একটি বিবাহত্তোর প্রেমের গল্প,পর্ব ১
তামান্না জেনিফার
__________________________
—কি রে অপা উঠ ! এখনো শুয়ে আছিস যে ? তাড়াতাড়ি উঠে পর মা , ওরা এখনি চলে আসবে ৷
—উঠছি মা ৷ অযথা এগুলো কেন করো বলোতো ? তোমার কি মনে হয় ওরা আমাকে পছন্দ করবে ? এই অভাব অনটনের মধ্যে ওদের জন্য এত খাবাররের আয়োজন করলা , এগুলোর আসলেও কোন মানে নাই মা …
—জন্ম , মৃত্যু , বিয়ে আল্লাহর হাতে ৷ তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না ৷ তোর মামা টাকা পাঠাইছে আজকের জন্য ৷ তোর মামা বলছে তোর ছবি ছেলের পছন্দ হইছে , আর ওরা যৌতুকও নিবে না ৷
—যৌতুক নিবেনা , গিফ্ট নিবে ৷ আর মামা যে এত আগ্রহ দেখাচ্ছে আমার তো এটাতেই কেমন খটকা লাগতেছে ৷ সে তো অকারনে এত দরদ দেখানোর মানুষ না ৷ এবার সে কি চায় ? এই বাড়িটা ?
—বড় বড় কথা বলবি না তো ! বিপদে আপদে আমার ভাইটাই পাশে দাড়ায় ৷ কই তোর কোটিপতি চাচা তো কোনদিন আসেও না ..
—মা , তুমি জানো .. আমাদের আসলে কেউ নেই ৷ মামা , চাচা সব একদলের ৷ যখন আমাদের ছিলো তখন সবাই ছিলো ৷ এখন এসব বলে লাভ নেই ৷ তুমি আমার বিয়ের আশা ছেড়ে দাও ৷ তোমার এই লেংড়া মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না ..
—অপা ! আর একটা কথা আমি শুনতে চাই না ৷ তাড়াতাড়ি উঠে রেডী হ !
নিতান্ত অনিচ্ছায় অপা বিছানা ছাড়ে ৷ জন্ম থেকেই ওর বাম পা খাটো ৷ হাঁটতে অসুবিধা হয় ৷ তার মধ্যে তার সৎ সরকারী চাকুরিজীবী বাবার রিটায়ামেন্টের পর সংসার চালানো দায় ৷ পেনশন আর ওর টিউশনির পয়সায় সংসার চলে কেমন যেন টেনে হিচরে .. এর মধ্যে বাড়তি খরচ ৷ অসহ্য লাগে অপার ৷ কিন্তু কিছু করার নেই ৷ সাতাশ বছর বয়স অপার , জীবনে প্রেম বলে কিছু হয়ে উঠেনি কখনো ৷ এখন যখন বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা চলছে ফলাফল শুধুই শূন্য ৷ বিয়ের বাজারে এক পা খাঁটো , যার বাবারও সহায় সম্পদ নেই এমন মেয়ের আসলে দাম নেই ৷ অপা জানে বোঝে , কিন্তু তার বাবা মা বোঝে না , তারা ছেড়া কাথায় শুয়ে স্বপ্ন দেখে তাদের মেয়েকে পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চাপিয়ে বর নিয়ে যাবে সোনার মহলে .. হাসি পায় অপার ৷
অপা উঠে সাজতে বসে ৷ গাঢ় করে একটুখানি কাজল আর একটু পাউডার , ব্যাস অপার সাজা শেষ ৷ ওর মা এসে একটা লিপস্টিক ধরিয়ে দেয় ওর হাতে ৷ এরপর কথা বলতে বলতে চলে যায় ” একটুখানি ভালো করে সাজলেও ত্রাপারে , তা সাজবে না ৷ কিসের যে এত দেমাগ বুঝিনা …”
অপা ঠোঁটে লিপস্টিক দেয় ৷ নিজের চেহারাটা অপরিচিত লাগে ওর কাছে ৷ কিছুক্ষন পর ছয় সাত জন অপিরিচিত লোকের সামনে ওকে বসতে হয় ৷ অপার মনের মধ্যে হাজার উৎকন্ঠা ৷ না জানি কত প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হবে এখন ৷ কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে পাত্রপক্ষ একটা কথাও জিজ্ঞেস করে না ৷ শুধু ছেলের মা অপার বাবাকে বলে “ভাইসাহেব , দিনক্ষন ঠিক করেন ৷ মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে …”
অপার মা আলহামদুলিল্লাহ বলে পাত্রের মা কে জড়িয়ে ধরে ৷ ঠিক হয় সামনের মাসের ২২ তারিখ দুজনের বিয়ে হবে ৷ অপার হাতে একটা স্বর্নের আংটি পড়িয়ে দেয় ছেলের মা ৷ পরাতে গিয়ে দেখে আংটিটা বেশ বড় ৷ মরুব্বিগোছের একজন বুদ্ধি দেয় আংটির পেছনে সুতা জড়িয়ে নিতে তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে ৷ অপার হাতে গুজে দেয় এক হাজার এক টাকা ৷ অপা রাজ্যের বিস্ময় আর এক লক্ষ্য প্রশ্ন বুকে নিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসে ৷ কেনই বা তাকে পছন্দ করলো ! যা হচ্ছে তা কি বাস্তব না কি স্বপ্ন …..
চলবে