#আসক্তি❤️#Mr_Arrogant_4
#পর্ব_১৬
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Mr_Arrogant_4
?
কিছুক্ষণ হলো বৃষ্টি থেমেছে কিন্তু বাইরের চারপাশ ভিজে মেচমেচে। বৃষ্টি থামতেই ফাঁকা রাস্তা যেন আবারো পথযাত্রী আর যানবাহনে ভরে গেছে। কালো মেঘ কেটে আকাশের বুকে সাদা রঙের মেঘ গুলো ভেসে যাচ্ছে। রোদের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়ছে যার ফলে ভেজা থাই গ্লাস গুলো রোদের তাপে শুকিয়ে আসছে।
জানলার সামনে বসে দু হাত ভাঁজ করে মাথা এলিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে নীল। সকাল সাড়ে দশটা এখন। রওশন অফিসে চলে গেছে অনেক আগেই। বাসায় এখন ও একা। রওশন চলে গেলেই বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যায়। ভালো লাগে না নীলের এভাবে একা বাসায় থাকতে। কিন্তু তবুও থাকতে হয়। বাড়ির কাজের মানুষেরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ওর সাথে কথা বলে সময় কাটানোর মতো কেউ নেই এখানে। বাইরে বের হওয়া তো দূরের কথা রওশন বাসা থেকে বের হওয়ার পর বাড়ির গেইটের সামনে যাওয়ারও অনুমতি নেই নীলের। যদিও নীল জানে এসব কিছু ওর সুরক্ষার জন্যই। কিন্তু তবুও এতো বড় বাড়িতে একা থাকা সহজ না। মাঝে মধ্যে বাড়িটাকে কিলার মতো মনে হয় নীলের, আর নিজেকে কিলায় বন্দি রাজকুমারের মতো।
এর মধ্যেই ওয়াশরুম থেকে আভি বেরিয়ে আসে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে ও। নীল মাথা কাত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে আভিকে। আভি চুল সেট করে পারফিউম স্প্রে করে নেয়। পারফিউমটা টেবিলে রেখে জ্যাকেটটা ঠিক করে পাশ ফিরতেই ও দেখে নীল তাকিয়ে আছে ওর দিকেই।
আভি বেডে বসে জুতোর লেস লাগাতে লাগাতে প্রশ্ন করে নীলকে,,,
আভিঃ মিস্টার ব্লু এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
নীলঃ আমার নাম নীল!( গাল ফুলিয়ে )
আভিঃ ওই একই। ব্লু অর্থ নীল আর নীল অর্থ ব্লু সেম মিনিং বাট ডিফারেন্ট স্পেলিং।
আভির এমন যুক্তিতে নীল রেগে গেলো কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। মুখ ঘুরিয়ে আবারো বাইরে মনোযোগ দিলো ও।
আভি নিলের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে তার দিকে তাকায়। নীল উদাস হয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
নীলকে এভাবে দেখে হঠাৎ স্থির হয়ে যায় ও। নিজের অতীতের কিছু অংশ চোখে ভেসে ওঠে আভির। নীল যেভাবে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক এভাবেই এক সময় আভি বসে থাকতো। ওর বাবা যখন ওকে রুমে বন্দি করে রাখতো দিনের পর দিন। অনেক সময় তো সপ্তাহ কেটে যেতো রুমে বন্দি অবস্থায়। কথা বলার মতো কেউই ছিল না। বদ্ধ ঘরে প্রচুর ভয় পেতো আভি, কান্না করতো ওর মায়ের জন্য। রাত হতেই নিজেকে কম্বলে মুড়িয়ে গুটিসুটি মেরে বিছানার কোনে বসে থাকতো। ভয়ঙ্কর অনুভূতি ছিল সে গুলো।
নীলের থেকে চোখ সরিয়ে নেয় আভি। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে ওর। বুক কাঁপছে, ভারি ভারি নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করছে ও। এ ভয়ংকর স্মৃতি গুলো ভুলে ছিল এতো বছর আভি হঠাৎ করেই আজ কিভাবে যেন সব চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
বলা হয় অনেক সময় নাকি আমাদের চোখের সামনে এমন কিছু দৃশ্য হুবহু মিলে যায় যেগুলো অতীতেও আমাদের সাথে ঘটেছিল। হয়তো এই মুহূর্তে আভির সাথেও তেমনটাই হয়েছে।
আভি শান্ত হয়ে উঠে নীলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নীল ওকে নিজের সামনে দেখে মাথা তুলে তাকায় তারপর বলে,,,
নীলঃ তুমি এখানে আসলে কেন?
আভিঃ আসলে আমি কিছু ভাবছিলাম।
নীলঃ কি?
আভিঃ ভাবছিলাম যে, রওশন ভাই তো অফিসে আর আমিও চলে যাচ্ছি তাহলে তুমি বাসায় থেকে কি করবে?
নীলঃ আমি? রওশন ভাইয়া আমাকে হোমওয়ার্ক দিয়ে গেছে সেগুলো করবো।
আভিঃ তারপর?
নীলঃ তারপর ভিডিও গেইম খেলবো।
আভিঃ উমম ওকে, তারপর?
নীলঃ তারপর আমি,,, হঠাৎ চুপ হয়ে যায় নীল। বলার মতো যেন কিছু পাচ্ছে না ও। নীলকে চুপ দেখে আভি বলতে শুরু করে,,,
আভিঃ তুমি চাইলে আমার সাথে আমার হেডকোয়ার্টার আসতে পারো।
হঠাৎ আভির কথায় হচকিয়ে যায় নীল। অবাক হয় ও।
ওর এমন বিস্মিত দৃষ্টি দেখে আভি পেছন দিক ঘুরে নিজের হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে বলে,,,
আভিঃ তোমার ইচ্ছে না থাকলে যেও না। আমিতো ভালোর জন্যই বলেছিলাম বাসায় থেকে বোর হবে তাই।
নীলঃ তুমি সত্যি আমাকে নিজের সাথে নিয়ে যাবে?( অবাক হয়ে )
আভিঃ আভি কখনো মিথ্যা বলে না। কিন্তু তুমি না যেতে চাইলে,,,
নীলঃ অবভিয়াসলি আমি যাব। ( খুশি হয়ে ) আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি।
নীল দ্রুত আলমারি থেকে ওর জামা কাপড় বের করে ওয়াশরুমে দৌড় দেয়।
নীল চলে যেতেই আভি একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,,
আভিঃ তুমি আমাকে আমার ছোট বেলা মনে করিয়ে দিলে নীল। যে স্মৃতি মনে করতে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি। ( দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ) তুমি কিছুটা আমার মতো। কিন্তু আমি সত্যিই চাইনা তোমার ছোট বেলাও আমার মতো কাটুক।
?
হাতে কিছু ফাইল নিয়ে রওশনের কেবিনে আসে সুবহা। কিন্তু রওশন নেই কেবিনে। আশেপাশে তাকিয়ে ভালো করে রওশনকে খুঁজেও পায় না ও।
সুবহাঃ রওশন কোথায় গেলেন? হয়তো বাইরে কোথাও গেছেন। এক কাজ করি পরে আসি।
সুবহা বের হতে নিলেই ওর হাত লেগে ডেস্ক থেকে কয়েকটা ফাইল পরে যায়। ঘাবড়ে যায় সুবহা। সাথে সাথে ফাইল গুলো ধরতে গিয়েও পারে না ও, যার ফল স্বরুপ সব গুলো ফ্লোরে পরে।
সুবহাঃ সব গন্ডগোল আমার হাতেই কেন হয়?( ভীতু স্বরে ) রওশন ফিরে আসার আগে তোল এগুলো সুবহা।
সুবহা দ্রুত ডেস্কের ওপাশে গিয়ে ফাইল গুলো তুলে রাখে। সেগুলো রেখে উঠতে গেলেই ও খেয়াল করে ডেস্কের একটা ড্রয়ার হাফ খোলা। আর সে ড্রয়ারে কালো রঙের কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। সুবহা জিনিসটা ভালো করে দেখার জন্য ড্রয়ারটা পুরো খুলতেই ঘাবড়ে যায়।
একটা ব’ন্দু’ক রাখা ওখানে। ব’ন্দু’ক’টা দেখে গলা শুকিয়ে যায় সুবহার। ও বুঝতে পারে না এমন একটা হা’তি’য়ার রওশনের কাছে কেন।
দ্রুত হাতে ড্রয়ারটা লাগিয়ে উঠে দাঁড়ায় ও। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে দ্রুত পায়ে বের হয়ে যায় সুবহা। কিন্তু দরজা খুলতেই রওশনের সামনে পরে ও। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় সুবহা রওশনের দিকে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো বড় ধরনের চুরি ধরা পড়েছে ওর।
রওশনঃ তুমি আমার কেবিনে কি করছিলে?
সুবহাঃ ড ডিজাইন গুলো দ দেখাতে এসেছিলাম!( কাঁপা কাঁপা কন্ঠে )
To be continued…..