরী কাজ পড়লো তোমার।আমি ভেবেছিলাম অন্তত তুমি আজকে আমাকে আনতে হাসপাতালে যাবে।

—কেনো ভাইয়া গিয়েছিলো তো?

—ভাইয়া আর তোমার যাওয়া এক হলো?মানে তোমাকে কিছু বলার নেই সত্যি…

আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখন রান্নাঘর থেকে ভাবীর গলার আওয়াজ ভেসে আসলো।আমি উঠে গেলাম।প্রাচীর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে একটা বিষয় খেয়াল করলাম প্রাচী আমাকে এখন তুমি বলে সম্বোধন করছে।আর সাথে বলার বলার ক্ষেত্রে যে জড়তা কাজ করতো ওর তার সিকেভাগও নেই এখন।ইদানিং বড্ড অধিকার ফলিয়ে কথা বলছে আমার সাথে,যা আমার একদম ভালো লাগে না।



খাবার দাবার খেয়ে নিজের ঘরে চলে আসি।তারপর দরজাটা বন্ধ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ি।ডাটা অন করেই সেই ফেইক আইডিতে ঢুকলাম।প্রথম টোপটা এখনই দিতে হবে আমায়।দেখা যাক কাজ হয় কিনা।নিজের আপত্তিকর মুহুর্তের কিছু ছবি পাঠিয়ে দিলাম।তারপর তার রিপ্লাই এর জন্য ওয়েট করতে থাকি।প্রায় এক ঘন্টা পরে রিপ্লাই আসে।

—এটা তুমি?

—হ্যাঁ, আমি। কোনো সন্দেহ আছে।

—তোমার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।বুঝবো কিকরে?

—সত্যিই এটা আমি।

—বিশ্বাস করি না।

—তো কিভাবে বিশ্বাস করাতে পারি?

—নিজের চেহারাসহ একটা পিক তুলে আপলোড করো।আর অবশ্যই এইভাবেই তুলবে।

এই মুহুর্তে একে নিজের জালে ফাঁসাতে হলে যা চায় তাই করতে হবে।গুঞ্জন আগেই বলেছিলো আমাকে এমন কাজ করতে হবে যা আগে ভাবতেও পারিনি।সত্যি এই জঘন্য কাজগুলো করতে হবে এটা আমার ভাবনারও অতীত।আমি নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে কিছু ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলাম।সে আমাকে দেখে পুরোপুরি অবাক।যেনো ভাবতেই পারছে না আমি এটা করে দেখিয়েছি।

—আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।সত্যি এটা তুমি?

—হ্যাঁ আমি। কাল ওভাবে আমাকে কিছু না বলে চলে গেলে কেনো!

—আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা সিরিয়াস।

—এখন বুঝলে তো?

—হ্যাঁ,

—আমরা কিন্তু চাইলেই এক হতে পারি।আমার মনে হয় দুজনের আর আড়ালে থাকার প্রয়োজন নেই।

—কিন্তু তুমি কি আমাকে একসেপ্ট করতে পারবে, ভুল বুঝবে না তো?

—ভুল বুঝবো না।দেখো আমি জানি আমার যা প্রয়োজন একমাত্র হয়তো তুমিই দিতে পারবে।

—কিকরে বুঝলে?

—তোমার আমার প্রতি এতোটা আগ্রহ আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে।আমি কথা দিচ্ছি তুমি যেই হও না কেনো আমি আমার সমস্তরকমের ভালোবাসা শুধু তোমাকেই দেবো।

—কিন্তু আমার যে ভয় হয় তুমি আমায় একবার দেখলে পিছিয়ে যাবে না তো?

—ঠিক আছে।তারও উপায় আছে।

—কি উপায়?

—আজ রাতেই একে অপরের কাছাকাছি যেতে চাই আমরা।তবে আমি কথা দিচ্ছি তোমার যদি আমার সামনে আসতে এতোটাই সংকোচ আমি দেখবো না তোমায়।নিজের চোখ বেঁধে রাখবো প্রয়োজন পরলে।তারপর অন্ধকার ঘরে দুজন দুজনকে সারারাত ভালোবাসবো।তোমার এতোদিনের সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করবো আমি,সাথে নিজেরও।

—তুমি একটু বেশী তাড়াহুড়ো করে ফেলছো না?

—নাহ,আমার আজকেই প্রয়োজন তোমায়।ভীষণ প্রয়োজন।আমি জানি না আজ কি হয়েছে আমার ভেতরে, তোমাকে বড্ড পেতে চাইছে।জানি না, এরপরে কি হবে, তোমার প্রতি এমন অদ্ভুত আকর্ষণ হয়তো আর কখনো কাজ করবে না।

—নাহ,এভাবে বলো না প্লিজ।আজ রাতেই আমরা মিলিত হবো।তবে একটা শর্ত আছে।

—কি শর্ত?

—আমি নয়, তুমি আসবে আমার কাছে।আমি অন্ধকার ঘর রেডি করে রাখবো তুমি এসে আমার সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করে চলে যাবে।না তুমি আমার মুখ দেখবে না আমি দেখবো।শুধু আমাদের দুজনের শরীর একে অপরকে অনুভব করবে।

—ঠিক আছে,তুমি বলো কোথায় আসতে হবে। আমি তোমার সব শর্তে প্রস্তুত।শুধু এইটুকু দেখো আমার আপ্যায়নে যেনো কমতি না পরে।?

—না পড়বে না‌।তুমি এসো।?

সে আমাকে একটু পরে একটা অ্যাড্রেস পাঠিয়ে দেয়।আমাদের বাসা থেকে একটু দূরেই একটা আবাসিক হোটেলে আজ রাতে তার সাথে সাক্ষাৎ হবে আমার।একপ্রকার উত্তেজনা কাজ করতে লাগলো নিজের ভেতরে,না এটা শারিরীক কোনো উত্তেজনা নয় মনের উত্তেজনা।পরিশেষে আজ নিজের অপরাধীকে হাতেনাতে ধরতে পারবো।




রাত দশটার দিকে আমাদের হোটেলে দেখা করার কথা।আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি।হোটেলের 205 নম্বর রুমে সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি দরজার সামনে যেতেই একটা হাত আমাকে ভেতরে টেনে নিয়ে গেলো।চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার,নিজের হাতটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।সে আমাকে নিয়ে বিছানার ওপরে বসালো।তারপর একটা কাপড় দিয়ে চোখজোড়া শক্ত করে বাঁধলো আমার।আমি শুধু তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছি আর কিছু নয়।তার কোমল দেহ আমাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর ধীরে ধীরে আমাকে নিয়ে বিছানার ওপরে শুয়ে পড়ে।আমি অনুভব করতে পারছি সে আমার শার্টের বোতামে হাত দিচ্ছে।একে একে শার্টের সমস্ত বোতাম খুলে ফেললো।তারপর আমার কপালে একটা আলতো চুমু দেয়।তার হাত আমার শরীরের সংবেদশীল অঙ্গ প্রতঙ্গে বিচরণ করছে,মুহুর্তেই সারা শরীর মোচড় দিয়ে উঠলো আমার।নাহ্,আর দেরী নয়।এবারেই মোক্ষম সুযোগ।এই সুযোগ আমাকে কাজে লাগাতে হবে।কিন্তু সে এতোটাই ধূর্ত আমি ভাবতেও পারি নি।সে আমার হাত দুটো বাঁধার চেষ্টা করছে।আমি অমনি তাকে বলে উঠলাম।

—-একি,আমার হাত বাঁধছো কেনো,এভাবে আমার পুরো শরীর বেঁধে রাখলে যে কিছুই করতে পারবো না।

সে দূর থেকেই ফিসফিস করে আমাকে বলে।

—তোমাকে তো কিছুই করতে হবে না,যা করার আমিই করছি।আজ আমি ভালোবাসবো তোমায়,তুমি শুধু আমার ভালোবাসা নিতে থাকো।

—নাহ,এমন কথা তো হয় নি আমাদের ভেতর।

—হয়নি তো কি হয়েছে,দেখো না এখন আমি কি করি।

সে আমার হাতদুটো বেঁধে ফেলেছে প্রায় ঠিক তখন আমি সুযোগ বুঝে এক ঝটকায় সরে গেলাম,তারপর চোখের বাঁধন খুলে ফেলি।আমি আগে থেকে জানতাম বিছানার পাশেই ড্রিম লাইটের সুইচ থাকে,সুইচ বোর্ডের ওপর এলোপাতাড়ি হাত চালাতে থাকি।হঠাৎ একটা লাইট জ্বলে উঠলো।অমনি সে আমার ওপরে উঠে পরে।মুহুর্তেই চমকে উঠলাম আমি।মনের অজান্তেই নিজের মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো।

—একি ভাবী তুমি…..????

চলবে…..

#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—১৩
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—-একি,ভাবী তুমি!

সিমরান ভাবী বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পরে।সে নিজেও বুঝতে পারে নি আমি এরকম একটা কান্ড ঘটাবো।

—একি,এটা কি করলে তুমি?তুমি শর্ত ভঙ্গ করলে শেষ পর্যন্ত।

—হ্যাঁ,করেছি শর্ত ভঙ্গ।তার আগে বলো তুমি এখানে কি করছো?

—এমন ভাব করছো যেনো কিছুই জানো না!আমি জোর করে নিয়ে এসেছি তোমায় এখানে।

—তার মানে ঐ ফেইক আইডিটা তোমার ছিলো।তুমি এতোদিন ধরে ব্ল্যাকমেইল করে আসছো আমায়?ছিহ,ভাবী ছি!এটা না করলেও পারতে আমার সাথে।

—বিশ্বাস করো আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না,আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছিলাম।

—আমার ঐ ভিডিও টা তুমিই করেছো লুকিয়ে তাই না,এতো বড়ো একটা ষড়যন্ত্র করলে আমার বিরুদ্ধে আবার গলা উঁচু করে কথা বলছো?

—না,তুমি ভুল ভাবছো।আমি কোনো ভিডিও করিনি।

—তাহলে ওটা এলো কিকরে তোমার কাছে?

—আমি জানি না,কেউ একটা ভিডিওটা আমার কাছে পাঠায়।আমি ভাবলাম তোমাকে এমনিতে কনভেজ করতে না পারলেও এই ভিডিওর ভয় দেখিয়ে যদি তোমাকে নিজের করে পেতে পারি।

সিমরান ভাবীর কথা শুনে আমি যেনো আবারো চমকে উঠলাম।যেহেতু সে আমার কাছে হাতেনাতে ধরাই পরে গিয়েছে তাহলে এখন তার মিথ্যে বলে কি লাভ।সত্যিই কি ভিডিওটা ভাবী করেনি,অন্য কেউ করেছে।তাহলে কি শিমুল আপু করেছে।কিন্তু শিমুল আপুর এটা করে লাভটা কোথায় আর ও আবার কিনা সেটা ভাবির কাছে পাঠিয়ে দিলো।শিমুল আপু মা হতে পারছিলো না অনেকবছর ধরে,ও এক প্রকার নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আমার কাছে সাহায্য চায়।আমি নিজের কথা না ভাবে ওকে সাহায্য করি।আমার দ্বারা শিমুল আপু অন্তসত্বা হতে পেরেছে,যা এতোগুলো বছর এতো চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।তাহলে ও এসব নোংরামি কেনো করতে যাবে,কেনো ইচ্ছে করে আমাকে বিপদে ফেলবে।এটাই মাথায় ঢুকছে না আমার।

—বিশ্বাস করো পল্লব,তোমার কোনপ্রকার ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না আমার।আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছিলাম।আর কিছু নয়।
(সিমরান ভাবীর কথায় আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো)

—এটা বলতে তোমার বাঁধছে না,আমার বড়ো ভাইয়ের স্ত্রী হও তুমি।আমি তোমার থেকে বয়সে আর সম্মানে দুটো জায়গা থেকেই নিচে।তোমার আমার সাথে এই বেহায়াপনা মানায় না।

সিমরান ভাবী সংকোচ ভেঙে আবারো আমার কাছে চলে আসলো।তারপর আমাকে বলতে লাগলো।

—এটা বেহায়াপনা নয়,এটা আমার ভালোবাসা।আমি তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তোমার প্রতি একটু একটু দূর্বলতা সৃষ্টি হয় আমার।আমি তোমাকে কখনোই বলবো না আমাকে বিয়ে করো,আমি সারাজীবন তোমার ভাবী হয়েই থাকবো।শুধু আমায় তোমার এই শরীরের অধিকারটুকু দাও।

—শাট আপ,জাস্ট শাট আপ।তুমি এখন অন্য কারোর স্ত্রী।আমি তোমার কাছে একজন পরপুরুষ ছাড়া কিছুই নই।দর্পণ ভাইয়াকে ছেড়ে তুমি কারোর কথা ভাবতে পারো না।এটা গুনাহ!

—তোমার দর্পণ ভাইয়া কোনোদিন আমার অন্তরের চাওয়া পূরণ করতে পারবে না,ওর ভেতরে সেই ক্ষমতাই নেই।যা বয়সে ছোট হয়েও তোমার ভেতর আছে।জানো তো সেই বিয়ের আগ থেকেই তোমার মতো একজন শক্ত সামর্থ্য পুরুষ মনে মনে আশা করে রেখেছিলাম।কিন্ত আমার দুর্ভাগ্য দেখো তোমার ভাইয়ার মতো একটা নপুংশক জুটেছে আমার কপালে।

—আমার ভাইয়ের বিষয়ে একটাও বাজে কথা বলবে না।আমি জানি ভাইয়া কতোটা ভালোবাসে তোমায়,তোমার খেয়াল রাখে আর তুমি কিনা তার গিবত গাইছো আমার সামনে বসে।

—ঠিক আছে।আমি আর কখনো বলবো না এগুলো।সব ভুলে যাবো।আজ রাতটা দুজন একসাথে কাটাই।তারপর কাল থেকে সব ভুলে যাবো,ভুলে যাবো আমাদের দুজনের ভেতর কিছু হয়েছিলো।

—না,এটা হয় না আমাকে ক্ষমা করো।তুমি আমাকে যে দৃষ্টিতেই দেখো না কেনো আমার কাছে তুমি শুধুই আমার বড়ো ভাইয়ের বৌ।আমি তোমার সাথে নোংরা কাজ করার কথা ভাবতেও পারি না।

ভাবী আমাকে একটা ধাক্কা মেরে বিছানার ওপর ফেলে দিলো।তারপর আমার ওপরে উঠে পড়ে।আমাদের দুজনের ঠোঁটের ব্যবধান মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার।ভাবী ফিসফিস করে বলতে লাগলো।

—প্লিজ আজ নিরাশ করো না।এতোটা কাছে এসেও এভাবে চলে গেলে আমি তরপাতে তরপাতে ম রে যাবো।তুমি ভাবতে পারছো না আমার মনের ভেতরে কি চলছে এখন।পায়ে পড়ি তোমার এভাবে আমাকে ছেড়ে যেও না পল্লব।কয়েক মূহুর্তের জন্য ভুলে যাও আমি তোমার ভাবী।

—প্লিজ ছাড়ো আমায়,বড্ড অস্বস্তি লাগছে আমার।

—একটিবারের জন্য প্লিজ,আর কোনোদিন তোমার সামনে এই দাবী নিয়ে আসবো না।কিছু সময় সহ্য করো আমায়।

নাহ্,অনুভব করতে পারছি ধীরে ধীরে সংযম হারাচ্ছি আমি।আর একটু দেরী হলে আজ বিরাট বড়ো ভুল হয়ে যেতে পারে আমার দ্বারা।একবার আমার ইন্দ্রিয় জাগ্রত হলে আর আটকে রাখতে পারবো না নিজেকে।এক ঝটকায় ভাবীকে সরিয়ে দিলাম।

—আমায় ক্ষমা করো ভাবী, তোমার যন্ত্রণাটা বুঝতে পেরেছি আমি কিন্তু আমি কিছু করতে পারবো না।তবে কথা দিচ্ছি তোমার প্রবলেম আমি দূর করবো,আমার ভাইয়াকে নিয়েই হ্যাপি থাকবে তুমি।
এটা বলে শার্টটা গায়ে হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাই।তারপর সেটা গায়ে জড়াতে জড়াতে নিচের সিঁড়ির দিকে যেতে থাকি।সিঁড়ি থেকে নামার সময়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম রুমের দরজাটা এখনো খোলাই আছে।




পরের দিন সকালবেলা।
রাতেই সিমরান ভাবী বাসায় চলে এসেছে।ভাগ্যিস ভাইয়া বাসায় নেই।নয়তো কি যে হয়ে যেতো কে জানে।আমার জন্য যদি আমার ভাইয়ের সংসার ভাঙ্গে সেটা কিছুতেই মানতে পারবো না।দর্পণ ভাইয়ার স্থান আমার কাছে নিজের বাবার থেকে কোনোঅংশে কম নয়।আব্বা বেশিরভাগ সময়ে বাড়ির বাইরে থাকতো, ছোটোবেলায় ওই কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে আমায়,আমার সমস্ত চাওয়া মুখ ফুটে বলার আগেই পূরণ করেছে এমনকি এখনো করে চলছে।কোনোকিছুর বিনিময়ে আমি ওকে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না।
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম, দেখতে পেলাম শিমুল আপু আর প্রাচী বাইরে কোথাও একটা বেরিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ একটা বিষয় মাথায় আসলো আমার।ঘর থেকে বেরিয়ে শিমুল আপুর রুমের দিকে গেলাম।ওর প্রেগনেন্সি রিপোর্টটা আমার এখনো দেখা হয়নি।আমার জানি না কেনো ওটা দেখার ইচ্ছে হলো।অন্তর থেকেই একটা অদ্ভুত সাড়া পেলাম।শিমুল আপুর ঘরে ঢুকে চারদিকটা খুঁজতে থাকি।দরজাটাও বন্ধ করি নি,দরজা বন্ধ করে খুঁজতে বিবেকে বাঁধছিলো।যদিও এইভাবে পারমিশন ছাড়া কারোর ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া ঠিক না।খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে রিপোর্টটা ওয়্যারড্রপের ভেতরে পেয়ে গেলাম।তারপর বের করে এনে খুলতে লাগলাম দেখার জন্য।কাগজগুলোর দিকে তাকিয়ে ভরকে গেলাম আমি।

—অদ্ভুত তো,এসব কি দেখছি আমি।হাসপাতালের ফাইলের ভেতরে তো প্রেগনেন্সির কোনো রিপোর্ট নেই।কতগুলো অন্য কাগজ।

প্রেগনেন্সি রিপোর্ট কোথায় গেলো তাহলে,শিমুল আপু সত্যিই প্রেগনেন্ট তো?আচ্ছা ও সেদিন রাতে আমার কাছে কি সত্যিই কি কোনো বেবীর জন্য এসেছিলো তো,নাকি ওটা কোনো বাহানা ছিলো… এই বিষয়টাই সকাল থেকে মাথায় ঘুরছিলো আমার,এখন দেখছি সেটাই সত্যি প্রমাণ হচ্ছে!!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here