বউ_যখন_কাজের_মেয়ে . >পর্ব-২৭

0
2508

বউ_যখন_কাজের_মেয়ে
.
>পর্ব-২৭
লেখক:-মান্না ইসলাম মাহিম
.’
.
.
.
তারপরের দিন মাহিম এর বাসায় ফোন করে সবকিছু খুলে বলল প্রিয়া।
মাহিমের Accident এর কখবর শুনে সবাই চলে আসলো।
মাহিমের মা এসে প্রিয়াকে অনেক গুলা কথা শুনালো,অনেক বাকচকা করলো।প্রিয়া শুধু মাথা নিচু সবার কথা গুলো শুনলো।কারোই কোন কথার উত্রর করলো না।
.
মাহিমের সাথে দেখা করার পর তুন্নি ডাক্তারের কাছে গেলো।ডাক্তার বাবু ভালো করে মাহিম দেখার পর বলল মাহিমকে বাড়িতে নেওয়া যাবে বাট খুব সাবধানে থাকতে হবে মাহিমকে।
.
এরপর মাহিমকে Hospital a থেকে মাহিমকে নিয়ে সবাই শহর দিকে রওনা হলো,সাথে প্রিয়া সহ।
প্রিয়া যেতে চাইলো না বাট অর্পা কিছুতেই ছাড়লো না প্রিয়াকে।জোর করেই প্রিয়াকে সাথে করে নিয়ে রওনা হর্র বাই বাড়ি ফেরার পথে!
.
বাসাতে ফিরতে ফিরতে প্ররায় রাত হয়ে আসলো।
বাসার সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করলো ড্রাইভার।
.
এরপর মাহিমকে সবাই ধরাধরি করে মাহিমের রুম বিছানার উপরে সুয়ে দিল।
.
.
.
“রাত ১১টা”
ডিনারের পর সবাই যে যার রুমে গিয়ে সুয়ে পরলো।প্রিয়া সবাইকে খাইয়ে মাহিমের জন্য আলাধা ভাবে কিছু খাবার তৈরি করে নিয়ে রুমে আসলো।
.
.
প্রিয়া মাহিমকে খাইয়ে দিচ্ছিল মাহিম খাচ্ছিল আর প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা না খেয়ে না খেয়ে মুখটা একদম সুখনা সুখনা লাগছে।
জ্ঞান ফেরার পর থেকেই প্রিয়াকে একটি বারের জন্যেও খেতে দেখেনি।সব সময়ই শুধু ও কে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখেছে।
খেতে মাহিম বলে উঠলো
মাহিম:-আপনি খেয়েছেন?
.
প্রিয়া:-(চমকে উঠে)না মানে…..
.
মাহিম:-কি না মানে করছেন খেয়েছেন আপনি?
.
প্রিয়া:-না!(চোখ দুটো নিচু করে)
.
মাহিম:-কখন খাবেন?
.
প্রিয়া:-আপনি খেয়েনিন আমি তারপর খেয়ে নিব।(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
.
এরপর মাহিম কিছু না বলে হাত প্লেট থেকে কিছু খাবার প্রিয়ার মুখের কাছে তুলে ধরে বলল
মাহিম:-নিন হ্যাঁ করুন…
.
মাহিমের এমন শান্তশিষ্ট ব্যবহার দেখে প্রিয়া একটু অবাক হয়েগেলো।Hospital এ যেমন রাগ নিয়ে রাগ নিয়ে কথা বলছিল এখন তা নেই।
একদম শান্তশিষ্ট ভাবে কথা বলছে।
মাহিম:-কি হলো নিন।এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়েই)
.
এরপর মাহিম প্রিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছিল আর প্রিয়া অন্যরকম একটা মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
“মানুষটা যখন রেগে যায় তখন প্রতিটা মুহূর্তেই যেন মনে হয়,আমি ওর কেউ না।একটুও ভালোবাসেনা আমাকে।আর যখন ঠিক এভাবে শান্তশিষ্ট ভাবে আমার সাথে কথা বলে, তখন প্রতিটা মুহূর্তেই মনে হয়।ও আমার অনেক আপন।অনেক কাছের মানুষ।আমি যেমনটা চেয়ে ছিলাম ঠিক তেমনটাই।ও কি আমায় ভালোবাসে নাকি শুধু দয়া করে আমার উপর।যদি আমায় ভালোইবাসে,তাহলে তুন্নিকে বিয়ে করতে রাজি হলো কেন?ও আমায় ভালোবাসেনা।আমি তো ওর বাসার কাজের মেয়ে,ও শুধু আমায় দয়া করে আর কিচ্ছু না।যদি সত্যি ও আমায় এভাবে ভালোবাসতো তাহলে আমায় থেকে সুখি হয়তো আর কেউই হতো না।ও যখন ঠিক এভাবে আমার কথা বলে,আমাকে আদর করে,তখন আমার অনেক ভালো লাগে।আরো ইচ্ছে করে ওর ভালোবাসা পেতে,আরো হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে হয় ও কে সঙ্গে নিয়ে।এটাকেই মনে হয় স্বামীর ভালোবাসা বলে।না না এইসব আমি কি ভাবছি।
আর মাত্র কয়েকদিন পর ও তুন্নিকে বিয়ে করবে।ও কেন আমাকে ভালোবাসতে যাবে।আমিও একদম আমার জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে পরেছি।
তারপর চলে যাব না ফেরার দেশে।যেখান থেকে আর তখনই ফিরবো না।আমি চাই ও সুখে থাকুক।
ওর জীবনে আর কালো ছায়া হয়ে থাকতে চাইনা।
নাই বা পেলাম ওর ভালোবাসা।আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত গুলো ওর সাথে এভাবে কাঠাতে পারছি ও কে চোখের সামনে দেখতে পারছি,এটাই আমার কাছে অনেক কিছু।(মনে মনে মাহিমের দিকে তাকিয়)
.
মাহিম:-কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন!!!একি আপনি কাঁদছেন কেন?
.
প্রিয়া চমকে উঠে দেখলো কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে তার চোখে পানি চলে এসেছে সে বুঝতেই পারেনি।
প্রিয়া:-না না কই আমি কাঁদছি।এএমনি চোখে যেন কি পরলো(বসে থেকে উঠে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে)
মাহিম:-কই দেখি এইদিকে তাকান(প্রিয়ার পিছন থেকেই)
.
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
.
মাহিম:-কি হলো তাকান।(একটু বিরক্তিকর ভাবে)
.
প্রিয়া মাহিমের কথা শুনে চোখের পানি মুছে মাহিমের দিকে মাথা নীচু করে ঘুরে দাড়ালো।
.
মাহিম:-বসুন।
.
প্রিয়া কোন কথা না বলে বাচ্চাদের মতো মাহিমের কথা শুনতে লাগলো।মাহিমের সামনে মাথা নীচু করে মুখোমুখি হয়ে বসে পরলো।
.
মাহিম:-তাকান আমার দিকে।
.
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
.
মাহিম:-কি হলো তাকান আমার দিকে।
.
এরপর প্রিয়া মাহিমের দিকে তাকালো।
মাহিম দেখতে পেলো প্রিয়ার মুখটায় অন্যরকম
একটা মায়া।প্রিয়ার চোখে এখনো জল জমে আছে।
.
মাহিম:-কি হয়েছে আপনার?
.
প্রিয়ার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় হচ্ছে না,শুধু চোখ দিয়ে পানি পরছে।ভেজা চোখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিমের দিকে।
মাহিম:-কি হলো কথা বলছেন না কেন?বলুন আমায় কি হয়েছে।(শান্ত ভাবে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
.
প্রিয়া মাহিমের এইরকম আচারণ দেখে মাহিমের প্রতি দুর্বল হয়ে পরছে।নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না।আর কিছুক্ষণ এভাবে মাহিমের সামনে বসে থাকলে হয়তো সত্যিটা মুখ দিয়ে বেড় হয়ে যাবে।প্রিয়া শুধু কেঁদে কেঁদে “কিছু হয়নি” বলেই দৌড়ে রুম থেকে বেড় গেলো।
মাহিম কিছুই বুঝতে পারলো না।সে পিছন থেকে এত করে ডাকলো কিন্তু প্রিয়া কোন কথাই উত্রর করলো না।
.
.
.
.
.
.
“৩দিন পর”
মাহিম Hospital থেকে আশার ৩দিন হলো।
এই ৩দিনে মাহিম প্ররায় সুস্থ হয়ে উঠেছে।
আর এই গত ৩দিন ধরেই প্রিয়া নার্স এর মতোই মাহিমের দেখা শুনা খাওয়া দাওয়া সবকিছুই করেছে।
গত ৩দিন ধরে ডাক্তারের লিখে দেওয়া সেই ঔষধ গুলো না খাওয়াতেই প্রিয়ার প্রবলেম গুলো বারতেই থাকে।
ইদানিং প্রিয়ার দিনে একবার হলেও নাক দিয়ে রক্ত বেড় হয়।
.
.
“রাত ১২টা”
প্রিয়া আর মাহিম একি বিছানায় সুয়ে আছে।মাঝখানে একটি বালিশ।
মাহিম ঘুমিয়ে পরেছে কিন্তু প্রিয়া এখনো ঘুময়নি।
তার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়েগেছে।চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু না মাথার যন্ত্রণা কমছে না।প্রিয়া সোয়া থেকে উঠতে যাবে দেখলো মাহিমের একটা হাত তার গায়ের উপরে।প্রিয়া মাহিমের হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠে চেয়ারে মাথা চেপে ধরে বসে পরলো।কিন্তু কিছুই হচ্ছে।
বিছানা থেকে উঠার পর কেমন জানি বমিবমি লাগছে প্রিয়ার।মনে হচ্ছে পেটে যা আছে সব এক্ষনি বেড় হয়ে আসবে।
প্রিয়া খুব দ্রুত বেসিনের সামনে চলে গেলো।গিয়ে বমি করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই বেড় হলো না।প্রিয়া আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলো তার ঠোঁটের নীচে রক্ত,তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেড় হচ্ছে।এবং তার অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।আগে রক্ত বেড় হতেই সমস্ত ব্যথা যন্ত্রণা দুর হয়ে যেতো।
কিন্তু আজকে এখনো পর্যন্ত কমছে না।
শুধু বেরেই চলেছে।প্রিয়া সহ্য করতে পারছে না।মনে হয় এক্ষনি মেঝেতে পরে যাবে সে।খুব কষ্ট হচ্ছে প্রিয়ার দাড়িয়ে থাকতে।প্রিয়ার পৃথিবীটা একদম অন্ধকার হয়ে আসছে।নিজেকে খুব একা লাগছে।গত ৩দিন প্রিয়া খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে যে মাহিম এই ৩দিনে তার প্রতি বেশ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পরেছে।
“আমি আমার জীবনের একদম শেষ মুহূর্ত এসে পরেছি।এই শেষ মুহূর্তে নতুন করে কাউকে জরাতে চাইনা।আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে,আর হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি চলে যাব না ফেরার দেশে।না না আমার কিছু হয়ে যাওয়ার আগেই আমাকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।যাতে আমার লাশটাও কেউ খুজে না পায়।”আয়নার দিকে তাকিয়ে এইসব ভেবে দ্রুত মাহিমের খাটের কাছে চলে আসলো।
এসে মাহিমের হাঁটু ফেলে বসে পরলো।মাহিম ঘুমিয়ে আছে খুব ইচ্ছে করছে প্রিয়ার শেষবারের মতো মাহিমকে একটু সুয়ে দিতে।তাকে একটু স্পর্শ করতে।কিন্তু না মাহিমের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে।এটা ভেবে প্রিয়া মাহিমকে স্পর্শ করলো না।প্রিয়ার মাথা ভারি হয়ে আসছে।প্রিয়া কিছুক্ষণ মাহিমের পাশে বসে নিঃশব্দ হয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে কান্না করার পর উঠে পরলো।তারপর কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেড় হয়েগেলো।
.
.
.
প্রিয়া রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে।কি করবে কোথায় যাবে কিছুই বুঝতে পারছে না।শুধু ভাবছে খুব দ্রুত তাকে অনেক দুরে যেতে হবে।অচেনা পথে।
প্রিয়ার মাথা অনেক ভারি লাগছে আর যন্ত্রণা করছে।আর নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে।চোখে জল থাকায় ভালো করে দেখতেও পারছে না।চারদিকটা একদম ফাকা কিন্তু প্রিয়ার চারদিকটা একদম অন্ধকার লাগছে।ভালো করে হাটতে পারছে না।
এভাবে কিছু দুর যেতেই হঠাৎ একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে রক্ত-তাক্ত হয়ে মাঠিতে পরে গেলো প্রিয়া।
.
……নেক্সট পার্ট……..
.
জানি ভালো হয়নি বাট যদি
ভালো লাগেতো জানাবেন।
.
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here