#মায়াপ্রপঞ্চ,৪০,৪১
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৪০]
_________________
হাসপাতালের করিডোরে অস্থির ভঙ্গিমায় পাইচারি করছে পবন।মাথায় খেলে যাচ্ছে হাজার চিন্তা ভাবনা।নাহার বেগমের জ্ঞান ফিরেছে কিয়ৎক্ষণ হলো।কেবিনে দেখা করতে গেলো জাবির,আছীম এবং আমীনা।পবন বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো কেন যেন ভেতরে প্রবেশ করতে মনটা সায় দিলো না।আমীনা ব্যতিব্যস্ত পায়ে এগিয়ে এলো পবনের কাছে।
– এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন পবন?ভেতরে চল।
– ভাল্লাগছে না।আম্মা ভালো আছেন?ডাক্তার চাচাকে কি বলেছে?
আমীনার মুখটা পাংশুটে হয়ে গেলো।ক্লান্ত ভঙ্গিমায় বসে গেলো করিডোরে থাকা চেয়ারে।
– ভাবী স্টোক করছে পবন।
– কী বলছো চাচী!
– হুম ভাবী স্টোক করেছে।তবে বড় কোন অঘটন ঘটে নি।ডাক্তার বললো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা,মানসিক চাপে আছেন তিনি।এভাবে চললো যেকোন সময় যা তা হয়ে যেতে পারে।
পবন নিভে এলো।হেয়ালি ভঙ্গিমায় বসলো আমীনার পাশে।
– পবন যা হবার হয়েছে।আরমিন তো সুখে আছে তুই বরং মেয়েটার কথা ভুলে যা।অবশ্য ভুলতে পারবি না জানি।কিন্তু তাকে যে ভাবছিস এই ভাবাটা কমিয়ে দে।এক হিসেবে তোর পা-গলামোতে ভাবী দুশ্চিন্তায় ভোগেন।ভাইজানো ইদানীং ভাবীর সাথে খুব একটা মিলেমিশে কথা বলেন না।সর্বদা রাগ নিয়ে চলেন।সব মিলিয়ে ভাবী মানসিক যন্ত্রণায় আছে।সব ভুলে যা বাবা পরিবারের শান্তির কথা ভেবে একটু শুধরে যা।
আমীনার কাতর স্বর।পবন ভাবছে খুব গভীর মনোযোগে ভাবছে।মা-বাবার উপর যতই অভিযোগ-অনুযোগ সাজানো হোক না কেন তারা আমাদের জীবনের ছাউনি।পথ চলার আলো।মায়ের এমন বিপদের কথা শুনে পবনের ভেতরটা আরো ভেঙ্গে যায়।
– এই পবন ভাবী তোকে খুঁজছে বারবার।চল কেবিনে দেখা কর।
– হুম চলো।
.
আরমিন বাড়ি ফিরতে ফারজানার আনন্দের শেষ নেই।নিজের হাতে নানান পদ রান্না একাই করেছেন তিনি।হাতে হাত রেখে কাজে সাহায্য করার জন্য অবশ্য একজন কাজের লোক রাখা হয়েছে।বারেকের সাথে আরমিনের সম্পর্ক অবশ্য উন্নতিও নেই অবনতিও নেই।চলছে চলার মতো।দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে আরমিন একে একে সব ব্যাগ খুলছে কার জন্য কি এনেছে সবটা বের করছে সে।ফারজানার জন্য আরমিন শাড়ি,মালা,চুড়ি,চুলের কাটা সহ সাজসজ্জার অনেক জিনিস এনেছে।রান্নার জন্য শুটকি মাছ নিয়ে এসেছে।
– তুই আমার জন্য এত সব কেন কিনেছিস?আমি কখন পড়বো এতসব?
– পড়তে হবে না ফুফু।তোমার আলমারিতে সাজিয়ে রেখো।অযত্নে রেখো না কিন্তু ,আমি প্রতিটা জিনিস নিজের পছন্দে কিনেছি।
ফারজানা হাসলেন।গালে হাত বুলিয়ে দিলেন আরমিনের।সুহাইল কাউচে বসে শাশুড়ী বউমার কান্ড দেখছে।
– ফুফু আজ রাতের খাবারের আইটেমে কিন্তু শুঁটকি থাকবে।আমি অনেক পদের শুঁটকি এনেছি আজ আমরা শুঁটকির ভর্তা করবো চড়চড়ি করবো।
আরমিনের উৎসাহিত কথায় বেগড়া দিলো সুহাইল।
– তাহলে আমি আজ আর বাসায় আসবো না।এক পদ রান্না করলে গন্ধে আমার জান প্রাণ বেরিয়ে যায় আর তিনি কি না দশ পদের কথা ভাবছেন।
– এভাবে বলছেন কেন?জানেন শুঁটকি আমার কত প্রিয় খাবার।
– ভালো কিছুতো চয়েজ করতে পারো না।এসব আপদ্ মার্কা জিনিসি পছন্দ করো।
– হ্যা আমি আপদ্ মার্কা পছন্দ করি বলেই আপনার সাথে এখনো সংসার করছি।কারন আপনিও একটা আপদ্।
সুহাইল দমে গেলো।নিজের কথার ভাজে ফেসে গেলো নিজেই।কাউচ থেকে উঠে ফোনটা হাত নিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলো।যাওয়ার আগে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– আম্মুকে দেখলে তোমার সাহস বাড়ে।এমনিতে তো আমার সামনে থাকো ভেজা বিড়াল রূপে।খালি একবার একা পাই বোঝাবো মজা।
.
সময়টা পেরিয়ে যাচ্ছে ব্যস্ততায়।নাহার বেগমকে দুদিন পরেই হাসপাতাল থেকে ছেড়েছে।মায়ের অসুস্থতায় পবন যেন নিজেকে এক ঝটকায় বদলে নিয়েছে।আগের মতো বেশ খানিকটা স্বাভাবিক চলাচল করছে।কিন্তু মধ্যে রাতে বেড়ে যায় আত্মার চিৎকার।কলিজা ফেটে যায় ব্যর্থতার সুরে।বিছানার চাদর খামচে ধরে কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায় কিন্তু তাতে লাভ কী?ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে ম-রছে পবন।তার এই আর্তনাদ কেউ শুনে না,চৌচির খরা ধরা হৃদয়ের কথা কেউ জানে না।প্লাবন আগে পবনের রুমে থাকলেও সে এখন আলাদা ঘুমায়।কারন পবনের কড়া নির্দেশ তার রুমে মানুষের আনাগোনা যেন না হয়।সে একা থাকতে চায়,শুধুই একলা একা।
.
বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমে কাবু আরমিন।সুহাইল পাশে নেই সে বেরিয়েছে সিয়ামের সাথে।আজ দুই ভাই মিলে একটু ঘুরাঘুরি করবে।রাত নয়টার কাছাকাছি ফারজানা রাতের খাবারের আয়োজন করছিলেন রান্না ঘরে।কিন্তু হঠাৎ বারেকের চিৎকারের শব্দে রুমে ফিরেন তিনি।হাতের সামনে যা পাচ্ছে একে একে তা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন তিনি।
– এমন করছো কেন তুমি?কি হয়েছে?
– কি হয়েছে?তোমার এই পরিবার রাস্তায় দাঁড়ানোর জোগাড় হয়েছে।
– মানে?
– সবচেয়ে বড় যে ডিলটা ছিলো সেটা আজ বাতিল হয়ে গেছে।এত লোন এত সব আমি কি করে করবো।দেউলিয়া হওয়া ছাড়া আমি আর পথ দেখছি না।
ফারজানা দমে গেলেন আতংকিত মুখটায় ভর করেছে হতাশার।
– তুমি ব্যস্ত হইয়ো না একটু ঠান্ডা মাথায় বসো।
– আমি ব্যস্ত হবো না?এরপরেও বললে আমি ব্যস্ত হবো না।তোমার ছেলে কই?এই দেশে পড়ে থেকে আজ এতটা লসের সম্মুখীন আমি।সব নষ্টের মূল সে।
– বাইরে আছে তুমি এমন অস্থির হইয়ো না।
– এই চুপ করো তুমি।কোনো কথাই শুনতে চাই না তোমার।ব্যাগপত্র রেডি করো আজি সবাই ফিরে যাবো।তোমার ছেলেকেও যেতে হবে তার জন্য এ দেশে পড়ে থেকে আজ আমার চরম লোকশান হয়েছে।সে দেশে থাকলে একটা না একটা উপায় আমি বের করেই নিতাম।কিন্তু এখন হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছুই দেখছি না।
– সুহাইলকে না জানিয়ে হঠাৎ যাওয়ার সিদ্ধান্তটা……
ফারজানা কথা শেষ করার আগেই বারেক আবারো ক্ষিপ্ত হলো।টেবিলের উপরে থাকা সব জিনিসপত্র ভাঙ্গতে শুরু করে।আরমিন জেগে ছিলো ভাঙ্গাচুরার শব্দে দ্রুত ফারজানার রুমে আসে সে।তৎক্ষনাৎ চোখে পড়ে বারেকের রাগান্বিত মুখখানা।ফারজানার সাথে ইতোমধ্যে তার তর্কাতর্কি শুরু।রোষানলে জ্বলতে থাকা বারেক বিবেক বুদ্ধি এক নিমিষেই লোপ পেয়েছে।কথার ভাজে ফারজানাকে মারতে উদ্যত হন।তার আগেই আরমিন ধরে নেয় ফারজানাকে।এক ঝটকায় বের করে আনে রুম থেকে।
– ফুফা ফুফুকে মারছেন কেন?
– ছোট লোকের বাচ্চা তোকে আমি কৈফিয়ত দিবো?
বারেকের মুখে এমন কথায় মেয়েটা অসাড় হয়ে যায়।ফারজানা প্রতিবাদি সুরে বলে,
– কি করছো তুমি খবরদার মেয়েটাকে কিছু বলবে না।সুহাইল জানলে সব ধ্বংস করে দেবে।
– চুপ করো তোমার ছেলে অলক্ষি বাড়িতে এনেছে দেখছো না আসার পর থেকে আমার ব্যবসায় ধস নেমেছে।ওর মা যখন কায়িমের সংসারে আসে তখন কায়িম ধ্বংস হয়ে যায়।সেই পেটের মেয়ে আর কতটা ভালো হবে?সব অমঙ্গল,অশুভ মানুষে ভরে গেছে আমার বাড়ি।
– চুপ করো তুমি।
– কেন চুপ করবো?রাস্তার মেয়ে রাস্তায় থাক।আমার ধনী ছেলে পেয়ে গলায় ঝুলে গেছিস।তোর মা বোধহয় যাদুমন্ত্র জানে নিশ্চই তোকে শিখিয়েছে।তোর মা কবজা করেছে কায়িমকে আর তুই আমার ছেলেকে।
আরমিন নত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঝের দিকে।এই মুহূর্তে নিজেকে সবচেয়ে তুচ্ছ মানুষ লাগছে।ফারজানা হাত টেনে নিয়ে যায় আরমিনকে।বারেক তখনো থামেনি লাগাদার বলে যায়,
– আরে ওকে আমার রুম থেকে না সরিয়ে আমার ছেলের জীবন থেকে সরাও।সবে তো শুরু আরো কত ধ্বংসের মুখে পড়বে তোমরা এই মুখ পুড়ির কারনে।
ফারজানা আরমিনকে সুহাইলের রুমে রেখে আসে।এই ব্যাপারে পরে কথা বলবেন বলে চলে যান বারেকের কাছে।
.
রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই ঘোরাঘুরি শেষে বাড়ি ফিরে আসে সুহাইল।দু’ভাই রাতে খেয়ে এসেছে তাই দু’জন দু’জনের রুমের দিকেই ছুটলো।সুহাইল রুমে ফিরে বেশ অবাক হয় এত রাতে আরমিন রুমে নেই।ফারজানার রুমের দিকে যায় সুহাইল।রুম তখন ভেতর থেকেই বন্ধ ছিলো।সুহাইলের ডাকে দরজা খোলেন ফারজানা,
– কিরে এসেছিস খাবার তো টেবিলেই আছে খেয়ে নে যা।
– আম্মু মরিয়ম কই?
– আরমিন তো রুমেই আছে।আমি আধা ঘন্টা আগেও তাকে খেয়ে যেতে বলেছি।
– সে তো রুমে নেই।
– বারান্দায় দেখেছিস?
– হ্যা নেই সেখানে।
ফারজানা ঘাবড়ে যায়।চোরা চোখে তাকায় সুহাইলের দিকে।সুহাইলের অস্থিরতা বেড়ে গেছে।দ্রুত ছাদের দিকে অগ্রসর হয়।কিন্তু তাতেও আরমিনকে পাওয়া গেলো না।এতক্ষণে সিয়াম সহ বাড়ির অনন্য সদস্যরাও আরমিনকে খুঁজতে ব্যস্ত কিন্তু মেয়েটার হদিস পাওয়া গেলো না।সুহাইল সবাইকে পেলেও বারেক খন্দকারকে উপস্থিত পেলো না তাই সন্দেহের বাতি এক ঝটকায় মাথায় জ্বলে উঠে,
– আব্বু কোথায়?
– ত..তোর বাবা তো ঘুমচ্ছেন।তার শরীর খারাপ লাগছিলো তাই ওষুধ দিয়েছিলাম।
মায়ের কথার জড়তা দেখে সুহাইল সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো তার চাহনী দেখে ঢোক গিলেন ফারজানা
– সত্যি করে বলো আম্মু আমি যাওয়ার পর বাড়িতে কি হয়েছে?
– ক…কই কি হবে!
– আরমিন এমনি এমনি বেরিয়ে যাওয়ার মেয়ে না।বিয়ের পরদিন নিখোঁজ হলে মেনে নিতাম সে নিজ ইচ্ছায় পালিয়েছে।কিন্তু সম্পর্ক এত দূর গড়িয়ে, আমার উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ বিলিয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মেয়ে না।সত্যটা বলো আম্মু।তোমার দেদারসে মিথ্যা কথা আমি ধরে ফেলেছি।
ফারজানা ঘাবড়ে গেলো।ভরা মজলিসে তার মিথ্যা কথা গুলো যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে।কী করে পবনকে বলবেন তিনি এই অপমানের কথা।ছেলে তবে উন্মাদ হয়ে যাবে।অশান্তির আগুন জ্বলবে সংসারে।কিন্তু আরমিন আবার কোথায় গেলো।
– আম্মু কি ভাবছো?ভাইয়া যা জানতে চায় বলে দাও।
সিয়ামের কথায় ফারজানা ছোট চোখে তাকালো।শুরু থেকে সব একে একে সবটা বললো।সুহাইল কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না।ছুটে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে তার পিছুপিছু চললো সিয়াম।গেটের সামনে একজন তাগড়া যুবক বসে ছিলো।তিনি এই বাড়ির দারোয়ান।বাহ্যিক দিক তিনি দেখেশোনা করেন।
– এ বাড়ির বউ যে রাতে বেরিয়ে গেছে আপনি তাকে দেখেছেন?
– আরমিন মেডাম?
– হ্যা।
– না স্যার।আমি তো এখানেই ছিলাম।
– রাত এগারোটার পর কোথায় ছিলেন?
– তখন আমার খাওয়ার সময় সামনে যে হোটেল আছে শেখানেই ছিলাম।
– বাড়ির বাইরে কোন সিসি ক্যামেরা নেই?
– না স্যার।বড় স্যার লাগানোর ব্যবস্থা করেননি।
সুহাইল হতাশার চোখে তাকালো সিয়ামের দিকে।আক্ষেপ জড়িয়ে মিহি গলায় বলে,
– এরা একটা মেয়েকে দেখে রাখতে পারে না।
– ভাইয়া তুমি শান্ত হও।বেশি দূর যায়নি আশা করি।
.
বন্ধ একটি চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে আরমিন।বাড়ি থেকে বের হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই।দ্রুত পায়ে যতটুকু সম্ভব এগিয়ে এসেছে।বারেকের বলা কথাগুলো অপমানে সারা শরীরে বিষের ন্যায় তিক্ততা ছড়িয়ে দিয়েছে।আসলেই সে খারাপ। কেন যে সুহাইলের জীবনে এলো।সে তো সুহাইলের সঙ্গী হিসেবে মানানসই নয়।আর সেধে সেধেও আগ বাড়িয়ে যায়নি সুহাইলের কাছে বরং তার ছটফটে হৃদয়টা বন্দি করেছে সুহাইল।কিন্তু সে কথা কে মানবে?ঘুরে ফিরে দোষটা তার ঘাড়েই পড়ছে।তাই রাগের মাথায় এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো সে।
রাস্তার কুকুরের ডাক শিউড়ে উঠছে আরমিনের শরীর।রাতে অপরিচিত ব্যাক্তিকে দেখে কুকুরাও জেনো অতি দ্রুত চিনে নিয়েছে আরমিন এই গলির বাসিন্দা নয়।বরাবরি কুকুরকে ভয় পায় আরমিন কিন্তু আজ কেন যেন ভয় পেলো না।কারন মনে জমে আছে ক্ষোভ।সেই ক্ষোভ না মেটানো পর্যন্ত আশেপাশের সব কিছু তার কাছে তুচ্ছ।লাগাতার পবনকে ফোন করে যাচ্ছে সে কিন্তু ছেলেটার ফোন বন্ধ।অন্তত পবন ফোন ধরলে তাকে জানানো যেতো বিষয়টা সে অন্তত তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে সাহায্য করতো।সালেহাকে ভুলেও ফোন করা যাবে না।উলটো বিপদ বাড়বে।জাবিরকে এত রাতে ফোন করে ডিস্টার্ব করতে চায় না সে।যে করে হোক সাহায্য চাইবে পবনের কাছে।প্রয়োজনে আজ সারারাত এখানেই থাকবে কাল সকালে যা হবার হবে পরে ভাবা যাবে।সব ভাবতে ভাবতে আরো এক ঘন্টা পেরিয়ে গেলো।কুকুর গুলো ক্রমশ দোকানের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আরমিনের এবার ভয় লাগলো তবুও মস্তিষ্কে ভয় খুব একটা পাত্তা দিলো না।
সুহাইল একে একে চল্লিশবারের উপরে কল করেছে দেদারছে। ছেলেটা যেন উন্মাদ হয়ে গেছে।আরমিন তাতে পাত্তা দিলো না বরং ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিলো বেঞ্চিতে।এই মুহূর্তে সুহাইলকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না তার।
গাড়িতে এসির চলছে কিন্তু তাতেও লাভ হলো না।ছেলেটা ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা।ড্রাইভিং করার পাশাপাশি মাথা তুলে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে উদ্দেশ্য আরমিনকে খুঁজে বের করা।সিয়াম এতক্ষণে জাবির মাতবরকেও ফোন করে জানতে চেয়েছে আরমিনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে কী না।কিন্তু তিনি নেতিবাচক উত্তর জানান।
সুহাইলের ফোনটা ছিলো সিয়ামের হাতে।দারোয়ানের নাম্বার থেকে কল আসায় সে রিসিভ করে,
– বলুন কোন খোঁজ পেয়েছেন ভাবীর?
– আপনাদের বাড়ি থেকে উত্তরের যে মোড়টা আছে সেই গলির একটা চায়ের দোকানে ম্যাডাম বসে আছেন।
– ঠিক আছে আপনি ভাবীর কাছে যাবেন না আপনাকে দেখলে আবার পালাবে আমরা আসছি।
সিয়াম ফোন কেটে তাকায় সুহাইলের দিকে।ছেলেটা চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছে,
– ভাইয়া গাড়ি ঘুরাও উত্তরের মোড়ে যে গলিটা শুরু সেখানে একটি চায়ের দোকানে ভাবী বসে আছে।
অতিদ্রুত ব্রেক কষালো সুহাইল।গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো সর্বোচ্চ।শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্রোধে ফেটে পড়ছে।কপালের রগটা ফুলে উঠেছে ইতোমধ্যে।দক্ষ হাতে গাড়ির স্টেরিং ঘুরিয়ে ক্ষিপ্ত গতিতে ছুটছে।
– ভাইয়া প্লিজ এত হাইপার হইয়ো না ভাবীর কিন্তু দোষ নেই।তুমি নিজেকে শান্ত করো।
সুহাইল ছেলেটার কথা আমলে নিলো না সে তার জেদ ঝারতে ব্যস্ত।
.
কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ নিরিবিলি পরিবেশটায় গা কাটা দিয়ে উঠলো আরমিনের।রাস্তার ধারে উঁচু উঁচু বিল্ডিং এর সমাহার।কোনো ইউনিটে আলো জ্বলছে কোথাও আবার জ্বলছে না।এই গলির সকল বাসিন্দা তাদের নিজের কাজে ব্যস্ত।আরমিন এবার পা দুলিয়ে বসলো এতক্ষণ ভয় না লাগলেও এবার খানিকটা ভয় লাগছে।আনমনে যখন বিল্ডিং গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন দ্রুতগামী একটি গাড়ি দোকানের সামনে জোরে ব্রেক কষে দাঁড়ায়।তড়বড়িয়ে তাকায় আরমিন।গাড়িটা চিনতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না তার।সুহাইল দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।তার সাথে সিয়াম।সিয়াম দ্রুত এসে রাস্তা আগলে দাঁড়ায় সুহাইলের।
– প্লিজ ভাইয়া হাইপার হইয়ো না।
সুহাইল মাথা নাড়ালো।একপা দু’পা এগিয়ে বসে পড়লো আরমিনের পাশে।
– বাড়ি চলো মরিয়ম।
– কার বাড়ি?
– তোমার শশুড় বাড়ি।
– ফিরবো না আমি।যেখানে আমার মায়ের সম্মান নাই আমার সম্মান নাই সেখানে আমি কেন ফিরবো?মগের মুল্লুক পেয়েছেন আপনারা?
– ওসব কথা পরে হবে আগে বাড়ি চলো।
– যাবো না আমি।
সুহাইল শব্দ করে শ্বাস ছাড়লো।সে যেন নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করছে।
– তুমি আমাকে কেন বুঝো না মরিয়ম?
আরমিন চকিতে তাকালো।ছেলেটার কন্ঠ মিহিয়ে আছে।এই কথার ধাঁচে সে যেন ছুড়ে দিলো আরমিনের দিকে ধিক্কার।
– আমি কাউকে বুঝতে চাই না আপনি চলে যান।
– আমি ভীষণ ক্লান্ত প্লিজ চলো।আমি বললাম তো, যা আভিযোগ আছে পরে বলিও।
আরমিন এবার রাগ হলো হাতে থাকা মোবাইলটা নিয়ে ছুটলো রাস্তার দিকে।সুহাইল আরক্ত দৃষ্টিতে তাকালো সিয়ামের দিকে।সিয়াম এবারো ইশারা করলো মানিয়ে নিতে।ততক্ষণে আরমিন দ্রুত হেটে বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে গেছে সুহাইলো তার পিছুপিছু পা বাড়ায়।পেছন থেকে দ্রুত এসে খপ করে ধরে নেয় আরমিনের হাত।
– কোথায় যাচ্ছো?
– জাহান্নামে।
সুহাইল তার কথা পাত্তা দিলো না টেনে আনলো গাড়ির কাছে।আরমিন চিৎকার দিতে চাইলে সুহাইলের তির্যক চাহনীতে চুপসে যায়।
.
রুমের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে আরমিন।সুহাইল হাত পা ছড়িয়ে নিশ্চিন্ত ভঙ্গিমায় চোখ বন্ধ ঘরে শুয়ে আছে।ঘামাক্ত শার্ট এখনো তার গায়ে।আরমিন কি করবে ভেবে পারছেনা। সুহাইল তার হাত টেনে রুমের মাঝে দাঁড় করিয়ে।হেলেদুলে বিছানার কাছে গিয়ে গা এলিয়ে দেয়।
সুহাইল অনেক্ষণ যাবৎ চোখ বন্ধ করে আছে আরমিন ভেবে নিয়েছে সুহাইল হয়তো ঘুমে।’ফুফুর সাথে একবার দেখা করা দরকার’ কথাটা ভেবে দরজার নব ঘুরালো মেয়েটা।
– কোথাও যাও?
আরমিন ঘুরে ছোট চোখে তাকালো সুহাইলের দিকে।
– তোমার ফোনটা আমায় দাও।
আরমিন অবাক হলো।ফোন চাইছে কেন সুহাইল?এর আগে তো কখনো ফোন খুঁজেনি নিশ্চই তল্লাশি চালাবে।
– কি হলো আমি ফোন দিতে বলেছিলাম!
আরমিন ধমক শুনে এগিয়ে গেলো ধরিয়ে দিলো তার ফোনটা সুহাইলের হাতে।সুহাইল সম্পূর্ণ কল লিস্ট ঘেটে একটা নাম্বার উপলব্ধি করলো যে নাম্বারে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় আরমিন ফোন করে।বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরেও সেই নাম্বার টারেই বারবার ডায়াল করেছে।সুহাইল আড় চোখে তাকালো আরমিনের দিকে।মেয়েটার বিব্রতকর অবস্থা।
– আফসার মাতবর পবন।তোমার পবন ভাই,সত্যি করে বলো তার সাথে কি তোমার কোন সম্পর্ক ছিলো?নাকি তাকে নিয়ে কোন অন্যরকম ফিলিংস ছিলো?
– কিসব ফালতু কথা বলছেন আপনি?নিজের বাবার দোষটা এখন পবন ভাইয়ের উপর দিয়ে ঢেকে দিতে চাইছেন?
– একদমি না।আমার বাবার কান্ডের জবাবদিহিতা আমি নেবো।তার আগে আমি যা জানতে চাইছি তার উত্তর দাও।
আরমিন হকচকালো।সুহাইলের প্রশ্নের সুরটা যে অন্যরকম তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে সে।
– আপনি যা ভাবছেন তা না।শুধু শুধু আমাকে হেরেস করবেন না।
সুহাইল সন্দিহান চোখে তাকালো।ঝটপট বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো মুখোমুখি হলো আরমিনের।
– আমি জানি পবনের সাথে তোমার কিছু নেই কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয়ে আমাকে না জানিয়ে পবন কে জানানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলে?আমার এতগুলো কল ইগ্নোর করে দেদারসে পবনকে কল করে গেলে এর কারন কি?নিশ্চই আমার থেকেও পবন তোমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।
– আপনার ফোন আমি কেন রিসিভ করবো?আমি চেয়েছি আপনার জীবন থেকে চলে যেতে।
আরমিনের চড়া গলা।এতে সহজে আরমিন কি করে পারলো কথাটা বলতে।তার জীবন থেকে চলে যাবে মানে কী?সুহাইলের রাগটা এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।নাকের পাটা ফুলে উঠে।
– আমি তোমার পরিবার কিংবা তোমায় নিয়ে মন্দ কিছু বলে ছিলাম?বলো বলে ছিলাম?
– ন..না।
– তাহলে কেন চলে গেলে?আমার উপর বিশ্বাস ছিলো না?সুহাইল আসলে সবটা ঠিক করে দেবে।নাকি আমার ভালোবাসার ভিত্তি মজবুত ছিলো না?
আরমিনের মাথা নুইয়ে গেলো।সুহাইল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়ালে দু’চারটে ঘুষি লাগায়।তাতেও তার রাগ নিয়ন্ত্রণ হলো না।আরমিনকে টেনে এনে দাঁড় করায় দেয়ালের সাথে।
– আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তোমায় না পেতাম তবে কী হতো তুমি বুঝতে পারছো?এই বোকা মেয়ে বুঝতে পারছো?এই শহর ভালো নয় অলিতে-গলিতে জানোয়ার ঘুরে ফিরে, তোমায় খুবলে খেতেও তাদের বিবেকে বাঁধতো না।আর এই পবন তোর কে হয়?হ্যা কে হয়?যেখানে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেও তোর পবনকে লাগে।মানলাম পবন তোর সব ছিলো।আমি তোদের সম্পর্ক নিয়ে কোনদিন নিন্দা করিনি,করতামো না কিন্তু আজ যদি তোর কোন অভিযোগ থাকতো তাহলে তুই সেটা মামীকে জানাতি,জাবির আংকেলকে জানাতি না হয় আছীম আংকেলকে।আমি তো পবনকে তোর গার্জিয়ান ভেবে বিয়ে করিনি তাহলে এই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে পবন কেন সবকিছুর উর্ধে থাকবে?আমি তোকে দেদারসে ফোন দিয়ে গেলাম আর তুই কি করলি আমার ফোন কেটে পবনকে ফোন করেছিস।আমার কোন মূল্য নাই তোর কাছে,আমার ভালোবাসার মূল্য নাই, আমার পা/গলামোর মূল্য নাই?মানছি আমার বাবা খারাপ কথা বলেই ফেলেছে সেটা আমাকে জানানো যেতো।সিয়ামকে জানানো যেতো তুই তা না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলি কোন সাহসে?কার অনুমতিতে বাড়ি থেকে বের হলি?
সুহাইল ঘেমে গেছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে।সিয়াম,ফারজানা করাঘাত করা যাচ্ছে দরজায় কিন্তু তাতে পাত্তা দিলো না সুহাইল।সে আরমিনের চোখে চোখ রেখে আজ রা/গ উড়িয়ে দিচ্ছে।আরমিন ভয়ে গুটিয়ে গেলো,মনে হলো কোন দা/নবের পাল্লায় পড়েছে সে।
– এই বলতো একজন মেয়ের বিবাহিত জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কে?
– স..স্বামী।
– তোমার জীবনে আমি কখনো বলেছি এটা করো না ওটা করো না।কিংবা বাজে কোন ফিডব্যাক দিয়েছি তোমাকে?যেখানে আমি ঠিক তাহলে তোমার হতাশা আছে কোথা থেকে?আমি আছি তো সব ঠিক করে দিবো এই কথাটা আর কতবার বললে তুমি আমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে।
সুহাইল ধমকে উঠলো আরমিন কানে হাত চেপে ফোঁপাতে থাকে।
– স..সুহাইল আপনার এই রূপ আমার ভাল্লাগছে না আপনি থামুন প্লিজ।
আচমকা থেমে গেলো সুহাইল।লন্ডভন্ড করে দেওয়া তুফানটা এক নিমিষে হাওয়া হয়ে গেলো।বেগতিক পরিস্থিতি এক নিমিষে ঠান্ডা হয়ে গেছে।সুহাইল এগিয়ে এলো টি-টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা হেয়ালি ভঙ্গিমায় নিয়ে এগিয়ে দিলো আরমিনকে।
– পানিটা শেষ করো মরিয়ম।
আরমিন কাঁপানো হাতে পানির গ্লাস নিলো।ঢকঢক করে এক নিমিষেই শেষ করে দিলো গ্লাসটা।সুহাইল এগিয়ে এলো আরমিনের কাছে।মেয়েটার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে শান্ত স্বর বলে,
– দু’দিন পর কেশবপুর যাবো তোমার জন্য দুটো সুতোর শাড়ি,আর জামা এনেছি দেখো তো পছন্দ হয় কি না।
আরমিন হকচকালো,ভড়কালো,অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালো সুহাইলের দিকে।ছেলেটার হাভ ভাব এমন যেন একটু আগে কিছুই হয় নি।সবটা ঠিক ঠাক।প্রলয়ংকরী ঝড়টা ছিলো তার স্বপ্নে! মিছে স্বপ্ন দেখছিলো সে।আরমিনের মাথাটাই ঘুরে উঠলো প্যাকেট হাতে ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে।সুহাইল আড় চোখে তাকালো তার দিকে।আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে আফসোস সুরে বলে,
– এতটুকুতেই এই দশা।দূর আমাকে সহ্য করার মতো ক্ষমতা তোমার নেই!
#চলবে
#মায়াপ্রপঞ্চ
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৪১]
________________
অনেকদিন পর নিজের স্থানে ফিরে আরমিন প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়।কতদিন ছিলো না এখানে অথচ এই কেশবপুরের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে তার বেড়ে চলা।বাড়ির উঠনে আজ বেশ জমজমাট আয়োজন।শামিয়ানা টাঙিয়ে বড় বড় পাতিলে রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি।গ্রামের এতিমখানার বাচ্চাগুলোকে আজ দুপুরের ভোজন করানো হবে।পোড়া কাঠ কয়লার গন্ধ ছড়িয়ে গেছে চারিদিকে।এই পরিবেশটায় আরমিন কেমন যেন বিয়ে বাড়ির অনুভূতি পাচ্ছে।দরজা থেকে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলো জাবির আর সুহাইল বাবুর্চির সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত।
– তুমি যেভাবে বলেছিলে সবটা সেভাবেই করা হলো।দুপুরের সময় মসজিদের হুজুর এসে মিলাদ পড়াবেন।
– ঘরের কাজ কতটুকু?
– এইতো আর একমাস পরেই উঠতে পারবে।ঘরের রঙ করা বাকি আর ইলেক্ট্রিক কাজ বাকি।ঘরের জন্য মিলাদ যেহেতু পড়াচ্ছই তাহলে সালেহাকে আজ জানিয়ে দাও ঘরটা তুমি করেছো।
– না না এসব বলা যাবে না।আমি তো ভাবছিলাম মিলাদের কাজটা ঘরে উঠার আগের দিন করবো কিন্তু আমার হাতে সময় কম কানাডা একবার যেতে হবে সব ব্যস্ততার মাঝে কেশবপুরে আসা হবে না।তাই এইদিকের কাজটা আগে সেরে নি।
– সালেহা কি আজীবন জানবে না এই ঘরের মালিক তুমি?
– আমি মালিক কে বললো?সব কাগজপত্র রেডি, আমি মামির নামেই বাড়িটা হস্তান্তর করবো।
জাবির শ্বাস ছাড়লেন সবটা ভালোয় ভালোয় মিটে গেলেই মঙ্গল।
.
আরমিন সুযোগ বুঝে মাতবর বাড়িতে প্রবেশ করে।অনেকদিন পর মাতবর বাড়িতে এসে মনটায় অন্যরকম শান্তি লাগছে।রান্না ঘরে উপস্থিত ছিলো আমীনা এবং নাহার বেগম। আরমিনকে দেখে আমীনার মুখে হাসি ফুটলেও নাহার বেগমের মুখখানা চুপসে যায়।
– কেমন আছো আন্টিরা?
আমীনা এগিয়ে এলো আরমিনের দু’গালে হাত রেখে স্বগতোক্তি স্বরে বলে,
– মাশাআল্লাহ পুরো রানী রানী লাগছে তোকে।
– দূর কিসব বলো রানী লাগবে কেন?
– জানি না তবে এটা বলতে পারি এখনকার আরমিন আর আগের আরমিনের মাঝে বিস্তার তফাত।তুই সুখে আছিস তো?তোর ফুফা ফুফী যত্ন নেয়?
– ফুফাটা যেমন তেমন তবে তোমাদের জামাই বেশ ভালো।আমার কত যত্ন নেয় জানো।
– সেটাই তো দেখছি।বিয়ের পর আপনি আরো বেশি রূপসী হয়ে গেছেন।
আরমিন খিলখিলিয়ে হাসলো।পেছন থেকে নাহার বেগম তার দিকে তাকিয়ে আছে ছলছল চোখে।
– বড় আন্টি কেমন আছো তুমি?তোমার এই হাল কেন?শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছো।
– আমি ঠিক আছি।তোর সংসার কেমন চলছে?
– বেশ ভালো।পবন ভাই কোথায় আন্টি তাকে আমি কতবার ফোন করেছি কিন্তু সে ফোন ধরেনি আমার উপর কি রেগে আছে?
নাহার বেগম প্রত্যুত্তর করলো না তিনি তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।আমীনা পরিস্থিতি সামলাতে তড়বড়িয়ে বলে,
– সে বাড়িতে নেই।
– ওও। মনিরা কোথায়?
– রুমে আছে যা গিয়ে দেখা করে আয়।মেয়েটা তোর জন্য কতদিন কেঁদেছে জানিস।
আরমিন ছুটে চলে যায় দোতলায়।মনিরা রুমে ডুকতেই চোখে পড়ে পবন আর মনিরাকে।পবন গেমস খেলছে আর মনিরা পাশে বসে নিশ্চুপ দেখছে।
– আরে পবন ভাই আমাকে দেখছি ভুলেই গেছো।
সেই চিরচেনা ডাক,চিরচেনা কন্ঠ,প্রত্যাশিত মানুষটাকে দেখে পাথর বনে যায় পবন।মোবাইলটা হাত থেকে রেখে অবাক পানে তাকায় আরমিনের দিকে।বুকের ভেতরটা ধুকপুক শব্দ কয়েক গুন বেড়ে গেছে।ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সবটা।কই কেউ তো তাকে বলেনি আজ আরমিন আসবে, সবাই কথাটা লুকিয়ে গেলো।
– এই পবন ভাই কী ভাবছো?
পবন ধ্যান ভাঙ্গলো বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো,
– কিছু না।
– তুমি কোথায় যাও আমি কতদিন পর এসেছি আমার সাথে একটু গল্প করো।
– ইচ্ছে করছে না।একটা কথা মাথায় রাখিস তোর এখন বিয়ে হয়েছে আমার সাথে বেশি মেলামেশা করতে আসবি না।
– কেন বিয়ে হয়েছে বলে কি তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবো।
আরমিন পবনের হাত টেনে পাশে বসালো। মেয়েটার ছোঁয়ায় ক্রমশ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে পবন।ইচ্ছে করছে চিৎকার দিয়ে বলতে, ‘তুই কেন আমার হলি না?আমি কী তোর এতটাই যোগ্য!’।কিন্তু বাইরে থেকে পবন নিশ্চুপ আরমিনকে একবার ভালোভাবে পরখ করে নিলো সে।মেরুন রঙের একটা সিল্কের শাড়ি গলায় সীতাহার, কানে ঝুমকো,দু’হাতে মোটা দুটো বালা।আগের থেকেও বেশ রূপবতী হয়ে গেছে মেয়েটা।আগের থেকেও বহুগুন সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে এই মায়াবী মুখটায়।
-তোমার চোখ মুখের এত বাজে অবস্থা কেন?নিজের যত্ন নাও না?
– আমি ঠিক আছি।
– পবন ভাই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো?
– না।
– তবে এতবার ফোন দিলাম ধরলে না কেন?আমি কি কোন ভুল করেছি?
– তুই কোন ভুল করিস নি।
– তাহলে?
– তোর বিয়ে হয়েছে এখন আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবি।এমন ভাবে চলবি তোর শশুড় বাড়ির কেউ যেন তোর নামে উল্টাপাল্টা গুজব তুলতে না পারে।যতই তোর আমার সম্পর্ক বন্ধুর মতো থাকুক সবাই সেটা মানবে না।এই যে রুমটায় দুজনে একসাথে বসে আছি অন্যরা দেখলে খারাপ ভাববে আমি গেলাম।আর আমার রুমে হুট হাট আসবি না।
আরমিন চুপসে যায়।পবনের মুখ থেকে এমন কড়া কথা শুনবে স্বপ্নেও ভাবেনি।অথচ ভেবেছিলো পবন তাকে দেখলে খুশি হয়ে যাবে।খোশগল্পে মেতে থাকবে দুজনে আরমিনের সব ভাবনা মিথ্যা প্রমান করে দিলো পবন।বিয়ে হলে কি মেয়েরা তবে সত্যি পর হয়ে যায়।
.
মনিরার সাথে আরমিন বাড়ির সবদিকে ঘুরে এলো। সবাই যে কেন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে বুঝে না সে।প্রমা আর প্লাবন দুজনে ছাদে আছে শুনে মনিরাকে নিয়ে ছাদে গেলো আরমিন।
– প্রমা-প্লাবন কেমন আছিস তোরা?
– হুম ভালো।
বেশ হেয়ালি ভঙ্গিমায় উত্তর দিলো প্রমা।প্লাবন মুখ ঘুরিয়ে তাকালো অন্যদিকে।বাড়ির ছোট সদস্যরাও তাকে ইগ্নোর করছে কি অদ্ভুত।
– তোরা কি আমার উপর রাগ করে আছিস?কথা বলিস না কেন?
– তোমার সাথে কথা বলার মতো ইচ্ছে নাই আমাদের।
– এসব কেন বলছিস?আমি এত তাড়াতাড়ি তোদের কাছে পর হয়ে গেলাম।কুয়াকাটা থেকে তোদের জন্য কত কিছু আনলাম দেখবি না?
– যা এনেছো ফেরত নিয়ে যাও লাগবে না আমাদের কিছু।
প্লাবনের রুক্ষ স্বর।এভাবে এই বাড়ির কেউ কোনদিন কথা বলেনি আরমিনের সাথে।সবাই আদরে – আহ্লাদে আপন করে নিয়েছিলো কিন্তু বিয়ের পর এমন তিক্ততার মাঝে পড়বে স্বপ্নেও ভাবেনি।
– আমি তোদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি?বাড়ির কেউ আমার সাথে কথা বলে না কেন?সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে কেন আমায়?
– কারন তোমার জন্য এই পরিবারের সুখ ম-রে গেছে।আনন্দ ফুরিয়ে গেছে।আমাদের বাড়িটা আগের মতো নেই আপু।সব দায় কী তোমার নয়?
-আ..আমি কি করেছি এভাবে বলছিস কেন তোরা?
– পবন ভাইয়াকে বিয়ে করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো তোমার?জানো ভাইয়া তোমার জন্য কত কেঁদেছে,নেশা করেছে হাসপাতালে দুইবার ভর্তি ছিলো।
আরমিন থমকে যায়।অসাড় হয়ে আসে পা যুগল।ছাদের এক কোনায় রেলিং এর সাথে গা এলিয়ে দাঁড়ায়।
– আমাকে বলবি তোরা কি হয়েছে?
প্লাবন একে একে সবটা বলে দেয় আরমিনকে।বাচ্চা ছেলে-মেয়ে গুলোর কথার ভাজে আরমিন বুঝে নিয়েছে এই বাড়িতে আরমিনের মর্যাদা সারাজীবনের জন্য ক্ষয়ে গেছে।সে ফিরে পাবেনা আগের পবন ভাইকে, আগের নাহার বেগমকে।এখন সবাই শুধু তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে।কিন্তু কোথাও আরমিন নিজের দোষটা খুঁজে পেলো না।কোন দিন পবন বলেনি তাকে ভালোবাসে।বরং আরমিন যখন জানতে চেয়েছে তাকে হাসির তালে অপদস্থ করেছে।সুহাইলের সাথে আরমিনের বিয়েটাতো জাবির নিজেই ঠিক করেছে তবে এখন এসব বলে কি লাভ?
আরমিন কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।আর কোনদিন এই বাড়ির ত্রি-সীমানায় আসবে না সে কোনদিন না।
.
মিলাদ শেষে এতিমখানায় খাবার পাঠানো হয়।সবার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে সুহাইল।কেশবপুরে আসায় মাফী রাত্রি এবং মনিও দেখা করতে এসেছে তাদের সাথে।সময়টা শেষ বিকেল সবাই মিলে আড্ডার আসর জমিয়েছে আরমিনদের ঘরে।কিন্তু আড্ডায় মন নেই, মেয়েটার মন খুঁত খুঁত করছে।প্লাবনের বলা প্রতিটা কথা যদি সত্যি হয় তবে সারাজীবন কোন অপরাধ না করেও নিজেকে অপরাধী হিসেবে বেঁচে থাকতে হবে।সালেহা হালকা নাস্তা আয়োজন করতে পাকঘরের দিকে যায় সেই সুযোগে রিহানাকে অন্য রুমে নিয়ে আসে আরমিন।
-আমি যাওয়ার পর পবন ভাইদের বাড়িতে কি হয়েছে রিহানা?সত্যটা বল আমাকে।
– না না আমি কিছু জানি না।
– মা তোকে বারণ করেছে তাই না?প্লাবন প্রমা আমাকে সব বলেছে পবন ভাই নাকি….
– আপুরে আল্লার দোহাই এইসব কথা মুখে এনো না যা হবার হয়েছে তুমি সুহাইল ভাইকে নিয়ে সুখে থাকো।
– কিন্তু তাতে আমার দোষ কোথায়?সবাই কেন আমাকে এড়িয়ে চলছে?
– তারা হয়তো চায় না তুমি মাতবর বাড়ি যাও।কারন মাতবর বাড়িতে গেলে নিশ্চই পবন ভাইয়ের মুখোমুখি হবে এতে পবন ভাইয়ের কষ্ট বাড়বে।কেউ তোমার দোষ দিচ্ছে না আপু।নিজেকে অপরাধী ভেবো না।
আরমিন স্থির হলো কিন্তু তার মনটা অস্থির রয়েই গেছে।দম বন্ধ লাগছে সবকিছু নিজের মাঝে বেড়ে গেছে অপরাধ বোধ।
_
সালেহা নামায আদায় করছিলেন।রিহানাকে কিছুক্ষণ আগেই বলেছে আরমিনকে ডেকে পাঠাতে।আরমিনো দেরি না করে সালেহার রুমে ডুকে।খানিকক্ষণ বাদেই নামায শেষ করে তাকালেন আরমিনের দিকে,
– তুই নামায পড়িস না তাই না?
– ইয়ে…মানে আম্মা এই কয়েকদিন পড়ছিনা আলসেমি লাগে।
– এক চ-ড়ে গালে পাচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিবো বেয়াদব মেয়ে।কি ভেবেছিস বিয়ে হয়েছে বলে শাসন করবো না?সুহাইলকে আমি বলবো তোকে উঠতে বসতে নামাযের জন্য তাগিদ দিতে।এটাও বলবো না পড়লে আমাকে নালিশ করতে।
– উফফ আম্মা কি বলবে বলো।কাল থেকে পড়বো।
সালেহা উঠে গেলেন।ঘরে থাকা একটি ছোট আলমারি থেকে একটি বক্স বের করেন।বক্স খুলতেই সাদৃশ্য হয় একটি স্বর্নের চেইন।
– আম্মু চেইন কোথায় পেলে?
– হাস-মুরগী,ডিম,শাক-সবজি বিক্রি করে যা জমিয়েছি সেই টাকা দিয়ে এই চেইনটা কিনেছি।দেখতো কেমন হয়েছে।
– আমার রাজহাঁস গুলো কই?আসার পর থেকে দেখি নাই।
– বিক্রি করে দিয়েছি।
আরমিনের মুখটায় আঁধার ছেয়ে গেলো মন খারাপে।
– কেন বিক্রি করলে আম্মু আমার সাধের হাসগুলো।
– নসিবে থাকলে আবার কিনে দিবো।সেগুলো বিক্রি করে সব টাকা মিলিয়ে এই চেইনটা কিনেছি সুহাইলের জন্য।
– বড়লোকের ব্যাটার জন্য নিজের জমানো টাকা খরচ করতে তোমায় কে বলেছে?দেখিও সে নিবে না তোমার উপহার।
– শশুড় বাড়ি থেকে উপহার দিতে হয়।যেটুকু পেরেছি কিনেছি।
আরমিন হাসলো।কিছুক্ষণ পর সালেহা ডাকলো সুহাইলকে গলায় চেইন পড়াতে সালেহা ভেবেছিলো ছেলেটা বারণ করবে কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে হাসিমুখে তা গ্রহন করে সুহাইল।সালেহাকে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে বলে,
– আপনার দেওয়া দু’টি উপহার আমি আমার কাছে যত্নে রাখবো মামী।শুধু আমার জন্য দুআ করবেন।
.
আজকের দিনটা গেলো আরমিনের যেমন তেমন হতাশায় ঘেরা।সুহাইল আজ বেশি সময় দিয়েছে সালেহাকে এবং রিহানাকে।সন্ধ্যার পর খোশগল্পে মেতে ছিলো তিনজনে।সালেহা এখনো জানেন না তার বাড়ির পাশে এই ঘরটি কার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।তাই মিলাদ,এতিমখানায় খাবার ব্যবস্থায় সুহাইলের অংশগ্রহণ নিয়ে অতশত ভাবলেন না সালেহা।ভেবেছে হয়তো জাবির আসতে বলেছে।আরমিনকে ছাড়াই সুহাইল একবার মাতবর বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছে।সবাই তাকে সাদরে গ্রহণ করেছে, সুহাইল বুঝতেও পারলো না তার অন্তরালে এই বাড়াতে ঠিক কি কি চলেছে।সবচেয়ে অবাক করা বিষয় সুহাইলের সাথে আজ পবনের বেশ সখ্যতা দেখা যায়।এতে সবাই অবাক হয়েছে বটে!
রাতের খাবার শেষে আমীনা পবনের রুমে গেলো।ছেলেটা আজ কি করে স্বাভাবিক ছিলো বেশ ভাবাচ্ছে তাকে।কিন্তু রুমে যেতেই তার ভ্রু যুগল কুচকে গেলো মিথ্যা প্রমাণিত হলো সব ভাবনা।
– পবন তোর চোখ লাল কেন?
– ক…কই?এমনি।
– মিথ্যা বলিস না আমার সাথে কেঁদেছিস?
পবন তাচ্ছিল্য হাসলো।বিছানায় বসে হেয়ালি সুরে বলে,
– বুঝো যখন তখন জিজ্ঞেস করে বিব্রত করো কেন?
– তাও ঠিক।
– আরমিন বেশ সুখেই আছে তাই না চাচী?মেয়েটাকে দেখে আমি যেন মূর্ছা গেছি আগের আরমিন আর এখনকার আরমিনের মাঝে অনেক তফাত।কি সুন্দর লাগছিলো তাকে!একদম নববধূ লাগছিলো।
– এখন কি তোর আপসোস বেড়ে গেছে?এসব মাথা থেকে ঝেরে ফেল।
– না আফসোস লাগছে না।আরমিন সুখে আছে এতেই আমি খুশি।সুহাইল তাকে চোখে হারায়।আরমিন আমার হয়নি ভালোই হয়েছে আমি তো তার কদর করতে পারতাম না।সারাক্ষণ ঝগড়া ঝামেলায় দিন কাটাতাম।
– মিথ্যা স্বান্তনা দিচ্ছিস নিজেকে বুঝতে পেরছি।
– তুমি ছাড়া আর কে বা বুঝবে।আমি ঘুমাবো মনিরার কাছে যাও চাচী।
– আবার মিথ্যা তুই এখন সিগারেট টানবি রাতভর সেটাও যানি।তোর যা ইচ্ছা কর আমার আর কিছু বলার নাই।
_
আরমিনের মন ভালো নেই সেটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলো সুহাইল।কিন্তু মেয়েটার মন কেন ভালো নেই তা জানতে পারেনি।
– মরিয়ম এত রাত হয়ে গেছে এখনো ঘুমাও নি কেন?
– ভালো লাগছে না সুহাইল।
– মাথা বিলি কেটে দি ঘুম আসবে।
– মাফী ভাইয়া কবে যাবে কানাডা?
– তিনদিন পর।আমিও চলে যাবো।
– সে কি কবে?
– তোমার এক্সামের দশবারো দিন আগে।আমার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে এখানে থেকে সেসব হ্যান্ডেল করা সম্ভব নয়।তোমাকে এখানে রেখে যাবো।
– আমার পরিক্ষার তো আর বেশিদিন নেই মাত্র তিনমাস।
– এই তিনমাস ভালোভাবে পড়তে হবে।বিয়ে হলো এক মাসের মতো এই সময়টাতে অনেক ঘুরেছি ফিরেছি এখন সময় পড়াশোনার।যদি তোমার রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে ওই দেশে পড়তে বেশ কষ্টসাধ্য হবে।আমি চাই মিসেস সুহাইল বেস্ট রেজাল্ট উপহার দিক আমাকে।
– আমি সেখানে গেলে সবাইকে ছাড়া থাকবো কি করে?হুটহাট তো আসা যাবে না।আমি যাবো না কানাডায়।
– ঠিক আছে তাহলে আমি ফিরে যাবো তুমি পড়ে থাকবে এখানে।আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে তো?
আরমিন মুখ ঘুরিয়ে নিলো।কপট রাগ দেখালো সুহাইলের উপর।গায়ের উপর থাকা পাতলা কাঁথাটা এক টানে সরিয়ে দিলো সুহাইলের গায়ের উপর থেকে।সবটা নিজের কাছে রেখে গুটিয়ে ঘুমানোর ভান করে।
– তুমি কি রেগে গেছে?
– না।
– তাহলে রাগটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি আমরা কালকেই ঢাকায় ফিরে যাবো দুপুরের পরে।তুমি তোমার বই থাকা রেডি রেখো।
আরমিন রাগ হলো না বরং মনে মনে খুশি হলো এখানে থাকলে পবনের কথা মনে পড়ে যাবে। আজকে জানা তিক্ত সত্য কথা গুলো কখনো ভুলবে না সে কখনোই না।
#চলবে