#শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা
#পর্বঃ০৬
#ফারজানা_আক্তার
“এই যে কি করছেন কি এসব আপনি? সিগারেট খাওয়া হারাম জানেননা?”
কথাটি বলতে বলতে রাইসা সিয়ামের কাছাকাছি যেয়ে দেখে একটা মেয়ের সাথে সিয়াম ভিডিও কলে কথা বলছে। এটা দেখে তো রাইসার রাগ উঠে যায় তবুও নিজেকে শান্ত রাখে সে। সিয়াম রাইসার এমন কথা শুনে দোলনা থেকে উঠে ভিডিও কলের মেয়েটাকে বলে “একটু পর কল করছি তোমায়, ওয়েট প্লিজ”। এটা বলেই কল কেটে দিয়ে রাইসার দিকে ফিরে তাকায় সিয়াম, আর সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে ” কে বলেছে তোমায় সিগারেট খাওয়া হারাম?”
“শরীয়তের বিধানের সকল কিছুর স্পষ্ট দলীল নেই। আর না থাকলে কোন জিনিস যে হালাল, তা নয়। শরীয়তের স্পষ্ট উক্তিসমুহ থেকে ফকীহগন এমন কিছু নীতি নির্ণয় করেন, যার দ্বারা বলা যায় কোনটা হালাল, আর কোনটা হারাম। যে সকল নীতির মাধ্যমে বিড়ি-সিগারেটকে হারাম করা হয়, তার কিছু নিম্নরুপঃ-
(ক) এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়। আর ইসলামে অপচয় হারাম।
(খ) এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম।
(গ) বেশি পরিমাণ পান করলে, তাতে জ্ঞানশূন্যতা আসতে পারে। আর যাতে নেশা, মাদকতা ও জ্ঞানশূন্যতা আসে, ইসলামে তা হারাম।
(ঘ) এতে দুর্গন্ধ আছে। এর দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা কষ্ট পায়। সুতরাং তা পবিত্র জিনিস নয়। আর ইসলাম পবিত্র জিনিস খাওয়াকে হালাল এবং অপবিত্র জিনিস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছে।”
একদমে কথাগুলো বলে থামে রাইসা, সিয়াম বিরক্তিকর কন্ঠে বলে “এসব জ্ঞান আমাকে দিতে এসোনা প্লিজ, তুমি নিজের মতো থাকো আর আমাকেও নিজের মতো থাকতে দাও।”
রাইসার মনে হলে সে যেনো এক অবুজ শিশুর সাথে কথা বলছে এতক্ষণ, কেনো বুঝেনা মানুষটা? এসব চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় রাইসা।
রাইসা আর কিছু না বলে চুপচাপ বাগান বিলাশ করতে থাকে, বেলকনির একপাশে দোলনা আর অন্যপাশে ছোট্ট ছোট্ট বেতের টেবিল চেয়ার রয়েছে যা দেখতে মনোমুগ্ধকর, রাইসা এই বাড়িটার প্রতিটি কোণা যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে।
*
মাহিন টিউশন শেষ করে ঘরে ফিরে কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে তখন ওর মা সেনুয়ারা বেগম বলেন “বাবা আসার সময় আমার জন্য ঔষুধ নিয়ে আছিস”। কথাটা শুনে বুকটা কেঁপে উঠে মাহিনের কারণ এটা মাসের শেষ অংশ এখন হাতে টাকা পয়শা তেমন নেই। তবুও মাহিন ওর মাকে হাসিমুখে বলে “আচ্ছা মা নিয়ে আসবো, এখন খেতে দাও তো খুব খিদে লেগেছে।”
সেনুয়ারা বেগম এক কাপ চা আর কিছু মুড়ি নিয়ে আসলো মাহিনের সামনে, এসব খেতে খেতে কেমন জানি একটা বিরক্তি চলে এসেছে এসবের উপর তবুও মায়ের সামনে তৃপ্তির সাথে সে খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মাহিন আর ভাবছে আজকে কলেজ থেকে হেঁটে আসতে হবে বাসায় নয়তো মায়ের ঔষুধ কেনায় টাকা কম পরতে পারে। এসব ভেবে ভেবে সে একটা লোকাল বাসে উঠে যায়, জীবনটা অন্যরকম হতো যদি আজ বাবা নামক মানুষটা বেঁচে থাকতেন। ক্লাসের সময় হয়ে এসেছে তাই মাহিন বাসে করে যাচ্ছে নয়তো সে এখনো হেঁটেই চলে যেতো কলেজে, হেঁটে যাওয়া আসা করতে ১ঘন্টার মতো সময় লাগে। লোকাল বাসে বসার কোনো সুযোগ নাই, মাহিন দাঁড়িয়ে আছে অন্য সবার মতোই। অবশেষে কলেজ চলে আসলে মাহিন টাকার জন্য ব্যাগে হাত দিলে দেখে টাকা যা ছিলো ওর থেকে এখন তার দিগুণ রয়েছে৷ মাহিনের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই টাকা ওর মা সেনুয়ারা বেগম-ই রেখেছেন। এইটুকুতেই মাহিন তৃপ্তির সাথে মুচকি হাসেন, গরিবদের জীবনটাই এমনই, তারা অল্পতেই সীমাহীন সুখ খুঁজে নিতে জানেন।
মাহিন কলেজ এসে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে রিয়াকে খুঁজলো একবার কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি। রিয়া কেনো কলেজে আসেনি সে জানেনা, রাইসাকেও দেখতে পারছেনা শুধু দেখছে হুসনা একা একা বসে আছে ক্লাসে। মাহিন চিন্তা করতে থাকে হুসনার কাছে গিয়ে রিয়ার কথা জিজ্ঞেস করবে নাকি, একবার এগিয়ে যায় হুসনার দিকে আবার কি যেনো ভেবে পেঁছনে চলে আসে। নিজেকে কন্ট্রোল করে মনে মনে ভাবতে থাকে রিয়ার কথা সে আর ভাববে সে এখন শুধু পড়ালেখা নিয়েই থাকবে, মায়ের স্বপ্ন টা যে পূরণ করতেই হবে।
হুসনার একা একা ভালো লাগছেনা তাই সে রাইসাকে কল দিয়ে কথা বলে। রাইসা আর রিয়া একই ঘরে একসাথে আছে শুনে হুসনারও ইচ্ছে জাগে তাদের সাথে গিয়ে সময় কাটাতে কিছুক্ষণ কিন্তু সে সময় হুসনার নেই কারণ ও কলেজ শেষ করে আবার টিউশনে যায়। নিজের খরচ নিজেকে চালাতে হলে সময়ের অপচয় করা যাবেনা মোটেও। হুসনা কোনো কিছুর অপচয় মোটেও সহ্য করতে পারেনা সে জিনিসটা যতই মূল্যহীন হোক না কেনো।
*
রাইসা সবার সাথে খাবার টেবিলে বসে আছে। লজ্জা পাচ্ছে সে নাস্তা করতে, হাজার হলেও নতুন বউ বলে কথা। নতুন মানুষগুলোকে একদম অচেনা মনে হচ্ছে না রাইসার কারণ সবাই রাইসাকে বেশ আপন করে নিয়েছে। রাইসা খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে আর লজ্জামাখা চেহারায় মুচকি হাসছে কিন্তু সেদিকে কোনো ধ্যান নেই সিয়ামের, সিয়াম আপন মনে খেয়ে যাচ্ছে, শাহিল খেয়াল করে রাইসাকে আর জিজ্ঞেস করে “ভাবী লজ্জা পেওনা আমরা আমার-ই তো খেয়ে নাও, খুব মজা হয়েছে আজকের ব্রেকফাস্ট টা।”
শাহিলের কথায় সবাই হেঁসে ফেলে। রিয়া বলে “আমি যেমন এই ঘরের মেয়ে তুমিও তেমন আজ থেকে এই ঘরের মেয়ে। একদম লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই। আচ্ছা ভাইয়া আজ তো আমরা কেউ কলেজে যাবোনা, আজ তো বৌভাতের অনুষ্ঠান আছে।”
“তো এই মেয়েলি অনুষ্ঠানে আমি কি করবো?”
ভ্রু নাচিয়ে বলে সিয়াম।
“তুমি কি করবে মানে? তোমাকেও তো যেতে হবে ভাবীর সাথে, জানোনা তুমি?”
একটু বোকা ভাব এনে বলে রিয়া।
“এই পুচকি চুপ কর তো তুই। আমাকেও যেতে হবে মানে কি হ্যাঁ? কোথায় যেতে হবে?
বিরক্তিকর ভাব এনে বলে সিয়াম।
“এমা ভাইয়া তুমি তো দেখি কিছুই জানোনা, আরে আজকে বৌভাত। আজ ভাবীকে দেখতে আসবে ভাবীর বাপের বাড়ি থেকে তারপর তাদের সাথে তোমাকে আর ভাবীকেও নিয়ে যাবে। তারপর দুইদিন ওখানে থেকে চলে আসবে ব্যাস।”
“কালেকে আসলো আর আজকে দেখতে আসবে চলে যাবে এসব কি? এখনো তো ২৪ঘন্টা হয়নি ওর এই বাসায় আসার, ২৪ঘন্টা তো দূরের এখনো তো ৫ঘন্টাও হয়নি।”
ওদের এসব কথাবার্তা শুনে রাহেলা খাতুন হাসলেন তারপর বললেন “এই চুপ তোরা দুজন আর একটা কথাও বলবিনা। আর সিয়াম শোন আজ তোর শ্বশুড়বাড়ি থেকে লোকজন আসবে তাদের সাথে রাইসা মাকে নিয়ে তুই যাবি এবং দুইদিন থেকে আসবি আর কিছু শুনতে চাইনা। তুই বিয়ে করতে চেয়েছিস তোর কথা আমরা শুনেছি এবার তোকেও আমাদের কথা শুনতে হবে।”
মায়ের কথার উপরে আর কোনো কথা বললোনা সিয়াম। সিয়ামের মনে একটাই চিন্তা বাসর কবে হবে তাদের তাহলে, প্রথম রাতটাও রাস্তায় কাটাতে হলো আজ আবার শ্বশুড়বাড়িতে। উফ্স অসহ্য লাগছে সিয়ামের সবকিছু, সে আজ রাতেই রাইসাকে নিজের করে নিতে চাই কিন্তু শ্বশুড়বাড়িতে কিভাবে সম্ভব হবে সেটা ভেবেই বিরক্ত হয়।
রাইসা চুপচাপ বসে শুধু সবার কথা শুনছে। নতুন বউয়ের কি বা আর কাজ। খাওয়া দাওয়া শেষে রিয়া রাইসা কে নিয়ে সিয়ামের রুমের দিকে এগুই। রুমে এসেই রিয়াকে এক গাদা বকা দেয় রাইসা কারণ সে সিয়ামকে ওর সাথে ওদের বাসায় যেতে বলেছে কিন্তু রিয়া বলতেছে এটা তো সে ভুল কিছু বলেনি তবুও ওকে কেনো বকতেছে? তখন রাইসা বলে সিয়াম হলো বড়লোক বাবার আয়েশ করা ছেলে সে তাদের মধ্যবিত্ত টিনের বাসায় থাকতে পারবেনা দুই দিন তারউপর এখন যে হারে গরম পরতেছে সিয়াম তো সেখানে পাগল হয়ে যাবে কারণ ওখানে তো আর এসি নাই। রাইসার কথা শুনে রিয়া বলে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে যখন বিয়ে করেছে তখন তাদের মতো করেও বাঁচতেও শিখতে হবে। রিয়ার কথা শুনে হেঁসে ফেলে রাইসা।_________
#চলবে_ইনশাআল্লাহ