মুখোশের অন্তরালে # পর্ব ১১,১২

0
618

#মুখোশের অন্তরালে
# পর্ব ১১,১২
#কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি_রায়
১১
২০

অন্ধকার ঘরটা থেকে মেয়েলি গলায় অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে..
নিঃশব্দ চরাচর ছাপিয়ে সে মৃদু শব্দই প্রসারিত হচ্ছে বহুদূর,
জানলা, ঘুলঘুলিবিহীন সেই ঘরে,বাইরের পৃথিবীর আলো বাতাস প্রবেশের অনুমতিতে আগল বসেছে..
এক চিলতে দুর্গন্ধময় ঘরটায় সময় থমকে গিয়েছে,দিন রাত্রি কিছুই বোঝা যাচ্ছে না..
হঠাৎ বন্ধ দরজাটা ক্যাচ করে খুলে গেল,
এক চিলতে রোদ্দুর প্রবেশের পর বোঝা গেল সময়টা দিন..
মৃদু আলোতে দেখা যায় বিবস্ত্র এক তরুণী ঘরের এক কোণে উপুড় হয়ে কাঁদছে,কান্নার দমকে ফুলে ফুলে উঠছে তার সুগঠিত নরম শরীরটা..
দরজা খোলার মৃদু আওয়াজ পেয়ে সন্ত্রস্ত্র ভীত তরুণীটি কোন রকমে নিজের অনাবৃত দেহটি দুই হাত দিয়ে ঢাকার ব্যর্থ প্ৰচেষ্টা করতে লাগলো..
অস্পষ্ট আলোতে মেয়েটির মুখ ঠিকমত বোঝা না গেলেও বয়স বেশি নয়

খাবারের প্লেটটা সশব্দে মেঝেতে রেখে ষন্ডামার্কা লোকটি বেরিয়ে যেতেই বন্ধ দরজায় আঘাতের পর আঘাত পড়তে লাগলো..
~”প্লিজ আমাকে এখান থেকে বার করো,আমি যে তোমাদের বিশ্বাস করেছিলাম!”

দরজাটা দড়াম করে খুলে গেল,সেই ষন্ডামার্কা লোকটি শরীরের সব শক্তি একত্রিত করে সশব্দে চড় কষালো মেয়েটার কান্না ভেজা গালে..
~”একদম নাখরা নেহি কারনেকা! সামকো স্যার আ রাহা হে! জলদি সে মান যা!”

ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলো রিক্ত..
ঠান্ডা ঘরেও সারা গা ঘামে ভিজে জবজবে.
উফফ আবার!
এতটাই জীবন্ত ছিল স্বপ্নটা, যে ধাতস্থ হতে সময় বেশ কিছুক্ষণ..
বেডসাইডে রাখা jug থেকে ঢকঢক করে জল খেয়ে মুঠোফোনটা হাতে নিল রিক্ত..

~”হ্যাঁ দুর্জয়?”
অন্যপ্রান্তে ঘুমন্ত স্বরে আওয়াজ ভেসে এলো,” হ্যাঁ বল,এত রাতে!”

~”কাল-ই আমরা হারাধনের বাড়িতে যাব, মানে যে জায়গাটায় থাকতো ও..অরিন্দম কেসটা কবে re-ওপেন করাবে ঠিক নেই..আমি আর সময় নষ্ট করতে চাইনা..

~”মাঝরাত্রে এসব কি পাগলামি শুরু করেছিস বলতো! ঝেঁজিয়ে উঠলো দুর্জয়,”ঘুমা চুপচাপ!অরিন্দম যখন বলেছে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ব্যবস্থা নেবে..”

~”আমি আমার ডিসিশন জানালাম তোকে, সাজেশন না! কাল-ই হারাধনের গ্রামে যাব,
তুই যাবি কি না বল, নইলে আমি একাই যাবো!

রিক্তর দৃঢ় গলায় ও প্রান্ত তখন নিশ্চুপ,দু মুহূর্ত ভেবে নিয়ে দুর্জয় বলল,”যাব,এখন রাখি!”
কলটা ডিসকানেক্ট করে ক্যাবিনেটটার দিকে এগিয়ে গেল রিক্ত..হাতড়ে বার করলো প্রেসক্রাইবড ওষুধের পাতাটা..কাঁপা হাতে দুটো ট্যাবলেট বার করে ঢেলে দিল নিজের মুখে..

একটানে মুঠোফোনে কর্কশ শব্দ ঘুমটা ভাঙ্গালো রিক্তর,গতরাতের হেভি ডোজ ওষুধের প্রভাবে দুচোখের পাতা যেন পরস্পরের সাথে আটকে গিয়েছে..কোনোমতে চোখটা একটু খুলে মুঠোফোনের স্ক্রিনে দেখতেই তড়াক করে লাফিয়ে বসলো খাটে..দুর্জয়!
~”হ্যাঁ বল”ঘরঘরে গলায় বলে উঠলো রিক্ত..

~”কোথায় তুই!সকাল সাড়ে সাতটায় কনফর্ম করে এখন নিজেই ঘুমাচ্ছিস?”

~”আমি?কই?”তুতলে উঠলো রিক্ত..
গতরাতে ওষুধের প্রভাবে ভুলেই গেছে কখন দুর্জয়কে আসতে বলেছে..
দুর্জয়ের কর্কশ শব্দে ভাবনাটা কেটে গেল ওর,”আমি কি ফিরে যাবো?”

~”তুই উপরে চলে আয়,আমি এখনও বিছানাই ছাড়তে পারিনি,গাড়িটা আমার পার্কিং কর্ণারে রেখে দে,” কলটা কোনমতে ডিসকানেক্ট করে রিক্ত ছোটে স্নানঘরে..

তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বার হয়ে দেখে দুর্জয় বসে বসে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছে আপন-মনে..
~”খেয়ে এসেছিস? রিক্ত প্রশ্নে দুর্জয় পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,”হ্যাঁ..তুই খেয়ে নে,
সাড়ে সাতটার কথা বলে এখনই আটটা বাজিয়ে দিলি!

~”হ্যাঁ, আমাদের পিছন লাগার এত শখ জেগেছে যাদের, তাদের বারোটা বাজাবো তাই!”বলে রিক্ত খেতে চলে গেল,খেতে খেতে নজরে পড়ল দিয়া কল করেছে
~” গুডমর্নিং দিয়া”..
~”আজ আসবে না?”আদুরে গলায় ওপ্রান্ত জানতে চাইলে..
~”না আজ হবে না,একটু বার হচ্ছি,পারলে বিকেলে meet up করে নেব..”

কোনোমতে ব্রেকফাস্টটা সেরে,রামশরণ কে প্রয়োজনীয় কিছু নির্দেশ দিয়ে অডিটায় চেপে বসলো দুজনে..

~”নেতা-জী এর সাথে কথা হয়েছে?”শ্লেষ ঝরে পড়ল রিক্তর গলায়..
~”নেতাজি! ওহহ অরিন্দম!
সকালে ফোন করেছিলাম বলল কোথায় কিসের উদ্বোধনের কাজে বার হবে,ব্যস্ত ছিল ভালোই..

~”হারাধনের কেসটা নিয়ে কিছু…”
রিক্তর কথা শেষ করতে দিল না দুর্জয়,”বলেছিলাম,পাত্তাই দিল না.. ব্যস্ত আছি বলে কেটে দিল।”

~” ব্লাডি ইউজলেস! কোনো কাজে লাগেনা ওকে দিয়ে..!আমার তো মনে হচ্ছে অরিন্দমই খুন করেছে আগরওয়ালকে, তাই কেসটা রি-ইনভেস্টিগেট করাতে গড়িমসি করছে..”

রসিকতাটা ঠিক ধরতে পারল না দুর্জয় ,ক্যাচ করে গাড়িটা থামিয়ে দিল মাঝরাস্তাতেই..
“মানে? মোটিভ কী? আগরওয়াল তো ওর পিছনে কোনরকম বাঁশ দেয়নি, ইনফ্যাক্ট দুজনের মধ্যে সেরকম কানেকশনও ছিলনা..”

একদৃষ্টে দুর্জয় দিকে চেয়ে রইল রিক্ত,তারপর মাথা একটা হালকা চাটি মেরে বলল,”ইয়ার্কিও বুঝিস না!কে যে তোকে KP তে রিক্রুট করিয়েছিল..টিউবলাইট!”বলে প্রাণ খোলা হাসি হেসে উঠলো রিক্ত..

~”বেশি না বকে ব্যাকসিটে গিয়ে বস!মুখটা গোমড়া করে উত্তর দিল দুর্জয়.. হালকা পরিবেশে গুমোট ভাবটা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছিল..
হালকা হেসে চোখটা rear ভিউ মিররে যেতেই চমকে উঠলো রিক্ত!
সেই ব্ল্যাক sedan টা! আবার!
~”আজ তোর শেষ দেখেই ছাড়বো, শালা শুয়োরের বাচ্চা! অশ্রাব্য গালিগালাজ বেরিয়ে এল রিক্তর মুখ থেকে..
ঝকঝকে দিনের বেলায় এইরকম বেপরোয়াভাবে ফলো করছে! কার এত দুঃসাহস!
তবে আজ রিক্ত একদম ভয় পেল না..সাথে দুর্জয় আছে,লাইসেন্সড রিভলবারটাও আনতে ভোলেনি আজ..
রিক্ত মৃদু ইশারায় দুর্জয়কে বুঝিয়ে দিল ওর পরবর্তী পদক্ষেপ..অতি সন্তর্পনে গাড়ির দরজাটা খুলে পা রাখলো রাস্তায়..
Rear ভিউ মিরর দিয়ে দুর্জয় দেখলো ব্ল্যাক sedan টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেছে..

দুঃখিত আজকের পর্ব টা ছোট দেওয়ার জন্য, কাল বড়োসড়ো চমক আসছে.. আশাকরি ভাল লাগছে সবার ,
সাথে থাকবেন সবাই

Sampriti Roy

#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব ১২
#কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়

২১

অতি সন্তর্পনে ফ্রন্ট ডোরটা খুলে বাইরে পা রাখল রিক্ত, হাতটা রিভলবারের ট্রিগারে রাখা.. আজ আর পাখি ফসকালে চলবে না! এমন সুযোগ তো আর বারবার আসবে না,

~”রিক্ত বাসুর সাথে পাঙ্গা! আজ তোকে তোর বাপের বিয়ে দেখাবো..” হিসহিসিয়ে উঠল সে..
সম্পূর্ণ অবয়বটা গাড়ি থেকে বার হতেই ব্ল্যাক sedan টা পিছু হটতে শুরু করেছে,rear ভিউ মিররটা দিয়ে গাড়ির গতিবিধি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল দুর্জয়.. একপা দুপা করে গাড়িটা পিছু হটতেই প্রমাদ গুণলো রিক্ত.. পকেট থেকে রিভলভারটা বার করে নিয়ে তীব্র গতিতে ধেয়ে গেলো গাড়িটার দিকে..
রিক্ত কে ওইভাবে তেড়ে আসতে দেখে গাড়িটা বোধহয় একেবারেই প্রস্তুত ছিল না,অতর্কিতে পিছু হটতে গিয়ে ধাক্কা মেরে বসল একটা পূর্ণবয়স্ক গাছের গুড়িতে..

~”তবে রে!” বলে রিক্ত দ্বিগুণ গতিবেগে তেড়ে গেল, পেটানো শরীরটা বানানো আজ বোধহয় সার্থক!
ছাত্রজীবনে বরাবরই স্পোর্টিং রেসে প্রথম স্থান অধিকার করে আসায়,দৌড়াতে বিশেষ বেগ পেতে হচ্ছিল না তাকে.. কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীও যে কোন অংশে কম যায়না!ধাক্কা খাওয়ার পরমুহূর্তেই গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে ফেললো নিপুণ কৌশলে..
এমন সময় ব্লু-মেটালিক অডিটা এসে পথরোধ করে দাঁড়াতেই স্টপ হয়ে গেল ব্ল্যাক sedan টা.. পালাবার আর কোনো পথ নেই, পিছনের রিক্ত আর সামনে দুর্জয়!

~”সাব্বাস দুর্জয়!সাব্বাস !”
চিল্লিয়ে উঠলো রিক্ত,ততক্ষণে অবশ্য অডিটা থেকে বার হয়ে এসেছে দুর্জয়,
আত্মতৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট তার চোখেমুখে..
মাথা ঠান্ডা রেখে এভাবে এই ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে ফিল্মের মত পথ আটকে বসবে,এটা তার নিজের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না..

এক ঝটকায় ডোরটা ওপেন করে যাকে দেখল,তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না রিক্ত,

মিস মালবিকা সিংহ রায়! তার এককালের প্রেমিকা তথা শয্যাসঙ্গীনি ..

~”দেখলি কেমন ভাবে পাখিকে খাঁচায় পুরলাম..আর বলিস ড্রাইভিং করতে পারিনা আমি!” দুর্জয় উচ্ছসিত আওয়াজ তখন রিক্তর কর্ণগোচর হচ্ছেনা, তা বলাই বাহুল্য..

মালবিকাই তবে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের মূলে! হঠাৎ রিক্তর মাথাটা কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে গেল, চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে টেনে নামালো মেয়েটাকে!
অতর্কিত আক্রমণে মালবিকা তখন দিশেহারা প্রায়, আহত সিংহীর মতো গর্জে উঠল,”ছাড়ো ছাড়ো বলছি!”বলে রিক্তর কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল..
কিন্তু ছয় ফুট দীর্ঘদেহী পুরুষ মানুষের সাথে গায়ের জোরে পেরে ওঠা কী অতই সহজ! রিক্তও তখন ক্রোধের রোষানলে,মালবিকা দুঃসাহস যে এতোখানি হতে পারে সেটা তার কল্পনার বাইরেই ছিল!
রাগের পারদ এতটাই চড়েছে যে, কোথায় দাঁড়িয়ে কার সাথে কি করছে সেটাই ভুলতে বসেছে প্রায়..
সপাটে চড় মারতে শুরু করল মালবিকাকে,মুখে অশ্রাব্য গালিগালাজের ফোয়ারা ছুটছে তখন!
~” ব্লাডি হোর! মাসকয়েক তোর সাথে শুইনি বলে এতটা নিচে নেমেছিস তুই!প্রথমে আমার বাড়ি হানা দিয়েছিস, তারপর একের পর এক আক্রমণ করে আমাদের চারজনকে টার্গেট লিস্টে ফেলছিস..! বল তোর সাথে হারাধনের কিসের সম্পর্ক, কোন প্রতিহিংসাবোধে আগরওয়াল কে খুন করলি!”
ব্যাপারটা প্রচন্ড রকম বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে দেখে রিক্তকে ছাড়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করতে লাগলো দুর্জয়,
কিন্তু রিক্তর গায়ে তখন আসুরিক শক্তি ভর করেছে..
হঠাৎ একদলা থুতু ছিটকে আসলো রিক্তর মুখে, হিসহিসিয়ে উঠলো মালবিকা,”বেশ করেছি! তোর সর্বনাশ না দেখে শান্তি নেই আমার,
আমার ভালোবাসা তোর কাছে খেলনার মতো ছিল!যখন যেভাবে পেরেছিস সেভাবে ব্যবহার করে ফেলে দিয়েছিস..তোদের দিন ঘনিয়ে এসেছে,” বলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো মালবিকা ..
রিক্তকে নিরস্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা তখনও চালিয়ে যাচ্ছে দুর্জয়,”এসব কী পাগলামি শুরু করেছিস তুই! শান্ত হও, যে কোন সময় ফাঁকা রোডে কেউ এসে পড়বে,তখন কিন্তু স্রোত উল্টোদিকেই বইবে..আমরাই ফেঁসে যাবো বিশ্রীভাবে ।”

জোঁকের মুখে যেন নুন পড়লো…একঝটকায় বাস্তবের মাটিতে ফিরে এলো সে, ঘোরটা ভেঙে গেল নিমেষেই..
মালবিকার চুলের মুঠি আলগা হলেও হাতটা রিক্তর বজ্রমুষ্ঠিতেই আটকা রইলো.. দুর্জয় কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
~”আমরা ফিরে যাচ্ছি, যে দরকারে হলদিবাড়ি যাচ্ছিলাম সেটা মিটে গেছে.. হারাধন মাহাতোর সাথে এর লিংক কি সেটা এর পেটে চাপ দিলেই সুরসুর করে বার হয়ে যাবে!”

~”কিন্তু একে তুই চিনিস?কে হয় তোর? আর নিয়েই বা যাচ্ছিস কোথায়!” হতবাক হয়ে প্রশ্ন করল দুর্জয়

~”কোথায় আবার..আমার বাড়িতে,”মালবিকা কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে যেতে উত্তর দিল রিক্ত..

~”কি সব পাগলামি শুরু করেছিস তুই!পুলিশ জানতে পারলে কি হবে ভেবেছিস?
আমার চাকরি তো যাবেই মায়ের ভোগে,সাথে তোর ভবিষ্যৎও..”

~”কেউ কিছু টের পাবে না!” বলে জন্তুর মত টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে শুরু করল মালবিকাকে,ইতিমধ্যেই নেতিয়ে পড়েছে মালবিকা,প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপর্যস্ত প্রায়,
দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া বাস্তবে যে এতটা সহজ নয়,সেটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করে ফেলেছে সে.. তাই চুপচাপ বিনা প্রশ্নে আত্মসমর্পণ করে দিল নিজেকে,রিক্তর কাছে।
“আগে এর পেট থেকে সবকিছু বার করি,তারপর কেটে ভাসিয়ে দেবো” আপন মনে বলে উঠলো রিক্ত, পুলিশের কাছে মালবিকাকে সঁপে দেওয়ার কোন মানে হয় না!
এক তো কোর্ট কাছারি ব্যাপার-স্যাপার চলে আসবে, উপরন্তু তার so called ইমেজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল ,তারপর সারা জীবন পাবলিকের কাছে হাসির পাত্র হয়েই বাঁচতে হবে তাকে..”

~”ওঠ শালী!”বলে এক ঠেলা দিয়ে মালবিকা কে ফেলে দিল গাড়ির নরম গদির উপর, তারপর ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাইরে থেকে লক করে দিল ভালোভাবে..
চোখটা একবার মালবিকার দিকে পড়তেই কেমন কুডাক গিয়ে উঠল ওর মনটা..
এমন চুপ মেরে গেল কেন মেয়েটা! কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ কিছুই তো প্রকাশ পাচ্ছে না ওর অঙ্গভঙ্গিতে,রিক্তর দুর্ব্যবহার যেন স্পর্শই করেনি ওকে!কি অদ্ভুত নিস্পৃহভাবে উইন্ডস্ক্রীন দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছে মালবিকা..যেন কিছুই হয়নি ওর সাথে,
যতদূর ওকে চিনেছে রিক্ত,এতক্ষণে কাচের জানালায় দমাদম আঘাত পড়ার কথা.. রিক্তর কাছে হিসেবটা কিছুতেই যেন মিলছিল না..
চিন্তার জালটা কেটে গেলো দুর্জয়ের ডাকে..
~”মেয়েটার তো ব্যবস্থা করলি! এবার গাড়িটা?”
দ্রুত পায়ে ব্ল্যাক sedan টার দিকে এগোতেই অন্য আর একটা গাড়ির কর্কশ হর্নের শব্দে সম্বিৎ ফিরল দুজনার..

~”মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে তামাশা হচ্ছে!” যেটার ভয় পাচ্ছিল সেটাই হলো, ধক করে উঠল রিক্তর বুকটা
~” আরে আপনি রিক্ত বসু না? সেই বিখ্যাত ফিল্ম প্রডিউসার?”ভেসে এল গাড়িটা থেকে..
কাষ্ঠ হেসে মাথাটা একদিকে কাত করতেই ও প্রান্ত আবারও বলে ওঠে,”অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল নাকি ?কোনো সাহায্য লাগলে বলুন..”
লোকটা গাড়ি থেকে নামার উপক্রম করতেই দুর্জয় বলে উঠলো,”না,না আমরা সামলে নিতে পারব.. ছোট্ট অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, আপনি নিজের গন্তব্যে যান।”
লোকটা চলে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল দুজনে, তারপর গাড়িটার ব্যবস্থা করতে উঠে পড়ে লাগল… সর্বশক্তি দিয়ে ঠেলা মারতে শুরু করলো,

সরছে!সরছে!
আস্তে আস্তে দুপা এক-পা করে এগোতে এগোতে গাড়িটাকে ঠেলে দিল জঙ্গলের ভিতরে..

~”যাক প্রবলেম সলভড! স্বস্তির হাসি ফুটে উঠল দুর্জয়ের ঘর্মাক্ত মুখে,বাইরে থেকে একনজরে বোঝাই যাচ্ছে না এখানে কোন গাড়ি রাখা আছে..”চল রিক্ত!”
অডিটার এর কাছে গিয়ে দেখলো মালবিকা এলিয়ে পড়েছে সিটে, কালশিটে দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার অতিফর্সা দুই গালে,
নোনতা জলের ধারাটা যে গালেই শুকিয়ে গেছে , তা রিক্তর নজর এড়ালো না..

~”কে এই মেয়েটা?দুর্জয় এর প্রশ্ন সম্বিত ফিরল রিক্তর ,
সংক্ষেপে উত্তর দিল “বাড়ি গিয়ে বলছি..”

বিলাসবহুল পেন্টহাউসটায় একটা মানুষকে লুকিয়ে রাখার মত জায়গার অভাব নেই…
কোনার একটা রুমে মালবিকাকে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে রাখলো রিক্ত,
সেই থেকে যে মুখে কুলুপ এঁটেছে মেয়েটা,তারপর থেকে একটা শব্দ শুনতে পায়নি রিক্ত,তবুও একটা রুমাল গুঁজে দিল ওর মুখের ভেতর, সাবধানের মার নেই..
মালবিকার নিস্পৃহ দৃষ্টিটা তাকে বড্ড অস্বস্তিতে ফেলেছে,মহিলার তো এখন রীতিমত চিলচিৎকার করার কথা!

~”কে এই মহিলা!” দুর্জয় প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরল রিক্তর,ওকে আবারও নিশ্চুপ দেখে দুর্জয় এবার ক্ষেপে উঠল..
~” তখন থেকে জিজ্ঞেস করছি কে ইনি! উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছিস না তুই..”

~”মাসকয়েক সম্পর্কে ছিলাম এর সাথে..”

~”তো! দুর্জয় এবার মালবিকা দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর উদ্দেশ্যে বলে উঠল,”আমার সাথে তো তোর কোন শত্রুতা নেই ,তোকে চিনিও না আমি..তাহলে?”

~”তাহলে এটাই, হারাধনের কেসটার সাথে ও কোন ভাবে রিলেটেড ,”মালবিকা কে ইঙ্গিত করে বলে উঠলো,”আগরওয়ালকে কিভাবে মারলি?আর ওর বাড়িতেই বা ঢুকলি কিভাবে!”

এবার মালবিকা গোঁ গোঁ করে উঠলো ,রিক্ত একটানে রুমালটা বার করতেই তেড়ে উঠল যেন সে,”শুধু আগরওয়ালকেই না! তোদের প্রত্যেকটাকে এমন নির্মম ভাবে মারবো যে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট অব্দি শিউরে উঠবে.. জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ! খিলখিল করে হেসে উঠলো ও..

~”আচ্ছা!তা কিভাবে মারবি শুনি?দুই হাত পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায়!”রিক্ত রাগটা আর সামলাতে পারলোনা,ঠাস করে চড়টা এসে পড়ল মালবিকার গালে..

~”ছাড় ছাড়! এভাবে মারিস না, জেরাটা আমাকে করতে দে!” এক ঝটকায় রিক্তকে সরিয়ে বসে পড়লো দুর্জয়, মালবিকা সামনে..

হঠাৎই ডোরবেলটার সুমিষ্টধ্বনিতে বেজে উঠে তিনজনকেই প্রবলভাবে চমকে দিলো,
এই অসময়ে আবার কে!

মালবিকা কে কোনমতে ফেলে রেখে দরজাটা আটকে বাইরে আসতেই রামশরণ বলে উঠলো,”বাবু পুলিশ!”

রিক্তর শিরদাঁড়াটা বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল,
~”পুলিশ কিভাবে জানতে পারলো যে মেয়েটাকে এখানে বেঁধে এনেছি!” অস্ফুটে বলে উঠল দুর্জয়..”শোন ভুলেও যেন বেফাঁস মন্তব্য করে বসিস না ,”সাবধান করে দিলো রিক্তকে।

~”বসুন অফিসার!” একগাল হেসে চেয়ারটা এগিয়ে দিল রিক্ত,” হঠাৎ এমন বিনা নোটিশে আবির্ভাব ?”
নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে উঠলো রিক্ত, বুকটা ধড়ফড় করছে ওর এখনো..

সেই অফিসারটাই!
অহনার সুইসাইডের পর এই ভদ্রলোক কম টানাহেঁচড়া করেননি রিক্তকে নিয়ে,নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছেন রীতিমতো ..

~”এখানে তো বসার জন্য আসেনি আমি..আগরওয়ালের কেসটার ব্যাপারে ইনভেস্টিগেশনে এসেছিলাম,” চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন অফিসার।
” আপনাদের দুজনের কাছেই আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতাম,কিন্তু দেখুন কি ভাগ্যি আমার!দুটো মাথাই এক ঘরে,আমাকে আর খামোখা ছুটোছুটি করতে হলো না..”বলে কালচে নোংরা দাঁত বার করে হেসে নিলেন একবার।
” দুর্জয় তুমিতো আজ সিকলিভ নিয়েছিলে,
তা সিকনেস কি তোমার? নাকি তোমার প্রাণের বন্ধুর?”আবারো বিচ্ছিরি ভাবে খিক খিক করে হেসে উঠলেন তিনি..

~”না মানে স্যার,”আমতা আমতা করতে লাগলো দুর্জয়।

~”থাক থাক!অনেক এক্সপ্লানেশন দিয়ে ফেলেছ,”
গলাখাকারি দিয়ে আবারো বলে উঠলেন,”এখন বলোতো মৃত্যুর আগের দিন তোমারে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে আগরওয়ালের কি হেতু আগমন ঘটেছিল?”

~”স্যার আপনি আমাদেরকে সন্দেহ করছেন!
রিক্তর গলায় উত্তেজনার ছাপ স্পষ্ট..”আগরওয়াল আমার শুধুমাত্র বন্ধু ছিল না ইন্ডাস্ট্রিতে একমাত্র অভিভাবক ছিল”

~”সন্দেহের তালিকায় তো আমরা সবাইকেই রাখছি রিক্ত বাবু.. আপনিও তার বাইরে নয় এমনকি দুর্জয়ও!”

~”আমি!” দুর্জয়ের বিস্ময় উপেক্ষা করে রিক্ত বলে উঠলো,”জাস্ট ক্যাজুয়াল মিট up!nothing else.. একটা পার্টি ছিল, পরেরদিন প্রোডাকশন হাউজেও কথাবার্তা হয়েছে আমাদের,”স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রিক্ত,
কি ভয়টাই না পেয়ে গেছিল সে !ভেবেছিল মালবিকার খোঁজেই পুলিশ অফিসারের এই অতর্কিত আগমন..

~”স্ট্রেঞ্জ!” মুখের হাসিটা নজর এড়ালো না অফিসারের,হঠাৎ মোবাইলের রিংটনে জিজ্ঞাসাবাদে ইতি পরল তার..

~”হ্যালো স্যার বলুন, কি?
অরিন্দম মুখার্জী খুন হয়েছেন! কোথায় ?
এক্ষুনি আসছি আমি”কলটা ডিসকানেক্ট করেই বেরিয়ে গেলেন তিনি”তোমরা দুজনেই আমাদের suspected list এর টপ-টেন এর মধ্যে আছো!
Be careful!শহর ছেড়ে পালাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবে না,” বেরোনোর আগে শাসিয়ে যেতে ভুললেন না তিনি..

হতবাক রিক্ত একদৃষ্টে চেয়ে রইল তার চলে যাওয়া পথের দিকে।
~”অরিন্দম খুন হয়েছে!” অস্ফুটে বলে উঠল দুর্জয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here