আফিম_বড্ড_নেশালো_০২,#অন্তীম_পর্ব [শেষাংশ]

0
1809

#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২,#অন্তীম_পর্ব [শেষাংশ]
#লেখিকা_মাহযাবীন

প্রেয়সীর কথা রাখতে যত দ্রুত সম্ভব ফ্রেশ হয়ে তার পছন্দ করে রেখে যাওয়া সাদা শার্ট ও কালো ডেনিম প্যান্ট পড়ে নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করে আফিম।নাফিয়া বলেছে তাকে খুঁজে নিতে।তবে খুঁজতে হলো না আফিমের।এতো রাতে মেয়েটা নির্ঘাত বাইরে কোথাও যায়নি।আর বাড়ির ভেতরে তার পছন্দের শুধু মাত্র একটি জায়গায়ই আছে।সেটি হচ্ছে ‘ছাঁদ’।
আফিম সোজা ছাঁদে এসে পৌঁছায়।ছাঁদে পৌঁছাতেই ভীষণ রকমের অবাক হয় সে।সম্পূর্ণ রেলিং জুড়ে রং-বেরঙের ছোট ছোট মোমবাতি।ছাঁদের মাঝে থাকা দোলনাটায় এমন ভাবে ফুল ছিটিয়ে রাখা ঠিক যেমন ফুলশয্যার রাতে বিছনায় ছড়ানো থাকে।এই অতি সাধারণ সাজেই অসাধারণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে ছাঁদটায়।আকাশের মস্ত বড় চাঁদ এই সৌন্দর্যকে আরো কয়েকশত গুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে।আফিম উৎফুল্ল ও উত্তেজিত হৃদয় নিয়ে এক কদম আগায়।দেখা পায় নাফিয়ার।
সাদা শাড়ি ও লাল ব্লাউজ গায়ে জড়ানো মেয়েটার।চুল খোঁপা করে তাতে গুঁজে রাখা বেলীফুলের মালা।পেছন থেকে তাকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আফিমের চোখে।আফিম ধীর কদম ফেলে এগিয়ে যেতে আরম্ভ করে তার প্রেয়সীর ধারে।
নাফিয়া পূর্ণিমার চাঁদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নিজের খোলা চোখের কল্পনায় কিছু একটা ভেবে মুচকি মুচকি হাসছেও মেয়েটা।এরই মাঝে হটাৎ নিজের পেটে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে সে।বুঁজে নেয় নিজের চোখজোড়া।
নাফিয়ার উন্মুক্ত কাঁধে ঠোঁট ছোঁয়ায় আফিম।মেয়েটার সামান্য মেদ জমা কোমল, মসৃণ পেটে মৃদু চাপ প্রয়োগ করে তাকে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে।কাঁধে ঠোঁট বুলোতে বুলোতে কান অব্দি এসে ঠেকে ছেলেটার ওষ্ঠদ্বয়।সে নেশা ধরানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কেনো এভাবে পাগল করছো মিসেস.আফিম ইবনান?
মৃদু হাসে নাফিয়া।চোখ বুঁজে রেখেই সে নিন্ম স্বরে বলে ওঠে,
-আদর নিতে।
এমন উত্তরে মৃদু হাসে আফিমও।তবে বলে না কিছুই।উন্মাদের ন্যায় নাফিয়ার পিঠ জুড়ে চুমু বসাতে ব্যস্ত হয়ে পরে সে।একের পর এক চুমু বসিয়ে মেয়েটাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।এবার মুখ ডুবায় তার গলায়।নাফিয়াও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তার অর্ধাঙ্গকে।ছেলেটার ঠোঁটের স্পর্শে শরীর জুড়ে মৃদু কম্পন সৃষ্টি হয়েছে তার।সেই সাথে নিঃশ্বাসও ক্রমাগত ভারী হয়ে চলছে।এমতাবস্থায় নিজেকে একটু সামলে নিয়ে আফিমের থেকে সরে আসতে চায় সে।তবে আফিমের উন্মাদনা যেনো বেড়েই চলছে। তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়া অসম্ভব প্রায়।তবুও নাফিয়া ধীর কন্ঠে একবার ডাকে তাকে।তবে সাড়া মেলে না কোনো।ছেলেটা তার গলায় চুমু বসাতে ব্যস্ত হয়ে আছে।
এবার একটু জোরেই আফিমকে ডাকে নাফিয়া।এ ডাকে মাথা তোলে আফিম।তবে তার চোখে লেগে থাকা ঘোর দৃষ্টি এড়ায় না নাফিয়ার।মেয়েটা আফিমের থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।কিছু না বলে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে নেয় সে।পেটের কাছ থেকে শাড়ির খানিকটা অংশ সরিয়ে চোখ বুঁজে নেয় নিজের।
আফিমের সোজা চোখ যায় নাফিয়ার সুগভীর নাভির দিকে।ঘোরের মাঝেই হাঁটু ভেঙে বসে পরে সে।ঠোঁট ছোঁয়াতে আরম্ভ করে সেথায়ও।চোখ বুঁজে একের পর এক চুমু বসানোর মাঝেই ঠোঁটে কিছু একটার স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকায় ছেলেটা।দেখতে পায় ছোট্ট একটা কাগজ লাগানো পেটে।সে কাগজে ছোট্ট করে লেখা,
“ড্যাড,আই অ্যাম কামিং সুন”
লেখাটা একবার পড়ার পর আবারও পড়ে আফিম।কিন্তু তার মনে হচ্ছে সে ভুল কিছু পড়ছে।তৎক্ষণাৎ পকেট হতে নিজের ফোন বের করে ফ্লাশলাইট জ্বালায় সে।লেখার উপর ফ্লাশলাইট নিক্ষেপ করে আবারও সেই একই লেখা পড়ে এবার উঠে দাঁড়ায় ছেলেটা।প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে রয় নাফিয়ার চোখ পানে।আফিমের ভেতরে চলা উত্তেজনা বুঝতে কষ্ট হয় না নাফিয়ার।সে ঠোঁটে হাসি টেনে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
কয়েক সেকেন্ড থমকে দাঁড়িয়ে রয় আফিম।অতঃপর ঝাপটে জড়িয়ে ধরে নাফিয়াকে।খুশিতে চোখ জ্বলজ্বল করছে তার।আর তার খুশি দেখে নাফিয়ারও চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে।
আফিম উৎফুল্ল কন্ঠে বলে ওঠে,
-অবশেষে! অবশেষে এতো অপেক্ষার পর আমার মেয়ে আসবে, আহনিতা আসবে।আই কান্ট ওয়েট মিসেস.ইবনান।কখন আসবে ও?কত দেরি হবে?
আফিমের কথায় ব্রু কুঁচকায় নাফিয়া।বলে ওঠে,
-আহনিতা না, আমার ছেলে আহনাফ আসবে।আর এখন থেকে গুণে গুণে ৮ মাস ১০ দিন পর আসবে।
নাফিয়ার কথায় ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো চেহারা করে আফিম বলে ওঠে,
-৮ মাস!!!!কত দেরি।
আফিমের চেহারা পানে তাকিয়ে মৃদু হাসে নাফিয়া।বলে ওঠে,
-আপনি বাবা হচ্ছেন নাকি বাবা হবেন শুনে নিজেই বাচ্চা হয়ে গেলেন?
হাসে আফিম।আবারও হাঁটু গেড়ে বসে পরে। নাফিয়ার পেটে ঠোঁট বুলিয়ে বলে ওঠে,
-কাম সুন মাই প্রিন্সেস।
-প্রিন্সেস না প্রিন্স আসবে।
এ কথায় বাঁকা হাসে ছেলেটা। ভাব নিয়ে বলে ওঠে,
-দেখে নিও।
নাফিয়া চোখ ছোট ছোট করে আফিমের দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে।অতঃপর আফিমের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ফুল দ্বারা সজ্জিত দোলনাটার ধারে।আফিমকে আগে বসিয়ে তার কোলে বসে পরে মেয়েটা।দু’হাতে গলা জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-আরো একটা গুড নিউজ আছে।
ব্রু কুঁচকায় আফিম।জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কি?
নাফিয়া দোলনায় পরে থাকা একটা সাদা খাম নিজের হাতে তুলে নেয়।আফিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
-কলেজের শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগের পর এই প্রথম বেতন।
চোখমুখে খুশির ঝলক ফুটে ওঠে আফিমের।তৎক্ষনাৎ ছোট্ট এক চুমু বসায় নাফিয়ার ঠোঁটে।খাম খানা নিজের হাতে না নিয়ে বলে ওঠে,
-এটা প্রথম হাতে নেওয়ার অধিকার নুরি মার।এটা তুমি তাকেই দিও।
ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে নাফিয়ার। শক্ত করে আফিমের গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খায় ছেলেটার কপালে।বলে ওঠে,
-আই অ্যাম সো প্রাউড অফ ইউ মাই অ্যাডিকশন।
উত্তরে কিছু বলে না আফিম।শুধু মৃদু হাসে।নাফিয়া কপালে কপাল ঠেকায় আফিমের।চোখ বুঁজে বলে ওঠে,
-কতগুলো বছর আফিম,কত্তো গুলো বছর কেটে গেছে।আজ সত্যিই আমি প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি।সফল হয়েছি।নিজের অর্জিত সাফল্যে মাথা উঁচু করে কাল মাম্মির সামনে দাঁড়াতে পারবো আমি।
চোখমুখে প্রশান্তির ছাপ ফেলে আফিম বলে ওঠে,
-পারবা।

!!
সকাল হতেই ডিউটি শুরু হয় নুরানি বেগমের।এখন তো আর তিনি শুধু মাত্র গৃহিণী নন বরং একজন স্বাবলম্বী নারীও।সারাজীবন শুধু গৃহিণীর দায়িত্ব পালন করে আসায় তিনি রান্নার গুণ টাকে রপ্ত করেছেন সুনিপুণ ভাবে।আর তার এই গুণটাকে কাজে লাগিয়েই আফিম তাকে পথ দেখিয়েছে স্বাবলম্বী হওয়ার।
এখন তার ডিউটি থাকে সকাল সকাল রান্নাঘরে গিয়ে কয়েক পদের রান্না সম্পন্ন করে তা বক্সে ভরে প্যাক করে রাখা।দুপুর হতেই চলে আসে এক কিশোর এসব খাবার নিয়ে যেতে।এই খাবার গুলো নিয়ে যাওয়া হয় এক কোম্পানিতে কর্মরত সকল স্টাফদের লাঞ্চ হিসেবে।আর সেই কোম্পানি হতে মাস গেলে টাকা পান নুরানি বেগম।আর এসব কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো আফিম।
এভাবেই এ ক’বছর দিন পাড় করছেন নুরানি বেগম।প্রতিদিনের তার একই নিয়ম থাকায় আজও সকাল সকাল প্রবেশ করলেন রান্নাঘরে।ঠিক এমন সময়েই বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে তার।এ সময় কে আসতে পারে ভেবে ব্রু কুঁচকালেন তিনি।ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে গেলেন দরজার ধারে।
দরজা খুলতেই ভুত দেখার মতো চমকে গেলেন নুরানি বেগম।থমকে দাঁড়িয়ে রইলেন বেশ কয়েক সেকেন্ড। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার সেই ছোট্ট নুফি।উম,ছোট্ট না বড় নুফি।সেই সপ্তদশী কন্যা আজ বড় হয়ে গেছে ভীষণ।এই যে টলমলে চোখ ও ঠোঁটে হাসি নিয়ে শাড়ি পরিহিতা এক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।এই মানবীর চোখমুখে ফুটে আছে পরিপক্বতা।সে তো আর সেই আগের কিশোরী নেই।
এবার কেঁদে ফেললেন নুরানি বেগম।কত বড় হয়ে গেছে তার মেয়েটা! কেনো বড় হলো? কি দরকার ছিলো বড় হওয়ার?আগের মতোই থাকতে পারলো না যে বাইরে থেকে ঘরে ফিরলেই জড়িয়ে ধরতো নিজের মাম্মিকে!
নুরানি বেগমের এসব ভাবনার মাঝেই তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নাফিয়া।ধরা গলায় বলে উঠলো,
-কেঁদো না মাম্মি।তোমার কান্না সহ্য হয় না আমার।
নাফিয়ার এই দুই বাক্যই নুরানি বেগমের হৃদয় জুড়ে প্রশান্তি এনে দিতে যথেষ্ট ছিলো।মেয়েকে জড়িয়ে ধরেই কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি।মেয়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলে উঠলেন,
-এতো বড় কবে হলো আমার মেয়েটা? আমি তো কল্পনাও করিনি আমার ছোট্ট নুফি কয়েকটা বছরে এতো বড় যাবে,এতো বদলে যাবে!
-বদলাইনি,একটুও বদলাইনি।শুধু চেহারাতেই একটু পরিবর্তন এসেছে।
নাফিয়া কথাখানা বলে থামতেই আফিম বলে ওঠে,
-আর শরীরেও পরিবর্তন এসেছে।
আফিমের কথায় মা-মেয়ে উভয়ই তার দিকে তাকায়।নাফিয়া তার দিকে বড় বড় চোখে তাকাতেই চোখ মারে আফিম।এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে নুরানি বেগমকে।নুরানি বেগম ও একগাল হাসি নিয়ে জড়িয়ে ধরেন আফিমকে।যেনো তিনি খেয়ালই করেননি আফিমের বলা বাক্য খানা।
অতঃপর তিনজনই ঘরে গিয়ে বসে।কত কথা,কত গল্পের মাঝেও মেয়েকে আদর দিতে ভুলছেন না নুরানি বেগম।এতো বছরের জমানো সবটুকু ভালোবাসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।কথার মাঝে নাফিয়া তার প্রথম বেতনটাও হাতে তুলে দিলো তার মায়ের।গর্ভবোধে আবেগাপ্লুত হলেন নুরানি বেগম। চুমু আঁকলেন আফিম ও নাফিয়া উভয়ের কপালে।অতঃপর উঠে যেতে চাইলেন রান্নাঘরের দিকে।মেয়ে ও মেয়ে জামাই প্রথমবার এসেছে বাড়িতে,আপ্যায়নে তো আর কমতি রাখা যাবে না।
নুরানি বেগম উঠে যেতে চাইলেও তাকে আটকালো আফিম।বলে উঠলো,
-বসো,আরো একটা খবর দেওয়ার আছে তোমাকে।
আফিমের কথা মতো বসে পড়লেন নুরানি বেগম।উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলেন,
-কি খবর?
-এই আধ বুড়ো বয়সে তোমার মেয়ে আমাকে বাবা বানাতে চলছেন।
আফিমের এমন কথায় কাশি শুরু হয় নাফিয়ার।সে ভেবে পায় না কেউ নিজের শাশুড়ীকে এমন নির্লজ্জের মতো এ কথা কিভাবে বলে?
আফিমের কথায় অবাকের চরম শীর্ষে পৌঁছান নুরানি বেগম।চোখমুখে বিস্ময় ফুটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করে ওঠেন,
-মানে আমি নানিমা হতে যাচ্ছি?
-হু।
আফিমের সম্মতি পেয়ে আবারও আবেগি হয়ে উঠলেন নুরানি বেগম।এগিয়ে গেলেন মেয়ের ধারে।মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করতে লাগলেন নাফিয়ার শরীর,স্বাস্থ্যের খবর।সেই সাথে মেয়ে কি খেতে চায় সে সমন্ধেও নানান প্রশ্ন করতে আরম্ভ করেছেন তিনি।
মা-মেয়ের কথোপকথনের মাঝে আফিম বলে ওঠে,
-মানে সব প্রশ্ন মেয়ে কে?শুধু ও ই কি মা হচ্ছে? আমি বাবা হচ্ছি না?
হাসেন নুরানি বেগম।বলে ওঠেন,
-তা তুই ও বল শুনি,বাবা হওয়ার অনুভূতি কি?
-অসম্ভব সুন্দর অনুভূতি। তার সাথে একটা রিয়ালাইজেশন ও আছে।
-কি তা?
-এইযে বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করলে বুড়ো বয়সে বাবা হতে হয়।কেউ যদি সঠিক বয়সে বাবা হতে চায় তাইলে আমি একটাই উপদেশ দিবো,”সমবয়সী বিয়ে কর ভাই”।
আফিমের কথায় শব্দ করে হেসে ওঠেন নুরানি বেগম।এদিকে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে আরম্ভ করেছে নাফিয়া।ছেলেটা কি সব বলছে মায়ের সামনে!

!!
নাফিয়াকে বিশ্রাম নিতে বলে রান্নাঘরে প্রবেশ করেছেন নুরানি বেগম।নিজের মন মতো হরেক পদ রাঁধবেন তিনি আজ।এতো বছর পর মেয়ে ও মেয়ে-জামাই এর সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য হলো তার।আজ তার বুক ভরা সুখ ও আনন্দ।নিজের জীবনে যে অবহেলা, অত্যাচার তিনি সহ্য করেছেন তা তার মেয়েরা করুক এমনটা কখনো চাননি তিনি।আর তার এই দোয়া কবুল করেছেন স্রষ্টা।তার দুই মেয়েই স্বাবলম্বী।নাফিয়া ভাগ্য গুণে ভালো স্বামী পেলেও তার অপর মেয়ে হুমায়রার স্বামী এতোটাও ভালো নয়।ফলে জীবন যুদ্ধ টা কঠিন হুরায়রার জন্যে।তবে সে ভাসমান কোনো কীট নয় সমাজে।তার নিজের একটা পরিচয় আছে, নিজের খাওয়া-পড়ার খরচ সে নিজে চালাতে সক্ষম।তাই জন্যে জীবনটা অতোটাও দূর্বিষহ নয় তার।
নিজের মেয়েদের নিয়ে ভীষণ গর্ভবোধ করেন নুরানি বেগম।মনে মনে ভাবেন যদি সময় থাকতে সে একটু সাহস দেখাতে পারতো,চেষ্টা করতো স্বাবলম্বী হওয়ার তাহলে হয়তো তাকে ঐ অমানুষটার এতো অত্যাচার সহ্য করতে হতো না ওতো গুলো বছর।আর ভাগ্যের জোরে নাফিয়া,আফিমের কাছে গিয়ে পৌঁছিয়েছে। যদি কোনো খারাপ লোকের পাল্লায় পরতো তখন কি হতো মেয়েটার? আর যদি এমন কিছু হতো তাহলে কি কোনোদিন মাফ করতে পারতেন নুরানি বেগম নিজেকে?

বিশ্রাম নিতে মন চাইলো না নাফিয়ার।যে বাড়িতে তার শৈশব কেটেছে,কেটেছে কৈশোরের ও ৫-৬ টা বছর ঐ বাড়িতে এতো বছর পর পা ফেলেছে সে।ইচ্ছে করছে পুরো ঘরটা ঘুরে দেখতে ও সেই সাথে পুরোনো স্মৃতিচারণ করতে।
নিজের ইচ্ছেতে সায় দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।এগিয়ে গেলো ঘরের ভেতরের দিকে।তার পিছু পিছু আফিমও এগোলো।ঘরের ভেতরের দিকের কক্ষ গুলোর মধ্যে একটি কক্ষের দরজা খুলে রাখা।দরজা খোলা দেখে সেদিকেই আগে পা বাড়ালো নাফিয়া। কক্ষে উঁকি দিতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো সে।কক্ষে পাতানো বিছনাটায় শুয়ে আছে তার খালু তবে তার দু’টো হাতই নেই।দু’টো হাতই কনুই অব্দি কাটা।
ভয়ে দু’কদম পেছালো মেয়েটা।ধাক্কা খেলো আফিমের শক্তপোক্ত বক্ষের সাথে।আফিম দু’হাতে আগলে নিলো তাকে।মেয়েটার চেহারায় বিস্ময় ফুটে আছে আর চোখে প্রশ্ন।সে আফিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কিভাবে?
বাঁকা হাসে আফিম।নিজের স্ত্রীকে বক্ষমাঝে আবদ্ধ করে বলে ওঠে,
-আফিম ইবনানের হৃৎপিণ্ডে হাত দেওয়ার আগে যদি সতর্ক হতো তাহলে তো নিজের হাতগুলোকে এভাবে খোয়াতে হতো না তার।
কথাখানা কানে আসতেই যা বুঝার বুঝে নেয় নাফিয়া।মুহূর্তেই চোখ জলে টইটম্বুর হয়ে ওঠে তার।আফিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুঁজে নেয় নিজের চোখজোড়া।একটা মানুষ অপর একটা মানুষকে এতোটা কি করে ভালোবাসতে পারে ভাবতেই সে মনে মনে বলে ওঠে,
“একমাত্র আপনার দ্বারাই সম্ভব এভাবে কেউকে ভালোবাসা।এজন্যই আপনি এক অনন্য নেশা আফিম,এক ভয়ংকর নেশা।আপনি আমার নেশা আর আমার নেশা বড্ড নেশালো, আমার #আফিম_বড্ড_নেশালো”

সমাপ্ত ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here