ষড়রিপু,০৮,০৯

0
537

#ষড়রিপু,০৮,০৯
#কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
অষ্টম পর্ব

একচিলতে তক্তপোশে উপুড় হয়ে কেঁদে চলেছে মিয়া, কান্নার দমকে ওর সুগঠিত শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠেছে, ফর্সা মুখটা রক্তাভ আভা ধারণ করেছে, চোখ দুটো ফুলে গিয়েছে বিশ্রীভাবে,
রিক্তর সাথে বার্তালাপ শেষে মনটা ভেঙে গিয়েছে ওর,
মাত্র মাসকয়েকের আলাপ হলেও মানুষটিকে বিশ্বাস করে বসেছিল যে, এখন নিজের বোকামীতে নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে ওর,
কেমন নিস্পৃহ ভাবলেশহীন গলায় বলে দিল ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে রাজি নয়,
” দায়িত্বজ্ঞানহীন , কাপুরুষ ” বিড়বিড় করে উঠলো মিয়া ,
এই কি সেই মানুষটা যে মাত্র দু’দিন আগেও ওর ঘরে এসে রাত কাটিয়ে গিয়েছে !
আদরবাসায় ভরিয়ে দিতে দিতে বুকের মাঝে টেনে নিয়েছে ,
মাত্র ঘন্টাকয়েক এর ব্যবধানেই এতোখানি পরিবর্তন…
হিসেবটা যেন কিছুতেই মেলাতে পারছেনা মিয়া,
দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে সবটুকু,
যেন হাত বাড়ালেই ফের আগের মতো ছুঁতে পারবে রিক্তকে, নিজের করে নিতে পারবে ফের ,
বুক নিংড়ানো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মিয়ার ,
অবুঝ মনটাকে যে বাগে আনতে পারছে না কিছুতেই ,
মুখে যতই দৃঢ়চেতা মনোভাব প্রকাশ করুক , শক্ত রাখুক দিনশেষে সেও যে একজন মানুষ,
তারও জড়িয়ে পড়তে ইচ্ছা করে বৈধ এক বন্ধনে ,

কতকিছুই না স্বপ্ন দেখেছিল রিক্তকে নিয়ে ,
গোটা মেক্সিকো সিটি একসাথে ঘুরবে ,
রিওর পাশে বসে আকাশকুসুম কল্পনার জাল বুনবে , ভারতীয় ঐতিহ্য সংস্কার একটু একটু করে আয়ত্ত করবে … আরো কতকিছু ,
কেরিয়ার প্লানিং ফ্যামিলি প্লানিং অগুন্তি অগুন্তি ,

বড্ড কষ্ট হচ্ছে ওর ,
খিদে টাও চাগাড় দিয়ে উঠেছে প্রবলভাবে , মনের জ্বালার সাথেসাথে অভুক্ত পেটের জ্বালাটা এবার বেশ টের পেল মিয়া ,
সেই সাতসকালে ফেস্টিভেল শুরুর দিকে দুটো স্যান্ডউইচ খেয়েছে ,
তারপর সারাদিন নানা কর্মকাণ্ডের পর কিচ্ছুটি মুখে তুলতে পারেনি ,
মনের আনাচে কানাচে লেগে থাকা দাবানলের কাছে আজ পেটের ‘ দাবানল ‘ হার মেনে গেল …

কিন্তু কিছু পেটে না পড়লে চলবে না যে , আর্ট ফেস্টিভাল বাকি আছে এখনো ,
পরপর চারদিনের টাইট সিডিউলের চেনা ছকে নির্ভর করছে ওর ভবিষ্যৎটা , সাথে একটা ছোট্ট প্রানের নির্ভরতাও ,

পিরিওড ডেট মিস করে যাওয়ায় আজই একটা প্রেগনেন্সি কিট কিনে এনেছিল মিয়া ,
লালচে রঙের দুটো দাগে বাঁধভাঙ্গা খুশিতে ভেঙে পড়েছিল ও , পঁচিশ বছরের যুবতীটি নিজের সাদামাটা জীবনকে ভালবাসতে শুরু করেছিল নতুনভাবে ,
ভেবেছিল ফেস্টিভাল শেষে রিক্তকে সুখবরটা জানিয়ে নিজের মা বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে , তারপর অনাথ ভারতীয়কে নিজের স্বামীরূপে বরণ করে পাকাপাকিভাবে থেকে যাবে মেক্সিকোতে।
ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট কিনে শুরু করবে ওর নতুন সংসার ,
কিন্তু হায় !
মানুষ ভাবে এক আর হয়ে আরেক ,
সংসার তো দূর , নিজের ভাঙ্গা মনটাকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ও ,
রিক্তর সামনে যতই শীতল ভাবে নিজেকে মেলে ধরুক , বা চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রাখুক …
মনের মধ্যে যে কি ঝড় বয়ে চলেছে সেটা শুধু মিয়াই জানে ,
ভাগ্যের খোঁজে রাজধানীতে চলে আসা মেয়েটির উত্তরণের স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে প্রায় ।

আদতে মিয়া মেক্সিকোর শহরের বাসিন্দা নয় ,
শহরতলীতে বেড়ে ওঠা ওর ,
স্বাবলম্বনের খোঁজে বছরখানেক আগে রাজধানীতে আসা ,
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়ার সুবাদে নিজে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছে ছিলো ভীষণভাবে ,
বাদবাকি আর পাঁচটা মেয়ের মতোই সরল সাদামাটা জীবন ,
প্রকৃতির রূপরস প্রাণভরে আস্বাদন করতে চাওয়া হাস্যজ্জ্বল এক তরুণী ,

শেষ বয়স অবধি এভাবেই নিরুপদ্রবে জীবনটা কাটাতে চাইতো সে, উপভোগ করতে চাইতো প্রতিটা মুহূর্তকে,
কিন্তু ঘন্টাখানেক আগে করা একটা ফোনকলে ওর সাজানো গোছানো স্বপ্নটা এলোমেলো হয়ে গেল ,

ক্রিং ক্রিং ,

নিজস্ব হ্যান্ডসেটটা কর্কশ রিংটনে অস্তিত্ব জানান দিয়ে বসতেই বাস্তবের মাটিতে ফিরে এলো মিয়া ,
কল্পনার বুদবুদগুলো চুপসে গেলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বসলো সে ,

সেভড নম্বরটায় চোখ বুলিয়ে বিধ্বস্ত মনটা এক টুকরো খুশিতে ভরে উঠল , কলটা রিসিভ করে স্পিকারে দিয়ে দিল ,

” হ্যাঁ মা , ” খানিকটা উজ্জ্বল ভঙ্গিতে বলে উঠল সে , হতাশার কুয়াশাটা কেটে গিয়ে ভোরের বিন্দু বিন্দু আলোয় সিক্ত হয়ে উঠেছে ওর মনটা ,

” তোর গলাটা এরকম শোনাচ্ছে কেন ?”

ধক করে উঠলো মিয়ার বুকটা , মাইলের পর মাইল দূরে থাকলেও মায়ের চোখে ফাঁকি দেওয়া কি অতই সহজ !
দীর্ঘশ্বাসটা চেপে রেখে ধরা গলাটা কোনমতে বদলিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মিয়া বলে উঠলো ” কই কিছু নাতো ! সবকিছু ঠিকঠাকই আছে , আসলে এখানে বৃষ্টি পড়ছে খুব.. তাই ঠান্ডা লেগে গিয়েছে ,”বলে নাকটা টেনে মিছিমিছি সর্দি বসে যাওয়ার ভান করলো ও , ” তোমরা সবাই কেমন আছো ,”

” তোকে একটা সুসংবাদ দেওয়ার জন্য ফোন করেছি , ওপ্রান্ত এবার হাসতে হাসতে বলে উঠলো , ” তোর দাদা ইন্টারপোলে চাকরি পেয়েছে, গত মাসে যে ইন্টারভিউটা দিয়েছিল তাতে সিলেক্ট হয়ে গিয়েছে , সমস্ত সুবিধা পাতির সাথে সাথে মাইনেপত্র বিশাল , ভাবতে পারছিস তুই !”

জ্বলতে পুড়তে থাকা বিধ্বস্ত মনটায় একচিলতে ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো যেনো , এই চাকরির জন্য দাদা কম চেষ্টা করে নি,
রাত জেগে কঠোর অধ্যাবসায় , শরীরচর্চা কত কিছু ।
নিজেকে প্রায় নিংড়ে দিয়েছিল চাকরিটা পাওয়ার আশায় ,
আজ সব অপেক্ষার অবসান হলো
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারটা এবার সুখের মুখ দেখবে ,

” মা , আমারও তোমাকে একটা খবর জানানোর আছে , বলতে গিয়েও চুপ করে গেল মিয়া , এই সুসময়ে দুঃসংবাদটা না দেওয়াই হয়তো অধিক সমীচীন ,
পরিবারের এক সদস্য বংশের নাম উজ্জ্বল করছে, আরেকজন বংশের নাম ডোবাচ্ছে ,
আপন মনেই বলে উঠল মিয়া , তারপর না বলা কথাগুলো চেপে রাখলো নিজের মধ্যে ,

” কিরে কিছু বলছিস না যে ! মিয়াকে চুপ দেখে ওপ্রান্ত বলে উঠলো এবার ,” সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো ?”

” এতবার কেন জিজ্ঞেস করছো , বলছি তো সব ঠিকঠাক আছে ,” খানিকটা রূঢ় স্বরে উত্তর দিল মিয়া ,

” কারণ আমি জানি তুই ঠিক নেই ,”
খানিকক্ষণ থেমে বলে উঠলো ফের
“কি হয়েছে মা বল আমায় ,”

সেই কণ্ঠস্বরে কি যে ছিল মিয়া জানেনা ,
বরফগলা জলের মত সুতীব্র দাবদাহে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিল ,
মনের মধ্যে চেপে রাখা বিষাক্ত স্মৃতিগুলো উগরে আসতে চাইল নিমেষেই ,

” মা আমি প্রেগনেন্ট ,” কাঁদতে কাঁদতে কোনমতে জবাব দিয়ে উঠলো মিয়া ,” এন্ড আই ওয়ান্ট টু কিপ মাই বেবি ,”

একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেল মিয়া , বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ , কারোর মুখে কোনো কথা নেই ,

ওপ্রান্তের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অধৈর্য ভঙ্গিতে মিয়া বলে উঠলো এবার ,” মা তুমি শুনতে পাচ্ছ ?”

” হ্যাঁ পাচ্ছি ” থেমে থেমে জবাব দিল মিয়ার মা ,

” কিছু তো বলো মা ,” কাঁদতে কাঁদতে ফের জড়ানো গলাতে বলে উঠলো মিয়া ,

“তুই কি সিঙ্গেল মাদার হতে চাইছিস ?” মনের কথাটা কোন যাদুমন্ত্রবলে পড়ে নিয়ে বলে উঠলেন উনি ,” মনে রাখিস …”

” আমি তোমাকে সব বলবো মা , তুমি প্লিজ একটা বার মেক্সিকোতে এস ,” ভাঙাভাঙা কণ্ঠস্বরে বলে উঠল মিয়া ,
” আমার এখন সিডিউল চলছে , বাড়ি যাওয়া সম্ভব না এখন আমার পক্ষে , এই একলা ঘরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে , আই নিড ইউ মম্,”

ওপ্রান্তের সম্মতি দানের পর কলটা ডিসকানেক্ট করে দিল মিয়া , তারপর চোখ বোলাল ডিজিটাল স্ক্রিনে , নাহ্ রিক্তর তরফ থেকে যোগাযোগের বিন্দুমাত্র চেষ্টা নেই ,
অবশ্য ফোনকলের আশাতে বসে ছিলনা ও ,
তবুও পুরনো অভ্যাসের জেরে খানিকক্ষণ নাড়াচাড়া করল মুঠোফোনটা ,
তারপর সেভড নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়ে বিছানায় উঠে বসলো ,

” ভয় পাসনা , তোর কোনো ক্ষতি হতে দেবোনা , গোটা দুনিয়াটা তোর বিপক্ষে চলে গেলেও আমি আছি ,” পেটে হাতটা বুলিয়ে আপন মনে বলে উঠল মিয়া , তারপর পা বাড়ালো ফ্রিজের দিকে ,
শরীরটা অভুক্ত থাকলে ভ্রূণের উপরেও প্রভাব পড়বে যে ,
একজন মা যে নিজের আগে , নিজের সন্তানের জন্য বাঁচে ….

———

তুমি কি মিসেস ডরোথি মারিয়াকে নিজের স্ত্রীরূপে
গ্রহণ করতে রাজি ?

~হ্যাঁ , রাজি ,” হাসিমুখে রিক্ত বলে উঠলো ডরোথিকে উদ্দেশ্য করে , তারপর সামনে রাখা একটুকরো কাগজে কলম বুলিয়ে আইনি স্বীকৃতি দিল এ সম্পর্ককে ,

রেজিস্ট্রি ম্যারেজ শেষে ডরোথি ততক্ষনে জড়িয়ে ধরেছে রিক্তকে , গভীর একটা চুম্বন দিয়ে
পরম আশ্লেষে বলে উঠলো ,” আই লাভ ইউ”

প্রত্যুত্তরে কোন জবাব না দিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল রিক্ত ,

বিবাহপর্ব মিটে যাওয়ার পর ডরোথি ওকে টেনে নিয়ে আসলো রিয়েল এস্টেটের একপ্রান্তে , এই কর্নারে আগে কখনো আসেনি রিক্ত ,
প্রচন্ড অগোছালো ধুলো ময়লায় ভর্তি এই কর্নারটা ,
ডরোথির হাতে হাত রেখে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে এগিয়ে চলল রিক্ত ,
চারিধারে ডাই করে রাখা ময়লামাখা বাক্স প্যাকিং জানান দিচ্ছে জায়গাটা কোন গোডাউনের অংশবিশেষ ,
মেশিনের ঘট ঘট শব্দও শোনা যাচ্ছে এখান থেকে ,

” এখানে এত কিছু!” বিস্ময়ে চলমান পা দুটো অজান্তেই ধীরগতিতে হয়ে গেল ওর ,
” এটাকে বাংলো না বলে রহস্যপুরীই বলা যেত তো !”

” কি হলো আসো তাড়াতাড়ি ,”ডরোথি তাড়া দিয়ে উঠল ওকে ,” এখনো তো তোমাকে আসল জিনিসটাই দেখানো বাকি !”

” আরো বাকি আছে …” উত্তেজনায় বিস্ময়ে শিহরন বয়ে গেল রিক্তর ,
এসবকিছুর অর্ধ মালিকানা পাওয়ার সুখস্বপ্নতে বিভোর হয়ে গিয়েছে মনটা ,

” ভাগ্যিস মিয়ার জালে ফেঁসে যাইনি ,”
হাসিমুখে বিড়বিড় করে উঠলো ও , ” এত ধন সম্পদের প্রাচুর্য ছেড়ে শেষমেশ ওকে !”

” ম্যাডাম ,আপনি এসেছেন ?” নমস্কার জানিয়ে
হাসিমুখে গেট খুলে দিল দারোয়ান ,
তারপর রিক্তকে লম্বা স্যালুট দিয়ে অভিবাদন জানাল ,

” এখন এর দায়িত্ব কিন্তু সম্পূর্ণই তোমার , আমি নামেই ইন্ডাস্ট্রির হেড থাকবো,” ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো ডরোথি ,” গ্লোবাল হেরোইন মার্কেটের
ব্র্যান্ড সাপ্লায়ার এখন তোমার দায়িত্বে !”

আশা করি ভালো লাগছে সবার , সঙ্গে থাকবেন সবাই

#ষড়রিপু( নবম পর্ব)
#কঠোরভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
মায়াবী নীলাভ আলোয় বিশাল বড় চৌহদ্দির আঁধার কেটে যাওয়ার বদলে অন্ধকার প্রগাঢ় হয়েছে, আলো-আঁধারি মিশ্রিত এই মায়াময় পরিবেশে বিছানায় শায়িত ঘুমন্ত পুরুষটি দরদরিয়ে ঘেমে চলেছে , বোবায় ধরার মতো একটানা নির্গত গো গো শব্দ মুখ থেকে বেরিয়ে ধাক্কা মারছে চার দেওয়ালে, রাতের নিস্তব্ধতায় সেই মৃদু শব্দই প্রসারিত হচ্ছে বহুদূর,
দুচোখে জলের ধারা নামতে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষনে, অদৃশ্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে অসম বোঝাপড়ায় লিপ্ত থাকার একপর্যায়ে পাশে শায়িতা ডরোথির ঘুম ভেঙে গেল,
স্বপ্নের ঘোরে রিক্তকে ওইভাবে জান্তব গোঙানিতে
লিপ্ত হতে দেখে লালচে সাদা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে,
বিয়ের পর কিছু রাত নির্বিঘ্নে কাটলেও এইরূপ অভিজ্ঞতা অর্জন ওর জীবনে প্রথম,

~”রিক্ত, রিক্ত!” উত্তেজনায় প্রায় চিল্লিয়ে উঠল মোটাসোটা চেহারার মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলাটি ,
” আমার ভয় করছে, তোমার স্লিপ প্যারালাইসিস হয়েছে!

জোরালো সেই ধাক্কায় ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল রিক্ত, চওড়া কাঁধ বেয়ে ঘামের বিন্দু বিন্দু দানা পিঠে গড়িয়ে পড়েছে ততক্ষনে ,
নিজের বিষাক্ত অতীত ফের ফিরে এসেছে দুঃস্বপ্নের মাধ্যমে,
খানিকটা আধো ঘুম আধো জাগরণে স্বপ্নটা ফিরে আসছে,
প্রায়ান্ধকার ঘরে প্রথমে কিছু ঠাহর পেল না রিক্ত, উপরন্তু ডরোথির বিষমঠেলায়
স্থান কাল ভুলে আর্তনাদ করে উঠলো ‘ দিয়া ‘!

আনকোরা নতুন মেয়ের নাম শুনে প্রচন্ড অবাক হয়ে গেল ডরোথি ,
ফাইলে এই ভারতীয় নামটা উল্লেখ ছিল না যে,
পাতলা সরু ভ্রূ দুটো কুঁচকে উঠলেও রিক্তকে মুখ ফুটে প্রশ্ন করল না কিছু ,

” ওয়েট ফর আ মিনিট , আমি জল নিয়ে আসছি ,”বলে পাশে ফেলে রাখা গরমজামাটা চাপিয়ে নিলো ও , তারপর চিন্তাগ্রস্ত মনে চলে গেল
ঘরের অন্য কোনে,
দুঃস্বপ্নের প্রাথমিক বিভীষিকা কাটিয়ে রিক্ত ততক্ষনে খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে,
স্বপ্নের বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয়নি এখনও,
অশান্ত মনটাকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে আবছা ভাবে জেগে থাকা স্বপ্নটা মনে করতে শুরু করল, পর্দানশীল নারী বেশে দিয়ার সাপের মতো ভরাট সর্পিলাকার চেহারাটা ফের জমাট বাঁধছে ওর মানসপটে, সহজলভ্য বহু নারীর আকর্ষণ কাটিয়ে যার কাছে ছুটে গিয়েছিল মোহগ্রস্ত পতঙ্গের মতো ,
নিজেকে বিনাশর্তে সঁপে দিয়েছিল সেই বিষকুম্ভে,
মূর্খের মতো ধারণ করে বসেছিল তেজোময় বিষের ভান্ডারসমূহকে,

~”এই নাও” বেডরুমের লাইটটা জ্বালিয়ে ডরোথি ফিরে এসেছে ততক্ষণে, মুঠোয় বন্দী রাখা কাঁচের গ্লাসটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিতেই একপ্রকার কেড়ে নিল রিক্ত, তারপর এক চুমুকে ঢকঢক করে জলটা পেটে চালান করে খানিকটা ধাতস্থ হলো, উদ্বিগ্নতার স্বেদবিন্দু উবে গেছে ততক্ষনে,
বেশ ঠাণ্ডাও লাগছে,

ঠান্ডা পায়ের পাতাটা গরম করতে ব্ল্যাঙ্কেটটা জড়িয়ে নিল রিক্ত, তারপরে চোখ রাখল ডরোথির দিকে,
স্বচ্ছ রাত পোশাকে ওকে লা – গর্দা – গ্যারত্রুদিস লাগছে , থলথলে সেই চর্বিদানা দেখে ভালোলাগায় আবিষ্ট হওয়ার পরিবর্তে গাটা কেমন গুলিয়ে উঠলো ওর, প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে এই তালতাল চর্বির বোঝার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত থাকতে হয়েছে ওকে,
পয়সার মোহে নিজের রিপুকেও আপোষে রাখতে হচ্ছে,
ইচ্ছে না থাকলেও উপায় নেই যে ,

মিয়া থাকলে আজ উপোসী শরীরটা এভাবে জ্বলে পুড়ে মরত না,
“কেন যে তখন ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম !
ভালোয় ভালোয় বুঝিয়ে অ্যাবর্ট করালেই হয়ে যেত,” আপনমনেই বলে ওঠে রিক্ত ,” তারপর ওয়েডিং রিংটা খুলে রেখে ফের ….”
বিরক্তিতে ছেয়ে গেলো ওর মনটা ,
সেদিনের পর আর যোগাযোগ হয়নি মিয়ার সাথে,
এই অস্বস্তিকর মুহূর্তে মিয়ার শরীরটা ওর বড্ড প্রয়োজন,

তাছাড়া দিনকয়েক কাটতে না কাটতেই ডরোথি অসহ্যকর হয়ে উঠেছে,
দিনকে দিন ওর বেশভূষা পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে , আগে এতটা খোলামেলা পোশাকে দেখা যায়নি ওকে, এখন চাকর-বাকরদের সামনেও অফশোল্ডার ড্রেস পড়ে হাজির হচ্ছে, মনের মধ্যে একটা বিরক্তিভাব কাজ করলেও মুখ ফুটে কিছু বলেনি রিক্ত,
“যা খুশি করুক গে, আমার কি!”
নিজেকে আকর্ষনীয় দেখানোর স্থূল চেষ্টা বজায় রাখার সাথে সাথে গায়ে-গতরে সেঁটে থাকা প্রবণতাও বেড়ে গিয়েছে ভীষণভাবে,

আগে রাতটুকু ঘন্টাখানেকের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতো রিক্ত, আর এখন বিয়ের পর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সময়টুকু বাদ দিয়ে সর্বক্ষণ গায়ের সাথে চিপকে থাকে,

জীবনসায়াহ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেও কামভাব বিন্দুমাত্র কমেনি ডরোথির, কিন্তু কাহাতক ওই চর্বি গৎবাঁধা শরীর ভালোলাগে !
বিশেষত রিক্তর মতো নাকউঁচু সুঠাম স্বাস্থ্যবান
প্রৌঢ়ের, বয়স প্রায় মধ্য চল্লিশ হলেও এখনও যে যুবাপুরুষ বলা চলে,

কিন্তু , ডরোথির গায়ে সেঁটে থাকার কারণ রিক্তর কাছে পরিষ্কার নয় , শুধুই ভালোবাসার অধিকার নাকি বিশ্বাসের অভাব তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে রিক্তর,

বিয়ের আগে একাকী রাত্রির কয়েকঘন্টা ওর কাছে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা ছিল,
কিন্তু বিয়ের পরপর সেই স্বাধীনতাও ঘুচেছে,
এখন ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার সময় টুকু স্বস্তির সুখের সময় রিক্তর কাছে,
গোটা কোম্পানির প্যাকিং, সাপ্লাই, মার্কেটিং ইত্যাদি ইত্যাদি সবকিছু ওর দায়িত্বে থাকার জন্য চাপও প্রচন্ড পরিমাণে, শ্রমিকদের চোখে চোখেও রাখতে হয় তার সাথে,
লেবাররা এখানকার স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ান,
প্রচণ্ড পরিশ্রমী এবং সৎ,
কাজের প্রতি নিষ্ঠা ভীষণভাবে,
কাঁচা আফিম থেকে হেরোইন, মরফিন তৈরি করে প্যাকেটে ভরে প্যাকিং করার দায়িত্ব ওদের,
রিক্তর কাজ শুধুমাত্র তদারকি করা, কিন্তু তাতেই হাঁপিয়ে ওঠে ও,

অসম্ভব পরিশ্রমী সৎ মানুষগুলো এর মধ্যেই রিক্তকে আপন করে নিয়েছে,
মাঝেমাঝে দু’একজনের বিচ্যুতি ঘটলেও অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির বহিষ্কার করা হয় না,
বরং আরও কঠোর কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়,

চোরাচালানকারীদের খবর যাতে বাইরের দুনিয়ায় প্রকাশিত না হয় তার জন্যই এরকম উপায় ,
এই দুনিয়ায় ঢোকার রাস্তা খুব সহজ, কিন্তু বার হওয়ার কোনো রাস্তা নেই,

মায়ের জাত হলেও ডরোথি এসব ব্যাপারে প্রচন্ড নির্মম, দুই একটা প্যাকেট হিসেবের গোলমাল হলেও ওর হাতে নেমে আসে চাবুক, অগুনতি বেত্রাঘাতের পাশাপাশি বরাদ্দ হয় আরো বেশি কিছু,
নিজের অপরাধ স্বীকার করলে ভালো নতুবা তাদের জন্য আরো নিষ্ঠুর নিয়তি অপেক্ষা করে,

দিন কয়েক আগেই ইন্ডাস্ট্রির এক কিশোরী শ্রমিক পয়সার লোভে দিকভ্রষ্ট হয়েছিল, ডরোথির রুদ্রমূর্তি দেখে তখন চমকে উঠেছিল রিক্ত,
ভরাট মাংসল মুখের অধিকারী মধ্যবয়সী মহিলা যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, সেটা অনুমান করতে পারেন মোটেই,
মেয়েটাকে জনসমক্ষে মেঝেতে ফেলে বেত্রাঘাত করা উপরন্তু দোষ স্বীকার না করার জন্য…..

~কি এতো ভাবো তুমি!” মেয়েলী ঝংকার বেজে উঠল কানের খুব কাছেই,” যখনই দেখি তখনই…”

~”তেমন কিছুই না, দুর্বল লাগছে শরীরটা ,” এক নিশ্বাসে বলে ওঠে রিক্ত,” কিছুদিন ধরে কাজে উৎসাহ পাচ্ছিনা, আমার একটু বিশ্রাম চাই ডরোথি,”

~”রাখো তো তোমার নাটক, যত্তসব ! কাজ ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা তাই না!” উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে ডরোথি,” এই লাইনে এত সহজে ঠেস মেরে বসে গেলে চলেনা, মার্কেট ওত পেতে বসে আছে,
আর একটা কথা, নিজে থেকে কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবেনা।
মনে রেখো ইন্ডাস্ট্রিটা এখনো আমার নামে এনলিস্টেড, আমার বিরুদ্ধে যেতে দেখলে তোমার অবস্থাও ওই মেয়েটার মত হবে ,” কেটে কেটে বলে ওঠে ডরোথি ,”কার কিরকম শাস্তি নির্ধারণ করব, তার দায়িত্ব তোমাকে দিয়ে বসিনি!”

~”তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করোনা?” পাল্টা
প্রশ্ন করে উঠল রিক্ত,” আমি জানি কাজের ব্যাপারে তুমি কতটা ডেডিকেটেড, কিন্তু এই লাইনে আমি নতুন, তাই চোখের সামনে ওরকম দৃশ্য দেখলে খারাপ লাগবে বৈকি,”

ওর কথায় কাজ হল, উত্তেজিত মন কিছুটা শান্ত হলো এবার,
এই নিরীহ, সৎ , পরিশ্রমী মানুষটাকে সে ভালোবাসে। ক্ষমতার শীর্ষে থাকলেও এই মানুষটার প্রতি আলাদা অনুভূতি কাজ করে তার,
এতটা রূঢ় ব্যবহার করাতে মনটা যেন ঠিক সায় দিলনা ওর,

“বুঝেছি, তোমার হিস্ট্রিতে এরকম কোন অপরাধের ব্যাকগ্রাউন্ড নেই , তাই এইসব দেখে ঘাবড়ে গিয়েছো,” হাসিমুখে বলে উঠলো ডরোথি,
“আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড, চলো ঘুমিয়ে পড়ো ,
গুড নাইট, রাত অনেক হলো,” বলে বেডসাইডের সুইচটা বন্ধ করে দিল ডরোথি,

বিশাল বড় চৌহদ্দিটা অন্ধকারে ডুবে গেলেও নিদ্রাদেবী ভর করলনা রিক্তর উপরে ,
ওর বিক্ষিপ্ত মনটা ততক্ষণে দুর্ভাবনায় ভরে উঠেছে,
মাসখানেক ধরে খুসখুসে কাশি জ্বর যেন ওর নিত্যসঙ্গী হয়ে গিয়েছে , প্রথম প্রথম ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গেলেও এখন কিছুতেই
ফেলনার দলে ফেলে দিতে পারল না রিক্ত,
মনটা কেমন কুডাক গাইছে,
“তবে কি রোগের প্রভাব শুরু হয়ে গিয়েছে!” আপনমনে বলে উঠল রিক্ত,” কিন্তু এখনও যে বছর পেরোয়নি.. তাহলে!”

ছটফট করে উঠলো ওর মনটা , এখনও অনেকটা কাজ বাকি রয়েছে …
দেশে ফিরতে হবে, নিজের লুপ্ত সম্মান পুনরুদ্ধার করতে হবে,আরো কত কিছু…

বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল রিক্ত, এই চোরাচালানকারী কোম্পানির নামকাওয়াস্তে প্রেসিডেন্ট হয়েছে সে ,
আদতে বিনে মাইনের চাকর হয়ে গিয়েছে,
সমস্ত কাজকর্ম নিখুঁতভাবে সামলাতে চেষ্টা করলেও দিনশেষে ডরোথি ওকে বুঝিয়ে দেয় সবকিছুই ,
ওর অক্ষমতা বার বার প্রকট হয়ে ওঠে ডরোথির বাক্যবাণে,
মধ্যবয়স্কা নারীটির বিশ্বাস জিততে পারলে ক্ষমতা হস্তগত হচ্ছেনা কিছুতেই ,
স্বরচিত ষড়যন্ত্রের জালে যেন নিজেই জড়িয়ে গিয়েছে, বিয়ের পর ডরোথির হাতের খেলনা পুতুল হয়ে গিয়েছে রিক্ত,
মহিলা যে এতটা ধুরন্ধর সেটা ভাবতে পারিনি ও, আইনি সীলমোহর বসিয়ে বিশ্বস্ত এক কর্মচারীর প্রয়োজনে ওকে বিয়ে করেছে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত।
যার কাছে নিশ্চিন্তে দায়িত্বভার অর্পণ করে দেবে, কিন্তু লাটাই থাকবে নিজের হাতে,

“কিভাবে এই জাল থেকে পরিত্রাণ পাব কে জানে!”
আপন মনেই বলে উঠলো রিক্ত, ওর আত্মগরিমা ডরোথির ব্যক্তিত্বে ছাইচাপা পড়েছে বৈকি ,

ছাপোষা চেহারার এক মধ্যবয়স্ক মহিলার কাছে যেন আটকা পড়ে গিয়েছে সে, এমনকি স্বাধীন ভাবে এস্টেটের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই !
সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখে তাকে ,
পারলে স্নানের সময়টুকুও,

শরীরের এই কন্ডিশনে একজন ভাল মানের ডাক্তারের সাথে কনসালট করার যে ভীষণ দরকার, তা ভালোমতোই বুঝতে পারছে রিক্ত। এইভাবে বেশি দিন চলার নয়…
তাছাড়া আজকাল স্লিপ প্যারালাইসিস হচ্ছে অহরহ ,
“একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে কনসাল্ট করা আশু প্রয়োজন” আপন মনেই বলে উঠলো রিক্ত,

কিন্তু ওর কাছে না আছে এনাফ মানি , না আছে রিয়েল এস্টেট থেকে বেরোবার অবাধ স্বাধীনতা,
বরফশীতল সন্দেহবাতিক মহিলা ডাক্তার দেখানোর কারণ জানতে চাইবে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত, তবুও নিজের কন্ডিশন বিবেচনা করে ডরোথিকে ডেকে উঠল রিক্ত,
“আমি কাল ডাক্তারের সাথে কনসালটেশন যাব,
আমার শরীর চলছেনা ডরোথি,”

এতক্ষণ বোধহয় জেগেই ছিল ও , কণ্ঠস্বর শুনে বিছানায় উঠে বসল , তারপর
রিক্তর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” ঠিক আছে , আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফিক্সড করে দিচ্ছি, তুমি একবার কনসালটেশন করে এসো,”
হাসিমুখে বলে উঠলো ,”আর আমার মনে হয় তোমার একজন সাইক্রেটিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন, স্লিপ প্যারালাইসিস কন্ডিশন বেশিদূর এগোতে দিওনা,”

“যাক পেরেছি!” বিশ্বাস জেতার আনন্দে কুটিলহাসিটা ফিরে আসলো রিক্তর , কাঁটা দিয়ে কিকরে কাঁটা তুলতে হয় সেই উপায় ভালোমতোই জানা আছে ওর,
এতদিন ধরে অনবরত প্ল্যান মাফিক কাজ করে যাওয়া হয়তো সার্থক,

“ডরোথি তুমি আমাকে বিশ্বাস করো ?”মোটাসোটা শরীরটা জড়িয়ে ধরে পরম আশ্লেষে বলে উঠল রিক্ত

সূক্ষ্ম চাতুর্যের চালটা ঠিক ধরতে পারল না ডরোথি, আলগা হেসে বলে উঠলো ,” বিশ্বাস করি ,কিন্তু তুমি বড্ড বেশি নিরীহ ভীরু , আই হোপ সময়ের সাথে সাথে কেটে যাবে,”

কপালে একটা স্নেহচুম্বন দিয়ে মেঝেতে দাড়িয়ে গেল রিক্ত, এই ঘরটা থেকে বাঁশের সাঁকো টা দেখা যায় স্পষ্ট ভাবে,
সেদিকে আনমনে একবার তাকাতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল , বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত চেয়ে রইল কিছুক্ষন,
সেই লম্বা চুলের মেয়েটা দাঁড়িয়ে রয়েছে মিটার দশেক দূরে,
সেদিনের মত আজও ওর মুখটা বোঝা যাচ্ছে না স্পষ্টভাবে , কিন্তু হাওয়ায় ভাসতে থাকা লম্বা চুলগুলো আর ওভারকোট দেখে বেশ চিনেছে রিক্ত,

~” ডরোথি মেন গেটের চাবিটা দাও , আর্জেন্ট ,” বলে উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা না করে তড়িৎ গতিতে ছুটে গেল রিক্ত,
করিডোর পেরিয়ে ছুটতে লাগলো উদ্ভ্রান্তের মতো ,
পিছু পিছু ওকে ডেকে চলেছে ডরোথি,” কি হয়েছে কোথায় যাচ্ছ !”

ওকে উত্তর দেওয়ার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন বোধ করলনা রিক্ত ,
তারপর সুনির্দিষ্ট চাবি ঢুকিয়ে মেনগেটটা খুলে ফেলল সশব্দে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here