শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০৭,০৮,০৯,১০

0
1119

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৭,০৮,০৯,১০
#Arshi_Ayat
০৭
খালার আবদার উপেক্ষা করে স্বর্ণ বেরিয়ে পড়লো সকালে।ক্লাস,প্রাইভেট শেষ করে বাসায় ফিরবে।মা বাসায় একা।অন্তত কয়েকটা দিন একটু শান্তিতে কাটানো যাবে আর নিজের বাসার মত শান্তি কোথাও নেই।

ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনের দিকে যাওয়ার সময়ই আরবের সাথে দেখা হয়ে গেলো স্বর্ণর।আরব আজকে ক্লাস করে নি একটু আগে ভার্সিটিতে এসেছে শুধুমাত্র স্বর্ণর সাথে কথা বলার জন্য।ওকে দেখে স্বর্ণ একটু চমকালো।কাল রাতে যা কথা হয়েছিলো তাতে এই ছেলে যে ওর মুখ কখনো দেখবে সেটা নিয়েই সন্দিহান ছিলো স্বর্ণ।কিন্তু নিজের উৎকন্ঠা বাইরে একবিন্দুও প্রকাশ করলো না স্বর্ণ।চমৎকার হেসে বলল,’কি অবস্থা?আজকে ক্লাসে আসো নি যে।’
‘একজন স্পেশাল মানুষের সাথে কথা বলার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম তাই অ্যাটেন্ড করি নি।’
‘তাই!তা কে সেই স্পেশাল মানুষ?’
‘তুমি।’
স্বর্ণ একটু চমকানোর ভান করে বলল,’সত্যি!’
‘হ্যাঁ।তুমি ফ্রী আছো কতক্ষণ?’
‘একঘন্টার মত ফ্রী আছি।’
‘চলবে।চলো বের হই।’
‘কোথায় যাবে?’
‘গেলেই দেখবে।’
‘আহা বলো না!’
‘চিন্তা করো না তোমাকে কিডন্যাপ করবো না।’
‘সেটা তুমি চাইলেও পারবে না।’
‘আমি চাইও না।’
স্বর্ণ ছেলেটার পাগলামি দেখে হাসলো।দেখা যাক কতোটুকু করতে পারে।

কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে বসলো ওরা।লাঞ্চ অর্ডার করে স্থির হয়ে বসলো দু’জনে।আরব ভেতরে ভেতরে একটু গুছিয়ে নিয়ে শুরু করলো,’আমি যেদিন তোমাকে ক্লাসে ফার্স্ট দেখি সেদিনই ভালো লেগে যায়।এরপর তোমাকে আমি নোটিশ করা শুরু করি।কোনো একভাবে জানতে পারি তুমি সিঙ্গেল।ভেবেছিলাম প্রপোজ করে দিবো কিন্তু পরে ভাবলাম আদৌ তোমার প্রতি আমার অনুভূতিগুলো সত্যি নাকি শুধু আকর্ষণ।ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতেই সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেলাম আমরা।তারপর একদিন ভাবলাম বলেই দিবো,রিং কিনলাম,রিসোর্ট বুকিং করলাম সব প্রস্তুতি নিলাম।ফ্যামিলির সবাই জানতো।আমার সাথে সবাই এক্সাইটেড ছিলো আসলে আমি সবার অনেক আদুরে তো তাই আমি খুশী হলেই ওরা খুশী হয়ে যায়।যেদিন তোমাকে বলবো ঠিক করেছিলাম তার আগের দিন আমার চোখে ঘুম ছিলো না,ভেতরে ভেতরে এতোটা খুশী কখনোই হই নি।অতঃপর সকালে ফিটফাট হয়ে ক্যাম্পাসে এলাম।তোমার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু তুমি আসছিলে না।আমি তোমার বান্ধবী জেরিনকে জিগ্যেস করলাম ও বলল তুমি ঘুরতে গিয়েছো উচ্ছ্বাস ভাইয়ার সাথে এবং তোমরা গতকালই সম্পর্কে গিয়েছো।কথাটা হজম করতে আমার কয়েক মিনিট লেগেছিলো।আমি কাউকে কিছু না বলে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলাম।এরপর আমার ঠিক হতে বেশ সময় লেগেছিলো।পড়াশোনা লাটে উঠেছিলো।অনেক কষ্টে নিজেকে ফিরিয়ে এনেছিলাম।এতদিন পর সেদিন জানতে পারলাম তোমাদের ব্রেকাপ হয়েছে।খবরটা শুনে আমি অনেক খুশী হয়েছিলাম।আগেরবারের মত দেরি না করে এবার বলেই দিলাম।আমাকে নিরাশ করো না,প্লিজ।’
আরব পকেট থেকে একটা রিং বের করে স্বর্ণর সামনে ধরে বলল,’উইল ইউ বি মাই মিসেস?’
স্বর্ণ এতোটাও ভাবে নি।প্রপোজ পাবে এতটুকু আন্দাজ ছিলো সেরকম প্রিপারেশনও ছিলো কিন্তু ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে কে জানতো!এখন কি বলবে এই ছেলেকে?স্বর্ণ একটু ইতস্তত কন্ঠে বলল,’আমার সময় প্রয়োজন আসলে।হুট করে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’
আরব একটু চুপ থেকে হতাশ হয়ে বলল,’আচ্ছা,সময় নাও কিন্তু আমাকে নিরাশ করো না।’
স্বর্ণ কিছু বলল না।মৌন রইলো।রিংটা ওর কাছেই রাখতে বলল।খাবার এসে পড়ায় এরপরের সময়টা বেশ চুপচাপ ছিলো দু’জনে।খাওয়া শেষ করে বের হওয়ার সময় আরব বলল,’আমি প্রজেক্ট’টা ছেড়ে দিয়েছি।’
স্বর্ণ চমকালো,স্তম্ভিত গলায় বলল,’কি!’
‘হ্যাঁ,আমার স্কলারশিপের প্রয়োজন নেই।যদিও এটা আমার স্বপ্ন ছিলো কিন্তু এখন আমার স্বপ্ন তোমার সাথে থাকা।তাই এটা আমি ছেড়ে দিলাম কিন্তু তুমি দিও না।আমি চাই তুমিই পাও।’
‘কিন্তু!আমি মজা করে বলেছিলাম আরব।তুমি এটা ছেড়ে ঠিক করো নি।আমি মানতে পারছি না।’
‘ঠিকই করেছি।’
‘না,আরব।আমার নিজেকে অপরাধী লাগছে।তুমি আমার সামান্য কথায় ছেড়ে দিলে কেন?’
‘তোমার কোনো কথাই সামান্য না আমার জন্য।আর আমি না ছেড়ে দিলেও তুমিই পেতে।’
‘আমার কষ্ট হচ্ছে।’
‘কষ্ট পেও না।আমি মন থেকেই করেছি।’

প্রাইভেট থেকে বাসায় ফিরেও ভালো লাগছে না স্বর্ণর।মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে ছেলেটা ওর জন্য নিজের স্বপ্ন ছেড়ে দিলো।তাহলে কি সত্যিই ভালোবাসে?

জেরিনকে বিষয়টা জানালো স্বর্ণ।সব শুনে জেরিন বলল,’আরব অনেক ভালো ছেলে।ওই তোর জন্য পার্ফেক্ট হবে।আর আমি বলি কি তুই এসব স্কলারশিপ ছেড়ে ওকেই বিয়ে করে ফেল।’
‘আরে চুপ কর তো!’
‘আরবকে হাতছাড়া করিস না পস্তাবি।’
স্বর্ণ কিছু বলল না।ব্যাপারটা নিয়ে নিজেও খুব দ্বিধায় আছে।কালকেই জমা দিতে হবে প্রজেক্ট’টা।স্বর্ণ’রও প্রায় কম্প্লিট।

আজ খুব সকালে গোসল সেরে শাড়ি পরে,সেজেগুজে নিলো স্বর্ণ।বেশ অনেকদিন পর সাজলো আজ।আগে যখন উচ্ছ্বাসের সাথে ঘুরতে যেত তখন এভাবে সাজা হতো।ইদানীং আর কিছুতেই মন বসে না কিন্তু আজ কেনো জানি মনে হলো একটু সাজঁ যেতেই পারে।নিহারিকা খানম মুগ্ধ হয়ে মেয়ের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন।অতঃপর উৎকন্ঠিত কন্ঠে বললেন,’আজকে কি কোনো প্রোগ্রাম আছে?’
‘না।এমনিই।’
‘তোকে তো সাজতেই দেখি না এখন আজকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম।’
স্বর্ণ হেসে ফেললো।মা’য়ের দিকে চেয়ে বলল,’কেমন লাগছে আমাকে?’
‘ভিষণ সুন্দর লাগছে।নজর না লাগুক কারো।’
স্বর্ণ হাসলো।টিপ’টা পরে আয়নায় নিজেকে আরেকবার দেখে নিয়ে বলল,’মা,তুমি তৈরি থেকে আজকে আমরা খালার বাসায় যাবো।তোমাকে দেখতে চেয়েছে খালা।আমাকে বলেছে নিয়ে যেতে।’
‘আজকেই?’
‘ওরা চলে এলে আর পাবে সময়?এসেই কি নাটক শুরু করে দেখবে।তারজন্য প্রস্তুত হও।’
‘আচ্ছা তাহলে তুই ক্লাস শেষ করে বাসায় আয়।আমি রেডি হয়ে থাকবো।’
‘আচ্ছা মা।’
স্বর্ণ বেরিয়ে গেলো।বের হওয়ার সময় আরবকে মেসেজ করে বলল,’ক্যাম্পাসে থেকো,কথা আছে।’
মেসেজটা দেখেই আরব শোয়া থেকে বসে পড়লো।সাথে সাথেই রিপ্লাই করলো,’কি কথা?’
‘বলে দিলে আর আসবে কেনো?’
‘বলে দিলেও আসবো।বলো না,টেনশন হচ্ছে তো আমার।’
‘ধ্যাৎ এমন করলে কিন্তু বলবোই না।আসতে বলছি আসবা।এত কথা ক্যান?’
‘আচ্ছা,সরি।আসছি,একটু ওয়েট করো।’
কথা শেষ করেই আরব রেডি হতে লেগে গেলো।আজ নিশ্চয়ই স্বর্ণ ভালোবাসা স্বীকার করে নেবে।এত তাড়াতাড়ি যে মেনে যাবে কল্পনাও করে নি আরব।ভেবেছিলো অনেকদিন ঘুরাবে।কিন্তু ফাইনালি অপেক্ষার অবসান হবে।খুশীতে নাচতে পারলে ভালো হতো।স্বপ্ন পূরণ হবে শেষ পর্যন্ত।দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন!

ক্যাম্পাসে এসে প্রথমেই ধাক্কা খেলো স্বর্ণকে দেখে।আজকে এত সুন্দর করে সেজেছে যে চেয়েই থাকতে মন চাইছে।আরব কিছুটা অভিমানের স্বরে বলল,’তুমি,এত সুন্দর করে সেজে আসবে আগে বললে তো আমি পাঞ্জাবি পরে আসতাম।কেমন লাগছে আমাকে?শুধু একটা শার্ট পরে চলে আসছি।মানাচ্ছে না একদম!’
‘খালি পকপক।চুপ একদম,আসো আমার সাথে।ক্যান্টিনে বসি।ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে।’
আরব স্বর্ণের সাথে হাঁটতে হাঁটতে না হলেই কয়েকবার জিগ্যেস করে ফেলেছে কি ইম্পর্টেন্ট কথা।প্রত্যেকবারই স্বর্ণ ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে ফেলে।অবশেষে ক্যান্টিনে এসে বসতেই আরব অনুরোধের স্বরে বলল,’এবার বলো না প্লিজ।আমি আর সাসপেন্স রাখতে পারছি না।’
স্বর্ণ শান্ত কন্ঠে বলল,’আমিও প্রজেক্ট’টা ছেড়ে দিয়েছি।’

০৮।

মোটা ভ্রূদ্বয় কুঁচকে স্তম্ভিত নয়নে আরব স্বর্ণের দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে মৃদু আর্তনাদের কন্ঠে বলল,’মাই গড!পাগল হয়েছো?’
‘তুমি ছেড়ে দিতে পারলে আমি পারবো না কেন?’
আরব চুল টেনে ধরে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলো।তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,’আজকে পাঁচটায় জমা দেওয়ার শেষ সময়।তুমি পাঁচটার মধ্যে জমা দেবে প্রজেক্ট পেপার্স।’
‘তবে তুমিও দিবে।’
‘না।’
‘তাহলে আমাকে জোর করতে পারবে না।যদি তুমি দাও তবেই আমি দেব।’
‘আমি দেব না।’
‘তাহলে আমিও দেব না।বিয়েশাদি করে সংসার করবো তোমার সাথে।’
‘ফাইজলামি করছো?’
‘না,একদম সিরিয়াস।এ নিয়ে আর ফোর্স করবে না।এখন চলো একটু ঘুরে আসি।’
আরব উষ্ণ কন্ঠে বলল,’আমার ভাল্লাগছে না।গেলাম আমি।’
কথাটা বলেই আর দাঁড়ালো না হনহন করে হেঁটে চলে গেলো।আরবের যাওয়ার পানে চেয়ে স্বর্ণ কেবল হাসলো।আধ খাওয়া কফিটা খেতে খেতে ফোন দেখতে লাগলো।সুমন ছবি ছাড়ছে সকাল বিকেল।ফেসবুকে আসলেই ওর ছবি না চাইতেও সামনে চলো আসছে।আর ভাই-ভাবীও কম না।স্বর্ণ তিজনকেই আনফলো করে দিলো।মন চাইছিলো ব্লক করে দিতে কিন্তু ব্লক করলে ঝামেলা করবে।এমনিতেই ফিরে এসে কি সুনামি উঠায় সেটাই দেখার বিষয়।

অকারণে কিছুটা সময় বসে থেকে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো স্বর্ণ।ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার সময় উচ্ছ্বাস আর ওর নতুন প্রেমিকার সামনাসামনি পড়লো।দু’জনই ওর দিকে তাকালো কিন্তু স্বর্ণ দূর থেকেই একবার দেখে দ্বিতীয় বার আর ফিরেও তাকালো না।ইদানীং উচ্ছ্বাস নামের মানুষটার প্রতি আর ভালোবাসা,মায়া কিছুই আসে না যেটা আসে সেটা হলো প্রচন্ড ঘৃণা।মেয়েরা যেমন উজাড় করে ভালোবাসতে পারে তেমনি ঘৃণাও করতে পারে।আর সেই ঘৃণাটা ভালোবাসার থেকেও প্রখর।না স্বর্ণ কোনো প্রতিশোধ নেবে না।কর্মফল বলে একটা কথা আছে সেটা উচ্ছ্বাস এমনিতেই ভোগ করবে সেটা দু’দিন আগে হোক বা পরে।

বাসায় এসে নিহারিকা খানমকে সাথে নিয়ে খালার বাসার দিকে চলল স্বর্ণ।ওরা আজকে আর কালকে দু’টো দিন থাকবে।পরেরদিন সকালে চলে আসবে।ওইদিনই ভাইয়ারা আসবে।স্বর্ণ খুব বুঝতে পারছে এসেই খুব বড় একটা ঝামেলা বাঁধবে।সুমন নিশ্চয়ই চাইবে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলতে।কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়।ভাবতে হবে কিছু একটা।ব্যাপারটা আরবকে জানানো উচিত?দ্বিধান্বিত হয় স্বর্ণ।

দু’টো দিন খুব ভালোমত কাটিয়ে এলো মা মেয়ে।বেশ অনেকদিন পর এত সুন্দর দু’টো দিন পার করলো ওরা।ভাইয়ারা এখনও আসে নি।মা জানালো সন্ধ্যার সময় আসবে ওরা।যাক সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ভালো থাকা যাবে।

সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো স্বর্ণ।আজকে আরবকে সুমনের ব্যাপারটা শেয়ার করবে।কারণ এখনই সবকিছু না বললে পরে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হবে।সুমন এসেই একটা ঝামেলা লাগবে তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু কথা হলো ব্যাপারটা আরব কিভাবে নেবে?ওকে এটা আরও আগে বলা উচিত ছিলো।ভার্সিটির কাছাকাছি আসতেই আরব মেসেজ করলো,’কোথায় আছো?
‘এইত কাছাকাছি।’
‘ক্লাসে যাবার আগে ক্যান্টিনে এসো তো।’
‘আচ্ছা।’
স্বর্ণ ক্যান্টিনে গিয়ে দেখলো আরব কফি খাচ্ছে আর গেমস খেলছে।ওকে দেখে বলল,’ওয়েট একমিনিট আউট হয়ে নি।’
স্বর্ণ হেসে বলল,’সমস্যা নেই।খেলো তুমি।এমনিতে ক্লাস করবো না আজকে।’
আরব ফোনেই চোখ রেখে বলল,’আমিও করবো না তাহলে।’
‘ফাঁকিবাজ হয়ে যাচ্ছো দিনদিন।’
‘ফাঁকিবাজ না বলো প্রেমিক হয়ে যাচ্ছো দিনদিন।’
স্বর্ণ উত্তরে কিছু না বলে হাসলো।তারপর আরও এককাপ কফি অর্ডার করে আরবের আউট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো।আউট হওয়ার পর আরব ফোনটা রেখে বলল,’কালকের জন্য সরি।আমি চাই নি তুমি প্রজেক্ট’টা ক্যান্সেল করে দাও।আবার এটাও ঠিক তুমি চলে গেলে আমিও একা হয়ে যাবো।পরে ভবলাম মন্দ হয় নি।প্রজেক্ট চুলোয় যাক।দু’জনে বিয়ে করে সংসারী হয়ে যাবো।’
কথাটা বলেই হাসলো আরব।ওর হাসিতে স্বর্ণও যোগ দিলো।হাসি থামতেই স্বর্ণ একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,’আমি কিছু বলতে চাই আরব।’
স্বর্ণের মুখভঙ্গি দেখে আরবও সিরিয়াস হয়ে এলো।বলল,’হ্যাঁ বলো।’
‘তোমাকে আগেই বলা উচিত ছিলো কিন্তু বলা হয়ে ওঠে নি।আসলে তুমি প্রপোজ করার কয়েকদিন আগেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ভাইয়ার এক বন্ধুর সাথে।সেসময়ে উচ্ছ্বাসের সাথে ব্রেকাপ হয় আমার।মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাই আমি।বাধ্য হয়ে বিয়েতে মত দেই।কিন্তু এখন এটা গলার কাটা লাগছে।বের হবো কিভাবে বুঝতে পারছি না।’
আরব সব শুনে স্বর্ণর হাতের ওপর নিজের একটা হাত রেখে বলল,’সমস্যা নেই আমি আছি না।’
স্বর্ণ আরবের সুন্দর মুখশ্রীর দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে বলল,’আমাকে ক্ষমা করো,আরব।’

০৯।

দুপুরের পর থেকে আকাশ কালো হতে শুরু করেছে।দূর-দূরান্ত হতে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘের মেলা বসেছে বিশাল অম্বর জুড়ে।স্নিগ্ধশীতল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে তনু মন।ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে আরব আর স্বর্ণ।স্বর্ণের একহাত আলতো করে ধরে রেখেছে আরব।আজকে ওরা কেউই ক্লাস করে নি।বিভিন্ন জায়গায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করেছে।স্বর্ণর খারাপ লাগে নি বরং অনেকদিন পর নতুন কিছু হওয়ায় ভালোই লেগেছে।আরব বন্ধু হিসেবে খুব ভালো তবে প্রেমিক হিসেবে কেমন সেটা জানে না স্বর্ণ।কারণ ওকে সে ভূমিকায় কল্পনা করতে পারছে না।শুধু বন্ধুত্ব দিয়ে কি একজীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব?

ঘোরাঘুরি শেষে আরব ওকে বাড়ি পৌঁছে দিলো।স্বর্ণ অবশ্য বলেছিলো বাসায় আসতে আরব হেসে বলল,’এভাবে বিনা অধিকারী যেতে চাই না।একদিন অধিকার নিয়েই যাবো।’
স্বর্ণ হেসে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বসতেই নিহারিকা খানম শরবত নিয়ে এলেন।মেয়েকে শরবত দিয়ে সামনাসামনি বসে বললেন,’ওরা আসবে না আজকে।কাল সকালে রওনা হবে।আবহাওয়া ভালো না তাই রিস্ক নিয়ে আসবে না।’
স্বর্ণ গা ঝাড়া দিয়ে বলল,’বাহ!ভালোই হলো।শান্তিতে থাকা যাবে।’
‘ভেবেছিস কিছু?’
‘কি?’
‘সুমনকে কি বলবি?আমি আশরাফের সাথে কথা বলে বুঝলাম ফিরে এসেই বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে চাইবে ওরা।’
‘তুমি এত চিন্তা করো না আমি ভেবে ফেলেছি কি করবো।’
‘কি ভেবেছিস?’
‘সারপ্রাইজ।তুমি চিন্তা করো না একদম।কিছুই হবে না।আমি সামলে নিবো।’
‘আচ্ছা,সাবধানে।আর কি খাবি রাতে?’
‘তোমার যা ইচ্ছা।আজকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাবো।কাল একটা ইন্টারভিউ আছে।’
‘চাকরির?’
‘হ্যাঁ।চাকরি পেলে এ বাসা ছেড়ে তোমাকে নিয়ে চলে যাবো।এই যে এরা তোমাকে এত কথা শোনায় আমার ভালো লাগে না।’
নিহারিকা খানর মলিন হেসে বললেন,’আমার এখন আর খারাপ লাগে না।’
‘কিন্তু আমার লাগে।আমি তোমাকে এখানে থাকতে দেবো না।’
‘আচ্ছা।’
নিহারিকা খানমের গলা ধরে এলো।তিনি আর কথা না বাড়িয়েই চলে গেলেন।স্বর্ণ সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

স্বর্ণ তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়লো তাই আরবের কল রিসিভ করতে পারলো না।শুতেই যেন রাজ্যের ঘুম তাকে টেনে নিয়ে গেলো এক অন্য দুনিয়ায়।

পাহাড়ি হাওয়ার তালে স্বর্ণের চুলগুলো মায়ের অবাধ্য দুষ্টু বালিকাদের মত উড়ছে।শূন্য একটা জায়গা।কেউ নেই এখানে!একদম পাহাড়ের চুড়োয় দাঁড়িয়ে আছে সে।পেছনে গিরিখাত আর সামনে গভীর সমুদ্র।দিশেহারা স্বর্ণ কি করবে?সে এখানে এলোই বা কি করে?সমুদ্রের গভীরতায় চোখ রাখতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো স্বর্ণের।তার অ্যাক্রোফোবিয়া বা উচ্চতা ভীতি আছে যার ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পা ফসকে পড়ে যেতে লাগলো পাহাড়ের চুড়ো হতে গভীর সমুদ্রে।কিন্তু হঠাৎ মনে হলো হাতটা কিছুতে আঁটকে আছে।ভয়ে ভয়ে ওপরের দিকে চাইতেই দেখলো বলিষ্ঠ একটা হাত সর্বশক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে তাঁকে।মুখটা দেখা যাচ্ছে না।শুধু চোখগুলো বোঝা যাচ্ছে।কি গভীর একজোড়া চোখ!ওর দিকেই চেয়ে আছে।স্বর্ণ ভরসা পাচ্ছে ওই চোখজোড়ায় চোখ রেখে।কিন্তু হঠাৎ কি যেন হলো!হাতের বাঁধন আলগা হয়ে এলো।স্বর্ণ হারিয়ে যেতে লাগলো সমুদ্রের অতল গভীরতায়।

তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসলো স্বর্ণ।কি ছিলো এটা?স্বপ্ন?এত বাস্তব?ফ্যান চলছে তবুও ঘেমে একাকার হয়ে গেছে সে।শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে।স্বপ্নটা ভাবাচ্ছে ওকে।হঠাৎ এমন একটা স্বপ্নই বা দেখলো কেন?কার ছিলো ওই চোখজোড়া?কেনোই বা শেষে হাতটা ছেড়ে দিলো?এসব ভেবে ভেবেই অস্থির হয়ে উঠলো স্বর্ণ।কিছুতেই মাথা থেকে বের হচ্ছে না।বিছানা থেকে উঠে ড্রইং রুমে গিয়ে পানি খেয়ে আসলো।মন অন্যদিকে নেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিলো।আরবের দশটা মিসডকল।এখন তো সাড়ি তিনটা বাজে।কল দিলে ধরবে?না থাক পরে কথা বলা যাবে।স্বর্ণ ফোন রেখে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুমের রেশও নেই চোখে।অগত্যা শুয়ে না থেকে উঠে অর্ধেক শেষ হওয়া উপন্যাসটা নিয়ে বসলো।সমরেশ মজুমদারের ‘আমি রেণু’ বইটাই পড়ছে সে।পড়তে পড়তেই একটা উক্তি খেয়ালে এলো।উক্তিটা এমন

‘এতদিনের একটা সম্পর্ক বাঁ হাত নেড়ে অবহেলায় সরিয়ে দিল,প্রয়োজন কত সহজে মিটে যায় কারও কারও!’

স্বর্ণ চোখ বুঝলো।আসলেই সে উচ্ছ্বাসের প্রয়োজনই ছিলো।প্রয়োজন শেষে ছুঁড়েও ফেলে দিলো।অথচ এসবই কি পাওয়ার ছিলো?এক চিমটি পরিমাণ ভালোবাসাও কি ছিলো না?সব কি শারীরিক চাওয়া ছিলো?এতই তুচ্ছ ভালোবাসা?স্বর্ণ ভেবে পায় না।উপন্যাস শেষ না করেই উঠে গেলো সে।পড়তে মন চাইছে না।বাকিরাত’টা এমনিই স্মৃতিচারণেই চলে গেলো।ভোরে একটু চোখ লেগে এলো স্বর্ণের।সাতটার সময় নিহারিকা খানম এসে ডেকে দিলেন ওকে।ইন্টারভিউ সাড়ে আট’টা থেকে।উঠে ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে পরিপাটি হয়ে নিলো স্বর্ণ তারপর নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো।

ইন্টারভিউ শেষে অফিস থেকে বের হতেই দেখলো আরব ফোন করেছে।রিসিভ করতেই বলল,’কেমন হলো ইন্টারভিউ?’
‘ভালোই।’
‘যাক ভালো।চিন্তা করো না হয়ে যাবে।’
‘হলেই ভালো।’
‘কোথায় আছো?’
‘বের হলাম মাত্র।’
‘ও আচ্ছা।দশমিনিট দাঁড়াও আসছি আমি।’
‘কেনো?আসার দরকার নেই।’
‘আছে।তুমি চুপচাপ দাঁড়ও।’
বলেই কল কেটে দিলো আরব।স্বর্ণের মনে হলো ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি।অতদূর থেকে কেনো আসতে হবে?স্বর্ণ মোটেও দাঁড়ালো না বাসায় চলে গেলো।এদিকে আরব এসে ওকে না পেয়ে ভিষণ অভিমান হলো।

১০।

স্বর্ণ বাসায় গিয়ে মা’কে সাথে করে হাসপাতালে গেলো।রুটিন চেক-আপ এর জন্য।এর আগেও কয়েকবার গিয়েছে তবে কেউ জানে না নিহারিকা খানম ছাড়া।

আরব অভিমানে বুক ভারী করে বাসায় ফিরলো।স্বর্ণ এরকম’টা না করলেও পারতো।কি হতো কিছুক্ষণ দাড়ালে!একসাথে কিছুসময় থাকা যেত,চোখে চোখ রেখে কথা হতো,আরব ওর দিকে চোরাচোখে বারবার তাকাতো,স্মৃতিপটে কিছুটা আদুরে মুহূর্তের জমা হতো।এইতো চায় আরব।কিন্তু স্বর্ণ কেন বোঝে না?সারাদিনে আর ফোন বা মেসেজ কিছুই করবে না সে।ওপাশ থেকে সাড়া এলে তবে মনের বরফ গলবে।

মায়ের সাথে চেক-আপ করে বাড়ি ফিরলো স্বর্ণ।বাচ্চা ভালো আছে তবে ডাক্তার আয়েশা ইয়াসমিন বলেছেন গর্ভাবস্থায় যথাসম্ভব ব্যাথার,ঘুমের ঔষধগুলো পরিহার করতে আর দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে।

বাড়ি ফিরে মা-মেয়ে মিলে রান্না করলো।একসাথে খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে স্বর্ণ ঘুমাতে চলে এলো।কেমন যেন ঘুম ঘুম পাচ্ছে,ক্লান্ত লাগছে।ঘরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়লো।ভেবেছিলো আরবের অনেক মেসেজ,কল এসে জমা হয়ে আছে।যেটা প্রতিদিনই হয় কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আজ কোনো মেসেজ বা কল কিছুই নেই।আনমনেই কিছু একটা চিন্তা করে স্বর্ণ আরবের নম্বর ডায়াল করলো।তিনবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো।যদিও কল আসতেই রিসিভ করতে ইচ্ছে করছিলো আরবের কিন্তু নিজেকে সামলে অপেক্ষা করে রিসিভ করলো।কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না কলটা কাঙ্ক্ষিত!
স্বর্ণ স্বাভাবিক স্বরেই প্রশ্ন করলো,’কি করছো?’
‘কিছু না।’
আরবের গলার স্বরটা কেমন যেন!কিছু কি হয়েছে?হঠাৎ তখনের ঘটনটা মনে পড়ে গেলো।আরব ওকে দাঁড়াতে বলেছিলো কিন্তু ও দাঁড়ায় নি।সেইজন্য কি মন খারাপ করেছে?স্বর্ণ আবারও জিজ্ঞেস করলো,’কি হয়েছে?’
‘না,কিছুই হয় নি।’
‘সরি,আসলে ইন্টারভিউ থেকে বেরিয়ে খারাপ লাগছিলো খুব।দাঁড়িয়ে থাকতে মন চাচ্ছিলো না।তাই দাঁড়াই নি।তুমি রাগ করেছো?’
স্বর্ণের স্বীকারোক্তি শুনে আর অভিমান ধরে রাখতে পারে নি ছেলেটা।এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে।শুধু নিজের দিকটাই দেখেছে।স্বর্ণ’র অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করে নি।
‘না রাগ করি নি।এখন ঠিক আছো?’
‘হ্যাঁ।’
‘তোমার ভাইয়ারা এসেছে?’
‘না এসে পড়বে বোধহয়।’
‘আচ্ছা।কি করবে মনে আছে তো?’
‘হ্যাঁ,আছে।’
‘গুড।আমাকে আপডেট দিও।’
‘হ্যাঁ সে তো দেবো ই।আচ্ছা,এখন রাখি।পরে কথা হবে।’
‘আচ্ছা।’
ফোন রেখে স্বর্ণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।কিছুক্ষণ আগে আসা ঘুমঘুম ভাবটা আর নেই তবে শুয়ে থাকতে ভালোই লাগছে।আনমনে কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই শুনতে পেলো কলিং বেল বাজছে।এসে গেছে!স্বর্ণ এখন মরার মত পড়ে থাকবে।আপাতত কিছুক্ষণের জন্য সে কানে শোনে না।

প্রায় দশমিনিট পর ওর ঘরের দিকে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।স্বর্ণ চোখ বন্ধ করেও বেশ বুঝতে পারছে এই পায়ের আওয়াজটা ভাবির ছাড়া আর কারো না।সিমা স্বর্ণকে শুয়ে থাকতে দেখে উঁচু গলায় ডাকলো,’স্বর্ণ,এ্যাই স্বর্ণ ওঠো।সুমন ভাই তোমার সাথে দেখা করার জন্য বসে আছে।’
স্বর্ণ মনে মনে বলল,’আজকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে বসে থাকলেও আমি উঠবো না।’
স্বর্ণ মুখনিঃসৃত কোনো শব্দ না পেয়ে সিমা আবারও ডাকলো,’স্বর্ণ,সুমন ভাই তোমার জন্য অনেক কিছু এনেছে।তোমায় নিজ হাতে দেবে বলে বসে আছে।ওঠো না!’
তারপরও স্বর্ণের কোনো সাড়াশব্দ নেই।যেন গভীর ঘুমে বিভোর সে।সিমা আরও ডাকবে কিন্তু তার আগেই নিহারিকা খানম এসে বললেন,’গভীর ঘুমে আছে।এখন ডেকো না।পরে কথা বলো ওর সাথে।’
সিমা মুখকালো করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।নিহারিকা খানমও একবার মেয়ের দিকে চেয়ে বেরিয়ে গেলেন।তিনি খুব ভালোমত জানেন স্বর্ণ ঘুমায় নি।ওর ঘুম এতো ভারী না।সত্যিই ঘুমে থাকলে এতবার ডাকা লাগতো না।এক ডাকেই উঠে পড়তো।

সুমন যাওয়ার একঘন্টা পর উঠেছে স্বর্ণ।অবশ্য প্ল্যান এ এটা ছিলো না কিন্তু এত তাড়া ফেস করতে ইচ্ছে হয় নি ওর।শোয়া থেকে উঠে ড্রইং রুমে এসে দেখলো খালি।কেউই নেই।যাক ভালো!রান্নাঘরে গিয়ে এককাপ কফি নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো।কালো আরো দু’টো ইন্টারভিউ আছে।একটা চাকরি যে করেই হোক পাওয়া লাগবে।এ মাসে যতগুলো ইন্টারভিউ আছে সব দিবে।একটা না একটা হয়েই যাবে।একাডেমিক রেজাল্ট তো ভালোই ওর।

কফি খেতে খেতেই ভাবলো প্রজেক্ট ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারটা।নাহ!ও আরবের জন্য ছাড়ে নি।ছেড়েছে মায়ের জন্য।মা’কে একা ফেলে যাওয়ার মত অমানুষ নয় সে।যেদিন সারা পৃথিবী ওর বিপরীতে ছিলো সেদিন ও এই মা’কেই পাশে পেয়েছে।তাকে রেখে এভাবে চলে যাওয়াটা মানায় না।পারবে না ও।মা’কে ছাড়া সম্ভব না থাকা।তাই তো একটা চাকরিটা প্রয়োজন।চাকরি পেলেই মা’কে নিয়ে চলে যাবে।আর আরব?ওর সাথে বন্ধুত্ব’টা নষ্ট করতে মন চাইছে না কিন্তু উপায় নেই।ওকে নিজের এই ভাঙাচোরা কড়িকাঠের জীবনে জড়ানোর মানেই হয় না।আর সত্যিগুলো শোনার পর ও ই আর নিজেকে জড়াতে চাইবে না।স্বর্ণ এটাই চায়।

রাত আট’টায় সিমা আবার এলো স্বর্ণর ঘরে।স্বর্ণ তখন একটা নাটক দেখছিলো।সিমা এসে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,’স্বর্ণ,তোমার ভাইয়া তোমাকে ডাকে।কথা বলবে।’
স্বর্ণ কান থেকে ইয়ারফোন’টা খুলতে খুলতে বলল,’যাও,আসছি।’
সিমা গেলো না।অগত্যা স্বর্ণকে ওর সাথেই যেতে হলো যেনও দাগী আসামী।চলে গেলেই পালাবে।

আশরাফ ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছিলো।স্বর্ণকে দেখে থমথমে গলায় বলল,’বস।’
স্বর্ণ বসলো।আশরাফ গম্ভীর স্বরে বলল,’সুমন চাইছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে।’
‘আচ্ছা।’
‘পরের মাসের শেষ সপ্তাহে ডেট দিয়েছে।ওর বোন কানাডা থেকে এলেই।’
‘ঠিক আছে।’
স্বর্ণ এভাবে মেনে নিচ্ছে বলে আশরাফ ও সিমা দু’জনেই অবাক।ওরা মনে করেছিলো স্বর্ণ বেঁকে বসবে কিন্তু না ওদের অবাক করে দিলো স্বর্ণর এমন রিয়েকশন।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here