#মেঘবতী_মিথ্যে_বলেনি-০২,০৩
#মৌলী_আখন্দ
০২
বৃষ্টিতে আহত ফুলগুলো দেখে খুব মায়া হচ্ছিল আনানের। কিন্তু কুড়িয়ে নিতে গিয়ে দেখল অধিকাংশই একদম দলে মুচড়ে গিয়েছে।
ওর মধ্যেই একটা আস্ত ডাল পেয়ে গেল আনান। ডালটা থেকে আস্ত ফুলগুলো ছিঁড়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে হেঁটে হেঁটে বেরিয়ে গেল ক্যাম্পাস থেকে।
অফিস শেষের জ্যাম শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই, আর এই শহরে দুই ফোঁটা বৃষ্টি হলে তো আর কথাই নেই। আজকে তো রীতিমত ঢালাও বর্ষণ হয়েছে।
আজকে এমনিই সূর্যের মুখ দেখা যায়নি সারাদিন, আনান যখন হিমিকাদের বাসায় গিয়ে পৌঁছাল তখন পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্যের শেষ নীলাভ আভাটুকুও লাজুক লতার মত মুখ লুকিয়ে ফেলেছে রাতের কালো চাদরের নিচে। ঘড়ির কাঁটা সাতটা ছুঁই ছুঁই।
হিমিকার মায়ের মুখের কাঠিন্য প্রস্তর মূর্তিকেও হার মানাবে। তিনি কিছু বলবার আগেই আনান তড়িঘড়ি করে বলে উঠল, “কালকে এক্সট্রা পড়িয়ে দেব আন্টি!”
আন্টি চলে যেতে যেতে দেয়ালকে শুনিয়ে স্বগতোক্তি করলেন, “এই জন্যই প্রাইভেট ভার্সিটির স্টুডেন্ট রাখতে চাই না!”
আনানের চোখে জল এসে গেল প্রায়। আজ কার মুখ দেখে সকালে ঘুম থেকে উঠেছিল কে জানে? একের পর এক বিচ্ছিরি ঘটনা ঘটেই চলেছে।
ঠিক সাড়ে সাতটায় আন্টি আবার এসে ঢুকলেন।
“হিমিকার ইংলিশ টিচার চলে এসেছে। তোমার জন্য আজকে নাস্তা খাওয়ার সময়টাও পেল না মেয়েটা।“
আনান কিছু বলল না। তার পড়ানোর সময় বিকাল পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত।
এরপর সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত হিমিকার চা নাস্তা খাওয়ার ব্রেক। সাড়ে সাতটায় ইংলিশ স্যার আসবার টাইম।
চারটার আগেই ক্লাস শেষ হয়ে যায় আনানের, অন্যান্য দিন পৌনে পাঁচটার মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারে সে। ঠিক সাতটায় হিমিকা আর আনান, দুজনের জন্যই চা নাস্তা চলে আসে।
আজকে আনানের ভাগ্যেও চা জোটেনি। আনান যখন রাস্তায় এসে নামল তখন বৃষ্টির ফোঁটা আবার টিপ টিপ করে পড়তে শুরু করেছে। আজকে মাথা ধরবে নিশ্চিত।
বাস থেকে নেমে অন্যান্য দিন হেঁটে হেঁটেই বাসায় আসে আনান। আজকে ভাঙা ছাতার কল্যাণে রিক্সা নিতে হলো।
তারপরও বৃষ্টিতে কাক ভেজা হতেই হলো। ভাগ্য ভালো গলির মুখেই দেখা পেয়ে গেল মুচি মামার।
এই বৃষ্টির মধ্যে এই রাতেও উনি মাথার ওপরে কালো ছাতা টানিয়ে বসে ছিলেন কেন কে জানে? আনান রিকশা থামিয়ে রিকশায় বসে থেকেই ছাতা সারিয়ে নিল।
রিকশাওয়ালা মহা বিরক্ত। দশ মিনিট বসে থাকার জন্য অতিরিক্ত দশ টাকা দিতে হলো তাকে।
শুধু শুধু দশ টাকা গচ্চা গেল। আজকে শুধু গচ্চা যাওয়ার দিন।
কিছু করার নেই, কালকেও যদি এরকম বৃষ্টি থাকে তাহলে এই ভাঙা ছাতা নিয়ে ক্লাসে যাবে কী করে আনান?
মুচি মামা বিরস মুখে বললেন, “ছাতা এইবার নতুন একটা কিনেন। এইটা আর কত সারাইবেন?”
জবাব দিল না আনান। ভালো দেখে নতুন ছাতা একটা কিনতে চারশ টাকার কমে হবে না।
সামনের মাসের আগে সম্ভব না। ততদিন চালাতে হবে তো।
রুমে ঢুকতে ঢুকতে নয়টা বেজে গেল। দুবার নক করবার পর রুমমেট মালিহা আপু এসে দরজা খুলে দিল বিরক্ত মুখে।
দুজনের এই স্টুডিও এপার্টমেন্টটায় থাকার জন্য মাসে সাত হাজার টাকা দিতে হয়। খাবারের জন্য ডাইনিং এ আরো তিন হাজার টাকা।
যাওয়া আসা, নাস্তা খাওয়া, বইখাতার খরচ বাবদ আরো প্রায় আট দশ হাজার লেগে যায়। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময় পর পর ভার্সিটির সেমিস্টার ফি তো আছেই।
ভাগ্যিস আনান এস এস সি এইচ এস সিতে ভালো রেজাল্ট থাকার সুবাদে ফিফটি পারসেন্ট ওয়েভার পেয়েছিল ভার্সিটিতে। হিমিকা ক্লাস এইটে, একাই আট হাজার টাকা দেয়।
এছাড়াও সকালে আরেকটা টিউশ্যনি করে আনান। আর শুক্র শনিবার একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেয়।
প্রতি মাসে একটু একটু করে জমিয়ে ছয় মাস পর পর সেমিস্টার ফি হয়ে যায়। সব মিলিয়ে দিন চলে যায়।
কিন্তু তার মধ্যে আজকের মত এরকম এক হাজার টাকা গচ্চা যাওয়ার শোকটা একটু বেশিই গায়ে লাগছে।
মালিহা আপু তার মত স্টুডেন্ট না। চাকরিজীবী।
তার কাছ থেকে প্রায়ই ধার করতে হয় আনানকে। আবার মাসের শুরুতে বেতন পেয়ে শোধ করেও দেয়।
ঠিক এই জন্যই কিনা জানে না আনান, মালিহা আপু সব সময়ই বিরক্ত মুখ করে রাখে। কেমন যেন অপরাধী লাগে আনানের। ঠিক সহজ হতে পারে না আপুর সামনে।
আনান বাসায় পরবার ড্রেস বের করে ওয়াশ রুমের দিকে যাচ্ছিল। মালিহা আপু বলল, “আনু তোমার জন্য খিচুড়ি রেখেছি।“
আনান থমকে তাকাল। “খিচুড়ি?”
“হ্যাঁ, আজকে অফিস থেকে ফিরে মন চাইল খিচুড়ি খেতে। তোমার জন্যেও বসিয়েছিলাম। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।“
মালিহা আপুর খাটের নিচে একটা রাইস কুকার আছে। মাসের শুরুতে ডাইনিং এ ফুল টাকা জমা দিলেও তার মাঝে মাঝে উদ্ভট উদ্ভট সময়ে অদ্ভুত অদ্ভুত খাবার খেতে ইচ্ছে হয়।
সকালে আকাশ মেঘলা দেখেই কালো সিল্কের সালোয়ারটা পরে বেরিয়েছিল, ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে ছিটে ছিটে কাদার দাগ লেগেছে। এখনই না ধুয়ে ফেললে চিতি পড়ে যাবে।
সালোয়ার ধুয়ে গায়ের বাকি কাপড় চোপড়ও ধুয়ে একবারে গোসল করে বের হলো আনান। শরীরে আর এক ফোঁটা শক্তি অবশিষ্ট নেই।
আনান ফ্রেশ হয়ে এলে মালিহা আপু বলল, “তোমার ডাইনিং এর তরকারি নিয়ে আসো। শুধু শুধু মিল নষ্ট করবে কেন।“
তাদের ডাইনিং এ কোনো পার্মানেন্ট বুয়া নেই। ছুটা বুয়া সকাল ছটায় এসে নাস্তা বানায়, দুপুরেই দুবেলার রান্না করে রাতের তরকারি রান্নাঘরে বাটিতে ঢেকে রেখে সন্ধ্যায় চলে যায়।
রান্নাঘরে গিয়ে ঢাকা দেওয়া ডিম নিয়ে রুমে এলো আনান। মালিহা আপু আচারের বোয়াম বের করে খিচুড়ির পাশে এক চামচ প্রাণের আচার দিতেই আনানের ইচ্ছে হলো মালিহা আপুকে সালাম করে ফেলে।
সে মুগ্ধ গলায় বলল, “ইস, এই আচারটা যে কি মজা আপু!”
মালিহা আপু মুখ বাঁকিয়ে বলল, “তা কিনলেই পারো। এটা তো আর আমার বাসায় বানানো আচার না। দোকানেই কিনতে পাওয়া যায়। গিয়ে কিনে আনলেই হয়। তা তো আর কিনবে না। কিপটামি করবে আর পরের ঘাড়ে খাবে।“
এই অনাবশ্যক রূঢ়তায় এবার সত্যি সত্যি চোখে পানি এসে পড়ল আনানের। মালিহা আপু সব কিছু জেনেও কীভাবে এমন করে বলতে পারে?
তার ইচ্ছে হলো খিচুড়ির প্লেট রেখে উঠে পড়ে। কিন্তু এটা করা যাবে না।
মালিহা আপু বিরক্ত হলে টাকা ধার দিতে চায় না। এই মুহূর্তে তাকে রাগাতে চাচ্ছে না আনান।
চোখের জল চোখেই শুকিয়ে ফেলে মুখ নিচু করে খাওয়া শেষ করল আনান। খিচুড়ি খাওয়ার আনন্দ পুরোটাই মাটি।
খাওয়া শেষ করে মালিহা আপু বলল, “রাইস কুকারটা ধুয়ে রেখো তো আনু, আমার বাসন ধুতে ভালো লাগে না।“
ইলেক্ট্রিসিটি খরচ হয় বলে এপার্টমেন্টের মালিক তাদের রাইস কুকারে রান্না করে খাওয়া পছন্দ করেন না। তাই সকালে বুয়া এসে ধুয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় রেখে দেওয়া যাবে না এটা।
রাতেই ধুয়ে মুছে শুকিয়ে তুলে ফেলতে হবে। কোনো প্রমাণ রেখে দেওয়া যাবে না রাইস কুকারে রান্না করবার।
নয়ত বুয়া এপার্টমেন্ট ওউনারকে কথা লাগাবে।
মাথা নেড়ে সায় দিল আনান। খাওয়া শেষে রান্নাঘরে গিয়ে রাইস কুকারটা ধুতে ধুতে আচমকা ওর মনে হলো, আচ্ছা মালিহা আপু এই যে ওকে দু চামচ খিচুড়ি আর এক চামচ আচার খাওয়াল সেটা কি এইজন্য যে, আনান তার রাইস কুকারটা ধুয়ে দেবে?
চিন্তাটা মাথায় আসতেই জোর করে মাথা থেকে সরিয়ে দিল আনান। কি সব ছোটলোকি চিন্তা ভাবনা।
মালিহা আপু আর্লি টু বেড আর্লি টু রাইজে বিশ্বাসী। আনানের রাইস কুকার ধুয়ে আসতে আসতে তার বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়া সারা।
আজ দিনটা কি বিচ্ছিরি গেল। এসাইনমেন্ট নিয়ে বসতে হবে এখন, কালকে সাবমিট করবার লাস্ট ডেট।
লাইব্রেরি থেকে অনেকখানি গুছিয়ে এনেছে যদিও, তারপরও কিছু ফিনিশিং টাচ বাকি। রেফারেন্সগুলো ঠিক করতে হবে।
টেবিলে বসে টেবিল ল্যাম্প অন করল আনান। ঠিক সেই মুহূর্তেই টের পেল ওয়াইফাই কানেকশন নেই।
ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল আনানের মেরুদণ্ড বেয়ে। কী করবে সে এখন?
ফোনে টাকাও নেই যে ডাটা রিচার্জ করবে। নানান ঝামেলায় ফ্লেক্সিলোডের দোকানে যাওয়া হয়নি আজকে।
এত রাতে কোথাও যাওয়াও সম্ভব না। শেষ অল্প কিছু টাকা ছিল, সেটা দিয়েই ছোট একটা ডাটা প্যাক কিনে তড়িঘড়ি করে গুগল সার্চ দিয়ে নামিয়ে নিতে শুরু করল প্রয়োজনীয় আর্টিকেলগুলো।
আচমকা টুং করে মেসেজ এলো আনানের ফোনে।
“কী করছেন?”
চলবে
#মেঘবতী_মিথ্যে_বলেনি
।।৩।।
উত্তর না দিলেই চলত, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আনান ফেসবুকে তেমন এক্টিভ নয়। তার ব্যাচের অনেকেই তার ফ্রেণ্ড লিস্টে নেই।
না থাকাই স্বাভাবিক। যে নিজেই বেছে নিয়েছে আত্মগোপনের পথ, তাকে খুঁজে পাবে কী করে মানুষ?
তাই আননোন আইডি থেকে মেসেজ দেখেও ব্যাচমেটদের কেউ ভেবেই মেসেজটা সিন করল আনান। রিপ্লাই দিল, “এই তো আর্টিকেল নামাচ্ছি।“
উত্তর এলো, “কীসের আর্টিকেল?”
থমকে গেল আনান। এ তাদের ব্যাচের কেউ নয়, সাথে সাথেই বুঝে ফেলল।
এবার প্রচণ্ড রাগের সাথে রিপ্লাই দিল সে, “কে আপনি? কেন বিরক্ত করছেন?”
“বিরক্ত করলাম কোথায়? মেজাজ খারাপ মনে হচ্ছে!”
“হ্যাঁ মেজাজ খারাপ, প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ! তো? কী করবেন আপনি? খারাপ মেজাজ ভালো করে দিতে পারবেন?”
“একবার বলেই দেখতে পারেন পারি কিনা!”
খিঁচড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে আনান লিখল, “আমার নেট শেষ হয়ে গেছে, ফোনেও টাকা নাই। অল্প একটু ডাটা কিনেছি। কালকে আমার এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট, রেফারেন্স নামাতে হবে। এর মধ্যে আপনি জ্বালাবেন না প্লিজ!”
“ও এই ব্যাপার? আপনার নাম্বারটা দেন, আমি এখনই লোড করে দিচ্ছি!”
“ফাজলামি করেন? এই চান্সে নাম্বার নেওয়ার ধান্দা!”
“আরে কি আশ্চর্য! নাম্বার নিয়েই বা কী এমন করে ফেলব আমি? ধান্দাবাজি মনে হলে, ফোন করলে সোজা ব্লক করে দেবেন, মিটে যাবে।“
কী মনে করে নাম্বারটা দিল আনান। আর তার মিনিট দুয়েকের মধ্যেই চলে এলো পাঁচশ টাকা ফ্লেক্সি লোড।
আর সেই সাথে মেসেজ, “এরপর থেকে আর লাস্ট ডেটের অপেক্ষায় এসাইনমেন্ট জমিয়ে রাখবেন না, ঠিক আছে?”
এভাবে কেউ অপরিচিত মানুষকে টাকা পাঠায়! ভীষণ অবাক হলেও আর কিছু লিখল না আনান।
রেফারেন্স নামিয়ে কাজ করতে শুরু করল। রাত অনেক হয়েছে।
এসাইনমেন্টের কাজ শেষ করতে করতে একটা বেজে গেল। এখন ঘুমুতে না গেলে সকালে উঠতে কষ্ট হয়ে যাবে।
ব্যাগ গোছাতে গিয়ে আবিষ্কার করল সাইড পকেটে রাখা কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো। কী মনে করে ফুলগুলো বের করে একটা বইয়ের ভাঁজে রেখে মোবাইল ফোনটা সাইলেন্ট করে চার্জে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল আনান।
শুলেই কি আর ঘুম আসে? দু চোখ বন্ধ করলেও মনের মধ্যে হাজারো ভাবনার আনাগোনা।
বন্ধ চোখের সামনে ঘুরে ফিরে বেড়ায় প্রিয় মুখগুলো। এই নিষ্ঠুর শহর থেকে কয়েকশো মাইল দূরে, ছোট্ট একটা বাড়ি কোল পেতে ছিল আনানের জন্য।
সেই বাড়িতে ছিল আম্মা, আব্বা, একটা ভাই আরিফ, ছোট্ট একটা বোন- আরশি। এমন সব বৃষ্টির দিনে তাদের বাড়ির সামনের পথটুকু প্লাবিত হয়ে যেত বর্ষার পানিতে।
পুকুর থেকে কানে হেঁটে হেঁটে উঠে আসত কই মাছ। একবার এই রকম বর্ষায় একটা কই মাছ হেঁটে হেঁটে চলে এলো তাদের উঠোনে।
ছোট ছিল তখনো আনান, কই মাছ চিনত না তখনো। সে ভেবেছিল সাপ।
আরিফ ভাই খপ করে মাছটা ধরে ফেলে নিয়ে গেল বাড়ির পেছনে, আম্মার কাছে। “আম্মা আম্মা দেখো দেখো কী পাইছি…” বলে সে কি উচ্ছ্বাস আরিফ ভাইয়ের।
আম্মা সেই মাছ ভেজে খাইয়েছিল, খুব মনে আছে আনানের। সেই রকম স্বাদ বুঝি আর কখনো হবে না।
দিন ভর কি ছাতার বৃষ্টি হলো, গরম একটুও কমে না। ফ্যানের বাতাসও বুঝি বা গরম।
পাশ ফিরে শুল আনান। দুই চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে।
কত দিন বাড়িতে যাওয়া হয় না আনানের। বাড়িতে যাওয়া নিষেধ তার জন্য।
আশৈশব পরিচিত তার নিজের জায়গায় এখন তার পা ফেলা নিষেধ। তাই সে এই শহরে নির্বাসিত।
কত দিন আরশিকে দেখে না, আরিফ ভাইকে দেখে না। আম্মা আব্বাকে দেখে না।
মাঝে মাঝে আনানের ইচ্ছে করে বাসে উঠে পড়ে। বাড়িতে ঢুকবে না, কাউকে দেখা দেবে না।
দেখা করবে না কারো সাথে। শুধু দূর থেকে একবার উঁকি দিয়ে দেখে আসবে মানুষগুলোকে।
বৃষ্টি হলে কি এখনো উত্তরের ঘরে টিনের চালের ফুটো থেকে পানি পড়ে? আম্মা কি এখনো বড় হাঁড়িটা পেতে রাখে ঝরে পড়া পানির ধারার নিচে?
আম্মা কি চাল ভেজে দেয় সেই আগের মত? চাল ভাজা খেতে খেতে কি আরিফ ভাইয়া বলে, “উফ আম্মা, চাপা ব্যথা হয়ে গেল!”
উঠে বসে পায়ের কাছের জানালার পর্দা সরাল আনান। প্রায় সাথে সাথেই দমকা হাওয়ায় সরে গেল এক চিলতে মেঘ।
নির্লজ্জের মত সবটা সৌন্দর্য নিয়ে উদ্ভাসিত হলো বৃষ্টি ধোয়া চাঁদ। চাঁদটা যেন এতক্ষণ তার অপেক্ষাতেই ছিল।
সেদিকে তাকিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেল আনান।
চলবে