#ষড়রিপু,১৪,১৫
#কঠোরভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
চতুর্দশ পর্ব
চার দেওয়ালের বদ্ধ চৌহদ্দিতে অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত দুটি শরীর এয়ারকন্ডিশনড বাতাবরণেও ঘেমে উঠেছে। বিশাল বড়ো ঘর জুড়ে অন্ধকারের ঘন পরত বিছানো থাকলেও শার্সির মোটা কাঁচ বেয়ে জ্যোৎস্না মৃদু আলোক চুঁইয়ে পড়ছে ঘরের মধ্যেখানে ।
ক্ষীণ সেই আলোকে তমসাচ্ছন্নতা দূরীভূত হওয়ার বদলে আলো-আঁধারির এক রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সঙ্গমে লিপ্ত দুই নারী পুরুষকে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছেনা মোটেই।
মিলনের শেষ পর্যায়ে শ্রান্ত ক্লান্ত পুরুষটি এবার অস্ফুটে বলে ওঠে ফিসফিসিয়ে,” তুমি চিন্তা করোনা ডরোথি, আমি তোমার সাথে সবসময় আছি…”
গুটিকয়েক সেই শব্দসমষ্টিই যেন মধ্যবয়স্কা বিদেশিনীর মানসিক লিপ্সা মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল, সঙ্গীর ঘন ঠাসা চুলে নিজে মোটা আঙুলগুলো বুলোতে বুলোতে আবেগঘন হয়ে বলে ওঠে ,” ডু ইউ নো রিক্ত, আমার কাছে শারীরিক সম্পর্কটা খুব ক্ষণস্থায়ী । কামরিপুর প্রভাব তেমন ভাবে প্রভাবিত করতে পারে না,
বিশ্বাস আনুগত্যই প্রায়োরিটি আমার কাছে।
অনেক তো শরীর পেলাম ওকে হারানোর পর , কিন্তু কাউকেই স্বামীর জায়গায় বসাতে ইচ্ছে করেনি। বিশ্বাসটা প্রথমস্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র তোমার কাছ থেকেই পেয়েছি। নিজের ছেলের তরফ থেকেও নয়…
যেভাবে তুমি আমাকে মিস্টার হার্নান্দেজের কবল থেকে বাচিয়েছো, কোন ধন্যবাদই তোমাকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।”
রিক্তকে নিশ্চুপ দেখে ফের বলে ওঠে ডরোথি, “হয়তো স্বামী রূপে তোমাকে নির্বাচন করাটা আমার সেরা সিদ্ধান্ত,”
” বিশ্বাস ! মাই ফুট! তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা মোটেই, স্রেফ আইনের সিলমোহরে বসিয়ে বিনে মাইনের ক্রীতদাস পাওয়ার ধান্ধা ছিলো তোমার। যাকে দিয়ে ইচ্ছামত খাটানো যাবে, কিন্তু বিনিময়ে চাইবে না কিছুই। সামান্য ব্যক্তিস্বাধীনতাটুকুও নয়!’
অমোঘ বাস্তবটা মুখ চিরে বেরিয়ে আসতে চাইলেও স্বভাবজাত গুণে নিজেকে সামলে নিল রিক্ত , তারপর ঝট করে মেঝের উপর দাঁড়িয়ে স্যান্ডেলটা পায়ে গলিয়ে নিলো নিঃশব্দে,
“আমি জানি তোমার অতীত খুবই যন্ত্রণাদায়ক ডরোথি, তাই হয়তো যে কোন মানুষকে চোখে চোখে রাখতে চাও তুমি। ঠিক কিনা ?” এলোমেলো হয়ে যাওয়া বেডকভারটা ডরোথির গায়ে চাপিয়ে বলে উঠলো রিক্ত,” আর এই জন্যেই আমার প্রতিটা পদক্ষেপে তোমার কড়া দৃষ্টি নিয়োজিত থাকে , হয়তো প্রত্যেকের মধ্যেই ডেভিডকে খুঁজে বেড়াতে চাও তুমি!”
বিশাল বড়ো চৌহদ্দিতে তখন পিন ড্রপ সাইলেনস।অবচেতন মনে সযত্নে প্রোথিত সন্দেহের বিষবাষ্পের কারণটা এত সহজে বুঝে যাবে রিক্ত, তা ডরোথি ভাবতে পারেনি মোটেই।
ওর স্তম্ভিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে রিক্ত,
“আমি জানি ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়, তাই বলে হয়তো এতটাও না।
ক্ষেত্রবিশেষে তুমি অতিরিক্তই করে ফেলো ডরোথি,” রিক্তর মুখের কাঠিন্য বিন্দুমাত্র কমেনি।
“আর হয়তো এটাই স্বাভাবিক, ভাগ্যান্বেষী সাধারন ভারতীয়কে টপ ক্লাস সাসপেকটেড লিস্টে রাখা খুবই ইজি, তাই দুই পেটি মাল সরানোর সময় হয়তো আমার নামটাই তোমার মনের মধ্যে গেঁথে বসেছিল, তাই না ডরোথি?
তোমার চোখের সামনেই ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতকেরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ালেও তুমি কোনদিনই বুঝতে পারোনি !”
“থামো প্লিজ, থামো।” বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া ভরাট মুখটা ততক্ষণে নিজেকে লুকোতে ডরোথি গুঁজে দিয়েছে নিজের দুই করতলের মাঝে, পেটি সরানোর ক্ষেত্রে রিক্তকেই প্রথমে দোষী সাব্যস্ত করলেও আদপে রিক্তই ডরোথিকে প্রাণে বাঁচিয়েছিল যে,
” কি করে বুঝে গেল, ওকে আমি এতদিন বিশ্বাসের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ? বিয়ের পরেও দিনরাত সন্দেহের চোখে দেখেছি…” আপন মনেই বলে ওঠে ডরোথি।
ওর প্রায় ভেঙে পড়া মুখের দিকে তাকিয়ে ফের বলে উঠলো রিক্ত,” দিনরাত তোমার কারবারের জন্য জান-প্রাণ লাগিয়ে দিয়েও বিনিময় কিছু চাইনি, পারিশ্রমিকও না। তবুও তোমার ভরসা জিততে পারিনি আমি, শারীরিক অসুস্থতা বশত ডাক্তারের কাছে গেলেও তুমি তোমার সন্দেহবাতিকতা বজায় রাখতে একজন
‘ গুপ্তচর ‘ লেলিয়ে দিয়েছো পিছু পিছু। সত্যিই অসাধারণ বিচার তোমার!” করতালিতে গোটা বেডরুমটা ভরিয়ে দিয়ে বলে ওঠে রিক্ত,” তোমার নজরের বাইরে কেউ সামান্য জোরে নিঃশ্বাস ফেললেও তুমি ভেবে ফেলেছ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে সে, তোমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান বানাচ্ছে তাই না ?”
“সেরকম কিছু নয় রিক্ত, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি ,” মুখটা নিচু করে কোনমতে জবাব দিয়ে ওঠে ডরোথি।
” মিথ্যে বলছো তুমি ! মিথ্যে ,” চিল্লিয়ে ডরোথিকে
তাতিয়ে দেওয়ার জন্য বলে ওঠে রিক্ত ,
“এতবড় সাম্রাজ্যের একছত্র অধিকারিণী হয়েও মুখ মুখোশের দ্বন্দ্ব সমাধানে ব্যর্থ তুমি ! তুমি ব্যর্থ আসল নকল এর পার্থক্য নিরূপনে, খাটি সোনা চিনে নিতে…”
রিক্তর বাক্যবাণ সামলাতে না পেরে ডরোথি ততক্ষনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে। ক্রমশ লালচে হয়ে যাওয়া সেই মুখের দিকে তাকিয়ে বিন্দুমাত্র করুণা জাগল না রিক্তর, তা বলাই বাহুল্য।
হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা বাথরোবটা টেনে নিয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে ঢুকে গেল স্নানঘরে।
দরজাটা সশব্দে বন্ধ করা মাত্র চেনা-পরিচিত কুটিল হাসিতে ভরে ওঠে রিক্তর মুখটা।
এত দিন পরে স্বরচিত পরিকল্পনায় টোপ ফেলার এমন মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যাবে, তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি ও।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পদ্ধতি অনেক পুরনো হলেও আজও তার কার্যকারিতা সুদুরপ্রসারী।উপরন্তু কাঁটা যদি নরম জমিতে প্রোথিত থাকে তবে উপড়ে ফেলা বড়ই সহজ ,
ডরথির সুদৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিড়ে নরম কাদা মাটির খোঁজ পেয়ে সেই সুযোগে পূর্ণ উদ্যমে নিতে চাইছে রিক্ত।
সাধারণত যে মানুষগুলো অপরকে বিশ্বাস করতে ভয় পায়, তারাই কোনোক্রমে কাউকে বিশ্বাস করে ফেললে এক্কেবারে ঝুলে পড়ে । নিজের সবটুকু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সেই বিশ্বাসযোগ্য মানুষকে অর্পণ করে বসে থাকে নিশ্চিন্তে,
রিক্তও ডরোথির জীবনে তেমনই এক বিশ্বাসযোগ্য মানুষ। জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে ভরসার একমাত্র সাথী।
“আখির লোহা লোহেকো কাটতা হে!” বহুল চর্চিত ডায়লগটা শিস দিতে দিতে বলে উঠলো রিক্ত। খানিকক্ষণ আগেই সেই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে,
“মাটি যদি নরম থাকে তাহলে বীজ বপন করতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না,” শাওয়ারের অবিশ্রান্ত ধারায় নিজেকে সিক্ত করতে করতে বলে উঠল রিক্ত,”সেটা সন্দেহের বীজই হোক বা প্রতারণার..” ছেলের বিশ্বাসঘাতকতার দরুন ড্রাগ মাফিয়ার কঠোর মনটার অজানা কোণ যে এখনো নরম আছে ,তা বলাই বাহুল্য।
বছরপাঁচেক আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার পুনঃ বিবরণ বলতে বলতে দুচোখের জলই বলে দিয়েছে একান্ত আপনজনের খোঁজে ডরোথির সন্দেহবাতিক মনটা কতটা তৃষ্ণার্ত,
” এবার ডরোথিকে সাথে নিয়ে ভারতে ঢোকার পালা, এখন শুধু গ্রীন কার্ডটা পাওয়ার অপেক্ষা !”
শুকনো টাওয়েলটা চাপিয়ে বলে উঠলো রিক্ত, “নিজের কলঙ্কিত অতীত সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে বর্ণনা করলে ডরোথি আমাকে সাহায্য করবেই করবে, হাজার হোক দুজনেই আপনজনের কাছে প্রতারিত,” কুটিল হাসি মুখে ফুটিয়ে বলে ওঠে রিক্ত, “কিছুক্ষণের জন্য অনুসুয়া আমার সৎ মা হিসেবে পরিচিত হোক ডরোথির কাছে, আর দিয়া হোক বিশ্বাসঘাতক প্রেমিকা!” উল্টোদিকে আটকানোর সুবৃহৎ বেলজিয়াম কাঁচে নিজের নিরাভরণ শরীরটা দেখতে দেখতে আপনমনে বলে উঠলো রিক্ত, তারপর ভেজা শরীরটা নিয়ে পা বাড়ালো স্নানঘরের বাইরে,
“কমপ্লিট?” কেঁদে-কেটে লাল হয়ে যাওয়া মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো ডরোথি, যেন এতক্ষণ ধরে রিক্তর স্নান শেষ হবার অপেক্ষায় বসে ছিল সে,
“বলো কি বলবে?” অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে মাথার জলটা মুছতে মুছতে বলে উঠলো রিক্ত।
এই মহিলার চরিত্রের সব অলিগলি ততক্ষনে চিনে ফেলেছে সে ।চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রাখলেই নিজের অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে ,তা বলাই বাহুল্য।
“তোমাকে আমার প্রপার্টির নমিনি করলাম রিক্ত,” অফিশিয়াল কাগজটা টেবিলের উপর রেখে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো ডরোথি,
“আর একটা জয়েন্ট লাইফ ইনসিওরেন্সও।”
“হোয়াট!” আনন্দে উত্তেজনায় মনের প্রকৃত ভাবটা লুকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো রিক্ত,” কিন্তু কেন! আমার এসবের কি প্রয়োজন আছে ডরোথি ?আমার কাছে তো তুমি আছো !”
“আর আমার কাছে তুমি,” রিক্তর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রেখে বলে উঠলো ডরোথি,” নিজের লাইফ পার্টনার এর জন্য এইটুকু তো করতেই পারি আমি,
তাই না? ওহ্ সরি, সে শুধু আমার লাইফ পার্টনার না ,আমার লাইক সেভারও বটে।”
খুশির চোরাস্রোতটা সরু ধূর্ত চোখে ফুটে উঠতে চাইলে রিক্ত দৃষ্টিটা নামিয়ে নিল মাটিতে , তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,”আমি কি সত্যিই এর যোগ্য ডরোথি?”
“যদি তুমি এর যোগ্য না হও, তবে অন্য কেউ নয় ,” ঝকঝকে সাদা দাঁতের ঝিলিক তুলে বলে উঠলো ডরোথি,” আর আমি জানি এই সম্মানের মর্যাদা তুমি নিশ্চয়ই রাখবে,”
রক্তস্রোতে প্রবাহিত হওয়া অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ লুকিয়ে রাখতে জানলার ধারে পৌঁছে গেল রিক্ত,
তারপর ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,” এখন আমাকে নিজের মনগড়া অতীত না বললেও চলবে,
মিসেস ডরোথি মারিয়ার গোটা সম্পত্তি এখন আমার হাতের মুঠোয়,” ক্রুর হাসি খেলে গেল ওর ঠোটের ফাকে ,
“তুমি খুশি?” পিছুপিছু বেডকভারটা নিজের নিরাভরণ শরীরে জড়িয়ে ওর পাশে চলে এসেছে ডরোথি ,” আই থিঙ্ক এবার বিশ্বাস করাতে পারলাম আমি ভরসা করি তোমাকে,”
মিনিট কয়েক আগে ফেলা টোপটা যে এত সহজেই গিলে ফেলবে, তা ভাবতে পারেনি রিক্ত।
“ব্রাভো রিক্ত, ব্রাভো !” ফিসফিসিয়ে উঠলো সে, নিজের বুদ্ধির জোরে খুশিতে আপ্লুত হয়ে নিজের পিঠ চাপড়াতে ইচ্ছে করছে,
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা….
“তোমার কথা মতো তিনজন আর্মড সিকিউরিটি গার্ড নিযুক্ত করেছি,’ বাঁশের সাঁকোর দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলে উঠল ডরোথি, কালো পোশাকে আবৃত গাট্টাগোট্টা চেহারার লোকটা সতর্ক ভঙ্গিতে পাহারা দিয়ে চলেছে তখন,
“আর ডাক্তারবাবু তোমাকে কি বলল?”
“ব্লাড স্যাম্পেল নিয়েছে খানিকটা,সেরকম কিছু নয় । আজকালের মধ্যেই রিপোর্ট পেয়ে যাব, আর তোমাকে এত চিন্তা করতে হবেনা ডরোথি আমি আছি তো! জাস্ট নরমাল ইলনেস,” প্রসঙ্গটা চাপা দিতে তড়িঘড়ি বলে উঠলো রিক্ত, “এতটা স্ট্রেস নিও না, পরশু ফের অ্যাপয়মেন্ট আছে আমাদের,”
” আমি জানি তুমি যে ডিসিশন নেবে , সেটা ভেবেচিন্তে নেবে।” রিক্তর কাঁধে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ডরোথি, ” আর হ্যাঁ, কালকে আর ‘ গুপ্তচর ‘ পাঠাতে যাব না , কেমন?”
খিলখিল হাসতে হাসতে বলে ওঠে ডরোথি,
“কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তোমাকে ইন্ডিয়াতে যেতে হবে।”
“কেন ?পারপাস?” প্রচন্ড চমকে বলে উঠলো রিক্ত, “ওখানে কি আছে?”
হতচকিত রিক্তর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো ডরোথি, হঠাৎ এমন ভয়ার্ত কণ্ঠস্বরের কারণ খুঁজে পেলনা কিছুতেই,
“কুল!এত ভয় পাচ্ছ কেন ? ওটা তো তোমার নিজের দেশ! মারকেটিং সংক্রান্ত কিছু ফরমালিটিজ আছে, তাছাড়া নিজের দেশেও কিছুদিন ঘুরে আসতে পারবে…” পরিস্থিতিটা সামলানোর জন্য বলে উঠলো ডরোথি।
“কিন্তু এত তাড়াতাড়ি! আমি এখনো প্রিপেয়ার্ড নই যে,” আমতা আমতা করে বলে উঠলো রিক্ত… “তাছাড়া তোমাকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না, সবেমাত্র বিয়েটা হল।”
হাতে এখনো গ্রীন কার্ড আসেনি , এই অবস্থায় নিজদেশে পাড়ি জমানো মানে পুলিশের হাতে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করা, তা সহজেই অনুমেয়।
“ওকে, আমি ভেবে জানাচ্ছি। চলো শুয়ে পড়া যাক!” রিক্তর হাতটা নিজের মুঠোবন্দী করে বলে উঠলো ডরোথি, ” কাল ভেবে জানাচ্ছি,”
#ষড়রিপু (পঞ্চদশ পর্ব)
#কঠোরভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
ভারী পর্দার ফাঁক ফোকর দিয়ে প্রাতঃকালীন মিঠে রোদ ঘরে উঁকি মারতে আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় উঠে বসল রিক্ত। গতরাত্রে ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমের সাথে সাথে বিভীষিকাময় স্বপ্নটা ফিরে এসেছে আবারও। আধবোজা ঘুম চোখে নেহাতই অভ্যাসবশত রিক্ত হাতড়াতে লাগল ডরোথির উদ্দেশ্যে। দুগ্ধফেননিভ বিছানার পাশে পেতলের কারুকার্যময় বিরাট বড় ফুলদানিতে একগুচ্ছ সূর্যমুখী উঁকি মারছে।
সেদিকে তাকিয়ে মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠলো রিক্তর। ভোরের স্নিগ্ধতার সাথে সাথে এমন রাজকীয় প্রাসাদে তাজা সূর্যমুখীর শোভা মানসিক প্রশান্তি দেয় বৈকি।
উপরন্তু ঘেমো প্যাচপ্যাচে পরিবেশের বদলে যদি ঠান্ডা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই!
ফুলের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তরতাজা মনটা নিয়ে গরম জামা গায়ে চাপিয়ে নিল রিক্ত। তারপর একথোকা সূর্যমুখী ফুলের পুস্পিকায় নাক ডুবিয়ে এগিয়ে গেল জানলার দিকে।
টলটলে দিঘির জলে তখন উদীয়মান সূর্যের মৃদু লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু দৃশ্যটা দেখে মনটা আরো প্রশান্তিতে ভরে ওঠার পরিবর্তে
খারাপ লাগায় ছেয়ে গেল রিক্তর। পনেরো হাজার কিলোমিটারের বেশি দুরত্বের সীমানা পেরিয়ে ওর নিজের শহরে এই সূর্যই উদিত হয়। সময়ের হেরফের হলেও একই রকমের লাল রঙে আকাশ ধুয়ে মুছে যায়। আদতে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের থাকলেও আকাশটা যে সবারই এক…
“আজ দেশে থাকলে সূর্যমুখীর বদলে আমার হাতে একমুঠো শিউলি থাকতো,” ঘুম ভাঙা চোখে স্মৃতিচারণ করতে করতে আপনমনেই বলে ওঠে রিক্ত। গ্রামে থাকাকালীন উঠোনে পড়ে থাকা শিউলি ফুল মুঠো ভরে নিয়ে আসতো ছোটবেলার রিক্ত। মাটিতে স্পর্শ হয়ে যাওয়ার কারণে ফুলগুলো আরাধ্য দেবতার পাদপদ্মে ঠাই না পেলেও কাজে আসতো বৈকি। জলভর্তি কাচের পাত্রে শিউলি ফুল ছড়িয়ে ঘরের এক কোণে রেখে দিত রিক্ত।
আজ, এই মুহূর্তে মেক্সিকো সিটির রিয়েল এস্টেটের এক অভিজাত কামরায় জানলার পাশে দাড়িয়ে স্মৃতির ঝাপটায় প্রায় ধরাশায়ী হয়ে গেল
পেটানো চেহারার গৌরবর্ণ পুরুষটি।
“গুড মর্নিং, ডার্লিং!” অতিচেনা কণ্ঠস্বরটা পিছন থেকে ভেসে আসতেই বাস্তবের মাটিতে ফিরে এলো রিক্ত।
“তুমি এত সাত সকালে উঠেছো? কি ব্যাপার?
আজ দেখি সূর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে,” কৌতুকভঙ্গিতে হাসতে হাসতে বলে উঠলো রিক্ত। “আমার তো না হয় প্রাত্যহিক শরীরচর্চা থাকে, কিন্তু সাতসকালে তোমার ওঠার কারণ?”
প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে মিটিমিটি হাসতে লাগল ডরোথি।
ওর পরনের বেশবাসের দিকে ততক্ষনে চোখ গিয়েছে রিক্তর। লালপাড় পাটভাঙা শাড়িতে মনে হচ্ছে কোনো দেবীর নিখুঁত প্রতিমূর্তি…
“এসব কি পোশাক পরে রেখেছো?” ডরোথির হাত থেকে চায়ের পেয়ালাটা নিতে নিতে বলে উঠল রিক্ত। আড়াআড়ি ডুরে কাটা তাঁতের শাড়ির পরে ডরোথিকে তখন চেনাই যাচ্ছে না।
সাদা চামড়ার মেক্সিকান মধ্যবয়স্ক মহিলার চেহারায় প্রবাসী ভারতীয় ছাপ স্পষ্ট উঠেছে নিপুণভাবে।
“আমাকে মানাচ্ছে না?” অপটু হাতে শাড়ির কুচি ধরে আঁচলটা সামলাতে সামলাতে বলে উঠলো ডরোথি।
“হুম, বুঝলাম … কিন্তু কে পরিয়ে দিলো তোমাকে?” সুস্বাদু চায়ে এক চুমুক দিয়ে বলে উঠল রিক্ত। “বাবাহ, আজকাল ভোরে উঠে আমার জন্য চা নিয়ে আসছো দেখি! কে বানিয়ে দিয়েছে?”
ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হলো না রিক্তর কাছে। দিনকয়েক আগেই আঁটোসাঁটো বডিকোন ড্রেসে ডরোথি ধরা দিয়েছে ওর কাছে। একজন থলথলে চেহারার মধ্যবয়স্কা নারীর সাপেক্ষে সেই পোশাক বড্ড দৃষ্টিকটু হলেও এতদিন মনের ভাবনা মনেই চেপে রেখেছিল রিক্ত।
কিন্তু পরিকল্পনামতো মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভুত ভুরি ভুরি প্রশংসা বাক্যে ডরোথিকে ভরিয়ে দিতে ভোলেনি।
মিথ্যা প্রশংসা বাক্য দ্বারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রিক্তর জুড়ি নেই।
লাল পেড়ে ডুরে শাড়িতে ডরোথিকে যে অপূর্ব লাগছে, সে কথা অস্বীকার করা চলে না।
তবুও নিজে থেকে যেচে প্রশংসা করার ভুল করে বসলো না ও।
সবে মাত্র মাছ চারা গিলেছে,
এখন প্রতিটা পদক্ষেপ ফেলতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে।
“প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে আমাকে, কিন্তু কেমন লাগছে বলছে না।” হালকা অভিমানে গালটা ফুলিয়ে বলে উঠলো ডরোথি। “এত কষ্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সার্চ করে শাড়ি পরা, স্পেশাল ইন্ডিয়ান স্টাইলে চা বানানো শিখলাম…
কেমন হয়েছে বলার পরিবর্তে শুধুই প্রশ্ন।”
ওর বলার ভঙ্গিতে হঠাৎই কেমন হাসি পেয়ে গেল রিক্তর, পঞ্চাশ পেরোনো ডরোথি হঠাৎই কেমন নববেশে কিশোরী রূপে ধরা দিয়েছে..
শারীরিক গঠনে মধ্যবয়স্কা বোঝা গেলেও বাকচাতুর্য মনে হচ্ছে সদ্য যুবতী প্রায়।
“খুবই সুন্দর ” ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির বজায় রেখে বলে উঠল রিক্ত। তারপর পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ফ্লাওয়ার ভাসের দিকে। সেখান থেকে গুটিকয়েক সূর্যমুখী ফুল মুঠোবন্দী করে জানালার কাছে ফিরে এলো।
“ফ্লাওয়ার ভাসে ফুল রাখার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই তোমার!” পুষ্পিকাতে নাক ঠেকাতে ঠেকাতে বলে উঠলো রিক্ত। ” কিন্তু হঠাৎ সারপ্রাইজ? এরকম আয়োজনের কারণ?”
“আমি শুনেছি ইন্ডিয়াতে মেয়েবউরা শাড়ি পড়তে খুব ভালোবাসে, বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালেও শাড়ি পড়াকে প্রাধান্য দিয়ে আসে, তাই না?”
উজ্জল মুখে বলে উঠল ডরোথি। “আর বেডরুমে ফুল রাখলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় হয়,”
ঈষৎ লাজুক হেসে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে উঠলো ডরোথি।
“তুমি আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছো? আই মিন বিয়ের পরেও?” মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে আসতে চাইলেও নিজেকে সামলে নিল রিক্ত। তারপর হাসিমুখে প্রকাশ্যে বলে উঠলো,”আর তড়িঘড়ি ঘুম থেকে উঠে আমার জন্য চা বানানোর কারণ?” চোখ নাচিয়ে খানিকটা এগিয়ে গেল ডরথির দিকে, তারপর ওর শরীরে শরীর মিশিয়ে দাঁড়িয়ে ফুলের গোছাটা এগিয়ে দিলো ওর দিকে। নরম স্তনের সুখস্পর্শ ওর শরীরের হরমোন ক্ষরণ ঘটাবে, এমন সময় হাতের ফুলটা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল ডরোথি ।
ফর্সা চকচকে মুখটা তখন লাল লাল ছোপ ভরে গিয়েছে।
নাকের ডগা তীক্ষ্ণ লাল হয়ে গিয়েছে, চোখ দুটোও লাল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জলে ভরে উঠেছে।
“ইনহেলার! ইনহেলার!” কোনমতে শব্দদুটো উচ্চারণ করে মেঝেতে গড়িয়ে বসে পরল ডরোথি।ওর দিকে তাকিয়ে মুহূর্ত খানেকের জন্য ফ্রিজড হয়ে গেল রিক্ত। তারপর ছুটে গেল সামনের কাবার্রডের দিকে।
তখনও বলির পাঁঠার মত হাত-পা ছুঁড়ে চলেছে ডরোথি। একের পর এক ড্রয়ার খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে সাদা রংয়ের লম্বাটে নলাকার বস্তুটা হাতের পেয়ে গেল রিক্ত । তারপর এক দৌড়ে ডরোথির কাছে ফিরে এসে স্প্রে করে দিল ওর মুখের মধ্যে। গোটা গোটা আবের মতো দানাতে ফর্সা শরীরটা ছেয়ে গিয়েছে ততক্ষণে।
“আমার সামনে কোনদিন সূর্যমুখী ফুল আনবেনা,” খানিকটা ধাতস্থ হয়ে ভাঙ্গা গলায় বলে উঠলো ডরোথি। এলার্জির প্রভাব খানিকটা উপশম হওয়ার পরেও ঠিকমতো কথা বলতে পারছেনা সে, “আমার ফ্লাওয়ার পোলেনে কষ্ট হয়, এলার্জিক রাইনাইটিস হয়ে যায়।” নাক বেয়ে নেমে আসা জলটা মুছতে মুছতে ফের কোনমতে বলে ওঠে
ডরথি।
“কিন্তু তুমিই তো ফ্লাওয়ার ভাসে ফুলের তোড়া রেখেছিলে।” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ওঠে রিক্ত, “তাছাড়া আমি জানতাম না তোমার সানফ্লাওয়ারে এলার্জি হয়,”
“ইটস ওকে, আমি ঠিক আছি তো ! নিজেকে দোষারোপ করো না , আমার ভুলেই হয়েছে কান্ডটা।” মেঝে থেকে উঠতে উঠতে বলল ডরোথি।
“আর কোন জিনিসে এলার্জি হয় তোমার? আমার জানলে সুবিধা হয়… নেক্সটাইম জিনিসগুলো তোমার সামনে আনবো না,” ডরোথিকে ধরে বিছানায় দিকে এগোতে এগোতে বলল রিক্ত।
“পিনাট বাটার , পেনিসিলিন, সানফ্লাওয়ার, কডফিস এগুলোতে এলার্জি হয় আমার।” বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো ডরোথি।
“আমার তোমাকে আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিল।”
“ভুল মানুষ মাত্রই হয়,” ওকে বালিশে শুয়ে দিয়ে পা দুটো খাটের উপর উঠিয়ে দিলো রিক্ত। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা সূর্যমুখী ফুলের গোছাটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো সেই মুহূর্তে।
“কি করলে! ফুলটা ফেলে দিলে কেন !”কাশতে কাশতে বলে উঠলো ডরোথি,
“যে জিনিস তোমার ক্ষতি করছে, তাকে আমি আমাদের ত্রিসীমানায় আসতে দেবো না! এখন লক্ষীমেয়ের মত চুপচাপ শুয়ে থাকো… আমি ডাক্তারকে কল করছি।” হাসিমুখে বলে উঠলো রিক্ত।
———
লোভ …..
ষড়রিপু অন্যতম হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বইয়ের পাতাতে।
বহু হানিকারক আশঙ্কা থাকলেও জাগতিক
ভোগের লিপ্সাকেই লোভ বলে। লোভের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে মানুষ নিজের পরিবারকে বিপদে ফেলতেও পিছপা হয়না।
কখনো কখনো দোসর হিসেবে মাৎসর্য চলে আসে।
অপরের উন্নতিকে সহ্য করতে না পেরে ছাপিয়ে যাবার আকাঙ্খাই মাৎসর্য হিসেবে বিবেচিত।
যার দরুন অনৈতিক কাজ কর্মে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় শতগুণ।
ছেলেবেলায় পড়া ষড়রিপু আখ্যান মনে মনে করে আউড়ে নিচ্ছিল রিক্ত। বলিষ্ঠ পেশীবহুল হাতটা রাখা আছে স্টীয়ারিং-এ । স্পিডোমিটারে প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই।
রাস্তাতে জনবাহুল্য না থাকলেও মানুষ আছে গুটিকয়েক।
তাই র্যাশ ড্রাইভিং এর ইচ্ছা থাকলেও আত্মসংবরণ করতে বাধ্য হল রিক্ত।
ওর গন্তব্য এখন ফিজিশিয়ানের চেম্বারে। ব্লাড রিপোর্ট নেওয়ার পর সেখান থেকে যাবে মিয়ার ফ্ল্যাটে।
ডরোথিকে বলেই এসেছে ফিরতে দেরী হবে, যদিও আগের মত অযাচিত প্রশ্ন করে ওঠেনি ডরোথি… কথামতো গুপ্তচর হিসেবে কাউকে পাঠায়ও নি, তাই মনটা বেশ ফুরফুরে রয়েছে রিক্তর।
“এমন ভাব করছিল, স্ত্রী হয়ে আমার মাথা কিনে নিয়েছে! ব্লাডি ইডিয়েট!” এক্সিলেটরে চাপ দিয়ে শিস দিতে দিতে বলে উঠলো রিক্ত।
সময়টা ইদানিং বেশ ভালই যাচ্ছে ওর। রহস্যময় সেই মেয়েটা সিকিউরিটির কড়াকড়ির জন্য হাপিস হয়ে গিয়েছে।
উপরন্তু ডরোথির সম্পত্তির সাথে সাথে জয়েন্ট লাইফ ইন্সুরেন্সের নমিনিও হয়ে গিয়েছে রিক্ত।
“গ্রীন কার্ডটাও আজকালের মধ্যেই চলে আসবে!”
মনের আনন্দে শিস দিয়ে দিতে বলে উঠল রিক্ত।
বহুতল বিল্ডিং এর সামনে ব্ল্যাক মার্সিডিসটা যখন থামল, ঘড়িতে তখন নটা বেজে ত্রিশ মিনিট। পার্কিং লটে গাড়িটা পার্ক করে দ্রুত লিফটের দিকে এগিয়ে গেল রিক্ত। তারপর সুনির্দিষ্ট ফ্লোরে থামামাত্র ডাক্তারের কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
” ভিতরে আসব?” হাসি মুখ টা মেলে রেখে অনুমতির অপেক্ষা না করেই রিক্ত ঢুকে পড়ল চেম্বারের ভিতরে..
ডাক্তারবাবু তখন অন্য রোগীর সাথে কনসালটেশনে অলরেডি বিজি ছিলেন, তাই নিঃশব্দতা বজায় রাখতে ঠোটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে দূরের সোফার দিকে বসার জন্য ইঙ্গিত ছুড়ে দিলেন।
উত্তরণের সাথে সাথে রিক্তর স্বভাবমত উদ্ধত্য, অহংকার ফিরে আসছে, তা বলাই বাহুল্য।
“গুড মর্নিং স্যার, আমার রিপোর্ট রেডি?” হাসিমুখে বলে উঠলো রিক্ত।
“আপনি তো এইচ আই ভি পজেটিভ! কিভাবে হলো?” বিস্ময় ঝরে পড়ছে ডাক্তারবাবু গলা থেকে ,” তাছাড়া সেকেন্ড স্টেজে পৌঁছে গিয়েছেন …. ডরোথি কি জানে এত কিছু!”
প্রতুত্তরে জবাব না দিয়ে সামনের চেয়ারে বসে পড়ল রিক্ত, তারপর হাসিমুখে পায়ের উপর পা তুলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিল ডাক্তারবাবুর দিকে, “আচ্ছা আপনি এক মাসে কত পেসো উপার্জন করেন?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন? এটা কেমন ধরণের অসভ্যতা?” ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন ডাক্তারবাবু…
” দশ হাজার? নাকি কুড়ি হাজার?নাকি এক্কেবারে পঞ্চাশ?” ডাক্তারবাবু সামনেই সিগারেটটা ধরিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলে উঠলো রিক্ত,”একলাখ পেসোর তো বেশি নয়!”
ডাক্তারের বোকার মত মুখের দিকে তাকিয়ে ফের বলে উঠলো রিক্ত,”আপনাকে আমি বিশ লাখ পেসো দেবো,সারাজীবন হেসে খেলে বেড়াতে পারবেন…”
“গেট আউট ফ্রম মাই কেবিন ! আই সে গেট আউট! নইলে আমি সিকিউরিটি ডাকতে বাধ্য হব,” প্রায় চিল্লিয়ে উঠলেন সেই ডাক্তার।
“আচ্ছা, আমি টাকার পরিমাণটা বাড়িয়ে দিলাম, চল্লিশ লাখ পেসো। এক্কেবারে ডাবল! এবার ঠিক আছে তো?” বলে মিটিমিটি হাসতে লাগলো রিক্ত।
“বলুন কি করতে হবে,” নিজের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল ডাক্তারটি।
“সেরকম কিছুই না, এই রিপোর্টটা ডরোথির কাছ থেকে গোপন রাখতে হবে, সাথে আমাকে কিছু মাল সাপ্লাই করতে হবে… পারবেন তো?”
“ঠিক আছে ,আমি রাজি। কিন্তু এই কথাটা কিছুতেই যেন ডরোথির কানে না যায় ! পরিবার সমেত মেরে ফেলতে আমাকে দুমুহূর্ত ভাববে না…”
“আরে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, কোন অসুবিধা নেই .. কাকপক্ষীও টের পাবেনা। হাসিমুখে বলে উঠলো রিক্ত। তারপর ডিলের শেষে পা বাড়ালো কেবিনের বাইরে।
সম্প্রীতি রায়
ক্রমশ