একটি বিবাহত্তোর প্রেমের গল্প,পর্ব ৪

0
901

একটি বিবাহত্তোর প্রেমের গল্প,পর্ব ৪
তামান্না জেনিফার

অপা শ্বাশুড়ির ঘরে যায় ৷ অপাকে দেখে দ্রুত মাথা কাপড় দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করে সুজলা রহমান ৷ অপা শ্বাশুড়ির পাশে গিয়ে বসে , কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলে

—মা , আমাকে বলেননি কেন ? ইশ এত শরীর খারাপ নিয়ে এত কিছু করছেন আমার নিজেকে অপরাধী লাগছে ..

—আরে দেখো পাগল মেয়ে কি বলে ৷ কেমো চলছে তো , এখন তো আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি ৷ জানিস রে মা আমার মাথায় এত ঘন চুল ছিলো আমি নিজে নিজে শ্যাম্পু করতে পারতাম না .. এখন দেখ মাথা কেমন গড়ের মাঠ হয়ে গেছে..

—চুল ছাড়াই তুমি অনেক সুন্দর মা , আমার তো মাথায় চুলই নাই .. বেনী করলে মাথার তালু দেখা যায় .. আমি তো দেখতে ভালো না মা ..

—আল্লাহর সৃষ্টি প্রত্যেকটা মানুষই সুন্দর ৷ তা তোরা হানিমুনে কোথায় যাবি ঠিক করেছিস ? সুমন কিছু বলেছে ?

—হুম আমি ঠিক করেছি , তিনি অবশ্য এখনও জানেন না .. আমি ঠিক করেছি ইন্ডিয়া যাবো , সবাই মিলে .. তুমিও যাবা ..

—এরা অনেকদিন থেকে আমাকে বলছে ইন্ডিয়া যেতে , আমি আসলে রাজী হচ্ছিনা ৷ নিজেকে নিয়ে এসব দৌড় ঝাপ ভালো লাগে না রে মা ৷ অযথা সবাইকে কষ্ট দিচ্ছি , আমার জন্য কত টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে ..

—এবার যাবে .. আমি কোনদিন দেশের বাইরে যাইনি ৷ আমার খুব ইচ্ছে ইন্ডিয়া যাবার ৷ কিন্তু আমি একা যাবো না , আমার ইচ্ছেটা পূরন করতে হলে তোমাকে যেতেই হবে , আর সবাইকেও যেতে হবে ৷ আর এখন চলো , মাজেদা খালা সব রেডী করেছে , রান্না করবে .. আজকেই শেষ ! আজকে আমাকে সব বুঝায়ে দিবা , কাল থেকে আমি রান্না করবো ৷

—পাগল মেয়ে কি বলে ! গা থেকে হলুদের গন্ধই যায়নি আর সে করবে রান্না !

—(নিজের শরীরে গন্ধ নেবার চেষ্টা করে ) কই মা , আমি তো গায়ে হলুদের গন্ধ পাচ্ছিনা , শুধু লাক্স সাবানের গন্ধ পাচ্ছি..তাহলে বোধহয় আমার গায়ের হলুদের গন্ধ চলে গেছে .. তাড়াতাড়ি চলোতো ! আমার ক্ষুধা লেগে গেছে ..

—আচ্ছা চল ..

সুজলা একটা করে রান্না করে আর অপাকে সব বোঝাতে থাকে ৷ অপা মনযোগী দর্শক হয়ে শিখতে থাকে সেসব ৷ রাতে সুমন বাসায় ফেরে ৷ খাবার দাবার শেষ হলে শোবার ঘরে আসে ৷ এই সময়টার জন্য অপা সারাদিন অপেক্ষা করে ছিলো ৷ ওর অনেক কথা বলার আছে সুমনকে ..

সুমন কোন কথা না বলে সোফায় শুতে যায় ৷ অপা গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে “আপনার কি আমাকে বাঘ ভাল্লুক মনে হয় যে আমার পাশে বিছানায় শুইলে আমি আপনার উপর ঝাপিয়ে পরবো ! চলুন বিছানায় শোবেন ৷ শুনুন সুমন সাহেব , আপনার সাথে আমার অনেকগুলো কথা আছে , বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলবো ৷ ভয়ের কিছু নেই আমি আপনার বুকে শোবো না , মা নরম বালিশ পাঠিয়েছে সেখানেই শোবো ৷ ” সুমন মৃদু হাসে , তারপর বিছানায় গিয়ে শোয় ৷ দুজনের মাঝখানে একটা কোল বালিশ দেয় অপা ৷ বলে ” নেন বর্ডার পার লাইন দিয়ে দিয়েছি ৷ আপনি কমফোর্টেবল ভাবে শুয়ে পরেন ” ৷ অপার কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠে সুমন ৷

—আপনি তো বেশ মজা করে কথা বলেন অপা ৷ অনেক ধন্যবাদ বর্ডার লাইন দিয়ে বিছানায় শুতে বলার জন্য ৷ কাল সোফায় শুয়ে পুরো পিঠ ব্যাথা হয়ে গেছে ৷ আচ্ছা বলুন কি যেন বলবেন ৷

—মায়ের ডাক্তার কি বলেছে ?

—মায়ের জরায়ুতে ক্যান্সার ৷ অপারেশন করা হয়েছে ৷ কেমো চলছে ৷ ডাক্তার বলেছে আর একটা অপারেশন করা দরকার যেটা ইন্ডিয়াতে করলে ভালো হতো ৷ কিন্তু মা রাজী হচ্ছে না ৷

—মা কে আমি রাজী করিয়ে ফেলছিই প্রায় ৷ বাকিটা আমার উপর ছেড়ে দেন ৷ আপনি ব্যবস্থা করেন ৷ আমরা সবাই ইন্ডিয়া যাচ্ছি ৷ আর শোনেন , প্লেনে করে যাবো , আমি জীবনেও প্লেনে চড়িনি ..

—বলেন কি ! মা রাজী হয়েছে ! আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করতেছি ৷ আপনার পাসপোর্ট আছে ?

—পাসপোর্ট তো আছে , কিন্তু সেটা তো ঐ বাড়িতে .. কাল তো আমাকে নিতে আসবে ৷ আপনি আমার সাথে যাবেন প্লিজ ? আসলে আমার মা অনেক অাশা করে থাকবে ৷

—আচ্ছা আমি যাবো ৷ তুমি সরি আপনি রিয়াকেও বলবেন ৷ ও আপনাদের ওখানে যাবার জন্য খুব উৎসাহী ৷ আজকে ভার্সিটিতে যাবার সময় আমাকে বলছিলো ৷ আমিতো ভেবেছিলাম রিয়ার সাথে আপনাকে পাঠাবো ৷ কিন্তু , আপনি যেহেতু বলছেন , যাবো ইনশাআল্লাহ ৷

—ওয়াও রিয়াও যাবে ৷ আমি খুব এক্সসাইটেড ..আর শুনুন , আমি বয়সে আপনার চেয়ে ছোটই হবো ৷ যত বয়স্ক আমাকে মনে করছেন অতটা আমি না ৷ তুমি বলতে পারেন বুচ্ছেন ৷ আপনি আমাকে আপনি আপনি করেন শুনতে কেমন নিজেকে বুড়ি বুড়ি লাগে ৷

—হা হা হা তুমি অাসলেই মজা করে কথা বলো ৷ আচ্ছা তুমিই বলবো ৷ এখন ঘুমাও ৷ নরম বালিশ পেয়েছো আর জেগে থাকছো কেন !

—হুমম ঘুমাবো ৷ সকালেই আবার ও বাড়ি থেকে লোক আসবে ৷ কাল তাহলে ছুটি নেন ৷ না কাল না , কাল পরশু দুদিন ছুটি নেন ..

—দুদিন ছুটি তো পাবোনা ৷ কাল দিন নেই ৷ কাল ওখানে থেকেই অফিস যাবো আর ফেরার সময় তোমাদের নিয়ে আসবো কেমন ?

—আচ্ছা ঠিক আছে ..

অপা ঘুমিয়ে পরে ৷ সুমন তখনও জেগে ৷ সুমন ভাবে এই মেয়েটার সাথে তনুর কত অমিল ৷ তনু মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে বলেছিলো “ক্যান্সার ! লাখ লাখ টাকার শ্রাদ্ধ হবে এখন , ক্যান্সার রোগীর জীবনের কি নিশ্চয়তা আছে ! বিদেশ নিয়ে অযথা টাকার শ্রাদ্ধ করোনা , বরং টাকা জমাও আমাদের হানিমুনে আমরা সুইজারল্যান্ড যাবো …” ৷ মানুষ কত আলাদা , মানুষ কত রং বেরংয়ের ৷ কত মানুষ সাদা শুভ্র শরীরে অন্ধকারের চেয়েও কালো মন লুকিয়ে রাখে , আর কারো কারো শ্যামলা শরীরেও শ্বেত শুভ্র মন ..মানুষ কত বিচিত্র , কত আলাদা একজন আরেক জন থেকে ..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here