সন্ধ্যায়_সন্ধি (সিজন-২),সূচনা পর্ব

0
1437

#সন্ধ্যায়_সন্ধি (সিজন-২),সূচনা পর্ব
#মম_সাহা

–“তুমি কি দু’বছরেও এ বাড়ির নিয়ম গুলো আয়ত্তে আনতে পারলে না চাঁদ?”

তেজের কথায় চাঁদ নাক ছিটকে উত্তর দিলো,
–“কেনো তেজ ভাইয়া? আপনি কি জানেন না আমি একটা পার্ট টাইম জব করি?”

–“তোমার জব টাইম আমার জানামতে রাত আটটা অব্দি।এখন বাজে দশটা।এই দু’ঘন্টা কোথায় ছিলে মিস চাঁদ?”তেজ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো।

–“আমি যেখানেই থাকি সে কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে?” চাঁদের শক্ত জবাব।

–“অবশ্যই এ বাড়ির একটা নিয়ম আছে।আর যেহেতু তুমি এবাড়িতে থাকো উত্তর তো দিতেই হবে।”তেজও বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলল।

–“আপনাদের বাড়ি থাকি বলে যে মাথা কিনে নিয়েছেন তেমনটা না। আমি কাউকেই কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।” চাঁদ এবার কঠিন স্বরে বলল।

তেজের মা জাহানারা বেগম এতক্ষণ চুপ করেছিলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি তাড়াতাড়ি উঠে আসলেন।এসেই চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বেশ মিনমিনে সুরে তেজের উদ্দেশ্যে বললেন,

–“আহা তেজ মেয়েটা মাত্র আসলো আর তুমি ঝগড়া করা শুরু করে দিয়েছো।আয় মা একটু সোফায় বস আমি লেবুর শরবত আনছি।”

–“তোমার ছেলেকে খাওয়াও লেবুর শরবত।যদি একটু ঠান্ডা হয়।” চাঁদ বেশ ঠাট্টার স্বরেই বলল।

উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো। তেজের বোন হৃদি, তুহা তেজের বাবা,চাচী।তেজ বেশ রেগেই চাঁদের উদ্দেশ্যে বলল,

–“তুমি রাত বিরাতে বাসায় এসে ঠাট্টা করছো আর তোমার জন্য বাসায় পুলিশ এসেছিল জানো সেটা?”

চাঁদ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।বরং বেশ ঠান্ডা স্বরেই জিজ্ঞেস করল,

–“কেনো এসেছিল? কিছু বলেছে?”

চাঁদের বান্ধবী হৃদি চিল্লিয়ে বলল,

–“আরে চাঁদুজান তোরে পছন্দ করতো রায়হান আছে না,ও আজ সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।তোরে নাকি প্রপোজ করেছিলো তুই এক্সেপ্ট করিস নি সে দুঃখে।”

চাঁদ কোনো হেলদুল দেখালো বরং বেশ ঠান্ডা স্বরেই বলল,
–“ওহ্”।

চাঁদ চলে যেতে নিলেই তেজ বেশ উচ্চস্বরেই বলল,

–“এ কেমন মেয়ে?এটার জন্য মানুষ আত্মহত্যা করতে গেলো কোনো হেলদুল নেই এ মেয়ের।”

তেজের এমন কথায় ফিরে তাকালো চাঁদ।চাঁদের জীবনে সব থেকে বিরক্তকর সদস্য এই তেজ।তেজের জীবনেও বোধহয় সবথেকে বিরক্তিকর মানুষ চাঁদ।কিন্তু তবুও দুজনকে একই ছাদের নিচে থাকতে হচ্ছে।বাড়িটা তেজেদের আর চাঁদ এখানে থাকে কেবল বান্ধবীর মন রক্ষার্থে। শুধু বান্ধবী না বাড়ির সবার অনুরোধে চাঁদ এ বাড়িতে থাকে।তবে এ বাড়ির কোনো সদস্যই চাঁদের কিছু লাগে না।শুধু মাত্র চাঁদের বান্ধবী হৃদির পরিবার অনেক জোড় করায় সে থাকতে রাজি হয়। এ শহরে চাঁদের আপন বলতে কেউ নেই।আজ দেড়বছর যাবত এই পরিবারটাই তার আপন।এই সন্ধি ভিলাই তার ঠিকানা।হ্যাঁ তেজেদের বাড়ির নাম সন্ধি ভিলা।

দেড়বছর আগে চাঁদ হৃদির বাবার জীবন বাঁচায় তখন হৃদির বাবার জোড়াজুড়িতে এই সন্ধি ভিলাতে এসে উঠে চাঁদ।আর এখানে এসে দেখে তার সদ্য ভার্সিটিতে গড়ে উঠা বান্ধবী হৃদির বাবাকে সে বাঁচিয়ে ছিল।চাঁদের আত্মসম্মানের পখরতা অনেক তাই সে রাজি হয় নি থাকতে কিন্তু হৃদি আর তার পরিবার অনেক জোড় করে এ বাড়িতে চাঁদকে রেখেছে।সবাই অনেক আদর করে।চাঁদের পরিবার সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না।চাঁদ নিজেকে এতিম দাবি করেছে।এই জন্য সবার মায়া আরও বেশি জন্মেছে চাঁদের প্রতি শুধু একজন বাদে।সে হলো তেজস্ব আবরার। মানে তেজ। সে চাঁদকে পছন্দ করে না কারণ চাঁদ একটু টম বয় টাইপ। এই যে রাত দশটা বাজে চাঁদ বাসায় ফিরেছে।এ নিয়ে তেজের অনেক সমস্যা তাই তো উপরোক্ত কথাবার্তা।

চাঁদ রুমে যাওয়ার সময় তেজের মা চাঁদকে বলল,
–“ফুল তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় আমরা কেউ রাতের খাবার খাই নি। ”

চাঁদকে আদর করে তেজের মা ফুল ডাকে।

চাঁদ আচ্ছা বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আর সবাই খাবার টেবিলে গিয়ে বসল।চাঁদ বেশ খানিকক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসলো।টুকটাক খাবার খাচ্ছে আর কথাবার্তা হচ্ছে। কথাবার্তার মাঝখানে একসময় তেজের ফুপি নাবিলা খানম খাবার বেড়ে দিতে দিতেই বলল,

–“চাঁদ মা যে ছেলেটা তোরে পছন্দ করে ঐ যে রায়হান না কি জেনো ওরে তো একটু দেখতে যাওয়া উচিত তাই না? যতই হোক ছেলেটা তোকে পাগলের মতন ভালোবাসে সেই জন্যই তো এমন স্টেপ নিলো।”

চাঁদ খাবার চিবাতে চিবাতে উত্তর দিলো,
–“ঠান্ডার মা দেখো প্রথমত এ ছেলে আমাকে ভালোবাসে না।যে মানুষ নিজেকে ভালোবাসে না সে অন্যকে কি ভালোবাসবে? আর এমন মানুষকে দেখার ইচ্ছে আমার নেই।”

তেজের ফুপি আর কিছু বলেন নি।তেজের ফুপি নাবিলা খানম ডিভোর্সি মহিলা।সে খুব হাসিখুশি বলে চাঁদ তাকে ঠান্ডার মা বলে।ওনার একটা ছেলে আছে তেজের বয়সী। তেজের ভাই কম বন্ধু বেশি।নাম আব্রাহাম। সে অবশ্য তেজের উল্টো।অনেক মিশুক ছেলে।আব্রাহামই খাওয়া থামিয়ে কৌতুহল নিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“চাঁদকন্যা তুমি এতটা স্ট্রিক্ট কেনো বলো তো?একটা ছেলে তোমার জন্য মরতে বসলো আর তুমি এগুলো বলছ?”

চাঁদ খাওয়া থামিয়ে একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে বিষন্ন স্বরে বলল,

–“এ জীবনে নিজের চেয়ে আপন কেউ হয় না জানো তো ব্রো।এই আপন আপন করে নিঃস্ব হলাম।তবুও দিনশেষে আকড়ে ধরার কেউ রইল না তাই সবার আগে নিজেকে ভালোবাসতে হয়। আর যে নিজেকে ভালোবাসতে পারে সেই অন্যকে ভালোবাসার যোগ্যতা রাখে না।আর রায়হান আমাকে ভালোবাসে এক বছর যাবত।আমার রিজেকশন তার খারাপ লেগেছে।এক বছরের ভালোবাসায় সে মরতে গেলো কিন্তু তার বাবা মা যে এত ভালোবাসলো তার দাম তো দিলো না।”

খাবারের টেবিলে সবাই নিশ্চুপ।চাঁদের মতন বেপরোয়া মেয়ে ও এমন কথা বলে পারে কেউ ভাবতে পারে নি।তেজও অবাক হয়েছে বেশ।চাঁদ তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।এ জীবনে সে আর ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না।

____________________

সকাল সাতটা। চাঁদ এ মাত্র রেডি হয়ে কোথায় জেনো গেলো।পরনে শার্ট,জিন্স প্যান্ট। ও সবসময় এমন ড্রেসই পরে।এত সকালে বের হতে দেখে তেজ বেশ অবাক হলো।তেজ রাতে ঘুমাতে পারে নি।তাই সকাল সকাল উঠেই ছাঁদে গেছিলো ঠান্ডা হাওয়া খেতে।তখনই চাঁদকে বের হতে দেখে বেশ অবাক হয়।এত সকালে চাঁদের ভার্সিটি নেই।তাহলে কোথায় যাচ্ছে? কৌতূহল মেটাতে সেও চাঁদের পিছু নেয়। বেশ খানিকক্ষণ পর চাঁদ তার বাইক নিয়ে একটা হসপিটালের সামনে দাঁড়ালো। তেজও বেশ খানিকটা দূরে নিজের গাড়ি থামালো।চাঁদকে হসপিটালে ঢুকতে দেখে তেজ বেশ অবাক হলো।এত সকালে চাঁদের হসপিটালে আসার কারণ কি?

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here