মেঘবতী_মিথ্যে_বলেনি,২১,২২

0
669

#মেঘবতী_মিথ্যে_বলেনি,২১,২২

।।২১।।
কাক ভেজা হয়ে রুমে ফিরল আনান, ফিরেই সরাসরি বাসায় পরবার কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকল। প্রায় এক ঘন্টা সময় পার হয়ে গেলেও যখন ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এলো না সে, মালিহা আপু নক করল।
“আনু এই আনু, তোমার ফোন আসছে!”
আনান জবাব দিল না, তবে ভেতর থেকে পানি পড়ার শব্দ বন্ধ হলো। সে যখন বের হলো মালিহা আপু প্রায় আঁতকে উঠল তাকে দেখে।
দুই চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে। আপু কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আনান নিজে থেকেই কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গি করে বলল, “খুব মাথা ধরেছিল আপু, এই জন্য কলের নিচে মাথা দিয়ে বসে ছিলাম।“
“তোমার কি মাথাটা খারাপ হয়েছে? ভাইভা না এক সপ্তাহ পর?”
কথার মাঝখানেই ফোন বাজল আবার। স্ক্রিনে ভেসে উঠল সায়ানের নাম।
“ফোনটা রিসিভ কর, বেচারা মনে হয় ফোন করতে করতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।“
কোনো কথা না বলে ফোনটা তুলে সুইচড অফ করে দিল আনান। মালিহা আপুর প্রশ্ন বোধক বিস্মিত দৃষ্টির সামনে বলল, “আমার এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না আপু!”
“আরে কি আশ্চর্য! হয়ত তুমি ঠিকঠাকমত পৌঁছেছ কিনা এটা জানার জন্যই ফোন করছে!”
“আমি সব জায়গায় ঠিকঠাকমতই পৌঁছাই আপু! এত সহজে মরণ আসবে না আমার!”
মালিহা আপুকে আর কোনো কথা বলবার সুযোগ না দিয়ে নিজের বিছানায় গিয়ে মুখ মাথা ঢেকে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল আনান। ঘুমিয়ে পড়ল কিনা বোঝা গেল না।
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেল মালিহা আপুর, কী জন্য প্রথমে বুঝতে পারল না সে। কিছু ক্ষণ পর ওয়াশ রুম থেকে বমির শব্দ এলে বুঝতে পারল এই শব্দ শুনেই ঘুম ভেঙেছে।
বিরক্ত হলেও উঠে গেল মালিহা আপু, দেখে বেসিন আঁকড়ে ধরে বমি করছে আনান। এক ঝলক দেখে রুমে ফিরে গিয়ে পানির বোতল নিয়ে এসে মুখের সামনে ধরল।
“কী হলো তোমার আবার?”
কুলি করে পানি খেয়ে হাসল আনান। “জানেন না দেশী কুত্তার পেটে ঘি ওয়ালা বিরিয়ানি সহ্য হয় না?”
“এই সব কী ধরণের কথা?”
“বাজে ধরণের কথা। আর বলব না।“
“কিছু হয়েছে নাকি ওই বাসায়?”
“বলার মত তেমন কিছু না।“
“না বলতে চাইলে নাই। আমি জোর করব না।“
ওয়াশ রুম থেকে রুমে ফিরতে গিয়ে মাথা ঘুরে উঠল আনানের, ধরল মালিহা আপু। ধরেই আঁতকে উঠল।
“এ কী! তোমার তো জ্বর!”
আনান আবার হাসল, অসংলগ্ন হাসি।
“ঠিক করে বল তো কী হয়েছে তোমার? বৃষ্টিতে ভিজেছ খুব?”
উত্তর দিল না আনান। মালিহা আপু ধরে শুইয়ে দিল ওকে।
থার্মোমিটারে দেখা গেল এক শো চার। গজ গজ করতে থাকলেও বিছানায় শুইয়ে মাথায় পানি ঢেলে জ্বর কমাল মালিহা আপু।
আনানের জ্বর কমলে বিস্কিট আর প্যারাসিটামল দিয়ে “আমি শুই, সকালে স্কুল আছে”, বলে মালিহা আপু ঘুমাতে গেল। বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে অন করল আনান।
ভোর রাত চারটা বাজে, রাত আর ভোরের এই সন্ধি ক্ষণ বড়ই রহস্যময় সময়। এই সময়ে শেষ হয় অনেক রাত জাগা পরীক্ষার্থীর পড়া, অনেক প্রেমিক যুগল ফোনে কিংবা চ্যাটে প্রেমময় কথোপকথন, অনেক নববিবাহিত দম্পতির ভালোবাসাবাসি।
আবার অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ এই সময়ই জেগে উঠে প্রার্থনায় বসেন, হই হট্টগোল ভরা কোলাহল পূর্ণ দিন এড়িয়ে যেতে চেয়ে স্রষ্টার কাছে রাতের এই নির্জন প্রহরে চুপি চুপি চেয়ে নেন ইহ লৌকিক কোনো অভীষ্ট কিংবা সেজদায় কাঁদতে বসে আদায় করে নেন পরকালীন মুক্তির নিশ্চয়তা। এই সময়ের প্রার্থনার হাত নাকি সৃষ্টিকর্তা ফিরিয়ে দেন না।
আনান কি কিছু চাইবে সৃষ্টিকর্তার কাছে? জীবনের কাছে কি কিছু চাইবার বাকি রয়ে গেছে তার?
গেটের সামনের মাধবী লতার ঝাড়টা আগের মতই আছে, লোহার গেটটায় কোণায় কোণায় মরিচা ধরেছে খয়েরি রঙের। এক মুহূর্ত দ্বিধা করে দরজায় শব্দ করল আনান।
ভেতর থেকে কেউ কিছু বলবার আগেই পাশ থেকে বুড়ি বাড়িওয়ালার মা, যাকে তারা দাদী বলে ডাকে, খন খনে গলায় বলে উঠল, “কেডা রে? ওই কেডা?”
উত্তর দেবে কি দেবে না এক মুহূর্ত চিন্তা করল আনান। কিছু না বললেও বুড়ি চিৎকার করতেই থাকবে।
ঠোঁট কামড়ে উত্তর দিল তাই, “দাদী আমি!”
“আমি কেডা? আনাসের মাইয়া? জামাই আসে নাই?”
অসহায় ভঙ্গিতে চুপ করে রইল আনান। ভেতর থেকে কেউ এখনো তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসছে না কেন?
বাসায় কেউ কি নেই? আনান জোরে জোরে দরজায় শব্দ করল আবার।
“কে?”
এত ক্ষণে সাড়া এলো ভেতর থেকে। আরশির গলার স্বর।
আনান একটু হাসার চেষ্টা করল। ঠিক ফুটল না হাসিটা।
“আমি”, বলতে গিয়েও বলতে পারল না কিছু। গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না।
“কথা বলে না কেন? ফকির নাকি?”
পাশ থেকে বুড়ি দাদী তার স্বরে চিৎকার শুরু করল, “আরে ফকির না, আমগো আনু!”
দরজা খুলল আরশি। “আপা তুমি?”
দুই চোখে বিস্ময়।
“কে রে আরু?” পেছন থেকে এসে দাঁড়িয়েছে আম্মা।
তাকে দেখেই আবার দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে আম্মা। “না জিজ্ঞেস করে দরজা খুলিস কেন?”
ঝাঁঝিয়ে উঠছে আরশির ওপরে।
“আম্মা আম্মা শোনো ও আম্মা ভেতরে ঢুকতে দাও আম্মা আম্মা প্লিজ শোনো আম্মা আমার অনেক বমি হইছে আম্মা আমার অনেক জ্বর আম্মা দরজাটা খুলো ও আম্মা তোমার পায়ে পড়ি একটু পানি দাও আম্মা আমি আর দাঁড়াতে পারতেছি না আম্মা আম্মা গো…”
ধড় মড় করে উঠে বসল আনান। ও পাশে মালিহা আপুর এলার্ম বাজছে।
একটু ধাতস্থ হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখল সে। না কোথাও যায়নি সে।
এই তো তার রুম, ওই তো ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে মালিহা আপু। লাগাতার এলার্মের শব্দে বিরক্ত হয়ে বন্ধ করল উঠে।
এরপরের রুটিনটা তার জানা। মালিহা আপু এখন উঠে বসে পাঁচ মিনিট কপাল টিপে ধরে বসে থাকবে পাঁচ মিনিট, আর বিড় বিড় করে চাকরির মুণ্ডু পাত করবে।
তারপর ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করবে, ফিরে এসে চুল উলটা করে আঁচড়াবে। আনান আবার শুয়ে পড়ল চাদর মুড়ি দিয়ে।
মালিহা আপু বিরক্ত স্বরে বলল, “ঘুম ভাঙল? গত কাল কী হয়েছিল বল তো?”
উত্তর দিল না আনান।
“দেখো আনু না বলতে চাইলে নাই। আমি তোমাকে বলতে জোর করব না। কারো প্রাইভেট পারসোনাল ব্যাপারে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। কিন্তু তুমি কাজটা করলে কী? তোমাকে তো আমি সিরিয়াস, প্র্যাকটিক্যাল টাইপ মেয়ে বলেই জানতাম!”
চুপ করে রইল আনান।
“এই যে তুমি পরীক্ষার আগে আগে জ্বরটা বাঁধালে, ক্ষতিটা কার হলো কিংবা হবে? সিজিপিএ কমে গেলে কি ওয়েভার থাকবে? কোর্সটা শেষ করতে হবে না?”
মালিহা আপু উত্তরের অপেক্ষা না করে ওয়াশ রুমের দিকে যেতে যেতে বলল, “আমি গেলাম, টাইম নাই এখন। দেরি হলে লেট খাব। তুমি ঘুমাও, ঘুম থেকে ঊঠে ভেবে দেখ কী করা যায়। আমি বুয়াকে বলে রেখে যাচ্ছি যাতে তোমার স্যালাইন বানিয়ে রেখে যায়।“
মালিহা আপু ওয়াশ রুমে ঢুকলে ফোনটা হাতে নিল আনান। সতেরটা মিসড কল উঠে আছে।
কিছু সায়ানের নাম্বার কিছু আননোন নাম্বার থেকে। এখন ডাটা অন করা যাবে না, করলেই টুং টাং করে মেসেজ আসতে থাকবে।
ফোনটা আবার বালিশের নিচে রেখে তীব্র বিষাদ আর গভীর ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল আনান।

চলবে

#মেঘবতী_মিথ্যে_বলেনি
।।২২।।
পরীক্ষার আর ঠিক পাঁচ দিন বাকি, ফোন খুলছে না আনান। ডাটাও অন করছে না।
যদিও কাজটা ঠিক হচ্ছে না, ভুল হচ্ছে। তাদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটস এপ গ্রুপে সব জায়গায় সাজেশন আপলোড হচ্ছে কিন্তু সেগুলো কিছুই পাচ্ছে না সে।
ফোন অন করা প্রয়োজন, ফোনটা অন না করলে এগুলো কিছুই পাওয়া যাবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার নিজের ওপরেই বিশ্বাস নেই।
তার যে কি প্রচণ্ড ইচ্ছে করছে সায়ানকে কল করতে! হাত নিশপিশ করছে বলেই ফোনটা সুইচড অফ করে তালা বন্ধ করে রেখে দিয়েছে তার স্টিলের ট্রাংকে।
জীবনে আর কোনো ভুল করতে চায় না সে, আর কোনো দিকে তাকাতে চায় না। এখন তার লক্ষ্য একটাই, ভালো একটা সিজিপিএ তোলা, কোর্সটা ভালো ভাবে শেষ করে এখান থেকে বের হওয়া।
ভালো একটা চাকরি পেতে হবে, সব কিছু ঠিক ঠাক করতে হবে। এখন এই সব প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে গেলে ফোকাস থেকে সরে যাবে সে, এত কষ্ট বৃথা হয়ে যাবে।
শেষ বিকেলের রোদ মরে এসেছে, মালিহা আপু এসে ঢুকল ঘরে।
“আনু তোমার পার্সেল এসেছে। ফোন অফ করে রেখেছ নাকি?”
উত্তর দিল না আনান। পার্সেল? আবার পার্সেল?
এ কি যন্ত্রণায় পড়া গেল!
আনানের থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে মালিহা আপু সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, “আচ্ছা খুলে তো দেখো আগে!”
প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে প্যাকেটটা ছিঁড়ল আনান, ফ্যানের বাতাসে উড়ে গেল এক টুকরো কাগজ। মালিহা আপু খপ করে ধরল সেটা।
প্যাকেট থেকে আনানের কোলের ওপরে পড়ল এক তাড়া কাগজ। মালিহা আপু উড়ে যাওয়া টুকরো কাগজটা বাড়িয়ে ধরল আনানের দিকে।
ভাঁজ খুলে খুলে পড়ল সেটা।
“এনি,
তুই অনলাইনে আসিস না দেখে ফোন করেছিলাম, ধরিস নাই। তোর কি ফোন নষ্ট?
গত কাল তোর গ্রুপে সাজেশন আপলোড দিয়েছে। তোর গ্রুপমেটদের কাছ থেকে কালেক্ট করে নিয়ে প্রিন্ট করে দিলাম, তোর হিরোকে বলিস আমাকে খাওয়ায়ে দিতে।“
শেষে নাম লেখা নেই, শুধু কয়েকটা মুরগির বাচ্চা আঁকা আর তারপর স্মাইলি ইমো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কার কাজ এটা।
এত কষ্টের মধ্যেও মুরগির বাচ্চাগুলোকে দেখে ফিক করে হেসে ফেলল আনান। মালিহা আপু কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
“কিছু না আপু। এক ফ্রেণ্ড সাজেশন প্রিন্ট করে পাঠিয়ে দিয়েছে।“
মালিহা আপু অনাবশ্যক কৌতূহল দেখাল না, দেখায় না কখনোই। মুরগির বাচ্চাগুলোর ওপরে আদরের হাত বুলিয়ে দিল আনান, এগুলো যেন তার রুক্ষ ঊষর জীবনে এক পশলা বৃষ্টির মতই বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে এলো।
কী মনে করে কাগজটা তুলে রাখল পহেলা বৈশাখের টিস্যুটার সাথে। টিস্যুটাও কেন যেন ফেলেনি, আনান জানে না আসলে।
সাজেশনটা তার ওপরে টনিকের মত কাজ করল, গা ঝাড়া দিয়ে উঠল সে। সন্ধ্যা মিলিয়ে যাওয়ার পর টানা কয়েক ঘন্টা পড়াশোনা করল।
পরীক্ষার আগের কয়েকটা দিন এভাবেই কেটে গেল পাখির ডানায় ভর করে, অসুস্থতার জন্য এক দিন যেতে পারেনি টিউশ্যনিতে, আর পরীক্ষার আগের দিন ছুটি নিয়েছিল শুধু। এ ছাড়া বাকি সবগুলো দিনই টিউশ্যনিতে যাওয়া আর পড়াশোনা করেই কাটল, ফোনটা আর খুলল না আনান।
আনানের রোল শেষের দিকে, ভাইভা শেষ হতে হতে দুটো বেজে গেল। ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসেই আনান দেখল সায়ান দাঁড়িয়ে আছে উদ্বিগ্ন মুখে।
চোখাচোখি হলো কিন্তু কোনো কথা বলল না সায়ান। আনান হাঁটতে শুরু করল।
সায়ান ওর পাশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “মেঘ, আই নিড এক্সপ্ল্যানেশন!”
আনানের এক বার ইচ্ছে হলো বলে “তোমার মায়ের কাছে এক্সপ্ল্যানেশন চাও” কিন্তু নিজেকে অনেক কষ্ট করে সংবরণ করল সে।
“এই এনি, এক্সাম কেমন হয়েছে?’ প্রশ্নটা উড়ে এলো অন্য পাশ থেকে।
জিসানের দিকে তাকিয়ে হাসল আনান। “ভালো। এণ্ড থ্যাংকস ফর দ্যা সাজেশন।“
আনানের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল সায়ান। “তুমি আমাকে এভয়েড করছ মেঘ?”
সায়ানের দিকে সরাসরি তাকাল আনান। “তুমি আমার কাছে পনেরশ টাকা পাবে, নিয়ে এসেছি আজকে!”
“কী কথার কী জবাব!”
“এই নাও তোমার টাকা। আর আমার সাথে কথা বলো না। তোমার মা এটা পছন্দ করছেন না যে আমি তোমার সাথে মিশি!”
টাকা নিল না সায়ান, জিজ্ঞেস করল, “মানে?”
“মানে তো সিম্পল! আন্টি আমাকে তোমার উপযুক্ত বলে মনে করছেন না। এটা তো সহজ কথা। জটিল কিছু তো নয়!”
“আম্মু বলেছে এই কথা তোমাকে?”
“তো? কী মনে হয় তোমার? আমি মিথ্যা কথা বলছি তোমার সাথে?’
“বলতেই পারো! আমার তো মনে হয় জিসানের সাথে তোমার কিছু…”
“হাউ চিপ সায়ান! হাউ ক্যান ইউ ইভেন থিংক লাইক দ্যাট?”
“কেন? সেই পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের দিন থেকেই তো দেখছি ওর সাথে তোমার মাখামাখি!”
“জিসান আমার ফ্রেণ্ড! খুব ভালো ফ্রেণ্ড! আমার প্রত্যেকটা বিপদে ও এগিয়ে এসেছে!”
“কই আগে তো এই ফেণ্ডশিপ দেখিনি? তুমিই এক সাথে দুজনকে নিয়ে খেলছ কিনা তা কে জানে? এখন হয়ত ওর কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে আমাকে এভয়েড করবার জন্য আম্মুর এক্সকিউজ দেখাচ্ছ!”
হাত ছাড়িয়ে অন্য দিকে চলে যেতে উদ্যত হলো আনান। সায়ান আবার ওর হাত চেপে ধরল খপ করে।
“সায়ান প্লিজ! আমাকে যেতে দাও। আমি চাইছি না আমাদের রিলেশনটা আর কন্টিনিউ করতে!”
“কেন? জিসানের জন্য!”
সায়ানকে সরিয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইল আনান। আবারও পথ আটকে সামনে দাঁড়াল সায়ান।
“তুমি এই ভাবে চলে যেতে পারো না মেঘ!”
“আমার যা বলবার ছিল বলেছি। আর কিছু বলবার নেই আমার।“
“তার মানে আমি যা বললাম তাই সত্যি?”
“এই রকম চিপ মিথ্যা কথার উত্তরে আমার বলার মত কিছু নেই।“
“বেশ তো! প্রমাণ দাও যে আমার কথা মিথ্যা!”
“মানে? কীসের প্রমাণ! যে অভিযোগ করে তাকেই অভিযোগ প্রমাণ করতে হয়। পারলে তুমি প্রমাণ কর। আমার কীসের ঠেকা পড়েছে?”
একটা নিঃশ্বাস ফেলল সায়ান। “ওকে। ম্যারি মি!”
“হোয়াট?”
“এক দিন না এক দিন তো বিয়ে করতেই আমাকে, সো হোয়াই নট টুডে, হোয়াই নট নাউ? প্রুভ দ্যাট ইউ রিয়েলি লাভড মি!”
আনান অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে বলল, “ডু ইউ নো দ্যাট ইউ আর সিক?”
“সো আমি কি এটাই বুঝব যে আমি যা এজিউম করেছিলাম সেটাই সত্যি?”
“ইউ জাস্ট গো টু হেল উইথ ইওর ফাকিং এজাম্পশন! তোমাকে কে বলেছিল আমাকে ফলো করতে, স্টক করতে, গিফট করতে, বাসায় নিয়ে যেতে, এখন আবার ক্লাসমেটকে নিয়ে আমাকে সন্দেহ করতে?”
“তাহলে এত দিন আমার সাথে মিশলে কেন? এখন ছেড়ে যাচ্ছ কেন? জিসানের জন্য!”
হাল ছেড়ে দিল আনান। “কিন্তু বিয়ের আগে তো আমার গল্পটা শুনতে হতো তোমাকে! তুমি তো শুনলে না?”
“আই ডোন্ট কেয়ার! যা ইচ্ছা গল্প থাকুক তোমার! বিয়ের পরে সারা জীবন ধরে শুনব! আই ওয়ান্ট ইউ! আই নিড ইউ!”
সায়ানের চোখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল আনান। ধীরে ধীরে বলল, “ওকে। দেন গো ফর ইট।“
জিসান আর রুবাবাকে এখান থেকে দেখা যাচ্ছে, গ্রিলের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে জিসান। রুবাবা ওর সামনে দাঁড়িয়ে।
সায়ান লম্বা লম্বা পা ফেলে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ডাকল, “এক্সকিউজ মি জিসান!”
চমকে তাকাল জিসান। রুবাবাও তাকাল কৌতূহলী চোখে।
এগিয়ে এলো জিসান। “কিছু বলবেন ভাইয়া?”
“আসলে আমরা দুজন একটা প্রবলেমে পড়েছি, ভাবলাম তুমি যদি আমাদের হেল্প করতে পারো!”
“কী ধরণের হেল্প লাগবে?”
সায়ান গলা নামিয়ে বলল, “আসলে আমাদের রিলেশনটা বাসা থেকে মেনে নিতে চাইছে না।“
জিসান তাকাল কৌতূহলী চোখে। “তো আমি কীভাবে হেল্প করতে পারি?”
“আমি ভাবছিলাম যদি আমরা নিজেরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়েটা সেরে রাখি, তুমি তো আনানের ভালো ফ্রেণ্ড, তুমি যদি সাক্ষী হতে!”
জিসানের ভেতরটা পুড়ে যেতে থাকলেও সে গলায় অনাবশ্যক ফুর্তি ঢেলে বলল, “শিওর ভাইয়া, হোয়াই নট? কবে হেল্প লাগবে বলেন!”
“কালকে হলে কেমন হয়? আসলে আজকে হলেই ভালো হতো, কিন্তু আমি আসলে ওকে একটা নতুন শাড়ি কিনে দিতে চাচ্ছিলাম আজকে! আর কাজী অফিসেও খোঁজ খবর নেওয়ার ব্যাপার আছে!”
“শিওর, শিওর ভাইয়া! এনি আমাকে ফোনে ভেন্যু আর টাইমটা জানিয়ে দিলেই আমি চলে আসব!”
জিসান চলে গেলে আনানের আঙুলগুলো শক্ত করে চেপে ধরল সায়ান। গাঢ় স্বরে বলল, “ইউ উইল বি মাইন, ওনলি মাইন!”
এ কথায় আনন্দ হওয়া উচিত ছিল আনানের, কিন্তু তা হলো না। বরং কেমন একটা অজানা আশঙ্কা আচ্ছন্ন করে ফেলল মনটা।
সায়ানের মায়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এ রকম তাড়াহুড়ো করে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফল কি আসলেই ভালো হবে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here