#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২),১৬,১৭
#মম_সাহা
পর্বঃ ১৬
“আরে ন্যাকা কুইন সরি রিয়া মেডাম যে আজ চাঁদের বাড়ি।কী ব্যাপার?”-রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল চাঁদ।
হ্যাঁ চাঁদ আর তেজ বের হওয়ার সময় রিয়া হাজির হয়।রিয়াকে সোফায় বসতে দিয়েই চাঁদ হাসি মুখে ঠাট্টার স্বরেই কথা টি বলল।
রিয়ে হেসে দেয়। হেসেই বলে,
-” আরে সমস্যা নেই চাঁদ তুমি আমাকে ন্যাকা কুইন ই ডাকতে পারো।আমি কিছু মনে করবো না।”
চাঁদ ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“নাহ্ তাহলে তো আর ন্যাকা কুইন বলা যাবে না।আমি তো আপনাকে রাগাতেই ন্যাকা কুইন ডাকতাম কিন্তু আপনি যদি না ই রাগেন তবে ন্যাকা কুইন ডেকে লাভ নেই।”
কথাটা বলেই হেসে ফেলল চাঁদ। সাথে যোগ দিলো রিয়া। আর বাকি সবাই ও ওদের সাথে তাল মেলালো।
রিয়া চাঁদের মাথায় হাত দিয়ে বলল
-“আমি তোমার থেকে বড় আছি।তুমি চাইলে আপু ডাকতে পারো।”
চাঁদ হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো।”আপু” এ শব্দটা চাঁদের কাছে ভারী ভারী লাগে অনেক।চাঁদকে চুপসে যেতে দেখে রিয়া কিছুটা আন্দাজ করলো।তড়িঘড়ি করে বলল
-“আমি তো এমনেই বললাম তোমার যা ইচ্ছা তা বলেই ডেকো সমস্যা নেই।”
চাঁদ বুঝলো তার হঠাৎ চুপ করে যাওয়াটা উচিত হয় নি।চাঁদ আবারও মুখে হাসি ফিরিয়ে এনে বলল
-” যেহেতু আপনার সাথে আমি মিষ্টি একটা সম্পর্ক সৃষ্টি করতে চলছি তবে আমি চাই না সেখানে অভিশপ্ত ডাক আনতে।আমি বরং আপনাকে ভাবী ডাকবো।যখন আপনার বিয়ে হবে তখন না হয় আপনার জামাইকে ভাই ডেকে নিবো।”
চাঁদের যুক্তিতে হোহো করে হেসে উঠলো রিয়া। বলল
-“ঠিক আছে তবে তাই হোক।তোমার সাথে একটু টক ঝাল ভাবী ননদীনি সম্পর্ক তৈরী হোক।কিন্তু এই আপনি টাপনি বলে পর বানিয়ে রাখলে চলবে না।কেমন?”
চাঁদ মাথা দুলিয়ে বলল
-“ঠিক আছে ভাবীজান,যথা আজ্ঞা।”
রিয়া আবারও চাঁদের গাল টেনে হেসে দিলো।এর মাঝেই জাহানারা বেগম কফি আর পাকোড়া নিয়ে হাজির।রিয়া খাচ্ছে আর বিভিন্ন কথা বার্তা বলছে।সবাই রিয়ার পরিবর্তনে বেশ খুশি।
রিয়া আড্ডা শেষ করে উঠে যাওয়ার সময় বলল
-“আমি যে জন্য এখানে এসেছিলাম সেটাই তো বলা হলো না।”
সবাই প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো। রিয়া মুচকি হেসে চাঁদের হাতটা ধরে বলল
-“আসলে আমি পরশু ইউএস চলে যাচ্ছি।সেখানেই এমবিবিএস কোর্সটা শেষ করবো।ভাগ্যে থাকলে আবার ফিরে আসবো এদেশে।”
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলো।তেজ প্রশ্ন করলো
-“তুই তো প্রথম থেকেই বলতি এ দেশ ছেড়ে কোথাও যাবি না তবে এখন যাচ্ছিস যে?”
রিয়া হাসে।উত্তর দেয়,
-“তখন আমার কাছে এমবিবিএস থেকেও দরকারি কিছু ছিলো।কিন্তু এখন দেখছি সে জিনিসটা ভাগীদার আমি না।তাই চলে যাচ্ছি। জীবন আমাকে একটা সুযোগ দেয় নি আরেকটা তো ছিনিয়ে নিতেই পারি তাই না?”
চাঁদ এগিয়ে আসে রিয়ার হাতটা ধরে বলে
-“তুমি কোন জিনিসের কথা বলছো ভাবী? তেজ ভাইয়ার কথা? ”
রিয়ার হাসি মুখটা বিষন্নতায় ঘিরে যায় তবুও হাসি বজায় রেখে বলে
-“সব প্রশ্নের উত্তর হয় না চাঁদ। তবে হ্যাঁ আমার রুড তেজস্ব আবরার কাউকে ভালোবাসবে সেটাই আমার কাছে অবিশ্বাকর ছিলো।আর যাই হোক ওকে ফিরিয়ে দিও না চাঁদ।ধরতে পারো এটা তোমার কাছে আমার শেষ অবদার।”
চাঁদ রিয়ার হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
-“অমন কথা বলো না ভাবীজান। আমার কাছে তোমার আবদারের ঝুলি জেনো শেষ না হয়।”
রিয়া চাঁদের গাল টেনে দিয়ে বলে
-“তবে তাই ই হোক ননদীনি।”
রিয়া তাকায় তেজের দিকে।সে জানে কতটা ভালোবেসে ছিলো তেজকে। তবে ভালোবাসার মানুষটাকে খুশি রাখাই তো তার দ্বায়িত্ব। কিন্তু তেজকে অন্য কারো সাথে মেনে নিতে কার বড্ড কষ্ট হবে তাই তো সে দেশ ছাড়ছে।
রিয়া সবার থেকে বিদায় নিয়ে চাঁদদের ফ্লাট থেকে বেরিয়ে গেলো।চাঁদও চুপ করে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে। আজ নাকি আর বের হবে না ঘুরতে।তেজও জোড় করে নি।
________
চাঁদরা যে বাড়িতে থাকে সেটা হাইরোডের কাছে একটা বিল্ডিং। একটু হেঁটে গেলেই।সাথে একটা ফ্লাইওভার।
রাত এখন আনুমানিক একটা।একটা ডেনিম প্যান্ট আর টিশার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ ফ্লাইওভারের উপরে।কোনো মানুষজন নেই।মাঝে মাঝে দু একটা বড় গাড়ি শাঁ শাঁ করে ছুটি যাচ্ছে পাশ কাটিয়ে।
চাঁদ ফ্লাইওভারের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ। হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো।তাকিয়ে দেখে তেজ বেশ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে হাপাচ্ছে।
চাঁদ অবাক হয়ে গেলো।তেজ কীভাবে জানলো সে যে বাসায় নেই এখানে।ভাবনার মাঝেই চাঁদের হাতটা শক্ত করে হ্যাঁচকা টান দিলো তেজ।আর ধমকের সুরে বলল
-“এই মেয়ে মাথা খারাপ তোমার? এত রাতে বাড়ির বাইরে কেউ একা একা আশে?জানো না এখনকার মানুষ জন কেমন? একটু আগে তোমার ঘরে গিয়েছিলাম তুমি ঘুমিয়েছো কি না দেখার জন্য। খালি রুম দেখে আমার কলিজা তো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।”
চাঁদ এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলো সব।তেজ থামতেই বলল
-“এত চিন্তা করেন কেনো আমাকে নিয়ে? কে আমি?”
তেজ চাঁদের আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর বলল
-“কেনো তুমি বুঝো না তুমি কে আমার?এতটাও ছোট তুমি না।আর ভুলেও যেও না তোমাকে আমি ভালোবাসি। ”
চাঁদ প্রশ্ন করলো
-“আপনি আমাকে ভালোবাসেন, এখন যদি আমি বলি আমি আপনাকে ভালোবাসি না তবে কি করবেন?”
তেজ মুচকি হাসে।তারপর আকাশ পানে চেয়ে বলল
-“আমি কখনোই তোমার থেকে ভালোবাসা পাবার জন্য এসব করি না।আমি আমার ভালোবাসাটাকে আগলে রাখার জন্যই এসব করি।মোট কথা আমি এগুলোর মাঝে নিজের সুখ খুঁজে পাই।তাই তোমার উত্তর এখানে কোনো ম্যাটার করছে না।
আর পৃথিবীতে এমন হাজার হাজার মানুষ আছে যারা একপাক্ষিক ভালোবেসে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।নিঃসন্দেহে তাদের কোনো কষ্ট থাকে না।কারণ একপাক্ষিক ভালোবাসাও আলাদা সুখ দেয়। আমি জানি যে আমার বিপরীত পক্ষের মানুষটা আমায় ভালোবাসে না আমি এটাও জানবো যে এখানে বিশ্বাসঘাতকতার ও উপায় নেই।নিঃসন্দেহে একপাক্ষিক ভালোবাসা সুখকর।এখানে হারানোর ভয় নেই।”
চাঁদ তেজের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই প্রশ্ন করে বসলো
-“তবে আপরি চাচ্ছেন না ভালোবাসাটা দুই পাক্ষিক হোক?”
প্রথমে তেজের বুঝতে একটু অসুবিধা হলেও তার মস্তিষ্ক কথা টা ধারন করতেই খুশির লাড্ডু ফুটে উঠলো মনে।তবে চাঁদও চায় একটা সুন্দর ভালোবাসা।
তেজ অবাক হয়ে বলল
-“কি বলতে চাচ্ছো চাঁদ?তবে আমি কি আমার ভালোবাসার পূর্ণতা পাবো?”
চাঁদ মুখ ভেংচি দেয়। আর বলে
-“এমন কথা কখন বললাম আমি?আর আপনি তো ধরেই নিয়েছেন সবটা একপাক্ষিক রেখে সুখে থাকবেন তবে তাই ই হোক।”
তেজ চাঁদের হাতটা ধরে বেশ অনুনয় করে বলল
-“এই না না সরি চাঁদ আমার ভুল হয়েছে প্লিজ এমন করবে না।”
চাঁদ মুড নিয়ে বলল
-“ঠিক আছে সরি এক্সেপ্ট করবো তবে একটা কাজ করতে হবে।
তেজ তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো
-“কি করতে হবে বলো?আমি এক্ষণি করবো।”
চাঁদ হেসে দিয়ে বলল
-“যদি বলে জান দিয়ে দিন?”
তেজ প্রথমে থমকে গেলো পরক্ষণেই উত্তর দিলো
-“আমার প্রেমিকার কাছে আমি সবটুকু হাজির করলাম।প্রেমিকা বললে সেটাও হাজির।”
চাঁদ তেজের কথায় মুখে হাত চেপে হেসে দেয়। তারপর বলে
-“থাক মহাশয় এত জান প্রাণের দরকার নেই। আপাতত একটা জায়গায় যাবো।আমার সাথে যাবেন?”
তেজ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানলো।চাঁদ আর তেজ পাশাপাশি হাঁটা ধরলো।বেশখানিক হেঁটে একটা ঝিলের পাশে এসে দাঁড়ালো।
তেজ পুরো জায়গা টা দেখে হতবাক।কারণ,,
চলবে
#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২)
#মম_সাহা
পর্বঃ১৭
“হ্যাপি বার্থডে তেজ,মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্ন অফ দ্যা ডে”
নিজের পরিবারের সকল সদস্যকে দেখে চমকে উঠলো তেজ।তার আজ জন্মদিন সেটা ভুলেই গিয়েছিলো তেজ।অবাক আর আবেগ দুটোই আপ্লূত হয়ে তেজের চোখ ছলছল করে উঠলো।সবাই তার আড়ালে এত বড় সারপ্রাইজ প্ল্যান করবে সে ভাবতেও পারে নি।
একে একে সবাই এসে জড়িয়ে ধরে বার্থডে উইশ করছে তেজকে।তেজ তো উত্তেজনায় বাকরুদ্ধ।
পুরো ঝিলের কাছটা সাজানো ছোট ছোট প্রদীপ দিয়ে।আকাশে কত গুলো ফানুশ উড়ছে।একপাশে একটা টেবিলে কেক রাখা।
সবাই তেজকে উইশ করছে আর চাঁদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে আর চোখ জুড়াচ্ছে। মনে পড়ে যাচ্ছে তার জন্মদিনের কথা। ভাইয়া বাবা ও তাকে সারপ্রাইজ দিতো।মা অনেক রান্না বান্না করতো।জন্মদিনের দিন তারা সবাই ঘুরতে যেতো।জন্মদিন আসার আগেই চাঁদ সবাইকে বলে বেড়াতো কি কি গিফ্ট দিবে।আর আজ দুবছর কেউ উইশ অব্দি করে না।অবশ্য তেজের পরিবার জানেনা জন্ম তারিখ।আর সে পুষ্প আর নীলকে বারণ করে দিয়েছে উইশ করতে।
একবার জন্মদিনের দিন সে, আবির,প্রহেলিকা, পুষ্প,নীল সবাই ঘুরতে গিয়েছিল। আবির তাকে কাঠগোলাপ গিফ্ট করেছিলো।
আজ খুব করে বাবার কথা মনে পড়ছে।তার বাবাটাও না কত স্বার্থপর। সেও তো চাঁদকে ভুলে দিব্যি আছে।
“চাঁদকন্যা সবাই উইশ করলো তুমি করলে না”
আব্রাহামের কথায় সবার দৃষ্টি এবার চাঁদের উপর এসে পরলো।চাঁদেরও ধ্যান ভাঙলো।সবার অগোচরে চোখের জলটা মুছে নিয়ে বলল
-“তোমরা তো করেছো এতেই হবে।”
তেজ চাঁদের মন খারাপ টা আন্দাজ করলো।এগিয়ে এসে বলল
-“সবাই করেছে বলে তুমি করবে না? সবাই খায় বলে কি তুমি খাও না?”
সবাই হেসে উঠলো। চাঁদও হেসে দিলো।আব্রাহাম তেজের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল
-“মজা উড়ানোর দরকার নেই সাহেব।এত কিছুর আয়োজন এই মেয়ে টাই করেছে।”
তেজ জেনো আকাশ থেকে পড়ল।চিল্লিয়ে বলল
-“হোয়াট? সব চাঁদ করেছে?”
চাঁদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“ষাঁড়ের মতন চেঁচাচ্ছেন কেনো?আমি কি একটু সারপ্রাইজ দিতে পারি না?এতই খারাপ নাকি?”
তেজ এগিয়ে এসে বলল
-“আহা আমি কি এটা বলেছি নাকি?তুমি আমার জন্য এত কিছু করবে আমি ভাবতেও পারি নি। ”
চাঁদ আলতো হাসি দিলো। এই মানুষটার খুশিতে চকচক করে উঠা চোখ গুলো দেখে কেমন একটা শান্তি মিলছে।আজ চাঁদ বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভেবেছে কেক কাটার পরই সবাইকে জানাবে।
হৃদি তেজের হাতটা টেনে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো কেক এর সামনে।সবার উদ্দেশ্যে বলল
-“হয়েছে হয়েছে এবার তাড়াতাড়ি আসো সবাই মিলে কেক কাটতে। তাড়াতাড়ি আসো আমার আর তর সইছে না। এই চাঁদ আয় না।”
আব্রাহাম খোঁচা মেরে বলল
-“হ্যাঁ হ্যাঁ তোর মতন পেটুকের তর সইবো কেমনে?”
সবাই আবারও হেসে উঠলো। হৃদি গাল ফুলিয়ে ফেলল।লোকটা সবার সামনে তাকে নিয়ে মজা উড়ায় সবসময়। আজ মজা দেখাবে।
কেক কাটার পর্ব শেষ হলো।খাওয়া শেষ করলো।সবাই আবার আড্ডাতে ব্যস্ত হলো।
চাঁদ চুপচাপ ঝিলের একপাশে বেঞ্চে বসে আসে।সে ভেবে পাচ্ছে না তার সিদ্ধান্ত সবাইকে কি করে জানাবে।নিজের মনে মনে অনেক যুদ্ধ করে অবশেষে ভাবলো না এবার জানাতেই হবে।
চাঁদ সবার মাঝে এসে দাঁড়ায়। সবাই এতক্ষণ আড্ডায় ব্যস্ত থাকলেও গম্ভীর মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চাঁদকে দেখে হাসি থামিয়ে দিলো।তেজ উঠে এসে জিজ্ঞেস করল
-“কি হয়েছে চাঁদ?এ্যানি প্রবলেম?”
চাঁদ গলা পরিষ্কার করে সবার দিকে তাকালো তারপর বলল
-“আসলে আমি তোমাদের কিছু বলতে চাই।আশা করি তোমরা আমার কথাটা মনোযোগ সহকারে শুনবে। ”
পুষ্প এগিয়ে এসে মাথা দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে কি কথা?
চাঁদ সবার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর ঝিলের জলের দিকে নজর দিয়ে বলল
-“তোমাদেরকে না জানিয়ে একটা কাজ করেছিলাম আমি।”
সবাই প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চাইল।চাঁদ সবার দৃষ্টির মানে বুঝলো তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-“আমি সবাইকে এমনকি নীল পুষ্পকে না জানিয়ে এ দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।”
সবাই বেশ অবাক হয়ে যায়। সবার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। পুষ্প অবাক স্বরে বলল
-“বাহ্ চাঁদ আমরা এতটাই পর হয়ে গেছি?”
চাঁদ তখনো ঝিলের পানিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে।খুব ঠান্ডা স্বরে বলল
-“আমার কথাটা শেষ হতে দে পুষ্প।”
তেজ পুষ্পকে চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ হতে বলল।পুষ্প চুপ করে গেলো তবে মনে মনে বেশ অভিমান হলো তার।তেজ নিজেও নিজেকে শক্ত করছে। যাই হোক সেটা জেনো তার সহ্য হয়।
চাঁদ জোড়ে শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করলো
-“আজ থেকে প্রায় দুমাস আগে তেজ ভাইয়া যখন আমাকে প্রপোজ করেছিলো সেদিন ই আমি সিদ্ধান্ত নেই এদেশে আমি আর থাকবো না।পাসপোর্ট ভিসা রেডি করা শুরু করি।আর গত পরশু আমার ভিসা আমার হাতে এসেছে।”
সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। তেজ এগিয়ে এসে ব্যথিত স্বরে বলল
-“তবে কি দেশ ছাড়ার কারণ আমি?তুমি চাইলে আমি তোমার থেকে দূরে চলে যাবো তবুও তুমি যেও না কোথাও। ”
চাঁদ এখনও ফিরে তাকায় নি।ঝিলের দিকে তাকিয়ে বলে
-“আমার কথাটা আমায় শেষ করতে দিন।”
তেজ চুপ হয়ে যায়। জাহানারা বেগম নিজের ছেলের পাশে এসে দাড়ায়। চাঁদ আকাশপানে চেয়ে বলল
-“এত বছর পর সেদিন আমার বিশ্বাস ঘাতক পরিবার এবং তাদের কথা শুনে আমি সত্যি ভেঙে পড়েছিলাম নতুন করে। কিন্তু এত কিছুর পর নিজেকে শান্ত রেখেছে পুষ্প আর নীলের দিকে তাকিয়ে। এই মানুষ গুলো পাশে আছে বলেই তো টিকে থাকা।কিন্তু যেদিন তেজ ভাইয়া জানালো সে আমাকে ভালোবাসে বিশ্বাস করেন আমার পায়ের নিচে মাটি সরে গেলো।
আমি বরাবরই চাইতাম না আমার এ অভিশপ্ত জীবনে কাউকে জড়াতে।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম চলে যাবো এদেশ ছেড়ে।
তোমরা জানো আমি কখনোই সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম না।তবুও তেজ ভাইয়া এমনকি তোমাদের সবার এটা নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা না দেখে আমি অবাক হলাম।তখন মনে মনে প্রশ্ন জাগলো, তবে কি সবার কাছে সন্তানই সব না?
নিজের উত্তর তোমাদের আচরণে খুঁজে পেলাম।আমার এই অক্ষমতা ছাপিয়ে আমি নতুন আলোর পথ দেখলাম।আবার মনে হলো জীবনকে সুযোগ দেই।মনে হলো সত্যিই এবার মুভ অন করা উচিত।মনে হলো সত্যিই এবার আমার একটা মানুষ থাকা উচিত যে একান্তই আমার হবে।
আমিও সংসার করতে চাই।”
চাঁদ ঘুরে দাঁড়ালো জাহানারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল
-“মাম আমাকে তোমার বাড়ির বউ বানাবে?আমার সংসার করার স্বাদ পূরণ করাবে?আমাকে একটা সুন্দর পরিবার দিবে?আমাকে আবার নতুন করে বাঁচার কারণ দিবে?
মাম আমারও আবার বাবা মা দিবে?হ্যাপি একটা পরিবার চাই আমি।মাম দিবে আমায় সুযোগ?”
হৃদি দৌড়ে এসে চাঁদকে জাপটে ধরে।তেজ তো জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ উপহার পেয়ে গেছে বলে খুশিতে আত্মহারা। তেজের বাবা এগিয়ে এসে চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।সবাই হাতে ঈদের চাঁদ পাওয়ার মতন খুশি অনুভব করলো।
পুষ্প এগিয়ে এসে চাঁদ জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলল
-“একটুর জন্য তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।অনেক কষ্ট পেয়েছি।তবে তোর সিদ্ধান্ত শুনে সব শেষ।আমাদের চাঁদ আবারও পরিবার পাবে।”
সবাই খুশিতে ব্যস্ত শুধু চুপ তেজের মা।চাঁদ খেয়াল করলো সেটা। এগিয়ে এসে করুন স্বরে বলল,
-“মাম আমাকে তোমার বাড়ির বউ বানাবে না?”
জাহানারা বেগম শক্ত স্বরে বলল
-“নাহ্।”
চলবে,