মায়াপ্রপঞ্চ,৩৬,৩৭

0
736

#মায়াপ্রপঞ্চ,৩৬,৩৭
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৬]
_________________
শনশন বাতাসের শব্দে পরিবেশের গুমুট ভাব সহজেই যেন মিলিয়ে যায়।বালির রাস্তা মাড়িয়ে বাইক চলছে ধীর গতিতে।গতি বাড়াতেই বার বার বাইক পিছলে যায় তাই ধীর গতিতেই ছুটছে সুহাইল।আরমিন পেছনে মুগ্ধ হয়ে সবটা দেখছে,সালেহার কাছে নজর বন্দি থাকা কালিন এত সুন্দর ধরণি মোহ মায়া বুঝতে পেরেনি সে।তার ত্রস্তব্যস্ত দিন চলেছে প্রতিদিন।প্রতিদিনের অভ্যস কাটিয়ে সুহাইল যেন তাকে নতুন পৃথিবী উপহার দিয়েছে।তবে পৃথিবী তো নতুন নয় পুরোনো পৃথিবীটাকেই নতুন করে উপভোগ করছে সে।সারি সারি ঝাউ গাছের সামনে বিস্তার বালি এরপরেই ধরা দিলো সমুদ্র।নীলাম্বর এই পরিবেশের মায়া বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুন।বাইক রাইডার এবং মাফীর বাইকটা ধীরে ধীরে থেমে আসলো তাদের সাথে থেমে গেলো সুহাইলের বাইক।খানিকটা দূরেই দেখা গেলো বাশের মাচা।মাচার উপর ঝুলে আছে হরেক রকম মাছ।আরমিনের বুঝতে বাকি নেই এখানে শুঁটকি তৈরি করছে।সুহাইল এগিয়ে গেলো তাদের পিছুপিছু।নাকে উটকো গন্ধ আসতেই থমকে দাঁড়ায়।বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে গন্ধের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেলো।হাটুতে হাত ভাজ করে ঝুকে দাঁড়ায় সে।

– এই গন্ধ আমার সহ্য হয় না।সব উগড়ে আসছে আমার।মাফী জেনে শুনে আমাকে এখানে আনা ঠিক হয়নি তোর।

মুখের রঙ পালটে গেলো সুহাইলের।থমথমে মুখটায় রাগের আভাস।মাফী হাত দুটো টান টান করে আকাশের দিকে তুললো।অলস ভঙ্গিমায় বলে,

– শুঁটকি খাওয়াও একটা আর্ট যেটা সবাই পারে না।

– চুপ কর তুই, গন্ধ শুকলেই আমার মাথা ধরে।আমার অস্বস্তি ফিল হচ্ছে তোরা যা আমি দূরে দাড়ালাম।

– আরেহ মুখে রুমাল দিয়ে চল কিভাবে শুঁটকি তৈরি করা হয় তার প্রসেসটা দেখবি না?

– আমার প্রয়োজন নেই তোরা যা।

সুহাইল গেলো না বাকিরা এগিয়ে গেলো ‘শুঁটকি পল্লীর’ দিকে।মাচার উপর লইট্টা,কোরাল,রুপচাঁদা,ছু’রি লাক্কা,সুরমা,চিংড়ি ইত্যাদি মাছ শুকানোর কাজ চলছে।আর এই কাজে হাত লাগিয়েছে মহিলারা,এবং কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়ে।স্বল্প সংখ্যক পুরুষের অবস্থানো লক্ষ্য করা যায়।
.

বালির উপর বাইক আবারো ছুটলো ‘লেবুর চরের’ উদ্দেশ্য।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্বলিত একটি জায়গা লেবুর চর। কুয়াকাটার পূর্বে অবস্থিত লেবুর চর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লেবুর চরের মোট আয়তন ১০০০ একর। স্থানীয়ভাবে এটি নেম্বুর চর নামেও পরিচিত।মজার বিষয় এখানে কোন লেবু গাছ নেই।ধারণা করা হয় এখানে একটা সময় শাসন করতো রাখাইনের একটা লোক যার নাম ছিলো ‘নেম্বুর মাতব্বর’ তার নাম অনুসারেই এই স্থানের নাম রাখা হয়।অধুনিক ভাবে নাম রাখা হয় লেবুর চর।নিরিবিলি পরিবেশে সাগরের গর্জন অসাধারণ একটি মুহূর্তে উপভোগ করা যায় এখানে।

চলন্ত বাইক থেমে যায়।প্রায় শেষ বিকেলের মুহূর্তটায় পরিবেশের মায়ায় আটকে পড়েছে সকলেই।সুহাইল আরমিন এগিয়ে গেলো সমুদ্রের পাড়ে।মরা গাছের গুড়ির উপর দুজনেই বসলো।সুহাইল যে বারবার তাকে একান্ত ভাবে চাইছে আরমিন সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করে চলছে,এসেছে দল বেঁধে তারা থাকবেও দল বেঁধে কিন্তু বোকা মেয়ে বুঝলো না যেকোন নব দম্পত্তি চাইবে নির্জন একাকী পথটা শুধুমাত্র জীবন সঙ্গীর হাতে হাত রেখে কাটাতে।

– আমি ভেবেছিলাম তুমি কাঁদবে,তোমাকে সামলাতে আমার বেগ পেতে হবে কিন্তু তুমি দেখি মস্ত পল্টিবাজ সেদিন গাড়িতে যে আহাজারি করছিলে তার বিন্দু পরিমান পরিবার ছেড়ে আসার যন্ত্রণা এখন তোমার মাঝে নেই।

সুহাইলের খোঁচানো কথা শুনে নিগূঢ় চোখে চোখ রাখলো আরমিন।বাধা চুল গুলো বাতাদের গতিবেগের সাথে লাগামহীন উড়ে চলছে চোখে মুখে ছড়িয়ে আছে বোবা রাগের আভাস।

– আপনি কি চান আমি মনমরা থাকি?নাকি চান এই আপেক্ষিক সময়টা ন্যাসাৎ করে হাত পা গুটিয়ে কাঁদি?

সুহাইল চমৎকার ভাবে হাসলো।সমুদ্রের মৃদ্যু ঢেউ যেমন পাড়ে এসে ধাক্কা লেগে বিলুপ্ত হয়ে যায় তেমনি সুহাইলের হাসিতে আরমিনের রাগটা গলে অতলে হারিয়ে যায়।

– আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে এখানে এনেছি মরিয়ম আমি জানি বাড়িতে থাকলে তুমি মনমরা থাকবে।তাছাড়া বিয়ের পরের দিনি ঘুরত আসা কতটা সমীচীন?বাঙালি বিয়ে কত নিয়ম কানুন আছে এসব আমি এখন মানতে প্রস্তুত নই তোমার ফাইনাল এক্সামের পর বাকি সব হবে আবার বিয়ের আয়োজন হবে।

আরমিন সচকিতে তাকালো।সমুদ্রের দিকে চোখ বুলিয়ে মিহি স্বরে বলে,

– তবে আমায় আম্মার কাছে দিয়ে আসুন এক্সামের পর বাকিসব হবে।আমাদের এখন দূরত্বে থাকা ভালো নয় কী?

সুহাইল আক্রোশ নিয়ে তাকালো।আরমিনের হাতটা ধরলো খপ করে।হাতটা ঠোঁটের কাছে এনে এলোমেলো ভাবে সযত্নে ওষ্ঠাধর স্পর্শ করলো।আরমিন শুধু নিমীলিত চেয়ে রইলো।নিরিবিলি শান্ত নির্জন পরিবেশ। শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য আর নির্জনতাই চোখে পড়ছে আরমিনের।মাফী রাত্রি তারা বাইক নিয়ে দূরে কোথায় গেছে হয়তো।আরমিন আর সুহাইল মানুষের কোলাহল থেকে বেশ দূরে।চারিদিকে সমুদ্রের গর্জন,বাতাসের শনশন,পাখিদের কলতন শব্দ ছাড়া টু শব্দ কানে আসছে না তার।পরিবেশের সাথে বেখাপ্পা সুহাইলের পা-গ-লামো হজম করছে নির্বিঘ্নে।

– যদি পারতাম তোমায় নিয়ে আমি আরো আগেই ফিরে যেতাম আমার ব্যস্ত শহরে।যতদিন এখানে থাকবো ততদিন আমার অস্থিরতা কমবে না।

– কিসের অস্থিরতা?

– দুঃখিত বলতে পারবো না।

আরমিন চমকালো খা খা করছে বুকের ভেতর।কি এমন চলছে সুহাইলের মনে যে আরমিনকে বলবে না।গাছের গুড়ি থেকে নেমে পড়লো সুহাইল।ঝটপট ক্রোড়ে তুলে নিলো আরমিনকে।প্রসন্ন হাসলো ছেলেটা আরমিন ব্যতিব্যস্ত হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে,

– কী করছেন সুহাইল?

– কিছু না।

এগিয়ে গেলো সমুদ্রের পাড়ে ধীরে ধীরে পানি এসে ঝাপটা দেয় সুহাইলের পায়ে।আস্তে ধীরে আরমিন কোল থেকে নামিয়ে পেছন থেকে জড়িয় ধরে।নীল আকাশটা তার রঙ পালটে নেয়। ধীরে ধীরে লাল,কমলা,হলুদ রঙে সাজিয়ে তুলে নিজেকে।এর মাঝে রঙতুলির শিল্পি যেন এক থাবা বেগুনি রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে আনাচে-কানাচে। লাল,হলুদ,কমলার মাঝে বেগুনি রঙের আভাস বিমুগ্ধ করলো পরিবেশ।সূর্যটা লাল হয়ে ডুবে যাবে কিছুক্ষণ পর।আরমিন বাঁকা তাকালো পাশে, মাফী আর রাত্রি একটি ম’রা গাছের গুড়ির উপর বসে আছে।তাদের দৃষ্টিও সূর্যটার দিকে।তারা হঠাৎ কখন এলো জানা নেই আরমিনের।সূর্যটা পশ্চিমাকাশ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।সূর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে সমুদ্রের পানির রঙটাও যেন পালটে গেছে।সূর্যের রশ্মি ঝিকিমিকি খেলছে সমুদ্রের বুকে।সে কী অপুর্ব দৃশ্য!একবার মনে হলো সোনালী আবার মনে হলো পানিটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।সূর্য অনেকটা সাগরের কাছাকাছি চলে এসেছে।একটু বাদে তা পানিতে তলিয়ে যাবে।আরমিন প্রায় দশ মিনিট অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখলো। অদ্ভুদ দৃশ্য!প্রখর তেজ যুক্ত সূর্যটাও যেন দিন শেষে পরাস্ত হলো।সূর্যটি একটু একটু করে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যত তলিয়ে যেতে থাকলো আরমিনের মনটাও হাহাকার করে উঠলো।জীবন থেকে তার এত সুন্দর একটি দিনের অবসান ঘটছে।আবার কবে ফিরে আসবে এই দিন,আসবে কী?
পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্তের সোনালি আভা ছড়িয়ে সমুদ্রের বুকে আঁচড়ে নেমে গেলো সূর্যটা ধীরে ধীরে এই দৃশ্যটা অপার্থিব।আরমিন অনুভব করলো গালে কেউ সযত্নে আদুরে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়েছে।সংকোচ ভেদ করে দু হাত রেখেছে মেদহীন পেটে।সুহাইল নিরন্তরাল সূর্যের দিকে তাকালো স্বগোতক্তির স্বরে আরমিনকে বলে,

– এই দৃশ্য আমরা আবার দেখবো ভবিষ্যতে তুমি আমি আর আমাদের……

– আমাদের?

– যে আমাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণ করতে আসবে তাকে নিয়ে।আমাদের সন্তান।

আরমিন প্রসন্ন হাসলো।লজ্জায় রাঙিয়ে উঠলো তার মুখ।সুহাইলের এই কথায় যেন যুগের পর যুগ বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগিয়ে দিলো।রাত্রি হুড়োহুড়ি করে এগিয়ে আসছে তাদের দিকে আদেশ অনুসারে চিৎকার দিয়ে বলে,

– প্লিজ নড়ো না তোমরা তোমাদের একটা ছবি তুলে দি।
_
বাম হাতে ক্যানুলার সুইটা বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছে পবনকে।তার সামনে বসে আছে দুই বন্ধু সায়মন,রিজু।এতক্ষণ নাহার বেগম পবনের পাশেই ছিল।রিজু,এবং সায়মন আশ্বাস দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।সুহাইলের দৃষ্টি বাইরে।অন্ধকারে ছেঁয়ে থাকা আকাশটা তার বড্ড ভালো লাগছে।

– আমাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়বে কবে?

– আগামীকাল হয়তো।

হতাশার সুরে কথাটি বললো রিজু।সায়মন পাশে বসেই পবনকে পর্যবেক্ষণ করছে।রুষ্ট-পুষ্ট ছেলেটির এখন হাড্ডিসার অবস্থা।আরমিনের কথা ভেবে তার নিজেরি এখন রাগ লাগে।অবশ্য মেয়েটার দোষ নেই মেয়েটাও বা কি করবে?সবাই পরিস্থিতির কাছে হেরে যায়।

– পবন চল আমরা আবার ঘুরতে যাবো কোথায় যাবি বল?প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলে তোর মন এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।

– আপাতত আমার কাছে আমার রুমটাই ভালো থাকার স্থান কোথাও যাবো না আমি।

নিগূঢ় শ্বাস ছাড়লো বাকি দুজন।ভেতরা হতাশার হাহাকার করছে।

– এই যে সন্ধ্যার পর সময়টাতে আমি আরমিনকে পড়াতাম মেয়েটা পড়তেই চাইতো না কত বকা দিয়েছি।ইসস যদি যানতাম চলে যাবে একটুও বকতাম না।

পবনেই কথায় হতবিহ্বল চোখে তাকালো বন্ধুরা।নিজের এই বেহাল দশা করেও একটা মেয়ের জন্য এখনো মায়া কাটছে না।স্মৃতি বড্ড খারাপ,শুধু পোড়ায়।

– পবন প্লিজ মুভ অন কর।

পবন নেতিবাচক মাথা নাড়ালো ঠোঁট কুচকে কান্না দমন করলো।অথচ লাভ কী হলো?দু’চোখের কার্নিশ বেয়ে কোনাকুনি ভাবে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা জল।রিজু সযত্নে মুছে দিলো পবনের চোখের জল।পবনের চাচা আছীমের কাছ থেকে জেনেছে, ডাক্তার বলেছে পবন মানসিক ভাবে বড্ড দুর্বল হয়ে গেছে।যেকোন সময় অঘটন গঠিয়ে ফেলতে দু’বার ভাববে না।তাকে রাখতে হবে সবার নজরে।পবনের শিশুসুলভ কান্নার আচরনে সায়মন নিশ্বাস ছাড়লো।

– পবন তুই আমার বন্ধুর থেকেও বেশি ভাই। তোর এই অবস্থা আমাদের কত পোড়ায় বুঝিস না?আন্টি আংকেলে কথা ভাব।

পবন প্রত্যুত্তর করলো না।ডান হাতের সাহায্য পাশে থাকা ফোনটা নিয়ে আরমিনের ছবি দেখলো।ছবিতে হাস্যজ্বল আরমিনের মুখ ভেসে আছে মেয়েটার হাতে ফুটন্ত লাল শাপলা।গ্যালারি থেকে প্রবেশ করলো ফে’স’বু’কে।ফেসব’বুক স্ক্রুল করতে সামনে এলো সুহাইলের আইডি।ছেলেটা প্রফাইল চেঞ্জ করেছে।অস্তমান সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পেছন থেকে আরমিনকে জড়িয়ে রেখেছে সুহাইল।একপাশ থেকে আরমিনের মুখটা বেশ ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে।ক্যাপশনে লেখা আছে, “Finally she is mine”। ব্যথিত মনে এবার ক্রোধের সঞ্চার হলো পবনের।দৈত্য রূপি রাগটা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা শরীরে।সুহাইলের বন্ধনীতে আরমিন কিছুতেই মেনে নিত পারছে না সে।বুঝদার ছেলেটা যেন অবুঝ হয়ে উঠেছে।নেশার ঝোঁক জেগেছে মনে।ডান হাতের সাহায্য বাম হাতের ক্যানুলাটা এক টানে ছিড়ে খুলে নেয়।অসাবধানতার ফলে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে লাহমায়।গায়ের বোতাম খোলা শার্টটায় দ্রুত গতিতে বোতাম লাগায়। বিছানা থেকে ঝটপট উঠে মোবাইল পকেটে পুরে নেয়।যেতে নিলে তার দু’পাশ থেকে দু’হাত চেপে ধরে বন্ধুরা।

– শা-লা পাগল হয়ে গেলি নাকি?ক্যানুলা ছিড়লি কেন?

রিজুর কথা কানে তুললো না সে।নিজেকে ছাড়িয়ে হাটতে থাকে দ্রুত গতিকে।রিজুর দিকে তাকিয়ে গমগম সুরে বলে,

– হাসপাতালের বিল রেডি করতে বল আমি গেলাম।বাড়ি যাবো।

সায়মন এগিয়ে গেলো তার পিছুপিছু।সন্দিহান কন্ঠে বলে,

– সত্যি বাড়ি যাবি?আমার বাইক আছে পৌঁছে দি?
– চল।

পবন আবারো হাটা শুরু করে রিজু দ্রুত ফোন লাগায় জাবিরকে।
.
আমীনার সাথে বাক্যালাপে ব্যস্ত সালেহা।পবনের ছন্নছাড়ার কারন যে আরমিন সেটা তিনি জানেন না।শুধু তিনি না বাড়ির বড় সদস্যরা ছাড়া কেউ জানে না সম্পূর্ণ বিষয়টা।এই বিষয়টা লুকিয়ে গেছেন নাহার বেগম।আমীনা আরমিনের বিষয়ে খুটিনাটি জিজ্ঞেস করছিলো সালেহাকে সালেহাও উৎসাহ নিয়ে আরমিনের কথা বলছে।কীভাবে সুহাইলের সাথে ঘুরতে গেছে,কি দেখেছে এই সেই আলাপচারিতা।পবন তৎক্ষনাৎ বাড়ি ফেরে বসার ঘরে সালেহার দু’চারটে কথা তার কানেও গেছে।রোষানলে জ্বলতে থাকা রাগটা যেন আরো হাজারগুনে বেড়ে গেলো।

– এই বাড়িতে কি করছেন?

পবনকে দেখে চমকে তাকায় আমীনা।সে তো এখন হাসপাতালে থাকার কথা।পবনের দৃষ্টি সালেহার উপর আবব্ধ।

– কথা বলেন না কেন?এই বাড়িতে কি করছেন?মেয়েকে তো বড় লোক ঘরে বিয়ে দিয়েছেন আপনার তো এখন উচিত না এই বাড়িতে আসা।আপনি থাকবেন দামি ফ্লাটে এসির হাওয়া গায়ে লাগিয়ে চলবেন।

পবনের কথায় মুখটা থমথমে হয়ে যায় সালেহার।কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছেন না তিনি।

– এসব কি বলো পবন?আল্লাহ যার নসিবে যাকে রাখছে সে তার কাছেই যাবে।

– আপনি লোভী ভীষণ লোভী মহিলা।এর আগে বয়স্ক বড়লোক ছেলের সাথে আরমিনের বিয়ে ঠিক করেছেন।আর এখনো একই কাজ করলেন।কোথাকার কোন আত্মীয় এলো আর বড়লোক দেখে নাচতে নাচতে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন।লজ্জা থাকা দরকার ছিহহ।

– পবন এসব কি কথা।

আমীনার কথা কানে নিলো না পবন।সালেহার দিকে তর্জনির আঙুল তুলে শাসানো ভঙ্গিমায় বলে,

– আপনার মেয়ে তো সুহাইল খন্দকারের নখের যোগ্য না।কি করে বিয়ে হলো তবে?যাদু-মন্ত্র করেছেন বুঝি?অবশ্য এসব ছেলেদের বিশ্বাস নেই কত বড়লোক উঠতে বসতে তাদের কাছে মেয়ে থাকে।দিন একজন রাতে আরেকজন।দেশে এসে এখন আরমিনকে কবজা করলো।আপনার মেয়ের ভাগ্য না আবার আপনার মতো হয়।কোলে সন্তান ধরিয়ে সুহাইল উড়াল দেবে তার দেশে।

অপমানে সালেহার মুখটা নুইয়ে গেলো।হাটুর বয়সি ছেলে কি না এত বাজে ভাবে অপমান করেছে।এমন দিন দেখার আগে তার মৃত্যু শ্রেয় ছিলো।আমীনা সালেহার বাহুতে হাত রাখলো একের পর এক স্বান্তনার বানী দিলো সালেহাকে কিন্তু কোন কথায় সালেহার কানে গেলো না।পবনের প্রতিটি কথা তার কানে বার বার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।জাবির চিৎকার শুনে ছুটে এলেন।পবনের কথা শুনে লজ্জায় মিহিয়ে গেলেন তিনি।সুশিক্ষা দিতে পারলো না ছেলেকে,পবনের বাবা হিসেবে একটা সময় গর্ববোধ করলেও আজ তিনি লজ্জিত।সালেহা আর দাঁড়াতে পারছেনা।দু’পা বিবশ হয়ে আসছে দ্রুত বাড়িতে ফিরতে হবে তাকে।দরজার মুখোমুখি হতে পর্দার আড়ালে দেখতে পেলেন জাবিরকে।জাবির চেয়ে আছে স্থির চোখে।

– সালেহা কোথাও যাবে না দাঁড়াও।
জাবির এগিয়ে গেলো পবনের সামনে।আদেশ সুরে বলে,

– মাফ চাও সালেহার পা ধরে।কাকে কি বলছো ভুলে গেছো তুমি।

– মাফ চাইবার মতো আমি কোন কাজ করিনি।

সালেহা এগিয়ে এলো।ততক্ষণে বসার ঘরে উপস্থিত হয়ে যায় নাহার বেগম সহ বাড়ির বাকি সদস্যরা।সালেহা জাবিরের মুখোমুখি মানুষটার রক্তলাল চোখ বুঝিয়ে দিচ্ছে আজ তিনি কতটা আঘাত পেয়েছে।

– জানেন ভাইজান এইসব কথা শোনার ভয়ে আমি সুহাইলের সাথে বিয়ে ভাঙ্গতে চেয়েছি।কেউ যেন বলতে না পারে সালেহা লোভী।লোভের পাল্লায় পড়ে অতীত ভুলেছে।আর আজ তাই হলো।

জাবির প্রত্যুত্তর করলো না।আবারো নির্দেশ দিলো পবনকে।

– পবন তুমি উন্মাদ হয়ে গেছো আমি মেনে নিলাম।তুমি নিজের শরীরকে আঘাত করেছো মেনে নিলাম।তুমি আমাকে তোমার আম্মাকে উঁচু নিচু ভাবে কথা বলছো তাও মেনে নিলা।কিন্তু তুমি কোন সাহসে সালেহাকে অপমান করলে?আরমিনের বিয়ে সালেহা নয় আমি দিয়েছি।এক্ষুনি মাফ চাইবে সালেহার কাছে যাও মাফ চাও।

– কীসের মাফ?আমি ভুল কিছু বলিনি।হিসেবে কম কথাই শুনিয়েছি এই মহিলাকে।লোভী মহিলা।

জাবির এত বছরেও যা করেননি এবার তা করে বসলেন পবনের গালে শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে চ-ড় বসালেন।অসুস্থ শরীরে দু’দন্ড শক্তি ছিলো না ছেলেটার ফলে জাবিরের একটা চ-ড় সইতে পারলো না সে।হেলিয়ে গেলো কিছুটা দূরে।

– মাফ চাও পবন।

– মে-রে ফেলো চাইবো না মাফ।তোমরা সবাই ষড়যন্ত্র করেছো আমার ভালো থাকা কেড়ে নিয়েছো আমাকে পা-গ-ল বানিয়ে দিয়েছো।আমার জীবনের অধঃপতনের জন্য তোমরা সবাই দায়ী।

জাবির মাতবর রেগে গেছেন।আমীনা এগিয়ে পবনকে ধরতে তিনি রক্তিম চোখে আমিনাকে সরতে ইশারা করে।ভাসুরের রাগ দেখে ভয়ে সরে আসে সে।নাহার বেগম এগিয়ে আসতে নিলে জাবির বাধা প্রয়োগ করে।ঠিক কতটা বছর পর তিনি আজ স্বামীকে রাগতে দেখেছেন মনে পড়ছে না তার।বসার ঘরে তাড়াহুড়ো করে কিছু খুঁজছিলো জাবির কিন্তু না পেয়ে বাইরে চলে যান।কয়েক সেকেন্ডে বাইরের উঠন থেকে চ্যালাকাঠ এনে পবনকে মা-রতে থাকে।সবাই বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালায়।চেষ্টা চালান সালেহাও পবনকে বুকের ভেতর আগলে নেন তিনি এতে বেশ কয়েক ঘা তার গায়েও লাগে।নাহার বেগমের আহাজারি ভারী করে দেয় পুরো বাড়িটা।জাবিরের শক্তির সাথে আজ কেউ পারছেন না।তিনি লাগাতার মেরে চলছেন পবনকে।বাড়ির বাচ্চারা শুধু চেয়ে চেয়ে চোখের জল ফেলছে এছাড়া তাদের ভূমিকা নেই।আছীম সবে বাড়িতে এসেছে এমন পরিস্থিতিতে হতবিহ্বল তিনি নিজেও।আছীমের বলিষ্ঠ দেহ অবশেষে জাবিরকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।ততক্ষণে পবন চেতনাহীন অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে আছে।হালকা গোলাপী রঙের শার্টটায় রক্তেরঞ্জিত অবস্থা।বাড়ির মহিলাদের আহাজারিতে প্রতিবেশীরা একে একে ভিড় জমায় কিন্তু বিশাল লোহার গেট মাড়িয়ে কেউ বাড়ির ভেতর আসতে পারলো না।কেননা গেট ছিলো বন্ধ।
#চলবে

#মায়াপ্রপঞ্চ
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৭]
_________________
– আমীনা তুমি এত রাতে হাসপাতাল থেকে এলে কেন?

– রাত দিন ভাবার সময় নাই আমাদের ভাইজান পবনের অবস্থা খারাপ।

আমীনার ব্যতিব্যস্ত দেখে চোখ তুলে তাকালেন জাবির।তিনি বসে ছিলেন মাঝ উঠেনে।অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে কত কথা ভাবছেন।বাড়ির বাচ্চাগুলোর ঘুম নেই সবাই এক রুমে গুটিয়ে আছে থেমে থেমে তাদেরো কান্নার শব্দে বাড়ির নিরবতা মাড়িয়ে দেয়।ইতোমধ্যে এলাকা থৈ থৈ অবস্থা জাবির মাতবর নিজের ছেলেকে আজ জখম করেছে।কেউ কেউ মুখ বিগড়ে নিন্দার সুরে বলে,’উহ দেখলাম তো বড় পোলা নিয়া কত গর্ব, অহংকার এখন হেই পোলার গায়ে হাত তুলছে কেন?নিশ্চই পোলা বাপের গলায় ছু-রি দিসে’ আবার কেউ বা বিষয়টা শুনে ধিক্কার দিলেন জাবির মাতবরের কাছে এমন আচরণ কখনোই আশা করেননি তারা।যদিও মাতবর পরিবারের ব্যক্তিগত বিষয় তবুও এলাকার মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।আমীনা গায়ে থাকা বোরকার উপরের নেকাব তুলে বসলেন জাবিরের মুখোমুখি।জাবির তার দিকে তাকালো।ব্যক্তিগত ভাবে আমীনাকে তিনি বড্ড স্নেহ করেন।মেয়েটার বিচার-বুদ্ধি দুরন্ত।

– আমীনা তুমি জানো তোমায় আমি স্নেহ করি।বিশ্বাস করি,আর বিশ্বাস করি বলেই এই পরিবারের বউ হিসেবে এনেছি।

– জি ভাইজান।

– আজকের কাজটা আমি বেশ অন্যয় করে ফেলেছি।এই বিষয়ে তোমার মতামত কী?

আমীনা চোখ তুলে তাকালো সে যেন গোলকধাঁধার সমীকরণে পড়ে গেছে।তবুও নির্ভয়ে সবটা বলবে,আমীনা যতটুকু বুঝে যতটুকু ভাবে সবটা কখনো চেপে রাখে না উগড়ে দেওয়া তার স্বভাব।

– শুরু থেকে ভাবতে গেলে আপনার কিংবা পবনের কারো দোষ নেই।দোষ ভাবীর।ভাবী তার গো ধরে আজ বিষয়টা এত দূর এনেছেন।আপনি আর পবন তো পরিস্থিতির শিকার।

জাবির চোখ বন্ধ করে হাতাশার শ্বাস ছাড়লো।তিনিও মনে মনে নাহার বেগমকে ধিক্কার ছুড়ছে।

– ভাবীরো দোষ নেই তিনিও তার ইচ্ছা আহ্লাদ পবনের উপর প্রয়োগ করতে চেয়েছেন।কিন্তু পবনের জন্য সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটা ভাবী বুঝে নাই।আমাদের পবন হাস্যরসের ছেলে,এলাকার পরিবারের কারো সঙ্গে আজ এত বছরেও টু’শব্দ হয়নি আর আজ সেই ছেলে ম-রণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে।

আমীনা শেষ কথা বলে কেঁদেই দিলো।জাবির নিজেকে স্থির রেখেছেন।আমীনার মাথায় হাত বুলিয়ে দৃঢ় স্বরে বলে,

– এবার বলো পবনেই কি উচিত হয়েছে সালেহাকে এতটা কথা বলার?সালেহার কোন দোষ নেই।যা করেছি সবটা আমি করেছি।তুমি জানো তোমার ভাবীর কাছে আমি আগেই আরমিনকে এই বাড়ির বউ হিসেবে প্রস্তাব রাখি।কিন্তু সে আমায় নাকচ করেছে ইশারা ইঙ্গিত বুঝিয়েছে আরমিনরা আমাদের আশ্রিতার মতো তাদের যোগ্যতা নাই এই বাড়ির সঙ্গে আত্মীয়তা করার।আমি থেমে গেছিলাম সুহাইল ছেলেটাকে দেখেছো সে নিজেই আমার কাছে আরমিনকে বিয়ে করার প্রস্তাব রেখেছে।সালেহার বাড়ির পাশে যে বাড়িটা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ সুহাইলের টাকায় নির্মাণ করা।আর এই বাড়ি কার জন্য জানো?

– কার জন্য?

– সালেহার জন্য।সে যেন ভবিষ্যতে কষ্টে না থাকে তার জন্য।কায়িমের চিকিৎসার সব ব্যবস্থাও করেছিলো সে কিন্তু তার আগেই মরণ হলো তার।আর সালেহার নামে যে ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে সেখানে এই পর্যন্ত লাখ খানেক টাকা এসে জমা হয়েছে ভবিষ্যতে আরো হবে।বারেক যা অন্যয় করেছে তার ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব সুহাইল নিয়েছে।এসব কথা কেউ জানে না আমি শুধু তোমাকেই বললাম।এবার বলো এতকিছুর পর সুহাইলের সাথে বিয়ে ঠিক করে আমি কি ভুল করেছি?ভেসে যাওয়া পরিবার বাঁচবে সাথে আরমিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত।এবার বলো এই বিয়েতে কি সালেহার হাত ছিলো?আর বিয়েটার ব্যবস্থা করে আমি কি ভুল করেছি?

– একদমি না।

– এত কিছুর পর আমি কল্পনা করিনি আমার ছেলেটা এত পা;গল হবে।বাবা হিসেবে আমি ব্যর্থ।এতদিন দৈর্য্য দিয়ে নিজের সম্মান ধরে রেখেছি,ছেলে মেয়ে মানুষ করতে লড়াই করেছি আজ আমি ব্যর্থ ছেলেটাকে এইভাবে আঘাত দিয়েছি ভাবতেই কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।আজকে আমি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিলাম, শ-য়-তানের পাল্লায় পড়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।

জাবির কিছুক্ষণ চেয়েছিলো আকাশের দিকে।তার চোখ থেকে গড়গড়িয়ে পানি ঝরছে।উঠনের কোনে সোডিয়ামের লাইটের আলোতে তা স্পষ্ট দেখতে পেলো আমীনা।

– পবন আমার আশার আলো,আমার কলিজা,আমার কলিজার ছেলেকে আমি ক্ষতবিক্ষত করেছি আল্লাহ আমার হাত দুটো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিক।দু’হাত চিরদিনের জন্য অবশ করে দিক।আমি আমার কলিজার ছেলেকে আঘাত দিয়ে কি খুশিতে আছি?তোমার কি মনে হয় আমীনা?

জাবির মাতবর যেন শিশু হয়ে গেছেন।তার শিশুসুলভ প্রশ্নে মাথা নুইয়ে নেয় আমীনা।অবাধ অশ্রু ঝরছে চোখ থেকে।জাবির হাটুতে হাত ভর করে মাথা চেপে কেঁদে উঠে।বিয়ের পর কোন দিন জাবিরকে ভেঙ্গে পড়তে দেখেনি আমীনা আর সেই লোক আজ কাঁদছে তাও হাউমাউ অনুকারে।রাগের আজ্ঞাধীন হয়ে বাবা-মা সন্তানকে আঘাত করে কিন্তু যখন বাস্তবতায় ফেরে দি’গুন কষ্ট বুকে নিয়ে ঘটনা সামলে নেন।

– ভাইজান আপনি ভেঙ্গে পইড়েন না।আল্লাহ সব ঠিক করে দেবে।

– পবনের কি অবস্থা?

– জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু ব্যথায় আবারো মূর্ছা গেছে।ওর বন্ধুরাও আছে সবাই হাসপাতালেই। আমাকে ভাবী পাঠিয়ে দিলো বাড়িতে ছেলে-মেয়েগুলো একা তাই।

– যাও তুমি রুমে যাও।

আমীনা দ্রুত পায়ে হেটে চলে যায়।জাবির চোখ মুছে দোতলার ঘরের দিকে যায়।পবনের রুমটা পড়ে আছে এলোমেলো হয়ে।বিছানার উপর অবহেলিত ভাবে পড়ে আছে একটি টি-শার্ট।জাবির রুমের দরজা বন্ধ করলেন পবনের টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠেন তৎক্ষণাৎ।

– আমার আব্বা,আমার কলিজারে জীবনে কোনদিন এভাবে আঘাত দি নাই।আমার আব্বারে আল্লাহ আপনি সুস্থ কইরা দেন।তার সব পা-গ-লামি সারাইয়া দেন।আগের মতো বাঁচতে দেন তারে।আমার রূহের বিনিময়ে আল্লাহ তারে সুস্থ কইরা দেন।
_
বাইরে অন্ধকার ভোর হতে এখনো অনেকটা সময় বাকি আরমিনরা চার বন্ধু রিসোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন তাদের রাইডার আসবে।আজকের উদ্দেশ্য সূর্য উদয় দেখবে তারা।সূর্য উদয় দেখার জন্য তারা যাবে ‘কাউয়ার চর’।কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের রাইডার এসে উপস্থিত হয়। পুনরায় আগের মতো তিনটে বাইক নিয়ে ছুটে চলে তারা।অন্ধকারের মাঝে মৃদুমন্দ বাতাসে গা কাঁটা দিয়ে উঠে আরমিনে।ঘুমঘুম ভাব এখনো চোখ থেকে কাটেনি।বেশ কিছুক্ষণ জার্নি শেষে অবশেষে কাউয়ার চরে উপস্থিত হয় তারা।কি সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশ।পুরো আকাশটা ধীরে ধীরে সাদা হয়ে উঠেছে।তবে সূর্যের আলো ছড়ালেও কুসুমের ন্যায় সূর্যটা এখনো চোখে পড়েনি তাদের।
কিছুটা সময় পর আকাশ একেবারে ফর্সা হয়ে গেল।পূর্ব আকাশে সূর্য রক্তিম আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। আকাশটা এক রকম টকটকে লাল হয়ে আছে যার সাথে যেন কমলা রঙ কেউ ছড়িয়ে দিয়েচি আনাচে-কানাচে। সূর্যের দেখা মিলতে আর বেশি দেরি নেই।একটু একটু করে সূর্যটা পানির ভেতর থেকে মূতিমার্ন হয়ে উঠছে। চমৎকার একটি দৃশ্য। কিন্তু সেটি খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। পুরো সূর্যটা গোলাকার হয়ে দেখা দিতে এক মিনিট সময়ও নিল না।নিশ্চুপ কয়েক মিনিট সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলো চারজনেই।এমন রক্তিম সূর্যের দেখা খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে। সূর্য যখন পানি থেকে কয়েক ফুট ওপরে উঠে গেল তখন তার তেজ বেড়ে যেতে থাকলো।প্রখত তাপে চোখ কুচকে এলো সবার।সূর্যাস্ত যত সময় ধরে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয়
ওভাবে সম্ভব নয়। অস্তমান সূর্যের দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকানো যায়, কিন্তু উদয়মান সূর্য ওইটুকু সময় দিতে নারাজ সে যেন তার দাপট দেখাতে খুব বেশি খুশি।সকালের শিশু সূর্য যখন আলো ঢেলে দিল পুরো দৃশ্যটা যেন ঝলমলে হয়ে উঠলো।সমুদ্রের পানির রঙটা আবার পালটে গেলোসোনা রোদে ঝিকিমিকি করছে সারা সমুদ্র।যেন পুরো সমুদ্র স্বনের জলে ডুবে আছে।
চারজনেই অল্প পানিতে এগিয়ে গেলো পা ভেজালো মনের সুখে।আরমিন এখনো সূর্যটা দেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

– মাশাআল্লাহ কি অপূর্ব আল্লাহর সৃষ্টি!

স্বগোতক্তি স্বরে কথাটা বললো আরমিন।আরমিনের বিমুগ্ধতা দেখে উচ্ছ্বাসিত হলো মাফী।দু’হাত টান টান করে আড়মোড়া ভাঙ্গিয়ে বলে,

– এমন সমুদ্র সৈকত বিশ্বে কোথাও পাবে না। জাপানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটো একসঙ্গে দেখা যায়। তাও এক জায়গায় নয়।সূর্যোদয়ের জায়গা থেকে সূর্যাস্ত দেখতে গেলে সেখানে তোমাকে বায়ান্ন কিলোমিটার যেতে হবে। কিন্তু কুয়াকাটা ব্যতিক্রম। মাত্র আড়াই কিলোমিটারের ব্যবধানে দুটো জিনিস একই জায়গা থেকে দেখা যায়।

আরমিন গোলগোল চোখে তাকালো।উচ্ছ্বসিত হলো আরো দি’গুন।সুহাইল তার আনন্দ দেখছে; পুরো ভ্রমণে সবাই উপভোগ করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।আর সুহাইল উপভোগ করেছে আরমিনের উচ্ছ্বাস।
রাত্রির চোখে এখনো ঘুম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মোবাইল ফোনটা উঁচুতে নিয়ে কড়া নির্দেশে বলে,

– আসো সবাই মিলে একটা সেলফি নি।ছবি তুলতে গেলেই তোমরা এদিক সেদিক চলে যাও।

বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ তারা ছবি তুললো।তাদের পেটের খিদায় চৌচির অবস্থা।সুহাইল তাড়া দেখালো আশেপাশে কোন হোটেল থেকে সকালের নাস্তা সারতে।কিন্তু তাতে বাদ সাধে মাফী সে এসেছে যখন ঝাউবন দেখে তারপর নাস্তা খেতে যাবে।সূর্য উদয় দেখতে তারা একা না অনেক পর্যটক এসেছে।এখানে বেশ স্বল্প মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।চারজনেই সমান তালে হাটছে আরমিন এই সেই নানান প্রশ্নে ব্যস্ত রাখছে সবাইকে।মাফী পিঠ চাপড়ালো সুহাইলের,

– দোস্ত ভাবীকে নিয়ে কবে যাবি কানাডায়?ভাবীকে দেশ-বিদেশ ঘুরাবি।বছরের একটা সময় আমরা চারজন মিলে ঘুরবো।এতে আমাদের ভ্রমণ হবে,সম্পর্কটা আরো পাকাপোক্ত হবে স্মৃতির পাল্লা ভারী হবে।

– আর তোমার ই’উ’টি’উব চ্যা-না-লের কাজো।

রাত্রি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বললো।এতে মাফী সহ তিনজনেই শব্দ করে হেসে উঠে।সুহাইল আরমিনের পিঠে হাত রাখলো বাহুটা চেপে ধরে হাটতে থাকে সামনের দিকে,

– তুমি পড়াশোনা করবে মায়ের সাথে সংসার সামলাবে আর আমি সারাদিন অফিস করবো।তারপর বছরের একটা সময় ভ্রমণে বেরিয়ে পড়বো।সংসার,অফিস কোন পিছুটান রাখবো না সময়টা হবে আমাদের একান্ত।

সুহাইলের কথাগুলো হাজার বছর বাঁচতে প্রেরণা জুগায় আরমিনকে।জীবনটা তবে সপ্নের মতো সুন্দর হয়ে যাবে।দুজনেই তটপথে হাটছে সমুদ্রের বাতাসে শীতল করছে শরীর।
.
চোখ জুড়ানো কাউয়ার চরের বেলাভূমির লাল কাঁকড়ার ছুটে চলা। হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার আবাসভুমি এই কাউয়ার চরের সমুদ্র সৈকতে।সকালের সময়টাতে যাওয়ায় আরমিনরা বেশ কয়েকটি লাল কাঁকড়া দেখার সুযোগ পেয়েছে।
সাগরের নীল জল সাদা ঢেউ আর সৈকতের রুপালি বালি যে কোনো পর্যটকের মন কেড়ে নেবে। সৈকতের কোল ঘেঁষে বনের ভেতর আছে কিছু জেলে পল্লী। এখনে দেখা যায় তাদের জীবনযাত্রা। কেউ জাল বুনছে, কেউবা সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর সাগর পারে জেলে বাচ্চাদের ছুটো ছুটি।বেলাভূমির রাস্তা মাড়িয়ে বাইক থামে ঝাউ বনের সামনে।

বিস্তার ঝাউবনের ভেতরটায় সুহাইলের হাতে হাত রেখে প্রবেশ করে আরমিন।সারি সারি লম্বা লম্বা গাছগুলো বাতাসের তালে নৃত্য করছে।বাতাসের দাপটে শনশন শব্দে তাদের যেন অভ্যর্থনা জানাতে ব্যস্ত গাছগুলো।

– পরিবেশটা কী মায়াবি!

– হুম তোমার মতো।

আরমিনের চোখে চোখ রেখে কথাটি বলে সুহাইল।সকালের রাঙা সূর্যের মতো আরমিনের মুখটাও রাঙা হয়ে যায়।লজ্জায় হাসে খানিকটা।
সমুদ্রের গর্জন বনের ভেতটায় কেমন যেন গুমুট শোনালো।আরমিন ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছিলো।কিছু একটা ভেবে তার বড্ড আফসোস হলো। সুহাইলের সামনে দাড়িতে স্বগোতক্তি স্বরে বলে,

– এখানে অনেক গানের শুটিং হয়েছে তাই না?

– একদম ঠিক।অনেক মিউজিক ভিডিওর শুট এখান থেকে নেওয়া হয়েছে।

– ইসস আমি যদি শাড়ি পড়ে আসতাম।

আরমিনের কথায় মিহি হাসলো সুহাইল।আরমিনের হাত টেনে সামনের দিকে এগিয়ে বলে,

– আমরা আবার আসবো তখন একা আসবো।এখন তো আমি এই পরিবেশে নতুন তখন তোমায় নিজ দায়িত্বে আনবো আর তুমি প্রতিদিন শাড়ি পড়েই ঘুরতে আসবে।এবার খুশি?

আরমিন খিলখিলিয়ে হাসে।সুহাইলের হাত ছেড়ে এক দৌড়ে সামনে এগিয়ে যায়।একটি ঝাউগাছ ধরে হেলেদুলে বলে,

– আমি বড্ড খুশি।

ঝাউবন দেখা শেষ করে সকালের নাস্তা সারতে হোটেলের সন্ধানে বের হয় তারা।বাইক রাইডারের সাহায্য একটি হোটেল পেয়েও যায়।সেখানে খিচুড়ি এবং ভাজা ইলিশ মাছ অর্ডার করে সকালের নাস্তা সেরে নেয়।
.
জ্ঞান ফিরলে অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা ছেলেটি যখন সালেহাকে চোখের সামনে দেখলো তখন রাগ আবারো মাথায় চড়ে বসলো।কিন্তু সালেহা ছিলেন নাহার বেগমের পাশে পবন তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো কিয়ৎক্ষণ যেন কিছু একটা ভাবছে সে।সালেহার মুখটা ছিলো মলিনতায় ঘেরা রাগের তাড়নায় ভুল ভাল কত কথা বলেছে এই মহিলাকে।অথচ মহিলার তো দোষ ছিলো না।এর আগেও পবন বিয়ে ভেঙ্গেছে আরমিনের, সালেহা তাকে টু’শব্দ কথা শুনায়নি চাইলে এই বিয়েও ভাঙ্গতে পারতো কিন্তু এই বিয়ে ঠিক করেছে পবনের পরিবার তাহলে সালেহার উপর রাগ ঝারলো কেন সে।ভাবতে লজ্জায় মিহিয়ে গেলো পবন।

– সালেহা আন্টি পাশে আসেন।আমার পাশে একটু বসেন।

পবনে মুখে কথা লেগে লেগে আসছে।সালেহার প্রতি তার নরম আচরণ দেখে উপস্থিত বাকি সদস্যরা চমকালো।সালেহা সন্দিহান চোখে তাকালো নাহার বেগমের দিকে।

– কী হলো আসেন।

সালেহা এগিয়ে যায় পবনের শিয়রে বসে মাথায় হাত বুলায়।

– মাফ করে দিয়েন আন্টি।আমি ভুল করেছি অবুঝ আচরণ করেছি।

সালেহা ভড়কালো দমে থাকা কান্নাটা গলা পাকিয়ে আসছে বার বার।।

– ক্ষমা করবেন না আন্টি?

– তোমায় বদদোয়া দি নাই বাবা।ক্ষমার প্রশ্ন তবে আসে কি করে?

– আপনার চোখের পানি আমায় বদদোয়া দিয়েছে।

সালেহা মাথা নত করলো পবনের কপালে আদুরে ঠোঁট মিলিয়ে চুমু দিলো।এই ছেলেটাকে কিশোর বয়স থেকেই দেখছেন তিনি।তবে গত রাতের পবনের সাথে আগের পবনের মিল পেলেন না।যত যাই হোক মায়া মমতা বিন্দুমাত্র কমেনি পবনের প্রতি সালেহার।

– হঠাৎ এমন আচরণ কেন করেছি আপনি জানেন না সালেহা আন্টি?আরমিনের বিয়ে নিয়ে কেন ক্ষুব্ধ আমি তা জানেন?

সালেহা নেতিবাচক মাথা নাড়লো এর মানে তিনি জানেন না।

– আমি আরমিনকে পছন্দ করি।আব্বা- আম্মা,চাচিকে সরাসরি বলেছি।কিন্তু আব্বা নাকি রাজি থাকলেও আম্মা রাজি নয়।আম্মার সম্মোতির বাইরে আব্বাও রাজি না।যেদিন আরমিনের বিয়ে হলো সেদিন রাতেই আমার পা-গলামো দি’গুন বেড়ে গেলো সবাইকে কত আকুতি করে বলেছিলাম কিন্তু কেউ আমার প্রস্তাবে রাজি হলো না।সর্বশেষ আম্মা কিরা দিয়ে বসলেন।আমিও চুপ হয়ে গেলাম ভেতর ভেতর ম!রে গেলাম।আর কাল রাগ সামলাতে না পেরে….. যাই হোক মাফ করে দিয়েন আন্টি।বাঁঁচবো কদিন কে জানে।

সালেহা অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো সবার দিকে।চোরা চোখ নামিয়ে নিলেন নাহার বেগম।সালেহা নিঃশব্দে কাদলো।খুব কাদলো। তার চোখের পানি চুইয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা পবনের গালে।নিজেকে কিছুটা সময় পর স্থির করে বলে,

– ভাবী ঠিকি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো আরমিনের সাথে তোমার যায় না বাবা।তুমি সুস্থ হয়ে যাও,আল্লাহ তোমায় খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করুক।

পবনের ঠোঁটে তাচ্ছিল্য হাসি ফুটে উঠলো।চকমকে রোদের আলো পড়ছে তার জানালায়।বাইরে তাকিয়ে স্বগতোক্তি স্বর বলে,

– সুস্থ হতে চাই না আমি।একটুওচাই না।একই ভুল পুনরায় করতে চাই না।

.
গ্রামের রাস্তা মাড়িয়ে চলছে গাড়ি।কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রাখাইন সম্প্রদায়ের একটি গ্রামের নাম মিশ্রিপাড়া।অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এই গ্রামটি।পিছ ঢালা রাস্তার দুই পাশে সারি সারি তাল গাছ,কড়ই গাছ সহ নাম না জানা অনেক গাছ।রাস্তার দুই ধারে আইল পেরিয়ে বিশাল মাঠ।আরমিনদের যাত্রা পথ মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহারের উদ্দেশ্যে।সামনে থাকা বাইকের গতি ধীরে ধীরে থেমে এলো আরমিন উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,

– আমরা কী চলে এসেছি সুহাইল?

– তাই তো মনে হচ্ছে।

মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশের মুখে জন প্রতি ২০ টা’কা করে টিকেট কেটে নেয় তারা।এখানে রয়েছে একটি মিষ্টি পানির কূপ।এই কূপ খনন করেছিলো রাখাইনরা।এছাড়াও সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো বৌদ্ধ মন্দিরটি মূর্তি।গৌতম বুদ্ধের এই মূর্তিটি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়।দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে বড় বৌদ্ধ বিহারের মধ্যে এটি অন্যতম। গৌতম বৃদ্ধের এই মূর্তিটির দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট। প্রায় ২ একর জায়গা নিয়ে বৌদ্ধবিহারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আরমিনরা সর্বপ্রথম এগিয়ে গেলো মন্দিরের ভেতর মূর্তির কাছে।সোনালী রঙের পোষাক এবং দেহাকৃতি সাদা রঙে রাঙানো মূর্তিটি দেখে সবাই বাকরুদ্ধ।এত বড় বিশাল মূর্তি তারা আগে দেখেছে বলে মনে হয় না।এই বিহারে রয়েছে অনেক বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন।আরমিন বইতে পড়েছে বৌদ্ধদের জীবন-যাপন সম্পর্কে আর আজ সামনা সামনি দেখলো।পুরো বিহারটা ঘুরে দেখছিলো তারা।মন্দিরের বাইরে রয়েছে বহু পুরোনো একটি মিষ্টি পানির কুয়া।
.
সময়টা তখন দ্বিপ্রহর। আরমিনরা যাত্রা শুরু করেছে রাখাইন পল্লীর উদ্দেশ্য। রাখাইন বৌদ্ধ বিহারের দক্ষিণ পাশ জুড়ে অবস্থিত রাখাইন পল্লী।সেখানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষজনের বসবাস।বাড়ির মেয়েরা কাপড় বুননে ব্যস্ত।আরমিন সহ বাকিরা বিমুগ্ধ চোখে দেখছে তাদের।সুহাইলের সাথে রাখাইন পল্লী সম্পর্কে টুকটাক কথা বলছিলো আরমিন এমন সময় সালেহার নাম্বারে ফোন পেয়ে দ্রুত রিসিভ করে।

– হ্যালো আপু আমি রিহানা বলছি।

– কেমন আছিস বোন?আম্মা কেমন আছে?পবন ভাইরা সবাই কেমন আছে?

– কেউ ভালো নেই আপু।এদিকের আবহাওয়া পালটে গেছে।গতকাল রাতে জাবির আঙ্কেল পবন ভাইকে ইচ্ছে মতো মে-রেছে।

– কি বলিস এসব?কেন মেরেছে পবন ভাইয়ের কি অবস্থা এখন?

– সে নাকি তো…

রিহানার কথা শেষ করার আগেই সালেহা ছুটে এলেন।ঝটকায় ফোন হাতে তুলে আরমিনের কল কেটে রিহানার গালে চ-ড় বসালেন।রিহানা হতভম্ব চোখে তাকালো সালেহার দিকে।সালেহা ফোন কেটে কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন রিহানার দিকে।

– তোর বোনের সংসারে কি আ-গু-ন লাগাতে চাস?

রিহানা যান্ত্রিক মানবের মতো মাথা দুলালো।চোখে চকচক করছে অশ্রু।

– তাহলে যা শুনেছিস উগড়ে ফেল।পবন আরমিনকে চেয়েছে এটা যেমন সত্য তোর বোন এখন সুহাইলের স্ত্রী এটাও সত্য।যদি আমার কথা হেরফের হয় চ-ড়ের মাত্রা আরো বেড়ে যাবে।

বেশ রাগ হলো রিহানার।উঠতি বয়সি মন এমনিতেই উড়াধূড়া।অল্প ধমকেই কাঁচের মতো ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায় কাতর মন।আর সালেহা কী না ধাপে ধাপে চড় বসায় তার গালে।থাকবে না সে এ বাড়িতে।রাগ দেখিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো বাড়ি দেখে।প্লাবণ সবে তাদের বাড়ির দিকে ডুকছিলো রিহানাকে বের হতে দেখে থমকে দাঁড়ায়।মেয়েটার চোখে টইটুম্বুর করছে অশ্রু।

– কাঁদছিস কেন?আন্টি চ-ড় লাগিয়েছে?

রিহানা মাথা দুলালো।পাংশুটে মুখটায় এবার হাসির আভাস দেখা গেলো প্লাবনের।

– রিহানা আমার মনে হয় তোর জন্ম হয়েছে চ-ড় খাওয়ার জন্য।তোর গালটা কি সরকারি?উনিশ থেকে বিশ হলেই তোর গালে চ-ড় পড়ে।আন্টি কোন গালে মেরেছে?

– ডান গালে।

প্লাবন এক গাল হাসলো।চট করে রিহানার বাম গালে বসিয়ে দিলো আরেক চ-ড়।

– দু গালে চ-ড় না পড়লে বিয়ে হয় না।আমি দিয়ে পূর্ণ করে দিলাম।এবার যেদিকে মন চায় যা হুসসস!

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here