একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-১৪,১৫

0
1464

#একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-১৪,১৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

হঠাৎ শিমুল আপু ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো।আমি চমকে উঠলাম ওকে দেখে।

—একি,তুমি বাইরে যাও নি?

—না,কিন্তু তুই আমার ঘরে কি করছিস?আর হাতে কি ওটা তোর?

শিমুশ আপু আমার দিকে এগিয়ে এলো।আমি ওকে মেডিকেল রিপোর্টটা দেখিয়ে বলি।

—এটা না তোমার প্রেগনেন্সি রিপোর্টের ফাইল?

—হ্যাঁ!

—কিন্তু আমি তো ভেতরে কোনো রিপোর্ট পেলাম না।কতগুলো ভুলভাল কাগজ।

শিমুল আপু আমার কথা শুনে চারদিকে তাকিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো,তারপর নিজের বিছানার চাদরের নিচ থেকে কতগুলো কাগজ বের করে আমাকে দেখায়।

—এই যে রিপোর্ট,আমি ইচ্ছে করেই লুকিয়ে রেখেছিলাম।

—কিন্তু কেনো,এই বাড়ির সবাই তো জানে তুই প্রেগনেন্ট,তাহলে লুকোনোর কি আছে বুঝলাম না?

—আমি আমার ব্যক্তিগত কিছু প্রয়োজনে লুকিয়ে রেখেছি,তুই বুঝবি না এসব ব্যপার।বাড়ির লোকজন ছাড়াও বাহির থেকে আরোও কতো লোক আসে এই বাড়িতে জানিস তো?

—আচ্ছা,তা তুমি প্রাচীর সাথে কোথায় বেরিয়েছিলে আবার যেতে না যেতেই ফিরে আসলে?

—ওই বলেছিলো একটু মার্কেটে যাবে আমাকে নিয়ে,রাস্তায় যেতে না যেতেই মাইগ্রেন প্রব্লেম শুরু হলো ওর,আর যেতে পারলাম না।

আমি শিমুল আপুর কথা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবো ঠিক তখন ও পেছন থেকে ডাক দিলো আমায়।

—আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি তোকে পল্লব,

—হ্যাঁ বলো।

—এই বিয়েতে তোর মত আছে তাই না?

—কোন বিয়েতে?

—কোন বিয়েতে আবার,তোর আর প্রাচীর বিয়েতে?

—তোমায় কে বললো এই কথা?

—না, এমনি। আমার মনে হলো?

—তুমি আমাকে এখনো ঠিকঠাক চিনতেই পারো নি শিমুল আপু।তুমি তো জানো তোমার গর্ভের এই বাচ্চাটা আমার।আমার ওর প্রতি কিছু দ্বায়িত্ব আছে।শুধু ওর প্রতি কেনো,আমার বাচ্চার মা তুমি!তোমার প্রতিও আমার কিছু কর্তব্যবোধ আছে।আমি কিনা এসব ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবো।এটা ভাবলে কিকরে তুমি?

শিমুল আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে,আমি ওকে নিয়ে বিছানার ওপরে বসালাম।তারপর ওর চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলি।

—প্লিজ কান্না করো না,আমি জানি তোমার ওপর দিয়ে কি বয়ে চলছে।আমার এক্ষুণি গিয়ে উচিত সবটা আমার পরিবারকে জানানো।যদি ওরা তোমাকে মেনে নাও নেয় দরকার পড়লে এই বাড়ি থেকে অন্য কোথাও চলে যাবো আমরা।তারপরেও আমি নিজের কর্তব্য থেকে দূরে সরে আসবো না কখনোই।একটা কথা বলে রাখছি তোমার আর তোমার এই বাচ্চার দ্বায়িত্ব আজীবনের জন্য আমার,আর আমি এটাও চাই না আমার সন্তান অন্য কোনো কাপুরুষের পরিচয়ে বড়ো হোক,যদি তার জন্য তোমাকে বিয়ে করতে হয় আমি তাই করবো।কিন্তু আমার মনের একটা খটকা দূর না হওয়া পর্যন্ত আমি যে সামনে পা বাড়াতে পারছি না।

—খটকা,কিসের খটকা?
(শিমুল আপু অবাক দৃষ্টিতে আমায় প্রশ্ন করে)

—পরে বলবো তোমায়,যখন সেই খটকার সমাধান করতে পারবো।তুমি প্লিজ সেই কয়েকটা দিন সবকিছু সহ্য করে থাকো।আমি শীঘ্রই আমার পরিবারকে তোমার আমার ব্যপারে সবটা জানাবো,তোমায় কথা দিচ্ছি।

শিমুল আপুকে কিকরে বলি ও আমার সন্দেহের তালিকার বাইরে নয়।আমি এখনও ওকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না।যতোদিন না পর্যন্ত নিজের বিশ্বাস ফিরে আসে আমি কিছুতেই ওকে আমার জীবনে স্থান দিতে পারবো না।শিমুল আপুকে রেখে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।

বাইরে এসেই দেখি ভাইয়া বসে বসে ফোন ঘাটছে।আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম।ভাইয়া আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।

—কিরে কিছু বলবি?

—হ্যাঁ,তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো আমার।

—কি কথা,বল।

নাহ,আজ আর সংকোচ করলে চলবে না।ভাইয়াকে যেরকেই হোক ওদের সমস্যার ব্যপার আমায় বুঝাতে হবে।আমি ভালো করেই জানি ভাবি যেগুলো বলেছে তা মিথ্যে নয়।কোনো স্ত্রী এমনি এমনি এরকম একটা সেনসিটিভ বিষয়ে স্বামীর ওপর দোষ চাপিয়ে দিতে পারে না।

—তুমি আর ভাবী হ্যাপি তো ভাইয়া?

–মানে,এ আবার কেমন প্রশ্ন?

—যা জিজ্ঞেস করেছি বলো।

—তোর দেখে কি মনে হয় আমরা অসুখী,কোনোদিন দেখেছিস আমাদের ভেতরে কথা কাটাকাটি হয়েছে।

—সব জিনিস দেখা যায় না ভাইয়া।যেটা দেখা যায় না আমি সেই দিক থেকেই জিজ্ঞেস করেছি তোমরা হ্যাপি কিনা?

লক্ষ্য করছি ভাইয়া আমার কথা শুনে বেশ ইতস্ততঃ বোধ করতে লাগলো।ও হয়তো এখনো বুঝে উঠে পারছে না আমি কি বলেছি।

—বুঝলাম না তুই এগুলো কি জিজ্ঞেস করছিস আমায়,কেনো করছিস।

—বাবার মতো তোমাকেও বরাবর দেখে আসছি বাইরের কাজ ব্যবসা এগুলোই তোমার একমাত্র প্রায়োরিটি।তুমি তো আমার থেকে বড়ো,তুমি আমার থেকে ভালো বুঝো একজন স্ত্রীকে শুধু খাওয়া পরা দিয়ে সুখী করা যায় না ভাইয়া,আরো অনেক বিষয় থাকে।

ভাইয়া হা হা তাকিয়ে আছে আমার দিকে।কিছুই বলছে না আমায়।

—আর যদি তোমার কোনো প্রবলেম থেকে থাকে আমি বলবো তুমি ডাক্তার দেখাও।নিজের সংসারের দিকে মনোযোগ দাও।ভাবী হয়তো খুব একটা ভালো নেই।

এই বলে আমি ভাইয়ার সামনে থেকে উঠে গেলাম।একটা কথা সত্যি ভাইয়া আমার কথা ঠিকই বুঝতে পেরেছে,হয়তো লজ্জায় সেটা বুঝতে দিচ্ছে না।আমি চাইলেই ভাইয়াকে গতরাতের সব ঘটনা বলে দিতে পারতাম,তাতে কারোর কোনোদিক থেকে ভালো হতো না।ওদের সম্পর্কটা ভাঙ্গতো।ভাইয়া আমার কথার গুরুত্বটা বুঝে যদি ভাবীকে একটা ভালো ফিডব্যাক দিতে পারে তবে হয়তো ভাবী পাল্টেও যেতে পারে।কারণ আমি ভালো করেই জানি ভাবি কিসের অপূর্ণতায় ভুগছে,ভাইয়া সেটা আগে পূরণ করতে পারলে হয়তো জল এতোদূর গড়াতোই না।সত্যি বলতে ভাবীর থেকে ভাইয়ার ওপর বেশী রাগ হয় আমার।ওর উদাসীনতার জন্য ভাবী আজ পথভ্রষ্ট।




আজকের সন্ধ্যায় আমি প্রাচীর জন্য ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ কিনে আনি,ওর মাইগ্রেন প্রব্লেম এর জন্য।ওষুধগুলোকে দেবার জন্য ওর রুমের ভেতরে ঢুকলাম,কিন্তু ভেতরে কোথাও প্রাচী নেই।ওর ল্যাপটপ আর ফোন টেবিলের ওপরে পড়ে আছে।ওষুধগুলো রাখার জন্যে টেবিলের ড্রয়ারটা খুললাম।ভেতরে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম আমি।ড্রয়ারের ভেতরে কতগুলো ছবি রাখা।এগুলো তো সব আমার আর শিমুল আপুর সেই ঘনিষ্ঠ মূহুর্তের সময়ের!তার মানে সেইদিন ভিডিও করার সময়ে ছবিও তোলা হয়েছে কারণ এই ছবিগুলো দেখে ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে এগুলো কোনোভাবেই ভিডিও ক্যাপচার করে বানানো হয়নি।প্রত্যেকটি ছবিতে আমার মুখমন্ডলের ওপরে লাল লিপস্টিক দিয়ে ক্রশ চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়েছে!

—কিন্তু এই ছবিগুলো প্রাচীর ড্রয়ারে কি করছে?তবে কি সেদিন রাতের ভিডিও….এটা হয় কিকরে?

চলবে……

#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—১৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

ছবিগুলো বের করে একে একে আমি দেখতে লাগলাম।যতোই দেখছি গা গুলিয়ে উঠছে।প্রাচী কিনা এগুলো নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছে।অথচ আমি এর কিছুই জানি না।তাহলে কি সেদিন রাতের ভিডিও রেকর্ডটা ওরই ছিলো,কিন্তু সেটা কিকরে সম্ভব?ঐ রাতে বাড়িতে আমি,বাবা-মা আর শিমুল আপুই ছিলো।তবে এটাও হতে পারে হয়তো কেউ বাইরে সত্যি ছিলো,যখন আমরা ব্যস্ত ছিলাম সেই সুযোগে সে আমাদের ঘনিষ্ঠ মূহুর্ত রেকর্ড করেছে।
হঠাৎ আমার চোখটা প্রাচীর ল্যাপটপের ওপর পড়লো।চারদিকটা তাকিয়ে দেখি কেউ নেই আশেপাশে।তড়িঘড়ি করে ল্যাপটপের কিবোর্ডের আঙ্গুল চালালাম।হতেই পারে এই ল্যাপটপের ভেতরে সেদিনের ভিডিওর কোনো ক্লু পেয়ে যাবো,কিন্তু পাসওয়ার্ড না জানার কারণে আমাকে নিরাশ হতে হলো।ইতিমধ্যে আমাকে ভরকে দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রাচী ঢুকে পড়ে।আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গেলাম ওকে দেখে।এইভাবে হঠাৎ করে কোথা থেকে চলে আসলো বুঝতে পারছি না।

—কি ব্যপার তুমি আমার ল্যাপটপ ঘেটে কি করছো?

—ঘাটলাম কোথায়,তুমি যে পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছো।

—ওহ, তার মানে তুমি সত্যি দেখতে চেয়েছিলে,এইভাবে কারো ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া ঠিক না জানো না।

—হ্যাঁ,জানি।কেনো জানবো না।

–তোমার থেকে এটা আশা করি নি আমি পল্লব,তুমি কিনা আমার ঘরে ঢুকে!

—ভাগ্যিস ঢুকেছিলাম,তাইতো আজ অনেক কিছু দেখতে পারলাম।

—কি দেখেছো তুমি,আজব!

আমি ড্রয়ার থেকে ছবিগুলো আবারো বের করে ওকে দেখিয়ে বলি।

—এইগুলো তোমার ড্রয়ারে কি করছে?

—কি এগুলো,দেখে তো ছবি মনে হচ্ছে।আমাকে দেখাও…

—নাটক করছো,তোমার ড্রয়ারে কি আছে তুমি জানো না?

—সত্যি বুঝতে পারছি না এগুলো কিসের ছবি।আর কি হয়েছে বলো তো, তুমি আমার সাথে এইভাবে কথা বলছো কেনো, কি করেছি আমি?

আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি প্রাচী সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করছে আমার সামনে,ওকে ছবিগুলো দেখাতে যাবো ঠিক তখন ওপরের ঘর থেকে আম্মার ডাক এলো।আমি ছবিগুলো নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।আম্মার ঘরে যাবার সময়ে সেগুলো ছিঁড়ে ডাস্টবিনের ভেতর ফেলে রাখলাম।যাক নোংরা জিনিসের স্থান এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে।কাল সকালেই ময়লার লোক এসে নিয়ে যাবে এগুলো।তবে প্রাচীকেও আমি দেখে নেবো।ওকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।আম্মার সাথে কথা বলে ওনার ঘর থেকে একটু পরে বেরিয়ে আসলাম।
এরপর সবাই মিলে রাতের খাবার সারি।খাওয়া দাওয়ার পরে যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।প্রাচীকে ওর ঘরে যাবার জন্য আমার নতুন রুম অতিক্রম করে যেতে হয়।আমি অপেক্ষা করতে থাকি কখন প্রাচী আমার রুমের সামনে দিয়ে যাবে।একটু পরে আমি কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পাই।প্রাচী দরজার কাছাকাছি আসতেই ওকে এক টানে রুমের ভেতরে নিয়ে আসলাম।তারপর ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরি,আমার হাত ওর মুখে।প্রাচী শান্ত হতেই আমি হাতটা সরিয়ে নিলাম।

—কি হলো,আমার সাথে কিন্তু অসভ্যতা করছো তুমি পল্লব?

—অসভ্যতার তো কিছুই দেখো নি এখনো,আগে আমার কথার সাফ সাফ উত্তর দাও নয়তো আজ তোমার সাথে কি করি দেখো।
(আমি ফিসফিস করে প্রাচীকে বললাম,ওর আর আমার মুখের ব্যবধান মাত্র কয়েক ইঞ্চি)

—কি করবে তুমি আমার?

—কিছুই করবো না, আগে বলো আমার ঐ ছবিগুলো তোমার কাছে গেলো কিকরে? আমি এটাও দেখেছি তুমি ছবিগুলোর ওপরে ক্রশ সাইন দিয়ে রেখেছো।বলো এসবের মানে কি?

—আরে কিসের ছবি,আমি কি করেছি?আমি কিছু জানি না বিশ্বাস করো।

—আমায় রাগিয়ে দিও না প্রাচী।যা বলছি ভালোয় ভালোয় উত্তর দাও।

—বললাম তো কিছু বুঝতে পারছি না আমি, তোমার কোনো ছবি নেই আমার কাছে।

—আমায় মিথ্যে বললে আজ তোমার এমন অবস্থা করবো কাউকে মুখ দেখানোর মতো অবস্থা থাকবে না!

—তোমার মতলবটা কি বলো আমায়,আমার সাথে জোর করে কিছু করার চেষ্টা করো না একদম।চিৎকার করবো কিন্তু।

—বলো ঐ নোংরা ছবিগুলো তোমার কাছে গেলো কিকরে,তুমি তুলেছো ওগুলো?

—কিসের নোংরা ছবি,কি বলছো কি তুমি?

—বুঝতে পারছো না, ঠিক আছে নিজের মুখেই বলছি।আমার কতগুলো আপত্তিকর সময়ের ছবি তুমি নিজের কাছে রেখেছো?

আমার কথা শুনে প্রাচী আমাকে অবাক করে দিয়ে হেসে উঠলো।

—এইবার বুঝতে পেরেছি তুমি নিশ্চয়ই প্রাঙ্ক করছো আমার সাথে।তোমার আমার আপত্তিকর ছবি,কেনো তুমি আবার আপত্তিকর কখন কি করলে,আর কার সাথে?

বুঝতে পারছি না প্রাচীর এই অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ।ছবিগুলোর কথা শুনে ওর চোখেমুখে ধরা পড়ে যাবার ভয়ের কোনোরকম ছাপ লক্ষ্য করছি না, বা তখনো ঘরে বসেও লক্ষ্য করিনি।ও কি সত্যিই ছবিগুলো বিষয়ে কিছুই জানে না।যদি নাই জেনে থাকে তবে এগুলো ওর ড্রয়ারে গেলো কিকরে?কোনো মানুষ হাতেনাতে ধরা পড়া সত্ত্বেও এরকম ব্যবহার করতে পারে এটা কখনো আগে দেখিনি আমি।প্রাচীর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে ও সত্যিই কিছু জানে না,ও উল্টো ভাবছে আমি মজা করছি ওর সাথে।বুঝতে পারছি না কিছুই,ভালোই করেছি ছবিগুলো ছিঁড়ে।ওকে একবার দেখালে ব্লান্ডার হয়ে যেতে পারতো।কিন্তু ও কি সত্যিই কিছু জানে না নাকি এটাও ওর নাটকের কোনো অংশ সেটা বুঝবো কিকরে।আমি আর কিছুই বললাম না।ওকে ছেড়ে দিলাম।

—আমার মনে হয় তুমি মজা করছো,নয়তো নেশা-টেশা করেছো।যাও এবার ঘুমাও গিয়ে ঠান্ঠা মাথায়।আর আমার সাথে এসব সস্তার প্রাঙ্ক করতে এসো না!

প্রাচী একপ্রকার বিদ্রুপ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।একবার ভেবেছিলাম শিমুল আপুর সাথে এই নিয়ে কথা বলবো,কিন্তু সেও বাড়িতে নেই।সন্ধ্যাবেলা ওর কোনো একটা বান্ধবীর বিয়েতে গিয়েছে।আগামীকাল সকালে ফেরার কথা।আমি দরজাটা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।কিছুতেই ঘুম আসছে না।বারবার ছবিগুলোর কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।এগুলো চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল নেই।


মাঝরাতে হঠাৎ একটা চিৎকারের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।হুড়মুড় করে বিছানার ওপরে উঠে বসলাম।মনের ভুল নয়তো কোথাও, নাকি স্বপ্ন দেখেছি।একটু পরে আবারো একটা আওয়াজ ওপরের ঘর থেকে ভেসে আসলো।আমি রুম থেকে বেরিয়ে সেদিকে ছুটে গেলাম।যেতে যেতে আম্মা আর প্রাচীর সাথে দেখা হয়।ওরা আমার আগেই জেগে গিয়েছে।আম্মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে।

—এই শব্দটা কোথা থেকে আসলো রে,আমার তো মনে হচ্ছে তোর ভাইয়াদের ঘরের ওদিক থেকেই…

—হ্যাঁ,আমারও তাই মনে হচ্ছে।

ভাইয়ার ঘরের দিকে ছুটে গেলাম আমরা।ওরা সচরাচর দরজা বন্ধ করে ঘুমায়।কিন্তু আজ খোলা দেখতে পাচ্ছি।ভয়ে ভয়ে সেইদিকে এগিয়ে গেলাম আমরা।না জানি সবার জন্য কি অপেক্ষা করছে,এক অজানা ভয়ের আতংকে বুক কাঁপতে লাগলো আমার।রুমের লাইফ অফ থাকাতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।আমি সুইচবোর্ডের দিকে এগিয়ে যেতেই পায়ে কিছু একটা ঠেকলো।কারোর নিথর শরীর মনে হচ্ছে।আর সামনে এগোনোর শক্তি বা সাহস সঞ্চয় করতে পারছি না আমি,বুকটা ধুকধুক করতে লাগলো।প্রাচীকে বললাম লাইটটা জ্বালাতে। ও ইতিমধ্যে গিয়ে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে ফেলেছে।চারপাশটা আলোকিত হতেই আম্মা একটা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।দেখতে পাচ্ছি দর্পণ ভাইয়ার ছুড়িবিদ্ধ শরীর আমার পায়ের কাছে পড়ে আছে!সারা শরীর মূহুর্তেই কেঁপে উঠলো আমার!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here