#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব ১৩,১৪
#কঠোরভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি_রায়
১৩
২২
অফিসার সশব্দে দরজাটা বন্ধ করে বেরিয়ে যাবার পরেও রিক্তর হতভম্বতা কাটলো না..
এ কেমন ভাবে সম্ভব ! খুনী তো ঘরে বন্দিনী.. তবে কি মালবিকা অরিন্দম কে মেরে ফেলার পর তাদেরকে টার্গেট করেছিল..?
সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল রিক্তর, ধপ করে বসে পড়ল মেঝেতেই।
ইতিমধ্যে দুর্জয় টিভিটা অন করে দিয়েছে,
মিডিয়া যে টপিকটা ছিড়ে খাবে তা বলাই বাহুল্য,
হেডলাইন হয়ে গেছে খবর টা!
সাংবাদিক,পুলিশ থিকথিক করছে গোটা জায়গাটা জুড়ে..
~”জায়গাটা বেশি দূরে নয়,যাবি নাকি?” দুর্জয়ের প্রশ্নে দাঁড়িয়ে পড়ে রিক্ত
~”রামশরণ,আমরা দুজন বার হচ্ছি.. মেয়েটা যেমন পড়ে আছে তেমনই থাকুক, ভুলেও দরজা খুলতে যাবিনা..”নির্দেশ দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ঝটপট পকেটে পুরে দ্রুত এগিয়ে যায় রিক্ত, পিছন পিছন ওকে অনুসরণ করে দুর্জয়..
অডিটা যখন স্পটে থামল তখন অলরেডি অরিন্দমের লাশটা গাড়ির ব্যাকসিট থেকে নামিয়ে চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে.. চারদিকে মিডিয়া,ইনভেস্টিগেটর থিকথিক করছে..
রুলিং পার্টির ছেলেপুলেরা মিডিয়াকে বাইট দিচ্ছে,
রীতিমত সরগরম হয়ে গেছে এলাকাটা, উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে..
~”তুই এখানে বস.. আমি দেখে আসি, মিডিয়া তোকে দেখলে ছিঁড়ে খাবে,”বলে দুর্জয় গাড়ি থেকে নেমে গেল
তার গতিপথের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল রিক্ত,
আগরওয়ালের মৃত্যুতে যেভাবে ভেঙে পড়েছিল সে, তার কণামাত্র বহিঃপ্রকাশ পেলোনা অরিন্দম এর মৃত্যুতে..
“শালা হারাধনের সাথে আগরওয়াল এর মার্ডারের কোন লিংক নেই? মৃত্যুটাকে হেসে খেলে উড়িয়ে দিয়েছিল..নিজেই এখন শক্ত কাঠ হয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে!
কতবার করে বলেছিলাম কেসটা reopen করাতে !
উদ্বোধন মাড়াতে গেছিল! মাড়া এখন উদ্বোধন নরকে গিয়ে ..তোর মৃত্যুটাকে এখন ঠেকে বসা লোকজনদের আড্ডার খোরাক হয়ে দাঁড়াবে..
ওয়াক থু!” বলে একদলা থুতু ফেললো পিচরাস্তাতেই” স্পষ্টতই রিক্তর মনে অরিন্দমের সেদিনের ব্যবহার এখনো জীবন্ত.. বন্ধুর মৃত্যুতে দুঃখিত হওয়া তো দূর! রীতিমত পুলকিত সে,
হঠাৎই এক রিপোর্টারের চোখ গেল অডিটার দিকে.. সাথে সাথে পঙ্গপালের মত ধেয়ে আসল মিডিয়ার দলের একটা অংশ,
ওদেরকে দেখে মুখের কুটিল হাসিটা মুছে দুঃখের মুখোশ পরে নিল রিক্ত..
~”স্যার আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অরিন্দম চৌধুরী মারা গেছেন, এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি..”
মিডিয়ার সব প্রশ্নের জবাব শান্তস্বরে কভার করে,নিজের অভিনয় নৈপুন্যে তাই নিজেই প্রশংসা করে উঠল রিক্ত,আলগা হাতে চোখটা মুছে গিয়ে বসল গাড়িতে,
ক্রিং ক্রিং
~”হ্যাঁ দিয়া বলো”
~” তুমি কোথায়? কতবার করে ফোন করেছি রিসিভ করছ না!” উদ্বিগ্নতা ঝরে পড়ছে দিয়ার গলায়..
~”আমি অরিন্দম-এর মার্ডার স্পটে,”সংক্ষেপে উত্তর দিলো রিক্ত..
~”অরিন্দম চৌধুরীকে তুমি চেনো?”
~”বিলক্ষণ!বলো কি দরকারে ফোন করেছিলে?”
~”বিকেলে কখন আসবে? আমার যে আর তর সইছে না..”আদুরে গলায় বলে উঠল দিয়া,
এক মুহুর্ত ভেবে নিয়ে উত্তর দিলো রিক্ত,” আজ তুমি আসো, আমার apartment অ্যাড্রেসটা চ্যাট বক্সে পাঠিয়ে দিচ্ছি..”
কলটা ডিসকানেক্ট করে সিটে গা এলিয়ে দিল রিক্ত, দুর্জয়ের অপেক্ষা করতে করতে কখন যে চোখটা লেগে গেছে বুঝতেই পারল না…
~”গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিস?ওঠ ওঠ বেরোতে হবে..”
~”কোথায়?ঘুমের রেশটা তখনো কাটেনি রিক্তর,”আর কি দেখে আসলি?”
~”অনেক কিছুই, যেতে যেতে বলছি,”গম্ভীর স্বরে বলে উঠল দুর্জয়, সদাহাস্যময় ছেলেটির মুখেও আজ অনিশ্চিতের কালো মেঘ এসে জমা হয়েছে…
হাইওয়ের বুকচিরে তীব্র গতিতে চলেছে ব্লু মেটালিক অডিটা, যাত্রী মাত্র দুজন হলেও দুজনেই নিস্তব্ধতার বাঁধনে বন্দী..
~”এবার বল,”অধৈর্য হয়ে উঠেছে রিক্ত,”ওকে খুন করলো কি করে,আগরওয়াল এর মত?”
~”না, আঘাতের কোন চিহ্ন নেই,”বলে চুপ করে গেল দুর্জয়..
“চুপ করে গেলি কেন..বল,” রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠেছে রিক্ত,
~”Respiratory distress এ মৃত্যু হয়েছে আর..”
দুর্জয়কে কথাটা শেষ করতে দিল না রিক্ত,”অরিন্দমের তো asthma ছিলনা!”
~”প্লিজ চুপ কর! সম্পূর্ণটা বলতে দে,” একবুক শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো দুর্জয়,” respiratory distress with severe muscle spasm,
মাসল স্প্যাজম ইনটেনসিটি এতটাই বেশী ছিল যে গলা ঘাড় সমেত গোটা বডিটা ধনুকের মতো বেঁকে গেছে!”
~”ওহ!”আর্তনাদ করে উঠলো রিক্ত,
~”may be ফুড পয়জনিং কেস..কি poison সেটা পোস্টমর্টেম এর পরেই জানা যাবে,but no doubt, মর্মান্তিক ভাবে প্লানমাফিক মেরে ফেলা হয়েছে ওকে.. বিষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে সায়ানোসিস, অর্থাৎ বডি নীলবর্ণ ধারণ করেছে!”
~”প্ল্যান মাফিক?”
~”ইয়েস,ওর গাড়ির ব্যাকসিটে কোনো শার্প মেটেরিয়াল দিয়ে চতুর্ভুজ খোদাই করা হয়েছে, যার দুটো বাহু ক্রশ মার্কড..”একনিশ্বাসে বলে গেলো দূর্জয়
~”এবার গাড়িতে? স্কোয়ার মার্ক?”
~”হুমম,” অস্ফুটে বলে উঠল দুর্জয়..”অ্যান্ড one more, পুলিশ আমাদের পিছনেও পড়বে মিলিয়ে নিস,
মৃত্যুর আগের দিন রাত্রে অরিন্দম তোর পেন্টহাউসে গিয়েছিলো, ইনফ্যাক্ট আজ সকালেও ওর সাথে আমার যে ফোনালাপ হয়েছে, সেটা ডিপার্টমেন্টকে বার করতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না!ফোনের IP অ্যাড্রেস ট্র্যাক করলেই খবর হাতের মুঠোয়.. তারপর তো…”
কথার মাঝেই হো হো করে হেসে উঠলো রিক্ত,এই গুমোট পরিবেশে হাসির অর্থ দুর্জয়ের যে বোধগম্য হল না, তা বলাই বাহুল্য..
ও উত্তেজিত হয়ে গেল রীতিমত,”তোর হাসি অাসছে.. মজার কথা বললাম আমি তোকে!”
হাসতে হাসতেই উত্তর দিল রিক্ত,”এক হারাধনে রক্ষে নেই তায় আবার পুলিশ!
বলছি এবার কি তোর পালা নাকি আমার..”
হাসি যেন থামছেই না রিক্তর,
“পুলিশ এবার কেসটা নিয়ে উঠেপড়ে লাগবে, যতই হোক রুলিং পার্টির প্রতিনিধি ছিল অরিন্দম,উপরতলার চাপ আসবে প্রবলভাবে,
চতুর্ভুজের ক্লু’টা দিয়ে বুঝতে অসুবিধা হবে না এটা নিছকই প্রতিহিংসাবোধ,
তারপর অরিন্দম, আগরওয়াল দুজনেরই অতীত খুঁড়তে একজোটে সব উঠেপড়ে লাগবে, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বার হবে তখন.. দুমূহর্ত থামলো রিক্ত,”খুনী প্রচণ্ড ধুরন্ধর,খুন করার জন্য এমন দিন বাছছে যাতে সহজেই আমাদের উপর সন্দেহ এসে পড়ে..আমাদের সাথে কন্টাক্ট এর এক দুদিনের মধ্যেই মেরে ফেলছে, আর বাকি রইল চতুর্ভুজ! বাকি বাহুগুলো যে আমরা দুজন,সেটা খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হবে না ওদের, ফাইল ঘাটলেই বোঝা যাবে..”
~”তাহলে উপায়! দুর্জয় তখন রীতিমত আতঙ্কিত,”আমাদের মুখোশ যে খুলে যাবে রিক্ত!”
~”উপায় একটাই,খুনিকে তার নিজের জালে জড়িয়ে ফেলা, খুব সন্তর্পনে এগোতে হবে আমাদের দুজনকে..”চিন্তিত ভাবে বলে উঠলো রিক্ত,
~”another one,তোকে বলতে ভুলে গেছিলাম ..খুনের সময় approx সকাল 11 টা,”
~”কিন্তু মালবিকা তো তখন অলরেডি আমাদের জালে ফেঁসে গিয়েছে! খুনটা
অন্য কেউ করেছে? how ইজ দ্যাট পসিবল!” গর্জে উঠলো রিক্ত “ব্লাডি হোর! ওতো নিজের মুখেই স্বীকার করল খুন করেছে..”
~”May be মেয়েটাকে কেউ চালনা করছে রিক্ত, শিকড় অনেক গভীরে! এমন কিছু আছে যেটা আমাদের নজরের বাইরে থেকে যাচ্ছে,
মেয়েটাকে আবারো জেরা করতে হবে, দরকার পড়লে ওর উপর থার্ড ডিগ্রি এপ্লাই করতে হবে!”এক নিঃশ্বাসে বলে গেল দুর্জয়..কারন একটা মানুষের পক্ষে একই সময়ে দুটো আলাদা জায়গায় উপস্থিত থাকা অসম্ভব!
~” হুমম,”সংক্ষেপে উত্তরটা দিয়ে সিগারেটটা জ্বালালো রিক্ত,
ওর মুখের মিটিমিটি হাসি নজর এড়ালো না দুর্জয়ের,”হোয়াট হ্যাপেন্ড?” অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করে বসলো দুর্জয়..
জানলাটা খুলে ফস করে একমুখ ধোয়া চলন্ত গাড়ি থেকে উগরে দিল রিক্ত,”ভাবছিলাম কত জালে জড়িয়ে আছি আমি..প্রোডাকশন হাউজটা ডুবতে বসেছে,এদিকে কে সেক্স ক্লিপটা পাঠিয়েছে সেটা এখনও অজানাই,তার মধ্যেই এসব পরপর..” আধখাওয়া সিগারেটটা ফেলে মুখটা হাতে গুজে দিল রিক্ত..
~”ডোন্ট worry! সান্তনার ভঙ্গিতে বলে উঠল দুর্জয়,”ওই মালবিকাই তোর সব প্রশ্নের উত্তর!”
বহুতল বিল্ডিং এর সামনে যখন অডিটা থামলো, তখন রিক্তর ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে প্রায়..
পেন্টহাউস ঢুকে গেল ছুটে গেলো বদ্ধ ঘরটার দিকে,পিছুপিছু দুর্জয়.. বন্ধ ঘরটা খুলে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল মালবিকার ওপর,ততক্ষণে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা, শায়িতা মালবিকার পিঠে চরম আক্রোশে একটা লাথি কষালো রিক্ত,
“বল রেন্ডি কার কথা মত চলছিস তুই!”
মালবিকা মুখে তবুও টু শব্দটি নেই,
~”মুখ খোল! কথা বল! নইলে এখনই কেটে ফেলবো তোকে!”
~”স্টপ রিক্ত, স্টপ! ওর বলার হলে এতক্ষণে বলে ফেলত,আমাদের অন্য উপায় দেখতে হবে!”
~”কি উপায়!”
রিক্তর প্রশ্নকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে গেল দুর্জয়
,ও জানে এই লোকটা রেগে গেলে কতটা নিচে নামতে পারে,কিন্তু মেয়েটা মারাত্বক স্টেডি! এত অত্যাচারের পরেও মুখে টু শব্দটি নেই!
মিনিট দশেক সার্চ করার পরেও যখন কিছুই পেল না দুর্জয়,তখন বাধ্য হয়ে স্ট্রিপ সার্চ এর শরণাপন্ন হলো সে..
~”কি করছিস বল প্লিজ,”অধৈর্য হয়ে উঠেছে রিক্ত,
মালবিকা এখন ছটফট করছে রীতিমত, গো গো আওয়াজ ভেসে আসছে ওর মুখ থেকে,
ওকে বিবস্ত্র করতেই ছোট্ট হ্যান্ডসেটটা টুপ করে পড়লো…যুদ্ধ জয়ের হাসি তখন দূর্জয়ের মুখে…
~”এসব কি!” রিক্তর উদ্বেগ আবারও অগ্রাহ্য করে গেলো দুর্জয়,
ফোনটা কিছুক্ষণ ঘাটার পর দুর্জয় হ্যান্ডসেটটা মেলে ধরল মালবিকার মুখের সামনে..”reset করা হয়ে গেছে?”
~”রিসেট! উত্তেজনা আর চাপতে পারছেনা রিক্ত..
কিছু না বলে দুর্জয় এগিয়ে দিলো রিক্তর দিকে,কাঁপা হাতে তন্নতন্ন করে খোঁজার পর্ব চলছে তখন,যদি কোন ইনফরমেশন পাওয়া যায়!
বাট নাহ্,কল লিস্ট চ্যাটবক্স সব মরুভূমির মতো ধু ধু করছে!কন্টাক্ট লিস্ট অব্ধি শূন্য!
হঠাৎ রিক্তর রাগটা পড়ে গেল,মাথাটা অদ্ভুত শান্ত হয়ে গেল ওর,”দুর্জয়,ওর সিম নাম্বার থেকে কখন কার সাথে কতক্ষণ কথা হয়েছে বার করতে পারবি?
~”Why not!আজ রাতের মধ্যেই বার করে ফেলতে পারব,”দুর্জয়ের মুখে তখন আত্মতৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট।
একপা দুপা করে রিক্ত এগিয়ে গেল মালবিকার দিকে,
মালবিকার দুচোখে তখন যেন আগুন জ্বলছে,নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে,
থুতনিটা ধরে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে রিক্ত বলে উঠলো,”কান টানলেই তো মাথা আসবে মামনি!”
#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব ১৪
#কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়
অবাধ্য পুরুষালি হাতটা নিপুণভাবে অর্ধাবৃত নারীদেহবাঁকে খেলে বেড়াচ্ছে,অন্তর্বাসের খাঁজে খাঁজে আদরবাসা ঢালতে ঢালতে হাতটা উঠতে থাকে আরো উঁচুতে,
কামনার নির্নিমেষ ফাঁদে বন্দিনী নারীদেহটি অভ্যস্ত হাতে অন্তর্বাসের বন্ধনী মুক্ত করা মাত্র,বাস্তবের রূঢ় মাটিতে ফিরে আসে পুরুষটি,
~”কী হল?”অস্ফুটে ফিসফিসিয়ে আসা মেয়েলি কন্ঠস্বরটা একপ্রকার এড়িয়ে যেতে চায় রিক্ত,
কিন্তু কামনার চক্রব্যূহে বন্দিনী দিয়ার চোখেমুখে অতৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট..
~”পরে হবে এসব”সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যায় রিক্ত,
ক্লিপসটা দেখার পর থেকেই অতিমাত্রায় সতর্ক সে, পেন্টহাউসে কোনরকম গুপ্ত অভিসার থেকে নিজেকে সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে রিক্ত,
নারীদেহের স্বাদ থেকে বেশ কিছুদিন বঞ্চিত থাকলেও নিমেষেই স্বরচিত বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলে নিজেকে,
দিয়ার অতৃপ্ত বিস্মিত চাহনি রীতিমত অস্বস্তিতে ফেলেছে তাকে…
~”চলো তোমাকে অ্যাপার্টমেন্টটা ঘুরে দেখাই,প্রথম এলে তুমি,”বলে দিয়ার হাতটা ধরে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই এগিয়ে যায় সে..
~”কত স্ক্যোয়ার ফিটের এই পেন্টহাউসটা ?”
~”5k”
সংক্ষেপে উত্তর দেয় রিক্ত,অতৃপ্ততার রেশ তার মধ্যেও বর্তমান বৈকি,
~”এত চুপচাপ হয়ে গেলে কেন?”
উফফ,এত অবান্তর প্রশ্ন করে মেয়েটা!মুখে যেন কথার খই ফুটেছে, চুপচাপ চল না বাবা আমার সাথে!
বলতে গিয়েও থেমে যায় রিক্ত, বিরক্তিটা গিলে নেয় নিজের মধ্যেই,
~”কি হল বলো,”
এবার মুখের আগল খুলতে বাধ্য হয় রিক্ত, “অরিন্দম খুন হয়ে গেল,মনটা কি সমে থাকে বলো..”নিচুস্বরে উত্তর দেয় রিক্ত,
অরিন্দম এর মৃত্যু তার মানসপটে জীবন্ত হলেও সেখানে দুঃখের বদলে শঙ্কার প্রাবল্যই বেশি..
কি জানি এবার কার পালা!
যদিও দিয়ার নরম সান্নিধ্য তার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে,বাস্তবটাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলে থাকা যায়..
~”ডোন্ট worry! খবরটা আমাকেও যথেষ্ট ভাবিয়েছে,” সান্তনার ভঙ্গিতে বলে ওঠে দিয়া,
~”জনদরদি একজন লিডারেরও শত্রুর অভাব হয়না,তাইনা?”
জনদরদি!
হঠাৎই কেমন হাসি পেয়ে গেল রিক্তর..
” এসকর্ট এজেন্সির ফাউন্ডার মিস্টার অরিন্দম চৌধুরী পাবলিকের চোখে জনদরদি!
অবশ্য অরিন্দমও এসব কাজ আঁটঘাট বেঁধেই করতো, পাবলিক এর নজরে ,ওর মুখোশটাই প্রকৃত মুখ ভাবা স্বাভাবিক..
অবশ্য ওর কল্যাণেই ওদের লালসা পরিতৃপ্ত হয়েছে সেটা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারবে না রিক্ত, কিন্তু ব্যভিচারের জালে জড়িয়ে নিজেতো মরলই, আমাদেরকেও অন্ধকূপে ঝুলিয়ে রেখে গেল”আপনমনেই বলে ওঠে রিক্ত..
~”কি এত ভাবছো?”দিয়ার প্রশ্নে যেন সম্বিত ফিরে পেলো রিক্ত,
“আর তোমার বাড়ি এরকম অবস্থায় কেন?”বলে সিলিংয়ের দিকে নির্দেশ করল দিয়া..
ফলস সিলিং গুলো ওইভাবেই এবড়ো খেবড়ো হয়ে ঝুলে আছে,হিডেন ক্যামেরা খোঁজার জন্য সেখানে তো কম তাণ্ডব চালায়নি রিক্ত!
~”রিনোভেশন চলছে, কমপ্লিট হয়নি..” আমতা আমতা করে উত্তর দেয় রিক্ত,
উফফ,কোন কুক্ষণে যে এই মেয়েটাকে ডাকতে গিয়েছিলাম!সব প্রশ্নের উত্তর জানা চাই..
রিক্ত ভ্রুকুটি নজর এড়ালো না দিয়ার তবুও প্রশ্ন করে বসে,”কিন্তু এগুলো তো ভেঙে ফেলা হয়েছে মনে হচ্ছে..”
এবার রিক্ত সত্যিই ক্ষেপে গেল,চোয়ালটা শক্ত হতে না হতেই পকেটে রাখা মুঠোফোনটা ভাইব্রেট করে উঠল ওর..
~”হ্যাঁ দুর্জয় বল, পেয়েছিস?
কি নাম.. আচ্ছা ইনফরমেশন গুলো চ্যাট বক্সে পাঠিয়ে দিস!”
কলটা ডিসকানেক্ট করে দিয়ার দিকে তাকায় রিক্ত,চোখমুখে খুশির ছাপ স্পষ্ট..
হাসি হাসি মুখে উত্তর দেয়,”তোমাকে পরে সব বুঝিয়ে বলবো।”
রিক্তর মনের আগল কিছুতেই পেরোতে পারে না দিয়া,
এই যেন খুবই রূঢ়!এই আবার সব যেন স্বাভাবিক..
বিগত মাস ছয়েক ধরে মালবিকার সিম থেকে একটা রেজিস্টার্ড নম্বরে কমপক্ষে চারশো বার কল গিয়েছে,
সিম হোল্ডার এর নাম দীপান্বিতা মাহাতো..মেয়েটি যে হারাধন মাহাতো পরিবারেরই কেউ তা বুঝতে আর বাকি নেই রিক্তর,
এখন শুধু হলদিবাড়ি যাওয়ার অপেক্ষা,সব রহস্যের জট খুলবে ওখানেই,
খুনির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বুনোট এখন ওর কাছে আগাছারই সমতুল্য..
টাওয়ার লোকেশন এখনো যেহেতু হলদিবাড়ি, তাই খুনির কাছে পৌঁছতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না তাদের,
“ব্রাভো দুর্জয় ব্রাভো!”আপনমনেই দুর্জয়ের প্রশংসা করে ওঠে রিক্ত,
ছেলেটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর সাথে যুক্ত না থাকলে এতদূর এগুনো কিছুতেই সম্ভব হতো না ওদের পক্ষে..
~”আহ্,লাগছে!”দিয়ার আর্তনাদে ঘোরটা কেটে যায় ওর..
প্রতিহিংসাবোধে মত্ত রিক্তর পুরুষালী পাঞ্জা, কখন যে দিয়ার নরম ফর্সা আঙ্গুল গুলোকে নির্মমভাবে পিষ্ট করছে তা বুঝতেই পারেনি ও!
যন্ত্রণায় দিয়ার চোখে প্রায় জল চলে এসেছে, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চরম আত্মতৃপ্তি অনুভব করে রিক্ত,
হঠাৎই ওর কোমরটা সজোরে আঁকড়ে ওকে বুকের মধ্যে মিশে নেয় রিক্ত, ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,” আজ আর ফ্ল্যাটে ফিরতে হবে না প্লিজ..”
দিয়ার নীরব সম্মতি নজর এড়ালো না ওর, ওকে নিজের বাহুপাশে বন্দী করে পরম আশ্লেষে নিজের ঠোঁটদুটো ডুবিয়ে দেয় ওর নরম পাপড়ির মত ঠোঁটে..
হঠাৎই দিয়া সজোরে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে রিক্তর থেকে,”কেমন দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ আসছে না?”
ভয়ে গা টা কেঁপে উঠলো রিক্তর, মালবিকা হাতের বাধন খুলে ফেলল নাকি!
~”ও কিছু না!” রিক্ত ব্যাপারটাকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও দিয়ার ভয়ার্ত মুখ স্বাভাবিক হলো না ,অগত্যা দিয়াকে একলা রেখে রামশরণ কে নিয়ে কোণের ঘরটায় পা বাড়ালো সে..
কি কুক্ষণে যে এই মেয়েটাকে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে আসতে বলেছিলাম! নিজের বোকামিতে নিজেই রেগে উঠলো ও,
মালবিকার ঘর থেকেই আওয়াজ আসছে..
~”এখানেই দাঁড়া রামশরণ,দিয়া যাতে এদিকে না আসে নজর রাখবি,”বলে প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে রিক্ত ঘরটা খুলে যা দেখল তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না, পিছমোড়া বাঁধা অবস্থাতেই ক্রমাগত লাথি মেরে যাচ্ছে মেয়েটা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে!
লাথির দমকে ভারী পাল্লাটা কেঁপে উঠছে!
~”তবে রে!” জন্তুর মত টানতে টানতে ঘরের অন্য প্রান্তে নিয়ে যায় মালবিকাকে, শক্ত বাঁধনে গারদের সাথে বেঁধে হিসহিসিয়ে ওঠে,”নে,এবার যত খুশি লাথি মার!”বলে ওকে ওই অবস্থাতেই ফেলে রেখে তালা বন্ধ করে বেরিয়ে যায় ..
~”কি ছিল ওখানে?কে ধাক্কা দিচ্ছিল ..”দিয়ার ভয়ার্ত সন্ত্রস্ত মুখটা রিক্তকে চুম্বকের মতো টানছে।
~”নাথিং ইম্পর্টেন্ট,”রিয়াকে একপ্রকার এড়িয়ে এগিয়ে যায় সে।
হঠাৎই পিছন থেকে সজোরে আঁকড়ে ধরে দিয়া ওকে, নিজের সুগঠিত নরম ভরাট স্তন রিক্তর চওড়া পিঠে পিষ্ট করতে করতে বলে উঠে দিয়া,
“আমি কি কোন ভুল করে ফেলেছি?এইভাবে আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো কেন?”
এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় রিক্ত,দিয়ার দুচোখে তখন টলমল করছে মুক্তোর মতো অশ্রুদানা,
ওই রূপের সামনে রিক্তর প্রতিজ্ঞার বেড়াজাল নিমেষেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়..
এক ঝটকায় কাঙ্খিত নারীকে কাছে টেনে ওকে অভ্যস্ত হাতে বসন মুক্ত করে রিক্ত,
মাখনের ন্যায় দেহবাঁক রিক্তর অবাধ্য হাতের ছোঁয়ায় যেন প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে,
কাঙ্ক্ষিত নারীর রূপরস আস্বাদন করতে করতে নিপুন ভঙ্গিমায় নিজেকে চালনা করতে শুরু করে রিক্ত,
দিয়ার এহেন নিঃশর্ত আত্মনিবেদনের কারণ অজানাই থেকে যায় রিক্তর, প্রবল কামোত্তজনার ফাঁদে পড়ে,…
পাখির কলতান বহুতলের টপ মোস্ট ফ্লোরে এসে না পৌঁছালেও সূর্যের আলো চোখে পড়া মাত্র ঘুমটা ভেঙে গেল রিক্ত, পাশে দিয়া ঘুমোচ্ছে নিঃসাড়ে, পাতলা চাদরটা ওর গায়ে ভালোভাবে টেনে মুঠোফোনের ডিজিটাল অক্ষরে চোখ বোলায় রিক্ত,
গোটা গোটা অক্ষরে যেখানে জ্বলজ্বল করছে হেডলাইনটা..
নিহত রাজনীতিবিদ অরিন্দম চৌধুরীর ওমেন্স ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের পর্দা ফাঁস!
মাথাটা কেমন টলে যায় ওর..
নির্মমভাবে হত্যা করার পরেও চরিত্রের কালিমালিপ্ত করার কী অদ্ভুত চক্রান্ত!
কিন্তু এমনটা যদি ওর নিজের সাথে হয়..যদি সেক্সক্লিপস টা এভাবেই বিনোদনের বস্তু হয়ে ওঠে তখন!
ঘুম চোখেই বিছানায় তড়াক করে বসে পড়ে রিক্ত,
~” যা করার আজই করতে হবে,”তখনই মনস্থির করে নিল ও,
প্রতিটা মুহূর্তকে খুনি যে কি নিপুণভাবে কাজে লাগাচ্ছে তা এখন উপলব্ধি করতে পারছে ও!
অরিন্দমের মুখোশ খুলে গিয়েছে অলরেডি,এখন হয়ত রিক্তর পালা…
আর সুযোগ দেওয়া যাবেনা খুনি কে..
~”হ্যালো দুর্জয়!আজই হলদিবাড়ি যাব,”
রিক্তর গলায় রীতিমত উত্তেজনা তখন..
~”কোথায় যাবে?” দিয়ার ঘুম জড়িত কণ্ঠস্বর শুনে পাশ ফেরে রিক্ত,”একটা মিটিং আছে,আর্জেন্ট! দশ মিনিটের মধ্যে বেরোবো..”
~”আর আমি!”
~”তুমি এখানেই থাকো, রামশরণ আছে তো!ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ এর সব ব্যবস্থা ওই করবে.. চিন্তা করোনা,আমি ফিরে আসবো খুব তাড়াতাড়ি”কপালে একটা স্নেহ চুম্বন দিয়ে স্নানঘরে ঢুকে যায় রিক্ত..