ষড়রিপু,পর্ব-০১

0
1432

#ষড়রিপু,পর্ব-০১
#মুখোশের অন্তরালে
#ধারাবাহিক
#প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়

আলো-আধাঁরির মায়াময় পরিবেশের দুটো নগ্ন শরীর আদিম খেলাতে মেতে উঠেছে , সুদৃঢ় কঠিন পুরুষোচিত অবয়বটিকে ঘিরে রেখেছে গুটিকয়েক বিবসনা রতিক্লান্ত নারীদেহ , যান্ত্রিক তৎপরতায় একের পর এক রমণীর সাথে মৈথুনে লিপ্ত হতে থাকলেও পুরুষটির দেহে ক্লান্তি ছিটেফোঁটাও নেই , বরং নারীমাংসের নরম স্বাদ তার হিংস্র প্রবৃত্তিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রবলভাবে ।
আঁচড়িয়ে কামড়িয়ে শরীরসুখের শেষ বিন্দুটি লুণ্ঠনের একপর্যায়ে শক্ত দড়িগাছা নিয়ে এলো তাদের মধ্যে একজন ,
স্মিতহাস্যে পুরুষটির নাম ধরে বারকয়েক ডাকার পর সাড়া না পেলে সম্ভোগরত পুরুষটির দেহগাত্রে নিজের রমণীয় কামছোঁয়া স্পর্শ করতে থাকে নিপুণভাবে ,
আচমকাই মনসংযোগে বাধা পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে পিছন ফিরে চাইতেই দৃষ্টি আটকে যায় যেনো ,
পাতলা পর্দার চাদরে মুখাবয়ব ঢাকা থাকলেও শারীরিক বিভঙ্গে অনেক বেশি আবেদনময়ী , যেন গ্রীক পুরাণের দেবী আফ্রোদিতি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন , সুডৌল স্তনযুগলের নির্নিমেষ চাহনি তার ক্রোধ শুষে নিল নিমেষেই ,
নেশাতুর সেই শরীরের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারে না বিস্মিত রতিক্রিয়ায় লিপ্ত পুরুষটি ।
উপস্থিত সব রমণীকে ফেলেই রহস্যময় পর্দানশীল নারীমূর্তির দিকে ছুটে যায় ঘোরলাগা সাধকের মত , যেমনটা কাঙ্খিত দেবতার সন্ধানে পিছু পিছু ছুটে চলে মোহগ্রস্ত উপাসক ,
খানিক দূর গিয়েই সেই রহস্যময়ী নারীমূর্তি যেন হাওয়ায় মিশে যায় , উদভ্রান্তের মত এদিক-ওদিক চাইতেই নেশাতুর কন্ঠে সম্বিত ফেরে যেন ,
তার নির্দেশ মতো পুরুষটি শয্যায় শুয়ে পড়ে নিশ্চিন্তে , যেন ঘোরে পেয়েছে তাকে ,
স্থানকাল বিচার না করেই সেই রমণীর নির্দেশ পালন করছে প্রভুভক্ত কুকুরের মত ,
চোখে মুখে ধরা পড়েছে কামুকতা তীব্র আভাস , খানিকক্ষণ পর হাতে ফেলা দড়িটা কাছে নিয়ে এগিয়ে আসতে শুরু করে নারীমূর্তিটি ,
তাকে দেখামাত্রই হাসি ফুটে ওঠে ,
খানিক পরে তড়িত্গতিতে দড়িগাছার বাঁধনে পুরুষটিকে বেঁধে ফেলা মাত্র উন্মাদনা পৌঁছে যায় অন্যমাত্রায় ,
ধীরে ধীরে রমণীয় কোমল পেলব হাতের সুচারু আবেশে চোখ বুজে ফেলে পুরুষটি , এ যেন আরাধ্য দেবতার থেকে প্রসাদপ্রাপ্তি তার ।
কাঙ্খিত নারী কাছে নিজেকে পূর্ণ সমর্পন ,
ধীরে ধীরে পূর্বরাগ শেষে বন্দি পুরুষটিকে নিজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে শুরু করে পর্দানশীল রমণীটি , অবগুণ্ঠনের বাধা পেরিয়ে তার স্বরূপ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠলেও হাত-পা বাঁধা থাকার কারণে সম্ভব হচ্ছে না কিছুতেই ,

মৈথুনের একপর্যায়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠে পুরুষটি , রন্ধ্রে-রন্ধ্রে তখন বয়ে চলেছে বিষের গাঢ় কুণ্ডলিকা , অসহ্য দাবদাহে জ্বলতে পুড়তে থাকা পুরুষটি নিজেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে উঠলেও বিফল হয় বারবার , যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখটার দিকে তাকিয়ে নারী শরীরটি চালনাহার বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণগতিতে , পর্দানশীন মূখাবয়ব ভেদ করে ততক্ষণে অট্টহাস্যে ভরে উঠেছে চৌহদ্দিটা ,
এমন সময় যন্ত্রণায় নীল হতে থাকা মুখটার দিকে তাকিয়ে একটানে পর্দাটা টেনে ফেলে দেয় মেয়েটি ,

নাম না জানা কীটে ভর্তি সেই নারীর মুখাবয়ব তখনও বজায় রেখেছে অট্টহাস্য ,
অস্পষ্ট আঁধার বিরাজমান থাকলেও বীভৎসতা বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট ,
কদর্য সেই মুখের দিকে তাকিয়ে সর্বশক্তি একত্রিত করে চিৎকার করে ওঠে পুরুষটি , ” আমি যে তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম দিয়া ! ”

~” আহ ! ” দুঃস্বপ্নটা কেটে যাওয়ার পরমুহূর্তে ধড়মড় করে বিছানায় বসে পড়ে রিক্ত , নিজের দুঃসহ অতীত ফিরে এসেছে স্বপ্নের মাধ্যমে ,

নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশেও শরীরটা ঘামে ভিজে গিয়েছে পুরোপুরি , জব জব করছে গোটা শরীরটা , লম্বা হাত বাড়িয়ে রেগুলেটরটা একটু ঘুরিয়ে ফ্যানের স্পিডটা বাড়িয়ে দিতেই পাশের শায়িত মেয়েটার ঘুম ভাঙলো এবার ,

~” ঠান্ডা লাগছে , কমিয়ে দাও ” সদ্য ঘুম ভাঙ্গা সিডিউসিং গলায় বলে উঠলো মেয়েটা ,
তারপর কুঁচকে যাওয়া বেডকভারটা বুক অব্ধি টেনে নিজের নিরাভরণ শরীরটা টেনে আনলো রিক্তর পাশে , হালকা আদুরে ভঙ্গিতে নিজের খাড়া নাক ওর পিঠে ঘষতে লাগল ক্রমাগত ,
~” হোয়াট হ্যাপেন্ড ,” আলস্য ভঙ্গিতে ঘুমভাঙ্গা কণ্ঠস্বরে রিক্তর গলাটা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো ও , ” এত তাড়াতাড়ি উঠে গেলে যে , এখনও তো ঠিকমত সকালই হয়নি , এদিক আসো তো ,”

প্রতুত্তরে কিছুই না বলে মেয়েটিকে নিজের কোলের উপর টেনে আনল রিক্ত , সাদাচামড়ার মেয়েটাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে দুঃস্বপ্নটা দুঃস্বপ্নটা ভোলার ব্যর্থ চেষ্টায় মেতে উঠল ও ,
ঘন সোনালী চুলে মুখ ডুবিয়ে ভুলতে চাইলো নিজের কলঙ্কিত অতীতকে ,

ভোরের মৃদু আলো ততক্ষনে কাঁচের শার্সি ভেদ করে লুটোপুটি খাচ্ছে একচিলতে ঘরটায় , ভোরের নরম আলোতে খুনসুটিতে মেতে ওঠা দুজনের হালকা হাসিঠাট্টায় ভরে উঠলো চৌহদ্দিটা ।

~” ওয়েট ফর এ সেকেন্ড ,” বলে মেয়েটাকে পাশে সরিয়ে দিয়ে আলগা হয়ে যাওয়া স্লাইডিং শার্সিটা টেনে বন্ধ করে দিল রিক্ত ,
সামান্য ফাঁকা দিয়েই হু হু করে প্রবেশ করছে বাইরের শীতল বাতাস ,

বেডসাইডে রাখা ঘড়িটার দিকে একবার চাইতেই ধড়াস করে উঠল রিক্তর বুকটা , সাড়ে ছটার মধ্যে ওর ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও এখনই ছ’টা বেজে গিয়েছে , আধঘন্টার মধ্যে রিয়েল এস্টেটে ফিরতে না পারলে কতখানি দুর্ভোগ লেখা আছে ওর কপালে তা ভালোমতই জানে রিক্ত ,

~” মিয়া , আই হ্যাভ টু লিভ ,” বলে মেঝেতে পড়ে থাকা ছড়ানো ছিটোনো কাপড়গুলো কুড়াতে শুরু করে দিল রিক্ত ,

~” আবার কবে আসবে ?” বেডকভার জড়ানো নিরাভরণ শরীরটা বিছানায় ফেলে বলে উঠল মিয়া ,” আজ এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছো যে ? এখনো তো ভালো করে আলোই ফুটলো না ,” ঠোঁট উল্টে বলে উঠল মিয়া , ওর অভিব্যক্তিই প্রকাশ করে দিচ্ছে অতৃপ্ততার রেশ ,

~” খুব তাড়াতাড়ি ,” বলে প্যান্টের চেনটা বেঁধে মিয়ার কপালে একটা স্নেহচুম্বন দিয়ে বলে উঠলো রিক্ত , “আর কাল জানিও কিন্তু তোমার আর্ট ফেস্টিভাল কেমন হলো ,”

~” মানে তুমি আসবেনা কালকে আমার শো তে?” বিছানায় আধশোয়া হয়ে উঠে বসলো মিয়া , “প্লিজ প্ল্যানটা ক্যান্সেল করোনা , কতদিন ধরে রিকোয়েস্ট করে এসেছি তোমাকে ,”

~” আচ্ছা চেষ্টা করছি , সিওর বলতে পারছিনা আমি ,”; সাজানো অর্ধসমাপ্ত ক্যানভাসগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রিক্ত , ওর চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ ফুটে উঠেছে ক্রমশ ,” আসলে জানোই তো আমাদের লাইনে কিরকম চাপ …”

~” ইটস ওকে ,” ওর কথার মাঝপথেই মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বলে উঠলো মিয়া ,” ফুলফিল ইউর ড্রিমস ,”

তালটা কেটে যাচ্ছে দেখে বিছানার কাছে এগিয়ে এলো রিক্ত ,” কপালে হালকা ঠোটের পরশ বুলিয়ে বলে উঠলো ফের ,” আসবো , তুমি অপেক্ষা কোরো ,”

মেক্সিকো সিটিতে এই সময়টায় ঠান্ডা পড়ে বেশ , হাড়কাঁপুনি না হলেও একটা টিপিক্যাল বাঙালি ছেলেকে জবুথবু করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট , অ্যাপার্টমেন্ট এর বাইরেই ঠান্ডাটা যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল রিক্তকে , ওভারকোটটা নিজের গায়ে সাপটে হাতদুটোকে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে চলতে লাগলো সে , এমন সময় হ্যান্ডসেটটা ভাইব্রেট করে উঠতেই বুকটা ভয়ে ছ্যাত করে উঠল ওর ,
ফোনকলটা যে কার হতে পারে , সেটা না দেখেই বুঝে গিয়েছে সে ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here