মেঘবতী_মিথ্যে_বলেনি,২৩,২৪

0
727

#মেঘবতী_মিথ্যে_বলেনি,২৩,২৪

।।২৩।।
পার্লার থেকে বেরিয়েই আনান দেখল টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। বিয়ের দিনের বৃষ্টি নাকি শুভ লক্ষণ, তাও আনানের মন খারাপ হয়ে গেল।
বৃষ্টি মানেই রাস্তায় জ্যাম, বৃষ্টি মানেই কাদা পানি সামলে শাড়ী তুলে হাঁটবার ঝক্কি। তাও ভালো ভাগ্যিস সঙ্গে করে ছাতাটা নিয়ে এসেছিল, সকাল থেকেই আজকে আকাশ মেঘলা ছিল বলেই পূর্ব প্রস্তুতি ছিল নয়ত এখন ভিজে একাকার হতে হতো।
মিষ্টি লাল রঙ জামদানিতে আনানকে আজকে আসলেই পরী পরী লাগছে, যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে এক লাল পরী। গত কাল সব কিনে দিয়েছে সায়ান, শাড়ী আর আনুষঙ্গিক সব কিছু।
নিজে নিজে ভালো করে শাড়ী পরতে পারবে না আর সাজের সব জিনিস আনানের নেইও তাই পার্লার খরচের টাকাও দিয়েছে সায়ান। আনানের প্রচণ্ড ভয় লাগছে যদিও।
নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে পারল না আনান, একটু দেরি হয়ে গেল। কাজী অফিসের নিচের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল সায়ান, জিসান আর সায়ানের আরো একজন বন্ধু।
আনান সালাম দিল সায়ানের বন্ধুকে। কেউ কিছু বলবার আগেই জিসান বলল, “এনি তুই কুড়ি মিনিট লেট!”
ফ্যাকাসে হাসি হাসল আনান, ঠিক ফুটল না হাসিটা।
“কিন্তু তোকে সুন্দর লাগছে, তাই দেরি করে আসার অপরাধ এই বারের মত ক্ষমা করে দেওয়া গেল!”
সায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না। চিন্তা করল এক বার বিয়েটা হয়ে যাক তারপর বলবে যা বলবার।
তা ছাড়া জিসান আহমেদের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে তাদের, সেটাও একটা ব্যাপার, ওকে না ঘাঁটানোই উচিত হবে।
কাজী অফিসটা যে বিল্ডিং এ, সেটা পুরনো, সিঁড়িগুলো উঁচু উঁচু। সায়ান আনানের হাত ধরে ওপরে উঠতে সাহায্য করল।
জিসানের ভেতরটা প্রায় পুড়ে যাচ্ছে আজকে, কিন্তু সে নিজেকে ধরে রেখেছে অনেক কষ্টে। আনান যার সাথে, যেখানে সুখী হবে সেখানেই তার সুখ।
আর তা ছাড়া সে তো আনানকে কিছু বলেওনি মুখ ফুটে, এখন আর এই সব চিন্তা করে কী লাভ?
কাজী অফিসের ভেতরে ঢুকে ছাতাটা শুকানোর জন্য এক কোণায় মেলে দিল আনান। কাজী সাহেব নাম ঠিকানা সব কিছু লিখে নিলেন।
সব কিছু যেন ঘোরের মধ্যে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক ফোঁটা বাতাস বইছে না ঘরে। কাজী অফিসের ফ্যানটা কি একটু বেশিই উপরে?
“পাঁচ লক্ষ এক টাকা দেন মোহর ধার্য করিয়া সারওয়ার আলম আর নাজনীন সুলতানার পুত্র সাদমান আলম সায়ানের সাথে বিবাহে আপনি রাজি আছেন? রাজি থাকলে বলেন কবুল!”
টেবিলের নিচে আনানের কনিষ্ঠা আঙুল স্পর্শ করল সায়ান। বেশি সময় নিল না আনান।
প্রায় সাথে সাথেই মৃদু স্বরে বলল, “কবুল!”
“পাঁচ লক্ষ এক টাকা দেন মোহর ধার্য করিয়া আনাস উদ্দিন আর আকলিমা বেগমের কুমারী কন্যার সাথে বিবাহে আপনি রাজি আছেন? রাজি থাকলে বলেন কবুল!”
সায়ান কিছু বলবার আগেই আনান বলল, “এক মিনিট। কাজী সাহেব, আপনি ভুল লিখেছেন। আমি কুমারী না। আমি ডিভোর্সি।“
ঘরের মধ্যে বাজ পড়লেও এতটা অবাক হতো না সবাই। সায়ান হতবাক হয়ে বলল, “কী বলছ তুমি মেঘ? এই এত বড় একটা কথা তুমি আমার কাছে গোপন করে গিয়েছ?”
“আমি তো গোপন করিনি! আমি বার বার বলতে চেয়েছি তোমাকে। তুমিই বরং শুনতে চাওনি!”
“আমার মাথা কাজ করছে না আর!” দুই হাতে নিজের কপাল টিপে ধরল সায়ান।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবার জন্য সায়ানের ফ্রেণ্ড আকিব বলল, “আরে ঠিক আছে, ঠিক আছে! ও তো বললই তোকে বলতে চেয়েছিল, তুইই নাকি শুনতে চাস নাই?”
“দাঁড়া, আমাকে একটু ভাবতে দে, তুই আর ওর পক্ষ টানিস না! তুমি আমাকে বলবার অনেক সুযোগ পেয়েছ মেঘ, আমাদের বাসায় বলতে পারতে।“
“বলতে পারিনি সায়ান, আমি সুযোগ পাইনি!”
“গত কাল বলতে পারতে!”
“আমি বলতে চেয়েছি তুমি সুযোগ দাওনি আমাকে!” গলা চড়ে গেল আনানের।
আকিব দুই হাত তুলে বলল, “ওকে ওকে আর সিন ক্রিয়েট করিস না! সায়ান তোরও ফল্ট আছে, আর আনান তুমি ওকে স্যরি বলে দাও, ব্যস মিটে গেল!”
“আমি কেন ওকে স্যরি বলব ভাইয়া? আমি তো কালকেও ওকে বলতে চেয়েছিলাম, ওই তো শুনতে চাইল না!”
“যথেষ্ট হয়েছে!” টেবিলে ঘুসি মেরে উঠে দাঁড়াল সায়ান।
“এনাফ ইজ এনাফ!” উঠে দাঁড়াল আনানও।
জিসান উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ভাইয়া আপনারা দুজন একটু বাইরে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট কথা বলে নেন। আমরা অপেক্ষা করছি।“
“কথা বলার আর কিছু বাকি নাই। তুমিও তোমার ফ্রেণ্ডের মতই! বাসায় হাজব্যাণ্ড রেখে এসে ভার্সিটিতে বয়ফ্রেণ্ড নিয়ে ফুর্তি কর! ছিঃ ছিঃ! তোমার মনে এই ছিল?”
“এক্সকিউজ মি! আমার মনে এই ছিল মানে? আমি যদি আজকে না বলতাম তুমি কি জানতে পারতে?”
“জানতে পারব না কেন? তোমার বাড়ি ঘরে গিয়ে খোঁজ লাগালে কেউ না কেউ ঠিকই বলে দিত!”
“হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই তো তোমার নেচার! মানুষকে ফলো করা, ফেসবুক প্রোফাইল স্টক করা, ফেইক আইডি খুলে দিনের পর দিন মেসেজ পাঠানো…”
বাম গালে চড় এসে পড়ায় কথা শেষ করতে পারল না আনান। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সায়ানের দিকে।
জিসান এগিয়ে এসে বলল, “হাউ ডেয়ার ইউ! আপনি ওকে মারলেন কোন সাহসে?”
“আরে যাও যাও তুমি! তোমার এত লাগছে কী জন্য? তোমাকে কি ও স্ট্যাণ্ড বাই রেখেছিল নাকি?”
“দ্যাটস ইট!”
বাম হাতের অনামিকা থেকে আংটি খুলে সায়ানের মুখের ওপরে ছুঁড়ে মারল আনান। মাত্র গত কালই এই আংটিটা কিনে পরিয়ে দিয়েছিল সায়ান ওকে।
কাজী অফিসের সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে পায়ে শাড়ী জড়িয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল আনান। জিসান ধরল তাকে।
আনানের শরীর কাঁপছে থর থর করে। জিসান ওকে ধরে নামাল।
নিচে নেমে ওরা দেখল আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝরছে। অঝোর বৃষ্টির জন্য এক হাত দূরের কিছুও দেখা যাচ্ছে না।
পকেট থেকে ফোন বের করে ড্রাইভারকে কল করল জিসান। কাজী অফিসের নিচে গাড়ি পার্কিং করবার জায়গা ছিল না বলে একটু দূরে পার্ক করে রাখতে বলেছিল।
লোকেশন জানিয়ে দিয়ে চলে আসতে বলল। নিচে একটা টুল পেতে উদাস মুখে বসে ছিল কাজী অফিসের দারোয়ান।
জিসান তার দিকে তাকিয়ে বলল, “ম্যাডামের শরীরটা খারাপ লাগছে, উনাকে একটু বসতে দেন তো ভাই!”
দারোয়ান উঠে গেল শশব্যস্ত হয়ে। আনান বসল বিনা প্রতিবাদে।
“তুই এখানে বস, আমি তোর ছাতাটা নিয়ে আসছি!”
আনান কিছুই বলল না, শুধু তাকিয়ে রইল ফ্যাল ফ্যাল করে। এক এক বারে দুই তিন সিঁড়ি টপকে ওপরে উঠে গেল জিসান।
ওপরে তখন সায়ানের সাথে আকিব ভাইয়ের বাক বিতণ্ডা হচ্ছে। আকিব ভাইয়ের মতে আনানের সাথে কথা বলে তাকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত।
জিসান তাদের দিকে না তাকিয়ে শান্ত মুখেই কাজী অফিসের কোণায় গিয়ে তুলে আনল আনানের ছাতাটা, তারপর বেরিয়ে আসতে গিয়েও আবার ফিরে গিয়ে সায়ানের মুখে বসিয়ে দিল প্রচণ্ড এক ঘুসি। আর্তনাদ করে মাটিতে বসে পড়ল সায়ান।
“দিস ইজ ফর হোয়াট ইউ হ্যাভ ডান!”
ছুটে এলেন কাজী সাহেব আর তার সহকারীরা। আকিব আর অন্যরা তাকে আটকাতে চেষ্টা করলে কাজী অফিসের এক কোণায় বসে থাকা নিঃশব্দে জিসানকে অনুসরণ করতে থাকা একজন এসে প্রতিহত করল।
আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে ওদের ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলো জিসান। আব্বু তার পেছনে বডী গার্ড লাগিয়ে রেখেছে, আজ প্রথম সে ব্যাটা কোনো কাজে এলো তার।
জিসানের ফোনে রিং বাজল এই সময়, শান্ত মুখে ফোনটা বের করে কল রিসিভ করল জিসান। ড্রাইভার কল করেছে।
কাজী অফিসটা একটা সরু গলির ভেতরে, গলিতে পানি জমে গেছে। এখানে গাড়ি ঢোকালে গাড়ির ভেতরে পানি ঢুকে যেতে পারে, তাছাড়া গাড়ি ঘোরাতে সমস্যা হবে।
জিসান ফোন রেখে একবার জমে থাকা পানির দিকে তাকিয়ে প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে আনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “চল! গাড়ী নাকি গলির ভেতরে ঢোকালে ঘোরাতে সমস্যা হবে! গাড়ি পর্যন্ত হাঁটতে পারবি? নাকি গাড়ি আনতে বলব এখানে?”
মাথা নেড়ে জিসানের হাত ধরে রাস্তায় নামল আনান। ছাতাটা খুলল জিসান, আনানের জন্যই।
আনান একবার কথায় কথায় বলেছিল কবে যেন, বৃষ্টির ছাট মাথায় লাগলে তার সাইনুসাইটিসের সমস্যা হয়, তীব্র মাথা ব্যথায় জীবন বের হয়ে যায়। কিন্তু এই ঝুম বৃষ্টি ছাতায় মানে না, বৃষ্টির ছাটে ভিজে যেতে লাগল দুজনেই। আনানের কথা ভেবেই ছাতার বেশির ভাগ অংশই জিসান দিয়ে রাখল আনানের দিকে।
রাস্তার দুই পাশের যানবাহনগুলো বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে আছে। প্রতি পদক্ষেপের সাথে সাথে পানি ছিটকে ছিটকে উঠছে।
জিসানের মনে হতে লাগল এটা একটা স্বপ্ন দৃশ্য। কিংবা যেন এটা এর আগেও কোথাও ঘটেছে।
গলির মুখেই গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিল ড্রাইভার, এর মধ্যেই পেছনে জড়ো হয়ে গেছে দুই তিনটা রিকশা। রিকশাওয়ালারা গালি গালাজ করছে ক্রমাগত, আর ড্রাইভার সেগুলো উপেক্ষা করে যাচ্ছে উদাস মুখে।
জিসান এসে গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিয়ে আনানকে বলল, “ওঠ তাড়াতাড়ি!” যন্ত্র চালিতের মত উঠল আনান।
জিসানও উঠতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে ওকে আটকাল আকিব আর কয়েকজন।
“এই যে হিরো, পাইছি তোমাকে! চল আমাদের সাথে!”
চোয়াল শক্ত হয়ে গেল জিসানের। শরীর বাঁকিয়ে গাড়ির ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে ড্রাইভারকে বলল, “শোনো আমি যাব না! তুমি এই ম্যাডামকে নিয়ে যাও! যেখানে যেতে চায়, নামিয়ে দিও।“
ছাতাটা বন্ধ করে আনানের হাতে দিয়ে গাড়ীর দরজা লাগিয়ে দিয়ে আকিবের দিকে ফিরে বলল, “বলেন কী বলবেন!”

চলবে

#মেঘবতী_মিথ্যে_বলেনি
।।২৪।।
কাজী অফিসে গিয়ে মারামারি করবার অপরাধে যে ছেলেকে পুলিশে দেওয়া হয় এবং যাকে ফোন করে পুলিশ স্টেশন থেকে ছাড়িয়ে আনতে হয়, এমন কোনো ছেলের বাবার খুব একটা আনন্দে থাকার কথা নয়। ফারুক আহমেদও নেই।
অনেক কষ্ট করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করবার চেষ্টা করছেন তিনি। অনেক ক্ষণ ধরেই শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন জিসানের দিকে, কিন্তু তার অগ্নি দৃষ্টিকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না সে।
তিনি প্রশ্ন করছেন, প্রশ্নগুলোর পর্যন্ত ত্যাড়া ত্যাড়া উত্তর দিচ্ছে। একদম জেসমিনের ধাঁচ পেয়েছে ছেলেটা।
“কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন? কে এই মেয়ে?”
“আমার ক্লাসমেট! আমাদের সাথেই পড়ে!’
“জাস্ট আ মিনিট! এটাই কি সেই মেয়ে যাকে অডিটোরিয়াম থেকে বের করে আনতে গিয়ে তুমি ঝামেলায় পড়েছিলে?’
“হ্যাঁ। সো হোয়াট?”
“ক্যান্ট ইউ আণ্ডারস্ট্যাণ্ড দ্যাট শি ইজ দ্যা মেইন রুট অফ অল ইওর প্রবলেমস? তুমি কি বাংলাদেশে এসেও এই সব শুরু করেছ? এই লোয়ার ক্লাস মেয়ে কবে থেকে তোমার ঘাড়ে চড়ে বসেছে? কবে থেকে তোমাকে ভাঙিয়ে খাচ্ছে?”
“মাইণ্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ! ও মোটেই আমাকে ভাঙিয়ে খাচ্ছে না! আমি ওকে পছন্দ করি আব্বু! আই ওয়ান্না লিভ মাই লাইফ উইথ হার!”
“শোনো আব্বু, বিয়ে এই রকম ভাবে হয় না। বিয়ে একটা ক্যালকুলেশনের ব্যাপার।“
“আমার ক্যালকুলেশন করা শেষ। আমি ওর সাথেই হ্যাপি থাকব!”
“বিয়ে শুধু হ্যাপিনেসের ব্যাপার নয়! তা ছাড়া সব মেয়েই একই রকম! বিয়ে করে কেউ আনহ্যাপি হয় না!”
জিসানের মুখে আশ্চর্য একটা হাসি ফুটে উঠল ধীরে ধীরে। “তাহলে আম্মু তোমার সাথে হ্যাপি হতে পারল না কেন?’
“বেয়াদবি করো না জিসান!” ধমকে উঠলেন ফারুক আহমেদ।
“আমার এত কথা ভালো লাগছে না!”
“আমারও না। তুমি বিয়ে করবে আমার পছন্দ করা মেয়েকে।“
“কেন? বিয়েটা কি কোনো ছেলে খেলা? আমি যার সাথে হোল লাইফ লিড করব তাকে আমি চুজ করতে পারব না?’
“না।“
“বাট হোয়াই?”
“বিকজ, লাইফের কিছুই তুমি জানো না! তুমি যে লাক্সারিয়াস লাইফ লিড কর কখনো কি ভেবে দেখেছ সেই সব লাক্সারি কোথা থেকে আসে? কোথা থেকে আসে তোমার পকেট মানি? কখনো কি তুমি ইন্টারেস্ট দেখিয়েছ আমার কোনো ব্যাপারে? কখনো কি আমার কোনো বিজনেসে ইনভলভড হতে চেয়েছ?”
“প্রয়োজন পড়েনি তাই হইনি। তাছাড়া তোমার ওই সব বোরিং ক্লায়েন্ট মিটিং আমার ভালো লাগে না!”
“সেটাই, তোমার যেমন ভালো লাগে না আমার বিজনেস, আমারও তেমনি ভালো লাগে না তোমার কেয়ারলেসনেস! তোমার সেলফিশনেস! তারপরও আমার ব্যাড লাক যে তোমার সাথেই আমার এডজাস্ট করে থাকতে হয়, আর আমার পরে এই সব কিছুর মালিকও তুমিই হবে! আচ্ছা তুমি কি কখনো জানতে চেয়েছ আমার নেক্সট প্ল্যান কী? কী আমার ড্রিম?’
“তুমি শেয়ার করনি, তাই জিজ্ঞেস করিনি! কিন্তু এখন এই মুহূর্তে এই সব কথা আসছে কেন?”
“আসছে কারণ, তুমি বিয়ে করবে আমার নেক্সট প্ল্যানের জন্য যার হেল্প প্রয়োজন, যে আমার কাজে আসবে, এমন একজন ইণ্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের মেয়েকে!”
“হোয়াট দ্যা হেল! আমি কি তোমার দাবার গুটি নাকি যে ইচ্ছামত চালবে? তা ছাড়া চিনি না জানি না এমন একজনকে আমি বিয়ে করতেই বা যাব কেন?”
“তুমি চেনো তাকে, ভালো ভাবেই চেনো। ইন ফ্যাক্ট শি ইজ ইন লাভ উইথ ইউ!”
“মে আই নো হু দ্যা হেল ইজ শি?’
“রুবাবা, তোমার ক্লাসমেট, তোমার গ্রুপমেট! আর তুমি এতটাই বোকা যে সারা দিন ওর সাথে এক সাথে থেকেও এতটুকু বুঝতে পারলে না যে সে তোমাকে পছন্দ করে?”
“হোয়াট দ্যা…শেষ পর্যন্ত রুবাবা? ওর কোনো গভীরতা আছে? কোনো ডেপথ আছে? ওর সাথে লাইফ লিড করা পসিবল?”
“কেন পসিবল নয়? শি ইজ বিউটিফুল, ওয়েল বিহেভড, ওয়েল ম্যানারড, ডিসেন্ট! সবচেয়ে বড় কথা শি বিলংস টু আ নাইস এণ্ড ডিসেন্ট ফ্যামিলি!”
“ইমপসিবল! আমি ওর সাথে বোর হয়ে যাই আব্বু! প্লিজ ট্রাই টু আণ্ডারস্ট্যান্ড! আই ডোন্ট লাভ হার!”
“দ্যাটস নট মাই প্রবলেম এট অল! এতদিন ভালোবাসোনি, এখন থেকে বাসবে! আজ থেকেই বাসবে! আর ওই রাস্তার ফালতু মেয়ের সাথে সব ধরণের সম্পর্ক ত্যাগ করবে! ইট ইজ এন অর্ডার!”
“আমি কোনো চাবি দেওয়া পুতুল না যে তুমি যা বলবে সেই ইচ্ছামত আমাকে নাচ দেখাতে হবে!”
“দেখাতে হবে, কারণ তুমি আমার ওপরে ডিপেণ্ডেন্ট! নিজে নিজে কিছু করবার ক্ষমতা আছে তোমার? আমি যদি তোমাকে এই মুহূর্তে ছুঁড়ে ফেলে দিই কিছু করতে পারবে তুমি? স্টাডি কমপ্লিট করতে পারবে? জব পাবে কোথাও? সারভাইভ করতে পারবে? এই শহরে? এই দেশে? এই পৃথিবীতে? ডেইলি যে পরিমাণ টাকা তুমি পকেট মানির নামে স্পেণ্ড কর সেটা আর্ন করতে আমার কোন ফ্যাক্টরিতে কত মানুষ কত ঘন্টা কাজ করে তা কি তোমার জানা আছে? ডু ইউ হ্যাভ এনি স্লাইটেস্ট আইডিয়া?”
কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল জিসানের। সেই অনেক দিন আগের বলা আনানের কথাগুলোই যেন তার কাছে ফিরে এলো নতুন রূপে।
ফারুক আহমেদ উঠে এলেন নিজের কাউচ থেকে। জিসানের কাঁধে হাত রাখলেন বন্ধুর মত।
“মাই সান, এই সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। আগে যা হওয়ার হয়েছে। লেট বাইগনস বি বাইগনস। রুবাবা চমৎকার মেয়ে। ট্রাই টু মিক্স উইথ হার। ডিসকাভার হার। আমার তো ওকে খুব পছন্দ হয়েছে। কি সুন্দর করে কথা বলে! কত ভালো একটা ফ্যামিলি! ইউ বোথ উইল বি ক্যাপেবল অফ মেকিং আ প্রমিসিং কম্বাইণ্ড ক্যারিয়ার!”
নিজের কাঁধ থেকে বাবার হাতটা আলগোছে সরিয়ে দিল জিসান। “আমি ক্যারিয়ার চাই না, আব্বু!”
“তুমি ক্যারিয়ার চাও না?”
“না। আমি শুধু”, বলতে গিয়ে গলাটা কেঁপে গেল জিসানের, “এনিকে চাই!”
ফারুক আহমেদের ইচ্ছা করছে ছেলের গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিতে। এত আদর করে বলবার পরেও যে ছেলে কথা শোনে না, তাকে আর কী বলা যায়!
কিন্তু এত বড় ছেলেকে চাইলেই চড় মারা যায় না। ফারুক আহমেদ অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে রেখে বললেন, “এটা হচ্ছে নিজের লেভেলের বাইরে গিয়ে মেলামেশা করবার ফলাফল! তোমাকে কে বলেছিল ওই সব লোয়ার ক্লাসের মেয়ের সাথে মিশতে?”
হাসল জিসান। “আব্বু তুমি তো শুধু কমপ্লেইনই করে গেলে। এখন আমারগুলো শুনবে? তুমি কেন ছোট বেলা থেকে আমাকে আগলে রাখোনি? তুমি কেন তোমার প্রবলেমস এণ্ড সাফারিংস আমার সাথে শেয়ার করনি? এখন কেন অল অন আ সাডেন আমাকে তোমার নিজের মত করে গড়ে তুলতে চাচ্ছ? আমি যখন ছোট ছিলাম, রাতে একা একা ঘুমাতাম, কোনো কোনো রাতে বৃষ্টি হতো, বজ্রপাত হতো! তুমি কি কখনো কোনো দিন আমার ঘরে আমার কাছে এসে জানতে চেয়েছ আমি একা একা ভয় পাচ্ছি কিনা?”
“এই সব সেন্টিমেন্টাল চাল আমার সঙ্গে চালতে আসবে না! তুমি এত দিন আমার স্নেহ দেখেছ। এখন তুমি আমার পাওয়ার দেখবে।“
“মানে?”
“আমি আজকেই এই মেয়ের হোয়্যার এবাউটস বের করছি। প্রথমে এই মেয়ে যেখানে থাকে সেখান থেকে ওকে বের করব। তারপর ওর স্টুডেন্টশিপ বাতিল করব। ওর বাসায় চিঠি যাবে। জাস্ট ওয়েট এণ্ড সি!”
“না আব্বু! তুমি এটা করবে না! ইউ ক্যান্ট ডু দিস!”
ফারুক আহমেদ হাসলেন ছেলের দিকে তাকিয়ে। “ইয়েস আই ক্যান ডু দিস, এণ্ড ডেফিনিটলি আই উইল ডু দিস!”
মাঝে মাঝে নিজের ক্ষমতা খুব উপভোগ করেন তিনি। এটাও সে রকম একটা মুহূর্ত, যখন মনে হয় তিনি জিতে গেছেন, জেসমিন জিততে পারেনি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here