মুখোশের অন্তরালে,০২,০৩

0
1103

#মুখোশের অন্তরালে,০২,০৩
#পর্ব২

থার্ড ফ্লোরে লিফটটা থামতেই পা বাড়ায় রিক্ত,সামনে জ্বলজ্বল করছে সুবিশাল সাইনবোর্ডটা

ড: মালবিকা সিংহরায়
কনসালটেন্ট psychiatrist(MBBS MD)

এক পলকে চারদিকটা দেখে এগুতেই ~”অ্যাপার্টমেন্ট আছে?”
রিসিপশনিস্ট মেয়েটার প্রশ্নে হকচকিয়ে যায় রিক্ত। ওহ্ এ যে নতুন মেয়ে… তাকে চেনার কথা নয় অবশ্য।
~”আমি ওর বন্ধু”
~”কাইন্ডলি ওয়েট করুন প্লিজ,একজনের সাথে consultation এ ম্যাডাম অলরেডি busy..”
~”বলছিনা আমি মালবিকার পুরনো বন্ধু!”
বলেই গটগট করে সোজা এগিয়ে যায় সে..
~”আসবো?”
উত্তরের অপেক্ষা না করেই স্লাইডিং ডোরটা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে রিক্ত।
এমন অযাচিত প্রবেশে প্রবল বিরক্ত হলেন চেয়ারে উপবিষ্ট মধ্যবয়স্ক মহিলাটি, ভ্রু কুঁচকে অঙ্গুলিহেলনে দূরের সোফাটির দিকে ইঙ্গিত ছুঁড়ে দেন তিনি… পরক্ষনেই হাসিমুখটি মেলে ধরেন সামনে বসা ক্লায়েন্টের সামনে।

একমনে ঘরটা খুটিয়ে দেখছিল রিক্ত,
বেশ কিছুদিন আগেও এই বাড়িতে ছিল ওর অবাধ আনাগোনা।তখন এটা বেডরুম ছিল অবশ্য..
Whole Room মেকওভার করে ভোলখানাই পাল্টে দিয়েছে পুরো ঘরটার.. পেন্টিং গুলো অবশ্য বাতিলের খাতায় ফেলা হয়নি।
এদিক সেদিক দেখতে দেখতে হঠাৎই মালবিকা দিকে চোখটা চলে যায় ওর, কে বলবে দুটো সন্তানের মা ও.. এখনো যুবতীই বলা চলে।
ডিপ নেক পার্পল কুর্তিতে রংটা ফেটে পড়ছে যেন!কিছুটা স্বভাবদোষেই চোখটা চলে যায় ওর উত্থিত দুই ভরাট স্তনে, নারীত্বের প্রতীক হলেও ওর রোগা পাতলা শরীরে বড্ড বেমানান।ওই শরীরের অলিগলিতে একসময় রিক্তর পুরুষালী হাতের যে অবাধ বিচরণ ছিল..
আচমকা মালবিকার ডাকে যেন সম্বিত ফিরে পায় ও,
রিক্ত সরিয়ে নেয় ওর চোখ..ওর পাপচোখ।

~”কনসালটেশন কমপ্লিট?”
~”সকালের মতো, বলো কি দরকারে এসেছিলে?”
কি নিষ্প্রাণ কেজো গলায় ওর সাথে কথা বলছে মালবিকা!
গলাখাকারি দিয়ে ভনিতা না করে সরাসরি প্রসঙ্গ পাড়ে রিক্ত
~”হাই ডোজের স্লিপিং পিল দরকার পড়েছে রিসেন্টলি, একটা valid প্রেসক্রিপশন এর জন্য তোমার কাছে আসা।” স্বপ্নটা একেবারেই চেপে গেল রিক্ত..যতই মিষ্টভাষী হোক, এই মেয়ের ভিতরে যে আস্ত বিষের কুম্ভ, তা এতদিনে বুঝতে বাকি নেই আর…
~”ওহ্!”
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মালবিকার বুক চিরে, লোকটা সেই একই রকম স্বার্থপর রয়ে গেল.. আজকাল তো প্রয়োজনের বাইরে সামান্য সম্ভাষণ
টুকু হারিয়ে গেছে ওদের মধ্যে,এদিকে বিপদে পড়ে ঘেয়ো কুকুরের মতো ছুটে এসেছে!”
~”দেখো ওভাবে তো আমি প্রেসক্রাইব ….”
কথাটা শেষ করতে পারে না মালবিকা,ততক্ষণে ওর নরম পেলব হাতদুটো রিক্তর শক্ত পুরুষালি পাঞ্জার মধ্যে বন্দী!
~” প্লিজ মালবিকা,একটু করে দাও প্লিজ।”আর্তি ঝরে পড়ে রিক্তর গলায়..
হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো মিস মালবিকা সিংহরায়..
তারপর খসখস করে লিখতে থাকলো প্রেসক্রিপশন প্যাডে।

“এই একটা জিনিসে সব মেয়ে কুপোকাত!
ব্লাডি স্লাট!”
আপন মনেই বলে কুটিল হাসি ফুটে উঠল ওর চোখে মুখে।
~”কিছু অর্ডার করি?জুস or কফি?”
~”নানা ,আজ না, আজ একটু তাড়া আছে পরে মিটআপ করে নেব,..”
কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দুদ্দাড়িয়ে পা ফেলে বেরিয়ে গেল রিক্ত।

গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট বেঁধে ফোনটা আনলক করে রিক্ত,নোটিফিকেশন বারে মায়ের তিনটি মিসডকল,
~”এইরে!”
তড়িঘড়ি কলব্যাক করতেই
~” কাল রাতে যে ফোন করলি না বাবু?শরীর ঠিকঠাক আছে তো?”উদ্বেগ ঝরে পড়ে অনুসূয়া দেবীর গলায়..”আর শোন চ্যাট বক্সে একটা ফটো পাঠিয়েছি..উচ্চশিক্ষিত, বয়সও বেশি না, তোর সাথে মানাবে বেশ।”
~”আবার!”
বিরক্তিটা আর চাপা গেল না, দোজবরে ছেলের বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে মা..
বলেই ফেলল,”ওই দায়িত্ব কর্তব্যের মধ্যে প্লিজ আর জড়িয়ো না,এই তো আছি বেশ নিজের মতো,সেই ঝগড়া মনকষাকষি আর bear করতে চাই না মা!”
~”নিজেরটা ছাড়া তো কিছুই বুঝলি না, মা টা যে দুরদেশে একা পড়ে থাকে বুঝিস? নাতি-নাতনি দেখার সৌভাগ্যও হবে না এজন্মে।”ফুঁপিয়ে উঠলেন অনুসূয়া দেবী।
~”আচ্ছা বিকেলের মধ্যে জানাচ্ছি” বিরক্তিটা গিলে নিল রিক্ত, কলটা ডিসকানেক্ট করে হাত রাখল স্টীয়ারিং-এ ।

~” আইয়ে সাহাব আপ কা হি ইন্তেজার থা!”
~”বোলিয়ে..”
~” ও নেয়ী লাড়কি পূজা.. বোল্ড সিন কে লিয়ে সাফসাফ ইনকার কার দিয়া!”
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে ওঠেন মিস্টার আগরওয়াল।
“আচ্ছা জ্বালাতন!” আপনমনে বলে ওঠে রিক্ত।
~”তো জ্যাদা পেয়সা ফেকিয়ে উস কে মু পর! আপনে আপ দুমদাবাকে আ জায়গী”
~”ইসলিয়ে হি তো আপকে পাস আনা পঢ়া!”

ওহ্ এতক্ষণে বুঝল রিক্ত, মাথাটা দিনকে দিন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে নাকি ওর.. টাকাটা গুনে দিয়ে উঠে দাঁড়াল ও “আচ্ছা নমস্কার!”যত্তসব ঘাড়ে বন্দুক রাখার তাল..
~”ওউর এক বাত, নয়ী লাড়কি লগী তো বলিয়েগা জরুর।”
মেয়ের কথা শুনেই চোখটা চকচক করে উঠলো রিক্তর , স্বভাবদোষ আর যাবে কোথায়..
আগরওয়াল লোকটা ততটাও যেন খারাপ না.. বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখে।

আগরওয়াল বেরিয়ে যেতেই হুইস্কি আর গ্লাসটা নিয়ে মৌজ করে ডিভানে বসল রিক্ত।
পিনড চ্যাটটা খুলতেই টপবারে মালবিকার মেসেজ–“ওষুধটা কিনেছো?”
~”ধুত্তেরি!”বলে ব্ল্যাকলিস্টে করে রেখে দিল ,
ফটোটা দেখে ফোনটা সাইলেন্ট রেখে চুপচাপ শুয়ে পড়ল ডিভানে,নেশাটা চড়েছে ভালোই..
পছন্দ না হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পায়নি যদিও,ফর্সা প্রাণবন্ত চেহারায় যৌবন ফেটে পড়ছে কোমর ছাপানো একঢাল চুলে আধুনিকতার রং চড়েনি মোটেই..মায়ের পছন্দের তারিফ না করে পারলোনা রিক্ত,এখন মনের মিলটা হলেই….

সুন্দরী তো অহনাও ছিল, ব্রাইট ফিউচার ছিল..
কিন্তু পাতি মিডিল ক্লাস মেন্টালিটি থেকে বেরোতে পারল কই…?
সারাক্ষণ ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলা আর পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ানো ,আর দিনরাত আজগুবি স্বপ্নের জাল বুনে তার মধ্যে রিক্তকেও শামিল করতে চাইত, দায়িত্ব-কর্তব্যের জালে নিজেকে গিনিপিগ মনে হতো মাঝে মাঝে..
অহনার রোজ রোজ দমবন্ধকর অভিমান,ইমোশনের মরুভূমিতে মালবিকা তখন রিক্তর কাছে একটুকরো মরীচিকার মত…
ব্রড মাইন্ডেড ছাড়া যে ওর পোষাবে না সেটা বুঝে গেছে এতদিনে..সংসারের মান-অভিমান অন্তত ওর জন্য নয়…

ঘুমটা ভাঙলো মুঠোফোনের কর্কশ রিংটোনে..
~”বাবু,কাল জানালি না যে কিছু।”
~”একবার সামনাসামনি কথা বলে নিলে ভালো হয়,সম্ভব হলে আজই,”গাঢ় গলায় উত্তর দিল রিক্ত..”আমার নম্বরটা দিয়ে দিও ওকে, আর নাম কি বললে?”
~” দিয়া, দিয়া চ্যাটার্জী..”
কলটা ডিসকানেক্ট করে চুপচাপ পড়ে রইলো ডিভানে..শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সিলিং এর দিকে ।
গত মাসেই পেন্টহাউসটা নিজ উদ্যোগে রিনোভেশন করিয়েছেন অনুসূয়া দেবী..
Pop false ceiling, তাতে আলোর বিন্দু মুঠো মুঠো গেঁথে দিয়েছে কেউ..মার্কেটের লেটেস্ট ফিচার, প্রয়োজনে আলোর ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো কমানো যায়…গত মাসে তার প্রোডাকশন হাউজ প্রযোজিত একটি ফিল্মের প্রমোশন যেতে হয়েছিল মুম্বাই,ফিরে এসেই ভোলবদল দেখে চমকে গিয়েছিল সে.. মায়ের রুচি যে এতটা আধুনিক হতে পারে সেটা এতদিন তার ধারণার বাইরেই ছিল ..

আচ্ছা এতটা আগ্রহ দেখানো কি ঠিক হচ্ছে ওর?
মায়ের জোরাজুরিতেই .. নাকী দ্বিতীয় বার টোপর পড়ার সাধ জেগেছে ওর নিজেরই..?
উত্তর খুঁজে পায়না রিক্ত।
যদিও একটা বৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ থাকলে মিডিয়ার অযাচিত কৌতুহল,চর্চা এড়ানো যায় বেশ খানিকটাই..পার্টি ক্লাবেও খোলাখুলি সবার সাথে মেলামেশা করা যায়..।
মালবিকার সাথে ওর সম্পর্ক নিয়েও তো একসময় কম জলঘোলা হয়নি মিডিয়াতে, তথাকথিত ইমেজ ধ্বসেই যেত,যদি ওর পাশে তখন উঠতি রাজনৈতিক নেতা অরিন্দম পাশে না দাড়াতো..অরিন্দমের women’s ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হয়ে নিজে তথাকথিত ইমেজটা টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল কিছুটা হলেও..
কিন্তু ম্যারিটাল স্ট্যাটাস হলে লাইমলাইট থেকে সরে আসবে কী?যতই হোক ইন্ডাস্ট্রির টপ টেন পার্সোনালিটির মধ্যে ওর নাম enlisted.. নিজের সাথে নিজেই দ্বন্দ্বে মেতে ওঠে রিক্ত..নারীদেহের অভাবটা কোনোদিনই চাগাড় দেয়নি অবশ্য, অহনা চলে যাওয়ার পরও মেয়ের অভাববোধ হয়নি..কিন্তু ইমেজটা ধরে রাখতে হবে যে!

টুং!
নোটিফিকেশনের শব্দে চিন্তার জালটা ছিড়ে গেলো .. চ্যাটবক্সটা ওপেন করতেই দেখে আননোন নাম্বার থেকে টেক্সট
“হাই,আমি দিয়া.Pitshop ফুড কোর্টে সকাল দশটায়..”
বাব্বাহ! একেবারে স্পট,টাইমিং ডিসাইড করে জানিয়ে দিল..!
~”আর যদি আমি আপনাকে চিনতে না পারি ?”কৌতুকছলে উত্তর দিল রিক্ত..আরেকটু বাজিয়ে নিলে ক্ষতি কি
~”Dp তে ফটো দেওয়া আছে আমার ..আশা করি অসুবিধা হবেনা!”

এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল রিক্তর মুখে,
লক্ষ্য করলোনা আর একটা আননোন নাম্বার থেকে একশোর বেশি মেসেজ এসে জমা হয়েছে ওর চ্যাট বক্সে..

স্নানটা সেরে বেরোতেই কলিং বেলের আওয়াজে বেশ অবাক হলো রিক্ত..এই সময় আবার কে !~”রামশরণ দেখতো!”
ভিজে গায়ের শার্টটা চাপিয়ে বাইরে আসতেই মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো ওর..
উদভ্রান্তের মতো বসে আছে মালবিকা, চোখে যেন আগুন জ্বলছে ওর.. দুধসাদা ত্বকে যেন একপোচ আবীর লেপে দিয়েছে কেউ,চোখমুখ ফোলা.. ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে,তাল মিলিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর ভরাট বুকদুটো!
~”একি তুমি !এখন তো তোমায় চেম্বার এ থাকার কথা!”

#মুখোশের অন্তরালে
# পর্ব ৩
# কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে
# সম্প্রীতি রায়

রিক্তকে দেখে উঠে দাঁড়ায় মালবিকা,পায়ে পায়ে এগিয়ে শার্টের কলারটা ধরে ওকে টেনে আনে ওর নিজের দিকে.. কয়েকমুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরম আশ্লেষে নিজের নরম পাঁপড়ির মত ঠোঁটদুটি ডুবিয়ে দেয় রিক্তর পুরুষালী ঠোঁটে।

ভালোবাসার আবেশে হারিয়ে যায় রিক্ত,হাত অবাধে খেলা করতে থাকে মালবিকা পিঠে কোমরে..হঠাৎ যেন সম্বিত ফেরে ওর..
একঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে মালবিকার বন্ধন থেকে
~”কন্ট্রোল ইয়োরসেল্ফ!
ভুলে যেও না এটা আমার বাড়ি!”

~”ওহ্,আমি এলেই বুঝি বাড়িটা তোমার, একথা মনে পড়ে?
আর লিজাকে আনার সময়?”

~”লিজা!” কেমন যেন তুতলে যায় রিক্ত..লিজার খবর তো ওর কাছে কোন ভাবেই পৌঁছানোর কথা নয়!

~”একটা দু’পয়সার এসকর্টকে বাড়িতে আনতে রুচিতে বাধে না তোমার ?
নিজেকে আবার womens ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন এর সাথে যুক্ত রেখেছো! মাসে মাসে ডোনেশনও দিচ্ছ..কোনটা তোমার প্রকৃত মুখ রিক্ত? নাকি সবটুকুই মুখোশের অন্তরালে ?
আমাদের সম্পর্কের কথাও মিডিয়া পাবলিকের কাছে চেপে গেছো তুমি..”
এবার আর নিজেকে সামলাতে পারে রিক্ত..ভদ্রতার মুখোশ খসে পড়ে এক নিমেষেই। ঠাস করে একটা চড় এসে পড়ে মালবিকার গালে,

~”ভুলে যেও না আমাদের মাস দুই আগে মিউচুয়াল ব্রেক-আপ হয়েছিল,আমি বলেছিলাম আমাদের ওয়েভ ম্যাচ করেনা,সায় দিয়ে তুমিও বলেছিলে আমরা ভালো বন্ধু থাকবো।”

~”তাহলে কাল কেন এলে আবার?কেন অভাবে তাকিয়ে ছিলে?
নাকি যখন দরকার পড়েছে ব্যবহার করে ফেলে দিচ্ছ..সেটা আমার শরীরে হোক বা অন্য কিছু!চ্যাটবক্স কললিস্ট সবকিছুতে blacklisted করে দিয়েছো কাল রাতেই,অন্য নাম্বার থেকে মেসেজ করতে করতে ক্লান্ত আমি… এটাই কি তোমার বন্ধুত্ব!”বলতে বলতে গুঙিয়ে উঠে মালবিকা।
একবুক শ্বাস নিয়ে বলে ওঠে
~”আমি তোমায় আদালত অবধি টেনে নিয়ে যাব!”

~”কোন গ্রাউন্ডে? ধর্ষণ নাকি প্রতারণা?”
রিক্তকে যেন মজায় পেয়েছে..
“দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীপুরুষ উভয়ের সম্মতিতে শারীরিক মিলন তো ধর্ষণের আওতায় পড়েনা মিস মালবিকা!
তুমি তো নিজেই আমার জন্য সবকিছু অ্যারেঞ্জ করে রাখতে, প্রটেকশন থেকে Intimate spot অব্ধি!
মেয়ে দুটোকে তোমার পৈত্রিক বাড়িতে পাঠিয়ে অফিশিয়াল ট্যুরের নাম করে দিনের পর দিন আমার সাথে অভিসারে লিপ্ত হতে!
ব্লাডি কেপ্ট!”
একটা অশ্রাব্য গালিগালাজ বেরিয়ে এল রিক্তর মুখ থেকে।

~”আমি তোমার শেষ দেখেই ছাড়ব”আহত বাঘের মত গর্জে ওঠে..” নিষ্পাপ ভালোমানুষির আড়ালে যে একটা নরকের কীট লুকিয়ে আছে সেটা Reveal করবোই..জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ!”
কেটে কেটে কথাগুলো বলে ফেলে রাখা হ্যান্ডব্যাগ তুলে নিয়ে গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেল মালবিকা…

ওর চলে যাওয়া পথের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে রিক্ত..
~”ব্লাডি হোর! এত সুন্দর সকাল টা নষ্ট করে দিল পুরো!”
হঠাৎ এই চোখটা চলে যায় দেয়ালের সাথে অ্যাটাচ বিশাল Acrylic ডাই ক্লক টার দিকে..
সর্বনাশ!
সাড়ে নটা বাজতে চললো প্রায়..,
১০ টায় মেয়েটা এসে পড়বে!
পরনের শার্টটা একটানে খুলে ফেলে দিলো, ধস্তাধস্তিতে বুকের কাছটা কুচকে গেছে,বোতামটা ছিড়ে গেছে..গ্রে ব্ল্যাক কম্বিনেশনের শার্টটা গলাতে গলাতে আয়নায় নিজেকে দেখে আপন মনেই বলে উঠলো.. ফার্স্ট ইম্প্রেশন is the লাস্ট ইম্প্রেশন!

Pits bug ফুডকোর্টের পার্কিং লটে গাড়িটা দাঁড় করালো রিক্ত..সানগ্লাসটা শার্টে গুজে মুখটা হাত দিয়ে ঢেকে এগিয়ে গেলো প্রিবুকড কেবিনটার
দিকে..
~”হাই!বেশিক্ষণ ওয়েট করাইনি তো?
আসলে ট্রাফিকের জন্য সময় মত বার হলেও লেট হয়েই গেল..”

~”না না,অপেক্ষা করা অভ্যাস আছে আমার..”
হেসে উঠল দিয়া .. সাথে সাথেই গজদন্ত দুটো ঝিলিক মেরে উঠল,
ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারল না রিক্ত..ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে থাকার সুবাদে কম মেয়ে তো দেখলো না জীবনে, এমন সহজাত
সৌন্দর্য খুব কমই চোখে পড়েছে ওর.. সুবিশাল আয়ত চোখ, গোলাপী ফর্সা ত্বক যে কোনো পুরুষেরই নজর কাড়তে বাধ্য..ঘন জোড়া ভ্রূ,দীর্ঘ আঁখিপল্লব সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ … প্রসাধন বলতে হালকা লিপস্টিক আর একটা টিপ ব্যাস!
মনে মনে মাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলো না রিক্ত..

~”একটা প্রবাদ আছে ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইস দ্যা লাস্ট ইম্প্রেশন তাই আর কি!”
মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে এক টুকরো হাসি উপহার দিয়ে অস্ফুটে বলল দিয়া,
~”everything is fair in love and war বলেও আর একটা প্রবাদ আছে মিস্টার রিক্ত বাসু !”

~”কি বলছো শুনতে পাচ্ছি না” কর্কশ স্বরে চমকটা ভেঙে গেল দিয়ার..

~”Nothing! এটাই বলছিলাম আজ দিনটা ভারী সুন্দর ঝকঝকে..”

~” হ্যাঁ সে তো বটেই,আর এমন সুন্দরী রমণীর সঙ্গ তো উপরি পাওনা!” স্বভাব হোক বা যে কারণেই flirting করার লোভ সামলাতে পারল না রিক্ত ..

“তাহলে খেতে খেতে কথা বলা…কথাটা শেষ করতে পারেনা হঠাৎই মুঠোফোনটা বেজে ওঠে,স্ক্রিনে একটা আননোন নাম্বার ফুটে উঠেছে..
মালবিকা নয়তো! ভয়ে ছ্যাত করে ওঠে ওর মনটা..

~”হ্যালো আমি দুর্জয় বলছি!হারাধন মাহাতো জেলের ভিতর আত্মহত্যা করেছে..”

মাথায় বাজ পড়লোও এতটা চমকাতোনা রিক্ত! উত্তেজনায় চেয়ার ঠেলে দাঁড়িয়ে পরল ও..

~”কবে, কখন?”

এহেন রিফ্লেক্সে দিয়া হকচকিয়ে গেলেও রিক্তর মুখে ফুটে ওঠা হাসির বিন্দু বিন্দু কণা নজর এড়ালো না ওর..
কলটা ডিসকানেক্ট করে চেয়ার টেনে বসল,চোখে মুখে স্পষ্ট খুশির আমেজ।

~”কার কল ছিল?” হাসি হাসি মুখে জানতে চাইলো দিয়া..

~”Nothing much.. একজন দাগী আসামীর সুইসাইডাল এটেম্পট সফল হয়েছে..বল তাহলে কি অর্ডার করবো?”
বলে নিজের ভারী হাতটা দিয়ে চেপে ধরলো দিয়ার নরম ফর্সা আঙ্গুলগুলো।

~” দিয়া তোমার শরীরটা কি খারাপ লাগছে? এসি তেও দরদর করে ঘামছো যে!”

এক ঝটকায় হাতটা রিক্তর পাঞ্জা থেকে মুক্ত করে উঠে দাঁড়াল দিয়া। “হ্যাঁ কিছুটা… আজ এখানেই শেষ হলে ভালো হয় ।”

~”সেকি এখনই? কিছু কথাই তো হলো না আমাদের মধ্যে..”

~”শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে,প্লিজ..আমরা কাল meetup করে নেবো..”ছটফট করে উঠলো ও..

~এগিয়ে দেবো আমি?”

~”না..একা চলার অভ্যেস আছে আমার,” রিক্তকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল দিয়া…

হতভম্ব রিক্ত বোকার মত চেয়ে রইল দিয়ার এগিয়ে যাওয়া পথের দিকে, মাথাটা কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ওর…সকালে মালবিকা এখন আবার দিয়া!
“আমি কি ওর সাথে অশোভনীয় কিছু আচরণ করে ফেললাম..নাকি সুইসাইড এর খবরটা ওর অস্বস্তির কারণ,নাকি সত্যিই ওর শরীরটা খারাপ..”

উত্তর খুঁজে পায়না রিক্ত, হাজার চেষ্টা করেও হিসেবটা মেলাতে পারে না কিছুতেই..
দিয়ার দুচোখের জল রয়ে যায় ওর নজরের বাইরে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here