বউ_যখন_কাজের_মেয়ে . পর্ব-১১

0
2609

বউ_যখন_কাজের_মেয়ে
.
পর্ব-১১
লেখা:-মান্না ইসলাম মাহিম
.
.
.
মাহিম:-তাহলে কোথায় যাবেন আপনি?
.
প্রিয়া:-সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবেন।আর আপনার জন্য খাবারটা এনে ছিলাম,এটা যদি দোষের হয়ে থাকে তাহলে দোষ হয়েছে।আপনি বললে খাবারটা আমি এক্ষনি নিয়ে যাচ্ছি(কাঁদো কাঁদো ভাবে)
.
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ার মুখটা কেমন সুখিয়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু খায়নি মেয়েটা।চোখ-মুখ কেমন লাল হয়ে আছে।
কথা বলতে বলতে চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে মনে হয় আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রিয়ার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসবে।
.
মাহিম আর কথা না বারিয়ে চুপ-চাপ খেয়ে সুয়ে পরলো।
.
সকাল বেলা প্রিয়া সবার জন্য টেবিলে খাবার রেডি করছিল।একটু সবাই এসে খেতে বসলো।সবাই নাস্তা করার পর মাহিমের বাবা অফিসে যাওয়া জন্য রেডি হয়ে নিচে এসে কাজের ছেলে রাজু কে ডাকছিল।
অর্পা চিৎকার শুনে উপর থেকে নেমে এলো।
.
অর্পা:-বাবা রাজু তো নেই ও কে আমি একটু বাজারে পাঠিয়েছি।কেন কি হয়েছে?
.
মাহিমের বাবা:-ও কে আমি রাতে বলেছিলাম আমার জুতো গুলি পরিষ্কার করে রাখতে।ও এখনো জুতো গুলি পরিষ্কার করেনি।আমাকে তারাতারি অফিসে যেতে হবে।এখন কি বলতো?
.
অর্পা:-এ কথা দাড়াও ১মিনিট।
.
এরপর অর্পা প্রিয়া ডাকতে লাগলো।
.
অর্পা:-এই প্রয়াআআআআ(চিতকার দিয়ে)
.
প্রিয়া অর্পার কথা শুনে ছুটে এলো।
.
প্রিয়া:-আপু আমাকে ডাকছেন?
.
অর্পা:-কি করছিস এখন?
.
প্রিয়া:-কিচেনে কাজ করছিলাম কেন?
.
অর্পা:-ওসব কাজ পরে করবি।বাবা কে এখন তারাতারি বাহিরে যেতে হবে।তারাতারি বাবার জুতো গুলি পরিষ্কার করে দে।
.
প্রিয়া:-বাবা আপনি দাড়ান আমি এক্ষনি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
.
এইবলে প্রিয়া গিয়ে মাহিমের বাবার পায়ের কাছে গিয়ে বসে জুতো মুছে দিতে লাগলো।
এমন সময় মাহিমের মা এসে বলল..
.
মাহিমের মা:-এই মেয়ে তুমি নাকি মাহিমের রুমে থাকো?
.
প্রিয়া মাহিমের আম্মুর কথা শুনে একদম থমকে গেল।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
.
মাহিমের মা:-কি হলো কথা বলছো না কেন?
.
প্রিয়া:-জ্বী মানে হ্যাঁ(ভয় ভয় করে)
.
মাহিমের মা:-তোমার সাহস তো কম না তুমি বাড়ির কাজের মেয়ে হয়ে তুমি আমার ছেলের রুম শেয়ার করে থাকছো।(রেগে)
.
প্রিয়া কিছু বললো না মাথা নিচু করে জুতো মুছতে লাগলো।
.
মাহিমের মা:-শুনে ছিলাম তোমাকে এই বাড়িতে আনার আগে তুমি নাকি বলে ছিলে যে তুমি এই বাড়ির কাজের মেয়ে থাকবে।তো একটা কাজের মেয়ের জায়গা কোথায় সেটাও কি তুমি জানোনা নাকি?(রাগি কন্ঠে)
.
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
.
অর্পা:-কি জানি কথাটা উল্টে গেল নাকি?
.
মাহিম:-তোমরা সবাই উল্টাতে দিলে বুঝি?
.
মাহিম উপর থেকে নিচে আসতে আসতে কথাটা বলল।মাহিমের কথা শুনে সবাই অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
অর্পা:-মানে???
.
মাহিম:-মানে আমি যতদূর জানি যে ও এখনো এই বাড়িতে কাজের মেয়ে হয়েই আছে।বাড়ির সমস্ত কাজ ও করছে এমনি কি যে কাজ গুলি ওর করার কথা না,সে কাজ গুলোও ও কে দিয়ে করাচ্ছ তোমরা।
.
এইবলে মাহিম প্রিয়া কাছে আসলো এসে
মাহিম:-এই আপনাকে জুতো মুছতে কে বলেছে,যান আমার জন্য গিয়ে কফি নিয়ে আসুন যান(রাগি কন্ঠে)
.
অর্পা:-মানে কি মাহিম,তুই দেখতে পারছিস না প্রিয়া কাজ করছে।
.
মাহিম:-হুম পাচ্ছি বাট ওর এই কাজটা করা মানায় না।(রেগে)
.
মাহিমের বাবা:-মানে কি মাহিম বাড়ির কাজের মেয়ে বাড়ির কাজ করবে না।এই রকম তো কথা ছিল না।
.
মাহিম:-(তার বাবা দিকে তাকিয়ে)সে তো তোমরা আমায় অমানুষ তৈরি করবে সে কথাও তো ছিল না বাবা।মানে আমার জানা ছিল না।এখন যানলাম।
.
মাহিমের বাবা:-কি বলছো কি মাহিম?
.
মাহিম:-হ্যাঁ ঠিকি বলছি।বাট ভাগ্য ভালো যে মা-মনির দোয়ার আমি পুরো-পুরি অমানুষ তৈরি হয়নি।আর ঠিক সেই কারণে আমার মনে হচ্ছে যে ওর এই কাজ গুলো করা অসম্ভব, ও কে দিয়ে এই কাজ গুলো করা মানায় না,সে গুলো ও করবে না।
.
মাহিমের মা:-ওকে ঠিক আছে…..আচ্ছা আমায় একটা বলতো এই মেয়ে কে তুই তোর রুমে থাকতে দিচ্ছিস কেন?
.
মাহিম:-(বিরক্তিকর ভাবে)মা তুমি আমার গুরুজন কিছু কিছু বিষয়ে তোমার ঢোকা উচিৎ না।(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)কি হলো আমি কি বলেছি কি শুনতে পারেন-নি?যান গিয়ে আমার জন্য কফি বানিয়ে উপরে নিয়ে আসুন(রাগি কন্ঠে)
.
এইবলে মাহিম উপরে চলে গেল।
.
.
.
“কিছুক্ষণ পর”
প্রিয়া মাহিমের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে উপরে চলে আসলো।এসে রুমে ঢুকে দেখলো মাহিম খাটের উপর বসে আছে।প্রিয়া মাহিমের কাছে এসে
প্রিয়া:-এই নিন আপনার কফি(মাহিমের দিকে বারিয়ে দিয়ে)
.
মাহিম কফির কাপটা হাতে নিল।
প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থাকার পর বলে উঠলো
.
প্রিয়া:-নিচে আপনাকে আমার হয়ে কথা বলতে আপনাকে কে বলেছিল?
.
মাহিম:-আপনার হয়ে কথা বলতে আমার বয়ে গেছে?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
.
প্রিয়া:-হ্যাঁ সেটাই তো যানতাম।বাড়ির কাজের মেয়ে বাড়ির কাজ করবে।তাহলে নিচে কেন শুধু শুধু সবার সামনে অতো গুলো কথা বলতে গেলেন কেন?
.
মাহিম:-সে তো মানবিকতার খাতিরে।আপনি কি ভাবলেন যে আমি আপনার হয়ে কথা বলছি।
.
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
.
মাহিম:-খুব ভালো ভাবেন আপনি।মানে I masse যে আপনার ভাবনা শ,ক্তি খুবি জোরালো
.
প্রিয়া:-দেখুন বিদ্রূপ করে কথা বলবেন না একদম(কাঁদার মতো করে)
.
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
.
প্রিয়া:-হ্যাঁ ভূল ভেবেছি।কিন্তু মোটেও চাই না যে আপনি আমার আর কোন দিন ভালো-খারাপ নিয়ে কথা বলুন।
.
মাহিম:-আপনার কথার আমি এতটা দাম দিব সে বিশ্বাস আপনার আমার প্রতি আছে?
.
প্রিয়া:-আমি ওতো কিছু জানিনা।এরপর আমার ব্যাপারে কারো যেন এত দরত উতলে না পরে।(অভিমানী সুরে)
.
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
.
প্রিয়া:-পরে যখন আমাকে কথা শুনতে হবে কখন তো আর কেউ আমাকে সামলাতে আসবে না।(অভিমানী কন্ঠে)
.
মাহিম:-আমার বুঝি আপনাকে সামলানোর কথা?
.
এইবলে মাহিম বসা থেকে উঠে অফিসে যাওয়া জন্য রেডি হতে লাগলো।
.
প্রিয়া:-আমি তো সে কথা একবারো বলিনি আপনাকে।আর কে বা আমাকে সামলাবে।এই বাড়িতে তো আমার আপন বলতে কেউ-ই নেই।
.
মাহিম:-কেউ যখন নেই।তখন এই বাড়িতে এত অপমান সয্য করে পরে আছেন কেন?যান চলে যান এই বাড়ি থেকে(রাগ দেখিয়ে বলেই রুম থেকে বের হয়েগেল)
.
.
.
“রাতে রান্না-বান্না করার পর সবাইকে খাইয়ে সবকাজ শেষ করে রুম এসে রুমটা গোছা-গোছি করছিল।এমন সময় প্রিয়া মাথাটা ব্যাথা করে উঠলো।প্রিয়া সাথে সাথে এসে বিছানার উপর বসে পরলো।না আর বসেও থাকতে পরছে না ব্যাথার কারনে।তাই মাহিমের বিছানায় সুয়ে পরলো।
.
.
প্রিয়া বিছানায় সুয়ে মাথা চেপে ধরে ছিল।এমন সময় প্রিয়ার তার মামা কথা মনে পরে গেল।সেদিন শিহাবের সাথে কথা বলার সময় শিহাব বলেছিল প্রিয়াকে যে তার মামা নাকি অসুস্থ।তারপর তো আর কথা হয়নি।এই কয়দিনে সুস্থ হলো কি না সেটাও জানেনা।প্রিয়া ভাবতে লাগলো ওর এতবড় একটা অসুখ ২/৩ মাস পর সে আর কতদিন বাচবে সে নিজেও জানেনা।এই পৃথিবীতে প্রিয়ার একমাত্র আপন বলতে প্রিয়ার মামা ছাড়া আর কেউ নেই।
যে করেই হক এই ২/৩ মাসের মধ্যে শেষ বারের মতো সবার সাথে দেখা করতেই হবে।(এইসব কথা ভাবতে ভাবতে অজান্তেই প্রিয়ার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসলো)
.
.
“রাত ১০ট”
মাহিম এসে রুমে ঢুকতেই প্রিয়া মাহিম কে দেখে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।মাহিম রুমে চেন্স করে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিল।
.
.
“কিছুক্ষণ পর”
মাহিম বিছানায় বসে ফোন টিপা-টাপি করছিল এমন সময় প্রিয়া বলে উঠলো..
প্রিয়া:-মামা নাকি খুব অসুস্থ।বলছিলম কি আমি তো একা-একা যেতে পারবো না।একদিন আমায় নিয়ে যাবেন মামার কাছে(ভয় ভয় করে)
.
মাহিম:-আমি কেন?আপনার ঐ শিহাব ভাই তো আপনাদের গ্রামেই থাকতো,তাকে নিয়ে যান।(রেগে)
.
প্রিয়া:-জানি আপনার সাথে যাওয়ার আমার কোন যোগ্যতাই আমার নেই।আর আমাকে নিয়ে বের হতেও আপনার অসুবিধে হবে।
.
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
.
প্রিয়া:-আমি সবটাই যেনে শুনেই বলে ছিলাম।হয়তো মামা আপনাকে আর আমাকে এক সঙ্গে দেখলে অনেক খুশি হবে।
.
প্রিয়ার কথা শুনে মাহিম প্রিয়া দিকে তাকালো।
.
প্রিয়া:-না আর অন্যকোন কারণ নেই।

প্রিয়া:-কোথাও যাওয়া জায়গা নেই তাই।ঠিক আছে আমি বুঝে গেছি ভূল বলেছি আর বলবো না।(মন খারাপ করে)
.
মাহিম:-(বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে)আপনার কথা বলা শেষ হলে আমি কিছু বলতে চাই(বিরক্তিকর ভাবে)
.
প্রিয়া:-হ্যাঁ বলা শেষ এটাই বলার ছিল কিন্তু আপনি তো না করে দিলেন।আর কিছু বলার নেই আমার।বলুন আপনি কি বলবেন।
.
মাহিম কিছু বলছে না।
.
প্রিয়া:-কি নোটিশ দিবেন?
.
মাহিম:-নোটিশ?…!কি ডিভোর্স এর?(অবাক দূষ্টিতে তাকিয়ে)আপনার সাথে তো আমি এই বিয়েটা শিকারি করিনা।তার মধ্যে আবার ডিভোর্স,নোটিশ আসছে কেন?
.
প্রিয়া:-আমি ডিভোর্স এর নোটিশের কথা বলিনি।
.
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
.
প্রিয়া:-ওতটা বোকা আমি নই….!আপনার সাথে যে সেই ভাবে বিয়েটা হয়নি,সে কথাটা আমান যানা আছে।
.
মাহিম কিছু বলছে না।
.
প্রিয়া:-আমাদের বিয়েটা তো ঐ বিনি সূতর মালার মতো।শিকার করলে আছে না শিকার করলে নেই।(মন খারাপ করে)
.
মাহিম কিছু বলছে না শুধু প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
প্রিয়া:-আর এখনি বা আমি নিজেকে বিবাহিত মনে করি কি ভাবে।বিবাহিত বলতে গেলে তো স্বামীর মন বল হয়।আর আমার স্বামীটা যে সেটাই তো জানিনা।
.
মাহিম এখনো চুপ করে আছে।
.
প্রিয়া:-তাই আমি বিবাহিত নাকি অবিহিত, সধবা নাকি…(আর কিছু বললো না).
.
মাহিম:-(চমকে উঠে)নাকি কি বলুন(প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে)বিধবা শব্দটা কি মুখে…..
.
মাহিম আর কিছু বলার আগেই প্রিয়া একহাত দিয়ে মাহিমের মুখ চেপে ধরলো।
.
প্রিয়া:-(একটু রাগি কন্ঠে)খবরদার আর একটা কথাও বলবেন না।আপনার যা মুখে আসবে সেটা বলার অধিকার আপনার নেই।আপনি কি মনে করেছেন আপনি যা খুশি তাই বলতে পারেন(মাহিমের মুখ চেপে ধরে মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে)
.
দুজন দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে।কেউই আর কিছু বলছেনা।এভাবে দুজন দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর মাহিম প্রিয়া হাতটা তার মুখ থেকে সরিয়ে দিল।
.
.
মাহিম প্রিয়ার হাতটা সরিয়ে দিতেই প্রিয়া একটু লজ্জিত ভাবে চোখ দুটো সরিয়ে নিল।
.
প্রিয়া:-আর কখনো আমাকে এই কথা বলবেন না।আপনার বলতে হয়তো ভালো লাগে কিন্তু আমার শুনতে ভালো লাগেনা।
.
মাহিম শুধু প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
প্রিয়া:-একটা বিবাহিত মেয়ের সামনে দাড়িয়ে তাকে বিধবা বলতে নেই।তাতে স্বামী অমঙ্গল হয়।হোক না আমার মিথ্যে বিয়ে।আপনি আমাকে স্ত্রী হিসাবে মানুন আর না মানুন।কিন্তু আমার স্বামী তো।আপনি পরুষ মানুষ এটা আপনি বুঝবেন না।(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
:::::::::Next Part::::::
যদি ভালো লাগে তো জানাবেন কেমন লাগলো।
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here