#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat
স্বর্ণের চোখে,মুখে বিষ্ময়!সত্যিই ছেলেটা এসেছে?কিন্তু এলো কি করে এত রাতে?ডান হাত বাড়িয়ে আরবের মুখটা ছুঁয়ে বলল,’তুমি!’
আরব ওর বাড়ানো হাতটা ধরে বলল,’হ্যাঁ,আমি।ফোনে শুকনো হ্যাপি বার্থ ডে দেওয়াটা পোষাতো না আমার তাই চলে এলাম।’
‘কিন্তু এত রাতে কিভাবে?’
‘ম্যাজিক।’আরব একটু দুষ্টু হেসে বলল।
স্বর্ণ চোখ পাকিয়ে বলল,’ম্যাজিক তাই না!তাড়াতাড়ি বলো কিভাবে এলে?নাহলে কিন্তু চলে যাবো।’
‘আচ্ছা,আচ্ছা বলছি।ঠান্ডা হও।পাশের বাড়ি’টা দেখছো না?ওটাই আমার বাড়ি।তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে বলি নি।আর আমার প্ল্যান ই ছিলো আমার বাড়ির আশেপাশে বাসা খুঁজবো।কিন্তু ভাগ্য এত ভালো দেখো পাশের বাড়ির ফ্ল্যাট ই খালি পেলাম।আর এখন এসেছি ছাঁদ টপকে।’
স্বর্ণ বিষ্মিত হলো।ছেলেটা ভেতরে ভেতরে এমন শয়তানি করবে ভাবতেও পারে নি।’স্বর্ণ কপট রেগে আরবের বাহুতে চাপড় দিয়ে বলল,’কি শয়তান ছেলে রে!’
আরবের সাথে কেক কেটে যখন ঘরে ফিরলো তখন রাত তিনটে।ঘরে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো স্বর্ণ।সকালে উঠতে হবে।অফিস মিস দেওয়া যাবে না।
নাস্তার টেবিলে বসে ধীরেসুস্থে নাস্তা করছিলো স্বর্ণ।আজ তাড়া নেই।রাতে দেরিতে ঘুমালেও সকালে বেশ তাড়াতাড়িই উঠেছে ও।সাথে নিহারিকা খানমও ছিলেন।হঠাৎ তিনি খাওয়া থামিয়ে বললেন,’তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?’
স্বর্ণ খানিক কৌতূহল মিশ্রিত কন্ঠে বলল,’হ্যাঁ করো।’
‘তোর ক্লাসমেট আরব নামের ছেলেটা তোকে পছন্দ করে?’
স্বর্ণ নির্বিকার ভাবে বলল,’হ্যাঁ।’
কারণ স্বীকার না করে উপায় নেই।আরবের কান্ড দেখলে যে কেউ মুহূর্তেই বুঝে যাবে আলাদা করে বলাও লাগবে না।স্বর্ণ অনেকবার শাসানোর পরও পরিবর্তন নেই।একটাই কথা ওর,’আমি তোমার মত পাষাণ নই।নিজের অনুভূতিগুলে লুকিয়ে রাখতে পারি না।’
স্বর্ণ তখন মনে মনে বলে,’আমি পাষাণ ছিলাম না আরব।তোমার কপাল খারাপ সাথে আমারও।তুমি যে স্বর্ণকে এখন দেখছো সে আদ্যোপান্ত ভাঙাচোরা একজন মানুষ।’
‘তুই পছন্দ করিস ওকে?’
মায়ের প্রশ্ন সম্বিত ফিরে পেলো স্বর্ণ।মাথা নেড়ে বলল,’আমি বন্ধু,ক্লাসমেট ভাবি।’
‘আমার মনে হয় ছেলেটা সত্যিই তোকে ভালোবাসে।’
‘কিন্তু মা তুমি তো জানো সবকিছু।আমি কিভাবে ওকে প্রশ্রয় দিবো?’
‘আমি তোকে প্রশ্রয় দিতে বলছিও না।শুধু বলছি তুই তোর অতীত’টা ওকে বলে ফেল আর মায়া বাড়িয়ে ফেলার আগেই।দেরি করলে জটিলতা বাড়বে বলে কমবে না।এমনও হতে পারে এখন বললে বন্ধুত্বটা থেকে গেলেও যেতে পারে কিন্তু যদি পরে বলিস তাহলে তোকে প্রতারক ভাববে সারাজীবন।’
স্বর্ণ জানে মায়ের কথাগুলোই ঠিক।বলে দেওয়া উচিত।এবং সে বলবেও।আজকেই বলবে।আর দেরি করাটা ঠিক হবে না।স্বর্ণ মাথা নেড়ে নাস্তাটুকু সেরে যেতে যেতে বলল,’বলে দেবো মা!আজই বলবো।’
‘হুম,বুঝিয়ে বলিস।’
স্বর্ণ ক্ষীণ মাথা নেড়ে চলে গেলো।কাল রাতের জন্মদিনের উৎকন্ঠা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো তার বদলে বিষাদের মেঘ এসে জড়ো হলো।জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্র এত কঠিন কেন?কি হতো যদি উচ্ছ্বাস নামের বিষাক্ত অতীত’টা ওর জীবনে না থাকতো!তাহলে জীবনটা কত রঙীন হতো।নিজের সর্বসত্তা দিয়ে আরবকে ভালোবাসতে পারতো ওর পাগলামি,ছেলেমানুষী গুলো প্রশ্রয় দিতে পারতো।সুন্দর সংসার হতো,টোনাটুনির সংসার!জীবনটা যদি কল্পনার মত রঙীন হতো তাহলে বোধহয় বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা বেড়ে যেত।আ/ত্ন/হ/ত্যা হতো না এত!কিন্তু জীবন তো কারো কল্পনা মত চলে না।সে নিজের মত স্বাধীন।পরাধীন তো মানুষেরা।যারা নিজেকে স্বাধীন মনে করেও কোনো না কোনোভাবে জীবনের কাছে পরাধীনই রয়ে যায়।
যদিও কথা ছিলো সুমনের সাথে দেখা করতে যাবে অফিস শেষে কিন্তু আরবের জন্য পারলো না।ও বায়না ধরলো ওর সাথে রেস্টুরেন্টে বসতে হবে।স্বর্ণ রাজি হলো কারণ আজকে একটা কিছুর মুখোমুখি হতেই হবে।যতটুকু ধারণা করা যায় আজকে আরব ওকে আবার প্রপোজ করবে,শুধু প্রপোজ না একেবারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে।আর আজকেই স্বর্ণ সবটা ক্লিয়ার করবে।খুব বাজে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে স্বর্ণ জানে।যার জন্য সে মানসিক ভাবে প্রস্তুত কিন্তু আরবের জন্য খারাপ লাগছে।ছেলেটা এই ধাক্কা সামলাতে পারবে তো?
রেস্টুরেন্টে বসে প্রথমে অর্ডার দিয়ে দিলো আরব তারপর স্বর্ণ’র দিকে চেয়ে বলল,’প্রিপারেশন নিচ্ছি।’
‘কিসের?’
‘কিসের আবার বিয়ের।’
স্বর্ণ মলিন হেসে বলল,’তোমায় কিছু বলবো আরব।মন দিয়ে শুনবে।’
‘হ্যাঁ বলো।’
স্বর্ণ ভেতর থেকে গুছিয়ে নিয়ে বলতে আরম্ভ করলো,’তুমি তো জানো উচ্ছাসের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো।আমি ওকে বিশ্বাস করতাম খুব একদম অন্ধের মত।কত রাত জাগা স্বপ্নে সংসার সাজিয়েছি আমাদের তার হিসেব নেই কিন্তু উচ্ছ্বাস আমাকে বাজে ভাবে ঠকিয়েছে।ওই যে বললাম না বিশ্বাস করতাম খুব।সেই বিশ্বাসটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।ওর সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক হয় একপর্যায়ে জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট।অনেক আশা নিয়ে ওকে জানাই ভাবি কেউ না থাকলেও ও পাশে থাকবে আমার কিন্তু যা হয় আসলে তাই হলো।ছেড়ে দিলো আমাকে।ভেবেছিলাম আ/ত্ন/হ/ত্যা করবো,মেরে ফেলবো বাচ্চাটাকে পরে মা পাশে ছিলো।উনি আমাকে সাহস দিলেন।তবে আমি জানি মা মন থেকে আমাকে মাফ করতে পারে নি।পারবেও না এমন জঘন্য একটা কাজ করার পর মাফ পাওয়া যায় না কিন্তু তবুও মা তো!নয়মাস পেটে ধরেছে।নাড়িছেঁড়া সন্তান,সবাই মুখ ফেরালেও সে ফেরায় নি,ফেরাতে পারে নি।মা চেয়েছিলো স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে সেটেল হই আমিও তাই ভেবেছিলাম পরে আবার মায়ের কথা চিন্তা করে স্কলারশিপরে চিন্তাটা বাদ দেই।তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম।ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই আমার।তবুও মাফ করো।এখন চাকরি পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।অনেকদিন থেকে ভাবছিলাম তোমাকে বলবো সব কিন্তু বলতে পারছিলাম শেষপর্যন্ত আজ বলেই দিলাম।তোমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য নই তবুও চাইবো আমাকে ভূলে যাও।ভালে কারো সাথে সুন্দর একটা জীবন গড়ে নাও।আর পারলে আমাকে ক্ষমা করো।’
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলেই আর বসলো না স্বর্ণ।এখানে বসার শক্তি নেই আর!ছেলেটার চোখের দিকে তাকানোর মত দুঃসাহস নেই ওর।তাই প্রস্থানই উত্তম।
“আজ কোনো অনুভূতির গভীরে যেতে চাই না আর কখনো,
যেখানে নিঃশব্দ কান্নায় স্বরচিত হয়ে একান্ত শোক।’
চলবে….